পৃথিবী এখন অনেক এগিয়ে। ইন্টারনেট আর মোবাইলের মাধ্যমে পুরো পৃথিবী এখন হাতের মুঠোতে। মুহূর্তেই আমরা চলে যেতে পারি ধরণীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ইচ্ছে করলেই নিমিষেই সব কিছুকে মোবাইলের মাধ্যমে নিজের ভুবনে নিয়ে আসতে পারি অনায়াসে। কৃষি প্রধান বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের সাথে, সময়ের সাথে তালমিলিয়ে। কৃষি তাহলে পিছিয়ে থাকবে কেন? তারই ধারাবাহিকতায় কৃষি এগোচ্ছে নতুনের অনেক কিছু নিয়ে। এর মধ্যে আছে ওয়েবসাইট, ইমেইল, মোবাইল কল, এসএমএস, আইভিআর, চ্যাটিং, ফোন-ইন প্রোগ্রাম, এআইসিসি, ফিয়াক, সিআইসি, ইউআইএসসিসহ আরো কত মোবাইল অ্যাপস। নতুন করে এলো কৃষি কল সেন্টার। সরকারিভাবে এটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জায়গা করে নিলো কালের কণ্ঠস্বরে। কৃষি মন্ত্রণালয়াধীন কৃষি তথ্য সার্ভিস ও প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন, বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ঢাকার ফার্মগেটের খামারবাড়ির প্রথম বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয়তলায় কৃষি তথ্য সার্ভিসে চালু হলো কৃষি কল সেন্টার। জুন ০৪, ২০১৪ ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৪ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের দিন শুভ উদ্বোধন হলো কৃষিমন্ত্রীর দূর কথনের কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে আমাদের কৃষি কল সেন্টারের। নতুন আলোকিত পথের গর্বিত যাত্রা হলো শুরু। বাংলার মেহনতি কৃষক অবশেষে রাষ্ট্রীয়ভাবে বরাদ্দ পেলো বিনাপয়সায় তাদের কৃষি তথ্য সেবা প্রযুক্তি জেনে নেয়ার নির্দিষ্ট গর্বিত ডিজিট ১৬১২৩।
কৃষি খামার ব্যবস্থাপনার বাণিজ্যিকীকরণ, বৈচিত্র্যতা, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব, শস্যবহুমুখীকরণ ও নিবিড় কৃষি, কৃষি ব্যয় কমানো এগুলো বর্তমানের ইস্যু। কৃষি ও কৃষকের ক্রমবর্ধমান জ্ঞানচাহিদা ও কৃষিবিষয়ক দৈনন্দিন সমস্যা মেটানো স্থানীয়ভাবে বংশপরম্পরায় অর্জিত জ্ঞান দিয়ে কৃষিবিষয়ক সমস্যার সমাধান রীতিমতো দুরূহ হয়ে পড়েছে। কৃষিতে আধুনিক ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কৃষির সনাতনী জ্ঞান এখন আর যথেষ্ট নয়। চলমান সময়ে কৃষককে নিজের জ্ঞান-অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অনেকখানি নির্ভর করতে হয় উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক জ্ঞানের ওপর, যা কৃষককে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর সমাধান দিয়ে তার জমির ফসল, আঙ্গিনার শাকসবজি ফলমূল, পুকুরের মাছ ও গোয়ালঘরের গবাদিপশুকে রক্ষা করবে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, আইলা সিডর, নার্গিস, মহাসেন বা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাব্য বা সংঘটিত ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে। এক সময় কৃষক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্লক সুপারভাইজারদের কাছ থেকেই কৃষিবিষয়ক পরামর্শ নিতেন। কিন্তু এখন তা পাল্টিয়েছে সময়ের চাহিদার কারণে ভিন্নরূপে। সে সময়ের ব্লক সুপারভাইজররা এখন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, যাদের হাতে থাকে মোবাইল, কেউ কেউ ইন্টারনেটের মাধ্যমেও হালনাগাদ থাকেন কৃষি তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানে। এ ছাড়া নিজ এলাকার অভিজ্ঞ কৃষক, সার্ভিস প্রোভাইডার, সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা কৃষিক্লাব/স্কুল বা সম্প্রসারণ/উন্নয়ন কর্মী, কৃষি উপকরণ বিক্রেতা ও পরিষেবা প্রদানকারী, স্থানীয় জ্ঞান-তথ্য কেন্দ্র, উপজেলা পর্যায়ের তথ্য কেন্দ্র অথবা ইউআইএসসির উৎস থেকে সহায়তা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু কৃষি প্রযুক্তি ও পদ্ধতির পরিবর্তনশীলতার সাথে পাল্লা দিতে আমাদের কৃষকদেরও প্রয়োজন বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ এবং সমন্বয়ের। অন্য দিকে অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হওয়ার পরও, আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ পদ্ধতিকে আরো আধুনিক ও তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানসমৃদ্ধ করার জন্য কার্যকর বিশুদ্ধখাতে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।
বর্তমানে দেশের প্রায় ২ কোটি কৃষক ও উদ্যোক্তার জন্য কম খরচে, কম উন্নত তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে আইসিটি বিশেষ করে মোবাইল ফোন। কৃষি উৎপাদন, অভিযোজন, ব্যবস্থাপনা, বিপণন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এসব সহায়তার ক্ষেত্রে মোবাইলফোনভিত্তিক কল সেন্টারগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। ২০১৪-এর এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে মোবাইলফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এত কোটি কোটি গ্রাহকের মধ্য থেকে যদি কিছু গ্রাহককে আসল অর্থে কৃষির তথ্য প্রযুক্তিতে সংম্পৃক্ত করা যায় তাহলে কৃষি গর্বের সাথে অনেক এগিয়ে যাবে জ্যামিতিক বিস্তরণে।
প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের পরে কৃষকেরা সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সম্প্রসারণকর্মী ও পরিষেবা প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু অধিকাংশ খামারের উন্নত উপকরণ ব্যবহার ও বৈচিত্র্যময়তার কারণে এ যোগাযোগ সবসময় সবজায়গায় কাজ করে না। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস ঐতিহ্য, কৃষিবিষয়ক তথ্যভাণ্ডার এবং মাঠপর্যায়ে দক্ষ উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কর্মীবাহিনী। যদিও খামারির সংখ্যা ও তাদের যুগোপযোগী চাহিদা নিরূপণে এ সেবা যথেষ্ট নয়। আমাদের কৃষি তথ্যসেবা মূলত ঐতিহ্যগত যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। এ বিভাগের পরিষেবা আরো বিস্তৃত করতে, ব্যক্তি নির্ভরশীলতা কমিয়ে তথ্যের অবাধ প্রবাহ বাড়াতে ও দ্রুত ক্রমবর্ধমান কৃষিবিষয়ক আধুনিক জ্ঞান ও তথ্যচাহিদা মেটাতে আইসিটিসমৃদ্ধ জ্ঞান তথ্য ব্যবস্থায় বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে সময়ের চাহিদা আর প্রয়োজনে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি বাংলার কৃষি ও কৃষকের জন্য সাশ্রয়ী উপায় হিসেবে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে সে বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নোত দেশ হলেও মোবাইল গ্রাহক সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে একটি বিশেষ অবস্থানে রয়েছে। বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষের নাগালের মধ্যে থাকায় এর উপর ভিত্তি করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে তথ্য ও আর্থিক সেবামূলক কার্যক্রম চালু করেছে। যার সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা সাধারণ জনগণ ভোগ করতে শুরু করেছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক উদ্যোগ ও ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কল সেন্টার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সে প্রেক্ষিতে কৃষি কল সেন্টার কৃষি প্রধান বাংলাদেশে আরো বেশি কার্যকর এবং ফলপ্রসূ অবদান রাখবে নিশ্চিতভাবে। কৃষি কল সেন্টার কেবল বাংলাদেশেই নয় বরং পৃথিবীর অনেক দেশের অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক উদ্যোগে যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতে কিষাণ কল সেন্টার যার গ্রাহক সংখ্যা ৩ লাখের বেশি যারা বিনা পয়সায় কল সেবার সুযোগ পাচ্ছেন, শ্রীলংকা, নেপাল এবং কেনিয়াতেও এ জাতীয় উদ্যোগ সাফল্যজনকভাবে এগিয়ে চলছে কৃষি কল সেন্টারের কার্যক্রম। কৃষি কল সেন্টারটি একটি ডিজিটাল কৃষি সেবা কার্যক্রম। এ সেন্টারের বিশেষ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে আছে-
কৃষি তথ্য সার্ভিস ও প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশের মধ্যে জুন, ২০১১ কল সেন্টার বিষয়ে একটি প্রাথমিক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি মোতাবেক খামারবাড়িতে কল সেন্টারটি স্থাপন করা হয় এবং ২০১২ সনের জুন মাসে পরীক্ষামূলকভাবে এর কার্যক্রম শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে এ কল সেন্টার ২৫ হাজারের বেশি ফোন কল রিসিভ করেছে, যার মধ্যে থেকে ৩০ হাজার অনুসন্ধান (Enquiry) নিবন্ধিত হয়েছে। মোট ১৫ হাজার কলারকে কৃষি মৎস্য প্রাণিসম্পদসহ কৃষির বিভিন্ন বিষয়ের অনুসন্ধানের উত্তর তাৎক্ষণিকভাবে দেয়া হয়েছে এবং বাকি অনুসন্ধানগুলোর উত্তর বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করে পরে কলারদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। মোট কলারদের মধ্য থেকে ১০ হাজারের ফলোআপে জানা গেছে, তারা দেয়া তথ্য সন্তোষজনকভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে। কৃষি কল সেন্টারটি রাজস্ব আয়কারী ব্যবসায়-মডেল ও কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করলে, টেকসই হবে নিশ্চিত। কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হলো কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিভাগ, সংস্থা থেকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন সহযোগিতা নিয়ে বিশালসংখ্যক গ্রাহকদের কাছে এ সেবাকে আরো কার্যকরভাবে চাহিদামাফিক পৌঁছে দেয়া।
কার্যক্রম পরিচালনা এবং বর্তমান
কল সেন্টারটি স্থাপনে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথরিটি (বিআরটিএ) দেয়া গাইডলাইন অনুসরণ করা হচ্ছে। কল সেন্টারে ২টি standby সার্ভার, ফোনকল পরিচালনার জন্য ওঠজ এবং কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অ্যান্ড ক্ল্যায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমসহ (CMS) ১টি অত্যাধুনিক সফটওয়ার রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলেও অন্তত ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে বিদ্যুতের ব্যাকআপ রয়েছে। কলসার্ভারটি একসাথে ৩০টি কল রিসিভ করে সেবা দিতে পারে। বর্তমান কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বারের হেল্পলাইন এ একযোগে ১০টি ফোনের সাথে অপারেটরের মাধ্যমে বিনা পয়সায় গ্রাহকসেবা দেয়া হচ্ছে। ১২ জন এক্সটারনাল বিশেষজ্ঞসহ ১২ জন অপারেটর প্রতি দিন ১৩ ঘণ্টা করে, বছরে দুই লাখের বেশি গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। গ্রাহকগণ যেকোনো প্রোভাইডারের মোবাইল ফোন থেকে GSM/CDMA মাধ্যমে ১৬১২৩ নাম্বারে ফোন করতে পারেন এবং IVR এর নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের মোবাইল ফোন থেকে সরাসরি কৃষি তথ্য বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পেতে পারে।
জ্ঞান-তথ্যসেবা এবং কলসেন্টারের সেতুবন্ধন
কৃষি কল সেন্টারের ৫ জন অপারেটরের মধ্যে ৩ জন স্নাতক কৃষি, পশুচিকিৎসা এবং মৎস্যবিদ; বাকি ২ জন মাঠপর্যায়ের কৃষিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞ। এ ছাড়াও যুক্ত রয়েছেন ৬ জন এক্সটার্নাল বিশেষজ্ঞ, যাদের সাথে প্রয়োজনে কল সেন্টার গ্রাহকগণকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশের ৮টি কৃষি অর্থনৈতিক অঞ্চলের (AEZ) কৃষক এবং সম্প্রসারণ কর্মীদের মধ্যে পরিচালিত জরিপে পাওয়া ৪ হাজার ৫০০ কৃষিভিত্তিক সমস্যার সমাধান নিয়ে প্রাথমিকভাবে CMS শুরু হয়। সংগৃহীত সবগুলো সমস্যা এবং সেগুলোর সমাধান জাতীয়পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়েছে। ৩০টি জ্ঞান কেন্দ্রের (জ্ঞানের হাট) ৩০০ জন সম্প্রসারণ কর্মী কল সেন্টারটির পরীক্ষামূলক পর্যায়ে এর গ্রাহক ছিল। কল সেন্টার অপারেটররা তাদের নিজস্ব জ্ঞান CMS সহায়তা নিয়ে গ্রাহকদের অনুসন্ধানের উত্তর দেন। এ ছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী তারা গ্রাহককে বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন। কখনো কখনো নির্দিষ্ট গ্রাহককে হাতে-কলমে সেবার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সম্প্রসারণ কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে সে গ্রাহককে সরাসরি সেবা দেয়ার অনুরোধ করেন। প্রতিটি নতুন সমস্যা এবং তার সমাধানগুলোর গুণগতমান নিশ্চিত করে CMS-এ সংরক্ষণ করা হয়। সকল নতুন গ্রাহককেও ভবিষ্যতে ফলোআপ এবং যোগাযোগের জন্য নিবন্ধিত করা হয়। গ্রাহকগণের সাথে সব কথপোকথন রেকর্ড করে কল সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়।
কৃষি কলসেন্টারের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ সমূহ
জনবহুল এবং মোবাইলবান্ধব দেশ হিসেবে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনভিত্তিক সেবার অনন্য সম্ভাবনায় তৃণমূলে ইন্টারনেটের বর্তমান ধীরগতি ও দুষ্প্রাপ্যতা অচিরেই উন্নত হবে। তা ছাড়া স্বল্পমূল্যে বাজারে মাল্টিমিডিয়া ফোনের সহজলভ্যতা, কনটেন্ট প্রস্তুতকারী ও পুনর্বিন্যাসকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আইসিটির সহায়তায় উপযোগী তথ্য উপকরণ নির্মাণে উৎসাহী হবে। আর কল সেন্টারগুলোর সহায়তা কার্যক্রম অন্যান্য তথ্যসেবা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হতে পারে। প্রাইভেট টেলিকম প্রতিষ্ঠান, সফ্টওয়্যার প্রতিষ্ঠান, মোবাইল প্রস্তুতকারী ও পরিবেশকগণ এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবেন। কল সেন্টারের সামর্থ্যরে তুলনায় এর গ্রাহকসংখ্যা খুব বেড়ে গেলে সেবার মান কমে যেতে পারে। সরাদেশে সম্পৃক্ত ৩০টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং বিদ্যালয়ভিত্তিক নলেজ সেন্টার রয়েছে এবং ৩০০ জন সম্প্রসারণ কর্মী তৃণমূল পর্যায় কৃষকদের সেবায় নিয়োজিত আছেন। তাছাড়াও সরকারিভাবে কৃষি বিভাগের ১৩ হাজারেরও বেশি সম্প্রসারণ কর্মী সারাদেশে কৃষকদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। এ কৃষি কল সেন্টারটি সম্প্রসারণ কর্মী, নলেজ সেন্টার ও কৃষকদের মাঝে দ্রুত তথ্য যোগাযোগ বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
পরিচালনা এবং দায়িত্ব
কৃষি তথ্য সার্ভিস, কৃষি মন্ত্রণালয়; প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন, বাংলাদেশ এবং বিডিকম এ ৩টি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কৃষি কল সেন্টার কার্যক্রম পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে কৃষি তথ্য সার্ভিসের দায়িত্ব হলো-বরাদ্দকৃত রুমে কল সেন্টার স্থাপন, নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা, দাপ্তরিক কার্যক্রম গ্রহণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও অত্যাবশ্যকীয় সেবাগুলো ও কল সেন্টারের সরঞ্জামাদি রক্ষণাবেক্ষণ, নিরপত্তা বিধান, গণমাধ্যমে কল সেন্টারের জনপ্রিয় করে তুলতে প্রচার কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ, জাতীয় বিশেষজ্ঞ দল গঠন করে কৃষি কল সেন্টারের কনটেন্ট তৈরি ও সরবরাহ, পর্যালোচনা ও সময়োপযোগী করা, বিশেষজ্ঞ সদস্যদের সম্মানী প্রদান এবং কল সেন্টারের ব্যয় ব্যবস্থাপনা, কল সেন্টারের রাজস্ব আয় বাড়ানো, এক্সিকিউটিভদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা, পরিচালনার জন্য স্ট্র্যাটেজিক গাইডলাইন তৈরিতে সহায়তা প্রদান এবং কল সেন্টারটির যুগোপযোগী উন্নয়নে প্রশাসনিক ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান। কৃষি তথ্য সার্ভিসের পক্ষে সার্বিক সহযোগিতা এবং সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ মাসুম masum.maroof@gmail.com যিনি তথ্য প্রযুক্তি উপাত্ত ব্যবস্থাপনা কল সেন্টার পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশনের দায়িত্ব হলো- বরাদ্দকৃত কল সেন্টারের সংস্কার অভ্যন্তরীণ ডেকোরেশন, কল সেন্টার পরিচালনায় অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তিগত, ইলেক্ট্রনিক ও ইলেক্ট্রিক সরঞ্জামাদি ও আসবাবপত্র প্রদান, প্রাথমিকভাবে কল সেন্টার এক্সিকিউটিভদের বেতন প্রদান, বিভিন্ন ইভেন্ট পরিচালনার জন্য অর্থ সহায়তা, প্রচার কার্যক্রমের উপকরণ তৈরি ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য কর্মশালা, সভা, সেমিনার উদ্যোগে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান, গ্রাহকদের কৃষিবিষয়ক সমস্যা সমাধানবিষয়ক প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট তৈরি করা এবং কল সেন্টারের কার্যকারিতা মূল্যায়নে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা। প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশনের পক্ষে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে সার্বিক সহযোগিতা এবং সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন ড. মো. ফারুক-উল ইসলাম। যিনি সমন্বয় ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা উপাত্তসহ বিভিন্ন বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। বিডিকমের দায়িত্ব হলো- কল সেন্টার পরিচালনার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা, গ্রাহক নিবন্ধন, নিবন্ধন ফি সংগ্রহে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান, নিজস্ব আয় দিয়ে পরিচালিত হতে পারে এমন বিজনেস মডেল প্রদান, এক্সিকিউটিভদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ প্রদান।
বিশেষজ্ঞ ও পরিচালনা কমিটি
৩টি পরিচালনা কমিটির মধ্যে উপদেষ্টা কমিটি কল সেন্টারেরর অংশীদারীদের মধ্য থেকে মনোনীত অভিজ্ঞ ৭ জন ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠিত। কমিটির সদস্য নির্বাচনে বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা, সুপরিচিতি এবং জেন্ডার সমতা বিবেচ্য বিষয় হিসেবে কাজ করবে। উপদেষ্টা কমিটির কাজ হবে যুগোপযোগী ধ্যান ধারণা প্রদান করা, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে কল সেন্টার সংক্রান্ত আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির আলোকে কল সেন্টারের উন্নয়নসহ এর রাজস্ব বাড়ানো এবং সম্প্রসারণে সহায়ক পরামর্শ প্রদান করা। এ কমিটি সর্বোচ্চ ৩ মাস পরপর একবার মিলিত হবেন এবং এর সুপারিশগুলো লিখিত আকারে সাধারণ ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে দেবেন। ১১ জন সদস্য নিয়ে সাধারণ ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব সার্বিক ব্যবস্থাপনা যথা কল সেন্টারের স্থান, উন্নয়ন, কর্মী ব্যবস্থাপনা, কল সেন্টারের রাজস্ব বাড়ানো, গ্রাহক বাড়ানো, কার্যক্রম উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ। কমিটির সদস্য নির্বাচনে বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা, সুপরিচিতি এবং জেন্ডার সমতা বিবেচ্য বিষয় হিসেবে কাজ করবে। কমিটি প্রতি মাসে অন্তত ১ বার মিলিত হয়ে কল সেন্টারের যাবতীয় কার্যাবলী পর্যালোচনা, মূল্যায়ন ও করণীয় নির্ধারণ করবে। অর্থ ব্যবস্থাপনা কমিটির আকার হবে ৩ সদস্য বিশিষ্ট। কমিটির প্রধান হবেন পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি এবং কমিটির অন্য সদস্যরা উপদেষ্টা কমিটির পরামর্শক্রমে কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে মনোনীত হবেন। কমিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা, রাজস্ব আয়, কল সেন্টারের ব্যয় ও হিসাব ব্যবস্থানার দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটি প্রতি মাসে অন্তত ১ বার মিলিত হয়ে কল সেন্টারের আর্থিক কার্যাবলী পর্যালোচনা, মূল্যায়ন ও করণীয় নির্ধারণ করবেন।
কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, পুষ্টি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও দেশের প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক কার্যক্রম, পেশা ও অঞ্চলভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিষয়ক জাতীয় পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ এমন ব্যক্তিবর্গের মধ্য থেকে উপদেষ্টা কমিটি কর্তৃক একটি বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটির সদস্য সংখ্যা ১০ জন। তবে প্রয়োজনে এর পরিধি বাড়ানো যাবে। কল সেন্টারের কন্টেন্ট উন্নয়ন, কন্টেন্টগুলোর পর্যালোচনা ও উন্নয়ন, চাহিদাভিত্তিক উত্তর প্রদান, কল সেন্টারের জ্ঞান চাহিদা বাড়ানো এবং সমাধানে নিত্যনতুন কার্যক্রম গ্রহণে পরামর্শ প্রদান।
কলসেন্টারকে টিকিয়ে রাখা এবং গ্রাহক বাড়ানো
সেন্টারটির স্থায়িত্বশীলতা অর্জনে এর জনপ্রিয়তা, যুগোপযোগী সেবাপ্রদানে দক্ষতা এবং অংশীদারিত্ববৃদ্ধিতে কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কৃষি তথ্য সার্ভিস, প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন, বাংলাদেশ এবং বিডিকম যুগপযোগী পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আন্তরিক সচেষ্ট থাকবে। এ ক্ষেত্রে এ উদ্যোগের একটি প্রধান লক্ষ্যই হলো চাহিদাভিত্তিক এবং মূল্য পরিশোধের বিনিময়ে তথ্য সেবা পরিকাঠামো গড়ে তোলে এর স্থায়িত্বশীলতা অর্জন করা। যা একই সাথে তথ্য ও জ্ঞান গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি উভয়পক্ষের জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরি করবে। এ লক্ষ্যে বর্তমান অংশীদারদের পাশাপাশি আরো নতুন উদ্যোক্তা ও অংশীদারদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, নতুন নতুন উদ্ভাবনী কার্যক্রম গ্রহণ এবং সরকারি এ জাতীয় সেবাদানমূলক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো স্থায়ী কার্যক্রমের পরিধি, উন্নয়ন ও রাজস্ব আয় বাড়াতে সচেষ্ট থাকবে। এ তথ্য ও জ্ঞান পরিষেবাটি বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়ক তথ্য ও জ্ঞান প্রদানের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে করণীয় জরুরি পরামর্শ প্রদান করবে। বাস্তবায়নের প্রথমপর্যায়ের অন্যতম লক্ষ্য হবে সারাদেশে কল সেন্টারের নিবন্ধিত গ্রাহক তৈরি করা। এ লক্ষ্যে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রত্যেকে ২০ জন করে গ্রাহক নিবন্ধন করলে মোট ২ লাখ ৭০ হাজার কৃষককে এর উপকারভোগী হিসেবে নিবন্ধিত করা। কৃষি তথ্য সার্ভিসের আওতাধীন ২৪৫টি এআইসিসির সাথে সম্পৃক্ত প্রতি কেন্দ্রের ন্যূনতম ৩০ জন কৃষক সদস্যকে এর আওতায় নিবন্ধনে ৭ হাজার ৩৫০ জন উৎসাহিত হবে। প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশন পরিচালিত ৩০টি জ্ঞান কেন্দ্রের ২৪০ জন জ্ঞানকর্মীর প্রত্যেকে ৩০ জন করে ৭ হাজার ২০০ কৃষককে নিবন্ধিত হতে পরামর্শ প্রদান করবেন। এ হিসাব অনুযায়ী হিসেবে প্রায় ৩ লাখ কৃষককে কল সেন্টারের আওতায় নিবন্ধন করানোর প্রাথমিক লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। নিবন্ধিত কৃষকদের চাহিদা ও ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য সরবরাহে বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সৃজনশীল ও উৎসাহমূলক তথ্য পরিষেবা প্রদান করা হবে। কৃষি ও দুর্যোগ সংক্রান্ত জরুরি তথ্যাদি অগ্রীম প্রদান করা, মাসের কোনো নির্ধারিত সময়ে বিশেষজ্ঞদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা, বিশেষ দিবস পালন, মৌসুমওয়ারি বিভিন্ন পোকামাকড়ের ব্যাপারে সতর্কতা, কৃষির বিশেষ কোনো সতর্কবার্তা দেয়া এসব।
কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে সনাতন বা খোরাকি কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থায় স্থানান্তরের জন্য এ দেশের কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়ন তথা কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিগত কৃষি তথ্য সেবা প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুনিয়া এগিয়ে চলছে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে সমানভাবে তালমিলিয়ে, তানা হলে আমরা অনেকটুকু পিছিয়ে পড়ব। তাছাড়া গত কয়েক বছরে দেশে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকায় এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার জনসেবা বিষয়ক তথ্য প্রাপ্তি দ্রুত, কার্যকর, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হয়েছে। প্রযুক্তির অপার সম্ভাবনাময় এ ক্ষুদ্র যন্ত্রটির সাহায্যে দেশের কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় দ্রুততর ও কার্যকর কৃষি তথ্য সেবা পৌঁছে দেয়া এখন সময়ের দাবি।
উন্নয়নের মহানায়ক কৃষকদের জন্য আরো সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী কৃষি তথ্য প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) বাংলাদেশে প্রথম কৃষি বিষয়ে জন সেবামূলক কৃষি তথ্য সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে সরকারি পর্যায়ে কৃষি কল সেন্টারের জন্য একটি টোল ফ্রি (কল চার্জবিহীন) শর্ট কোড- ১৬১২৩ বরাদ্দ দেয়। এ নাম্বারে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করা যাবে। এ উদ্যোগের ফলে কৃষিক্ষেত্রে তথ্য পার্থক্য (কমিউনিকেশন গ্যাপ) কমে আসার সাথে সাথে কৃষি উন্নয়নে ইতিবাচক ও কাক্সিক্ষত পরিবর্তন হবে। তথ্য প্রাপ্তি নাগরিকদের একটি অন্যতম অধিকার। তথ্য বদলায় জীবন এ প্রত্যয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের নিরিখে এ কৃষি কল সেন্টারটি বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক তথ্য প্রাপ্তিতে অবাধ ও উন্মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে সচেষ্ট থাকবে।
এ লক্ষ্যে নাগরিকের জন্য বিশেষজ্ঞদের দ্বারা একটি অধিকার সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। কৃষি কল সেন্টার আমাদের দীর্ঘদিনের আশা প্রত্যাশার আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন মিনার। অনেক আগেই কৃষি কল সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হতে পারত। কিন্তু শুধু কৃষকদের কথা ভেবে তাদের পকেটের পয়সা খরচ করে যেন তথ্য সেবা কিনতে না হয় সেদিক বিবেচনা করে সফলতায় আসতে এতটা পথ পেরুতে হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন সবার সম্মিলিত আন্তরিকতা আর নিবেদিতপনার কারণে পুরো বাংলাদেশের আজ কৃষকের জন্য বিনা পয়সার নম্বর প্রতিষ্ঠিত হলো ১৬১২৩। মনে রাখার জন্য যদি বলি, আমাদের বিজয় দিবসের তারিখ ১৬ এবং কোন কাজ শুরু করা আগে বা প্রতিযোগিতার আগে আমরা স্টার্টিং ডিক্লারেশনে বলি ১, ২, ৩ গো। আমরাও তাই করলাম। আমাদের কৃষি পরামর্শ সেবা কেন্দ্রের নাম্বার স্থায়ী হলো ১৬১২৩। এটি আমাদের প্রাণের নাম্বার আমাদের অস্তিত্বের ধারণ লালনের নাম্বার। এ নাম্বারটির সাথে আমাদের কৃষির ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধ্যান ধারণা, মনন মেধা, উন্নয়ন আর সমৃদ্ধি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ১৬১২৩ হোক আমাদের আগামীর আলোকিত সুন্দর সফল ভবিষ্যতের তারকাখচিত স্বর্ণমাখা সুরভিত নাম্বার। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, পাথরঘাটা থেকে জাফলং এ ভুখণ্ডের আপামর মানুষ বৃহত্তর কৃষির যে কোনো প্রয়োজনে শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পযর্ন্ত বিনা পয়সার কৃষি তথ্য সেবা নেবেন চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত পরিমিত। কৃষি কল সেন্টারের সফলতা হোক দীর্ঘজীবী চিরস্থায়ী।