Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষি কথা

ফলের সাতকাহন

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে সারা বছর ফল পাওয়া গেলেও মধু মাসে বাহারি ফলের সমাহার হয়। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ও খাদ্য চাহিদা পূরণে ফলের ভূমিকা অপরিসীম। দেশ নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় প্রায় সব ধরনের ফল চাষ এদেশে সম্ভব। আদিম যুগের মানুষ ফল খেয়েই জীবন ধারণ করত। খনার বচনে আছে- ‘বারোমাসে বারো ফল, না খেলে যায় রসাতল’। ফল শুধু খাদ্যই নয়- জীবনযাত্রার মনোন্নয়ন, ভেষজ, অর্থনীতি, পরিবেশ, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিসহ সবক্ষেত্রে ফলের অবদান অনস্বীকার্য। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ বছর বয়স্ক একটি ফল গাছ তার সারা জীবনে আমাদের যে উপকার করে তার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩৫.৪০ লক্ষ টাকা। ফল চাষ এদেশে খুব অবহেলিত। দেশে পতিত জমি, অনাবাদি জমি, ফসলের জমিতে, রাস্তা, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির আশেপাশে প্রচুর ফল গাছ রোপণের সুযোগ আছে। ইসলামের দৃষ্টিতে ফল গাছ লাগানো সদকায়ে জারিয়া। ফল গাছ চাষে খরচ কম লাভ বেশি।  


পুষ্টি : ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের প্রধান উৎসই হচ্ছে ফল। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রায় ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার কিন্তু আমরা খেতে পারি মাত্র ৩৫-৪০ গ্রাম। ভিটামিন ‘এ’ বেশি আছে- পাকাআম, পাকা কাঁঠাল, পাকা পেঁপে, আনারস, আমড়া, পেয়ারা, লাল বাতাবি লেবু, বাঙি, জাম, জামরুল, গোলাপ জাম ও খুদিজামে। ভিটামিন বি১ আছে- পাকা আম, পাকা কাঁঠাল, পাকা কলা, আনারস, ডাবের পানি, বাঙি, আমড়া, কামরাঙ্গা, কদবেল, পানিফল ইত্যাদি। ভিটামিন বি২ বেশি আছে- পাকা কাঁঠাল, পেয়ারা, বাঙি, আমলকী, জামরুল, লিচু, বরই, আতা, লটকন, ডেউয়া, অরবরই ইত্যাদি। ভিটামিন সি বেশি আছে- আমলকী, অরবরই, পেয়ারা, জাম্বুরা, ডেউয়া, লেবু, কামরাঙ্গা, আমড়া, পেঁপে, খুদিজাম, গোলাপজাম, আম, কুল, কমলা, জাম, জলপাই, আতা, লিচু ইত্যাদি। ক্যালসিয়াম বেশি আছে- লেবু, কদবেল, আমড়া, নারিকেল, ডেউয়া, জগডুমুর, গাব, অরবরই, বেল, জাম্বুরা, পেঁপে, আমলকী, তেতুঁল, কাঁঠাল, কমলা, জাম, ডালিম, জলপাই, খেজুর ইত্যাদি। আয়রন বেশি আছে- তরমুজ, আম, পেয়ারা, লেবু, জাম, আতা, কামরাঙ্গা, আমড়া, নারিকেল, জলপাই, আমলকী, জগডুমুর, অরবরই, খুদিজাম, ইত্যাদি। ফসফরাস বেশি আছে- আতা, আম, কলা, কাঁঠাল, খেজুর, জলপাই, জামরুল, ডালিম, তালের শাঁস, নারিকেল, পেয়ারা, জাম্বুরা, বেল, লিচু ইত্যাদি। খাদ্যশক্তি বেশি আছে- নারিকেল, খেজুর, আতা, গাব, কলা, কুল, আম, লিচু, লেবু, বেল, ডালিম, আমড়া, জলপাই, তেঁতুল, তাল, পানিফল, লটকন, চালতা, বিলাতিগাব, ডেউয়া ইত্যাদি। শর্করা বেশি আছে- খেজুর, কলা, কুল, আম, তাল, গোলাপজাম ইত্যাদি। স্লোগান- পাকা ফলে তুষ্টমন, যোগায় পুষ্টি বাড়ায় ধন।


ভেষজ : ফল শুধু খাদ্যই নয় ইহা রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার করে। কাঁচা আম- জ্বর, সর্দি, ত্বক ও দাঁতের জন্য উপকারী। কাঁঠাল- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। চোখের জন্য ও খাদ্য হজমে উপকারী। লিচু- রুচি বাড়ায়, ঠাণ্ডা, সর্দি, জ্বর, কাশি, পেটব্যথা ও টিউমারে উপকারী। আনারস- গলা ব্যথা, ব্রংকাইটিস, মূত্রবর্ধক, কিডনির জন্য উপকারী। ইহা কৃমিনাশক, বলকারক, পাণ্ডুরোধ, সর্দি, জ্বর সারায়। গর্ভবতী মহিলাদের এবং দুধের সাথে আনারস খাওয়া ঠিক না। তরমুজ- জ্বর, সর্দি, ঠাণ্ডা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কিডনি, অন্দ্রীয় ক্ষত, রক্তস্বল্পতায় উপকারী। জাম- আমাশয়, বমি, অরুচিতে উপকারী। পেয়ারা- চর্মরোগ, দাঁত ও হাড়ের রোগে উপকারী। খাদ্য হজম, ক্ষত শুকাতে, চর্বি কমাতে ও অরুচিতে সহায়ক। বেল- পেট পরিষ্কার,  কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয়, হজমশক্তি, বলবর্ধকে উপকারী। জাম্বুরা- কোষ্ঠকাঠিন্য, মুখের রুচি, জ্বর সর্দিতে উপকারী। পেঁপে- খাদ্য হজম, রক্তজমাট বাঁধা, ক্ষত সারাতে সহায়ক, পেট ফাঁপা দূর করে। লেবু- ঠাণ্ডা, সর্দি, জ্বর ও ক্লান্তি দূর করে। ডালিম- কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয়, পেটের অসুখ ও রক্ত ক্ষরণ বন্ধে সহায়ক। করমচা- রুচি বাড়ায়, ত্বক ও রক্তনালি শক্ত করে ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। ইহা কৃমিনাশক। জামরুল- ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী। তেঁতুল- হৃদরোগ, পেটফাঁপা, বলবর্ধকে উপকারী। মাথাব্যথা ও বিষাক্ততা নিরাময় হয়। লটকন- রুচি বাড়ে ও বমি দূর হয়। আমলকী- চর্মরোগ দূর হয়, ক্ষত সারায়, রুচি বাড়ায় ও ত্বক মসৃণ করে ও যকৃত, পেটের পীড়া, হাঁপানি, কাশি ডায়াবেটিস, অজীর্ণ ও জ্বর নিরাময় করে। কুল- বাতের ব্যথা, রক্ত পরিষ্কার, হজম, পেট ফাঁপা, অরুচিতে উপকারী। আমড়া- পিত্ত ও কফ নিবারণ করে, আমনাশক ও কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করে। কলা- আমাশয়, ডায়রিয়া, আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। নারিকেল- দুর্বলতা দূর করে, ডাবের পানি স্যালাইনের কাজ করে। কামরাঙা- রক্তক্ষরণ বন্ধ, বমি বন্ধ, কৃমি, কাশি ও এজমা নিরাময় করে। সফেদা- জ্বর নাশক, ত্বক ও রক্তনালি দৃঢ় করে, রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। ডেউয়া- পিত্তবিকারে ও যকৃতের পীড়ায় হিতকারী। খুদিজাম- আমাশয়, ডায়াবেটিস অরুচি ও বমিতে উপকারী। আতা- বলকারক, বাত ও পিত্তনাশক, বমননাশক, রক্তবৃদ্ধিকারক ও মাংসবৃদ্ধিকারক। চালতা- পেটফাঁপা, কফ, বাত ও পিত্তনাশক। সাতকরা- বমিনাশক, রুচিবর্ধক ও হজম সহায়ক। ডুমুর- টিউমার, ডায়াবেটিস, কিডনি ও লিভারের পাথর নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কদবেল- যকৃত ও হৃদপিণ্ড বলবর্ধক। পিত্তরোগ ও পেটের অসুখ ভালো করে। তাল- শ্লেস্মানাশক, মূত্র বৃদ্ধি করে, প্রদাহ ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। জলপাই- রুচি বাড়ায় ও ত্বক মসৃণ রাখে। খেজুর- বলবর্ধক, কৃমিনাশক, হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী। কমলা- সর্দিজ্বর, ক্ষত ও চর্মরোগে উপকারী। সে­াগান- ফল খান দেশি, বল পাবেন বেশি। রোগমুক্ত জীবন চান, ফল ঔষধির গাছ লাগান।


জাত ও মৌসুম : দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩০ রকম ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭০ রকমের ফল চাষ হয়। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালের ফল- আমের ১২৭ জাত পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গোপালভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, খিরসাপাত, বারিআম, বাউআম, ভাসতারা, লক্ষণভোগ, আম্রপালি, মিসরিভোগ, আশ্বীনা, চৌনা, কোহিতুর, মোহনভোগ, কিষাণভোগ, পুষা, মাধুরী, রুবি, মঞ্জিরা, সাবরী, রাতুল ইত্যাদি। কাঁঠালের জাত হচ্ছে- বারি কাঁঠাল, খাজা, আদরাসা ও গালা। লিচুর জাত- বেদানা, বোম্বাই, চায়না, মঙ্গলবাড়ি, বারিলিচু কদমি ইত্যাদি। পেয়ারার জাত- স্বরূপকাঠি, কাঞ্চননগর, কাজীপেয়ারা, বারিপেয়ারা, বাউপেয়ারা ইত্যাদি। আমড়ার জাত-বারিআমড়া। আনারসের জাত- হানিকুইন, জায়েন্ট, জলডুবি ও ঘোড়াশাল। শরৎকালের ফল- জলপাই, তাল, জগডুমুর, অরবরই, আমলকী, করমচা, চালতা, ডেউয়া ইত্যাদি। হেমন্তের ফল- পানিফল, সাতকরা, কদবেল। বসন্তের ফল- কুল, তেঁতুল, আতা, শরিফা ইত্যাদি। সারা বছরের ফল- নারিকেল, লেবু, কলা, ইত্যাদি। পৌষ থেকে চৈত্র মাসে মোট ফলের ২৪ শতাংশ, বৈশাখ থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত ৫৪ শতাংশ ও ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত ২২ শতাংশ ফল পাওয়া যায়। দেশে চাষযোগ্য বিদেশি ফল- আঙুর, সফেদা, কাজুবাদাম, স্ট্রেবেরি, রাম্বুটান, ড্রাগন, এভোকেডো, কমলা, প্যাসনফল, মালটা, বিলিম্বি, সাতকরা, শানতোল, পিচ, কাউ, তৈকর, জাবটিকা ইত্যাদি।


বংশবিস্তার : প্রকৃত বীজ থেকে অধিকাংশ ফলের চারা উৎপাদন করা হয়। কাটিং- আঙুর, লেবু, ডুমুর ও বেল। গুটিকলমÑ লিচু, পেয়ারা, লেবু, ডালিম, গোলাপজাম, জামরুল। জোড়কলম- আম, কাঁঠাল, কামরাঙ্গা, জলপাই, আতা, কমলা, মাল্টা, জাম ইত্যাদি। চোখ কলম- কুল, কমলালেবু, মাল্টা ইত্যাদি।


উৎপাদন ও রফতানি : দেশে প্রধান ফল চাষ হয় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার হেক্টরে। মোট উৎপাদন হয় প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন। মোট আবাদি জমির শতকরা প্রায় ১.৫ ভাগ জমিতে প্রধান ফল চাষ হয়। এর মধ্যে আম ২১.৪৪%, কলা ৪৬.১৭%, কাঁঠাল ৭.৬%, আনারস ১৪%, তরমুজ ৩.৬%, পেয়ারা ৪.৮%, লিচু ১.৪% ও পেঁপেঁ ১% জমিতে চাষ হয়। প্রতি বছর প্রায় ৫-৬ হাজার মে.টন ফল রফতানি করে ১৪-১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। ফসলভিত্তিক জাতীয় আয়ের শতকরা ১০ ভাগ ফল থেকে আসে। স্লোগান- স্বাস্থ্য পুষ্টি অর্থ চান, ফলের চারা বেশি লাগান।


ফলগাছ থেকে কী পাই : ফল পাওয়া যায়। পুষ্টির অভাব পূরণ হয়। রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার হয়। ছায়া দিয়ে পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখে। পরিবেশ উন্নত করে। জ্বালানি ও কাঠ পাওয়া যায়। প্রাকৃতির দুর্যোগ প্রতিরোধ করে। ভূমিক্ষয় রোধ করে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হয়। কুটির শিল্প ও বড় শিল্পের কাঁচামাল পাওয়া যায়। পশুপাখির খাদ্যের উৎস। বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যায়। আয়-উপার্জন বাড়ে। বেকারত্ব দূর হয়। পরিবেশ দূষণ রোধ করে। ফল বাগানে আন্তঃফসল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ডাল ইত্যাদি চাষ করা যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে হাদিসে আছে- যে ব্যক্তির রোপণকৃত ফলগাছে যত ফল ধরে তত সে সওয়াব পায়। ফল গাছের ফল, ছায়া, কাঠ, পাতা ইত্যাদি দ্বারা মানুষসহ যত মাখলুক যত বছর উপকৃত হবে তত বছর ফল গাছ রোপণকারী ব্যক্তি জীবিত ও মৃত অবস্থায় সওয়াব পায়।


ফলন বৃদ্ধির উপায় : উন্নতজাতের সুস্থসবল কলমের চারা রোপণ করা। চারা রোপণের সময় ও ফল ধারণের দুই মাস আগে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ। খরার সময় এবং ফল ধারণের দুই মাস আগ থেকে নিয়মিত সেচ দেয়া। ফল সংগ্রহের পর ডালপালা ছাঁটাই করা। রোগ ও পোকা দমন করা। গাছের নিচে সব সময় পরিষ্কার রাখা। নিয়মিত আগাছা দমন করা। নিকাশ করা। চারার গোড়ায় মাটি দেয়া। গাছে সূর্যের আলো পড়ার ব্যবস্থা করা।


সুযোগ ও সম্ভাবনা : দেশের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, আবহাওয়া, মাটি, জলবায়ু পরিবেশ বিভিন্ন ধরনের ফল চাষের উপযোগী। দেশের প্রায় ২ কোটি বসতবাড়ি, প্রায় ১৬ লাখ একর পতিত জমি, ২৩ হাজার কিলোমিটার নদীর পাড়, ২০ লাখ পুকুর পাড়, ১০ হাজার কিলোমিটার সড়ক, প্রায় ৩ হাজার কিলো মিটার রেল সড়কের পাশ দিয়ে ফল গাছ লাগানো যায়। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ফল গাছ লাগানো যায়। স্লোগান- বসত বাড়ির আশে পাশে, ভরে দে ভাই ফল গাছে।


স্লোগান-রোপণ করলে ফলের চারা, আসবে সুখের জীবন ধারা। ফল খেলে জল খায়, যম বলে আয় আয়। দেশি ফলে বেশি পুষ্টি, অর্থ খাদ্যে পাই তুষ্টি। বাড়ির ছাদে ফলের চাষ, পাবেন ফল মিটবে আশ। খাদ্য পুষ্টি স্বাস্থ্য চান, ফল ফলাদি বেশি খান। রোপণ করলে ফলের চারা, আসবে সুখের জীবন ধারা। অর্থ পুষ্টি স্বাস্থ্য চান, দেশি ফল বেশি খান। ফলের চারা রোপণ করুন, পুষ্টির অভাব দূর করুন। ফল বৃক্ষের অশেষ দান, অর্থবিত্তে বাড়ান মান।

 

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ*

*সহকারী অধ্যাপক, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূয়াপুর, টাঙ্গাইল; মোবাইল- ০১৭১১-৯৫৪১৪৩

 

বিস্তারিত
কুইক কম্পোস্ট : স্বল্প সময়ে সহজে প্রস্তুতকৃত জৈবসার

জৈব পদার্থ হলো মাটির প্রাণ বা হৃদপিণ্ড। মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য জৈব পদার্থের প্রয়োজন।  সাধারণভাবে জৈব পদার্থ হলো গাছপালা ও জীবজন্তুর মৃতদেহ মাটিতে পচে যে পদার্থের সৃষ্টি হয় তাই। জৈব পদার্থ হতে সংগৃহীত, প্রক্রিয়াজাতকৃত বা রূপান্তরিত সারই হলো জৈব সার। আমাদের দেশে প্রচলিত জৈব সারের মধ্যে কম্পোস্ট সার খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে চার ধরনের কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা হয়। যেমন সাধারণ কম্পোস্ট, কুইক কম্পোস্ট, ভার্মি কম্পোস্ট এবং ট্রাইকো কম্পোস্ট।


কুইক কম্পোস্ট হলো এমন একটি জৈব সার যা স্বল্প সময়ে তৈরি করা যায় এবং এর মধ্যে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানও বেশি থাকে।


কুইক কম্পোস্ট সারের উপকারিতা :  সাধারণ কম্পোস্ট সার তৈরি করতে ২ থেকে ৩ মাস লেগে যায়। কৃষক পর্যায়ে সবসময় সাধারণ কম্পোস্ট সার প্রস্তুত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই কুইক কস্পোস্ট সার খুব কম সময়ে এবং সহজ উপায়ে তৈরি করা যায় অর্থাৎ মাত্র ১৪-১৫ দিন সময়েই কুইক কম্পোস্ট সার তৈরি করা যায়। ইহা মাটিতে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান সহজলভ্য করে। মাটিতে থাকা অনুজীবের ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি করে। গাছের শিকড় ও অঙ্গজ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সবজি ফসলে মালচিংয়ের কাজ করে। সর্বোপরি মাটির উর্বরতা সুরক্ষা করে এবং ফসল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।


কুইক কম্পোস্ট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ ও অনুপাত : পচা গোবর, কাঠের গুড়া এবং খৈল। উপকরণগুলোর মিশ্রণের অনুপাত হবে পচা গোবব : কাঠের গুড়া :  খৈল=  ৪: ২: ১ ।


কুইক কম্পোস্ট প্রস্তুত প্রণালি : ১ ভাগ খৈল ভালোভাবে গুড়া করে ২ ভাগ কাঠের গুড়া বা চালের কুড়া এবং ৪ ভাগ পচা গোবর বা হাঁস মুরগির বিষ্ঠার সাথে ভালো করে মিশাতে হবে। পরিমিত পরিমাণ পানি এমনভাবে মিশাতে হবে যেন সব উপাদান খুব ভালোভাবে মিশে। উপাদান ভালোভাবে মিশলে এক ধরনের খামির মতো তৈরি হয়। ওই মিশ্রণের খামি দিয়ে এমন করে বল তৈরি করা যায়। বলটি কোমর পরিমাণ বা ১ মিটার ওপর থেকে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে যদি বলটি একদম ভেঙে না যায় আবার একে বারে লেপ্টে না যায় তাহলে বুঝতে হবে পানির পরিমাণ ঠিক আছে। পরবর্তীতে মিশ্রণটি স্তূপ করে রেখে দিতে হবে যেন ভেতরে জলীয় বাষ্প আটকিয়ে পচনক্রিয়া সহজতর হয়। স্তূপটির পরিমাণ ৩০০ থেকে ৪০০ কেজির মধ্যে হওয়া উত্তম।


শীতকালে স্তূপের ওপর চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। স্তূপ করার ২৪ ঘণ্টা  পর হতে মিশ্রণের ভেতরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্তূপের তাপমাত্রা ৬০০-৭০০ সে. এ পৌঁছায়। ওই পরিমাণ তাপমাত্রা অনুভূত হলে স্তূপ ভেঙে মিশ্রণ ওলট-পালট করে ১ ঘণ্টা সময়ের জন্য মিশ্রণকে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে এবং পুনরায় স্তূপ করে রাখতে হবে। স্তূপে বেশি পরিমাণ তাপ অনুভূত হলে খৈলের সমপরিমাণ পচা গোবর বা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা পুনরায় মিশিয়ে দিতে হবে। স্তূপের এ অবস্থায় অ্যামোনিয়ার মতো গন্ধ বের হবে। স্তূপটি প্রতি ২-৩ দিন পর পর ওলট-পালট করে পুনরায় স্তূপ করে রেখে দিতে হবে। এভাবে ওলট-পালট করতে থাকলে ১৪-১৬ দিনের মধ্যেই ওই মিশ্র জৈবসার জমিতে প্রয়োগ করার উপযোগী হয়। সার উপযোগী হওয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো এ সময় কোনো রকম গরম বা গন্ধ থাকবে না এবং কালো বাদামি বর্ণ ধারণ করবে, শুকনা এবং ঝুরঝুরে হবে।


সাবধানতা : মিশ্রণটি উঁচু ও ছায়াযুক্ত স্থানে করতে হবে। স্তূপের নিচে পলিথিন শিট দিতে হবে যেন মিশ্রণে থাকা প্রয়োজনীয় পুষ্টি গুণাগুণ মাটিতে চলে না যায়।


পুষ্টি উপাদান : কুইক কম্পোস্টের প্রতি ১০০ কেজিতে ২.৫৬% নাইট্রোজেন, ০.৯৮% ফসফরাস, ০.৭৫% পটাশিয়াম পাওয়া যায়। তাছাড়া পরিমিত মাত্রায় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য গৌন পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।


প্রয়োগমাত্রা : জমির উর্বরতা ও ফসলের ওপর জমিতে কুইক কম্পোস্ট প্রয়োগের মাত্রা নির্ভর করে। সাধারণভাবে সবজি ফসলের জন্য প্রতি শতকে ৬ থেকে ১০ কেজি পরিমাণ প্রয়োগ করা যায়। এক্ষেত্রে জমি শেষ চাষের সময় শতাংশপ্রতি ৬ কেজি এবং  পরবর্তীতে ২ বারে ৪ কেজি হারে নালা করে দিতে হবে। ধানের জমিতেও কুইক কম্পোস্ট দেয়া যেতে পারে। ধানের কুশি স্তরে শতাংশ প্রতি ৪ কেজি হারে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।


সংরক্ষণ : কুইক কম্পোস্ট ছায়ায় এমনভাবে শুকাতে হবে যেন হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দিলে তাতে কোনো রস না দেখা যায়। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য চটের/পাটের বস্তায় বা মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করা যায়।
ফসল উৎপাদনের প্রধান মাধ্যম মাটি। জৈব পদার্থ মাটির প্রাণ। কুইক কম্পোস্ট ব্যবহার করে মাটির জৈব উর্বরতা রক্ষা করুন। কারণ জীবন ও সভ্যতার বিকাশে মাটির ভূমিকা অপরিসীম।

 

কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ*

*অতিরিক্ত কৃষি অফিসার, বারহাট্টা, নেত্রকোনা

 

বিস্তারিত
প্রশ্নোত্তর

সুভাষ রায়, গ্রাম : ডালিয়া, উপজেলা : ডিমলা, জেলা : নীলফামারী
প্রশ্ন : পেয়ারার গায়ে ছোট ছোট বাদামি দাগ পড়ে। এছাড়া পরিপক্ব ফল ফেটে যায়। এ অবস্থায় কী করণীয়?  
উত্তর :  পেয়ারার অ্যানথ্রাকনোজ রোগ হলে এ সমস্যা হয়ে থাকে। এ ধরনের রোগ প্রতিরোধে গাছের নিচে ঝড়ে পড়া পাতা, ফল সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলা দরকার। আক্রমণ বেশি দেখা দিলে পেয়ারার কুঁড়ি আসার আগে কার্বেনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে ১৫ দিন পর পর ৩ থেকে ৪ বার স্প্রে করলে এ রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব।
 মো. সাগর আলী, গ্রাম : পূর্ব শ্যামপুর, উপজেলা : শিবগঞ্জ, জেলা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রশ্ন : বরবটির পাতা ও গাছে সাদা পাউডারের মতো দেখা যায়। এছাড়া পাতা হলুদ ও কালো হয়ে মারা যাচ্ছে। এ সমস্যার  প্রতিকার কি?
উত্তর : ওইডিয়াম প্রজাতির এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। বরবটির এ সমস্যা দূরীকরণে প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে রোগাক্রান্ত গাছে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যাবে। আর এ রোগের আক্রমণ রোধে আগাম বীজ বপন, রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার এবং সুষম সার ব্যবহার করতে হয়।
মো. এনাম উল্লাহ গ্রাম : লাল মোহাম্মদ শিকদারপাড়া, উপজেলা : মহেশখালী, জেলা : কক্সবাজার
প্রশ্ন : নারকেল গাছের কা- ফেটে আঠা বের হচ্ছে। কি করণীয়?
উত্তর : এ সমস্যাটিকে নারকেল গাছের কা-ের ব্লিডিং বলে। রোগের আক্রমণের শুরুতে কা-ে ছোট ছোট ফাটল দেখা যায়। ফাটলগুলো থেকে লালচে বাদামি রঙের রস ঝরে। আস্তে আস্তে গাছ নষ্ট হয়। এ সমস্যা প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত স্থান ছুরি বা দা দিয়ে চেঁছে পরিষ্কার করে বর্দোপেস্ট লাগাতে হয় এবং এক লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম তুঁত ও ১০০ গ্রাম চুন মিশিয়ে বর্দোপেস্ট তৈরি করতে হয়। বর্দোপেস্ট নারকেল গাছের আক্রান্ত স্থানে বেশ ক’বার লাগালে এ সমস্যাটি  থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আব্দুল আহাদ, গ্রাম : খাটুরিয়া, উপজেলা : গোবিন্দগঞ্জ, জেলা: গাইবান্ধা
প্রশ্ন:  পাটের কা- কালো হয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত স্থানে হাত লাগলে হাতে কালো দাগ লাগে। কী করব?
উত্তর: পাটের এ সমস্যাটির নাম পাটের কালোপট্টি রোগ। এ রোগ হলে পাটের আক্রান্ত স্থানে হাত দ্বারা ঘসলে হাতে কালো দাগ লেগে যায়। এ রোগে অল্প পরিমাণ পাট গাছ আক্রান্ত হলে সে পাট গাছগুলো অপসারণ করা। আর যদি আক্রমণ বেশি হয়ে যায় তবে মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করা। এছাড়া জমিতে পানি থাকলে তা নিকাশ করা। এসব বিষয় মেনে চললে আপনি উপকার পাবেন।  
মো. সাগর আলী, গ্রাম : পূর্ব শ্যামপুর, উপজেলা : শিবগঞ্জ, জেলা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রশ্ন : গোলাপ ফুল গাছের পাতায় সবুজ হলুদের মিশ্রণ দেখা যাচ্ছে। এছাড়া  গোলাপ গাছের পাতাগুলো  কোঁকড়ানোও রয়েছে।  এমনকি ফুলও ছোট আকারের হয়। কী করণীয়?
উত্তর : গোলাপ গাছে ইয়েলো মোজাইক ভাইরাস আক্রমণ করলে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এজন্য ভাইরাস রোগমুক্ত নার্সারি হতে গোলাপের কলম সংগ্রহ করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে পুড়ে ফেলতে হবে। বাহক পোকা দমন করার জন্য ইমিডাক্লোরপিড গ্রুপের কীটনাশক ০.৫ মিলি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। তাহলেই এ সমস্যা থেকে আপনি রেহাই পাবেন।
ঋদ্ধিনন্দন সানা, গ্রাম : বনগ্রাম, উপজেলা : কাউনিয়া, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : পুঁইশাকের পাতায় গোল গোল দাগ হয়। পুরো পাতা নষ্ট হয়ে যায়। ভেতরটা সাদাটে ও দাগের কিনারাটা কালচে হয়। কী করণীয়?
উত্তর : পুঁইশাকে এ সমস্যাটি সারকোস্পোরা নামক ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে। এ রোগটিকে পুঁইশাকের পাতার দাগ রোগ বলে। এ সমস্যা দেখা দিলে  প্রতি লিটার পানিতে কার্বেনডাজিম গ্রুপের ১ গ্রাম ছত্রাকনাশক ভালোভাবে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে সমস্যার সমাধান হবে। তবে অল্প গাছে এ রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত পাতাগুলো তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলা যেতে পারে। এছাড়া সুষম সার ও পরিমিত সেচ প্রদান করলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
মো. হাবিবুর রহমান, গ্রাম : শৈলেন, উপজেলা : বিরামপুর, জেলা : দিনাজপুর
প্রশ্ন : আম ফেটে যায়। প্রতি বছরই এমন হচ্ছে। কী করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব?
উত্তর : আম ফেটে যাওয়ার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কারণটি হলো শারীরবৃত্তীয় কারণ। বিশেষ করে আম গাছে পানি সেচ প্রয়োগে সমস্যা হলে এ সমস্যা হয়ে থাকে। এছাড়া গরম ও ঠা-া আবহাওয়ার কারণেও এটি হতে পারে। এ কারণে সময়মতো সেচ ও পরিচর্যার মাধ্যমে এ সমস্যার মোকাবিলা করা যায়।
মো. আনোয়ারুল ইসলাম, গ্রাম : বরকতপুর, উপজেলা : ভুয়াপুর, জেলা: টাঙ্গাইল
প্রশ্ন : পুকুরে চা বীজের খৈল প্রয়োগ করতে চাই। কীভাবে করব?
উত্তর : চা বীজের খৈল প্রয়োগ করে পুকুর থেকে রাক্ষুসে ও অচাষকৃত প্রজাতির মাছ দূর করা যায়। এই খৈল দিয়ে মারা মাছ খাওয়া যায়। এ জন্য প্রতি শতকে প্রতি ৩ ফুট গভীরতার জন্য ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম চা বীজের খৈল প্রয়োজন হয়। চা বীজের খৈল পানিতে ভিজিয়ে সমস্ত পুকুরের পানিতে সমভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর মাছ দ্রুত ধরে ফেলতে হবে।
 মো. মাসুম হোসেন, গ্রাম : ভিয়াইল, উপজেলা : চিরির বন্দর, জেলা : দিনাজপুর
প্রশ্ন : পুকুরে জলজ পোকামাকড় দমন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক বা ডিজেল/কেরাসিন প্রয়োগ করে নার্সারি পুকুরের জলজ পোকামাকড় ভালোভাবে দমন করা যায়। এসব হলো- ১. ডিপট্যারেক্স- ৬ থেকে ১২ গ্রাম প্রতি শতক পুকুরে প্রয়োগ করা; ২. সুমিথিয়ন/ নোভান- ২ থেকে ৩ গ্রাম প্রতি শতক পুকুরে প্রয়োগ করা। এসব কীটনাশক ব্যবহারে নিয়ম হলো-প্রয়োজনীয় মাত্রার কীটনাশক একটি পাত্রের মধ্যে ১০ লিটার পরিমাণ পানিতে গুলে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিঠিয়ে দিতে হবে। ডিপট্যারেক্স প্রয়োগের পর জলজ পোকামাকড় মারা যাওয়া শুরু করলে সমস্ত পোকামাকড় চটজাল দ্বারা তুলে ফেলতে হবে। দুপুর রোদে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। কম তাপমাত্রা, মেঘ কিংবা বৃষ্টির সময় কীঠনাশক ব্যবহার না করা।  এছাড়া কীটনাশক ব্যবহারে যেসব সতর্কতা মেনে চলতে হয় তা হলো- কীটনাশক ব্যহারে সময় ব্যবহারকারীকে নাক, মুখ, শরীর, কাপড় ঢেকে নিয়ে চশমা পরে নিতে হবে; বাতাসের অনুকূলে স্প্রে করা; সমস্ত মরা পোকামাকড় তুলে ফেলতে হবে। এছাড়া ঘন নাইলনের জাল (ঘন পলিস্টার নেট) বার বার টেনেও পোকামাকড় সহনশীল মাত্রায় কমিয়ে আনা যায়। আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে সেটি হলো- জলজ পোকামাকড় দমনের সময় উল্লিখিত যে কোনো একটি পদ্ধতি রেণু ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা আগে অনুসরণ করতে হবে।   
মো. রানা, গ্রাম : দানিশনগর রাজবাড়ী, উপজেলা : পীরগঞ্জ, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : আমার গরুর ১৫ দিন হলো বাচ্চা হয়েছে। বাছুর দুধ পাচ্ছে না। এ অবস্থায় আমি কী করব? পরামর্শ চাই।
উত্তর : গাভীর দুধ বৃদ্ধির জন্য গাভীকে দানাদার খাবার যেমন- গমের ভুষি, চালের কুঁড়া, খেসারি, খৈল এবং খড় খাওয়াতে হবে। এসব খাবারের পাশাপাশি মিল্ক বুস্ট পউডার ও এ মিল্ক ট্যাবলেট খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।  
 মোছা. জাহান আরা, গ্রাম : উজগ্রাম, উপজেলা : গাবতলী, জেলা : বগুড়া
 প্রশ্ন : আমার কবুতরের ঘাড় বাঁকা হয়ে থাকে। খাবার খেতে পারে না। এর সমাধান কী?
উত্তর : এটি ভিটামিনের অভাবজনিত একটি রোগ। এই রোগ হলে কবুতরকে বিয়োটিভ দিনে ২ বেলা করে খাওয়াতে হবে। এছাড়া একটি বোতলে ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম ছোলা নিয়ে পানি দিয়ে রাখতে হবে। প্রতিদিন ওই ছোলা বড় কবুতরের ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০টা এবং ছোট কবুতরের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০টা করে খাওয়াতে হবে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি উপকার পাবেন।
কৃষির যে কোনো প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে  কোনো জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ এ নাম্বারে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে। তাছাড়া কৃষিকথার গ্রাহক হতে বার্ষিক ডাক মাশুলসহ ৫০ টাকা মানি অর্ডারের মাধ্যমে পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫ এ ঠিকানায় পাঠিয়ে ১ বছরের জন্য গ্রাহক হতে পারেন। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকে কৃষিকথা পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।

 

কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন*

*উপ-প্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫; taufiquedae25@gmail.com

 

বিস্তারিত
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ, আয় রোজগার বারো মাস

বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের এবং বীজ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত ভালো। আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ করে ফলন ও মোট উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। আর এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানিও করা সম্ভব। আমাদের দেশে প্রায় সব মসলা ফসলের চাহিদা উৎপাদনের চেয়ে কম। তাই উন্নত পদ্ধতিতে উন্নত জাত ব্যবহার করে চাষ করলে ভালো বাজার মূল্য পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হতে তিনটি জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে পেঁয়াজ চাষে অনেক সাফল্য নিয়ে এসেছে। জাতগুলো হচ্ছে বারি পেঁয়াজ-২, বারি পেঁয়াজ-৩ এবং বারি পেঁয়াজ-৫।


মাটি : পেঁয়াজের চাষ করতে সব রকম মাটি ব্যবহার হলেও সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত বেলে দোঁ-আশ বা পলিযুক্ত মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য খুব ভালো। প্রচুর দিনের আলো, সহনশীল তাপমাত্রা ও মাটিতে প্রয়োজনীয় রস থাকলে পেঁয়াজের ফলন খুব ভালো হয়। রবি পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ১৫-২৫০ সে. তাপমাত্রা পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য উপযোগী। ছোট অবস্থায় যখন শেকড় ও পাতা বাড়তে থাকে তখন ১৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ৯-১০ ঘণ্টা দিনের আলো থাকলে পেঁয়াজের বাল্ব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তীতে ১০-১২ ঘণ্টা দিনের আলো ও ২১ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা এবং গড় আর্দ্রতা ৭০ শতাংশ থাকলে পেঁয়াজের কন্দ ভালোভাবে বাড়ে, বীজ গঠিত হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। মাটির পিএইচ ৫.৮ থেকে ৬.৫ হলে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়।
 

বীজ শোধন : অন্যান্য ফসলের মতো প্রোভ্যাক্স/ভিটাভ্যাক্স/


ব্যাভিস্টিন এসব বীজের সাথে মিশিয়ে শোধন করা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি বীজের জন্য ২ গ্রাম উপরোক্ত ওষুধ প্রয়োজন হয়। তবে উপরোক্ত ওষুধ না থাকলে কার্বেনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক দ্বারাও বীজ শোধন করা যায়।
বীজ হার ও বপন/রোপণ পদ্ধতি : হেক্টরে ৪-৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ প্রায় ৬০০-৭০০ গ্রাম বীজ প্রতি বিঘার জন্য প্রয়োজন হয়। পেঁয়াজ তিন পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। সরাসরি ক্ষেতে বীজ বুনে, শল্ক কন্দ রোপণ করে এবং চারা তৈরি করে তা রোপণের মাধ্যমে। খরিফ মৌসুমে উৎপাদনের জন্য চারা তৈরি করে মাঠে রোপণ করাই উত্তম।


বীজ বপন সময় : বাংলাদেশে রবি ও খরিপ উভয় মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ করা সম্ভব। আর বারি পেঁয়াজ-২ এবং বারি পেঁয়াজ-৩ আগাম এবং নাবি চাষ করা যায়। আগাম চাষের জন্য মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বীজ বুনতে হয় এবং এপ্রিল-মে মাসে ৪০-৪৫ দিনের চারা রোপণ করতে হয়। নাবি চাষ করতে হলে মধ্য জুন পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়। নাবি চাষের জন্য জুলাই থেকে আগস্ট মাসে বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়। আর ৪০-৪৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।

সার

মোট পরিমাণ

শেষ চাষের সময় প্রয়োগ

১ম কিস্তি (২০ দিন পর)

১ম কিস্তি (২০ দিন পর)

গোবর/কম্পোস্ট

 ৫ টন

সব

-

-

ইউরিয়া

১৫০-২০০ কেজি

-

৭৫-১০০ কেজি

৭৫-১০০ কেজি

টিএসপি

১৭৫-২০০ কেজি

সব

-

-

এমওপি

১৭৫ কেজি

১০০ কেজি

৩৭.৫ কেজি

৩৭.৫ কেজি


জমি তৈরি ও চারা রোপণ : রোপণের ৩-৪ সপ্তাহ পূর্বে হালকা গভীর অর্থাৎ ১৫-২০ সেন্টিমিটার করে ৪-৫টি চাষ  ও মই দিতে হবে। পেঁয়াজের শিকড় মাটিতে ৫-৭ সেন্টিমিটারের মধ্যে বেশি থাকে। উৎপন্ন চারা জমিতে রোপণ করলে কন্দ বড় হয় এবং ফলন বেশি হয়। পেঁয়াজের জন্য তৈরি জমিতে মাঝে মাঝে নালা রেখে ছোট ছোট বেডে ভাগ করা হয়। বেডগুলো ১ মিটার চওড়া এবং ৬ ইঞ্চি উঁচু করে তৈরি করতে হবে। বেডে ৩৫-৪০ দিন বয়সের সুস্থ চারা, ১০-১৫ সেন্টিমিটার (সারি-সারি) দূরত্বে ও ৮-১০ সেন্টিমিটার (চারা-চারা) দূরে এবং ৩-৪ সেন্টিমিটার গভীর গর্তে ১টি করে রোপণ করতে হবে। কন্দ গঠন শুরু হওয়া চারা রোপণ করা যাবে না। চারা রোপণের পর সেচ দিতে হবে।


সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ (কেজি/হেক্টর) : মাটিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে চাষ করলে পেঁয়াজ বেশ বড় ও ভারী হয় এবং অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। মাটির অবস্থা ভেদে সারের মাত্রা নির্ভর করে। শেষ চাষের সময় সবটুকু গোবর বা কম্পোস্ট, টিএসপি ও ১০০ কেজি এমওপি সার জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। বাকি এমওপি এবং ইউরিয়া সমান ভাগে ভাগ করে যথাক্রমে চারা রোপণের ২০ এবং ৪০ দিন পর দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।


ফসলের আন্তঃপরিচর্যা : পেঁয়াজের চারা রোপণের পর একটি প্লাবন সেচ অবশ্যই দিতে হবে। মাটিতে চটা বাঁধলে কন্দের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। মাটির জো আসার সাথে সাথে চটা ভেঙে দিতে হয় ও আগাছা পরিষ্কার করতে হয়।
নিড়ানির সময় ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে গাছের গোড়া ঢেকে দিতে হবে। আর প্রয়োজনবোধে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

 


রোগ বালাই এবং পোকা মাকড় দমন : পেঁয়াজে পারপেল ব্লচ, গোড়া পচা রোগ হতে পারে। এসব দমনের জন্য রিডোমিল গোল্ড, ডায়থেন এম-৪৫, রোভরাল ৫০ ডব্লিউপি জাতীয় ওষুধ ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। পোকা মাকড়ের মধ্যে থ্রিপস এবং জাব পোকা মারাত্মক। এসব দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।


ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : পেঁয়াজের গাছ পরিপক্ব হলে এর গলার দিকের টিস্যু নরম হয়ে যায়। বারি পেঁয়াজ-২, ৩ ও ৫ এর চারা থেকে কন্দের পরিপক্বতা হওয়া পর্যন্ত আগাম চাষের ক্ষেত্রে মাত্র ৭০-৮০ দিন এবং নাবি চাষের ক্ষেত্রে ৯৫-১১০ দিন দরকার হয়। ফসল বাছাই ও গ্রেডিং করার পর বাঁশের মাচা, ঘরের সিলিং, প্লাস্টিক বা বাঁশের র‌্যাক অথবা ঘরের পাকা মেঝেতে শুষ্ক ও বায়ু চলাচল যুক্ত স্থানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হবে। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে বিধায় ১-২ মাসের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না।


ফলন : ভালোভাবে সেচ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে চাষ করলে জাত ভেদে হেক্টরপ্রতি ১৩-২০ টন ফলন পাওয়া যায়। সরাসরি বীজ বপন করে চাষ করার চেয়ে পেঁয়াজের চারা রোপণ করলে ২০-২৫ শতাংশ ফলন বেশি হয়। য়
 

কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি*

*আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী

বিস্তারিত
খাদ্য নিরাপত্তায় ফল ও সবজির গুরুত্ব

আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা মলয়জ শীতলা এক অপরূপ অনিন্দ্য সুন্দর বাংলাদেশ। বিশ্বকবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের-রূপসী বাংলা,  রূপের যে নাইকো শেষ - বাংলাদেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রক্ষ্মপুত্র ও বুড়িগঙ্গা বিধৌত বাংলার রূপ ও সৌন্দর্য সবই মনোমুগ্ধকর। বাংলাদেশ সবুজের দেশ। ষড়ঋতুতে বাংলাদেশ  বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়। ষড়ঋতুতে প্রায় শত রকমারি ফলের সমারোহে সমৃদ্ধ এই বাংলাদেশ। কবি তাই যর্থাথই বলেছেন,  এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।


খাদ্য ও পুষ্টি : আমাদের খাদ্য গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হলো সুস্থ, সবল ও কার্যক্ষম হয়ে বেঁচে থাকা। যে কোনো খাবার খেয়ে পেট ভরানো যায় কিন্তু  তাতে দেহের চাহিদা মিটিয়ে সুস্থ থাকা যায় না। কাজেই প্রকৃত খাদ্য ও পুষ্টি সম্বন্ধে আমাদের প্রত্যেকেরই ধারণা থাকা দরকার। পুষ্টি জ্ঞানের অভাবে সুষম খাদ্য গ্রহণের প্রতি আমরা মোটেই সচেতন নই। তাতে যারা পেট ভরে দুই বেলা খেতে পায় না তারাই যে শুধু পুষ্টিহীনতায়  ভুগছে তা নয়, সে সঙ্গে ধনীরা ও অপুষ্টির শিকার থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত নন। এ অবস্থায় পুষ্টি বিষয়ক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও প্রচারণার প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি করে দেখা দিয়েছে।  


দেহের ক্ষয় পূরণ, পুষ্টি সাধন এবং দেহকে  সুস্থ ও নিরোগ রাখার জন্য নানা ধরনের ফল-সবজি অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য। এগুলো ছাড়া আমাদের সুষম খাদ্যের বিষয় চিন্তা করা যায় না। খাদ্য বিজ্ঞানীরা একজন প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য প্রতিদিন ৪০০ গ্রাম ফল-সবজি খাবার পরামর্শ দেন। এর মধ্যে শাকপাতা ১১০ গ্রাম, ফুল-ফল-ডাঁটা জাতীয় সবজি ৮৫ গ্রাম, মূল জাতীয় ৮৫ গ্রাম ও ফল ১১০ গ্রাম ধরা হয়েছে। ফল সবজি পুষ্টিতে সমৃদ্ধ হলেও সংরক্ষণ, খাবার পরিবেশন ও ত্রুটিপূর্ণ রান্নার কারণে এসব খাবারের  প্রকৃত গুণাগুণ থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে থাকি। তাজা অবস্থায় ফল সবজি খেলে তাতে খাদ্য মান বেশি পাওয়া যায়। প্রায় সব রকম ফলে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। শাকসবজিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভিটামিন-সি থাকে তবে রান্না করার  সময় তাপে প্রায় ৮০% ভিটামিন ‘সি’ নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই সালাদ হিসেবে শাকসবজি খেলে ভিটমিন-সিসহ আরো কিছু উপাদানের (ভিটামিন ও মিনারেলস্) পুরো ফায়দা পাওয়া যায়। তবে যাদের সবজি কাঁচা খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে তাদের হালকা সিদ্ধ করে খাওয়াই উত্তম।


আপেল, নাশপাতি, পেয়ারা, শসা ইত্যাদি ধরনের ফলের ছিলকা বা ওপরের খোসা আমরা অনেকেই ফেলে দেই। তাতে অনেক খাদ্যমান অপচয় হয়। ফল সবজি উভয় ক্ষেত্রে সম্ভব হলে খোসা না ফেলাই ভালো। বেশি পাকা ফলে খাদ্যমান কমে যায়। যেমন পাকা পেঁপে থেকে আধাপাকা পেঁপে বেশি পুষ্টিমান সম্পন্ন। তাছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। ফল সবজি আগেই ভালোভাবে ধুয়ে কাটা উচিত। আগে কেটে পরে ধোয়া হলে পানির সাথে অনেক খাদ্য উপাদান/ভিটামিন মিশে বের হয়ে যায়। অনেকে করলার তিতা স্বাদ কমানোর জন্য সিদ্ধ করে পানি ফেলে দেন। কোনো মতেই এটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সবজি কাটার আগে হাত, বাসন ও বঁটি (কাটার যন্ত্র) ভালভাবে ধুয়ে নেয়া প্রয়োজন। সবজি কুচি কুচি করে কাটলে পুষ্টিমানের অপচয় হয়, তাই তরকারির টকুরোগুলো বড় রাখা প্রয়োজন। অনেকের ধারণা বেশি তেল মসলা দিলেই রান্না ভালো হয়। অথচ কম তেলে-মসলা ও কম সিদ্ধ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। পাতিলের মুখ খোলা রেখে রান্না করা ঠিক নয়, পরিমিত তেল-মসলা দিয়ে একেবারে রান্না চড়িয়ে ভালোভাবে ঢেকে রান্না করতে পারলে ভালো। অবশ্য চর্বিজাতীয় খাদ্য ঢেকে রান্না করা ঠিক নয়। রান্নার পর পরই গরম অবস্থায় খাওয়া উত্তম। পরে খেলে অবশ্যই খাদ্য গরম করে খাওয়া উচিত। চাল ডালসহ নানা রকম শাকসবজি দিয়ে খিঁচুড়ি পাক করে খাওয়া স্বাস্থ্যগত দিক থেকে অতি উত্তম। এতে পুষ্টিমান রক্ষা, সময় উভয়ই বাঁচে অথচ খাবার হিসেবেও চমৎকার।


ফল আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ, খাদ্য চাহিদা পূরণ, পুষ্টি সরবরাহ, মেধার বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বহুমাত্রিক অবদানে  ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ফল দেহে আনে বল, মনে আনে প্রশান্তি; ভিটামিন ও মিনারেলসের অন্যতম উৎস। প্রতিদিন একজন লোকের ১৫০-২০০ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। আমাদের দেশে বর্তমানে মাথাপিছু ফলের উৎপাদন প্রায় ৭০-৭৫ গ্রাম যা চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল, সেখানে ভারতে উৎপাদন ১১১ গ্রাম, ফিলিপাইনে উৎপাদন হয় ১২৩ গ্রাম, থাইল্যান্ডে উৎপাদন হয় ২৮৭ গ্রাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের প্রচলিত ফলের সাথে সাথে হারিয়ে যাওয়া অপ্রচলিত ফল যেমন -আঁতা, শরিফা, সফেদা, ডেউয়া, গাব, কাউফল, ক্ষুদিজাম, লটকন  ইত্যাদি ফলের আবাদ বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।


আমাদের রয়েছে সমৃদ্ধ ফল ভাণ্ডার। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৭০ প্রকারের ফল জন্মে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, বিগত ২০১৫-১৬ সালে বাংলাদেশের প্রধান ফলগুলো যেমন- আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, কলা, পেঁপে, আপেল কুল, আনারস, নারিকেলসহ সব ফলের চাষের আওতায় জমির পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমি এবং এতে মোট ফলের উৎপাদন প্রায় ১১০ লাখ ৩০ হাজার মে. টন। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে বছরে প্রায় ৩৩ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায় (ড. রহিম, আমাদের সময়- মে ২০১৭)। প্রতিজনের দৈনিক ১৫০ গ্রাম হিসেবে বার্ষিক ফলের চাহিদা প্রায় ৭৮ লাখ মে. টন। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে ফল নষ্ট হওয়াতে প্রতি বছর প্রায় ২০-৩০ লাখ টন ফল আমদানি করতে হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি জনের দৈনিক ১৫০ গ্রাম হিসেবে বর্তমানে আমাদের বছরে ৪৮-৫০ কেজি ফল খাওয়া উচিত, কিন্তু খাচ্ছি মাত্র ২৮-৩০ কেজি।


বাংলাদেশে বর্তমানে যেসব ফল উৎপাদন হয় তার শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ উৎপন্ন হয় বছরের ৪-৫ মাসে (এপ্রিল-জুলাই) বাকি শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ বছরের ৭- ৮ মাসে (আগস্ট-ফেব্রুয়ারি)। আমাদের দেশে ফলের দোকানে বিভিন্ন জাতের বিদেশি ফলের সমাহার সারা বছর দেখা যায়। তবে এসব বিদেশি ফলের ভিড়ে আমাদের চিরচেনা ক্ষুদে জাম, গোলাপজাম, ডেউয়া, গাব, লটকন, আতা, কদবেল প্রায় হারিয়ে যেতেই বসেছে। অথচ রং, রূপ-বৈচিত্র্যে, পুষ্টি ও রসনায় এসব দেশীয় ফল অনেক সমৃদ্ধ। এজন্য এসব দেশীয় ফলের চাষ বৃদ্ধির জন্য আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বর্তমানে ফল চাষ সম্প্রসারণের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সিলেটের কমলা এখন পাহাড়ের তিন জেলায় চাষ হচ্ছে। গ্রীষ্মকালের আনারস এখন প্রায় সারা বছর পাওয়া যাচ্ছে। থাই পেয়ারা, আপেল কুলের উৎপাদনও যথেষ্ঠ পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও সুস্থভাবে বাঁচার তাগিদের জন্য দানাজাতীয় শস্যের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ঘটিয়ে পুষ্টিকর ফল প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই সংযোজন করতে হবে।


সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য একজন কর্মক্ষম মহিলা ও পুরুষের দৈনিক যথাক্রমে ২৪০০ ও ২৮০০  ক্যালোরি খাদ্যের প্রয়োজন হয়। এই খাদ্য পূরণের জন্য পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, একজন মানুষ প্রতিদিন ২৫০-৩০০ গ্রাম চাল, আমিষ ১৫০-২০০ গ্রাম (মাছ/মাংস), ডিম-১টি, দুধ-২৫০ গ্রাম, চর্বি/তৈল ৩৫-৪০ গ্রাম, সবজি ২৫০ গ্রাম, ফল ১৫০-২০০ গ্রাম, আঁশ জাতীয় খাবার (মটর, ডাল, শিম, ত্বকসহ ফলমূল, বাদাম ইত্যাদি) ১০০ গ্রাম এবং পরিমাণ মতো পানি (কমপক্ষে ২.৫ লিটার/১০-১২ গ্লাস) খাওয়া উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, মানব দেহের সুষ্ঠু গঠন ও রোগ প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন, খনিজ পর্দাথ, লবণ ও পানিসহ প্রায় ৪০ রকমের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান জরুরি।


খাদ্য নিরাপত্তার (Food Security) জন্য প্রথমেই চালের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। ভাত কম খাওয়ার একটি পদ্ধতি আছে। চীন, জাপান, কোরিয়ান লোকেরা প্রথমে হরেক রকম সবজি দিয়ে খাওয়া শুরু করে। তারপর দানাদার খাদ্য রুটি অথবা ভাত খায় অতঃপর ফল বা ফলের রস দিয়ে শেষ করে। আমরা অন্তত খাওয়াটা এক গ্লাস পানি দিয়ে শুরু করেতে পারি। এতে অবশ্যই ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমে যাবে। এটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ভালো। প্রয়োজন শুধু একটু অভ্যাসের পরিবর্তন। সুতরাং সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ও খাদ্য নিরাপত্তায় পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের উৎপাদন বৃদ্ধি করা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অবশ্যই সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে সচেতন হতে হবে। এতে আমরা শারীরিকভাবে ভালো থাকব, পুষ্টিহীনতায় ভুগব না এবং ডাক্তারের নিকট তেমন একটা যেতে হবে না। যেমন তেমন একটা যেতে হয় না চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অন্যান্য উন্নত দেশের লোকদের।


ভেজাল য্ক্তু খাবারের প্রভাব : অপরিকল্পিত বালাইনাশক ব্যবহারে ফলে পোকামাকড়, রোগ-বালাইয়ের প্রাকৃতিক শত্রু বন্ধু পোকা ধ্বংস হচ্ছে। শত্রু পোকার বালাইনাশক সহনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফসলে যথেচ্ছা কীটনাশক ব্যবহার, ফলে ও মাছে বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য  (ফর্মালিন, কার্বাইড) মেশানোর ফলস্বরূপ মানবদেহে সৃষ্টি হচ্ছেÑ ব্লাড ক্যান্সার, ব্রেন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার ইত্যাদি। খাদ্যে ভেজালের কারণে গ্যাসট্রিক, আলসার, হৃদরোগ, অন্ধত্ব, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস,  ¯œায়ু রোগসহ প্রভৃতি জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী আজ অসহায় হয়ে পড়েছে। বাতাসে সিসা, পানিতে আর্সেনিক, চালে-ক্যাডমিয়াম, মাছে ফরমালিন, ফলে কার্বাইড, ফলের রসে বিভিন্ন ক্ষতিকারক গার্মেন্টস রং, মুরগির মাংসে- ক্রোমিয়াম সর্বদিকে বিষ আর বিষ আমরা যাব কোথায়? এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, খাদ্য ভেজালের কারণে শুধু দক্ষিণ এশিয়ায়  বছরে ৭৯ লাখ মানুষ মারা যায়, সে কারণেই ভেজালমুক্ত খাবার আমাদের প্রয়োজন (DHEN, June 21-2014)


ফল বৃক্ষ রোপণ : তাপমাত্রা ও উষ্ণতা রোধে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ রোপণের বিকল্প নেই। গাছ আমাদের অতি মূল্যবান অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে যা আমরা নিঃশ্বাসে ত্যাগ করি। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫% গাছপালা-বন থাকা দরকার, সেখানে বর্তমানে আমাদের দেশে রয়েছে মাত্র ১০Ñ১২%। এ সমস্যা উত্তরণের জন্য সরকার বৃক্ষরোপণের ওপর অত্যাধিক জোর দিচ্ছেন। প্রত্যেককে অন্তত তিনটি গাছ লাগানোর পরার্মশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার মধ্যে একটি ফলজ, একটি বনজ এবং একটি ঔষধি। কিন্তু আমাদের কিছু অপরিমাণদর্শী সিদ্ধান্তে কতক আগ্রাসী প্রজাতির গাছ দেশকে মরুময়তার দিকে নিয়ে যাচেছ। সারা দেশে রাস্তার দুই পাশে  কড়ই গাছ লাগানো, বিশেষ করে সিরাজগঞ্জে ইউক্যালিপটাস গাছ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলে, জমিতে বাগান আকারে চাষ/সৃজন করা হচ্ছে। যে গাছের পাতা সহজে পচেনা, পাখি বাসা বাঁধে না, মৌমাছি মধু আহরণ করে না এবং আমাদের ভূ-নিম্নস্থ পানি ব্যাপক শোষণ করে উড়িয়ে দিয়ে দ্রুত মরুময়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগতভাবে নিন্মমুখী হচ্ছে ফলে পানিতে আর্সেনিকসহ  অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি সহজেই অনুমেয়। অথচ আমরা এর পরিবর্তে দ্রুতবর্ধনশীল বেলজিয়াম, একাশিয়া, ইপিল-ইপিল, মেহগনি ইত্যাদি কাঠের গাছের সাথে ফল গাছ (আম, জাম, কলা, লিচু, পেয়ারা, কাঁঠাল, তাল, খেজুর ইত্যাদি) লাগিয়ে একদিকে পরিবেশের উন্নতি সাধন ও অন্যদিকে ফলের চাহিদা পূরণ করে পুষ্টি সমস্যা সমাধান করতে পারি। আর এটা সম্ভব হলে ‘ফল বৃক্ষে ভরবে দেশ, বদলে যাবে বাংলাদেশ’।

 

ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার*

*উপপরিচালক, জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি, গাজীপুর, সেল- +৮৮-০১৮১৫৫৯৭৩০৪; e-mail- sain1960@yahoo.com

 

বিস্তারিত
আষাঢ় মাসের কৃষি (জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫ কৃষিকথা)

নববর্ষার শীতল স্পর্শে ধরণীকে শান্ত, শীতল ও শুদ্ধ করতে বর্ষা ঋতু আসে আমাদের মাঝে। খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর, ডোবা ভরে ওঠে নতুন পানির জোয়ারে। গাছপালা ধুয়ে মুছে সবুজ প্রকৃতি মন ভালো করে দেয় প্রতিটি বাঙালির। সাথে আমাদের কৃষি কাজে নিয়ে আসে ব্যাপক ব্যস্ততা। প্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন আসুন আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নেই আষাঢ় মাসে কৃষির করণীয় আবশ্যকীয় কাজগুলো।
 

আউশ ধান
আউশ ধানের ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য যতœ নিতে হবে; সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগ ও পোকামাকড় দমন করতে হবে; বন্যার আশঙ্কা হলে আগাম রোপণ করা আউশ ধান শতকরা ৮০ ভাগ পাকলেই কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে শুকিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

 

আমন ধান
আমন ধানের বীজতলা তৈরির সময় এখন। পানিতে ডুবে না এমন উঁচু খোলা জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। বন্যার কারণে রোপা আমনের বীজতলা করার মতো জায়গা না থাকলে ভাসমান বীজতলা বা দাপগ পদ্ধতিতে বীজতলা করে চারা উৎপাদন করতে হবে;


বীজতলায় বীজ বপন করার আগে ভালো জাতের সুস্থ সবল বীজ নির্বাচন করতে হবে। রোপা আমনের উন্নত জাত যেমন বিআর১০, বিআর২৫, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৩১, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১। এছাড়া লবণাক্ত জমিতে ব্রি ধান৪৪ চাষ করতে পারেন;
খরাপ্রবণ এলাকাতে নাবি রোপার পরিবর্তে যথাসম্ভব আগাম রোপা আমনের (ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান ৩৯ এসব) চাষ করতে হবে;
ভালো চারা পেতে প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ২ কেজি গোবর, ১০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে; আষাঢ় মাসে রোপা আমন ধানের চারা রোপণ শুরু করা যায়; মূল জমিতে শেষ চাষের সময় হেক্টরপ্রতি ৯০ কেজি টিএসপি, ৭০ কেজি এমওপি, ১১ কেজি দস্তা এবং ৬০ কেজি জিপসাম দিতে হবে;
জমির এক কোণে মিনি পুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন, যেন পরবর্তীতে সম্পূরক সেচ নিশ্চিত করা যায়।

 

পাট
পাট গাছের বয়স চার মাস হলে ক্ষেতের পাট গাছ কেটে নিতে হবে। পাট গাছ কাটার পর চিকন ও মোটা পাট গাছ আলাদা করে আঁটি বেঁধে দুই/তিন দিন দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। পাতা ঝরে গেলে ৩/৪দিন পাট গাছগুলোর গোড়া এক ফুট পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর পরিষ্কার পানিতে জাগ দিতে হবে।
পাট পচে গেলে পানিতে আঁটি ভাসিয়ে আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে পাটের আঁশের গুণাগুণ ভালো থাকবে। ছাড়ানো আঁশ পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে বাঁশের আড়ে শুকাতে হবে।
যেসব জায়গায় জাগ দেয়ার পানির অভাব সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচাতে পারেন। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং পচন সময় কমে যায়।    
পাটের বীজ উৎপাদনের জন্য ১০০ দিন বয়সের পাট গাছের এক থেকে দেড় ফুট ডগা কেটে নিয়ে দুটি গিটসহ ৩/৪ টুকরা করে ভেজা জমিতে দক্ষিণমুখী কাত করে রোপণ করতে হবে। রোপণ করা টুকরোগুলো থেকে ডালপালা বের হয়ে নতুন চারা হবে। পরবর্তীতে এসব চারায় প্রচুর ফল ধরবে এবং তা থেকে বীজ পাওয়া যাবে।

 

ভুট্টা
পরিপক্ব হওয়ার পর বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার আগে মোচা সংগ্রহ করে ঘরের বারান্দায় সংগ্রহ করতে পারেন। রোদ হলে শুকিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মোচা পাকতে দেরি হলে মোচার আগা চাপ দিয়ে নি¤œমুখী করে দিতে হবে, এতে বৃষ্টিতে মোচা নষ্ট হবে না।

 

শাকসবজি
এ সময়ে উৎপাদিত শাকসবজির মধ্যে আছে ডাঁটা, গিমাকলমি, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঝিঙা, শসা, ঢেঁড়স, বেগুন। এসব সবজির গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রয়োজনে মাটি তুলে দিতে হবে। এছাড়া বন্যার পানি সহনশীল লতিরাজ কচুর আবাদ করতে পারেন;
উপকূলীয় অঞ্চলে ঘেরের পাড়ে গিমা কলমি ও অন্যান্য ফসল আবাদ করতে পারেন;
সবজি ক্ষেতে পানি জমতে দেয়া যাবে না। পানি জমে গেলে সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে;
তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরার জন্য বেশি বৃদ্ধি সমৃদ্ধ লতা জাতীয় গাছের ১৫-২০ শতাংশের লতা পাতা কেটে দিতে হবে;
কুমড়া জাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরবেলা হাতপরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে;
আগাম জাতের শিম এবং লাউয়ের জন্য প্রায় ৩ ফুট দূরে দূরে ১ ফুট চওড়া ও ১ ফুট গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। মাদা তৈরির সময় গর্তপ্রতি ১০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ২ কেজি ছাই, ১০০ গ্রাম টিএসপি ভালোভাবে মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর প্রতি গাদায় ৩/৪টি ভাল সবল বীজ রোপণ করতে হবে।

 

গাছপালা
এ সময়টা গাছের চারা রোপণের জন্য খুবই উপযুক্ত। বসতবাড়ির আশপাশে, খোলা জায়গায়, চাষাবাদের অনুপযোগী পতিত জমিতে, রাস্তাঘাটের পাশে, পুকুর পাড়ে, নদীর তীরে গাছের চারা বা কলম রোপণের উদ্যোগ নিতে হবে;
এ সময় বনজ গাছের চারা ছাড়াও ফল ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করতে পারেন;
ফলের চারা রোপণের আগে গর্ত তৈরি করতে হবে;
সাধারণ হিসাব অনুযায়ী একফুট চওড়া ও একফুট গভীর গর্ত করে গর্তের মাটির সাথে ১০০ গ্রাম করে টিএসপি ও এমওপি সার মিশিয়ে, দিন দশের পরে চারা বা কলম লাগাতে হবে;
বৃক্ষ রোপণের ক্ষেত্রে উন্নত জাতের রোগমুক্ত সুস্থ সবল চারা বা কলম রোপণ করতে হবে;  
চারা শুধু রোপণ করলেই হবে না। এগুলোকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। চারা রোপণের পর শক্ত খুঁটি দিয়ে চারা বেঁধে দিতে হবে। এরপর বেড়া বা খাচা দিয়ে চারা রক্ষা করা, গোড়ায় মাটি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার, সেচনিকাশ নিশ্চিত করতে হবে;
নার্সারি মালিক যারা তাদের মাতৃগাছ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি খুব জরুরি। সার প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার, দুর্বল রোগাক্রান্ত ডালপালা কাটা বা ছেটে দেয়ার কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে হবে।

 

প্রাণিসম্পদ
বর্ষাকালে হাঁস মুরগির ঘর যাতে জীবাণুমুক্ত ও আলো-বাতাসপূর্ণ থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে;
এ মাসে হাঁস-মুরগির কৃমি, কলেরা, রক্ত আমাশয়, পুলরাম রোগ, সংক্রমণ সর্দি দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে;
হাঁস-মুরগিকে ভেজা সেঁতসেঁতে জয়গায় না রেখে শুকনো ঘরে রাখতে হবে এবং মাঝে মধ্যে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে;
বর্ষাকালে গবাদিপশুকে সংরক্ষণ করা খড়, শুকনো ঘাস, ভুসি, কুঁড়া খেতে দিতে হবে। সে সাথে কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে;
মাঠ থেকে সংগৃহীত সবুজ ঘাস ভালোভাবে পরিষ্কার না করে খাওয়ানো যাবে না;
বর্ষাকালে গবাদিপশুর গলাফোলা, তড়কা, বাদলা, ক্ষুরা রোগ মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে। এ জন্য প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে;
কৃমির আক্রমণ রোধ করার জন্য কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে;
হাল চাষের পর গরুকে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছনা রাখতে হবে;
এছাড়া যে কোন পরামর্শের জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।

 

মৎস্য সম্পদ
বর্ষা মৌসুমে পুকুরের পাড় উঁচু করে দিতে হবে;
বন্যার সময় পুকুরে মাছ আটকানোর জন্য জাল, বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘেরা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে;
আষাঢ় মাস মাছের পোনা ছাড়ার উপযুক্ত সময়। মাছ চাষের জন্য মিশ্র পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন;
পুকুরে নিয়মিত খাবার দিতে হবে এবং জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে;
বড় পুকুরে, হাওরে, বিলে, নদীতে খাচায় মাছ চাষ করতে পারেন;
মাছ চাষের যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য উপজেলা মৎস অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।


সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, আপনাদের আগাম নিশ্চিত প্রস্তুতির জন্য আগামী মাসে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর বিষয়ে সংক্ষিপ্তভাবে জানিয়ে দেয়া হয়। বিস্তারিত জানার জন্য স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি-মৎস্য-প্রাণী বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। আর একটি কথা এ সময় বীজ ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় কৃষি উপকরণগুলো বন্যামুক্ত উঁচু বা নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করে রাখতে  হবে।

 

কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন*
*তথ্য অফিসার (কৃষি), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫

বিস্তারিত

COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon