Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষি কথা

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

জ্যৈষ্ঠ মাস। আমাদের এই ষড়ঋতুর দেশে ঋতু চক্রের পরিক্রমায় ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে আপন গতিতে। সারা বিশ্বব্যাপী জলবায়ুতে অনেক পরিবর্তন আসলেও প্রকৃতির নিয়মে চলে জ্যৈষ্ঠ মাস। প্রচ- খরতাপে এ মাসে প্রকৃতিতে থাকে নাভিশ্বাস অবস্থা। হরেক রকম ফসলের পাশাপাশি এসময় মজার মজার ফলের প্রাপ্তিযোগের কারণে কৃষিজীবীসহ আপামর জনসাধারণের মনপ্রাণ আনন্দরসে ভরপুর থাকে। আর কৃষিজীবী ভাইবোনেরাই  খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার  হাতিয়ার। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য কৃষকের পাশে থেকে কৃষকের সাথে থেকে কৃষিকে টেকসই, আধুনিকরণ ও স্মার্ট কৃষি গড়ার।   
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জনগণের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগোঠীর কর্মসংস্থানে, শিল্পের কাঁচামাল জোগানে ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এদেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১১.২০ শতাংশ । কৃষিতে নিয়োজিত শ্রমশক্তি ৪৬.৯৬ শতাংশ। খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশে^ শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে। পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ, আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম। এছাড়া কৃষি পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বর্তমানে ৭০টিরও বেশি ফল ও সবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষি পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলক ছাড়িয়েছে।  বাংলাদেশ  এখন  এক অভূতপূর্ব উন্নয়নের বিস্ময়। 
বাংলাদেশ সোনালী আশেঁর দেশ। কৃষিপণ্য হিসেবে পাট বিশে^ ২৮২ ধরনের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে পাট রফতানিতে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। পাটপণ্য বহুমুখী খাতকে রপ্তানিমুখীকরণে পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার বা বর্ষপণ্য এবং পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে গণ্য করার ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সম্পর্কে ‘স্মার্ট ইকোনমির নতুন খাত : পাটকাঠি হতে উৎপাদিত চারকোল’ তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবারের কৃষিকথায়।
এ ছাড়াও কৃষি বিশেষজ্ঞগণের সময়োপযোগী প্রবন্ধ, আগামীর কৃষি ভাবনা, সফল কৃষকে গল্প ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে এ সংখ্যা।  কৃষিকথায় এসব মানসম্পন্ন ও তথ্যপ্রযুক্তি লেখা দিয়ে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা রাখছি বাণিজ্যিক কৃষি, জৈব প্রযুক্তি, ন্যানোটেকলোজিসহ গ্রামীণ অকৃষিজ খাতের উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন মোকাবিলায় উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণে সহায়ক হবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নলালিত সোনার বাংলা বিনির্মাণ সম্ভব হবে।  

বিস্তারিত
সূচিপত্র
৮৪তম বর্ষ ড় ২য় সংখ্যা ড় জ্যৈষ্ঠ-১৪৩১ (মে-জুন ২০২৪)
সূচিপত্র
 
নিবন্ধ/প্রবন্ধ
 
 স্মার্ট ইকোনমির নতুন খাত : পাটকাঠি হতে উৎপাদিত চারকোল ৩
ড. মো. আবদুল আউয়াল, ড. মো. আবু সায়েম জিকু, ড. এ. টি. এম. মোরশেদ আলম
 নগর কৃষকের আঙুর চাষ ৫
কে জে এম আব্দুল আউয়াল
 ডাল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং করণীয় ৭
ড. মোঃ আলতাফ হোসেন
 উন্নত জাতসমৃদ্ধ পাটশাকের বছরব্যাপী চাষাবাদ প্রযুক্তি ৯
ড. এম. মনজুরুল আলম মন্ডল
 সংরক্ষণশীল কৃষির চাষ ব্যবস্থাপনা ১১
ড. মোহাম্মদ এরশাদুল হক
 লিচু ফলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা ১৪
কৃষিবিদ মো: শাহাদৎ হোসেন 
আগামীর কৃষি ভাবনা
 ন্যানো সার ফসল উৎপাদনে একটি আধুনিক কৃষি উপকরণ ১৫
ড. মো: শহিদুল ইসলাম
 পরিবর্তীত জলবায়ুতে আমন ধান চাষ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ১৬
পার্থ বিশ^াস
 
 দেশে চকোলেট তৈরির ফল কোকোয়া চাষের সম্ভাবনা ১৯
তাহসীন তাবাসসুম
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ
 সম্পূরক খাদ্যনির্ভর ভেটকি মাছের পোনা প্রতিপালন পদ্ধতি ২১
মোঃ তোফাজউদ্দীন আহমেদ
 গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে টিকাদানের নিয়মাবলি ২৪
ডা. মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ
সফল উদ্যোগ কৃষকের গল্প
 রূপসায় লেবু চাষে আকরাম হোসেনের উদ্যোগ ২৭
মোঃ আবদুর রহমান
নিয়মিত বিভাগ
 প্রশ্নোত্তর ২৯
কৃষিবিদ আকলিমা খাতুন
 আষাঢ় মাসের কৃষি ৩১
কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
বিস্তারিত
স্মার্ট-ইকোনমির-নতুন-খাত:-পাটকাঠি-হতে-উৎপাদিত-চারকোল

স্মার্ট ইকোনমির নতুন 
খাত : পাটকাঠি হতে উৎপাদিত চারকোল
ড. মো. আবদুল আউয়াল১ ড. মো. আবু সায়েম জিকু২ ড. এ. টি. এম. মোরশেদ আলম৩
পাট পরিবেশবান্ধব, বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য প্রাকৃতিক আঁশ যা গোল্ডেন ফাইবার নামে পরিচিত। এই সোনালী আঁশ পাট আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। অর্থকরী ফসল হিসাবে পাট থেকে পরিবেশবান্ধব বহুমুখী পাটজাতপণ্য উৎপাদন করতে পারলে দ্রুত সোনালি আঁশের অতীত ঐতিহ্যে পাটকে ফিরে আনা সম্ভব হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের ‘বর্ষপণ্য’ এবং ১লা মার্চ ২০২৩ সালে এক প্রজ্ঞাপণের মাধ্যমে পাটকে ‘কৃষিপণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর তথ্য মতে, বর্তমানে পাট উৎপাদন ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে ১ম স্থান দখল করে আছে। চারকোল পাটখড়ি হতে উৎপাদিত একটি সম্ভাবনাময় পাটজাত পণ্য যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম বলে পাট গবেষকগণ মনে করেন। 
উন্নত বিশে^ চারকোলের বিস্তৃত ব্যবহার বিদ্যমান। বর্তমানে সোনালি আঁশ পাটের পাশাপাশি অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য পাঠকাঠি থেকে চারকোল বা কার্বন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। চারকোল হলো কার্বনের একটি কালো, ছিদ্রযুক্ত রূপ, যা প্রায়ই অঙ্কন, স্কেচিং এবং অন্যান্য শৈল্পিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এটিই মূলত চারকোল বা এক্টিভেটেড কার্বন, যা পাটখড়ি থেকে উৎপাদিত একটি পণ্য। এর শোষক এবং শোষণকারী বৈশিষ্ট্যের কারণে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ধাতুবিদ্যা এবং ওষুধের মতো শিল্পগুলোতেও ব্যবহৃত হয়। সহজভাবে বলা যায়, পাটকাঠির ছাই থেকে এক ধরনের জ্বালানি উৎপন্ন হয় যা চারকোল নামে পরিচিত। বর্তমান বিশে^ পরিবেশবান্ধব পাটকাঠির ছাইয়ের কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ কাঠের (খড়ি) জ্বালানির দাহ্য ক্ষমতার চেয়ে চারকোলের দাহ্য ক্ষমতা অনেক বেশি, সে কারণে চাহিদাও বেশি। যদিও বিভিন্ন দেশে কাঠের গুঁড়া, নারিকেলের ছোবড়া ও বাঁশ থেকেও চারকোল উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত পাটকাঠি থেকেই চারকোল উৎপাদিত হয়ে আসছে। পাটকাঠি বা পাটখড়িকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুড়িয়ে এরপর শীতলীকরণ ও সংকোচন করে চারকোল তৈরি করা হয়। এতে প্রায় ৭৫ শতাংশ কার্বন থাকে। তবে সহজভাবে বলা যায়, বিশেষ চুল্লিতে পাটখড়ি লোড করে তাতে আগুন দেয়া হয় এবং ১০-১২ ঘণ্টা রাখার পরে চুলা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়, যাতে চুলার ভেতরে অক্সিজেন প্রবেশ করতে না পারে। এভাবে ৪ দিন রাখার পরে এটি কার্বনে পরিণত হয়। পরে সেই কার্বন এর পিন্ডটি প্যাকেজিং করে বিশে^র বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।
২০০৯ সাল থেকে সীমিত পরিসরে চারকোল রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়। আর ২০১২ সাল হতে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় চারকোল উৎপাদন। পাটের আঁশের পাশাপাশি সম্ভাবনার নতুন খাত পাটকাঠি থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি এই উচ্চমূল্যের অ্যাকটিভেটেড কার্বন এখন রপ্তানির নূতন দ্বার উন্মোচন করতে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত চারকোল এর  প্রায় ৮০% চীনে রপ্তানি হয়। বাকি ২০% রপ্তানি হচ্ছে মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি ও তাইওয়ানে। দেশের বিভিন্ন জেলায় চারকোল উৎপাদন শিল্প গড়ে উঠেছে। চারকোল কারখানার মালিকরা পাট কাটার মৌসুমে পাটকাঠি কিনে ফ্যাক্টরিতে পাঠাতে তাদের এজেন্টদের প্রতিটি এলাকায় পাঠিয়ে দেয়। ফলে,  কৃষকরা এখন পাটের সঙ্গে পাটখড়িও বিক্রি করছে। বাংলাদেশে ১০-১২টি চারকোল উপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়াও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর, জামালপুর মাগুরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চারকোল কারখানা স্থাপিত হওয়ায় রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য মতে, দেশের কার্বন ফ্যাক্টরিগুলো জুলাই-আগস্ট থেকেই পাটকাঠি কেনা শুরু করে। অক্টোবর থেকে মার্চ, এপ্রিল মাস পর্যন্ত চারকোল মিলগুলো উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে। 
পাট ও পাটজাতীয় আঁশ ফসল হতে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ছাড়াও পাটের বহুমুখী ব্যবহারের মধ্যে চারকোলের অবস্থান পরিবেশগত ও অর্থনৈতিকভাবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সহজ পদ্ধতিতে পাটকাঠিকে কার্বনাইজ করে চারকোল তৈরি করা যায়। তাই উৎপাদন খরচও কম হয়। ফলে চারকোলের কদর ও অপার সম্ভাবনা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটির মূল উপাদন হলো বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বনকে একীভূত করা। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে চারকোল শুধুমাত্র রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো। এই ছাইয়ের ভেতরের কার্বন পাউডার থেকে তৈরি হচ্ছে কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, জীবনরক্ষাকারী বিষনিরোধক ট্যাবলেট, পানি বিশুদ্ধকরণ তথা পানির ফিল্টার তৈরিতে ব্যবহার্য কাঁচামাল, আতশবাজি, মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ও পলিমার ব্যাটারি, ফেসওয়াশের উপকরণ, প্রসাধনসামগ্রী, মাউথওয়াশ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধের কাঁচামাল। যথার্থ মেধার প্রয়োগ ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে চারকোলের গুণগতমান ও ঘনত্ব উত্তরোত্তর আরো বৃদ্ধি পেলে অদূর ভবিষ্যতে কাঠের বিপরীতে পাটকাঠিই হয়ে উঠতে পারে বিশ^ব্যাপী চারকোলের প্রধান কাঁচামাল। পরিবেশবিদদের মতে, একটি দেশে ২৫% বনভূমি থাকা উচিত কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে মাত্র ৮% থেকে ৯% বনভূমি রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর পাট কাঠির গড় উৎপাদন ২৪৮০.৬২ হাজার টন। পাটের কাঠি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হলে  কাঠের ওপর নির্ভরতা হ্রাস পাবে, যা বনভূমির উজাড়  হওয়া কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে গবেষকগণ মনে করেন। 
বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইঈঈগঊঅ) ২০১৬ সাল থেকে অনানুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এ প্রতিষ্ঠানটি চারকোলের বহুমুখী ব্যবহার ও নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করার ফলে ২০১৮ সালে  আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধন লাভ করায় অ্যাসোসিয়েশন এখন বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়াতে গুরত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। প্রতি মণ পাটখড়ি থেকে প্রায় ৮ কেজি চারকোল পাউডার বা কার্বন উৎপাদিত হয়। যার প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ প্রায় ৭৫/- থেকে ৮০/- টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি চারকোলের বাজারমূল্য প্রায় ৮৫/- থেকে ৯০/- টাকা। উল্লেখ্য যে, রপ্তানির ক্ষেত্রে চারকোল ব্যবসায়ীগণ ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ২০% প্রণোদনা পেয়েছেন। ফলে,  রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি চারকোল থেকে আর্থিক লাভ হয় প্রায় ২৩/- টাকা। পাটকাঠি দিয়ে যে চারকল তৈরি হচ্ছে তা বিদেশে রপ্তানি করে  গত বছর বাংলাদেশ  প্রায় ১৬০ কোটি টাকা আয়  করেছে,  এতে করে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। হিসাবমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ টন পাটকাঠি উৎপাদিত হয়। প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, এই উৎপাদিত পাটকাঠির ৫০ ভাগও যদি চারকোল উৎপাদনে যথাযথভাবে ব্যবহার করা যেত, তাহলে প্রতি বছর ৩ লক্ষ টন চারকোল উৎপাদন সম্ভব, যা বিদেশে রপ্তানি করে প্রতি বছর অন্তত ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব, একইসাথে সারাদেশে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে  আর্থসামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং পাট চাষে পাট চাষিদের আগ্রহ বাড়বে ও পাট ফিরে পাবে তার হারানো গৌরবউজ্জ্বল ঐতিহ্য। এই খাতকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার পাটখড়ি থেকে উৎপাদিত চারকোলের রপ্তানি বাড়াতে চারকোল নীতিমালা ২০২২ প্রণয়ন করেছে। এই নীতি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে টেকসই চারকোল শিল্প ও সোনালি আঁশ পাটের অবদান জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) দেশের কৃষি পরিবেশ ও কৃষকদের চাহিদা বিবেচনায় নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে এবং পাট ফসলের বহুমুখী ব্যবহারের উপর বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, বিজেআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত বিজেআরআই কেনাফ এইচসি ৯৫ জাতটি হাওর এলাকার জন্য উপযোগী ও আঁশ মৌসুমে এই জাতটি ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হয়, যার পাটকাঠি সাদা, অনেক লম্বা, নরম, মসৃণ যা উন্নত মানের চারকোল তৈরির জন্য উপযোগী। ফলে এটি হাওর এলাকার মানুষের  আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অন্যদিকে চারকোলের কাঁচামালের উৎস হিসেবে পাটকাঠির জন্য কৃষকেরাও কেনাফ চাষে আরো বেশি আগ্রহী হবে।
ক্রমবর্ধমান বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে অগ্রসর হতে বর্তমান সরকারের নানা পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্য, সেটি অর্জনে আমাদের অন্যতম চালিকাশক্তি হতে পারে চারকোল। পরিশেষে, স্মার্ট ইকোনমি হিসেবে সম্ভাবনার নতুন খাত চারকোলকে কাজে লাগাতে পারলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি কৃষক ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে চারকোল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 

লেখক: ১মহাপরিচালক, ২ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মৃত্তিকা বিজ্ঞান শাখা ৩মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, মানিক মিয়া এভিনিউ, ঢাকা-১২১৫। মোবাইল : ০১৭১৭-৫৬২৬৭৩, ই-মেইল : jikuly@gmail.com or sayem@bjri.gov.bd

বিস্তারিত
নগর-কৃষকের-আঙুর-চাষ

নগর কৃষকের আঙুর চাষ
কে জে এম আব্দুল আউয়াল
আঙুর ফল নিয়ে পৃথিবীতে অন্তহীন গবেষণা হয়েছে। এই ফলের শতশত কালটিভার আছে, পৃথিবীজুড়ে হাজার হাজার জাত আছে। অক্ষাংশের যে অবস্থানে আমাদের দেশ সেখানে আঙুর চাষ প্রায় অসম্ভব। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অর্ধশত বছর অতিক্রম হলেও অধ্যাবধি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, এমনকি বেসরকারি কোম্পানি থেকে আঙুরের জাত অবমুক্ত হয়নি। তবে কৃষিপ্রেমী মানুষেরা এই ফল নিয়ে নিজেদের মতো করে কাজ করছে, তারা পৃথিবীর নাম করা সব জাত নিয়ে নিজ বাড়ির ছাদে বা নিজবাড়ির আঙিনায় যার যার মতো গবেষণা করে যাচ্ছে। আঙুর চাষে কেউ সফল হচ্ছে, কেউ হচ্ছে না, কারণ এই ফল সহজ সরলভাবে আমাদের জলবায়ুতে পর্যাপ্ত ফল দেয় না। কারণ-
আঙুর ফল বিষয়ে সীমিত জ্ঞান; জলবায়ু উপযোগী জাত হাতে না পাওয়া; আঙুর গাছের পুষ্টি চাহিদার ধরন; ট্রেনিং প্রুনিং করতে না পারা; সেচ ব্যবস্থাপনা; রোগবালাই ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সঠিকভাবে করতে না পারা।
ফলের দোকানে সবার আগে আমাদের চোখে পড়ে আঙুরের থোকা, ক্রয় করতে গিয়ে আমরা জিজ্ঞাসা করি আঙুর মিষ্টি না টক। এই আঙুর ফলের জাত বিষয়ে আমাদের জ্ঞান সামান্যতম।
আমরা জানি না কোন জাতের আঙুর থেকে ওয়াইন হয়, জুস হয়, জেলি হয়, কিসমিস হয় এবং মুখে খাওয়ার জন্য উপযোগী জাত কোনটি। কোন জলবায়ুতে কোন জাতের আঙুর ভাল হয়।
আমাদের দেশের সৌখিন ছাদ বাগানীদের হাতে বেশ কিছু ভালো জাতের আঙুর আছে, যেগুলো অট্টালিকার ছাদে চাষে সফলতা এসেছে। জাতগুলো নিম্নরূপ-
১. বাইকুনুর ২. সুলতানা ৩. মাসকাট ব¬ু ৪. একেলো ৫. এঞ্জেলিকা ৬. জয় সিডলেস ৭. ডিক্সন ৮. সিলভা ৯. ভাইকিং-২  ১০. ব¬াক ম্যাজিক ১১. লোরাস ১২. গ্রিন লং ১৩. ব¬াক রুবি ১৪. ভেলেজ ১৫. আবু মাসুদ ১৬. লিয়া ১৭. ডাশুনিয়া ১৮. ভিট্রেব¬াক ১৯. নাডু সিড লেস ২০. ইসাবেলা ২১. কার্ডিনাল ২২. ক্রিমসন ২৩. মুনড্রপ ২৪ হ্যালোয়েন ২৫. অটাম রয়্যাল ইত্যাদি।
জলবায়ু 
আঙুর গাছের বৃদ্ধি ও ফল, ফুলের জন্য দরকার উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ু। আদর্শ তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সে. থেকে ৩২ ডিগ্রি সে. উপযুক্ত এই তাপমাত্রার কম তাপমাত্রায় অঙ্গজ বৃদ্ধি সীমিত হয় এবং ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার অধিক হলে শ্বসন বৃদ্ধি পায়, ফলে সালোকসংশ্লেষণ কম কার্যকরী হয়। এতে আঙুরের থোকা ছোট হয়, আবার আঙুরের আকার আকৃতিও ছোট হয়। 
শূন্য অক্ষাংশ থেকে উত্তর দক্ষিণ উভয় দিকে ৩০-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অক্ষাংশ আঙুর চাষের জন্য আদর্শ। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল আঙুর চাষের জন্য উপযুক্ত জলবায়ু। সেখানে বর্ষাকাল নেই, শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়, তাও খুব বেশি নয়। এই ধরনের জলবায়ুতে শুষ্ক গ্রীষ্ম বিদ্যমান। তবে মেডিটেরিয়ান জলবায়ুতে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা অধিক উচ্চতায় উঠে। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অধিক তাপমাত্রায় আঙুর ছোট হয়, এই জন্য মেডিটেরিয়ান অঞ্চলে কিসমিস তৈরি হয় এমন আঙুর বেশি হয়।
বাংলাদেশের জলবায়ু ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুর মতো। ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল মাসে আর্দ্রতা কম থাকে, শীতকালে মাঝে মধ্যে বৃষ্টিও হয়। তাছাড়া বর্ষাকালে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। কম বৃষ্টিপাত আঙুরের জন্য উপযুক্ত। ৯০০ মিমি. সমবণ্টনের বৃষ্টিপাত আঙুর চাষের জন্য আদর্শ।
ছাদের টবে আঙুর 
আমাদের দেশে শহরের ছাদে আঙুর চাষ করলে বর্ষাকালে আঙুর গাছকে ভালোভাবে টিকিয়ে রাখা যায় কারণ ছাদের টবের মাটি দীর্ঘ সময় স্যাঁতসে্যঁতে থাকে না, আঙুর গাছের শিকড় সবসময় অক্সিজেন পায়। শীতের শেষে গাছকে প্রুনিং করে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে গাছে মুকুল আসলে বর্ষার পূর্বেই অনেক জাতের আঙুর পরিপক্ব হয়। অতএব, আঙুরের যে জাতগুলো কম সময়ে পরিপক্ব হয়, সেই জাতকে ছাদে সহজেই চাষ করা সম্ভব। আগাম বা কম সময়ে পরিপক্ব হয় এমন জাতের মধ্যে বাইকুনুর, ব্ল্যাক ম্যাজিক, ডিক্সন, গ্রিন লং, লোরাস, নাডু সিডলেস। ইত্যাদি জাত কম সময়ে পরিপক্ব হয়। 
আমাদের দেশে যেহেতু বর্ষাকাল আছে, তাই ছাদে আঙুর চাষ যত সহজে সম্ভব মাটিতে তা সম্ভব নয়। ছাদের পরিবেশ ভিন্ন সেখানে আর্দ্রতা কম, সূর্যালোক বেশি এবং ছাদের মেঝে প্রায় বেশির ভাগ সময়ই শুষ্ক থাকে। ইচ্ছে করলে ছাদের টবের মধ্যে যেনো বৃষ্টির পানি না যায়, সে ব্যবস্থাও করা সম্ভব। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ছাদের উচ্চতা মাটি থেকে অনেক বেশি হওয়ায় আঙুরের জন্য বাড়তি সুবিধা হয়। এ ছাড়াও একটি আঙুরের গাছের ক্যানোপি অন্যান্য ফল গাছের তুলনায় কম বলে বড় সাইজের টবে, ড্রামে বা জিও ব্যাগে আঙুর গাছের জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত মাটি পানি ও পুষ্টির নিশ্চিত ব্যবস্থা করা সম্ভব।
টবের মাটির ধারণা 
আঙুর গাছের পছন্দ বেলে দোঁ-আশ, বেলে লাল দোঁ-আশ, কাদা বেলে দোঁ-আশ, লাল দোঁ-আশ ইত্যাদি মাটি, যে মাটির পানি ধারণ গুণও ভাল। মাটির অ¤¬মান (Ph) ৬.৫ থেকে ৮.০ আদর্শ। এই ধরনের ভার্জিন মাটি সংগ্রহ করে তার সাথে আয়তনের ৫০% ভার্মিকম্পোস্ট, ৫-১০% হাড়ের গুঁড়া, ৫-১০% ডোমার বা সিলেট স্যান্ড মিশ্রিত করে আঙুরের টবের মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে। কোনো রকম নেমাটোড যেনো এই মাটিতে না থাকে সেজন্য মাটি শোধন করতে হবে। প্রস্তুতকৃত মাটি ছাদে পাতলা করে বিছিয়ে কালো পলিথিন দিয়ে বায়ুরোধী করে সপ্তাহখানেক ঢেকে রাখতে হবে। অন্য পদ্ধতি হিসাবে মাটি থেকে নেমাটোড মুক্ত করার জন্য কার্বোফিউরান বা ফিপ্রোনিল গ্রুপের কীটনাশক পরিমাণ মতো মিশ্রিত করে (২০ ইঞ্চি টবে ২০ গ্রাম হারে) নিতে হবে। টব প্রস্তুতির জন্য উলে¬খিত দোঁয়াশ মাটি না পেলে বালি, পলিমাটি, ভার্মি ইত্যাদি মিশ্রিত করে মাটি তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে।
টবের আকার 
আঙুরের চারা রোপণের প্রথম বছর শুধুমাত্র কা- তৈরির জন্য ১০ ইঞ্চি -১২ ইঞ্চি টব ব্যবহার করলেই চলবে। তবে আঙুর গাছের শিকড় এক মিটার পর্যন্ত গভীরে যেতে অভ্যস্থ, তাই আঙুরের ফলনের জন্য এবং অনেক বছর গাছটিকে টবে রাখতে চাইলে ২৪ ইঞ্চি টব বা তার চাইতেও বড় মাপের টবে রাখতে হবে। আঙুর চাষের জন্য সদ্য প্রস্তুতকৃত টবে, ড্রামে বা জিও ব্যাগে চারা রোপণ না করে অপেক্ষা করতে হবে ৪ (চার) থেকে ৬ (ছয়) সপ্তাহ। তৈরি করে রাখা টবের মাটিতে প্রতি সপ্তাহে সীমিত পরিমাণ পানি সেচ দিতে হবে।
চারা নির্বাচন ও রোপণ
আঙুর চারা রোপণের সঠিক সময় শীতের শেষে, বসন্তের শুরুতে। বয়স্ক কা-ের কাটিং থেকে উৎপন্ন স্বাস্থ্যবান চারা নির্বাচন করতে হবে। সৌখিন পর্যায়ে রুট স্টকের উপর গ্রাফিটিং এর চারা নির্বাচন না করাই উত্তম। আঙুরের ফলনের উপর ও মানের উপর রুট স্টকের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আমরা যেহেতু এখনো মাঠে বাণিজ্যিক চাষাবাদ করবো না, তাই কাটিংই ভালো।
আঙুর গাছের বৃদ্ধি মৌসুম আমাদের দেশে মার্চ মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত, এই সময়ের মধ্যেই আঙুর গাছের খাড়া  পাঁচ(৫) ফুট একক কা- (Trunk) তৈরি করা হয়।
ট্রেনিং প্রুনিং 
রোপণকৃত আঙুর গাছের কা- অক্টোবর মাসের শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, শাখা প্রশাখা বৃদ্ধি পায়। প্রথম শীতের ট্রেনিংয়ের সময় সমস্ত শাখা প্রশাখা ছাঁটাই করতে হবে এবং পাঁচ ফুট বা কাছাকাছি সুবিধাজনক উচ্চতায় কা- কেটে দিতে হবে। এই পাঁচ ফুট কা-কে আমরা ট্রাংক  বলব। ফেব্রুয়ারি মাসে এই ট্রাংকের মাথার দুইটি কুঁড়ি (Bud) থেকে দুইটি শাখা সৃষ্টি হবে। এই দুইটি শাখার ৪র্থ ও ৫ম বা শুধুমাত্র ৪র্থ পত্র কক্ষ থেকে আঙুরের ফুলের থোকা বের হবে। এই শাখা দুটিকে প্রাথমিকভাবে কেইন (Cane) বলে। এই দুটি কেইন (Cane) কে পূর্ব-পশ্চিম টানা তারের সথে বাইতে দিতে হবে, আসন্ন শীত পর্যন্ত কোনো প্রুনিং করা চলবে না, তবে ট্রাংক থেকে কোনো Water sucker  বা গাছের গোড়া থেকে কোনো সাকার (Sucker) বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে দেওয়া যাবে না।
দ্বিতীয় শীতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত দুই বাহু উভয় দিকে সর্বোচ্চ চার (৪) ফুট করে রেখে অবশিষ্টাংশ কেটে ফেলতে হবে। ট্রাংকের উভয় পার্শ্বের দুই বাহুকে এখন বলা হবে কর্ড (Condon)। এই কর্ডের সাথে স্বল্প বৃদ্ধিপ্রাপ্ত যদি কোনো শাখা থাকে তাকে আমরা স্পার (Spur) বলবো। স্পারের (Spur) দুইটি পত্র কক্ষ রেখে ছাঁটাই করে দিতে হবে। দ্বিতীয় শীতের এই ছাঁটায়ের পর থেকে আঙুর উৎপাদন শুরু হবে। পরবর্তীতে কর্ড  থেকে কেইন  ও স্পার  উৎপাদন অব্যাহত থাকবে সাথে আঙুর উৎপাদন হতে থাকবে।
সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা 
আঙুর গাছের পানি চাহিদা কম, তাই নিয়মিত অথচ স্বল্প সেচ এই ফলের জন্য যথেষ্ট। শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন সকালে সেচ দিতে হবে। সকালে ছাদের ও টবের তাপমাত্রা সেচের পানির প্রায় সমান থাকে। প্রতিদিন বিকালে টবের মাটি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে, বাড়তি সেচ প্রয়োজন হলে তা সকাল বেলা সেচের পানি বাড়িয়ে দিতে হবে। ছাদ ভিজিয়ে ও টবের মাটি স্যাঁতসেতে করে আঙুরের টবে সেচ দেওয়া অনুচিত।
সার প্রয়োগের সময় খেয়াল রাখতে হবে, আঙুরের জন্য ভার্মিকম্পোস্ট, খৈল ও হাঁড়ের গুঁড়াকে প্রাধান্য দিতে হবে। তবে আঙুর গাছে ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও আয়রন ঘাটতি দেখা যায়। এই অণুখাদ্যগুলো টবের মাটিতে পানিতে গুলে দেয়া উত্তম। ছাদের গাছে অনুখাদ্য পাতায় স্প্রে করে দিতে চাইলে অবশ্যই অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে কম মাত্রায় সকালে বা বিকেলে স্প্রে করতে হবে। আঙুরের টবে ইউরিয়া প্রয়োগ প্রয়োজন পড়বে না, টিএসপি ও পটাশ সারের প্রয়োজন থাকলে শীতের শেষে আঙুর গাছ প্রুনিংয়ের পরপর প্রয়োগ করতে হবে। পটাশ সারের ক্ষেত্রে সালফেট অব পটাশ নির্বাচন করা উত্তম।
রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা 
আঙুর গাছের পাতায়, পুষ্পমঞ্জরিতে, ফলের থোকায় যে সমস্ত রোগ আমরা সাধারণত দেখতে পাই, তা পাউডারি মিলডিউ, মিলডিউ ডাউনিমিলডিট এবং গ্রেমোল্ড। এই তিনটি রোগ ছাড়াও অল্টারনেরিয়া লিফ স্পট রোগ দেখা যায়। এই সমস্ত রোগ আঙুরের পাতায় হলে পাতা বয়স্ক হওয়ার আগেই মরে যায়, এতে গাছের আঙুরের আকার ছোট হয়, মিষ্টতা কম হয় এবং পরবর্তী বছর আঙুরের যে পুষ্প মঞ্জরি সৃষ্টি হবে তা ছোট হয়। এই রোগসমূহ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য ম্যানকোজেব এবং কার্বেনডাজিমের মিশ্রণ মাত্রা মতো নিয়মিত স্প্রে করতে হবে। বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে থ্রিপস ও মাকড়ের প্রকোপ বাড়ে, আঙুর গাছের পাতা, পুষ্পমঞ্জরি এবং আঙুরের থোকায় থ্রিপস আক্রমণ দেখা যায়, ক্ষুদ্র সাদা মাকড়ে আক্রমণও হয়। এই পোকা ও মাকড়কে এবামেকটিন ১.৮ ইসি বা হেক্সিথায়াজক্স নামক মাকড়নাশক দ্বারা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আঙুর গাছের শিকড় নেমাটোড আক্রান্ত হয়। সাধারণত গবষড়রফড়মুহব ংঢ় এর নেমাটোড শিকড় আক্রমণ করে গিট (কহড়ঃ) সৃষ্টি করে, আক্রান্ত আঙুর গাছ মাটি থেকে পানি ও পুষ্টি আহরণ করতে পারে না; এছাড়া ফধমমধৎ নেমাটোড আঙুরের শিকড়ে আক্রমণ করে। গাছকে খাদ্য ঘাটতিযুক্ত দেখায়। গাছের বাড়বাড়তি বন্ধ হয়ে যায়, ফুল ফল কাংক্ষিত হয় না। নেমাটোড নিয়ন্ত্রণের জন্য টবের আকার অনুযায়ী ৫-১০ গ্রাম কার্বোফিউরান ৫ জি বা ফিপ্রোনিল ০.৫ জি টবের মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে, একবার ফল ধরার পূর্বে আর একবার ফল আহরণের পর। ছাদ বাগানে যে কোনো কীটনাশক স্প্রে করার উপযুক্ত সময় সূর্যাস্তের পূর্বে এবং সূর্যোদয়ের পরপর। 

লেখক : পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), হর্টিকালচার উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১১১৯২৮০৬,   ই-মেইল :  dhw@dae.gov.bd, kjmawal@gmail.com

বিস্তারিত
ডাল-ফসলের-উৎপাদন-বৃদ্ধি-এবং-করণীয়

ডাল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং করণীয়
ড. মোঃ আলতাফ হোসেন
মানুষের দেহঘড়িকে চালু রাখার জন্য খাদ্য গ্রহণ একটি অত্যাবশ্যক প্রক্রিয়া। আর আমিষের উৎস হিসেবে উদ্ভিজ আমিষ (যেমন- বিভিন্ন ধরনের ডাল) খেয়ে থাকি। ডালের মধ্যে প্রকারভেদে ২২-২৮% আমিষ থাকে, উল্লেখ্য যে, ডালের আমিষের শতকরা ৭০-৯০ ভাগ দেহের পুষ্টি সাধনে ব্যবহৃত হতে পারে আর প্রাণিজ আমিষের ৪০-৫০% দেহের পুষ্টি সাধনে ব্যবহৃত হতে পারে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, দেহের জন্য ডালের আমিষ প্রাণিজ আমিষের চেয়ে ভালো এবং নিরাপদ। 
ঋঅঙ এর সুপারিশ মতে আমাদের সুষম খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন জনপ্রতি ৪৫ গ্রাম ডালের চাহিদা থাকলেও আমরা পেয়ে থাকি মাত্র ১৭-১৮ গ্রাম। গড়ে প্রতি বছর আমাদের প্রায় ২৬ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয় মাত্র ১০ লাখ মেট্রিক টন (কৃষি ডাইরি ২০২২) এবং আমদানী করা হয় ১০-১১ লাখ টন (ঋঅঙ ঝঃধঃ ২০২২) আর বাকী ৫-৬ লাখ টন ঘাটতিই রয়ে যায়। বিদেশ থেকে ডাল আমদানী করতে প্রতি বছর আমাদের প্রায় ৮-৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয় (ঋঅঙ ঝঃধঃ ২০২২)। অথচ আমরা যদি সচেতন হই এবং পরিকল্পিতভাবে ডাল ফসল চাষ করা হয় তাহলে ডালের আমদানী নির্ভরতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস করা সম্ভব। 
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে অদ্যবধি বিভিন্ন ধরনের ডাল ফসলের যেমন- খেসারি, মসুর, ছোলা, মটর, মুগ, মাস, অড়হর, ফেলন ইত্যাদির ৯১টি উন্নত জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যা ব্যবহার করে বর্তমান শস্য ধারাকে ঠিক রেখে বছরজুড়েই ডাল ফসল চাষ করা যায়। এসব উচ্চফলনশীল জাত ও আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফলন ১.৫-২.০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। উচ্চফলনশীল আধুনিক জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় বিগত ১০ বছরে ডালের এলাকা, উৎপাদন ও ফলন অনেক বেড়েছে। প্রতি হেক্টরে ২০১২ সালে যেখানে ডালে গড় ফলন ছিল ৮০০ কেজি/হেক্টর, সেখানে ২০২৪ সালে সেটা হয়েছে ১২৭১ কেজি/হেক্টর (কৃষি ডাইরি ২০২৪)। ডালের উৎপাদন প্রতি বছর ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলেও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। 
বাংলাদেশে তিন মৌসুমেই ডাল ফসলের চাষ করা যায়। দেশে প্রায় ১২ রকম ডাল ফসল চাষ হয়ে থাকে। যার ৯০ শতাংশ জুড়ে আছে খেসারি, মসুর, ছোলা, মুগ, মাষকলাই ও ফেলন। খেসারি, মসুর ও ছোলা রবি মৌসুমে এবং এলাকাভেদে মুগ, মাষকলাই ও ফেলন যথাক্রমে বিলম্ব-রবি, খরিফ-১ এবং খরিফ-২ মৌসুমে চাষ করা হয়। 
বর্তমান ফসল ধারাকে অপরিবর্তীত রেখে এসব উন্নত জাতগুলো চাষ করে কিভাবে ডাল ফসলের এলাকা ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় তার একটি দিকনির্দেশনা নি¤েœ উল্লেখ হলো- 
মসুর ঃ জনপ্রিয়তা ও চাহিদায় মসুর আমাদের দেশে প্রথম স্থান অধিকার করে আছে, যার কারণে কৃষকদের মাঝে মসুর চাষের আগ্রহই বেশি দেখা যায়। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে প্রচলিত শস্য ধারায় রবি মৌসুমে যেসব এলাকায় মসুর চাষ হয় সেখানে আধুনিক পদ্ধতিতে বারি ও বিনার উচ্চফলনশীল আধুনিক জাতসমূহ চাষ করে স্থানীয় জাতের তুলনায় ১.৫-২.০ গুণ পর্যন্ত ফলন বেশি পাওয়া সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মসুরের জাতীয় গড় ফলন- ১৪০০ কেজি/হেক্টর, অথচ বারি মুসর-৮ এর স্থান ভেদে কৃষক মাঠে গড় ফলন- ২১০০-৩০০০ কেজি/হেক্টর। চাষ করে বপন ছাড়াও বিনা চাষে নিচু ও মাঝারি নিচু জমিতে রোপা আমন/বোনা আমন ধানের সাথে বিনা চাষেই সাথী ফসল হিসেবে সন্তোষজনকভাবে মসুর চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে, চাষ করা মসুরের তুলনায় বীজের পরিমাণ ২৫-৩০% পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে হয়, পক্ষান্তরে আবার বিনাচাষে উৎপাদনের কারণে উৎপাদন খরচ ৪০-৫০% পর্যন্ত কমে যায়। এছাড়াও সরিষা, গম, শীতকালীন ভুট্টা ও আখ চাষের ব্যাপক এলাকা জুড়ে মিশ্র বা আন্তঃফসল হিসেবে মসুরের চাষ করে এর উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা যায়। উদাহরণস্বরূপ- আখ রোপণের পর দুই সারি আখের মধ্যকার খালি জায়গায় মসুর চাষ করে গড়ে ৭০০-১০০০ কেজি/হেক্টর মসুর উৎপাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশে প্রায় ১.৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়ে থাকে। সুতরাং আখ চাষের আওতাধীন জমিতে আখের সাথে আন্তঃফসল হিসেবে মসুর চাষ করে প্রায় ১.০-১.৫ লক্ষ মেট্রিক টন মসুর উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়াও পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীসহ অন্যান্য নদীর বিস্তীর্ণ চর এলাকায় সন্তোষজনকভাবে মসুরের চাষ করে উৎপাদন বাড়ানো যায়। আবার, ব্যাপক এলাকাজুড়ে বিভিন্ন ধরনের ফল বাগানে যেমন-নতুন স্থাপনকৃত কলা বাগান, আম বাগান, পেয়ারা বাগান, লিচু বাগান, কুল বাগান ইত্যাদির মধ্যেকার খালি জায়গায় অনায়াসেই মসুর চাষ করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মসুর উৎপাদন করা সম্ভব।  
খেসারি : বর্তমান পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এলাকা ও উৎপাদনের ভিত্তিতে খেসারি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে (কৃষি ডাইরি ২০২৪)। খেসারী সাধারণত মাঝারি নিচু থেকে নিচু এলাকায় আমন ধানের সাথে সাথী ফসল হিসেবে চাষ হয়ে থাকে। আর যেসব এলাকায় খেসারি চাষ হয় বিশেষ করে দেশের নিম্নাঞ্চলে সেখানে সাধারণত অধিকাংশ কৃষকই স্থানীয় জাত চাষ করে থাকেন। এসব এলাকায় সঠিক উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল বারি খেসারী-২, বারি খেসারি-৩, বারি খেসারি-৫, ও বারি খেসারি-৬ এবং বিনা খেসারি-১ চাষ করে ফলন প্রায় ১.৫-২.০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। 
মটর : আধুনিকতা ও স্বাস্থ্য সচেতনতার ছোঁয়ায় বর্তমানে সবজি হিসেবে মটরশুঁটির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ চাহিদাকে আমলে নিয়ে ক্রমান্বয়ে মটর চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। বর্তমানে বেশ কিছু স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি এসব আমন ধান যেমন- বিনাধান-১৭, ব্রিধান-৬২ বা অন্যান্য জাত চাষ করে সেই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে স্বল্পমেয়াদি বারি মটরশুঁটি-২ ও  বারি মটরশুঁটি-৩ অথবা বারি মটর-২ চাষ করে শুঁটি সংগ্রহ করার পর আনায়াসেই বোরো ধান চাষ করা যায়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিস্তÍীর্ণ এলাকা মটর চাষের আওতায় এনে মটরের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। এছাড়া মাঝারি নিচু অনেক জমি আমন ধান কাটার পর পতিত পড়ে থাকে। একটু সচেতনতা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেসব জমিতে সাথী ফসল হিসেবে অনায়াসেই বারি মটর-৩ চাষ করে মটরের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ ছাড়া উপরে বর্ণিত নদীগুলোর বিশাল চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে মটর চাষ করা যেতে পারে।
ছোলা : রবি মৌসুমে রোপা আমন ধান কাটার পর রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকা, সিলেট এবং বরিশালের ব্যাপক এলাকা পতিত পরে থাকে। এসব এলাকার মধ্যে বরেন্দ্র ও সিলেট এলাকায় আগাম আমন ধান কাটার পর পরই নভেম্বর মাসের মধ্যে উচ্চফলনশীল জাতের ছোলা চাষ করে চাষাবাদের এলাকা ও উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে, এক্ষেত্রে ফসলে সেচ প্রদান করতে হতে পারে। একইভাবে নভেম্বরের শেষ থেকে মধ্য-ডিসেম্বরের মধ্যে বরিশালের উত্তরাংশের উপজেলাগুলোতে ছোলা চাষ করা যেতে পারে। এছাড়া মসুরের মতোই আখের মধ্যে আন্তঃফসল হিসেবে ছোলা চাষ করে ৭৫০-১০০০ কেজি/হেক্টর ছোলা উৎপাদন সম্ভব। এমনকি চরাঞ্চলের উঁচু জমিগুলোতে অনায়াসে ছোলা চাষ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। 
বাংলাদেশ প্রায় ২.৩ মিলিয়ন হেক্টর জমি রোপা আমন ও বোরো ধান চাষের মাঝখানে প্রায় ৯০ দিন পতিত পরে থাকে এসব জায়গায় স্বল্পমেয়াদি শীতকালীন ডাল ফসল যেমন- স্বল্প মসুর, ছোলা, মটর ইত্যাদি চাষ করে ডাল ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। 
মুগ (খরিফ-১) : আধুনিক ও উচ্চফলনশীল মুগ ডাল হচ্ছে ডাল ফসলের মধ্যে সবচেয়ে স্বল্পকালীন ফসল অর্থাৎ ৫৫-৬৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। বারি এবং বিনার উদ্ভাবিত মুগের জাতগুলো স্বল্পমেয়াদি ও উচ্চফলনশীল। রবি ফসল সংগ্রহের পর রোপা আমন ধান রোপণের পূর্ববর্তী ফাঁকা সময়ে খরিফ-১ মৌসুমে বৃহত্তর রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর ইত্যাদি জেলাগুলোতে সেচ সুবিধার আওতায় সকল রবিশস্যের জমিতে অনায়াসেই বারি মুগ ও বিনা মুগের উচ্চফলনশীল জাতসমূহ যেমন- বারি মুগ-৬, বারি মুগ-৭ ও বারি মুগ-৮ এবং বিনা মুগ-৫ ও বিনা মুগ-৮ চাষ করা যায়। আখের জমিতে মসুর/ছোলা সংগ্রহের পর সেখানেও স্বল্পমেয়াদি উচ্চফলনশীল মুগডাল চাষ করলে গড়ে ৫০০-৬০০ কেজি/হেক্টর মুগডাল উৎপাদন সম্ভব। সুতরাং দেখা যাচ্ছে আখের মধ্যে সাথী ফসল হিসাবে ডালফসল চাষ করলে সেখানে রবি ও খরিফ উভয় মৌসুম মিলে গড়ে ১২০০-১৬০০ কেজি/হেক্টর বাড়তি ডাল ফসল পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও ফসলের বাগানের মধ্যের ফাঁকা জায়গায় মুগডাল চাষ করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়তি ডাল ফসল পাওয়া যাবে। খরিফ-১ মৌসুমে মুগের মতো বারি মাস-৩, বারি মাস-৪ ইত্যাদি জাতের মাষকলাইও চাষ করা যায়। 
এ ছাড়াও, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে যেমন- বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়ে গম/আলু বা অন্যান্য রবিশস্য সংগ্রহের পর হেক্টরপ্রতি ১ টন ডলোচুন এবং ১.০-১.৫ কেজি বোরণ প্রয়োগ করে সন্তোষজনকভাবে মুগডাল চাষ করা যেতে পারে। 
মুগ ও মাস (খরিফ-২) : দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে আউশ ধান/পাট-পতিত-রবি ফসল এই শস্য ধারায় প্রায়       ৮০-৯০ দিন জমি পতিত পড়ে থাকে। এই পতিত জমিগুলোতে বিদ্যমান শস্য ধারাকে কোন ব্যাঘাত না ঘটিয়ে মুগ ও মাষকলাইয়ের উচ্চফলনশীল জাত যেমন- বারি মুগ-৬, বারি মুগ-৭ ও বারি মুগ-৮ এবং বিনা মুগ-৫ ও বিনা মুগ-৮ চাষ করা যায়। এছাড়া খরিফ-১ মৌসুমের মুগ অথবা মাষকলাই সংগ্রহের পর সকল উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে খরিফ-২ মৌসুমে আবারও মাষকলাই চাষ করা যায়। মাসকলাই অধিক অভিযোজনক্ষম ফসল হওয়ায় বিভিন্ন রাস্তা ও বাঁধের ধারে, পুকুর পাড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের ফল বাগানেও মাসকলাই চাষ করা যায়। 
অড়হর : আমাদের ফসল চাষের নিবিড়তার প্রতিযোগিতায় একক ফসল হিসেবে অড়হর চাষের তেমন সুযোগ নেই। তবে দেশের বিস্তৃত এলাকায় বসতবাড়ির ধারে, পুকুর, খাল ও নদীর পাড়ে, সড়ক, রেল সড়ক ও হাইওয়েতে এমনকি পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ের ঢালে পতিত পড়ে থাকা জমিতে শুধু বীজ বপন করে দিলেই এসব এলাকা অড়হর ডাল চাষের আওতায় আসবে এবং প্রচুর পরিমাণ অড়হর ডাল উৎপাদিত হবে যা মানুষ, গবাদি পশু ও হাঁস মুরগীর পুষ্টি চাহিদা পুরণে ব্যাপক অবদান রাখবে। উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি বারি অড়হর-১ নামে অড়হরের একটি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে, যার ফলগুলো একই সাথে পাকে এবং উচ্চফলনশীল। অড়হরের ডাল-পালা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জ¦ালানি সংকটও অনেকটা নিরসন করবে।
ফেলন ও মুগ : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো যেমন- বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগ ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে স্থানীয় জাত দ্বারা ফেলনের চাষ হয়ে থাকে। এসব এলাকায় উচ্চফলনশীল বারি ফেলন-১ ও বারি ফেলন-২ চাষ করে ফেলনের উৎপাদন বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বৃহত্তর বরিশাল বিভাগে বিশেষ করে পটুয়াখালী জেলায় উচ্চফলনশীল জাতের মুগ ব্যাপকভাবে চাষ করে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা যায়। এক্ষেত্রে অনেক সময় খরার হাত থেকে ফসলকে রক্ষার জন্য ক্ষেতের পাশে ছোট পুকুর কেটে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে সেই পানি দিয়ে সেচ প্রদান করার ব্যবস্থা রাখলে উৎপাদন অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। 
পরিশেষে বলা যায়, ডালের উৎপাদন বৃদ্ধির এই চিহ্নিত ক্ষেত্রগুলোকে বাস্তব ভিত্তিতে কাজে লাগানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বিভিন্ন কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কৃষক ভাইয়েরা সম্মিলিতভাবে এগিয়ে এলে এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তিতে ডাল চাষ করতে পারলে ডালের উৎপাদন কাক্সিক্ষত মাত্রায় বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি পাবে। দরকার শুধু পরিকল্পনামাফিক সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং সেটার বাস্তবায়ন।  

লেখক : মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ  কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঈশ্বরদী, পাবনা। মোবাইল :  ০১৭২৫-০৩৪৫৯৫, ই- মেইল : hossain.draltaf@gmail.com

বিস্তারিত
উন্নত-জাতসমৃদ্ধ-পাটশাকের-বছরব্যাপী-চাষাবাদ-প্রযুক্তি

উন্নত জাতসমৃদ্ধ পাটশাকের বছরব্যাপী চাষাবাদ প্রযুক্তি
ড. এম. মনজুরুল আলম মন্ডল
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পাটের পাতার বহুল ব্যবহার প্রচলিত আছে। পাট সাধারণত বর্ষা মৌসুমের ফসল, তখন বেশির ভাগ এলাকায় পাটশাক সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশের দুটি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যথা বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরই) ও বাংলাদেশ পরমাণু  কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) শাক হিসেবে ব্যবহারের জন্য পাটের চারটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে যা প্রচলিত আঁশ হিসেবে চাষকৃত জাতের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ ফলন দেয়। পাটশাকের পুষ্টিগুণ, সুস্বাদুতা ও ঔষধিগুণের বিষয়াদি নিয়ে যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ ও ব্যাপক প্রচারণা করা গেলে ভবিষ্যৎ পুষ্টি ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে।
পাটশাকের উন্নত জাতসমূহ
বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ : বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ দেশি পাটশাকের একটি উন্নত জাত। এ জাতটি খাট, বেশি পাতা বিশিষ্ট ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। এ জাতের গাছ সম্পূর্ণ সবুজ এবং পাতা গাঢ় সবুজ বর্ণের। জাতটি সমগ্র বাংলাদেশে বপন উপযোগী। এ ছাড়া জাতটিতে আমিষ, আঁশ, ভিটামিন-সি, অ্যাশ, কার্বহাইড্রেট এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন (ভিটামিন-এ) বিদ্যমান। এ জাতটি থেকে কোন প্রকার আঁশ পাওয়া যায় না। কারণ গাছটি খুবই খাট। দেশি জাত হওয়া সত্ত্বেও এ জাতের পাতা মিষ্টি স্বাদযুক্ত হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা অন্যান্য জাতের চেয়ে বেশি। এ জাতের পাট গাছের বয়স ৩৫-৪০ দিন হলে তখন থেকেই শাক খাওয়া যায়। প্রথমে ছোট চারা গাছ তুলে এবং পরবর্তীতে গাছের ডগা ছিঁড়ে শাক খাওয়া যায়। ডগা খাওয়ার কিছুদিন পর শাখা-প্রশাখা থেকে কচি পাতা বের হলে সেগুলোও শাক হিসেবে খাওয়া যায়। এভাবে বেশ কয়েকবার শাক সংগ্রহ করা যায়। বিজেআরআই পাটশাক-১ একবার চাষ করে দীর্ঘ কয়েক মাস পর্যন্ত শাক সংগ্রহ করা যায়। বাড়ির ছাদে/বারান্দায় কয়েকটি টবে পাটশাক চাষ করে ছোট পরিবারের শাকের চাহিদা সহজেই পূরণ করা যায়। বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ এর পাতার ফলন প্রায় ৩.০-৩.৫০ টন/হেক্টর। মাঠ পর্যায়ের ফলাফলের ভিত্তিতে বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ সারা দেশে চাষযোগ্য সবচেয়ে ভাল জাত। 
বিজেআরআই দেশি পাটশাক-২ : বিজেআরআই দেশি পাটশাক-২ বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ এর তুলনায়   আকারে ছোট। ম্যাড়াশাক (লাল) নামে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে পরিচিত। এটিকে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের কৃষকের নিকট জনপ্রিয়।  এ জাতের পাটশাকে আমিষ, ভিটামিন-সি, আঁশ এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন (ভিটামিন-এ) পাওয়া যায়। এ জাতের পাটগাছ গাছের কা-, পাতার বৃন্ত ও শিরা গাঢ় লাল। পাতা গাঢ় সবুজ বর্ণের ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। এ জাতটি মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের শেষ (ফাল্গুন মাস থেকে মধ্য কার্তিক) পর্যন্ত বপন করা যায়। তবে মার্চ থেকে জুলাই এর শেষ (মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য শ্রাবণ) পর্যন্ত সময়ে বপন করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। বিজেআরআই দেশি পাটশাক-২ এর পাতার ফলন প্রায় ৩.০০-৩.৫০ টন/হেক্টর।
বিজেআরআই দেশি পাটশাক-৩ : বিজেআরআই দেশি পাটশাক-৩ আকার বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ এর তুলনায় ছোট। গাছের কা-, পাতার বৃত্ত ও শিরা গাঢ় সবুজ। পাতা মিষ্টি স্বাদযুক্ত ও গাঢ় সবুজ বর্ণের। এ জাতটিও  বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে জনপ্রিয়। জাতটি আমিষ, ভিটামিন-সি, আঁশ, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ (ক্যারোটিন) এবং আঁশ সমৃদ্ধ। এ জাতটি ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের শেষ পর্যন্ত বপন করা যায়। তবে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত সময়ে বীজ বপন করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। পাট গাছের বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে শাক সংগ্রহ করা শুরু হয়। তবে এ জাতে দ্রুত ফুল এসে যায় বলে এক বা দুই ধাপেই শাক সংগ্রহ করতে হয়। বিজেআরআই দেশি পাটশাক-৩ এর ফলন ৩.০-৪.০ টন/হেক্টর। তবে বীজ বপনের সময় ভেদে ফলনের তারতম্য হতে পারে। 
বিনা দেশি পাটশাক-১ : বিনা পাটশাক-১ জাতটি খাটো। এ জাতটি থেকে কোনো প্রকার আঁশ পাওয়া যাবে না। অন্যান্য জাতের চেয়ে পাতার সংখ্যা ও আয়তন বেশি। পাতা দেখতে গাঢ় সবুজ ও সতেজ; ফলে বাজারে চাহিদা বেশি। শাক-পাতার ফলন হেক্টরে প্রায় সাড়ে তিন টন। অন্যান্য জাতের তুলনায় এ জাতটির পাতায় ভিটামিন-এ পরিমাণ বেশি (১০,৭০০ মাইক্রোগ্রাম/ ১০০গ্রাম)। এ জাতটি বপন করার ৩০ দিনের মধ্যে পাটশাক তোলা যায়। তবে এ জাতটির পাতার শাক অন্যান্য যে কোন জাতের তুলনায় তিতা বেশি। 
বপনের সময়
পাটশাক চাষের উপযুক্ত তাপমাত্রা হলো ২৪-৩৭০ সে.। তাই ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাস ব্যতীত বছরের যে কোন সময় সবজি হিসেবে পাট পাতার উৎপাদন করা সম্ভব। ফাল্গুনের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি (ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে আগস্ট মাস) সময়ের মধ্যে বীজ বপন করলে ফলন বেশি হয়। তবে  ব্যবসায়িক ভিত্তিতে পাটশাক চাষাবাদের জন্য বর্তমানে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ বপন করা হচ্ছে। তবে বৃষ্টির সময় বপন না করা উত্তম। 
চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত জমি
পানি জমে থাকে না এ রকম সব ধরনের দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী। তবে বেলে দো-আঁশ থেকে এঁটেল মাটিতে পাটশাক চাষ করা যায়। এ ছাড়া বাড়ির আঙ্গিনা ও উর্বর অনাবাদি প্রান্তিক জমিতে চাষ করেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় পাটশাক চাষ করা যায়।
জমি তৈরি
মাটির প্রকারভেদে আড়াআড়ি ৩-৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে এবং আগাছামুক্ত করে বীজ বপন করতে হবে। মই দিয়ে জমি সমান করার পর সুবিধামতো আকারে প্লট তৈরি করে নিলে পরবর্তীতে সেচ প্রয়োগ, পানি নিষ্কাশন ও অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। 
বীজহার
সারিতে বপন করলে ৬-৭ কেজি/হেক্টর, ছিটিয়ে বপন : ৮-১০ কেজি/হেক্টর। প্রতি ১০ কেজি বীজে ২৫ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স-২০০ বা ব্যাভিস্টিন ব্যবহার করা যেতে পারে। বীজ শোধনের জন্য মাত্রানুযায়ী ছত্রাকনাশক (প্রতি ১০ কেজি বীজে ২৫ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স-২০০ বা ব্যাভিস্টিন) মিশিয়ে একটি বদ্ধ পাত্রে ৪৮ ঘণ্টা রাখা আবশ্যক। বীজ ছোট বিধায় বীজের সংগে ছাই বা বালি মিশিয়ে ছিটালে হিসাবমতো বীজ ছিটানো যায়। ছিটিয়ে ও সারিতে উভয় পদ্ধতিতে বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব  ৩০ সেমি. এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৫-৬ সেমি.। সারিতে বীজ বপন করলে গাছের পরিচর্যা করা সহজ হয় এবং এত ফলনও বৃদ্ধি পায়। গাছ বেশি ঘন হলে চারা গজানোর পর আংশিক পাতলা করে দিতে হবে। 
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরির সময় হেক্টরপ্রতি ৪ টন গোবর সার প্রয়োগ করা খুবই প্রয়োজন। হেক্টরপ্রতি ৫০ কেজি ইউরিয়া, ৩০ কেজি ডিএপি এবং ৪০ কেজি এমওপি সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হয় (ইউরিয়া ব্যতীত)। অর্ধেক ইউরিয়া সার শেষ চাষের সময় এবং বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার চারা গজানোর ১২-১৫ দিনের মধ্যে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া উপরিপ্রয়োগের পরপরই জমি মালচিং করে দিতে হবে। অথবা চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার পানিতে মিশিয়ে (১ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম ইউরিয়া) ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। ইউরিয়া সার ছিটানোর সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে সার পাতার সাথে লেগে না থাকে। তবে সার প্রয়োগের পর ৭-১০ দিন পর্যন্ত শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। সারের মাত্রা মাটির প্রকার ও এলাকাভেদে ভিন্ন হতে পারে। সেক্ষেত্রে থানা নির্দেশিকা বা জাতীয় সার নির্দেশিকার মাত্রা অনুসরণ করা যেতে পারে।  
পরিচর্যা
অধিক শাক উৎপাদনের জন্য প্রাথমিক পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিড়ানী ও পাতলাকরনে অবহেলা করলে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। ফলে শাকের ফলন কমে যায়। জমি আগাছামুক্ত রাখা প্রয়োজন। ফাল্গুন-চৈত্র-বৈশাখ মাসে বৃষ্টি কম হয় বিধায় জমির জোঁ অনুযায়ী সেচ ও আঁচড়া দিতে হবে। আবার বর্ষাকালে জমিতে যেন পানি জমে না থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় ড্রেনের ব্যবস্থা করতে হবে। চারা গজানোর দুসপ্তাহ পর থেকে কিছুদিন পর পর ঘন চারা উঠিয়ে ফেলা দরকার। দফায় দফায় ঘন চারা উঠিয়ে শাক হিসেবে খাওয়া চলে। শাকের জন্য চাষকৃত জমিতে খুব একটা পোকামাকড় ও রোগবালাই দেখা যায় না। জমিতে পোকামাকড় ও রোগবালাই দেখা দিলেও আপদনাশক প্রয়োগ না করাই উত্তম। কীটনাশক/বালাইনাশক প্রয়োগ করার প্রয়োজন হলে কীটনাশক/বালাইনাশক প্রয়োগ করার ১০ দিন পর শাক উত্তোলন এবং খাওয়া যেতে পারে।  
পাটশাক সংগ্রহ
পাট গাছের বয়স ৩৫-৪৫ দিনের মধ্যে হলেই তখন থেকেই শাক খাওয়া যায়। প্রথমে গাছ তুলে এবং পরবর্তীতে গাছের সংখ্যা কমে গেলে গাছের ডগা ছিঁড়ে শাক খাওয়া যেতে পারে ডগা খাওয়ার কিছুদিন পর শাখা-প্রশাখা থেকে কচি পাতা বের হলে এগুলোও শাক হিসেবে খাওয়া যাবে। এভাবে অনেকবার শাক সংগ্রহ করা সম্ভব। তবে ফলন কম হয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উদ্ভাবিত পাটশাকগুলো একবার চাষ করে দীর্ঘ কয়েক মাস পর্যন্ত শাক সংগ্রহ কর যায়। বাড়ির ছাদে কয়েকটি টবে পাটশাক চাষ করে ছোট পরিবারের শাকের অভাব পূরণ করা যায়। তবে উদ্ভাবিত চারটি পাটশাকের মধ্যে বিজেআরআই দেশী পাট শাক-১ বছরব্যাপী চাষের জন্য উত্তম।   
বছরব্যাপী পাটশাক চাষের কৌশল
যেহেতু পাটশাক চাষের উপযুক্ত তাপমাত্রা হলো ২৪-৩৭০ সে., সেহেতু তীব্র শীত ব্যতীত অর্থাৎ ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাস ব্যতীত বছরের যে কোন সময় সবজি হিসেবে পাট পাতার উৎপাদন করা সম্ভব। পাট গাছের বয়স ৩৫-৪৫ দিনের মধ্যে হলেই তখন থেকেই শাক খাওয়া শুরু করতে হবে। প্রথমে গাছ তুলে এবং পরবর্তীতে গাছের সংখ্যা কমে গেলে গাছের ডগা ছিড়ে পাটশাক খেতে হবে। কিছুদিন পর শাখা-প্রশাখা থেকে কচি পাতা বের হলে অর্থাৎ ডগা খাওয়ার সপ্তাহখানেক পরে শতাংশ প্রতি ২০০ গ্রাম ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ ও মালচিং করতে হবে। এবং শাখা-প্রশাখা থেকে বের হওয়া  কচি পাতাগুলো ৩৫-৪০ দিনের মদ্যে শাক হিসেবে খাওয়া যাবে। এভাবে তিনবার পাটশাক খাওয়ার পর জমি চাষ দিয়ে পাটগাছকে মাটির সংগে মিশিয়ে দিতে হবে। এবং ১৫-২০ দিনপর চাষ দিয়ে এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ গোবর ও সার প্রয়োগ করে পুনরায় পাটশাকের বীজ বপন করতে হবে। এভাবে একই জমিতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি হতে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজ বপন করে সারা বছর (ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাস ব্যতীত) পাটশাক চাষ করা সম্ভব।

লেখক : চিফ সায়িন্টিফিক অফিসার, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ, মোবাইল : ০১৭১৬৭৪৯৪২৯, ই-মেইল :mmamondal@gmail.com

বিস্তারিত
সংরক্ষণশীল-কৃষির-চাষ-ব্যবস্থাপনা

সংরক্ষণশীল কৃষির চাষ ব্যবস্থাপনা
ড. মোহাম্মদ এরশাদুল হক
কনজারভেশন এগ্রিকালচার (সিএ) বা সংরক্ষণশীল কৃষি একটি সমন্বিত চাষ ব্যবস্থাপনা। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মতে, কনজারভেশন এগ্রিকালচার তিনটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত : ১) জমিতে চাষ কম দেওয়া, ২) ফসলের অবশিষ্টাংশ জমিতে রেখে আসা, ৩) লাভজনক শস্যপর্যায়।  প্রথম মূলনীতি এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, জমি চাষের পরিমাণ মোট জমির ২৫ ভাগের কম হতে হবে তা ফালি চাষ বা শূন্য চাষের দ্বারা করা সম্ভব। দ্বিতীয় মূলনীতির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে জমিতে ফসলের অবশিষ্টাংশ কমপক্ষে ৩০ ভাগ রেখে আসতে হবে যাতে করে জমিতে বীজ বোনার পর পরিমাপ করা হলেও মোট জমির ৩০ থেকে ৬০ ভাগ অংশ নাড়ার অবশিষ্ট অংশ এর দ্বারা আবৃত থাকে। তথা সারা বছরই জমির বেশির ভাগ অংশ কোন একটি ফসল অথবা ফসলের অবশিষ্ট অংশ দ্বারা আবৃত থাকবে। তৃতীয় মূলনীতির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে এই পদ্ধতিতে একটি লাভজনক শস্যপর্যায় অনুসরণ করতে হবে যাতে করে একই ফসল এ ধারায় বারবার না আসে। সংরক্ষণশীল কৃষির ধারণাটি আসে ১৯৩০ সালে আমেরিকাতে সংঘটিত ধুলিঝড়ের পর। তখন বিজ্ঞানীরা চিন্তা করেন কৃষির মাটি সংরক্ষণের জন্য এমন কোন বিষয়টি জরুরি কিন্তু তা বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এ প্রেক্ষিতেই ১৯৪০ সালে প্রথম বীজবপন যন্ত্র আবিষ্কৃত হয় সরাসরি চাষ ছাড়া জমিতে বীজ বপনের জন্য। সেই তখন থেকে শুরু হওয়া সংরক্ষণশীল কৃষির ধারণাটি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে এটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের প্রায় ৭৫ ভাগ জমিতে সংরক্ষণশীল কৃষি বা সিএ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। দক্ষিণ আমেরিকাতে প্রায় ৭০ ভাগ জমিতে ও উত্তর আমেরিকাতে প্রায় ৩৫ ভাগ জমিতে সিএ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যদিও এশিয়াতে এর পরিমাণ নগণ্য (৩.১৫%), তবুও সারা পৃথিবীতে প্রায় ২০৫ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সিএ চাষ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা পৃথিবীর মোট আবাদযোগ্য জমির প্রায় ১৫ ভাগ। বাংলাদেশেও প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমিতে সিএ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ হটস্পট রয়েছে, যা আনফেবারেবল ইকো সিস্টেমের মধ্যে। কিন্তু এখানে উন্নত চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষের আওতায় আনার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে তার মধ্যে লবণাক্ত অঞ্চলে ১.০৬ মিলিয়ন হেক্টর, খরা অঞ্চলে ৩.৫ মিলিয়ন হেক্টর, জলাবদ্ধ অঞ্চলে ২.৬ মিলিয়ন হেক্টর,  চরাঞ্চলে ০.৮২ মিলিয়ন হেক্টর, হাওরাঞ্চলে ০.৮৬ মিলিয়ন হেক্টর এবং পাহাড়াঞ্চলে ১.৮১ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সুযোগ রয়েছে। 
দেশের প্রায়ই ১১.০৭ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে জমির পুষ্টির স্বল্পতা দেখা যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে খাদ্যের  জোগান দিতে ২০৫০ সালে ১৫ থেকে ১৬ মিলিয়ন টন অতিরিক্ত দানাদার ফসল উৎপাদনের প্রয়োজন পড়বে। অন্যদিকে জমির ভূগর্ভস্থ পানিরস্তর ক্রমেই নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। এসব জমির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধি উভয়টি অর্জন করার লক্ষ্যে সংরক্ষণশীল কৃষি বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশেও ক্রমে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সিএ চাষ পদ্ধতিতে যদিও  প্রথম এক দুই বছরেই উৎপাদন বৃদ্ধি হতে দেখা যায় না কিন্তু প্রচলিত চাষ পদ্ধতির চেয়ে ফলন কম হয় না। উপরন্তু পর পর তিন বছর এ পদ্ধতি ব্যবহার করার পর থেকে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলন বৃদ্ধি হতেও দেখা যায়। এ পদ্ধতিতে ফসল বপন বা রোপণে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে কম জ্বালানি ব্যবহৃত হয়। আমরা জানি এক লিটার জ্বালানি ডিজেল পোড়ালে ২৬ কেজি কার্বনডাই-অক্সাইড বাতাসে নিঃসরণ হয়। ফলে সিএ চাষ পদ্ধতি একটি জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব চাষ পদ্ধতি এর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস পাবে এবং পরিবেশ নির্মল হবে। সিএ চাষ পদ্ধতিতে ধান চাষের ক্ষেত্রেও অচাষকৃত জমিতে ধান বপন বা রোপণ করা হয়ে থাকে। অচাষকৃত জমিতে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান চাষের ফলে ৭০ ভাগ জ্বালানি, ৫০ ভাগ শ্রমিক এবং ১০ থেকে ১৫ ভাগ পানি সাশ্রয় করা সম্ভব। সিএ চাষ পদ্ধতিতে বছরের বেশির ভাগ অংশই ফসল অথবা ফসলের নাড়া দ্বারা আবৃত থাকায় জমিতে দিবারাত্রির তাপমাত্রার পার্থক্যের পরিমাণ কম হয় ফলে মাইক্রো এনভাইরনমেন্ট উত্তম ফলন এর উপযোগী থাকে।
বাংলাদেশের রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে এ চাষ পদ্ধতি সম্প্রসারিত হচ্ছে। এছাড়া আংশিকভাবে সারা দেশেই বিনা চাষ বা স্বল্পচাষের ব্যবহার বাড়ছে। বিনাচাষে রসুন চাষ চলনবিল এলাকা থেকে শুরু হয়ে এখন দক্ষিণের লবণাক্ত এলাকাতেও ছড়িয়ে পরেছে। বিনা চাষের রিলে পদ্ধতিতে সরিষা ও ডালজাতীয় ফসলের চাষ লাভজনক বলে প্রতীয়মান হওয়ায় তা সারা দেশেই ছড়িয়ে গিয়েছে। আমন ও বোরো ধানের মাঝে এ রিলে পদ্ধতিতে সহজেই আরেকটা ফসল ঘরে তোলা যাচ্ছে যাতে করে ফসলের নিবিড়তা বাড়ছে। রাজশাহী, রংপুর ও নীলফামারীতে আলু চাষের পরে যন্ত্রের সাহায্যে স্বল্প চাষে বোনা আউশ বা লেট বোরো বা ব্রাউস ধানের আবাদ লাভজনক বলে কৃষক সমাদৃত হয়েছে। বিনা চাষের আলু কৃষককে এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে। এমনকি খুলনার লবণাক্ত এলাকাতেও বিনা চাষে আলু ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। এই পদ্ধতির ব্যাপক সম্প্রসারণ করা গেলে লবণাক্ত অঞ্চলে আলু চাষ করে কৃষকের আর্থসামজিক উন্নয়ন করা যাবে। 
গবেষণার জন্য আরো অনেকগুলো বিষয়ের উপরে গুরুত্ব আরোপ করা দরকার যেমন জমি সমতল করার জন্য লেজার ল্যান্ড লেভেলার এর ব্যবহার বৃদ্ধি করা, সিএ চাষ পদ্ধতির জন্য উপযোগী জাত বাছাই করা, ফসলের অবশিষ্ট অংশ ব্যবস্থাপনা ও মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সিএ চাষ পদ্ধতির উপযোগী সার সুপারিশ মালা তৈরি করা। এসব বিষয়কে নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে। 
সিএ হলো মাটির জৈব কার্বন বাড়ানোর একটি জাদুকরী অস্ত্র। মাটির জৈব কার্বন ব্যাপক চাষ, নিবিড় ফসলের ধরন এবং উচ্চফলনশীল জাত ব্যবহারের কারণে হ্রাস পাচ্ছে। সিএ এর সুবিধাগুলো এমন একটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হতে পারে যেখানে বছরের পর বছর ধরে পুরো শস্যবিন্যাসে সিএ অনুশীলন করা হচ্ছে। সিএ বিশ্বব্যাপী কাজ করলেও বাংলাদেশে খুব সীমিত সঠিক শস্যবিন্যাসভিত্তিক ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট  নব্বইয়ের দশক থেকে সিএ নিয়ে কাজ করছে, তবে সিএ অনুশীলনের ঋতুভিত্তিক আংশিক প্রয়োগের কারণে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়নি। সিএ প্রধানত রবি (শুষ্ক শীত) মৌসুমে উচ্চভূমির ফসলের জন্য অনুশীলন করা হয় এবং পরবর্তী মৌসুমে প্রচলিত চাষ ব্যবহার করে ধানের ফসল চাষ করা হয়। সুতরাং, সিএ-এর প্রভাব দৃশ্যমান নয়। অতএব, কৃষক, ছাত্র, গবেষক এবং নীতিনির্ধারকদের দ্বারা সিএ কার্যক্রমের সুবিধা পর্যবেক্ষণ এবং জ্ঞান বৃদ্ধির সুযোগ খুব কম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইঅজও) গাজীপুরে একটি সংরক্ষণ কৃষি পার্ক (ঈঅ পার্ক) স্থাপন করেছে। সিএ পার্ক নামে সংরক্ষণশীল কৃষি নিয়ে গবেষণার প¬াটফরমে বিভিন্ন ডিসিপি¬নের বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে এই বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রায় ১ হেক্টর জমিতে নিবিড় গবেষণা চলমান রয়েছে। এখানে সৌর সেচপাম্প ব্যবহারসহ আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি সমন্বিত চাষ ব্যবস্থার সফলতার পথ খোঁজা হচ্ছে। বিগত তিন বছর একই জমিতে সিএ চাষ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে মাটির স্বার্থের উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ছাড়া আগাছার প্রবণতা কমেছে। ফলে বিনা চাষে বা স্বল্প চাষের মাধ্যমে ধান-ভুট্টা, ধান-সরিষা-পাট, ধান-সরিষা-মুগডাল, ধান-ধান-ধান কেন্দ্রিক ফসলধারায় লাভজনক ও জমির স্থাস্থ্য সুরক্ষাকর উপায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ফলে গাজীপুরের এই সিএ পার্ক কৃষক, গবেষক ও পলিসি প¬্যানারদের পরিদর্শন ও এ ব্যাপারে জ্ঞানলাভের সুযোগ তৈরি করেছে। এই ধারাবাহিকতায় কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার সারা দেশে আরো ১৪টি সিএ পার্ক স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিএ পার্কের কার্যক্রম এবং বাংলাদেশের উপযোগী খামার যন্ত্রপাতি সম্পর্কিত পরিষেবাগুলো এক বাতায়নে সহজে তুলে খরার জন্য একটি সিএ ওয়েবসাইট (www.camachinery.org) চালু করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে সিএ ভার্চুয়াল প¬্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সিএ জ্ঞান ভা-ার প্রস্তুত করা হচ্ছে।

লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এফএমপি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর, মোবাইল : ০১৭১২৬৩৫৫০৩, ই-মেইল :arshadulfmpe@gmail.com

বিস্তারিত
লিচু-ফলের-গুরুত্বপূর্ণ-ব্যবস্থাপনা

লিচু ফলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা
কৃষিবিদ মো: শাহাদৎ হোসেন
লিচু : বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন ফল এবং লিচুর উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। লিচু গাছ একটি লম্বা চিরহরিৎ গাছ। এই গাছ থেকে রসালো শাঁসযুক্ত ছোট ছোট ফল পাওয়া যায়। ফলটির বহিরাবরণ অমসৃণ ও লালচে গোলাপি বর্ণের; যা খাওয়া যায় না। আবরণটির ভেতরে থাকে সুমিষ্ট রসাল শাঁস। লিচু গন্ধ ও স্বাদের জন্য দেশ-বিদেশে বেশ জনপ্রিয়। বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, পাবনা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম জেলায় বেশি পরিমাণে লিচু উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে লিচুর মোট উৎপাদন ৯০ হাজার টন। লিচু টিনজাত করে সংরক্ষণ করা যায়। 
সার ব্যবস্থাপনা
গাছের যথাযথ বৃদ্ধি ও কাক্সিক্ষত ফলনের জন্য সার প্রয়োগ করা আবশ্যক। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণও বাড়াতে হবে। বিভিন্ন বয়সের গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সারের পরিমাণ নিচের ছকে দেয়া হলো :
সারের প্রয়োগ পদ্ধতি 
উল্লেখিত পরিমাণ সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি বর্ষার শুরুতে (ফল আহরণের পর), দ্বিতীয় কিস্তি বর্ষার শেষে (আশ্বিন-কার্তিক মাসে) এবং শেষ কিস্তি গাছে ফুল আসার পর প্রয়োগ করতে হবে।
পানি সেচ ও নিকাশ 
চারা গাছের বৃদ্ধির জন্য শুকনো মৌসুমে ১০-১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। ফলন্ত গাছের বেলায় সম্পূর্ণ ফুল ফোটা পর্যায়ে একবার, ফল মটরদানার মতো হলে একবার এবং এর ১৫ দিন পর একবার মোট তিনবার সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সার প্রয়োগের পর সেচ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। অপর দিকে, বর্ষার সময় যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে তার জন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা নিতে হবে।
রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা 
পাউডারি মিলডিউ  
এ রোগের আক্রমণে লিচুর মুকুলে সাদা বা ধূসর বর্ণের পাউডারের আবরণ দেখা যায়। আক্রান্ত মুকুল নষ্ট হয় ও ঝরে পড়ে।
পাউডারি মিলডিউ প্রতিকার 
গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে একবার এবং একমাস পর আর একবার টিল্ট ২৫০ ইসি নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিলিটার অথবা কুমুলাক্স/সালফোলাক/ম্যাগসালফার প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফল ফেটে যাওয়া  
বাড়ন্ত ফলের ত্বক ঝলসে যাওয়া এবং ফেটে যাওয়া লিচুর একটি মারাত্মক সমস্যা। বাংলাদেশে চাষ হওয়া লিচুর জাতগুলোর মধ্যে বোম্বাই লিচুতে ফেটে যাওয়া রোগের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। উচ্চতাপমাত্রা, নিম্ন আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে এ সমস্যা বেশি হয়। দীর্ঘ খরার পর হঠাৎ অধিক বৃষ্টি হলে এ সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। জাত ভেদেও খোসা ঝলসে যাওয়া ও ফল ফেটে যাওয়া সমস্যার তারতম্য লক্ষ করা যায়। ক্যালসিয়াম ও বোরনের অভাবেও ফল ফাটার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
এ ছাড়া লিচু পাকার আগে উচ্চতাপমাত্রা, নিম্নমাত্রার আপেক্ষিক আর্দ্রতাসহ দীর্ঘ বৃষ্টিপাত লিচু ফাটার অন্যতম কারণ। হরমোনজনিত, পুষ্টিজনিত এবং পোকার আক্রমণ ও আঘাতজনিত কারণেও লিচু ফেটে যেতে পারে। আগাম পাকে এমন জাতের লিচু ফাটার পরিমাণ নাবি জাতের তুলনায় বেশি। 
অনেক সময় চাষিরা লিচু ফাটার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে পারেন না। সেজন্য এককভাবে কোনো চেষ্টার ওপর নির্ভর না করে ওপরের সমস্যাগুলোর সমন্বিত ব্যবস্থা নিলে কার্যকরভাবে লিচুর ফাটা রোধ করা সম্ভব হবে।
ফল ফেটে যাওয়ার প্রতিকার 
লিচু গাছে বছরে তিন কিস্তিতে অর্থাৎ বর্ষার শুরুতে, বর্ষার শেষে ও শেষ কিস্তি গাছে ফুল আসার পর বয়স অনুসারে পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার সুষম মাত্রায় দিতে হবে; খরা মৌসুমে ফল ধরার পর থেকে ১০-১৫ দিন পর পর লিচু গাছে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। সেচ দেওয়ার পর প্রয়োজনে গাছের গোঁড়ায় কচুরিপানা বা খড় দ্বারা আচ্ছাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে; প্রতি বছর গাছের গোড়ায় ক্যালসিয়াম সার (ডলোচুন ৫০ গ্রাম) প্রয়োগ করতে হবে; ফল বৃদ্ধির সময় জিংক সালফেট ১০ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ২১ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে; গুটি বাঁধার পরপরই প্লানোফিক্স বা মিরাকুলান প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে দুই মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে; বোরন সার ১০ লিটার পানিতে ৬০ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে অথবা বোরিক এসিড বা সলুবোর বোরন ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর তিনবার গাছে স্প্রে করতে হবে; ন্যাপথালিন এসিটিক এসিড ২৫ পিপিএম হারে এর সঙ্গে জিবারেলিক এসিড ৫০ পিপিএম হারে  মিশিয়ে ১০ দিন পর পর স্প্রে করে ফাটা রোগ রোধ করা যেতে পারে।
ফল ঝরা 
লিচুতে প্রাথমিক ফল ধারণ হার অনেক বেশি হলেও ফল ঝরে যাওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত খুব কম পরিপক্ব ফল আহরণ করা সম্ভব হয়। ধরার পর থেকে শুরু করে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত ফল ঝরা চলতে থাকে। ফল ধরার ২-৪ সপ্তাহ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফল ঝরে। মাটিতে রসের অভাব, অতি উচ্চতাপমাত্রা ও ফলছিদ্রকারী  পোকার আক্রমণ ফল ঝরার প্রধান কারণ।
ফল ঝরার প্রতিকার 
নিয়মিত পরিমিত পরিমাণ সার ও সেচ প্রদান এবং ধান, গম অথবা ডালজাতীয় ফসলের খড় দ্বারা মালচিং করতে হবে। ফলছিদ্রকারী  পোকা দমন করতে হবে।
লিচুর পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থাপনা 
ফল ছিদ্রকারী পোকা 
ফল ছিদ্রকারী পোকা লিচুর অন্যতম প্রধান শত্রু। ফলের বাড়ন্ত অবস্থায় পূর্ণবয়স্ক পোকা ফলের বোঁটার কাছে খোসার নিচে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে বোঁটার নিকট দিয়ে ফলের ভেতরে ঢুকে বীজ খেতে থাকে। এতে অনেক অপরিপক্ব ও পরিপক্ব ফল ঝরে যায়। এ ছাড়া বীজ খাওয়ার কারণে করাতের গুঁড়ার মতো পদার্থ উৎপন্ন হয় এবং বোঁটার কাছে জমে থাকে। এতে ফল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং বাজারমূল্য হ্রাস পায়।
ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনব্যবস্থা  
বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আক্রান্ত ফল বাগান থেকে কুড়িয়ে মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে। এ পোকা দমনের জন্য রিপকর্ড/সিমবুশ/সুমিসাইডিন/ডেসিস প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ফলের মার্বেল অবস্থা থেকে শুরু করে ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে ফল সংগ্রহের অন্তত ১৫ দিন পূর্বে শেষ স্প্রে করতে হবে।
মাইট বা মাকড় 
লিচু গাছের পাতা, ফুল ও ফলে এর আক্রমণ দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং এর নিচের দিকে লাল মখমলের মতো হয়ে যায় এবং দুর্বল হয়ে মরে যায়। আক্রান্ত ডালে ফুল, ফল বা নতুন পাতা হয় না এবং আক্রান্ত ফুলে ফল হয় না।
লিচুর মাইট বা মাকড় দমনব্যবস্থা 
ফল সংগ্রহের সময় মাকড় আক্রান্ত পাতা ডালসহ ভেঙে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। মাকড়নাশক ভারটিম্যাক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি. পরিমাণ মিশিয়ে নতুন পাতায় ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
লিচু গাছের মাজরা পোকা  
এই পোকার কীড়া লিচু গাছের কা- ছিদ্র করে ভেতরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত অংশ রেশমি পর্দা দিয়ে সম্পূর্ণ ঢাকা থাকে। এরা ছাল খাওয়া শেষ করে পরবর্তীকালে কা- খেতে থাকে। অতিমাত্রায় আক্রান্ত হলে গাছের প্রাণরস সঞ্চালনে বাঁধার সৃষ্টি হয় এবং গাছের সজীবতা হ্রাস পায়। চারাগাছ আক্রান্ত হলে গাছ মারাও যেতে পারে।
লিচু গাছের মাজরা পোকা দমন ব্যবস্থা 
আক্রমণ দেখা গেলে কীড়ার তৈরি ছিদ্র পথে সুচালো আগাযুক্ত লোহার শিক ঢুকিয়ে ভেতরে লুকিয়ে থাকা কীড়া মারতে হবে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে আক্রান্ত অংশ পরিষ্কার করে এক খ- তুলা পেট্রোল, কেরোসিন, ক্লোরফর্ম ইত্যাদিতে ভিজিয়ে গর্তের ভেতরে ঢুকিয়ে ছিদ্রপথ কাদামাটি দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।
বাদুর : লিচুর প্রধান শত্রু বাদুর। এরা পরিপক্ব ফলে আক্রমণ করে। ফল বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অবস্থায় এক রাতের অসাবধানতায় এরা সমস্ত ফল বিনষ্ট করে ফেলতে পারে। মেঘলা রাতে বাদুরের উপদ্রব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
বাদুর দমন ব্যবস্থা   
বাদুর তাড়ানোর জন্য রাতে পাহাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সমস্ত গাছ জালের সাহায্যে ঢেকে দিয়েও বাদুরের আক্রমণ রোধ করা যায়। বাগানে গাছের উপর দিয়ে শক্ত ও চিকন সুতা বা তার টাঙ্গিয়ে রাখলে বাদুরের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।
লিচুর ভালো ফলন পেতে বিশেষ যত্ন
বোরণ ও দস্তার অভাব থাকলে অন্যান্য অনুমোদিত সারের সাথে প্রতিটি গাছে ২০ গ্রাম জিংক সালফেট এবং ১০ গ্রাম বরিক এসিড (লিচুর আটিঁ শক্ত হওয়ার পর্যায়ে) গাছের গোড়ায় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত নিয়মিত রিং বেসিন পদ্ধতিতে গাছের গোড়ায় সেচ দিতে হবে। লিচুর পোকা দমনের জন্য ফল মটর দানার আকারে হলে নাইলনের তৈরি জাল দিয়ে লিচুর গোছা বেঁধে দিতে হবে। 
ডাল ছাঁটাইকরণ : পূর্ণবয়স্ক গাছে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের জন্য ফল সংগ্রহের পর অপ্রয়োজনীয় ডালপালা কেটে ফেলতে হবে। ফল সংগ্রহের সময় লিচুর মাকড় আক্রান্ত ডাল ভেঙে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
গাছের মুকুল ভাঙন : কলমের গাছের বয়স ৪ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মুকুল ভেঙে দিতে হবে।

লেখক : আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার, কৃতসা, রংপুর; মোবাইল : ০১৭১২৬২৬২৯৬, ই-মেইল : shahadatbau@gmail.com    

বিস্তারিত
ন্যানো-সার-ফসল-উৎপাদনে-একটি -আধুনিক-কৃষি-উপকরণ

ন্যানো সার ফসল উৎপাদনে একটি 
আধুনিক কৃষি উপকরণ
ড. মো: শহিদুল ইসলাম
ন্যানো সারকে আধুনিক কৃষি উপকরণের নতুন দিগন্ত হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে ন্যানো সারের প্রযুক্তি বাংলাদেশের মাটির উর্বরতা ও সার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ফলন বৃদ্ধিতে প্রায় ৫০-৬০%। রাসায়নিক সারের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার বিশেষ করে নাইট্রোজেন সার মাটির গঠন, পরিবেশ, স্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি করে এবং অনেক উপকারী জীবাণুকে মেরে ফেলে। অতএব, উচ্চ পুষ্টি উপাদানসহ পরিবেশবান্ধব সার তৈরি করা বিশেষ প্রয়োজন।
ন্যানো সার একটি চমৎকার বিকল্প প্রযুক্তি যা গাছের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুষ্টির ব্যবহার বাড়াতে পারে,  রাসায়নিক সারের অত্যাধিক ক্ষতিকারক প্রভাব প্রশমিত করে, মাটির বিষাক্ততা কমায়।  অধিকন্তু, ন্যানো জৈবসার হলো চমৎকার উপাদান যা মাটিতে প্রয়োগ করলে, পাতা বা বীজ রাইজোস্ফিয়ারে (জযরুড়ংঢ়যবৎব) উপনিবেশ স্থাপন করে এবং পোষক (ঐড়ংঃ) উদ্ভিদের পুষ্টির প্রাপ্যতা বাড়িয়ে দেয়, ফলে গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। ন্যানো জৈবসার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় নাইট্রোজেন স্থিরকরণের মাধ্যমে, ফসফরাস দ্রবণীয় করে এবং গাছের উদ্দীপক পদার্থ তৈরির মাধ্যমে উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। মাটির প্রাকৃতিক পুষ্টির পুর্নব্যবহার পুনরুদ্ধার করে এবং মাটিতে জৈব পদার্থ তৈরি করে।
ন্যানো সারের শ্রেণী বিভাগ 
ন্যানো সারগুলোকে প্রধানত তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়: ক) ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট ন্যানোফর্মুলেশন, খ) মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ন্যানোফম্যুলেশন এবং গ) পুষ্টি-সমৃদ্ধ ন্যানোম্যাটেরিয়ালস। তিনটি ভাগের মধ্যে, পুষ্টি-সমৃদ্ধ ন্যানোম্যাটেরিয়ালগুলো অন্য দুইটি ভাগের তুলনায় বেশি জনপ্রিয়। পুষ্টি সমৃদ্ধ ন্যানোম্যাটেরিয়ালগুলো পরিবেশ বান্ধব এবং শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ। এ সারগুলোকে ধীর-নিঃসরণকারী সার বলা যেতে পারে যা ফসলের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি নির্গত করে। ব্যবহৃত আবরণের মধ্যে রয়েছে পলিমেরিক ন্যানোম্যাটেরিয়ালস, কার্বনভিত্তিক ন্যানো পার্টিকেলস, ন্যানোক্লেস, মেসোপোরাস সিলিকা ইত্যাদি। ছিদ্রযুক্ত ন্যানোম্যাটেরিয়ালগুলো উদ্ভিদের নাইট্রোজন চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর গ্রহণ প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এতে নাইট্রোজেনের অপচয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়।
ন্যানো সারগুলোকে তাদের ক্রিয়াকলাপের উপর ভিত্তি করেও শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে: ক) ধীর-নিঃসরণ সার, খ) নিয়ন্ত্রণ অপচয় সার, গ) ন্যানো কম্পোজিট সার-যা একটি ন্যানো ডিভাইস ব্যবহার করে গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী  ম্যাক্রো এবং মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ করতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের ন্যানো সার
ন্যানো সার  জৈব পদার্থ, ম্যাক্রো এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এবং হিউমিক পদার্থের সমন্বয়ে প্রস্তুত করা হয়। এ সার মাটির উর্বরতা বাড়ায়। ন্যানো পার্টিকেলগুলোর অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে - এর উচ্চ শোষণ ক্ষমতা, বর্ধিত পৃষ্ঠ - আয়তনের অনুপাত এবং নিয়ন্ত্রিত পুষ্টি নিঃসরণ। এ সকল বৈশিষ্ট্যগুলো এ সারকে উদ্ভিদ বৃদ্ধি উদ্দীপক হিসাবে কার্যকরী করে তোলে। ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট সারের মধ্যে ন্যানো চিলেটেড মিশ্রিত ঘচক ২০-২০-২০ এবং ১২-১২-৩৬ সার, একক পুষ্টিভিত্তিক ন্যানো চিলেটেড নাইট্রোজেন (১৭%), ফসফরাস (১৭%), পটাশিয়াম (২৭%), ক্যালসিয়াম (২৭%), ম্যাগনেসিয়াম (৬%) এবং সালফার (১২%) উল্লেখযোগ্য। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সারের মধ্যে ন্যানো কমপ্লিট মাইক্রো সার এবং একক পুষ্টিভিত্তিক চিলেটেড জিঙ্ক (১২%), বোরন (৯%), এবং লোহা (৯% এবং ৭%), ম্যাঙ্গানিজ (১২%), মলিবডেনাম (৫%) এবং কপার (৮%)। এ পণ্যগুলোর বিশেষগুণ হলো যে এগুলো পাউডার আকারে পাওয়া যায়, পানিতে স¤পূর্ণ দ্রবণীয় এবং মাটি ও পাতার প্রয়োগের মাধ্যমে শোষণযোগ্য।
উদ্ভিদে পুষ্টি গ্রহণের প্রক্রিয়া
ন্যানো সার গাছের শিকড় বা পাতার মাধ্যমে প্রবেশ করে। যদিও ন্যানো পার্টিকেলগুলোর সুনির্দিষ্ট গ্রহণ এবং স্থানান্তর এখনও পুরাপুরি জানা যায়নি, তবে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে ন্যানো পার্টিকেলগুলোর গ্রহণ এবং স্থানান্তর মূলত কোষ প্রাচীরের সাথে ন্যানো পার্টিকেলগুলোর আকার, আকৃতি এবং মিথস্ক্রিয়া আচরণের উপর নির্ভরশীল। ন্যানো পার্টিকেলগুলো স্টোমাটা খোলার মাধ্যমে বা কিউটিকলের মাধ্যমে অ্যাপোপ্লাস্টিক এবং সহানুভূতিশীল পথের মাধ্যমে ভাস্কুলার সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে। ৫০-২০০ হস আকারের পরিসরের বড় কণাটি সহানুভূতিশীল পথ পছন্দ করে, আর ১০-৫০ হস আকারের পরিসরের ছোট কণাটি অ্যাপোপ্লাস্টিক পথ পছন্দ করে। পুষ্টির ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি, ফসলের গুণমান উন্নত করা, পুষ্টি উপাদান নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ, সারের চাহিদা কমানো, কীটপতঙ্গের উপদ্রব কমানো এবং মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ন্যানো সারের উপকারী প্রভাব থাকা সত্ত্বেও তাদের কিছু অসুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মাটির উপাদানগুলোর সাথে মিথস্ক্রিয়া এবং বিষাক্ততা তৈরি করা, উদ্ভিদের টিস্যুতে জমা হওয়া এবং কিছু কোষের মৃত্যু ঘটানো।
পরিশেষে সকলের বিশেষকরে কৃষক এবং সার ডিলার ও পরিবেশকদেরকে জানানো যাচ্ছে যে বিলস্বে হলেও বাংলাদেশে ন্যানো সারের গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তত্বাবধানে বেশ কিছু কোম্পানি ন্যানো সার নিয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ  কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং শেরে -ই-বাংলা কৃষি বিশ^ বিদ্যালয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে। আশা করা যায় শীঘ্রই ন্যানো সার বাজারে পাওয়া যাবে।

লেখক : প্রাক্তন মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, মোবাইল : ০১৭১৩০০২১৮০, ই-মেইল : dmsislam12@gmail.com

বিস্তারিত
পরিবর্তীত-জলবায়ুতে-আমন-ধান -চাষ-ও-ভবিষ্যৎ-সম্ভাবনা

পরিবর্তীত জলবায়ুতে আমন ধান 
চাষ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
পার্থ বিশ^াস
আমন চাষাবাদ অনেকটা প্রাকৃতিক বৃষ্টিনির্ভর। আমন মৌসুমে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের শতকরা ৮০ ভাগ হয়ে থাকে, যা আমন ধান আবাদের জন্য যথেষ্ট। তবে বর্তমান সময়ে আবহাওয়ার বৈরি আচরণের কারণে বৃষ্টিপাত সময়মতো সমভাবে হয় না বিধায় প্রায়ই আমন ফসল খরার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়ার বৈরী আচরণের জন্য বৃষ্টিপাত ছাড়াও অন্যান্য নিয়ামক যেমন: তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং সূর্য কিরণের দৈর্ঘ্য আমন ধান উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। এ ছাড়াও পোকামাকড় ও রোগ নির্ণয় এবং দমনে বিলম্বিত হলে ফলন কমে যায়। কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ (২০১৯-২০২১) অনুযায়ী সারাদেশে মোট চাষকৃত আমন ধানের ৮০ ভাগই উচ্চফলনশীল আমন ধানের চাষ হয় যার গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ২.৮২ মেট্রিক টন। সার্বিকভাবে হিসাব করলে হেক্টরপ্রতি আমন ধানের গড় ফলন ২.৫৩ মেট্রিক টন। তাই পরিবর্তিত জলবায়ুতে আবহাওয়ার গতিবিধি বিবেচনায় বিভিন্ন পরিবেশ উপযোগী উন্নত জাতের ব্যবহার, আধুনিক কৃষি তাত্ত্বিক পদ্ধতিতে আদর্শ চারা তৈরি, সঠিক সময়ে রোপণ, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চাষাবাদ করে আমন ধানের ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভবিষ্যৎ কিছু সম্ভাবনা যেমন- শস্য নিবিড়তা ও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
আধুনিক জাতের ব্যবহার : ভিন্ন ভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চল বা হটস্পট অনুসারে প্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী জাত নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী জাতসমূহ যেমন- বিনাধান-৭, বিনাধান-১৬, বিনাধান-১৭, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬ এবং ব্রি ধান৭১ (খরা প্রবণ এলাকার জন্য); বিনাধান-১১, বিনাধান-১২, ব্রি ধান৫১, ব্রি ধান৫২ এবং ব্রি ধান৭৯ (জলমগ্নতা সহনশীল, বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য); বিনাধান-২৩, এবং ব্রি ধান৭৮ (জোয়ার-ভাটা প্রবণ লবণাক্ত এলাকার জন্য); এবং ব্রি ধান৭৫ ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮৭ এবং বিনাধান-১৬, বিনাধান-১৭ (পাহাড়ি এলাকার জন্য)। সাথে সাথে অনুকূল পরিবেশ উপযোগী অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি এবং লাভজনক শস্যবিন্যাসের জন্য উচ্চফলনশীল স্বল্প-জীবনকাল বিশিষ্ট জাত নির্বাচন অতি প্রয়োজন। স¦ল্পমেয়াদি জাত (জীবনকাল ১২০ দিনের কম) যেমন- বিনাধান-৭, বিনাধান-১৬, বিনাধান-১৭, বিনাধান-২২, বিনাধান-২৬, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭৫, বিভিন্ন হাইব্রিড জাত ইত্যাদি।  
আদর্শ চারা তৈরি : প্রতি একর জমির জন্য ১০-১২ কেজি বা এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমির জন্য ৩-৪ কেজি ভালো মানের বীজ প্রয়োজন। বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পানিতে ভেজানোর পূর্বে ১-২ দিন রোদ দিতে হবে। পুষ্ট বীজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দশ লিটার পানিতে ৩৭৫ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশ্রিত করে ১০ কেজি বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে পাত্রের নিচ থেকে ভারী বীজ তুলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। বীজ জাগ দেওয়ার পূর্বে ১ লিটার পানিতে ১ কেজি বীজ ১২-২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে এবং শোধন করতে হবে। প্রতি ১০ কেজি বীজের জন্য ২৫ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স-২০০ অথবা অটোস্টিন/নোইন/এমকোজিম ৫০ ডব্লিউপি (কার্বনডাজিম গ্রুপের) ব্যবহার করা যেতে পারে। বীজতলা তৈরির জন্য অপেক্ষাকৃত উঁচু ও উর্বর জমি নির্বাচন করতে হবে এবং ভালো করে চাষ ও মই দিয়ে কাদা কাদা করে জমি তৈরি করতে হবে। জমির দৈর্ঘ্য বরাবর ১ মিটার চওড়া বেড করে দুটি বেডের মাঝে ২৫-৩০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে যেন সেচ প্রদান ও অন্যান্য পরিচর্যা করতে সহজ হয়। প্রতি বর্গমিটারে ৮০-১০০ গ্রাম বীজ বপন করতে হবে (৫ শতাংশ বীজতলার জন্য ১০ কেজি বীজ বপন করতে হবে)।  বীজ বপনের পর বেডের উপর ২ মিলিমিটার ফাঁকা নেট দিয়ে ঢেকে দিলে পাখির আক্রমণ সম্পূর্ণ রোধ করা যায়। তবে বীজ বপনের ৪-৫ দিন পর (চারা ২-৩ সেন্টিমিটার লম্বা হলে) নেট তুলে দিতে হবে। বীজতলায় সর্বদা নালা ভর্তি পরিমিত পানি রাখতে হবে যেন কোনভাবেই বেড ফেঁটে না যায়। বীজতলায় অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে নিষ্কাশন করতে হবে অন্যথায় চারা বৃদ্ধি কমে যেতে পারে। সম্ভব হলে মাঝে মঝে  জমে থাকা পানি বের করে নতুন পানি প্রয়োগ করতে হবে। 
সার প্রয়োগ : কৃষি পরিবেশ অঞ্চল, ধানের জাত এবং জীবনকালের উপর ভিত্তি করে সারের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতাংশ) ইউরিয়া ১৮-২০ কেজি, ডিএপি ৭-৮ কেজি, এমওপি ১০-১১ কেজি এবং জিপসাম ৮ কেজি। জমি তৈরির শেষ চাষে ১/৩ অংশ ইউরিয়া এবং সমস্থ ডিএপি/টিএসপি-এমওপি-জিপসাম প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ইউরিয়া সমান ভাগে দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে: ১ম কিস্তি চারা রোপনের ১০-১৫ দিন পর এবং ২য় কিস্তি কাইস থোড় আসার ৫-৭ দিন পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী জাতের জন্য বিঘা প্রতি (৩৩ শতাংশ) ইউরিয়া ২৫-২৬ কেজি, ডিএপি ৮ কেজি, এমওপি ১৪-১৫ কেজি এবং জিপসাম ৯-১০ কেজি। জমি তৈরির শেষ চাষে সমস্থ ডিএপি/টিএসপি-এমওপি-জিপসাম প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সমান ভাগে তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে: ১ম কিস্তি চারা রোপণের ৭-১০ দিন পর, ২য় কিস্তি চারা রোপণের ২৫-৩০ দিন পর এবং ৩য় কিস্তি কাইস থোড় আসার ৫-৭ দিন পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে। ধানক্ষেতে ৩৫-৪০ দিন পর্যন্ত আগাছামুক্ত রাখতে পারলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় আমন ধানের জমি ডুবে গেলে সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি ভিন্নতর হবে। সেক্ষেত্রে জমি তৈরির সময় (ইউরিয়া বাদে অনান্য সার বিঘা প্রতি ডিএপি ৬ কেজি, এমওপি ৫ কেজি এবং জিপসাম ৪ কেজি) ও বন্যার পানি সরে যাওয়ার ১০ দিন পর (বিঘা প্রতি ইউরিয়া ৬ কেজি, ডিএপি ৩ কেজি এবং এমওপি ৩ কেজি) প্রয়োগ করতে হবে। জলমগ্ন সহিষ্ণু জাতের ক্ষেত্রে বন্যার পানি সরে যাওয়ার প্রথম ৭ দিন জমিতে নামা বা অন্য কোন পরিচর্যা করা যাবে না।
রোপণের সময় : কৃষি পরিবেশ অঞ্চল, ধানের জাত এবং জীবনকালের উপর ভিত্তি করে রোপণের সময় ভিন্ন ভিন্ন হবে। সাধারণত, স্বল্পমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে ২৫ জুলাই ২৫ আগস্ট (১০ ই শ্রাবণ থেকে ১০ ই ভাদ্র); মধ্য মেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে ১৫ জুলাই- ১৫ আগস্ট (শ্রাবণমাস); এবং দীর্ঘমেয়াদি জাতের জন্য ১৬ জুলাই-১৫ মেপ্টেম্বর (১লা শ্রাবণ থেকে ৩১ ভাদ্র)। কিন্তু পরিবর্তিত জলবায়ুতে আমন ধান রোপণের সময় বর্তমানে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ফলন বিবেচনায় ৩০ জুলাই আমন ধান লাগানোর ভাল সময়।
চারার বয়স ও রোপণের নিয়ম : সাধারণত আমন ধানের ক্ষেত্রে চারার বয়স ২০-২৫ দিন হতে হবে। তবে চারা বৃদ্ধি এবং অবস্থা ভেদে স্বল্পমেয়াদি জাতের জন্য ১৫-২০ দিন এবং দীর্ঘমেয়াদি জাতের জন্য চারার বয়স ২০-২৫ দিন হতে পারে। সারিবদ্ধভাবে বা লাইনে চারা রোপণ করতে হবে এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার (৮ ইঞ্চি) ও গুছি থেকে গুছির দূরত্ব হবে ১৫ সেন্টিমিটার (৬ ইঞ্চি)।
সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা : ধানচাষে গড়ে ১১০০-১২৫০ মিলিমিটার পানি খরচ হয়। এই পানির কিছুটা গাছের খাদ্য তৈরিতে লাগে, কিছু অংশ বাষ্পীয় প্রস্বেদনের মাধ্যমে গাছ থেকে বের হয়ে যায় এবং সামান্য অংশ গাছের অভ্যন্তরীণ জৈবিক কাজে ব্যবহৃত হয়। কিছু অংশ মাটির উপরিভাগ থেকে বাষ্পাকারে উড়ে যায় এবং কিছু অংশ মাটির নিচের দিকে চুঁইয়ে যায়। পানির সাথে গাছ মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান শুষে নেয় যা গাছের বৃদ্ধির জন্য খুব দরকার। ধানচাষে সেচ ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনার কৌশলগত উদ্দেশ্য হলো, প্রতি একক জমিতে/পানিতে/শক্তির বিপরীতে শস্যের সর্বাধিক ফলন/মুনাফা। দক্ষতার সাথে পানি ব্যবহার ও অধিক ফলন নিশ্চিত করার জন্য কতকগুলো বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন: পানি সাশ্রয়ী সেচ নালা তৈরি এরং ধান ক্ষেতের চতুর্দিকে আইল তৈরি; পানির অপচয় কমানোর জন্য জমি ভিজানোর পূর্বেই চাষ দেওয়া অথবা প্রথম ও শেষ চাষের মধ্যে সময় কমানো; চাষের সময় জমি সমান করা; আইলের ফাটল বন্ধ করা এবং আইলকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার উঁচু করা; এবং এছাড়াও সকলে মিলে এক জায়গায় বীজতলা করলে অথবা পাশের জমির সাথে একসঙ্গে রোপণ করলে পানির অপচয় কম হয়। আমন ধান বৃষ্টিনির্ভর হলেও কাইচ থোড় এবং ফুল আসা পর্যায়ে প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হয়। বৃষ্টিনির্ভর ধানী ফসলে সাময়িকভাবে বৃষ্টির অভাবে খরাজনিত কারণে সেচ প্রয়োগ করাকে সম্পূরক সেচ বলে। গবেষণায় দেখা গেছে শুধুমাত্র একটি সম্পূরক সেচের মাধ্যমে প্রায় ৩০-৬০% ফলন বাড়ানো সম্ভব। সম্প্রতি বছরগুলোতে বৃষ্টিপাতের আচরণ অতি অসম বিধায় সম্পূরক সেচের সংখ্যা কৃষি পরিবেশ অঞ্চলভেদে একাধিক (৩-৪ টা)  পর্যন্ত হতে পারে। ফলে ভালো ফলন নিশ্চিত করতে সেচ যন্ত্র, সেচ-নালা, ফিতা-পাইপসহ অনান্য সরঞ্জামাদি প্রস্তুত রাখতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনা : কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ভেদে আমন ধানের প্রধান পোকাগুলোর (মাজরা, পাতা মোড়ানো, সবুজ পাতা ফড়িং ও গান্ধী পোকা) আক্রমন ধানক্ষেতে ডালপালা স্থাপন বা পাখি বসার সুব্যবস্থা/আলোক ফাঁদ/সোলার লাইট ট্রাপের মাধ্যমে এবং চুংগি, বাদামি গাছফড়িং ও সাদা পিঠ গাছফড়িং পোকার আক্রমণ জমি থেকে পানি বের করে রোধ করা যায়। যদি পোকার আক্রমন অনেক বেশি হওয়ায় এভাবে দমন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে তাহলে আবহাওয়ার গতিবিধি বিবেচনায় রেখে (টেবিল-১) অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ধানের পর্যায় অনুযায়ী অনুকূল আবহাওয়ার তথ্য বিভিন্ন আবহাওয়া বিষয়ক অ্যাপস  এর সাহায্যে আগাম পাওয়া এবং সঠিক সময়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব। 
যেহেতু আমাদের দেশের প্রায় অধিকাংশ শস্যবিন্যাস আমন ধান কেন্দ্রিক। এই জন্য উচ্চফলনশীল-স্বল্প জীবনকালীন আমন ধান উপযুক্ত সময় লাগালে একটি তেল/ডাল ফসলকে অন্তর্ভুক্ত করে পরবর্তী বোরো ধান চাষ করা সম্ভব। যে সমস্থ অঞ্চলে আমন ধান কাটার পরও জোঁ আসতে বিলম¦ হয় সে সকল স্থানে আমন ধান কাটার ৪-৫ দিন পূর্বে স¦ল্প-জীবনকালীন সরিষা (যেমন- বারি সরিষা-১৪, বিনাসরিষা-৯) জমিতে ছিটিয়ে দিলে বিনা চাষে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে অনুমোদিত মাত্রার সার, বপনের ১২-১৫ দিন পর ছিটিয়ে দিতে হবে। মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকায় অতিরিক্ত কোন সেচের প্রয়োজন পড়ে না অর্থাৎ মাটি-পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়। এভাবে তেলজাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে যেমন ভোজ্যতেলের আমদানি হ্রাস করা সম্ভব হবে সাথে সাথে দুটি ধানের মাঝখানে একটি তেল/ডালজতীয় শস্য চাষাবাদের মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি পাবে।

লেখক : বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষি প্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ময়মনসিংহ-২২০২; মোবাইল : ০১৭২৭৬৫৬২১৬, ই-মেইল-parthi.biswas@gmail.com

বিস্তারিত
দেশে-চকোলেট-তৈরির-ফল-কোকোয়া-চাষের-সম্ভাবনা

দেশে চকোলেট তৈরির ফল কোকোয়া চাষের সম্ভাবনা
তাহসীন তাবাসসুম
চকলেট। শিশু থেকে প্রবীন প্রায় সবার পছন্দের একটি খাবার। খাবারটির মূল উপাদান হলো ‘কোকোয়া’ নামে এক ধরনের ফল। দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন বনভূমি এর আদিনিবাস। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগেও কোকোয়া ফলের অস্তিত্বের তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে অ্যামাজন থেকে পৃথিবীর নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এই ফল। আফ্রিকার আইভরি কোস্ট, ঘানা, নাইজেরিয়া ও ক্যামেরুনে ব্যাপকভাবে চাষ হয় কোকোয়া। সেখান থেকে বিশ্বজুড়ে রপ্তানি করা হয়। 
অ্যামাজন অথবা আফ্রিকা- সুদূর পথ ঘুরে কোকোয়া আসে এ অঞ্চলে। ফলে দেশে চকোলেটের বড় বাজার থাকলেও দাম সবার হাতের নাগালে নেই। কারণ, দেশে কোকোয়ার বাজার পুরোপুরি আমদানি-নির্ভর। তবে আশার কথা হলো পরীক্ষামূলকভাবে ফলটির চাষ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। মিলেছে ইতিবাচক ফলাফলও। দেশে এটির উৎপাদন বাড়লে আয়ের একটি অন্যতম বড় পথ উন্মোচন হতে পারে।
মূলত অ্যাসিডিক বা অম্লীয় মাটিতেই ফলটির ফলন ভালো হয়। ঢাকার সাভার এবং পাহাড়ি অঞ্চলের পাশাপাশি বহু অঞ্চলে রয়েছে এমন মাটি। ২০১৪ সালে গবেষণার জন্য ভিয়েতনাম থেকে আনা হয়েছিল কয়েকটি কোকোয়া চারা। সাভারের রাজালাখ এলাকায় সরকারি হর্টিকালচার সেন্টারে রোপণ করা হয় কোকোয়া চারা। এর মধ্যে দুটি গাছ বেড়ে উঠেছে। ঝোপালো ধরনের গাছ দুটিতে ৩-৪ বছর ধরে ফুল এবং পরিপক্ব অসংখ্য ফল ধরছে। ফল থেকে চারাও উৎপাদন করছে হর্টিকালচার সেন্টার।
গাছ পরিচিতি 
কোকোয়া ফলের গাছ চিরসবুজ, দেখতে ঝোপালো, ৭ থেকে ৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কা- ও ডালপালার গায়ে গুচ্ছবদ্ধ গোলাপি ও হলুদ রঙের ফুল ধরে। গাছের বয়স সাধারণত ৩ থেকে ৪ বছর সময়ে ফুল ধরতে শুরু করে। ফুল থেকে পরিণত ফল হতে সময় লাগে ৬ মাস। ফলের রং বাদামি, ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১০ সেন্টিমিটার পুরু, বাইরের আবরণ চামড়ার মতো শক্ত। কোকো গাছ এমন একটি জায়গায় লাগানো দরকার যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়বে না। সাথী ফসল হিসেবেও কোকো গাছ লাগানো যেতে পারে।
চাষপদ্ধতি 
কোকোয়া ফলের ভেতরে থাকা বীজ থেকে যেমন চারা উৎপাদন করা যায় তেমনি কলম পদ্ধতিতেও চারা করা যায়। সাধারণ মাটির বেডে এ চারা তৈরি করতে হয়। চারার বয়স একমাস হলেই নির্দিষ্ট জমিতে কোকো চারা রোপণ করা যাবে। বীজ সংগ্রহের পর নরমাল তাপমাত্রায় বেশি দিন বীজ রাখলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হারিয়ে যায়।
রোপণের ৫-৬ বছর পর থেকে গাছে ফল ধরা শুরু করে। বছরে এ গাছ ৩-৪ বার ফলন দেয়। ফলে সারা বছরই কমবেশি ফল পাওয়া যায়। এ ফলের গাছে তেমন কোনো রোগ হয় না বললেই চলে। তবে দেশীয় ছাত্রাপোকা বা মিলিবাগ আক্রমণ করলে তা সহজেই প্রতিরোধ করে ফেলা সম্ভব। ফুল থেকে ফল হয়ে সেটি পাকতে সময় লাগে ৩-৪ মাস। পাকার পর কোনোটা ধূসর আবার কোনোটা হলুদ রং ধারণ করে। খোসা ছাড়িয়ে ফল বের করতে হয়। পাকা ফল খাওয়া যায়। এর স্বাদ কিছুটা টকমিষ্টি। 
কোকোয়া থেকে কোকোবিন
 প্রতিটি ফলে ২০-৪০টি বীজ থাকে। বীজগুলো প্রথমে কলাপাতায় মুড়িয়ে গাঁজানো হয়। পরে তা রোদে শুকিয়ে সেদ্ধ করে খোসা ছাড়ালেই পরিষ্কার একটি শাঁস পাওয়া যায়। এই শাঁসকে বলা হয় কোকোবিন। 
কোকোবিনের গুঁড়োই চকোলেট পণ্য তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। উৎকৃষ্টমানের চকোলেট, মাখন, আইসক্রিম, রুটি, পুডিং, প্রসাধনী ও পানীয় তৈরিতে কোকোয়া ফল ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়।
অর্থনৈতিক অবস্থা
আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ১০০ বছর আগে কোকো চাষ শুরু হলেও ফলটি অনেক পুরনো এবং হাজার হাজার বছর আগে থেকেই প্রকৃতিতে ছিল। মায়ানমারা মনে করত, কোকো ঈশ্বর প্রদত্ত ফল। পৃথিবীজুড়ে প্রায় ২৩ জাতের কোকো ফলের দেখা পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি কোকো ফল উৎপন্ন হয় আইভরিকোস্টে। তাদের বার্ষিক গড় উৎপাদন ১,৩৩০ টন। এরপর ঘানার অবস্থান। তাদের উৎপাদন ৭৩৬ টন।
পূর্ণাঙ্গ একটি কোকো গাছ থেকে প্রতি বছর ৩৫ কেজি বীজ পাওয়া যায়, যার প্রতি কেজি কোকো চকোলেট পাউডারের দাম ৪০ ডলার। প্রতিটি কোকো গাছ থেকে বছরে ১২০০ ডলার বা ৮৪ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। প্রতি বছর ভারত ও পাকিস্তান থেকে ২ লাখ টন কোকো ফল আমদানি করা হয় যার মূল্য প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা।
দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে অন্তত ৫-৭ লাখ হেক্টর অনাবাদি জমি রয়েছে। যেখানে এই গাছ চাষের উপযোগী মাটি রয়েছে। এ ছাড়াও উত্তরবঙ্গসহ আরো অনেক এলাকার মাটি এ ফল চাষের উপযোগী হওয়ায় কৃষকরাও লাভবান হতে পারবেন। ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ই’ এবং ‘কে’ সমৃদ্ধ এই ফলের চকোলেট পাউডার শতভাগ বাংলাদেশকে বিদেশ থেকে আনতে হয়। তবে বাংলাদেশে কোকো গাছ আবাদের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কোকো গাছের চাষ করলে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারেও অনায়াসেই একটা স্থান করে নিতে পারব। কারণ বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু নিরক্ষীয় ও উপনিরক্ষীয় ফল চাষের জন্য উপযোগী। কোকো গাছের জন্য রেইনফরেস্ট সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের আধ্যাপক ড. সৈয়দ শফিউল্লাহ বেতছড়ি উপজেলায় তার নিজস্ব উদ্যোগে ১০০টি কোকো গাছ লাগিয়েছেন। 
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশের জলবায়ু কোকো চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। ছাদ বাগানেও কোকো ফল চাষ করা যায়। কোকো গাছ ছাঁটাই করে গাছকে ছোট করে রাখা যায় এবং বড় বড় ছায়াবীথির নিচে এদের শ্রীবৃদ্ধি ভালো হয়।
বর্তমানে এই ফলের চাষ বৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে সাভার হর্টিকালচার সেন্টারে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। সেগুলো নামমাত্র মূল্যে বিতরণও করা হচ্ছে। অনেকেই এটি চাষ করছেন। উৎসাহিত হচ্ছেন চাষেও। কোকোয়া বিদেশি ফল হলেও গত এক দেড় দশক ধরে আমাদের দেশেও স্বল্প পরিসরে এর চাষ শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখা সম্ভব।
সূত্র : সাভার, হর্টিকালচার সেন্টার এবং কৃষি তথ্য সার্ভিস

লেখক : প্রকাশনা কর্মকর্তা, প্রশিক্ষণ উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭২০২৫২৭৬৫; ই-মেইল :subhathashin@gmail.com

বিস্তারিত
সম্পূরক-খাদ্যনির্ভর-ভেটকি-মাছের -পোনা-প্রতিপালন-পদ্ধতি
সম্পূরক খাদ্যনির্ভর ভেটকি মাছের 
পোনা প্রতিপালন পদ্ধতি
মোঃ তোফাজউদ্দীন আহমেদ
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাগর উপকূলের স্বল্প লোনা পানির মাছের মধ্যে ভেটকি একটি সুস্বাদু, জনপ্রিয় এবং বাণিজ্যিকভাবে অতিব গুরুত্বপূর্ণ মাছ। অধিক লবণাক্ততা ও তাপমাত্রা সহনশীল হওয়ায় উপকূলীয় ঘেরে এ মাছ চাষের জনপ্রিয়তা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ মাছ উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ, ক্ষতিকারক চর্বি নেই। উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের সাথে এ মাছ মিশ্রভাবে চাষ হচ্ছে। বিদেশে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও বাজারমূল্য বেশি থাকায় চিংড়ি চাষের পাশাপাশি স্বল্পলোনা পানির এই মাছচাষ চাষিদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। বর্তমানে দেশের কক্সবাজারের গ্রিনহাউজ হ্যাচারি লিঃ ভেটকি মাছের পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন এবং সম্পূরক খাদ্যনির্ভর পোনা সরবরাহ করছে। এ সফলতার মাধ্যমে ভেটকি মাছচাষের একটি বড় প্রতিবন্ধকতা দূর হলো। ওয়ার্ল্ড ফিশ সেন্টার ও বাংলাদেশ শ্রিম্প এন্ড ফিশ ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত পোনার মাধ্যমে সম্পূরক খাবারনির্ভর ভেটকি মাছের চাষ বেশ সফলতার সাথে এগিয়ে চলেছে। 
এরা মাংসাশী  এবং স্বজাতিভোজী (ঈধহহরনধষরংস)। এ জন্য এ মাছের রেণু হতে পুকুরে চাষের প্রতিটি পর্যায়ে অধিক আমিষ সমৃদ্ধ (< ৫০%) সম্পূরক খাবার ব্যবহার করতে হয়। বিশেষ করে পোনা প্রতিপালনের সময় অধিকতর আমিষ সমৃদ্ধ খাবার ব্যবহার করতে হয় এবং ছোট বড় পোনা আলাদা করতে হয়। ভেটকি মাছের পোনা প্রতিপালন ব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য এ মাছের পোনা প্রতিপালন স্পষ্ট তিনটি স্তরে সম্পন্ন করতে হয়।
পোনা প্রতিপালনের প্রথম স্তর 
হ্যাচারিতে প্রণোদিত প্রজননের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডিম ফোটার পর থেকে ১.০০-১.৫০ সেমি আকার পর্যন্ত প্রতিপালন স্তর। এ স্তরটি আমাদের দেশে ভেটকির হ্যাচারিতে সম্পন্ন করতে হয় কারণ এ সময় ভেটকির পোনাকে বিশেষ ধরনের খাবার দেবার প্রয়োজন হয়। প্রাথমিকভাবে জীবন্ত খাবার (এলগি, রোটিফার ও আরটিমিয়া ইত্যাদি) এবং পরের দিকে উচ্চ আমিষ সমৃদ্ধ পাউডার খাবার। এ পর্যায়ের প্রতিপালন সিমেন্টের সিস্টার্নে করতে হয় এবং নিবিড় পরিচর্যা করতে হয়। এখানে এ্যারেশন (অক্সিজেন সরবরাহ) এবং পরিশোধিত লবণাক্ত পানি ব্যবহার হয় এবং নিয়মিত 
বিরতিতে পানি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, 
প্রতিদিন হাউজের তলার ময়লা বের করে দিতে হয়। কঠোর বায়েসিকিউরিটি বজায় রাখতে হয়। এখানে ব্যবহৃত পানি অবশ্যই জীবাণু মুক্ত হতে হবে। পোনা যখন একে অপরের খাওয়া শুরু করে তখন বড় ছোট আলাদা করা লাগে। এ জন্য এ মাছের পোনার এ পর্যায়ের চাষ চাষিপর্যায়ে বাস্তবায়ন আপাতত সম্ভব নয়। এ স্তরে পোনাকে প্রায় ৩০ দিন প্রতিপালন করতে হয়।
পোনা প্রতিপালনের দ্বিতীয় স্তর
পাকা হাউজে : এই স্তরে ১.৫ সেমি. থেকে ৩.০ সেমি. পর্যন্ত প্রতিপালন স্তর। এ পর্যায়ে আগের মতো হাউজে বা প্লাস্টিকের ক্যান্ভাস ট্যাংকে প্রতিপালন করা যায়। এখানে পানির গভীরতা ১ মিটার রাখতে হবে। পোনা প্রতি টনে ১০০০-১৫০০টি পর্যন্ত রাখা যায়। এখানে ৩-৫ টনের হাউজ ব্যবহার করা ভাল কারণ ভেটকি স্বজাতিভোজী বলে ছোট মাছকে বড় মাছ খেতে শুরু করে। তবে এ কাজটি একটি বড় আকারের হাউজের মধ্যে ৩ এমএম ফাসের নেটের (২মি.ী১.৫মি.ী১ মি) হাপাতে করলে পোনার গ্রেডিং এর কাজটি সহজ হয়। পোনা ৭-১০ দিন পরপর ছোট বড় আলাদা করে নতুনভাবে হাউজে মজুদ করতে হয়। এ সময় ধীরে ধীরে ডোবে (ঝড়ষড়ি ঝরহশরহম) এরূপ দানাদার (০.৫-০.৮ এমএম) খাবার খওয়াতে হয় এবং দিনে ৪-৬ বার খাবার দিতে হয়। ভোর ৫টা থেকে রাত্র ১০ ঘটিকা পর্যন্ত এ খাবার দিতে হবে। এ সময় প্রতিবার খাবার দেবার সময় ৩০-৪৫ মিনিট ধরে ধীরে ধীরে খাবার দিতে হয়। ধীরে ধীরে খাবার দেবার উদ্দেশ্য হলো খাবার যেন অপচয় না হয়। হাউজের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়মিত এক সময়ে এমনভাবে খাবার দিতে হবে যেন খাবার হাউজের তলদেশে যাবার আগেই পোনা ধরে খেয়ে ফেলতে পারে। প্রতিবার খাবার দেবার পরে হাউজের তলদেশ পরিষ্কার করতে হবে কারণ পোনার পায়খানা এবং উদ্বৃত্ত খাবার পচে হাউজের পানির পরিবেশ নষ্ট করে ফেলতে পারে। এ সময় পানির অবস্থা বুঝে পরিশুদ্ধ পানি দ্বারা পরিবর্তন করতে হয়। পোনা প্রতিপালন এর প্রতিটি স্তরে এ্যারেশন এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই স্তরেও কঠোরভাবে বায়োসিকিউরিটি বজায় রাখতে হবে। 
পুকুরের মাঝে হাপা স্থাপন করা : এ স্তরের পোনা প্রতিপালন কাজ পুকুরেও করা যেতে পারে, সেক্ষেত্রে পুকুরটি ভালভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। দ্বিতীয় স্তরে পোনার আকার ৪.০-৪.৫ সেমি. হবে এবং এ আকারের পোনা উৎপাদনে আরো ১ মাস প্রতিপালন করতে হয়।
পোনা প্রতিপালনের তৃতীয় স্তর 
পোনার আকার ৪ সেমি. হলে চাষের পুকুরে বা অন্য যে কোন পুকুরে হাপা স্থাপন করে প্রতিপালন করতে হবে। এ সময় হাপা ৬ এমএম ফাসের নেটের (২মি.ী২মি. ী১মি.) হলে ভাল হয়। হাপায় প্রতি ঘনমিটার ২০০টি পোনা মজুদ করতে হয়। এ পর্যায়ে পোনার আকার বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১২-১৪ সেমি. এবং ওজন লাভ করবে প্রায় ৬০ গ্রাম। এ আকরের পোনার মাঝে স্বজাতিভূজিতা কমে আসে। এ আকার হলে পোনা চাষের পুকুরে  মজুদ উপযুক্ত হয়।
পোনা প্রতিপালনের পুকুর নির্বাচন : পোনা প্রতিপালন হাপা স্থাপনের জন্য পুকুরটির আয়তন ৩০-৫০ শতকের হলে ভাল হয়। পুকুরের পানির গভীরতা হতে হবে কম পক্ষে ১.৫ মিটার। পুকুরটি খোলা মেলা হতে হবে। পর্যাপ্ত সূর্যের আলো থাকতে হবে। পুকুরের পানির লবণাক্ততা ০-১০ পিপিটি পর্যন্ত হতে পারে; পিএইচ ৭.৫০-৮.৫০ থাকলে ভাল হয়; তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সে. এর উপরে থাকতে হবে; এ্যামোনিয়ার পরিমাণ ০.০২ পিপিএম এর কম থাকতে হবে (এগুলো মেশিন দিয়ে মাপতে হবে); পুকুরটিতে মাছচাষ কার্যক্রম সহজভাবে পরিচালনার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকতে হবে; কাছাকাছি বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা থাকতে হবে। 
পুকুর প্রস্তুতি : অন্যান্য মাছের রেণু চাষের ন্যায় এ মাছের পোনা প্রতিপালনের জন্য পুকুর শুকিয়ে তলদেশের কাদা অপসারণ করে নিতে হবে, পুকুরের পাড় মেরামত করতে হবে। ভেটকি মাছের পোনা প্রতিপালনের জন্য অবশ্যই পুকুরের তলদেশের পেড়ি বা তলদেশের কাদা অপসারণ করতে হবে। কাদা অপসারণের পর পুকুর শুকালে পুকুরের তলা হাল দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে। এর ফলে মাটির তলায় আবদ্ধ ক্ষতিকর গ্যাস, রোগ-জীবাণু অপসারিত হবে। তলায় এ সময় শতকে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন (ঈধষপরঁস ঙীরফব)  দিতে হবে। এসময় পুকুরের চারিদিকে নীল নেটের বেড়া মজবুত করে স্থাপন করতে হবে যাতে ক্ষতিকর মৎস্যভূখ প্রাণী প্রবেশ করতে না পারে। এর পরে পুকুরে পানি ঢুকাতে হবে এবং পানির সাথে কোন প্রকার ক্ষতিকর প্রাণী ও পোকামাকড় প্রবেশ করতে না পারে এ জন্য পানি ভাল করে ছেঁকে ঢোকাতে হবে। পানি প্রবেশের পর শতকে ০.৫-১.০ কেজি হারে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে প্রতিদিন পুকুরের তলদেশ আলোড়িত করে দিতে হবে। এভাবে ৫-৬ দিন আলোড়িত করলে পানি থেকে অতিরিক্ত ক্লোরিন বের হয়ে যাবে।
পুকুরে হাপা স্থাপন : পুকুরে পোনা মজুদের জন্য ২মি. ী ১.৫মি. ী ১মি. মাপের ৩ এমএম ফাসের নেটের হাপা বাশের খুঁটি দিয়ে মজবুত করে স্থাপন করতে হবে। একটি হাপা থেকে অপরটি ১মি. ফাঁক রেখে স্থাপন করতে হবে। প্রতিটি হাপার উপরের অংশে চারিদিক দিয়ে ৩০ সেমি. বহরের নীল নেটের একটি পৃথক বেড়া দিতে হবে যাতে হাপা থেকে ভাসমান খাবার বের হয়ে যেতে না পারে। পোনাকে খাবার দেয়া, পোনা পর্যবেক্ষণ করা, পোনার গ্রেডিং করার জন্য বাঁশের মাচা (ঈধঃং ডধষশ) তৈরি করতে হবে মজবুত করে। হাপা পানির উপরে ২০ সেমি. থাকলে চলবে। আগে বলা হয়েছে ভেটকি মাছ অক্সিজেনের প্রতি বেশ সংবেদনশীল এ জন্য নার্সারি পুকুরে একটি প্যাডেলহুইল এ্যারেটর স্থাপন করা ভাল। 
নার্সারি পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদন : হাপায় পোনা মজুদের আগে পুকুরে শতকে ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম হারে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে, পাশাপাশি প্রিবায়টিক্স (শতকে ২০০ গ্রাম মিহিকুড়া, ২০০ গ্রাম মোলাসেস ও ৫ গ্রাম ইস্ট একত্রে ১০ গুণ পানির সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে প্রয়োগ করতে হবে) এর একটি ডোজ দিতে হবে যাতে পানিতে প্লাংটনের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধি পায়। 
পোনা মজুদ : অন্যান্য মাছের পোনা মজুদের সময় যেসব কাজ করতে হয় এখানেও সে কাজগুলো করতে হবে। এখানে বিশেষভাবে করণীয় হলো পোনা পরিবহনকৃত পানির লবণাক্ততা এবং নার্সারি পুকুরের পানির লবণাক্ততার সমন্বয় করে নিতে হবে। এ জন্য পলিথিনের পানি ধীরে ধীরে (১৫-৩০ মিনিট সময় নিয়ে) পরিবর্তন করতে হবে। পোনা ছাড়ার সময় পটাশ পানিতে গোসল করাতে হবে এবং হাপার ভেতর ধীরে ধীরে অবমুক্ত করতে হবে। পোনা ছাড়ার সময় পুকুরের এ্যারেটর চালু রাখতে হবে। 
ভেটকি মাছের পোনার খাদ্য ব্যবস্থাপনা : পোনা মজুদের (১.০-১.৫ সেমি. আকারের) পর ৩-৪ ঘণ্টা পরে খাবার দেয়া শুরু করতে হবে। হাউজে বা হাপায় খাবার একভাবে দিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করে নিতে হবে, সেখানে স্থিরভাবে বসে ধীরে ধীরে খাবার দিতে হবে। অন্য মাছের মতো ছিটিয়ে দিলে খাদ্য অপচয় হবে এবং পোনা অভুক্ত থেকে যাবে। চেষ্টা করতে হবে যেন কোন খাবার অপচয় না ঘটে। এ মাছ খাবার গ্রহণের সময় সকলে একসাথে জড়ো হয়ে যায় ফলে খাবার দিতে সুবিধা হয়, পোনা খাবার গ্রহণ করছে সেটা দেখা যায় এবং খাবার গ্রহণ শেষ হল কি না তাও সহজে বোঝা যায়। পোনার আকার অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করতে হবে। খাবার প্রদানের সময় অতিরিক্ত শব্দ বা পানি নাড়াচাড়া করা যাবে না।   
ছোট-বড় পোনা পৃথকীকরণ : পোনা প্রতিপালনের কিছু দিন পর পর পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং পোনার আকারের ব্যবধান বুঝে আকার অনুযায়ী ২-৩ ভাগে ভাগ করে পৃথক করে একই আকারের পোনা একটি হাপাতে মজুদ করতে হবে। পোনা পৃথকীকরণ একটি কঠিন কাজ, এ কাজটি ৩ ভাবে করা যায়। ১) একটি একটি করে ম্যানুয়ালি করা যেতে পারে; ২) বিভিন্ন আকারের ছিদ্র যুক্ত পাত্রের মাধ্যমে এবং ৩) গ্রেডার মেশিন দিয়ে। গ্রেডিং করার সময় কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে যেমন, হাপা থেকে সাবধানে পানিসহ পোনা পাত্রে নিতে হবে, পোনার পাত্র মসৃন হতে হবে (এসএস এর তৈরি পাত্র হলে ভাল হয়); পোনা পানির উপরে না আনার চেষ্টা করতে হবে, পোনার গায়ে হাত না লাগানোর চেষ্টা করতে হবে, গ্রেডিং এর পরপরই বিকেসি অথবা পটাশ দিতে হবে হাউজে বা পুকুরের পানিতে। পোনার আকার বৃদ্ধি অনুযায়ী খাদ্য পরিবর্তন করতে হবে এবং হাপার ম্যাশের আকার বাড়াতে হবে। অর্থাৎ পোনা বড় হলে সে অনুযায়ী বড় ফাসের নেটের হাপা ব্যবহার করতে হবে। পোনা ৬০ গ্রাম আকারের হলে চাষের পুকুরে মজুদ করা যাবে, এ সময় এদের স্বজাতিভোজিতা স্বভাব কমে যায়। 
পোনার আকার অনুযায়ী হাপার ম্যাশের আকার
পোনার আকার অনুযায়ী খাদ্যের ধরন
ছোট বড় পোনা পৃথক করণের সুবিধা : নিয়মিত গ্রেডিং করলে পোনার স্বজাতিভোজিতা কমানো যায়, যা এ পোনার বাঁচার হারের ওপর বিশেষ প্রভাব রাখে। এ মাছের পোনা তার দৈর্ঘ্যরে ৬০-৬৫% আকারের পোনা খেয়ে ফেলতে পারে। সময় মত, পরিমাণ মত খাবার খাওয়াতে পারলে স্বজাতিভোজিতা কমানো যায়।
অন্যান্য পরিচর্যা : পোনা প্রতিপালন চলা কালে পুকুরের পানির রং বুঝে ১৫-২০ দিন অন্তর প্রিবায়টিক্স প্রয়োগ করতে হবে যাতে পানিতে পর্যাপ্ত জুপ্লাংটন থাকে। মাসে একবার ভাল মানের প্রবায়টিক্স প্রয়োগ করতে হবে। পানির পিএইচ বুঝে চাষ চলা কালে কৃষি চুন শতকে ৩০০-৪০০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে। মাছের অনুপুষ্টির ঘাটতি পূরণের জন্য খাদ্যের সাথে ১০-১৫ দিন অন্তর ভিটামিন ‘সি’ সহ অন্যান্য ভিটামিন মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। পোনার রোগ প্রতিরোধের জন্য মাসে একবার বিকেসি বা টিমসেন প্রয়োগ করতে হবে।
এ মাছের পোনা প্রতিপালন কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ যা আমাদের সৃজনশীল মৎস্যচাষিদের মাধ্যমে সহজলভ্য হবে। এ পোনা একটু বেশি স্পর্শকাতর হওয়ায় পোনার গ্রেডিং বা হাপা পরিবর্তনের সময় সাবধানে নাড়াচাড়া (ঐধহফষরহম) করতে হবে। এ মাছের চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় মাছ চাষিদের মাঝে দ্রুত সম্প্রসারিত হবে। 
 
লেখক : প্রাক্তন বিভাগীয় উপপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর, মোবাইল : ০১৭৫১৯৩৯৯৩২, ই-মেইল :ofaz2010@gmail.com
বিস্তারিত
গবাদিপশু-ও-হাঁস-মুরগির-রোগ-প্রতিরোধে-টিকাদানের-নিয়মাবলি

গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে 
টিকাদানের নিয়মাবলি
ডা. মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ
টিকা বা ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধের একটি উপায়। টিকার মাধ্যমে দেহে রোগ প্রতিষেধক বীজ প্রয়োগ করা হয়। এই বীজ সুনির্দিষ্ট রোগের নিষ্ক্রিয় জীবাণু, যা দেহে প্রবেশ করে বিশেষ উপায়ে সেই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। এ প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম উপায়ে শরীরে প্রত্যক্ষ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলাকেই টিকাদান বা ভ্যাকসিনেশন বলে।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণত যে রোগের বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া হয় ঐ রোগের জীবাণু দিয়েই টিকা তৈরি করা হয়। তবে জীবাণুগুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নিস্তেজ করা, মারা বা কিছুটা দুর্বল করা হয়। এরূপ হলে তাদের আর  রোগ সৃষ্টি করার কোনো প্রকার ক্ষমতা থাকে না। টিকা তৈরি হতে পারে জীবিত জীবাণু দিয়ে, হতে পারে মৃত বা নিষ্ক্রিয় জীবাণু দিয়ে অথবা জীবাণুর এন্টিজেন অংশ দিয়ে। 
 “চৎবাবহঃরড়হ রং নবঃঃবৎ ঃযধহ পঁৎব” “প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম”। অর্থাৎ, রোগের চিকিৎসা করার চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে অধিকাংশ প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগের কার্যকরী প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। তাই খামারে গবাদিপশু এবং পোল্ট্রিকে রোগব্যাধির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে ঘাতক ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখা হয়, যা আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনার অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচিত।
টিকা (ভ্যাকসিন) এর প্রকারভেদ
টিকা প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
জীবন্ত টিকা (খরাব ঠধপপরহব) : বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগের জীবাণুকে দুর্বল করে জীবন্ত টিকা তৈরি করা হয়। এই টিকা দেহে দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। সাধারণত খাবার পানি, চোখে বা নাকে ফোঁটা, স্প্রে, মুখে ড্রপ এবং কখনো কখনো ইনজেকশনের মাধ্যমে এই টিকা প্রয়োগ করা হয়।
নিষ্ক্রিয়কৃত টিকা (ওহধপঃরাধঃবফ ঠধপপরহব) : জীবাণুকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মেরে ফেলে এই টিকা প্রস্তুত করা হয়। জীবাণুর রোগ তৈরির ক্ষমতা নষ্ট করে তার এন্টিজেনিক গুণাগুণ অক্ষুণœ রেখে এই টিকা তৈরি করা হয়। এই ধরনের টিকা প্রদানে দেহে উন্নতমানের দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে দেহে নিষ্ক্রিয়কৃত টিকা প্রয়োগ করা হয়। 
টিকা পরিবহন, সংরক্ষণ এবং প্রয়োগের নিয়মাবলি
সঠিকভাবে টিকা পরিবহন, সংরক্ষণ এবং সময়মতো প্রয়োগ না করা টিকা অকার্যকর হওয়ার অন্যতম কারণ। টিকা পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রয়োগের নিয়মাবলি সারণি দ্রষ্টব্য।
এছাড়াও প্রতিষেধক টিকা সবসময়ই সুস্থ পশু-পাখিকে প্রয়োগ করতে হবে। অসুস্থ পশু-পাখিকে টিকা দেওয়া যাবে না; কৃমিতে আক্রান্ত পশু-পাখিকে টিকা প্রয়োগ করা উচিত নয়। তাতে কাক্সিক্ষত মাত্রায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয় না; টিকা বীজ অথবা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রস্তুতকৃত তরল টিকা কোন অবস্থাতেই সূর্যের আলোতে আনা উচিত নয়; টিকা বীজ সবসময় ঠা-া অবস্থায় (যথাযথ তাপমাত্রায়) সংরক্ষণ করতে হবে; তরল টিকাসমূহ রেফ্রিজারেটরে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। এই টিকা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে না। হিমশুষ্ক টিকাসমূহ শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচের তাপমাত্রায় বা বরফপাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে; তরল ও হিমশুষ্ক উভয় প্রকার টিকা পরিবহনের ক্ষেত্রে কুল চেইন বা ঠা-া অবস্থায় পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে; তাপ প্রতিরোধক কুল-ভ্যান/কন্টেনার/ফ্লাস্কের মধ্যে বরফ দিয়ে টিকা পরিবহন করতে হয়। বরফ গলে গেলে পুনরায় বরফ দিতে হবে; হিমশুষ্ক টিকাসমূহ সরবরাহকৃত ডাইল্যুয়েন্ট (টিকার দ্রবণ) এবং যে সকল টিকার সাথে ডাইল্যুয়েন্ট সরবরাহ করা হয় নাই সেগুলোর ক্ষেত্রে বাজারে প্রাপ্ত পরি¯্রুত পানি (উরংঃরষষবফ ডধঃবৎ) ব্যবহার করতে হবে; পরি¯্রুত পানি (উরংঃরষষবফ ডধঃবৎ) না থাকলে কলের পানি ২০ মিনিট গরম করার পর ঠা-া করে ব্যবহার করতে হবে; হিমশুষ্ক টিকাসমূহ একবার ডাইল্যুয়েন্ট বা ডিস্টিল্ড ওয়াটারে মিশ্রিত করার পর ২ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ টিকা ব্যবহার শেষ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ না হলে তা সংরক্ষণ না করে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। ভায়ালে অব্যবহৃত টিকা সংরক্ষণ করে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না; টিকা ব্যবহারের তারিখ ও সংরক্ষণের মেয়াদ গত হয়ে গেলে এবং টিকার সাধারণ রং পরিবর্তিত হয়ে গেলে কোনক্রমেই সে টিকা ব্যবহার করা যাবে না; ব্যবহারের সময় মিশ্রণ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে পাত্র, সিরিঞ্জ, নিডেল, ডাইল্যুশনের জন্য ব্যবহৃত তরল পদার্থ, টিকা ব্যবহারকারীর হাত ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। টিকা প্রয়োগের পূর্বে সিরিঞ্জ, নিডেল ও আনুষঙ্গিক পাত্রগুলো যথাযথভাবে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে; টিকা প্রয়োগের পর টিকার অব্যবহৃত অংশ, ভায়াল, ক্যাপ, রাবার স্টপার, একবার ব্যবহার উপযোগী নিডেল (সুচ) মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে; জীবাণুমুক্তকরণের জন্য রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা উচিত নয়; তরল টিকা ব্যবহারের পর অবশিষ্ট থাকলে ফ্রিজে রেখে তা পরে ব্যবহার করা যায়; ব্যবহারের সময় টিকা মিশ্রণের পাত্র ছায়াযুক্ত স্থানে বরফ দেয়া বড় পাত্রের মধ্যে রাখতে হবে; লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বয়স্ক পশু-পাখির টিকা ভুলবশত বাড়ন্ত বাচ্চাকে না দেয়া হয়। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে; টিকার ভায়াল/এম্পুল কখনোও হাতে বা পকেটে করে নেয়া উচিত নয়। কারণ দেহের তাপে টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে; গ্রামাঞ্চলে টিকা প্রদানের পূর্বে সমস্ত মোরগ-মুরগিকে একত্র করার পর টিকা গুলানো এবং ব্যবহার করা উচিত। কারণ মুরগী আনতে আনতে বিলম্বের কারণে টিকার গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গুলানো টিকা নিয়ে বাড়ি-বাড়ি বা গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ঘোরাফেরা করা উচিত নয়; টিকা প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত সিরিঞ্জ এবং নিডেল কোনো প্রকার জীবাণুনাশক পদার্থ দ্বারা পরিষ্কার করা উচিত নয়। কারণ সিরিঞ্জ এবং নিডেল পরিষ্কার করার পর যে জীবাণুনাশক পদার্থ লেগে থাকবে তা টিকার ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে মেরে ফেলে টিকার কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে। (সূত্র: প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাখালী, ঢাকা এর বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২৩)


বি.দ্র. উল্লিখিত নিয়মাবলি মেনে সঠিকভাবে কর্মসম্পাদন না করলে টিকাদান ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

লেখক : ভেটেরিনারি সার্জন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, কৃষি খামার সড়ক, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫, মোবাইল: ০১৮১১-৯৮৬৬০৫, ইমেইল :smmohibullah@gmail.com 

বিস্তারিত
রূপসায়-লেবু-চাষে-আকরাম-হোসেনের-উদ্যোগ
রূপসায় লেবু চাষে আকরাম হোসেনের উদ্যোগ
মোঃ আবদুর রহমান
লেবু একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। পৃথিবীর সর্বত্রই লেবুজাতীয় ফল অত্যন্ত সমাদৃত। বাংলাদেশের লেবুজাতীয় ফল বলতে প্রধানত কমলালেবু, মাল্টা, এলাচিলেবু, বাতাবিলেবু, কাগজি লেবু, পাতিলেবু প্রভৃতিকে বোঝায়। স্বাদে ও গুণে এ জাতীয় ফল যেমন মনোমুগ্ধকর, তেমনি পুষ্টিমানেও অতুলনীয়। লেবুজাতীয় ফল আমাদের দেহের নানা উপকারে আসে। এ জাতীয় ফল ভিটামিন ‘সি’ এর উৎকৃষ্ট উৎস। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ‘সি’ এর গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং ভিটামিন ‘সি’সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণে আমাদের প্রতিদিন লেবুজাতীয় ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা একান্ত অপরিহার্য।
লেবু চাষ করে প্রথমবারই সফল হয়েছেন মোঃ আকরাম হোসেন (৬২)। তিনি রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা। বসতবাড়ির পতিত জমিতে সুগন্ধি জাতের লেবু চাষ করে অধিক ফলন ও দাম পেয়ে আকরাম হোসেন দারুণ খুশি। প্রায় চার বছর আগে সৃজিত বাগানে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ রঙের লেবু। তার এমন সাফল্য দেখে এলাকার অনেক মানুষ লেবু চাষে উৎসাহিত হয়েছেন।
সরেজমিন আকরাম হোসেনের সাথে এ কথা হলে। জানা যায়, গত চার বছর আগে তিনি আষাঢ় মাসে ৫০ শতক জমিতে উন্নত পদ্ধতিতে একশ’ সুগন্ধি লেবু (পাতি লেবু) এর চারা রোপণ করেন। তিনি বলেন, উঁচু ও মাঝারি উঁচু প্রকৃতির দো-আঁশ মাটি লেবু চাষের জন্য উপযুক্ত। চারা রোপণের আগে জমিতে ২-৩টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছামুক্ত ও সমতল করে জমি তৈরি করে ৩.৫ মিটার দূরে দূরে সারি করে প্রতি সারিতে ৩.০ মিটার পর পর ৫০ সেমি. চওড়া ও ৫০ সেমি. গভীরতা বিশিষ্ট গর্ত তৈরি করা হয়। এরপর প্রতি গর্তের ওপরের স্তরের মাটির সাথে ১০ কেজি গোবর, ৩০০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম এমওপি ও ১০০ গ্রাম জিপসাম সার ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত পুণরায় ভরাট করা হয়। সার মিশানো মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করে ৮-১০ দিন পর গর্তের ঠিক মাঝখানে এক বছর বয়সের লেবু চারা রোপণ করা হয়। গর্তে চারা রোপণ করার পর চারদিকের মাটি হাত দিয়ে হালকাভাবে চেপে বসিয়ে দিয়ে চারার গোড়ায় ঝাঝরি দিয়ে পানি সেচ দিয়ে গর্তের মাটি ভালো করে ভিজিয়ে দেওয়া হয়। 
আকরাম হোসেন আরো জানান, লেবু চারা রোপণের তিন মাস পর অর্থাৎ গাছের নতুন শিকড় মাটিতে লেগে যাবার পর প্রতি গাছে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম এমওপি ও ১০ গ্রাম দস্তা সার গাছের গোড়া হতে কিছু দূরে ছিটিয়ে প্রথম উপরিপ্রয়োগ করা হয়। এরপর চারা রোপণের দশ মাস পর প্রতি গাছে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম এমওপি, ২০ গ্রাম বোরন ও ১০ দস্তা সার গাছের গোড়ার চারদিকে (গাছের গোড়া থেকে ১০-১৫ সেমি. দূরে) ছিটিয়ে কোদাল দিয়ে হালকাভাবে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয়। সার প্রয়োগের পর গাছের গোড়ায় ঝাঝরি দিয়ে পানি সেচ দিতে হয়। তাছাড়া নিয়মিত নিড়ানি দিয়ে চারার গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করা হয় এবং মাটিতে রসের অভাব হলে লেবু গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। লেবুগাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের সময় গাছের যাতে পানি না জমে সেজন্য নালা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। লেবুর প্রজাপতি পোকার কীড়ার কবল থেকে লেবুর পাতা রক্ষার জন্য এমিথ্রিন প্লাস (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ০২ গ্রাম) এবং পাতার দাগ রোগ (এ্যানথ্রাকনোজ রোগ) প্রতিরোধের লক্ষ্যে টিল্ট-২৫০ ইসি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ০৫ মিলি মিটার) নামক ছত্রাকনাশক লেবু বাগানে নিয়মিত স্প্রে করেছেন বলে আকরাম হোসেন জানান। এভাবে তিনি লেবু চারাগুলোর নিবিড় পরিচর্যা করেন। এতে চারাগুলো তরতর করে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৫০ শতক জমিতে লেবু চাষে চারা ক্রয়, গর্ত তৈরি, সার ও অন্যান্য খরচ মিলে তার প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। চারা রোপণের এক বছরের পর থেকেই আকরাম হোসেনের স্বপ্নের লেবু গাছে ফল ধরা শুরু হয়। বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট লেবু গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় লেবু। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। আকরাম হোসেন জানান, প্রতিটি গাছে ৮০-৯০টি করে ফল ধরেছে। চারা রোপণের পরবর্তী বছরই তিনি ৪০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেছেন। বর্তমানে এ বাগান থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করছেন বলে আকরাম হোসেন জানান। 
অন্যান্য কৃষক ভাইদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যাদের খালি জায়গা-জমি আছে, আপনারা তা ফেলে না রেখে লেবুসহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগান এবং যত্ন নেন। তাহলে দেখবেন এই ফল গাছ একদিকে আপনাকে বিশুদ্ধ অক্সিজেন দিবে, অপরদিকে দিবে ফরমালিন মুক্ত ফল খাওয়ার সুযোগ। আর সর্বোপরি আপনি হবেন এই ফল গাছের মাধ্যমে স্বাবলম্বী। এজন্য দরকার পরিশ্রম ও অধ্যবসায়। 
রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ উপজেলার দেবীপুর গ্রামের মোঃ আকরাম হোসেন বসতবাড়ির আঙ্গিনার পতিত জমিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে লেবু বাগান  করে সফল হয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমরা তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে আসছি। এ ছাড়া লেবুসহ মাল্টা, আম ও অন্যান্য ফল চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও সহযেগিতা প্রদান করা হচ্ছে। আর প্রতিটি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ চাষিদের পাশে থেকে লেবুসহ বিভিন্ন ফল ও ফসল চাষে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। 
লেবু চাষে খরচ কম, লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। চারা লাগানোর এক বছর পর থেকেই ফলন পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করলে একবার চারা রোপণের পর একাধারে অন্তত ১০-১৫ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। সারা বছরই লেবুর চাহিদা রয়েছে। দেহের প্রতিরোধে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ এই লেবু অনেক উপকারী বলে বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। পাইকাররা বাগানে এসেই কিনছেন লেবু। তাই বাজারজাত করার বাড়তি ঝামেলা নেই। লেবুর ভালো দাম পেয়ে দেবীপুর গ্রামের আকরাম হোসেন অনেক খুশি। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন এলাকা থেকে আগ্রহী চাষিরা তার এই বাগান দেখে লেবু চাষে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।  
পুষ্টিগুণ ছাড়াও লাভজনক ও অর্থকরী ফলের মধ্যে লেবু অন্যতম। তাই আকরাম হোসেনের মতো সবাইকে লেবু চাষের উদ্যোগ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। এতে পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থিক সচ্ছলতা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান হবে এবং দেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির চাকা আরো গতিশীল হবে। 
 
লেখক : উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (অবঃ) উপজেলা কৃষি অফিস রূপসা, খুলনা। মোবাঃ ০১৯২৩৫৮৭২৫৬; ই-মেইল:rahman.rupsha@gmail.com
বিস্তারিত
প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নোত্তর

কৃষিবিদ আকলিমা খাতুন

নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাইব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
হাসানুর রহমান, উপজেলা : সদর গাইবান্ধা, জেলা : গাইবান্ধা
প্রশ্ন : গোল মরিচের জাত সম্পর্কে জানতে চাই। গোলমরিচ লাগানোর সময় কখন। চারা রোপণের পদ্ধতি কী?
উত্তর : বাংলাদেশে নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক জৈন্তিয়া গোলমরিচ জাতটি আবিষ্কৃত হয়। যা বারি গোলমরিচ-১ নামে পরিচিত।
চারা রোপণ : মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল- মে) মাসে প্রত্যেক সহায়ক বৃক্ষের পাশে তৈরি গর্তে ২-৩টি কাটিং লাগাতে হবে এরপর পানি দিতে হবে। কাটিংগুলো সহায়ক বৃক্ষের উত্তর পার্শ্বে লাগানো হলে সূর্যের তাপ কম লাগবে। সূর্যের তাপ হতে প্রাথমিকভাবে রক্ষার জন্য পাতাওয়ালা গাছের ডাল বা অন্য কোনভাবে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। জংলী কোন বৃক্ষ বা ফলের গাছ (কাঁঠাল, লটকন ইত্যাদি ছাড়া যে সব গাছে গোড়া ও প্রাথমিক বড় শাখাতে ফল ধরে) সহায়ক বৃক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
মো: সনেট, উপজেলা : বাকেরগঞ্জ, জেলা : বরিশাল
প্রশ্ন : চীনাবাদামের জ্যাসিড বা পাতা শোষক পোকা কিভাবে দমন করা যায়।
উত্তর : হাত জাল দিয়ে পোকা ধরে মেরে পোকার সংখ্যা কমানো যায়। চীনাবাদামের সাথে রসুন, পিয়াজ বা ধনিয়া আন্তঃফসল হিসেবে করে পোকার আক্রমণ শতকরা  ২০-২৫ ভাগ কমানো যায়। নিম পাতার নির্যাস (১০%) আক্রান্ত ক্ষেতে ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২ বার স্প্রে করতে হবে। ৫০ গ্রাম নিম বীজ ভেঙে ১ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে (২-৩) গ্রাম ভিটারজেট বা গুঁড়া সাবান মিশিয়ে ছেকে ১৫ দিন অন্তর অন্তর তিন বার ছিটিয়ে পোকা দমন করা যায়। আক্রমণ বেশি হলে সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের ওষধ রিপকর্ড ১০ ইসি ১ মিলি বা এডমায়ার .৫ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর অন্তর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
লুৎফর রহমান, উপজেলা : বটিয়াঘাটা, জেলা : খুলনা
প্রশ্ন : পটোল ক্ষেতে লাল মাকড়ের আক্রমণ হলে কি করতে হবে।
উত্তর : পটোল ক্ষেত পরিষ্কার রাখতে হবে। এক কেজি আধা ভাঙ্গা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ওই পানি পাতার নিচের দিকে স্প্রে করতে হবে। আক্রমণের হার বেশি হলে ওমাইট বা টলস্টার (প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি) হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
মো: লিটু, উপজেলা : বাগমারা, জেলা : রাজশাহী
প্রশ্ন : আমড়া গাছের সার প্রয়োগ মাত্রা জানতে চাই।
উত্তর : আমড়া চারা রোপণের সময় ৬০ী৬০ ী৬০ সেমি. গর্ত করে ২০ কেজি জৈবসার, ২০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে। বৃষ্টির মৌসুমের প্রারম্ভে অর্থাৎ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস (এপ্রিল- মে) চারা লাগানোর সময়।
এছাড়া আমড়া গাছে বছরে ২ বার সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি বর্ষার প্রথমে (এপ্রিল- মে) এবং ২য় কিস্তি বর্ষার শেষে মধ্য শ্রাবণ থেকে মধ্য ভাদ্র (আগস্ট- সেপ্টেম্বর) দিতে হবে। মাটিতে জো অবস্থায় সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণে বৃদ্ধি করতে হবে।
আব্দুল করীম, উপজেলা : শিবালয়, জেলা : মানিকগঞ্জ
প্রশ্ন : গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বীজতলা তৈরি ও পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : সবল চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমে ৫০ গ্রাম সুস্থ বীজ ঘন করে প্রতিটি বীজতলায় (১ মিটার লম্বা ও ৩ মিটার চওড়া) বুনতে হয়। এই হিসেবে প্রতি হেক্টরে ২০০ গ্রাম (১ গ্রাম/শতাংশ) বীজ বুনতে (গজানোর হার ৮০%) ৪টি বীজতলায় প্রয়োজন। গজানোর ৮-১০ দিন পর চারা দ্বিতীয় বীজতলায় ৪৪ সেমি. দূরত্বে স্থানান্তর  করতে হবে। এক হেক্টর জমিতে টমেটো চাষের জন্য এইরূপ ২২টি বীজতলার প্রয়োজন হয়। বীজতলায় ৪০-৬০ মেস (প্রতি ইঞ্চিতে ৪০-৬০টি ছিদ্রযুক্ত) নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে চারা উৎপাদন করলে চারা অবস্থায়ই সাদা মাছি পোকার দ্বারা পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস ছড়ানোর হাত  থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। এইরূপ সুস্থ সবল ও ভাইরাসমুক্ত চারা রোপণ করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও রোদের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে পলিথিন ও চাটাই এর আচ্ছাদন ব্যবহার করতে হবে।
আমজাদ হোসেন, উপজেলা : ফুলবাড়িয়া, জেলা : দিনাজপুর
প্রশ্ন : ঝিঙায় সাদা মাছির আক্রমণে করণীয় কী?
উত্তর : সাদা মাছি ঝিঙার পাতার রস চুষে খায় ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। এরা ভাইরাসজনিত রোগ ছড়ায়। পাতায় অসংখ্য সাদা সাদা পাখাযুক্ত মাছি দেখা যায়। প্রথমবার লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই ব্যবস্থা নিতে হবে। আগাম বীজ বপন, সুষম সার ব্যবহার, আগাছা পরিষ্কার রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে এগুলো রোধ করা সম্ভব। সাদা মাছি আক্রমণ করলে সাদা আঠাযুক্ত বোর্ড স্থাপন বা আলোক ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শনে রাখতে হবে। ৫০ গ্রাম সাবানের গুড়া ১০ লিটার পানিতে গুলে পাতার নিচে সপ্তাহে ২/৩ বার ভাল করে স্প্রে করতে হবে। সাথে ৫ কৌটা গুল (তামাক গুড়া) পানিতে মিশিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে অনুমোদিত বালাইনাশক যেমন : ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের ওষুধ এডমায়ার ০.৫ মিলি বা ইমিটাফ ০.২৫ মিলি অথবা ডাইমেথয়েট গ্রুপের ওষুধ টাফগর/মানগর ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
আবুল হাসান, উপজেলা : আড়াইহাজার, জেলা : নারায়ণগঞ্জ
প্রশ্ন : পোকা লিচুর ফল ছিদ্র করে নষ্ট করে ফেলছে। এ অবস্থায় কি করতে পারি?
উত্তর : লিচুর ফলছিদ্রকারী পোকা ফলের বোটার কাছে ছিদ্র করে বীজকে নষ্ট করে ফেলে। পরে ছিদ্রের মুখে বাদামি রঙের এক প্রকার করাতের গুড়ার মতো মিহি গুড়া উৎপন্ন হয়। এতে ফল নষ্ট হয়ে যায়। এই রোগে করণীয় হল লিচু বাগান নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে। লিচু গাছতলায় শুকনো খড়ে আগুন দিয়ে তাতে ধুপ দিয়ে ধোয়া দিলে এ পোকার মথ বিতাড়িত হবে। বোম্বাই জাতে আক্রমণ বেশি হওয়ায় চায় না ৩ জাত  রোপণ করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে সাইপারমেথ্রিন ১ মিলি বা সুমিথিয়ন বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
বজলুল রহমান, উপজেলা : মনোহরদী, জেলা : নরসিংদী
প্রশ্ন : পেঁপে চাষে বীজের পরিমাণ এবং সার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : পেঁপের জন্য জাতভেদে প্রতি শতকে ১.৫-২.৫ গ্রাম বীজ প্রয়োজন। প্রতি গর্তে ইউরিয়া ৪০০-৫০০ গ্রাম টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ৪৫০-৫০০ জিপসাম ২৫০ গ্রাম, জিংক ২০ গ্রাম, বোরন ২০ গ্রাম দিতে হবে। চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে প্রতি গর্তে ১৫ কেজি গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বোরিক এসিড দিতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি চারা রোপণের ১ মাস পর থেকে প্রতি মাসে একবার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। প্রতি গাছে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম এমওপি দিতে হবে এবং গাছে ফুল এলে এই মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। ফল তোলার ২ মাস আগে সার দেয়া বন্ধ করতে হবে।
ওমর ফারুক, উপজেলা : রংপুর সদর, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : আদা গাছ হলুদ হয়ে শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। কী করণীয়?
উত্তর : আদার কন্দ পচা রোগের  কারণে কন্দ পচে যায়, গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় কিন্তু গাছের পাতায় কোন দাগ থাকে না। পরবর্তীতে গাছ আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়। আক্রান্ত গাছ টান দিলে খুব সহজেই উঠে আসে এবং গাছের গোড়ার অংশে পচা দেখা যায়। চুঃযরঁস ংঢ়. ছত্রাকের আক্রমণে এরোগ দেখা দেয়। আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট বা পুড়ে ফেলতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ৩-৪ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিড়িডি মিশিয়ে কন্দ শোধন করতে হবে। রোগ দেখা দিলে প্রতি  লিটার পানিতে ২ গ্রাম কম্প্যানিয়ন বা ব্যাভিস্টিন/ নোইন বা ডাইথেন এম-৪৫ বা ৪ গ্রাম সানভিট গাছের গোড়ায় ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
হাবিবুর রহমান, উপজেলা : ফুলবাড়ি, জেলা : কুড়িগ্রাম
প্রশ্ন : পোকা মুগডালের পাতা খেয়ে ঝাঝরা করে ফেলছে, করণীয় কী?
উত্তর : মুগের বিছা পোকার কীড়া দলবদ্ধভাবে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে ঝাঝরা করে ফেলে । এরা সারা মাঠে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো পাতা খেয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। আক্রমণের প্রথম অবস্থায় কীড়াসমূহ দলবদ্ধভাবে থাকে সে অবস্থায় পাতা ছিড়ে কেরোসিন মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে কীড়া নষ্ট করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি ডায়াজিনন বা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের রিপকর্ড ১ মিলি বা কার্বারিল গ্রুপের সেভিন ৩.৪ গ্রাম মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

লেখক : তথ্য অফিসার (উদ্ভিদ সংরক্ষণ), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫। মোবাইল : ০১৯১৬৫৬৬২৬২; ই-মেইল : aklimadae@gmail.com

বিস্তারিত
আষাঢ়-মাসের-কৃষি-(১৫-জুন-১৫-জুলাই)

আষাঢ় মাসের কৃষি
(১৫ জুন-১৫ জুলাই)
কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
এলো আষাঢ় মাস। কাঠফাটা গরমের দাপট কমাতে বহুল প্রতীক্ষিত ঋতু বর্ষার আগমন হয়। রিমঝিম বৃষ্টির শিহরণ হৃদয়কে করে তোলে স্নিগ্ধ ও সুশোভিত। নদী, খাল-বিল ফিরে পায় তার যৌবন। গাছপালা ফিরে পায় সবুজ প্রাণ। অপরূপ রূপে সেজে ওঠে প্রকৃতি। সাথে আমাদের কৃষিকাজেও নিয়ে আসে ব্যাপক ব্যস্ততা। বৃষ্টির পরশে নতুন শস্যাদি জন্মায়। প্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন আসুন আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নেই আষাঢ় মাসে কৃষির আবশ্যকীয় কাজগুলো। 

আউশ ধান
আউশ ধানের ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য যত্ন নিতে হবে। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগ ও পোকামাকড় দমন করতে হবে। বন্যার আশঙ্কা হলে আগাম রোপণ করা আউশ ধান শতকরা ৮০ ভাগ পাকলেই প্রয়োজনে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে শুকিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
বায়ুরোধী পাত্রে বীজ রাখা উচিত। বীজ রাখার জন্য ড্রাম ও বিস্কুট বা কেরোসিনের টিন ব্যবহার করা ভাল। পাত্র ভালভাবে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে। ধাতব অথবা প্লাস্টিক ড্রাম ব্যবহার করা সম্ভব না হলে, মাটির মটকা, কলস বা মোট পলিথিনের থলি ব্যবহার করা যেতে পারে। মাটির পাত্র হলে পাত্রের বাইরের গায়ে দুবার আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। রোদে শুকানো বীজ ঠা-া করে পাত্রে ভরতে হবে। পাত্রটি সম্পূর্ণ বীজ দিয়ে ভরে রাখতে হবে। যদি বীজের পরিমাণ কম হয় তবে বীজের উপর কাগজ বিছিয়ে তার উপর শুকনো বালি দিয়ে পাত্র পরিপূর্ণ করতে হবে। পাত্রের মুখ ভালভাবে বন্ধ করতে হবে যেন বাতাস ঢুকতে না পারে। বীজ পাত্র মাচায় রাখা ভালো, যাতে পাত্রের তলা মাটির সংস্পর্শে না আসে। গোলায় ধান রাখলে ১ মণ ধানের জন্য আনুমানিক ১২০ গ্রাম নিম বা নিশিন্দা অথবা বিষকাটালীর পাতা গুঁড়া করে মিশিয়ে দিয়ে সংরক্ষণ করলে পোকার আক্রমণ প্রতিহত হয়।
আমন ধান
আমন ধানের বীজতলা তৈরির সময় এখন। পানিতে ডুবে না এমন উঁচু খোলা জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। বন্যার কারণে রোপা আমনের বীজতলা করার মতো জায়গা না থাকলে ভাসমান বীজতলা বা দাপগ পদ্ধতিতে বীজতলা করে চারা উৎপাদন করা যায়।
বীজতলায় বীজ বপন করার আগে ভালো জাতের মানসম্পন্ন বীজ নির্বাচন করতে হবে। প্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী জাতসমূহ: যেমন- বিনাধান-৭, বিনাধান-১৬, বিনাধান-১৭, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬ এবং ব্রি ধান৭১ (খরা প্রবণ এলাকার জন্য); বিনাধান-১১, বিনাধান-১২, ব্রি ধান৫১, ব্রি ধান৫২ এবং ব্রি ধান৭৯ (জলমগ্নতা সহনশীল, বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য); বিনাধান-২৩, এবং ব্রি ধান৭৮ (জোয়ার-ভাটা প্রবণ লবণাক্ত এলাকার জন্য); এবং ব্রি ধান৭৫ ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮৭ এবং বিনাধান-১৬, বিনাধান-১৭ (পাহাড়ি এলাকার জন্য)। সাথে সাথে অনুকূল পরিবেশ উপযোগী অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি এবং লাভজনক শস্যবিন্যাসের জন্য উচ্চ ফলনশীল স্বল্প-জীবনকাল বিশিষ্ট জাত নির্বাচন অতি প্রয়োজন। স¦ল্পমেয়াদি জাত (জীবনকাল ১২০ দিনের কম) যেমন- বিনাধান-৭, বিনাধান-১৬, বিনাধান-১৭, বিনাধান-২২, বিনাধান-২৬, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭৫, বিভিন্ন হাইব্রিড জাত, ইত্যাদি চাষ করতে পারেন।
ভালো চারা পেতে প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ২ কেজি গোবর, ১০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করা যায়। আষাঢ় মাসে রোপা আমন ধানের চারা রোপণ শুরু করা যায়; মূল জমিতে শেষ চাষের সময় হেক্টরপ্রতি ৯০ কেজি টিএসপি, ৭০ কেজি এমওপি, ১১ কেজি দস্তা এবং ৬০ কেজি জিপসাম দেয়া প্রয়োজন; জমির এক কোণে মিনিপুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন যেন পরবর্তীতে সম্পূরক সেচ নিশ্চিত করা যায়।
ভুট্টা
পরিপক্ব হওয়ার পর বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার আগে মোচা সংগ্রহ করে ঘরের বারান্দায় সংগ্রহ করতে পারেন। এক্ষেত্রে মোচা থেকে দানা সংগ্রহ করতে প্রয়োজনে ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। রোদ হলে শুকিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মোচা পাকতে দেরি হলে মোচার আগা চাপ দিয়ে নিম্নমুখী করে দিতে হবে, এতে বৃষ্টিতে মোচা নষ্ট হবে না।
পাট
পাট গাছের বয়স চারমাস হলে ক্ষেতের গাছ কেটে নিতে হবে। পাট গাছ কাটার পর চিকন ও মোটা গাছ আলাদা করে আঁটি বেঁধে দুই/তিন দিন দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। পাতা ঝরে গেলে ৩/৪ দিন পাট গাছগুলোর গোড়া একফুট পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর পরিষ্কার পানিতে জাগ দিতে হবে।
পাট পচে গেলে পানিতে আঁটি ভাসিয়ে আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে পাটের আঁশের গুণাগুণ ভালো থাকবে। ছাড়ানো আঁশ পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে বাঁশের আড়ে শুকাতে হবে। যেসব জায়গায় জাগ দেয়ার পানির অভাব সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচাতে পারেন। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং পচন সময় কমে যায়। পাট পচনে পানির ঘাটতি সমাধানে মাইক্রোবিয়াল ইনোকুলাম প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।
পাটের বীজ উৎপাদনের জন্য ১০০ দিন বয়সের পাট গাছের এক থেকে দেড় ফুট ডগা কেটে নিয়ে দুটি গিঁটসহ ৩/৪ টুকরা করে ভেজা জমিতে দক্ষিণমুখী কাত করে রোপণ করতে হবে। রোপণ করা টুকরোগুলো থেকে ডালপালা বের হয়ে নতুন চারা হবে। পরবর্তীতে এসব চারায় প্রচুর ফল ধরবে এবং তা থেকে বীজ পাওয়া যাবে।
শাকসবজি
এ সময়ে উৎপাদিত শাকসবজির মধ্যে আছে ডাঁটা, গিমাকলমি, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঝিঙা, শসা, ঢেঁড়স, বেগুন। এসব সবজির গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রয়োজনে মাটি তুলে দিতে হবে। এ ছাড়া বন্যার পানি সহনশীল লতিরাজ কচুর আবাদ করতে পারেন; উপকূলীয় অঞ্চলে ঘেরের পাড়ে গিমাকলমি ও অন্যান্য ফসল আবাদ করতে পারেন; সবজি ক্ষেতে পানি জমতে দেয়া যাবে না। পানি জমে গেলে সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে; তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরার জন্য বেশি বৃদ্ধি সমৃদ্ধ লতাজাতীয় গাছের ১৫-২০ শতাংশের লতাপাতা কেটে দিতে হবে। কুমড়াজাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা  কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরবেলা হাত পরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে।
মুখীকচু জমিতে লাগানো শেষ হয়েছে। মুখীকচুর পুরো উৎপাদন মৌসুমে ৪-৬ বার আগাছা দমনের প্রয়োজন হয়। অঙ্কুরোদগম পূর্ব অনুমোদিত মাত্রায় আগাছানাশক বীজ বপনের পরপর স্প্রে করার দুই মাস পর হতে এক মাস অন্তর অন্তর চারবার নিড়ানি দ্বারা আগাছা দমন করা প্রয়োজন। বিশেষ করে সারের উপরিপ্রয়োগের আগে আগাছা দমন আবশ্যক।
মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে মাটির প্রকারভেদে ১০-২০ দিন পরপর সেচ দেয়ার প্রয়োজন। মুখীকচুর উচ্চ ফলনের জন্য প্রয়োজনীয় সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা যথাসময়ে গ্রহণ করতে হবে। রোপণের ৪০-৪৫ দিন পর এবং ৯০-১০০ দিন পর দুই সারির মাঝের মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে কচু গাছের গোড়ায় উঠিয়ে দিলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
আগাম জাতের শিম এবং লাউয়ের জন্য প্রায় ৩ ফুট দূরে দূরে ১ ফুট চওড়া ও ১ ফুট গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। মাদা তৈরির সময় গর্তপ্রতি ১০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ২ কেজি ছাই, ১০০ গ্রাম টিএসপি ভালোভাবে মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর প্রতি গাদায় ৩-৪টি ভালো সবল বীজ রোপণ করতে হবে। এ ছাড়াও আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদনে টানেল টেকনোলজি ব্যবহার করা যেতে পারে।
গাছপালা
এ সময়টা গাছের চারা রোপণের জন্য খুবই উপযুক্ত। বসতবাড়ির আশপাশে, খোলা জায়গায়, চাষাবাদের অনুপযোগী পতিত জমিতে, রাস্তাঘাটের পাশে, পুকুর পাড়ে, নদীর তীরে গাছের চারা বা কলম রোপণের উদ্যোগ নিতে হবে; এ সময় বনজ গাছের চারা ছাড়াও ফল (কাঁঠাল, আম ইত্যাদি) ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করতে পারেন; ফলের চারা রোপণের আগে গর্ত তৈরি করতে হবে; সাধারণ হিসাব অনুযায়ী এক ফুট চওড়া ও এক ফুট গভীর গর্ত করে গর্তের মাটির সাথে ১০০ গ্রাম করে টিএসপি ও এমওপি সার মিশিয়ে, দিন দশের পরে চারা বা কলম লাগাতে হবে; বৃক্ষ রোপণের ক্ষেত্রে উন্নত জাতের রোগমুক্ত সুস্থ-সবল চারা বা কলম রোপণ করতে হবে; চারা শুধু রোপণ করলেই হবে না। এগুলোকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। চারা রোপণের পর শক্ত খুঁটি দিয়ে চারা বেঁধে দিতে হবে। এরপর বেড়া বা খাঁচা দিয়ে চারা রক্ষা করা, গোড়ায় মাটি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার, সেচনিকাশ নিশ্চিত করতে হবে; নার্সারি মালিক যারা তাদের মাতৃগাছ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি খুব জরুরি। সার প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার, দুর্বল রোগাক্রান্ত ডালপালা কাটা বা ছেঁটে দেয়ার কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে হবে।
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, এ সময় বীজ ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় কৃষি উপকরণগুলো বন্যামুক্ত উঁচু বা নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। আপনাদের আগাম প্রস্তুতির জন্য আগামী মাসে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর বিষয়ে সংক্ষিপ্তভাবে জানিয়ে দেয়া হয়। বিস্তারিত জানার জন্য স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। অথবা কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নম্বরে জেনে নিতে পারেন।

লেখক : সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা, টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪; ই-মেইল : fardousi30@gmail.com

বিস্তারিত