Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষি কথা

সম্পাদকীয়

৮২তম বর্ষ ড় ১২তম সংখ্যা ড় চৈত্র-১৪২৯ ড় মার্চ-এপ্রিল ২০২৩

সম্পাদকীয়

মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় মাস। ১৯২০ সালে ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মানবদরদী কিন্তু অধিকার আদায়ে আপসহীন। বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ চালায়। ২৬ মার্চ জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম। বাঙালি দীর্ঘ ৯ মাস পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। অভ্যুদয় হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ১০৩তম জন্মবার্ষিকীতে জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা।
চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধুর আজন্ম স্বপ্ন ছিল কৃষি সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলা। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমানে বিশ^ব্যাপী মহামারি, সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানামুখী প্রভাব মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারা অব্যহত রেখেছে  বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের দিকনির্দেশনায় কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন যুগোপযোগী নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার সঠিক বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। যার ফলে দানাদার শাকসবজি, ফলমূল ও প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। নেই খাদ্যের ঘাটতি, রয়েছে  উদ্বৃত্তী এবং স্থান করে নিয়েছে বিশে^র শীর্ষ দশটি দেশের তালিকায়। এ অর্জনের কারিগর কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সুশীলসমাজ, বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ ও কৃষকেরা। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে এ সংখ্যায় বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টিতে বর্তমান কৃষির সাফল্য ও আগামীর কৃষির ভাবনা নিয়ে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তনে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী এর বক্তব্যে এবং পল্লী উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও স্মার্ট পল্লী নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এ ছাড়াও কৃষিকে টেকসই ও আধুনিকীকরণের মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা গতিশীল রাখতে আগামীর কৃষিকথায় উচ্চমূল্যের ফসল চাষাবাদ, সফল কৃষকের গল্প ও নিয়মিত বিভাগ দিয়ে সাজানো হয়েছে পত্রিকাটি। আশা করি সময়োপযোগী কৃষিকথার এ সংখ্যা খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি সমৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

বিস্তারিত
সূচিপত্র

৮২তম বর্ষ ড় ১২তম সংখ্যা ড় চৈত্র-১৪২৯ (মার্চ-এপ্রিল ২০২৩)

সূচিপত্র

নিবন্ধ
    
    বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তন ২০২৩     ০৩    
    ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি
    পল্লী উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও স্মার্ট পল্লী    ০৭    
    মৃত্যুঞ্জয় রায়
    টেকসই কৃষির প্রসারের লক্ষ্যে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনে বীজ প্রযুক্তি    ০৯
    ড. মো. আবু হেনা ছরোয়ার জাহান, ড. পরিমল চন্দ্র সরকার
    স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরিষার তেল    ১১    
    কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন    
    স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় আগাছানাশকের সুষ্ঠু ব্যবহার    ১২
    কৃষিবিদ মোহাম্মদ সাইফুল আলম সরকার    
    মহিষের বিভিন্ন জাত    ১৪
    মোঃ ওমর ফারুক, মোঃ শাহেদ হোসেন, মাহমুদা বিলকিস বিনতে আলম, আব্দুল্লøাহ ইবনে
    জলাশয়ের শত্রুখ্যাত সাকার মাছ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহারের কলাকৌশল    ১৬
    মোঃ মাসুদ রানা    
    মাটিতে জৈব পদার্থ সরবরাহে ফসলভেদে সবুজসার     ১৮
    নাহিদ বিন রফিক
আগামীর কৃষি ভাবনা

    পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৃক্ষরোপণ    ১৯    
    কৃষিবিদ মোঃ তারিক হাসান

উচ্চমূল্যের ফসল চাষাবাদ
    বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি    ২১    
    ড. মোঃ আশিকুল ইসলাম
সফল কৃষকের গল্প
    নারীর কর্মসংস্থানে মাশরুম    ২৩    
    ড. মোছা: আখতার জাহান কাঁকন
নিয়মিত বিভাগ
    প্রশ্নোত্তর    ২৫
    কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর
    বৈশাখ মাসের কৃষি (১৫ এপ্রিল-১৪ মে)    ২৬
    কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
বর্ষসূচি
    বর্ষসূচি-১৪২৯ (বৈশাখ-চৈত্র)    ২৮
    মোছাঃ সাবিহা সুলতানা

 

বিস্তারিত
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তন ২০২৩

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তন ২০২৩
ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও সমাবর্তন বক্তা, বিশেষ অতিথি মাননীয় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকম-লী, প্রিয় গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ সাংবাদিকবৃন্দ ও সমবেত সুধীম-লী, আসসালামু আলাইকুম;
বক্তব্যের শুরুতেই আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই সাথে বিনম্র শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ১৫ আগস্টে শহিদ বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ সকল শাহাদাতবরণকারীদের।
আমাদের জাতীয় জীবনে ফেব্রুয়ারি মাস অশেষ গুরুত্ব বহন করে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার যে প্রথম স্ফূরণ ঘটেছিল, তা বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা ঘোষণা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনের গণরায়কে উপেক্ষা করে ক্ষমতা হস্তান্তরে সামরিক জান্তার ষড়যন্ত্র ও বর্বরতা, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এবং সর্বোপরি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে পূর্ণতা লাভ করে। আর এই দীর্ঘ ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞের মহানায়ক ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মহান ভাষা আন্দোলনের এই মাসে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের ও ভাষাসৈনিকদের। যাঁরা পাকিস্তানের জন্মলগ্নেই পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন; বাঙালি জাতির মনোবল ও আত্মবিশ্বাসকে পাহাড়সম শক্তিশালী করেছিলেন।
আমি শ্রদ্ধার সাথে আরও স্মরণ করছি আমাদের জাতীয় চার নেতা, স্বাধীনতাযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মহান শহীদদের, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী দু’লাখ মা-বোন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাঁরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

সুধীম-লী
শীতের এই চমৎকার সকালে আয়োজিত সমাবর্তনের ভাবগম্ভীর ও আনন্দঘন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
দেশে উচ্চতর কৃষি শিক্ষার প্রধান বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তনে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সমাবর্তন একটি প্রতীকী অনুষ্ঠান। সফল শিক্ষাজীবন শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদপত্র গ্রহণের মাধ্যমে নবীন গ্র্যাজুয়েটদের সামনে উন্মোচিত হয় বৃহত্তর কর্মজীবনে প্রবেশের দ্বার। নবীন গ্র্যাজুয়েটদের এই অগ্রযাত্রায় জাতির শুভকামনা যুক্ত করার জন্য সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। সদ্য সনদপ্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েটদের আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই এবং ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ     কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

প্রিয় সুধী
দিল্লীর মুঘল, ইংরেজ শাসন থেকে শুরু করে সর্বশেষ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আমলেও বাংলার কৃষক ছিল অন্তহীন শোষণ ও বঞ্চনার শিকার এবং নিপীড়িত ও অবহেলিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৈশোর-তরুণ বয়স থেকেই বাংলার কৃষকের দৈন্যদশা স্বচক্ষে দেখেছেন, যা তাঁর কোমল হৃদয়ে গভীরভাবে রেখাপাত করে। তাই আমরা দেখি, বঙ্গবন্ধুর সারা রাজনৈতিক জীবনজুড়ে কৃষক ও কৃষির উন্নয়ন ও কল্যাণ ভাবনা নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমাদের সমাজে চাষিরা হলো সবচেয়ে দুঃখী ও নির্যাতিত শ্রেণী, এবং তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের উদ্যোগের বিরাট অংশ অবশ্যই তাদের পিছনে নিয়োজিত করতে হবে”।
তাই আমরা দেখতে পাই, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরপরই বাংলার চিরদুঃখী ও নির্যাতিত কৃষক চাষির উন্নয়নে বিরাট উদ্যোগ ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকেই তিনি চাষিদের সমস্ত বকেয়া খাজনার সুদ মওকুফ করে দিলেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনাও মওকুফ করার ঘোষণা দিলেন। জমির মালিকানার সর্বোচ্চ সিলিং ১০০ বিঘা নির্ধারণ করেন। পাকিস্তানি শাসন আমলে রুজু করা ১০ লক্ষ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্তি দেন এবং তাদের সকল বকেয়া ঋণ সুদসহ মওকুফ করে দেয়া হয়।
সুধীম-লী
ষাটের দশকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ‘সবুজ বিপ্লব’ শুরু হলেও তার ছোঁয়া পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের মাটিতে লাগতে দেয়নি। স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ভর্তুকি দিয়ে সার, সেচ, বীজসহ কৃষি উপকরণের প্রাপ্তি সহজতর করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি সারের ব্যবহার ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পেরেছিলেন। নগদ ভর্তুকি ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে কৃষকের মাঝে সেচযন্ত্র বিক্রির ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু সারা দুনিয়া থেকে খুঁজে খুঁজে কৃষকদেরকে সেচ যন্ত্র এনে দিয়েছিলেন। পূর্ব জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তিনি পাম্প সংগ্রহ করেছিলেন।
তাছাড়া, কৃষি গবেষণায় ও কৃষি পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে এসে কৃষিবিদদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধির ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফলে কৃষিবিদগণ লাভ করেন সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণীর পদমর্যাদা। আজকে     কৃষির যে সাফল্য, তার পেছনে এই ঘোষণার বিরাট অবদান রয়েছে।
প্রিয় গ্র্যাজুয়েটগণ
জাতির পিতা কৃষি বিপ্লবের যে ধারা সূচনা করেছিলেন, সেই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলে কৃষিক্ষেত্রে ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় রেখেছে। ১৯৭০-৭১ সালে যেখানে মোট খাদ্যশস্য (চাল,গম ও ভুট্টা) উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৭২ লক্ষ ৮৮ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়াকে টপকে বিশ্বে পরপর চতুর্থবারের মতো তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে।
শুধু মোট উৎপাদন নয়, বাংলাদেশ খাদ্যশস্যের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে অনেক ক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড় উৎপাদনশীলতাকে ছাড়িয়ে গেছে ও শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধু উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার দেশের এক একর জমিতে যে ফসল হয় জাপানের এক একর জমিতে তার তিন গুণ বেশি ফসল হয়। কিন্তু আমার জমি দুনিয়ার সেরা জমি। আমি কেন সেই জমিতে ডবল ফসল করতে পারব না, দ্বিগুণ করতে পারব না? আমি যদি দ্বিগুণ করতে পারি, তাহলে আমাকে খাদ্য কিনতে হবে না’।
বঙ্গবন্ধুর সেই আকাক্সক্ষা আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পরপর দেশের বেশির ভাগ এলাকায় একটি বা দুটি ফসল হতো। এখন দেশে বছরে ২-৩টি ফসল হচ্ছে।    ১৯৭১-৭২ সালে হেক্টরপ্রতি চাল উৎপাদন হতো গড়ে ১ টনের কিছু বেশি। ২০২১-২২ সালে হেক্টরপ্রতি চাল উৎপাদন হয়েছে গড়ে সাড়ে চার টনেরও বেশি। হেক্টরপ্রতি ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৯.৭৫ টন, গম ৩ টন, আলু প্রায় ২১ টন।
কৃষি উন্নয়নের এই সাফল্য সারা পৃথিবীতে বহুলভাবে প্রশংসিত ও নন্দিত হচ্ছে। আমাদের জনবান্ধব প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দিকনির্দেশনায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মতৎপরতা এবং কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ ও কৃষক সমাজের নিবিড় কার্যক্রমের ফলেই এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
সুধীম-লী
চলমান কোভিড-১৯ এর কারণে বিগত প্রায় তিন বছর ধরে সারা বিশ্ব এক চরম ক্রান্তিকাল ও সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ, অবরোধ-পাল্টা অবরোধ। এসবের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী ‘খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা’ বেড়েছে। বেড়েছে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু হতেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খাদ্য সংকট মোকাবিলায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে”- তার জন্য বার বার নির্দেশনা দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রণালয় সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলে নানান দুর্যোগের মধ্যেও আমরা বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ধারা শুধু অব্যাহত রাখা নয়, তা আরও বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। এর ফলে দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় এবং বহুমুখী দুর্যোগের মধ্যেও বিশ্বে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

প্রিয় কৃষিবিদগণ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কৃষিবিপ্লবের মাধ্যমে ‘সোনার বাংলা’ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে এখন মানুষ পেট ভরে খেতে পায়। করোনাসহ শত দুর্যোগের মাঝেও কেউ না খেয়ে থাকে না। এটি মহান আনন্দের ও গৌরবের। স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাউল কিনতে পারছি না, চাউল পাওয়া যায় না; যদি চাউল খেতে হয়, আপনাদের চাউল পয়দা করে খেতে হবে’।
আজ আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী, কৃষকরত্ন শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও দূরদর্শিতায় বর্তমান সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধবনীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে চালের জন্য আর দুনিয়াজুড়ে চেষ্টা করতে হয় না। আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় চাল নিজেরাই এদেশে পয়দা করছি। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে চালের উৎপাদন ৪ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে, যা সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে।
২০০৮-০৯ সালে যেখানে মোট খাদ্যশস্য (চাল, গম ও ভুট্টা) উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৭২ লক্ষ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। বিগত ১৪ বছরে চালের উৎপাদন ২৯%, গম ৩৭%, ভুট্টা ৬৭১%, আলু ১১০%, ডাল ৩২৮%, সবজি ৬৪৫%, পেঁয়াজ ৩৯৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের কৃষির এই সাফল্য বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া এখন অনেক ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় এক থেকে দশের মধ্যে আছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম স্থানে রয়েছে।

সমবেত সুধী
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকলের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চয়তা দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে। পুষ্টিজাতীয় খাবার হলো দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ফলমূল ও শাকসবজি প্রভৃতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু খাদ্য বলতে শুধু চাল-আটা নয়, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও শাকসবজির কথা বলেছিলেন এবং এগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির ডাক দিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালের অক্টোবরে সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের বনজ সম্পদ, ফলের চাষ, গো-সম্পদ, হাঁস-মুরগির চাষ, সর্বোপরি মৎস্য চাষের ব্যবস্থা করতে হবে’।
সেই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গবাদি পশুপাখির টিকা উৎপাদন, চিকিৎসাসেবা প্রদান, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দুধ, ডিম, হাস-মুরগি ও গবাদি পশুর ফার্ম, মৎস্য চাষের খামার স্থাপনসহ নানা কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে, দুধ, ডিম, মাছ, মাংসসহ অন্যান্য পুষ্টিজাতীয় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। মৎস্য, ডিম, মাংস উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন ছিল মাত্র ২৭.০১ লক্ষ টন। বিগত ১৪ বছরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৭.৫৯ লক্ষ টনে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ইলিশ আহরণে প্রথম, স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে ৩য়, চাষের মাছ উৎপাদনে ৩য় এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে ৪র্থ স্থানে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদন ছিল ২২.৮৬ লক্ষ টন, ১০.৮৪ লক্ষ টন, ৪৬৯.৬১ কোটি, যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে যথাক্রমে ১৩০.৭৪ লক্ষ টন, ৯২.৬৫ লক্ষ টন ও ২৩৩৫.৩৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। ফলে জনপ্রতি মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের প্রাপ্যতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

সমবেত সুধীবৃন্দ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এখন একটি উন্নত, লাভজনক, টেকসই ও জলবায়ুসহনশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে, যার মাধ্যমে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই হবে, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত হবে, কৃষকেরা উন্নত জীবন পাবেন। কিন্তু জমি হ্রাস, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তাকে টেকসই করতে হলে জলবায়ুসহনশীল ও উচ্চফলনশীল ফসলের জাত ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে কৃষকদের মাঝে তা দ্রুত ছড়িয়ে দিতে হবে। একইসঙ্গে, কৃষিতে রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্টারনেট অব থিংস, ড্রোন প্রভৃতির ব্যবহার এবং প্রিসিসন ও ভার্টিকাল এগ্রিকালচারে দক্ষতা বাড়াতে হবে। দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গ্র্যাজুয়েটদেরকে এসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সেজন্য, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কারিকুলামকে উন্নত ও আধুনিক করতে হবে। তাহলেই, আগামী দিনে স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গ্র্যাজুয়েটগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবেন বলে আমার বিশ্বাস।
সমবেত সুধীম-লী
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার প্রধান বিদ্যাপীঠ। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে টেকসই  কৃষি উন্নয়ন তথা গ্রামীণ অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর স্থাপনের লক্ষ্যে ছয় দশকেরও বেশি সময় পূর্বে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দীর্ঘ অভিযাত্রায় জাতির জ্ঞানভা-ার সমৃদ্ধ হয়েছে, যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমর্থ দক্ষ জনশক্তির সরবরাহ বেড়েছে এবং সর্বোপরি দেশের কৃষি প্রতিটি খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। কৃষি খাতে আজ যে অভাবনীয় সাফল্য দৃশ্যমান, এর পেছনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটবৃন্দসহ দেশের অন্যান্য কৃষিবিদগণ, যারা গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশ উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ সব পর্যায়ে তা দ্রুত হস্তান্তর ও বিস্তারের কাজে নিজেদের সারাক্ষণ নিয়োজিত রেখেছেন। এভাবেই তাঁরা জাতির হৃদয়ে নিজেদের জন্য আপন স্থান তৈরি করে নিয়েছেন এবং উত্তরসূরীদের জন্য সামনে চলার পথ নির্দেশ করেছেন।

সুধীম-লী
বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বিশ্বের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছিলেন। বিশ্বের বুকে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ নামক আমাদের এই প্রিয় রাষ্ট্র-স্বদেশটি তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
তেমনি স্বাধীনতার ৫০ (পঞ্চাশ) বছর পরে এসে আমরা দেখতে পাই- এই স্বাধীন দেশটির যতকিছু সাফল্য-অর্জন সবই এসেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত ধরে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা, জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সর্বক্ষেত্রে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক, সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তাঁর সক্ষমতা দেখিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে মর্যাদা ও সম্মানে বিশ্বপরিম-লে এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা গড়ে তুলবো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ ও শান্তির ‘সোনার বাংলা’।

প্রিয় গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ
বর্তমান বিশ্বে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আমাদের মতো দেশে-যাদের প্রাকৃতিক সম্পদ খুব সীমিত, সেখানে দক্ষ মানবসম্পদ আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববরেণ্য নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ গুৎড়হ ঝ. ঝপযড়ষবং গবেষণার আলোকে বলেছেন, “ঞড় নবপড়সব ধ ঢ়ৎড়ংঢ়বৎড়ঁং পড়ঁহঃৎু, ড়হব ফড়বং হড়ঃ হববফ ঃড় যধাব ভবৎঃরষব ষধহফ ঃড় মৎড়ি পৎড়ঢ়ং ড়ৎ পড়ধষ ধহফ ফরধসড়হফ সরহব ড়ৎ ভড়ংংরষ ভঁবষ ৎবংবৎাব, ৎধঃযবৎ ঃবপযহরপধষষু ংশরষষবফ সধহঢ়ড়বিৎ ড়িঁষফ নব সধরহ ফবঃবৎসরহধহঃ; ধহফ ভৎড়স ঃযধঃ পড়ঁহঃ ঢ়ৎড়ংঢ়বপঃ রং ড়ঢ়বহ বহফবফ”. তোমাদের মতো তরুণেরাই আমাদের দেশের বিরাট শক্তি ও প্রকৃত সম্পদ। এই তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে বর্তমান সরকারও নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এই বাস্তবতায়, তোমাদের নিজেদেরকেও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
তোমাদের প্রত্যেককে আমি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আজকের এই বর্ণাঢ্য সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মধ্যমণি তোমরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সমাপনের স্বীকৃত হিসেবে সনদপত্র লাভের মধ্য দিয়ে আজ তোমাদের জীবনে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। যে স্বপ্ন নিয়ে একদিন তোমরা প্রকৃতির শ্যামলিমায় ঘেরা এই অনন্য সুন্দর শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করেছিলে, দীর্ঘ ও কঠোর সাধনার মাধ্যমে স্বপ্নের সেই গন্তব্যের শেষ প্রান্তে আজ উপনীত হয়েছো। কৃতিত্ব ও সাফল্যের বিভায় দীপ্ত তোমাদের জীবনের এই অধ্যায়। তাই আজ শুধু স্বজন-পরিজন নয়, বরং সমগ্র জাতি তোমাদের নিয়ে গর্ববোধ করে। নিজেদের তোমরা জ্ঞানে দক্ষতায় সমৃদ্ধ করেছ। পেশাগত শিক্ষালাভের মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধকে শাণিত করার অনন্য সুযোগ পেয়েছো। এ সবই সম্ভবপর হয়েছে জনগণের করের অর্থে গঠিত সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দের কল্যাণে। দেশ ও জাতির কাছে এভাবে জমে উঠেছে অনেক ঋণ। এখন তোমাদের সেই ঋণ পরিশোধের পালা। গোটা দেশ আজ তোমাদের মুখের দিকে চেয়ে আছে। সমগ্র জাতি তোমাদের ঘিরে স্বপ্ন দেখে। দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তোমরা একযোগে কাজ করবে, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘলালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে অগ্রসেনানী হিসেবে আপন স্থান করে নেবে-এই আমাদের একান্ত কামনা ।

সুধীবৃন্দ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা প্রদান করেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এই শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে দেশের কৃষি ও কৃষিবিদগণকে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আসুন, আমরা আবারো মিলিতভাবে অভিনন্দন জানাই সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী নবীন কৃষিবিদদের। আমাদের সম্মিলিত শুভাশীষ ধারায় স্পন্দিত হোক তাদের অভিযাত্রা, আমাদের শুভেচ্ছা হোক তাদের সামনে চলার প্রেরণা ও পাথেয়।
পরিশেষে, আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যাহত অগ্রগতি ও সাফল্য কামনা করে এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এখানেই আমার বক্তব্য শেষ করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।।

লেখক : মাননীয় মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
ওয়েবসাইট :www.moa.gov.bd

বিস্তারিত
পল্লী উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও স্মার্ট পল্লী

পল্লী উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও স্মার্ট পল্লী
মৃত্যুঞ্জয় রায়
র্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেছিলেন গোপালগঞ্জের এক নিভৃত পল্লী টুঙ্গিপাড়ায়। পল্লী বাংলার শস্য শ্যামল রূপ তাঁকে মুগ্ধ করলেও তৎকালীন পল্লীবাসীদের দুরবস্থা তাঁকে ব্যাথিত করেছিল। তাইতো কিশোর বয়স থেকেই তিনি খুঁজেছিলেন পল্লী বাংলার উন্নয়নের পথ। রাজনীতি ও ভাবনার মধ্যে বুনেছিলেন পল্লী উন্নয়নের বীজ। এ বছর মহান নেতার ১০৩তম জন্মদিনে তাঁর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
একটি সুরম্য অট্টালিকা একদিনে হঠাৎ করে তৈরি হয় না। তার জন্য দরকার হয় সঠিক পরিকল্পনা ও মজবুত ভিত্তি। এ দেশে আজ পল্লীর যে ব্যাপক উন্নতি, তার ভিত্তিটাই গড়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গ্রামীণ শহর গড়ে তুলছেন যেখানে শহরের সব নাগরিক সুবিধা গ্রামেই থাকবে। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য এ এক অভূতপূর্ব উন্নয়ন ভাবনা। গ্রামে গ্রামে এখন আর শুধু বিদ্যুৎ নয়- রাস্তাঘাট, সেতু ও ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে গ্রামকে যুক্ত করা হয়েছে দেশ-মহাদেশের মহাসড়কে। ১৯৭২ সালে প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের ষোড়শ অনুচ্ছেদের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব। সেখানে নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ধীরে ধীরে দূর করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য জোর দেয়া হয়েছে কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে গ্রামীণ কৃষির বিকাশ, শিক্ষার প্রসার, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এই পাঁচটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে। তিনি চেয়েছিলেন নগরের নাগরিক সেবার সবই যেন গ্রামে থাকে।
১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু পল্লী উন্নয়নের জন্য তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘আমি ঘোষণা করছি যে, পাঁচ বছরে প্রত্যেকটি গ্রামে কম্পালসারি কো-অপারেটিভ হবে। বাংলাদেশে ৬৫ হাজার গ্রাম-কো অপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি মানুষ- যে মানুষ কাজ করতে পারে- তাকে কো-অপারেটিভের সদস্য হতে হবে। গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ গড়ে তোলা হবে। ভুল করবেন না। এই যে নতুন সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি তাতে আপনাদের জমি নেবো না। ভয় পাবেন না যে, জমি নিয়ে যাব, তা নয়। এ জমি মালিকের থাকবে। আপনার জমির ফসল আপনি পাবেন। কিন্তু ফসলের অংশ সবাই পাবে। অংশ যাবে কো-অপারেটিভের হাতে; অংশ যাবে গভর্নমেন্টের হাতে। এগুলো বহুমুখী কো-অপারেটিভ হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে, টেস্টরিলিফ যাবে তাদের কাছে, ওয়ার্কস প্রোগ্রাম যাবে তাদের কাছে। আস্তে আস্তে কাউন্সিল টাউটদের বিদায় দেয়া হবে। তা না হলে দেশকে বাঁচানো যাবে না। এ জন্যই ভিলেজ কো-অপারেটিভ হবে।’ বঙ্গবন্ধু কৃষি সমবায়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন ও সমবায় আন্দোলনকে কৃষি বিপ্লব ও পল্লী উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ফলে সময়ের কারণে সমবায় নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনাগুলো তিনি বাস্তবে রূপ দিয়ে যেতে পারেননি।  
স্বাধীনতার আগে পল্লী সমাজের লোকেরা ছিল চরম অবহেলিত। কারাগারের রোজনামচায় তাঁর স্মৃতিচারণে একদিকে যেমন ভেসে উঠেছে গ্রামের সেই দুরবস্থার আক্ষেপ, অন্যদিকে প্রকাশ পেয়েছে গ্রামের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় ভালবাসা, তিনি সে বইয়ে লিখেছেন, ‘আজ আর গ্রামের কিছুই নাই। মনে হয় যেন মৃত্যুর করাল ছায়া আস্তে আস্তে গ্রামগুলোকে প্রায় গ্রাস করে নিয়ে চলেছে। অভাবের তাড়নায়, দুঃখের জ্বালায় আদম সন্তান গ্রাম ছেড়ে চলেছে শহরের দিকে। অনেকক্ষণ শুয়ে শুয়ে ছোটবেলার কত কাহিনীই না মনে পড়ল। কারণ আমি তো গ্রামেরই ছেলে। গ্রামকে আমি ভালোবাসি।’ বঙ্গবন্ধু পল্লীর লোকদের স্বাধীন বাংলাদেশের উপযোগী, গতিশীল ও প্রাণবন্ত এক পল্লী সমাজ বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করেছিলেন যার মধ্যে মিশেছিল তাঁর প্রত্যয়, প্রয়াস, দর্শন আর ভালোবাসা।
তিনি নিজেই ছিলেন সে সময় পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান। তাঁর গ্রামোন্নয়ন ভাবনার ওপর ভিত্তি করে তখন একাধিক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গ্রামোন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় তিনি গ্রহণ করেছিলেন এক্সটেন্ডেড রুরাল সোশ্যাল আপলিফটমেন্ট পাইলট প্রকল্প যার জন্য প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেই ৯০ লক্ষ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে তৎকালীন ১৯টি জেলার ১৯টি থানায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তন করেন পল্লী সমাজ সেবা বা আরএসএস প্রকল্প যা দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়। সে প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে পল্লীর জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন। পরবর্তীতে সকল উপজেলাকে রাজস্ব বাজেটের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের সংগঠিত করে তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু প্রবর্তন করেন পল্লী মাতৃকেন্দ্র বা আরএমসি। প্রকল্পটির সফলতায় বিশ্বব্যাংক ও পরে বাংলাদেশ সরকারের অর্থসহায়তায় ৬৪ জেলার ৪৯২টি উপজেলায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে যার মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও ক্ষমতায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
একসময় পল্লীর অনেক মানুষ ছিল ভূমিহীন ও গৃহহীন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে সেসব ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়, তাঁরা পায় আশ্রয়। কিন্তু ১৯৭৫ এ ঘাতকদের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারান আমাদের প্রিয় নেতা, আর স্থবির হয়ে পড়ে অসহায় মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার কার্যক্রম। বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি বঙ্গবন্ধুর জনবান্ধব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলোর বাস্তবায়ন আবার শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল’ সামনে রেখে পিছিয়ে পড়া পল্লীবাসীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এর ধারাবহিকতায় কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন ও ধীরে ধীরে সারা দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাঁর কার্যালয়ের তত্তাবধানে শুরু করেন আশ্রয়ণ প্রকল্প। ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে এ প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ৫ লক্ষ ৭ হাজার ২৪৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে তাঁরা শুধু আশ্রয়ই পায়নি, খুঁজে পেয়েছে জীবিকা নির্বাহের পথ। দারিদ্র্য হ্রাসের মাধ্যমে তাঁরা যুক্ত হয়েছে উন্নয়নের মহাসড়কে। এ ছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় ২৩৫টি পুরনো মুজিবকেল্লার সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব কেল্লা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে উপকূলবাসীদের সাইক্লোন থেকে রক্ষার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। সরকার এগুলো আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী চিন্তা বাস্তবায়নের সত্যিকার রূপকার তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প এবং আমার গ্রাম আমার শহর কার্যক্রম। শহরের সব সুবিধা যেন গ্রামে মেলে তার ব্যবস্থা তিনি করে যাচ্ছেন। আজ গ্রামে এমন কোন বাড়ি পাওয়া যাবে না যেখানে টেলিভিশন নেই ও কাঁচা ঘর আছে, উন্নত হয়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা, গৃহহীনদের গৃহ দেয়া হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে আজ প্রতিটি উপজেলা ও প্রায় সকল গ্রাম শহরের সাথে সংযুক্ত, পল্লীর ঘরে ঘরে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে পল্লী মানুষের হাতে হাতে। প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে গ্রামীণ মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হার, কৃষিক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে যন্ত্রসেবা ও যৌথভাবে সমলয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি ইঞ্চি ভূমির সদ্ব্যবহার, উত্তরণ ঘটেছে বাণিজ্যিক কৃষির, কৃষিপণ্য রপ্তানির, গড়ে উঠেছে বিসিক শিল্প নগরীসহ অনেক গ্রামীণ কুটির শিল্প যার উৎপাদিত অনেক পণ্য এখন বিদেশে যাচ্ছে। পল্লীর মানুষের সঞ্চিত মূলধন কিভাবে উৎপাদনশীল কাজে বিনিয়োগ করা যায় সে উদ্দেশ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে পল্লী এলাকায় মূলধন প্রবাহ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধু পল্লী উন্নয়ন ভাবনার যে বুনিয়াদ তৈরি করে দিয়েছিলেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পল্লী উন্নয়নের সেই অগ্রযাত্রা প্রবল বেগে এগিয়ে চলেছে।
বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ অভিলক্ষ্য ২০৪১ গ্রহণ করেছে। সেখানে পরিকল্পনা করা হচ্ছে এ সময়ের মধ্যে গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে পৌঁছে যাবে ৫জি ইন্টারনেট সেবা, সবার কাছে থাকবে স্মার্টফোন, শতভাগ নাগরিক ব্যবহার করতে পারবে অত্যন্ত দ্রুতগতির ইন্টারনেট কাগুজে নোটের ব্যবহার প্রায় উঠেই যাবে। চারটি স্তম্ভের ওপর নির্মিত হবে সেই স্মার্ট বাংলাদেশের কাঠামো- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ যা বিস্তৃত হবে পল্লী অঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে, দেশ থেকে সমগ্র বিশ্বে। এদেশের পল্লীও হবে স্মার্ট পল্লী যেখানকার মানুষদের আধুনিক জীবনযাপনের সব সুযোগই থাকবে।

লেখক : কৃষি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশন ও অতিরিক্ত পরিচালক (অব:), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫; মোবাইল: ০১৭১৮২০৭১০৭, ই- মেইল :kbdmrityan@gmail.com

 

বিস্তারিত
টেকসই কৃষির প্রসারের লক্ষ্যে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনে বীজ প্রযুক্তি

টেকসই কৃষির প্রসারের লক্ষ্যে মানসম্পন্ন বীজ
উৎপাদনে বীজ প্রযুক্তি
ড. মো. আবু হেনা ছরোয়ার জাহান১  ড. পরিমল চন্দ্র সরকার২
কৃষির মৌলিক উপকরণ হলো বীজ যা খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি বিধানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে কয়টি উপকরণ ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে শুধুমাত্র বীজই হলো জীবিত। শুধুমাত্র মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ১৫-২০% বৃদ্ধি করা যায়। অন্যদিকে বীজের মান খারাপ হলে ফসল উৎপাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়। মানসম্পন্ন বীজ হতে উৎপন্ন সুস্থ সবল চারা উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণ যথা- সার ও পানির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে জমির একক প্রতি ফলন বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে দেশের মোট উৎপাদন বেড়ে যায় যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ফসল উৎপাদনের জন্য বীজ এবং খাবারের জন্য শস্যের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। বীজের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় বিবেচনায় নিতে হয় যেমন-কৌলিতাত্ত্বিক শুদ্ধতা, জীবনীশক্তি, বীজমান যথা-বিশুদ্ধতা, গজানোর ক্ষমতা, আর্দ্রতা ইত্যাদি। বীজ উৎপাদনের জন্য শস্য উৎপাদনের চেয়ে অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়ে তাই সার-সেচ-আগাছা ও আপদ বালাই ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ভিন্নতর হয়ে থাকে। তাছাড়া বীজ উৎপাদনের জন্য মাটি ও আবহাওয়ার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হয়। ভালো বীজ ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কম পড়ে, ফসলে রোগবালাইয়ের উপদ্রব কম হয়, এর ফলে অধিক ফলনের পাশাপাশি বেশি লাভ হয়ে থাকে। প্রথমেই বীজ শ্রেণীর কথাই ধরা যাক। বাংলাদেশে ফসলের বীজকে চার শ্রেণীতে ভাগ করা হয় যথা: প্রজনন বীজ, ভিত্তি বীজ, প্রত্যায়িত বীজ ও মানঘোষিত বীজ। বাণিজ্যিকভাবে বীজ উৎপাদন একটি বীজ প্রত্যয়ন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বীজ প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ হবে ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন, তাদের মূল্যায়ন ও  অবমুক্তকরণ, বীজ উৎপাদন, বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ, বীজ গুদামজাতকরণ, সংরক্ষণ, বীজ পরীক্ষাকরণ, বীজ প্রত্যয়ন, বীজমান নিয়ন্ত্রণ, বীজ বিপণন ও বিতরণ এবং আধুনিক উদ্ভিদতাত্ত্বিক ও           কৃষিতাত্ত্বিক বিজ্ঞানের আলোকে বীজের জৈবিক কার্যকলাপ, বীজ উৎপাদন এবং বীজ হ্যান্ডলিং নিয়ে গবেষণা করাই বীজ প্রযুক্তির কাজ। কাজেই বীজ ও খাদ্যশস্যের মধ্যে তফাৎ খুবই স্পষ্ট। বীজ প্রত্যয়ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উৎপাদিত বীজ উন্নত মান বহন করে থাকে। উক্ত বীজ সুনির্দিষ্টভাবে কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধ, আগাছা ও অন্যান্য বীজের মিশ্রণ থেকে মুক্ত, ভালো স্বাস্থ্য, উচ্চ গজানোর ক্ষমতাসম্পন্ন, নিরাপদ আর্দ্রতা সম্পন্ন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকে। কাজেই বীজ প্রযুক্তির বিভিন্ন ধাপ ও নীতিমালা অনুসরণ করে বীজের মান বজায় রাখা সম্ভব। কারণ বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের যে কোনো স্তরে বীজের তেজ ও মানের অবনতি ঘটতে পারে। উন্নত বীজ উৎপাদন ও ব্যবহার ভালো ফলন পাবার পূর্বশর্ত :
উন্নত বীজ নতুন প্রযুক্তির বাহক। নতুন জাতের উন্নত বীজ উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের যথাযথ সমন্বয়ে ফসলের ফলন অধিক বৃদ্ধি করে থাকে। উন্নত বীজ হলো খাদ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদানকারী- বাংলাদেশের ফসলের বীজ উৎপাদন কর্মকা- এদেশে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে।  বাংলাদেশে ধান, পাট, সবজি ফসলের উৎপাদনে যে অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে এদেশে উন্নত বীজ উৎপাদন কর্মকা-ের গতিশীলতার কারণে। উন্নত বীজ কম অনুকূল পরিবেশেও খাদ্য উৎপাদনের চালিকা শক্তি। কম অনুকূল পরিবেশেও মানসম্মত বীজ ভাল ফলন দিয়ে থাকে। উন্নত বীজ প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষির দ্রুত পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা প্রদানকারী।
বীজ প্রযুক্তির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
বীজ প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো উচ্চফলনশীল জাতের মানসম্পন্ন বীজের দ্রুত প্রসারের মাধ্যমে দেশের কৃষির উৎপাদন বাড়ানো। বীজ প্রযুক্তির লক্ষ্য হলো-
প্রজননবিদ কর্তৃক উৎপাদিত জাতের বীজ দ্রুত সময়ে কৃষকের মাঝে সহজলভ্য করা; সঠিক সময়ে সরবরাহ করা- নতুন জাতের মানসম্পন্ন বীজ পর্যাপ্ত পরিমানে সঠিক সময়ে কৃষকের নিকট সরবরাহ করা; মানসম্পন্ন বীজের মূল্য   কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা; বীজ উৎপাদনের মূল লক্ষ্য হলো কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধ এবং ভালো মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন। বীজ উৎপাদনের সময় কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য বিবেচ্য বিষয়সমূহ হলো-
বীজের উৎস অবশ্যই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হতে হবে। (ভিত্তি বীজ উৎপাদনের জন্য প্রজনন বীজ এবং প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদনের জন্য ভিত্তি বীজ নির্বাচন করতে হবে।) বীজ অবশ্যই বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করতে হয়। মাঠে চাষকৃত পূর্ববর্তি ফসলের ইতিহাস জানা আবশ্যক যাতে ফসলের জাতের কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধতা বজায় থাকে। শস্যপর্যায় অবলম্বন করে ভালো মানের বীজ উৎপাদন করতে হয়।  কৌলিতাত্ত্বিক শুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য একটি জাতের বীজ ফসলের সাথে অন্য জাতের যাতে পরাগায়ণ না ঘটতে পারে, সেজন্য স্বতন্ত্রীকরণ দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। যে জায়গায় প্রয়োজনীয় স্বতন্ত্রীকরণ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়না, সে ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বীজ বপন বা চারা রোপণ করে বীজ উৎপাদন করা যায়। ভালো বীজ উৎপাদনের জন্য বীজ ফসলের জমিতে অন্য জাত, অস্বাভাবিক গাছ ও রোগাক্রান্ত গাছ অপসারণ (রোগিং) করতে হয়। এ কাজটি গাছের বৃদ্ধির ২-৩টি ধাপে করতে হয়।
বাংলাদেশের অনেক কৃষকই আধুনিক বীজ প্রযুক্তি ব্যবহার না করে সনাতন পদ্ধতিতেই নিজের উৎপাদিত বীজের কিছু অংশ পরবর্তী বছরের জন্য সংরক্ষণ করেন। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের গড় উৎপাদন কম হওয়ার অন্যতম কারণ বীজের সঠিক মাননিশ্চিত না করা। এজন্য জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত আদর্শ বীজমান বজায় রাখার জন্য বীজ উৎপাদনের কৃষিতাত্ত্বিক নীতিমালা অনুসরণ করে বীজ উৎপাদন করতে হয়।  ‘টেকসই কৃষি’ বাস্তবায়নের জন্য বীজ প্রযুক্তির সঠিক ধারণা ও বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এজন্যই ‘জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮’ এ বীজ প্রযুক্তি সম্পর্কে নিন্মোক্ত নীতি রাখা হয়।
বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সহায়তায় আগ্রহী কৃষকদের সাথে মৌসুমভিত্তিক মতবিনিময় সভা/প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত বীজ উৎপাদন ও ব্যবহারে কৃষকদের অনুপ্রাণিত করা হবে। এবং মানসম্মত ও ভালোজাতের বীজ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে                কৃষকের মাঝে বীজ বিনিময়কে উৎসাহিত করা হবে।  
কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ ফসলের প্রজনন বীজ উৎপাদন করে থাকে, যা বিএডিসিসহ বেসরকারি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়। এই বীজ থেকে পরবর্তীতে ভিত্তি ও প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করে কৃষককে প্রদান করা হয়ে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে অধিক ফলন প্রাপ্তির মাধ্যমে দেশের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে এদেশের বিজ্ঞানীগণ ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশের বীজ খাত উন্নয়নের শক্তি
বীজ উৎপাদনের কর্মকা- চালনোর জন্য বীজ উৎপাদন উপযোগী বাংলাদেশের প্রায় সকল এলাকায় জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম (ঘঅজঝ), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এবং কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর এর অফিস স্থাপনা ও জনবল বিদ্যমান; জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম কর্তৃক নতুন নতুন উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন; অধিকাংশ ফসলের বীজ উৎপাদন উপযোগী কৃষি পরিবেশ বিদ্যমান; শ্রমিক প্রাপ্যতা সহনীয় পর্যায়ে বিদ্যমান বীজ সেক্টরে সহায়ক; বীজ সেক্টরে সহায়ক সরকারি নীতি বিদ্যমান; সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ প্রদান।
বাংলাদেশের বীজ খাত উন্নয়নের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ - মানসম্পন্ন বীজের চাহিদার তুলনায় সরবরাহের পরিমাণ কম থাকায় বীজ উৎপাদন বৃদ্ধি তথা বীজ খাত উন্নয়ন করলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং সাথে সাথে জাতীয় আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে; বছরব্যাপী ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে বীজের চাহিদা সারা বছরে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিধায় এই খাত উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোসহ বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
আমাদের দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য একটি লাগসই কৃষি ব্যবস্থা বজায় থাকা আবশ্যক। এজন্য চাহিদামাফিক মানসম্পন্ন বীজ কৃষকের নিকট সহজলভ্য হতে হবে। বীজ প্রযুক্তির সুষ্ঠু প্রয়োগ এ লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

লেখক : ১মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ২প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বীজ প্রযুক্তি বিভাগ, বিএআরআই, জয়দেবপুর, গাজীপুর। মোবাইল : ০১৭১৪৫৫২৫২১, ই-মেইল :cso.seed@bari.gov.bd

 

বিস্তারিত
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরিষার তেল

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরিষার তেল
কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন
সরিষার তেল আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। একসময় গ্রামবাংলার একমাত্র ভোজ্যতেল ছিল সরিষার তেল। এর ঔষুধি গুণাগুণের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে এ তেল। সরিষার তেল যেমন প্রয়োজনীয় তেমন উপকারীও।
দেশে প্রতি বছর প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল প্রয়োজন হয়। যার বেশির ভাগই সয়াবিন ও পামওয়েল। ভোজ্যতেলের বিপুল চাহিদার বিপরীতে অভ্যন্তরীণভাবে মেটানো হয় ১০ শতাংশের মতো । যার ৯৮ ভাগই সরিষার তেল। পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখাসহ আমদানি নির্ভরতা কমাতে চাহিদার ৪০ শতাংশ ভোজ্যতেল স্থানীয়ভাবেই উৎপাদনের লক্ষ্যে সরিষা আবাদ বাড়ানোর কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
সরিষার তেলের উপকারিতা: সরিষার তেল মনোস্যাচুরেটেড ও পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাটে সমৃদ্ধ বলে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর ফলে কার্ডিওভাসকুলার তথা হৃদরোগের ঝুঁকি কমে; সরিষার তেলে উপস্থিত গ্লুকোসুনোলেট এবং মিরোসিনেস নামে দুটি উপাদান শরীরে ক্যান্সার সেলের বৃদ্ধি প্রতিরোধে গুরুতপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কোলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ক্যানসার থেকে সুরক্ষা প্রদান করে; সরিষার তেলের অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি ব্যকটেরিয়া ও ছত্রাকের ক্ষতিকারক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে; সরিষার তেলে থাকা ওমেগা-৩, ওমেগা-৬ ফ্যাটিঅ্যাসিড এবং ভিটামিন-ই শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়; সরিষার তেলে রয়েছে কপার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং সেলেনিয়াম। এই খনিজগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেলেনিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম আর্থ্রাইটিসের প্রদাহ (হাড়ের রোগ) কমানোর পাশাপাশি এই রোগের প্রকোপ হ্রাসেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে;  সরিষার তেল পরিপাক, রক্ত সংবহন ও রেচনতন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে; সরিষার তেলের ঝাঁঝালো উপাদান শ্লেষ্মা এবং অবরুদ্ধ সাইনাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে; রান্নায় সরিষার তেল সয়াবিন তেলের থেকে কম পরিমাণে লাগে। এতে শরীরে ক্যালরি বাড়ার আশঙ্কাও কমে যায়; এ তেলের রয়েছে উচ্চমাত্রার স্মোক পয়েন্ট, যা বেশি তাপমাত্রার রান্নার জন্য উপযোগী।
করোনাভাইরাস মহামারী আমাদেরকে সুস্বাস্থ্য রক্ষায় আরও বেশি সতর্ক করে তুলেছে। সঠিক খাবার গ্রহণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। রান্নায় সরিষা তেলের ব্যবহার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আশ্চর্যজনকভাবে। সে সাথে সরিষার তেলের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে আমদানি নির্ভরতা কমবে, সাশ্রয় হবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা।
‘স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরিষার তেল খান। দেশের উৎপাদিত তেল ব্যবহার করে আমদানি নির্ভরতা কমান।’

লেখক : উপপরিচালক (গণযোগাযোগ), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। মোবাইল : ০১৯১১০১৯৬১০ ই-মেইল : manzur_1980@yahoo.com

বিস্তারিত
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় আগাছানাশকের সুষ্ঠু ব্যবহার

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় আগাছানাশকের সুষ্ঠু ব্যবহার
কৃষিবিদ মোহাম্মদ সাইফুল আলম সরকার
মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সুজলা-সুফলা আমাদের বাংলাদেশ। আমাদের এই ছোট্ট দেশটিকে আজকের অবস্থানে আসতে কৃষি, কৃষক এবং  কৃষিবিজ্ঞানী রেখেছে অসামান্য অবদান। স্বাধীনতার ঠিক পরবর্তী সময়ে যেখানে সাত কোটি মানুষের দু’বেলা খাবারের চাহিদা মেটানো এক দুঃস্বপ্ন ছিল সেখানে বিগত পঞ্চাশ বছর যাবত প্রতিনিয়ত কমে আসা চাষযোগ্য জমিতে ষোল কোটি মানুষের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে  বাংলাদেশ আজ একটি খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। কৃষিতে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষির ধরনও আমূল পাল্টে গেছে। নিকট অতীতেও ফসলের বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতি ধাপই ছিল পুরোপুরি শ্রমনির্ভর, যা বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্রের কল্যাণে যান্ত্রিক কৃষিতে রূপান্তর। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আগাছানাশকের সমন্বয়ে  আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি প্রতি একক জমি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশ সময় সাশ্রয়ীও বটে।
ফসলে রোগব্যাধি ও পোকামাকড়ের পাশাপাশি আগাছাও বেশ ক্ষতিসাধন করে থাকে। বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইন নামক একটি গবেষণা জর্নালে প্রকাশিত কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ময়মনসিংহের সদর উপজেলায় পরিচালিত এক মাঠ গবেষণায় দেখা যায় যে, ঐ এলাকায় ধান ও গমক্ষেতে যথাক্রমে ২৫ ও ২৯ ধরনের আগাছা থাকে (সূত্র: ঔ. ইধহমষধফবংয অমৎরষ. টহরা. ১৫(২): ১৪৮-১৫৭, উবপবসনবৎ ২০১৭)। একই বিভাগ কর্তৃক সিরাজগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় আটটি ফসলের মাঠে পরিচালিত আরেক গবেষণায় ৪০ ধরনের বিভিন্ন আগাছা শনাক্ত করা হয়। উক্ত গবেষণায় বলা হয় যে, আগাছার কারণে ফসলের উৎপাদন প্রায় ৮-৫১ শতাংশ পর্যন্ত কম হতে পারে (সূত্র: উঙও: ১০.৫৪৫৫/ঔইঅট.৭৬১২৩)। যদিও ফসলের মাঠে বিভিন্ন ধরনের আগাছার এই পরিসংখ্যান এলাকাভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে কিন্তু এ বিষয়টি পরিষ্কার যে, আগাছা সব ধরনের ফসল উৎপাদনের জন্যই একটি প্রতিবন্ধকতা।
ফসলের মাঠে আগাছা দমনের বিষয়টি এক সময় ছিল সম্পূর্ণ শ্রমনির্ভর ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার যা সময়ের পরিক্রমায় পাল্টে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্পকারখানায় নানামুখী কর্মসংস্থানের ফলে কৃষি শ্রমিকের বিরাট একটি অংশ পেশা বদলে এসব শিল্পকারখানায় কাজ করছে।  প্রধানত কৃষি শ্রমিকের অপ্রতুলতার পাশাপাশি তুলনামূলক কম খরচে, উচ্চ কার্যকারিতা এবং সময়মত আগাছা নিয়ন্ত্রণে কারণে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনের খরচ কমেছে।   
বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোট বালাইনাশকের পরিমাণ ৩৯.৫৪ হাজার মে. টন যার মধ্যে আগাছানাশকের পরিমাণ ৭.৮৮ হাজার টন (বিবিএস, ২০২১, চিত্র: ১)। আগাছানাশক ব্যবহারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে কৃষিতে ব্যবহৃত মোট বালাইনাশকের প্রায় এক পঞ্চমাংশ আগাছানাশক অথচ ১৯৮৬-৮৭ সালে আগাছানাশক ব্যবহারের পরিমাণ ছিল মাত্র ১০৮ মে. টন (বিবিএস,১৯৯১)। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে ফসলের মাঠে প্রয়োগকৃত রাসায়নিক বালাইনাশক  মাটি, পানি, বাতাস, স্থলজ ও জলজ উদ্ভিদ ইত্যাদির উপর ব্যাপক ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য শুধু উৎপাদনের কথা খেয়াল করে বর্তমান কৃষির নিত্যঅনুষঙ্গ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক আগাছানাশক ফসলে প্রয়োগ করে অল্প সময়ে অল্প খরচে অধিক  ফসল ঘরে তুলতে গিয়ে আমরা যেন আমাদের চারপাশের স্থলজ ও জলজ পরিবেশ তথা গোটা বাস্তুতন্ত্রের কথা ভুলে যাচ্ছি।
মাটিতে  বিভিন্ন প্রকারের উপকারী অণুজীবের উপস্থিতি উদ্ভিদের অস্তিত্বের জন্য একান্ত অপরিহার্য। বাংলাদেশ ধান গবেষেণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক ২০১৫-১৬ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে মাটিতে উপস্থিত সবধরনের উপকারী অনুজীবের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে কমে গেছে। কেরালা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষামতে, আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে প্রকৃতির লাঙল কেঁচোর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমে যাওয়ার পাশাপাশি তিন সপ্তাহের মধ্যে মাটিতে উপস্থিত বিভিন্ন অনুজীবের সংখ্যা প্রায় ৫৬ শতাংশ হ্রাস পায়। কিছু কিছু আগাছানাশক এমন আছে যেগুলো মাটিতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত উপস্থিত থাকে যেমন:- অ্যামিনো মিথাইল ফসফোনিক এসিড (এএমপিএ)। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে এসব আগাছানাশক জলজ পরিবেশের জন্যও হুমকিস্বরূপ। শুধুমাত্র বাংলাদেশই নয় বরং সারা বিশ্বেজুড়ে ফসলের মাঠে আগাছানাশক মাটি ও পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। কয়েকটি দেশের মাটি ও পানিতে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের আগাছানাশকের পরিমাণ টেবিল দ্রষ্টব্য।
বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা মানবগোষ্ঠী জীবনধারার স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মান রক্ষা করা, বিশেষত উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনসংখ্যার উপর কি প্রভাব ফেলতে পারে বিশ্বজুড়ে এরুপ বেশ কিছু গবেষণা চলমান আছে। গ্লাইফসফেট বিশ্বজুড়ে বহুল ব্যবহৃত একটি আগাছানাশক। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা মতে গ্লাইফসফেট একটি কারসেনোজেনিক রাসায়নিক দ্রব্য যা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য ব্যাপকভাবে দায়ী। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রির্সাচ অন ক্যান্সার, ফ্রান্সের  গবেষণায় এটি সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে যে, গ্লাইফসফেট প্রাণীদেহের ডিএনএ এর কার্যকারিতা নষ্ট করে ক্যান্সার তৈরি করতে সাহায্য করে। ইউরোপিয়ান কেমিক্যাল এজেন্সির মতে গ্লাইফসফেট চোখের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি জলজ প্রাণির জন্য হুমকিস্বরূপ। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সাইন্স, বেঙ্গালুরের তথ্য মতে, গ্লাইফসফেট  পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এজন্য বিশ্বের ৩৫টি দেশে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
বিশেষত উন্নয়নশীল দেশে আগাছানাশক প্রয়োগের সময় যথেষ্ট নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার না করার কারণে কৃষকরা বেশ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে উন্নয়নশীল দেশের ২৮.৯ শতাংশ মানুষ আগাছানাশক পরিবহন, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহারে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকে। তাছাড়া অবশিষ্ট মানুষের অধিকাংশই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার করে কিভাবে নিরাপদে আগাছানাশক প্রয়োগ করবে এ ব্যাপারে কোন ন্যূনতম প্রশিক্ষণও পায় না।
ফসল বিশেষত, শাক ও সবজি উৎপাদন করতে নির্বিচারে ব্যবহৃত এসব আগাছানাশক গোটা পরিবেশ তথা বাস্তুতন্ত্রের পাশাপাশি আমাদের পুরো খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাকেই বিষাক্ত করে তুলছে। যেমন: নিড়ানি ছাড়া রাসায়নিক উপায়ে পাটের আগাছা দমন করতে গিয়ে বর্তমানে গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম, ইথোক্সি সালফুরান, ফেনক্সপপ-পি ইথাইল ব্যবহারের ফলে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ পাটশাকও অনিরাপদ হয়ে গেছে। ফলে বন্ধ্যাত¦তা, লিভার, কিডনি, ফুসফুসের ক্যান্সার ও মানসিক প্রতিবন্ধীতাসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১.৫ মিলিয়ন।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য এখনই সময়। কৃষিতাত্ত্বিক উপায়ে আগাছা দমন যেমন: ভালভাবে জমি চাষাবাদ, উপযুক্ত সময় নির্বাচন, শস্য আর্বতন ইত্যাদি হল প্রচলিত পদ্ধতির আগাছা দমন ব্যবস্থা। অধিকাংশ সবজি ফসলেই মালচিং ব্যবহার করা সম্ভব এবং ফলশ্রুতিতে একদিকে যেমন সহজে আগাছা দমন হয় অন্যদিকে ইউরিয়াসহ বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও পানির  বাষ্পীভবন রোধ করে ফসল উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব। এছাড়া পলিথিন মালচিং মাটিতে উপস্থিত বিভিন্ন উপকারী অনুজীবের কার্যকারিতা বৃদ্ধির করে। পলিথিন মালচিংয়ের আরেকটি সুবিধা হল এটি একাধিকবার ব্যবহার করা যায়।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভেষজ নির্যাস ও অনুজীব বিশেষত ছত্রাক জৈব আগাছানাশক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন উদ্ভিদের অ্যালকোহলিক ও ফেনলিক নির্যাস ফসলি জমির আগাছাকে উল্লেখযোগ্যভাবে দমন করতে পারে যেমন: ঝ. নরপড়ষড়ৎ, ঈুহধৎধ পধৎফঁহপঁষঁং, ইৎধংংরপধ হরমৎধ, ঈরংঃঁং ষধফধহরভবৎ ইত্যাদি উদ্ভিদের নির্যাস ধান সয়াবিনসহ বেশ কিছু ফসলের আগাছা কার্যকরভাবে দমন করতে পারে। তেমনি কিছু সংখ্যক ছত্রাকও যেমন:  অংপড়পযুঃধ ধমৎড়ঢ়ুৎরহধ, ঋঁংধৎরঁস ভঁলরশঁৎড়র, চযড়সধ যবৎনধৎঁস আগাছা দমনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে (সূত্র: যঃঃঢ়ং://ফড়র.ড়ৎম/১০.৩৩৯০/ঢ়ষধহঃং১০০৬১২১২)। তবে ব্যাপক পরিসরে এধরনের জৈব আগাছানাশক ব্যবহার করতে হলে এ বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। এছাড়াও সরকারের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যেন, পর্যাপ্ত যাচাই বাছাই ব্যতীরেখে কোন প্রকার রাসায়নিক আগাছানাশক আমদানি করতে না পারে। এক কথায়, ফসল উৎপাদক তথা কৃষক, ভোক্তা, কৃষি গবেষক ও সরকার সকলের সম্বনিত আন্তরিক প্রচেষ্টাই পারে আমাদের আগামীর কৃষিকে অধিকতর নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও সুসংহত করতে।

লেখক : বিজ্ঞানী (ফলিত গবেষণা), পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা প্রকল্প, পাটের কৃষি পরীক্ষা কেন্দ্র, জাগীর, মানিকগঞ্জ, মোবাইল: ০১৬৯০-০৫৭৫৭৭, ইমেইল:saiful.barj@gmail.com

বিস্তারিত
মহিষের বিভিন্ন জাত

মহিষের বিভিন্ন জাত
মোঃ ওমর ফারুক১ মোঃ শাহেদ হোসেন২ মাহমুদা বিলকিস বিনতে আলম৩ আব্দুল্লøাহ ইবনে৪
জাত একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির অন্তÍর্ভুত একদল পশু যাদের ওই প্রজাতির অন্তÍর্ভুত অন্য পশুদলের তুলনায় সুপ্রতিষ্ঠিত ও পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্য থাকবে এবং ওই বৈশিষ্ট্যসমূহ বংশাণুক্রমে সন্তÍানাদিতে প্রকাশ পাবে। একটি জাতের অন্তÍর্ভুত সকল পশুর একই বৈশিষ্ট্য থাকবে, একই রকম দেখাবে এবং কৌলিক গঠন একই হবে। মুরাহ, নিলি-রাভি, জাফরাবাদি। এরা সবাই মহিষ প্রজাতির অন্তÍর্ভুত, কিন্তু এদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। প্রত্যেক জাতের নির্দিষ্ট গায়ের রঙ, দৈহিক গঠন, দুধের উৎপাদন ক্ষমতা আছে যার মাধ্যমে একটি জাতকে অন্য আর একটি জাত থেকে পৃথক করা যায়।
পশুর দুধ ও মাংস উৎপাদন মূলত জাত বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভরশীল; ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ তা প্রকাশে সাহায্য করে। উদাহরণ হিসেবে আমাদের দেশের দেশী মহিষ ও মুরাহ জাতের মহিষের দুধ ও ওজন বিবেচনা করা যায়। দেশী মহিষ গাভীর দৈনিক গড় দুধ উৎপাদন ও বয়স্ক গাভীর ওজন যথাক্রমে ১.৮৫ কেজি ও ২৫০.০০ কেজি, অপরপক্ষে একই ব্যবস্থাপনায় মুরাহ জাতের গাভীর দৈনিক গড় দুধ উৎপাদন ও বয়স্ক গাভীর ওজন যথাক্রমে ৭.০০ কেজি ও ৫০০.০০ কেজি। দেশী মহিষ গাভীকে বেশি বেশি ভালো খাবার দিলে, ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে, ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থা করলে ওই দেশী মহিষ গাভীর দৈনিক গড় দুধ উৎপাদন ও বয়স্ক গাভীর ওজন বড় জোড় যথাক্রমে ২.৫০ কেজি ও ২৭৫.০০ কেজি হতে পারে, ওই দেশী মহিষ গাভীর দৈনিক গড় দুধ উৎপাদন ও বয়স্ক গাভীর ওজন কখনোই মুরাহ জাতের সমান হবে না; কারণ প্রত্যেক পশুর দুধ ও মাংস উৎপাদন তার জাত বৈশিষ্ট্যর উপর নির্ভরশীল। এজন্য পশু থেকে কাক্সিক্ষত দুধ ও মাংস উৎপাদন করতে হলে উপযুক্ত জাতের পশু পালন করতে হবে।
মহিষ পালনে খরচ কম, পুষ্টিকর ও নিরাপদ দুধ ও মাংস উৎপাদন করে মহিষ, তবে লাভজনকভাবে মহিষের খামার পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই উপযুক্ত জাতের মহিষ পালন করতে হবে। আমাদের দেশে অনেক খামারির মহিষের জাত সম্বন্ধে সঠিক ধারণা নাই। তাই আমাদের দেশে ও বিশ্বে বিদ্যমান মহিষের জাত সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হচ্ছে।
মহিষ প্রজাতিকে দুটি টাইপে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি টাইপের নাম নদীর মহিষ, অপর টাইপের নাম জলাভূমির মহিষ। নদীর মহিষে স্বীকৃত জাত আছে; জলাভূমির মহিষে স¦ীকৃত জাত নাই। পৃথিবীতে নদীর মহিষের ১৬টি স¦ীকৃত জাত আছে। ভারতে ১৩টি, পাকিস্তানে ২টি ও ইতালিতে ১টি মহিষের জাত আছে। ভারতের মহিষের স¦ীকৃত জাতসমূহ হচ্ছে মুরাহ, বন্নি, জাফরাবাদি, সুরতি, মেহসানা, ভাদওয়ারী, চিলিকা, নাগপুরী, পানধরপুরী, টোডা, কালাহান্ডী, মারাথাডি ও নিলি-রাভী। পাকিস্তানের মহিষের স¦ীকৃত জাতসমূহ হচ্ছে নিলি-রাভী ও কুন্ধী। ইতালির মহিষের স¦ীকৃত জাত হচ্ছে ইতালীয় মেডিটেরিয়ান মহিষ।
এসব জাতসমূহের মধ্যে দুধাল জাতের মহিষের গুরুত্বপূর্ণ জাতসমূহ হচ্ছে- মুরাহ, বন্নি, জাফরাবাদি, সুরতি ও নিলি-রাভী ও ইতালীয় মেডিটেরিয়ান মহিষ। এ সব দুধাল মহিষের জাতের বর্ণনা সারণি দ্রষ্টব্য।
* বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানে  মহিষের দুগ্ধ উৎপাদন কাল আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী (খধপঃধঃরড়হ ঢ়বৎরড়ফ) ৩০০ দিন ধরা হয়।
বাংলাদেশের মহিষ
বাংলাদেশের মহিষের কোন স্বীকৃত জাত নাই। তবে ২টি টাইপ আছে - (ক) জলাভূমির মহিষ ও (খ) নদীর মহিষ
ক) জলাভূমির মহিষ : জলাভূমির মহিষ শুধুমাত্র সিলেট বিভাগের জেলাসমূহে পাওয়া যায়। দেশের মোট মহিষের ১৪% জলাভূমির মহিষ। এসব মহিষের দেহ কোষে ঈযৎড়সড়ংড়সব সংখ্যা ৪৮। গায়ের রং ধূসর, শিং অর্ধচন্দ্রাকৃতির, গলার নিচে ও গলকম্বলে সাদা দাগ আছে এবং হাঁটু থেকে ক্ষুরের উপর পর্যন্ত পায়ের রঙ সাদা। বয়স্ক মহিষের ওজন ৩০০-৩৫০ কেজি হয়। এসব মহিষের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। এসব মহিষ পূর্বে কৃষিকাজ ও ভার বহনের কাজে ব্যবহৃত হলেও বর্তমনে মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
(খ) নদীর মহিষ : সিলেট বিভাগ বাদে অন্যান্য বিভাগে বিদ্যমান মহিষ নদীর মহিষ। বাংলাদেশের মোট মহিষের ৮৬% নদীর মহিষ। এসব মহিষের দেহ কোষে ঈযৎড়সড়ংড়সব সংখ্যা ৫০। উৎপত্তি অনুসারে এসব মহিষকে মোট ৪টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় : ১) আদি নদীর মহিষ; ২)  দেশী নদীর মহিষ; ৩) ভারত থেকে আমদানিকৃত উন্নত নদীর মহিষ; ৪)  সংকর জাতের নদীর মহিষ ।
আদি নদীর মহিষ : এ শ্রেণীর মহিষ অনাদিকাল থেকে বাংলাদেশে বিরাজমান এবং অন্য কোন মহিষের জাতের জীন এদের দেহে নাই। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জেলাসমূহে এসব মহিষ পাওয়া যায়। এসব মহিষ মুক্ত ব্যবস্থাপনায় পালন করা হয়। এসব মহিষ দেখতে জলাভূমির মহিষের ন্যায়, তবে এদের শিং জলাভূমির মহিষের তুলানায় সরু এবং শিং এর গোড়ার প্রশস্ততা জলাভূমির মহিষের শিং এর গোড়ার প্রশস্ততার চেয়ে কম। বয়স্ক মহিষের ওজন ২৫০-৩০০ কেজি হয়। এদের দুধ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয় যদিও দুধ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। ২৭৪ দিনে মাত্র ৩০০-৩৫০ কেজি দুধ উৎপাদন করে।
দেশী নদীর মহিষ : ভারত থেকে বিভিন্ন সময় বেসরকারিভাবে আমদানিকৃত মহিষের মধ্যে সমাগম ও বাছাই এর মাধ্যমে দুধাল জাতের এ মহিষসমূহের সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর চরাঞ্চলে এ মহিষসমূহ পালন করা হয়। এসব মহিষ অর্ধমুক্ত ব্যবস্থাপনায় পালন করা হয়। এদের গয়ের রঙ কাল, শিং এর নির্দিষ্ট কোন আকৃতি নাই। বয়স্ক মহিষের ওজন ৩০০-৩৫০ কেজি হয়। দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০ দিনে ৫০০-৫৫০ কেজি।
ভারত থেকে আমদানিকৃত উন্নত নদীর মহিষ : ভারত থেকে বেসরকারিভাবে সদ্য আমদানিকৃত দুধাল মহিষ দ্বারা এ মহিষ দল সৃষ্টি হয়েছে। এসব মহিষে ভারতের মহিষের স¦ীকৃত জাতসমূহের বৈশিষ্ট্য নাই; এসব মহিষ ভারতের মহিষের স¦ীকৃত জাতসমূহের শংকর। পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর চরাঞ্চলে এ মহিষ অর্ধমুক্ত অথবা মুক্ত ব্যবস্থাপনায় পালন করা হয়।  এদের গায়ের রং কাল, শিং এর নিদির্ষ্ট কোন আকৃতি নাই; কোন মহিষের লেজের চুল ও হাঁটুর নিচের অংশ সাদা হয়। বয়স্ক মহিষের ওজন ৩০০-৫০০ কেজি হয়। দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০ দিনে ৭৫০-৮৫০ কেজি।
সংকর জাতের নদীর মহিষ : বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দ্বীপসমূহে বিশেষত চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলার দ্বীপসমূহে ১৯৬০ থেকে নীলি-রাভী জাতের মহিষের ষাঁড় দ্বারা বাংলাদেশের আদি নদীর মহিষের গাভীকে প্রাকৃতিক সমাগম পদ্ধতির মাধ্যমে নীলি-রাভী ী আদি নদীর মহিষের শংকর জাতের মহিষ সৃষ্টি হচ্ছে। এসব মহিষের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বহুরূপতা দেখা যায়। এসব মহিষ দুধ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়। ২৭০ দিনে এদের দুধ উৎপাদন ৫০০-৭০০ কেজি।
২০২১ থেকে ইটালিয়ান মেডিটেরিয়ান মহিষ ও মুরাহ্ মহিষের বীজ বাংলাদেশের মহিষকে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যেগে  কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে শংকর জাতের মহিষ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব বাছুর এখনো উৎপাদনে আসে নাই।
গড়ঋখ (২০০৭) অনুসারে বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত মহিষের জাত
আবদ্ধ ব্যবস্থাপনায় পালনকৃত মহিষ খামারে বিদ্যমান প্রজনন নীতিমালা ও খামার পরিচালনার ব্যয় বিবেচনা করে বিশুদ্ধ মুরাহ জাতের মহিষ অথবা উন্নত নদীর - যেসব ৩০০ দিনে ১৫০০ কেজির বেশি দুধ দেয় -ওইসব মহিষ পালন করা উচিত।
২. অর্ধমুক্ত অথবা মুক্ত ব্যবস্থাপনায় পালনকৃত মহিষ খামারে বিদ্যমান প্রজনন নীতিমালা ও খামার পরিচালনার ব্যয় বিবেচনা করে ৫০% দেশী ঢ ৫০% মুরাহ/ইটালিয়ান মেডিটেরিয়ান মহিষ পালন করা উচিত।

লেখক : ১পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ  কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ; ২মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামার, সাভার; ৩মাসকান্দা, ময়মনসিংহ; ৪একমি ল্যাবরেটরিজ লিঃ, সাভার। মোবাইল : ০১৭১৪০৭৪৩৫, ই-মেইল : faruque_mdomar@yahoo.com

বিস্তারিত
জলাশয়ের শত্রুখ্যাত সাকার মাছ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহারের কলাকৌশল

জলাশয়ের শত্রুখ্যাত সাকার মাছ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহারের কলাকৌশল
মোঃ মাসুদ রানা
সাকার মাছের প্রকৃত নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ বা কাঁইটা সাকার বা চোষকমুখী যার বৈজ্ঞানিক নাম ঐুঢ়ড়ংঃড়সঁং চষবপড়ংঃড়সঁং। এটি খড়ৎরপধৎররফধব পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।আশির দশকে শেঁওলা ও ময়লা পরিষ্কার করে অ্যাকোয়ারিয়ামের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য এই মাছ বিদেশ থেকে বাংলাদেশ আনা হয়। সাকার মাউথ ক্যাটফিশের প্রকৃত নিবাস দক্ষিণ আমেরিকায় কিন্তু বর্তমানে ভারত, চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের জলাশয়ে ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। এই মাছের পিঠের ওপরে বড় ও ধারালো পাখনা আছে এবং দুই পাশেও রয়েছে একই রকমের ধারালো দুটি পাখনা। মাছের চামড়া খুব শক্ত ও ধারালো যার পুরোটা জুড়ে ডোড়াকাটা দাগ বিদ্যমান।  সাকার মাছের দাঁত বেশ শক্ত, অমসৃণ এবং অত্যন্ত ধারালো। এই মাছের প্রধান খাবার হলো জলাশয়ের আগাছা, জলজ পোকামাকড়, ছোট মাছ, মাছ ও অনান্য জলজ প্রাণীর লার্ভা। যেসব পানিতে দূষণের কারণে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায়, যেখানে অন্য কোন মাছ বাঁচতে পারে না, সেই পরিবেশে এই মাছ শুধু বেঁচেই থাকে না বরং সঠিকভাবে বংশবৃদ্ধিও করতে পারে এমনকি পানি ছাড়াও মাছটি প্রায় ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে। সাকার মাউথ ক্যাটফিশের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর রক্তে প্রচুর পরিমাণ ল্যাকটেট বিদ্যমান যা পরিবেশের টক্সিসিটিকে দূরীভূত করে বেঁচে থাকতে পারে ফলশ্রুতিতে যে কোন জলাশয়ের অতি মাত্রার বিষাক্ততা সহ্য করে বাঁচতে পারে। বাংলাদেশের ৮ বিভাগের প্রায় সকল বিল, নদ-নদী এমনকি চাষের পুকুরেও ব্যাপকভাবে সাকার মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ মাছের সর্বোচ্চ ওজন ১ কেজি ৯০০ গ্রাম প্রায়।
বাংলাদেশের উন্মুক্ত প্রায় সকল জলাশয়ে দিন দিন এ মাছের সংখ্যা বেড়েই চলছে যার ফলে একই সাথে জলাশয়ের ছোট প্রজাতির মাছের পরিমাণ কমছে পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশে বংশবৃদ্ধি করা মাছের প্রজাতির সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে কমছে। এর প্রকৃত কারণ হলো এ মাছ জলাশয়ের ছোট মাছ ও মাছসহ অনান্য জলজ প্রাণীর ডিম, লার্ভা খেয়ে ফেলে। জলজ পরিবেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য যে সকল প্রাণীর ভূমিকা অপরিসীম তাদের প্রজাতি বিনষ্ট হওয়ার পেছনে এ মাছ মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সাকার মাছের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশের জলাশয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে ছোট প্রজাতির মাছসহ অনান্য মাছ যারা প্রাকৃতিক পরিবেশে বংশবৃদ্ধি করে তাদের বিলুপ্তি ঘটবে। ইতোমধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়াধীন মৎস্য অধিদপ্তর মাছটিকে জলাশয়ের শত্রু হিসেবে ‘রেড এলার্ট’ জারি করেছে। দেশে মাছটিকে নিয়ে শংকা দেখা দেওয়ায় মৎস্য অধিদপ্তর দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মহলে সভা করে মাছটি যেখানে পাওয়া যাক না কেন তা মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। দেশে প্রাপ্ত সাকার মাছের মধ্যে প্রাপ্যতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের অন্যান্য নদ নদীর তুলনায় বুড়িগঙ্গা নদীতে এ মাছের সংখ্যা অনেকগুণ বেশি। বুড়িগঙ্গা নদীর যে সকল এলাকায় অন্যান্য মাছ পাওয়া দুষ্কর সেখানে এ মাছের সংখ্যা অনেক বেশি। বুড়িগঙ্গা নদীর বিভিন্ন এলাকায় নৌকা নিয়ে মাছধরা জেলেদের সাথে কথা বলে গবেষকদল দেখেন বুড়িগঙ্গায় আগে যেখানে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির  মাছ পাওয়া যেত, সেখানে সাকার মাছের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশীয় প্রজাতির মাছ আর পাওয়া যায় না। এর অন্যতম কারণ হিসেবে গবেষক দল মাছটির ক্যানিবালিজম স্বভাবকেই দায়ী করছেন। বুড়িগঙ্গায় জাল ফেললেই জালে এত পরিমাণ সাকার মাছ ধরা পড়ে যে তাদের গায়ের কাঁটার ধারালোতে জেলের জাল ছিড়ে যায়। ফলে জেলেরা আর্থিকভাবে লোকসানের সম্মুখীন হোন। তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীতে মাছ ধরে যে সকল জেলে সংসারের ভোরণ-পোষণ চালাতেন তাদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় প্রবেশ করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ মাছের পরিধি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জলজ পরিবেশের পাশাপাশি জেলে সম্প্রদায়ের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
দেশে সাকার মাছ নিয়ে যখন থেকে উদ্বেগ শুরু হয় ঠিক তখন থেকেই জলজ পরিবেশের জীববৈচিত্র্যের উপর এই মাছের বিরূপ প্রভাব, নিয়ন্ত্রণ ও সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে সাকার মাছকে সম্পদে পরিণত করা যায় তার উপর ব্যাপকভাবে গবেষণা চলমান রেখেছে ঢাকাস্থ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। গবেষণা দলের প্রধান হিসেবে কাজ করছি। আমি মোঃ মাসুদ রানা, সহকারী অধ্যাপক, ফিশিং অ্যান্ড পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ, শেকৃবি এবং গবেষণাকর্মটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবীব, ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগ, শেকৃবি, ঢাকা। গবেষক দল দেশের ৮টি বিভাগে প্রাপ্ত সাকার মাছ সংগ্রহ করে তার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য, ডিএনএ সিকুয়েন্সিংও বারকোডিং এবং ফাইলোজেনেটিক ট্রি অ্যানালাইসিস করে। বাংলাদেশের জলাশয়ে কত প্রজাতির সাকার মাছ ছড়িয়ে পড়েছে তা নিয়ে ব্যাপক কাজ করে দেশের অভ্যন্তরে দুই প্রজাতির সাকার মাউথ ক্যাট ফিশ বিদ্যমান। এ ছাড়াও গবেষক দল সাকার মাছের শরীরে প্রাপ্ত ভারী ধাতু (লেড, মার্কারি, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক) ও পুষ্টি গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করেন, গবেষণায় দেখা গেছে সাকার মাউথ ক্যাটফিশে প্রায় ২৫% আমিষ, ৩.৭৮% চর্বি, প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও মিনারেলস বিদ্যমান। দেশের বিভিন্ন জলাশয় থেকে প্রাপ্ত সাকার মাছের নমুনার ভারী ধাতু বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সাকার মাছের শরীরে ভারী ধাতুসমূহ যুক্ত হয়। জলজ পরিবেশ থেকে যে জলাশয়ের মাটি ও পানিতে ভারী ধাতুর পরিমাণ বেশি সে সকল জলাশয়ে প্রাপ্ত সাকার মাছের শরীরে ভারী ধাতুর পরিমাণও বেশি। সামগ্রিক বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, যে সকল এলাকার জলাশয়ের আশে পাশে কল-কারখানা বেশি সে সকল এলাকায় যেহেতু প্রচুর পরিমাণে কল-কারখানার বর্জ্য নিঃসরণ হওয়ার যেহেতু পানিতে ভারী ধাতুর পরিমাণও বেশি; যে সকল জলাশয়ে প্রাপ্ত সাকার মাছের শরীরে ভারী ধাতুর পরিমাণও বেশি। গবেষণায় গবেষকদল বাংলাদেশের বিভিন্ন পুকুর, বিল ও নদ-নদীর মধ্যে তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীর সাকার মাছে মানব শরীরের সহনীয় মাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণে ভারী ধাতুর উপস্থিতি পেয়েছে এবং তার কারণ হিসেবে তারা ঢাকা শহরের আশেপাশে কলকারখানার সংখ্যা ও নিঃসরিত বর্জ্যরে কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন। কিন্তু তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় নমুনায়িত মাছের শরীরে মানবদেহের সহনীয় মাত্রার চেয়ে কম পরিমাণ ভারী ধাতুর উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন।
গবেষণা প্রাপ্ত ফলাফল থেকে বাংলাদেশে সাকার মাছের বিস্তৃতি রোধে নিম্নলিখিত কলাকৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
১. সাকার মাছ যেহেতু দ্রুত সময়ের মধ্যে বংশ বৃদ্ধি করে তাই এটিকে ধরে মাটিতে পুঁতে ফেলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর নয়, ২. সাকার মাছের প্রাচুর্য্যতা নিয়ন্ত্রণে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে; সাকার মাছে প্রায় ২৫ শতাংশ আমিষ ও অন্যান্য পুষ্টিমান বিদ্যমান। তাই মাছটিকে সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব; ৩. সাকার মাছে যেহেতু এ পর্যন্ত কোন বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি প্রতীয়মান হয়নি সেহেতু মাছটিকে খাবারের প্লেটে সংযোজন করলে এবং বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিলে মাছটির আহরণ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে এবং জলাশয়ে এর সংখ্যাও কমবে; ৪. মাছসহ অন্যান্য প্রাণী খাদ্যে আমিষের উৎস হিসেবে মাছের শুঁটকি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেখানে ৬০% আমিষ থাকে, সাকার মাছের শুঁটকিতে প্রায় ৬৫-৭০% আমিষ বিদ্যমান, ফলে সাকার মাছ প্রাণী খাদ্যের আমিষের জোগানে এক অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিতে পারে; ৫. যেহেতু বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর সাকার মাছের শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে তাই এ দুই উৎস ব্যতীত অন্যান্য পুকুর, বিল ও নদ-নদীর সাকার মাছ ভক্ষণ বা প্রাণী খাদ্যে ব্যবহারে কোন বাঁধা নাই; ৬. মানুষ্যের খাদ্য বা প্রাণী খাদ্যের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার ছাড়াও এটি দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মৎস্য উপজাত পণ্য হিসেবে ব্যবহার করেও এই মাছটিকে নিয়ন্ত্রণ ও নিধন করা সম্ভব।
পরিশেষে বলা যায় যে, সাকার মাছ যেহেতু দেশের জলাশয়ের জন্য হুমকিস্বরূপ সেহেতু এটিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় পর্যায়ে এর বহুমুখী ব্যবহারে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সাকার মাছকে ধ্বংস না করে এর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে জলাশয়ের শত্রুখ্যাত মাছটি জাতীয় অর্থনিতীতে ভূমিকা রাখতে পারবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা; মোবাইল : ০১৭৪৫৬২৬১৫৩, ই-মেইল : fpht@sau.cdu.bd

বিস্তারিত
মাটিতে জৈব পদার্থ সরবরাহে ফসলভেদে সবুজসার

মাটিতে জৈব পদার্থ সরবরাহে ফসলভেদে সবুজসার
নাহিদ বিন রফিক
এক বিশেষ ধরনের ফসল জমিতে চাষ করে নির্দিষ্ট বয়সে সবুজ ও নরম অবস্থায় মাটিতে মিশিয়ে যে সার তৈরি করা হয় তাকে সবুজ সার বলে। আর যে উদ্ভিদ এ ধরনের সার সরবরাহ করে তাকে বলা হয় সবুজসার ফসল। এ জাতীয় উদ্ভিদের মধ্যে ধৈঞ্চা, শনপাট, মাশকালাই, কাউপি, বরবটি, খেসারি, মসুর, শিম, মুগ অন্যতম। বর্তমানে দেশি ধৈঞ্চার পাশাপাশি আফ্রিকান ধৈঞ্চার চাষ হয়, যার শিকড়ে রাইজোবিয়াম নামক ব্যাকটেরিয়ার নডিউল বা গুঁটি তৈরি করে। এ ধরনের গুঁটি কা-েও দেখা যায়।  ধৈঞ্চা, বীজ ও কা-ের সাহায্যে বংশবিস্তার করে। আর তা ভেজা ও শুকনো উভয় মাটিতে বছরের  যেকোনো সময় রোপণ করা সম্ভব। সবুজসার এক প্রকার জৈবসার। লিগিউম কিংবা লিগিউম নয় উভয় প্রকার উদ্ভিদ দ্বারা সবুজসার তৈরি করা যায়।
সবুজসার ফসলের বৈশিষ্ট্য : দ্রুত বর্ধনশীল। অপেক্ষাকৃত অনুর্বর মাটিতেও ভাল জন্মে। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। সাময়িক খরা কিংবা জলাবদ্ধতা সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে। রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। সহজেই মাটিতে মেশানো যায়। মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে। শিমজাতীয় উদ্ভিদ দ্বারা তৈরি সবুজসার এ রাইজোবিয়াম নামক ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে শিকড়ে নডিউল তৈরি করে, যা নাইট্রোজেন ধরে রাখে।
উপকারিতা : সবুজসার জৈব পদার্থ যোগ করে মাটিকে উর্বর করে এবং মাটির ভৌত গুণাবলীর উন্নতি সাধন করে। অধিকাংশ সবুজসার ফসল লিগিউমজাতীয়। তাই সহজেই রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়ার সহায়তায় বায়ুম-লের নাইট্রোজেনকে শিকড়ের নডিউলে জমা করতে পারে। গাছ জীবিত অবস্থায় তা নিজেই গ্রহণ করে। তবে মারা যাওয়ার পর জমাকৃত নাইট্রোজেন মাটির সাথে মিশে যায়, ফলে পরবর্তী আবাদি ফসলে নাইট্রোজেন সার অনেক কম লাগে। সবুজসার ফসল গভীরমূলী হলে মাটির গভীর স্তর থেকে খাদ্যোপাদান পরিশোষণ করার পর মাটির উপরিভাগে এনে দেয়। জৈব পদার্থ যোগের মাধ্যমে সবুজসার মাটির অভ্যন্তরের উপকারী অনুজীবের বংশবিস্তারসহ এদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। জমির খাদ্যোপাদানসমূহকে সংরক্ষণ করে। সবুজসার জৈব পদার্থ বিয়োজনের সময় উৎপাদিত জৈব এসিডে ফসফরাসের প্রাপ্যতা বাড়ায়। জমিতে আর্দ্রতা বৃদ্ধি অবস্থা বা ‘জো’ বজায় রাখতে সাহায্যে করে। বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায় এবং মাটিতে বাতাস চলাচলে সাহায্যে করে। ভূমিক্ষয় রোধ করে। ফসল বিন্যাসের ক্ষেত্রে সবুজসার ফসল সহজেই খাপখাইয়ে নেয়। দ্রুত বৃদ্ধি হওয়ায় আগাছা ও অন্যান্য গাছপালা বৃদ্ধি হতে পারে না ফলে আগাছা দমনেও সহায়তা করে।
মাটিতে মেশানোর পদ্ধতি : সবুজসার ফসল যে জমিতে জন্মানো হয়, সাধারণত সে জমির মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। অথবা মেশিনের মাধ্যমে চাষাবাদ করে মেশানো যেতে পারে। তবে এক জমিতে জন্মিয়ে অন্য জমিতে স্থানান্তর করেও মেশানো যায়। গাছের রঙ সবুজ থাকতেই অর্থাৎ কচি অবস্থায় কেটে টুকরো টুকরো করে প্রথমে মই দিয়ে পরে চাষ দিতে হবে অথবা মেশিনের মাধ্যমে চাষাবাদ করে মেশানো যেতে পারে। মেশানোর সময় জমিতে ছিপছিপে পানি থাকা উত্তম। কারণ এতে পচনক্রিয়া দ্রুত হয়। তবে লিগিউম জাতীয় উদ্ভিদ যেমন-রেইন্ট্রি, ইপিল-ইপিল, গ্লিরিসিডিয়া প্রভৃতির পাতা জমিতে বিছিয়ে দিয়ে চাষ দিলেই হবে।
জৈবসার হচ্ছে মাটির প্রাণ, যার উৎস হিসেবে সবুজসার ফসলের ভূমিকা অনন্য। অধিক পরিমাণে সবুজসার ফসল চাষ করে জমিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি পূরণ এবং উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এতে একদিকে ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে মাটির স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।লেখক : টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বরিশাল, মোবাইল নম্বর: ০১৭১৫৪৫২০২৬,  ই-মেইল:tpnahid@gmail.com

 

বিস্তারিত
পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৃক্ষরোপণ

পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৃক্ষরোপণ
কৃষিবিদ মোঃ তারিক হাসান
র্তমান পৃথিবীতে মানবজাতির মারাত্মক কয়েকটি সমস্যার মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস এবং পরিবেশের ক্রমবর্ধমান ভারসাম্যহীনতাই প্রধান। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সীমাহীন আহরণ যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে তা শুধুমাত্র স্বাস্থ্য অথবা আবহাওয়ার স্বাভাবিকতাই নষ্ট করছে না বরং বহু অঞ্চলের ফসল উৎপাদন প্রচ-ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে খাদ্য সমস্যাকেও প্রকট করে তুলেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণে যে প্রাকৃতিক সম্পদটি সবচেয়ে বলিষ্ঠ প্রভাব রাখছে তা হচ্ছে বনজ সম্পদ। বনই মানুষের আদি বসতি এবং মানবসভ্যতার পথ প্রদর্শক ও প্রধান বাহন। বৃক্ষ আজও মানুষকে সভ্যতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষ সভ্যতার জয়রথ চেপে এমন অবস্থার সৃষ্টি করছে যে, তার বসতির জন্য এবং তথাকথিত উন্নয়ন ঘটাতে গিয়ে নির্বিচারে বন ধ্বংস করে সৃষ্টি করছে বনহীন প্রান্তর।
বর্তমান শতাব্দীর শুরুতে গ্রীষ্মম-লীয় বনাঞ্চলের পরিমাণ যেখানে ছিল প্রায় ১৫০ কোটি হেক্টর, ক্রমাগত আহরণ ও ধ্বংসের কারণে বর্তমানে এ পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় অর্ধেকের নিচে। প্রতি বছর গ্রীষ্মম-লীয় এলাকায় ১১০ লাখ হেক্টর করে বনভূমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শতাব্দীর শেষে তাই আশংকা করা হচ্ছে মূলীয় বনের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি বিলীন হয়ে যাবে, যদি না এখনি কোন জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। গত ২০ বছরে আফ্রিকা ও নিকট প্রাচ্যে মাথাপিছু ৫০ ভাগ এবং ল্যাটিন আমেরিকা ও দূরপ্রাচ্যে মাথাপিছু ৪০ ভাগ বন কমে গেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণে গাছের ভূমিকা অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও স্পষ্ট। তাই পরিবেশকে সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করতে হলে বনভূমিকে রক্ষা করা দরকার। কারণ বাতাসের দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস গাছপালা গ্রহণ করে বিশুদ্ধ অক্সিজেন বাতাসে ত্যাগ করে দেয়। মানুষসহ অন্যান্য জীব জগতে জীবন ধারণের জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য। শিল্প কারখানা এবং যান্ত্রিক যানবাহনে ব্যবহৃত জ্বালানি পোড়ানোর ফলে প্রচুর পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হচ্ছে, কিন্তু বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যে পরিমাণ বনজ সমাহার থাকা আবশ্যক না থাকায় বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে। ১৯৫০ সনে বায়ুম-লে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি মেট্রিক টনের কম বর্তমানে তা বেড়েই দাড়িয়েছে ৬০০ কোটি মেট্রিক টনেরও বেশি। বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রাও বেড়ে যাবে। বিগত ১০০ বছরে বায়ুম-লের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৩ থেকে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বর্তমানে আশংকাজনক হারে বাড়তে থাকলে আগামী ৫০-৬০ বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা গড়ে ৪.০ থেকে ৪.৫ ডিগ্রি সে. বেড়ে যেতে পারে। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যর বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মেরু অঞ্চল ও পার্বত্য অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা ১.০ থেকে ১.৫ মি. পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এ অবস্থার সৃষ্টি হলে সমুদ্র উপকূলীয় বহু অঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যাবে।
সোভিয়েত রাশিয়ার এক সমীক্ষায় জানা গেছে যে, গড়ে এক হেক্টর বন প্রায় ৪ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস টেনে নেয় ও ২ টনের মত অক্সিজেন গ্যাস ছেড়ে দেয় প্রতি বছরে। একইভাবে ভারতীয় পরিবেশবাদীরা সমীক্ষা করে দেখেছে, একটি ১ টন ওজনের আম গাছ ৫০ বছরে যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন উৎপাদন করে, যান্ত্রিক উপায়ে তা করতে গেলে বাংলাদেশি টাকায় এর প্রয়োজন হবে ২০ লাখ টাকা। একইভাবে যেকোন প্রকারের শব্দ বা যানবাহনের হর্ণ বাজার সাথে সাথে ৮৫% গাছপালা শোষণ করে নিয়ে শব্দ দূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে। এর মধ্যে নিম গাছের শোষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি।
ভূমি ক্ষয়রোধে বৃক্ষ বিশেষ অবদান রাখে। ভূমি ক্ষয়ের প্রধান কারণ বায়ু প্রবাহ, বৃষ্টিপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন বা বৃক্ষ এ দুটির গতিকে কমিয়ে দিয়ে ভূমিক্ষয় রোধ করে। মুশলধারে বৃষ্টি হলে বড় গাছের ডালপালা, অন্য ছোট গাছ, এমনকি আগাছা পানির সেই তীব্র বেগকে কমিয়ে দেয়। গাছপালা নিজের বৃদ্ধির জন্য পানির কিছু অংশ ধরে রাখে এবং বাতাসে বাষ্পের আকারে কিছু অংশ আকাশে ফিরিয়ে দেয়। একটি পূর্ণবয়স্ক আম বা কাঁঠাল গাছ গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে ১০০ গ্যালনের মতো পানি বাষ্পীভূত করে বাতাসে ছেঁড়ে দেয় এর ফলে চারপাশের তাপমাত্রা কমে আসে যা এয়ার কুলারের সাহায্যে ৪-৫টি ঘরের শীতল করণের সমান। এমনিভাবে অতি বৃষ্টির প্রভাবে বন্যার সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। বাতাসের বেগ কমিয়ে একটি গাছ তার বিপরীতে যেকোন সম্পদ বা আবাসস্থল রক্ষা করতে এক বিশেষ অবদান রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি পূর্ণবয়স্ক আম, জাম অথবা কাঁঠাল গাছ তার চারপাশের ৭৫% বাতাসের বেগ কমাতে সাহায্য করে, আর গাছের উচ্চতার ২০ গুণ দূরত্বে ২০ ভাগ গতি কমাতে সাহায্য করে। এমনি করেই ঝড়ের গতি কমিয়ে গাছ রক্ষা করে শহর জনপদ এবং সভ্যতা।
আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় জানা যায়, ১ হেক্টর পাইন বন, বাতাস থেকে প্রতি বছর ৩৬ টন ধূলা/ময়লা এবং ১ হেক্টর বীচ গাছের বন প্রায় ৬৮ টন ধুলা/ময়লা নির্গমনে সাহায্য করে। ভারতীয় পরিবেশ বিজ্ঞানীদের বর্ণনায় প্রকৃতপক্ষে একটি বয়ষ্ক বৃক্ষ তার জীবদ্দশায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও জীবজগতে যেসব উপকারী অবদান রাখছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :
ক)  মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বরতা বৃদ্ধি করে    : প্রায় ৫ লাখ টাকার।
খ)  বাতাসের আর্দ্রতা বাড়িয়ে বৃষ্টিপাতের পরিবেশ সৃষ্টি করে    : প্রায় ৫ লাখ টাকার।
গ)  বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা করে : প্রায় ১০ লাখ টাকার।
(ঘ) জীবজন্তুর খাদ্যের জোগান দেয়: প্রায় ৪০ হাজার টাকার।
ঙ)  পাখি/কাঠবিড়ালী ও বৃক্ষনির্ভর প্রাণীর আবাসন সংস্থা : প্রায় ৫ লাখ টাকার।
(চ) জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন সরবরাহ  :  প্রায় ৫ লাখ টাকার।
সুতরাং একটি বয়স্ক বৃক্ষ তার জীবদ্দশায় প্রায় ৩১ লাখ টাকার সম্পদ/উপকরণ আমাদেরকে দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।
বর্ণিত তথ্যে জানা গেল গাছের উপকারী ভূমিকার মধ্যে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক জীবের যথেষ্ট পরিমাণ পানি, বায়ুু, ও খাদ্যের প্রয়োজন। মানুষ কিছু সময় খাদ্য ছাড়া অথবা পানি ছাড়া বাঁচতে পারে কিন্তু বায়ু ছাড়া কয়েক মিনিট বাঁচা সম্ভব নয়। দূষিত বায়ু সাধারণত কলকারখানা, গৃহস্থালীর কয়েক মিনিট কাজকর্ম ও যানবাহন থেকে বেরিয়ে আসে। যারমধ্যে রয়েছে সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, নাইট্রোজেন পারঅক্সাইড, হাইড্রো কার্বন, ক্লোরাইড ইত্যাদি। সমীক্ষায় দেখা গেছে, আন্তদেশীয় মাত্রার একটি এরোপ্লেন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টন অক্সিজেন পোড়ায়। অনুরূপভাবে একটি মোটরগাড়ি প্রতি হাজার কিলোমিটারে একজন মানুষের ১ বছরের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পোড়ায় এবং সমপরিমাণ অক্সিজেন প্রতিটন কয়লা পোড়াতে নষ্ট হয়। এ অবস্থায় অনুমান করা যাচ্ছে যে, ২৪০০ সাল নাগাদ কল-কারখানার প্রয়োজনে গাছপালা কর্তৃক সৃষ্ট অক্সিজেনের শতকরা ৯০ ভাগই শেষ করে ফেলবে, তখন মানুষের ভাগে থাকবে মাত্র ১০ শতাংশ।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন
বাংলাদেশে কাঠ ও জ্বালানি কাঠের বাৎসরিক মাথাপিছু ব্যবহারের হার যথাক্রমে ০.৩৮ ও ৩২.৩ ঘনফুট। কাঠের বর্তমান চাহিদা ৫ কোটি ঘনফুটের মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ঘনফুট এবং জ্বালানি কাঠের চাহিদা প্রায় ২০ কোটি ঘনফুটের মধ্যে ৪ কোটি ঘনফুট বনাঞ্চল থেকে মিটানো সম্ভব হচ্ছে। দেশের বনাঞ্চল থেকে দেশের কাঠ ও জ্বালানির চাহিদা পূরণে সক্ষম হচ্ছে না। এ জন্যই আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ কাঠ ও জ্বালানি ঘাটতি রয়েছে। বর্ধিত জনসংখ্যার সাথে তাল রেখে বনাঞ্চলের পরিধি বাড়াতে না পারলে ঘাটতির পরিমাণ কি বিশাল আকার ধারণ করবে তা অনুমান করে বিশেষজ্ঞরা শংকিত হচ্ছেন। বনাঞ্চলের স্বল্পতার কারণে আমাদের কেবল জ্বালানির অভাবই অনুভূত হবে না, সে সাথে অনুভূত হবে নিত্যব্যবহার্য বহুবিধ সামগ্রীর। কাঠ থেকে বর্তমান বিশ্বে প্রায় দশ হাজার ধরনের দ্রব্য সামগ্রী তৈরি হচ্ছে তারমধ্যে এমন অনেক আছে যা ছাড়া আধুনিক বিশ্বে চলার কথাও চিন্তা করা যায় না। এমনিভাবে ঘাটতি পূরণে ব্যর্থ হলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
বনাঞ্চল ছাড়াও গ্রামীণ বৃক্ষরাজি দেশের সার্বিক উন্নয়নে যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কাঠ, জ্বালানি, ঔষুধি ও ফল ফলাদির বৃহত্তম সরবরাহ আসে গ্রামীণ বৃক্ষরাজি থেকে। শুধুমাত্র খেজুর গাছকে উদাহরণ হিসেবে ধরে দেখা যায়, একটি গাছ থেকে বছরে প্রায় ২০ কেজি গুড়ের মাধ্যমে অন্ততপক্ষে ৫০০০/- টাকা আয় হয়। এমনিভাবে একটি পরিবারে ১০টি খেজুর গাছ সংরক্ষণ করতে পারলে বছরে অন্তত ৫০০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা বাড়তি আয় ঐ পরিবারে সংযোজন হয়। একইভাবে নারিকেল, তাল, কাঁঠাল, জাম প্রভৃতি বৃক্ষরাজি গ্রামীণ দেশের অর্থনীতির সাথে আঙ্গীকভাবে জড়িত রয়েছে।
অপরদিকে আমাদের দেশের আয়তনের শতকরা ১০ ভাগের কম বনভূমি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হলেও জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান কিন্তু কম নয়। সীমিত পরিমাণ বনভূমি থেকে বছরে প্রায় দেড় কোটি ঘনফুট কাঠ, পৌনে তিন কোটি মণ জ্বালানি, সাড়ে দশ কোটি বাঁশ, একুশ লাখ টন গোলপাতা, ছয় হাজার মণ মধু ও দুই হাজার মণ মোম ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও এ বনভূমি থেকে প্রচুর পরিমাণে ছন, বেত, ঘাস, পাথর, ঔষধি গাছ-গাছড়া, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি পাওয়া যায়। বনজাত দ্রব্যের ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশে বৃহৎ ও মাঝারি আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কর্ণফুলী কাগজ কল, খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিল, খুলনা হার্ডবোর্ড মিল, খুলনা টেনিন কারখানা, কর্ণফুলী রেয়ন কারখানা ইত্যাদি।
এসব বিষয় ছাড়াও বনজদ্রব্য সংগ্রহ, বৃহৎ ও ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং কুটির শিল্পে অগণিত লোকের কর্মসংস্থান ও জীবিকা নির্বাহের সুযোগ এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ অর্থনৈতিক বিষয়।
দেশের অর্থনীতিতে বনজ সম্পদের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা  রয়েছে তা আমরা সবাই হয়তো উপলব্ধি করতে পারি না। তবে আর মনে হয় কালক্ষেপণ করার সময় নেই। সম্ভবত প্রচলিত প্রবাদ “জংগলই মংগল” কথাটি সর্বকালেই প্রযোজ্য। তাই-
“বেশি করে গাছ লাগান
ফল ও কাঠের দেবে যোগান,
পরিবেশ দূষণ দূর হবে
জীব জগৎ সুস্থ রবে”।

লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মোবা : ০১৯১১৬৯২৩৭৩, ই- মেইল : hassantaeiq047@gmail.com

বিস্তারিত
বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি

বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি
ড. মোঃ আশিকুল ইসলাম
আদা বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল। বাংলাদেশে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ২.৮৮ লক্ষ মেট্রিক টন আদা উৎপাদিত হয়। যা দেশের চাহিদার ৪.৮১ লক্ষ মেট্রিক টন  এর তুলনায় খুবই নগন্য। আদার গড় ফলন ১১.২৮ টন/হেক্টর। এই ঘাটতি পুরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীগণ বারি আদা-১, বারি আদা-২, ও বারি আদা-৩ নামে তিনটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার ফলন ৩০-৩৯ টন/হেক্টর। উৎপাদন কম হওয়ার কারন আদা চাষের উপযোগী জমির অভাব এবং কন্দ পঁচা রোগের ব্যাপক আক্রমণ হওয়া। কন্দ পঁচা রোগের কারণে আদার ফলন শতকরা ৫০-৮০ ভাগ পর্যন্ত কম হয়ে যায়। প্রতি বছর এদেশের জনসংখ্যা, আবাসনের জন্য ঘরবাড়ি, যোগাযোগের জন্য রাস্তা এবং কলকারখানা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে  প্রেক্ষিত কারণে কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। বাংলাদেশে এই বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য নিশ্চয়তার জন্য শুধু আবাদি জমির উপর নির্ভর করলে হবেনা। এ পরিস্থিতিতে চাষ অযোগ্য পতিত জমি বা বসতবাড়ির চারদিকে অব্যবহৃত স্থান, লবনাক্ত এলাকা, খারকীয় এলাকা, নতুন ফল বাগানের মধ্যে বিল্ডিং এর ছাদে, বস্তায় আদা চাষ করে উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। বস্তায় আদা চাষ করে বাংলাদেশে যে আদার ঘাটতি রয়েছে তা সহজেই পূরণ করা সম্ভব।
বস্তায় আদা চাষের সুবিধা : যে কোন পরিত্যাক্ত জায়গা, বসত বাড়ির চারদিকে ফাঁকা জায়গা, লবনাক্ত এলাকা, বাড়ির ছাদে সহজেই চাষ করা যায়; একই জায়গায় বারবার চাষ করা যায়;  এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ অনেক কম। প্রতি বস্তায় ২০-২৫ টাকা খরচ করে বস্তা প্রতি ১-২ কেজি আদা উৎপাদন করা যায়; এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে কন্দ পঁচা রোগ হয় না। যদিও কখনো রোগ দেখা যায় তখন গাছসহ বস্তা সরিয়ে ফেলা যায়, ফলে কন্দপঁচা রোগ ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা থাকে না; বস্তায় আদা চাষ করলে নিড়ানীসহ অন্যান্য পরিচর্যার তেমন দরকার হয় না ফলে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়।
মাটি ও আবহাওয়া  : জৈব পদার্থ সম্পৃক্ত দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও উচু জায়গা বস্তায় আদা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
বস্তায় মিশ্রন তৈরীর পদ্ধতি : সিমেন্টে খালি বস্তা মিশিয়ে বা অন্য বস্তায় আদা চাষের জন্য নিম্মলিখিত উপাদানগুলো একত্রে মিশিয়ে করে আদা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে একত্রে পালা/ডিবি করে, পলিথিন দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে। যাতে বাতাস প্রবেশ না করে। প্রতি বস্তায় পরিমিত পরিমাণ মাটি, জৈবসার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।
মিশ্রন তৈরির সময় মাটি, গোবর, কম্পোস্ট, ছাই, টিএসপি, জিংক, বোরন সব একত্রে মিশিয়ে দিতে হবে। বালাইনাশক অর্ধেক এমওপি মিশ্রন তৈরির সময় দিতে হবে। চাহিদার অর্ধেক ইউরিয়া আদা রোপনের ৫০ দিন পর এবং বাকী অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি সমানভাবে দুই কিস্তিতে রোপনের যথাক্রমে ৮০ দিন ও ১১০ দিন পর বস্তায় প্রয়োগ করতে হবে।
আদা রোপনের সময় : এপ্রিল-মে (চৈত্র- বৈশাখ) মাসে আদা লাগাতে হয়। তবে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ আদা লাগানোর উপযুক্ত সময়।
­বস্তায় মিশ্রন ভরাট করা : বস্তায় আদা লাগানোর পূর্বে প্রতি বস্তায় তৈরিকৃত মিশ্রন এমনভাবে ভরাতে হবে যাতে বস্তার উপরের দিকে ১-২ ইঞ্চি ফাঁকা থাকে।
বস্তা সাজানোর/স্থাপন পদ্ধতি : ৩ মিটার চওড়া ও সুবিধা মত দৈর্ঘ্যর বেড তৈরি করতে হবে। একটি বেড থেকে অন্য বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি: ড্রেন রাখতে হবে। ড্রেনের মাটি বেডের উপর দিয়ে বেডকে উচু করে নিতে হবে, যাতে বেডে বৃষ্টির পানি জমাট বেধে না থাকে। এরপর প্রতি বেডে ২ টি সারি এমন ভাবে করতে হবে, যেন এক সারি থেকে অন্য সারির মাঝে ১ মিটার দুরত্ব বজায় থাকে। প্রতি সারিতে ৮-১০ ইঞ্চি পর পর পাশাপাশি ২ টি বস্তা স্থাপন করতে হবে।
বীজের আকার ও রোপন পদ্ধতি : প্রতি বস্তায় ৪৫-৫০ গ্রামের একটি বীজ মাটির ভিতরে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি গভীরে লাগাতে হবে। বীজ লাগানোর পর মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে।
বীজ শোধন : বস্তায় আদা রোপনের পূর্বে ২ গ্রাম থ্রিরাম (৩৭.৫%)+ কার্বোক্সিন (৩৭.৫%) গ্রুপের প্রোভেক্স প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে, এক কেজি আদা বীজ এক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর ভেজা আদা পানি থেকে উঠিয়ে ছায়ায় রেখে শুকিয়ে বস্তায় রোপণ করতে হবে।
আন্ত:পরিচর্যা : বস্তায় আদা চাষ করলে আগাছা তেমন হয় না। যদি আগাছা দেখা যায়, নিড়ানি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। এছাড়া পরবর্তীতে সার প্রয়োগের সময় মাটি আলগা করে গাছের গোড়া থেকে দুরে সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ : বৃষ্টি না হলে বস্তায় প্রথম দিকে হালকা ভাবে ঝাঝরি দ্বারা অল্প পরিমাণে সেচ দিতে হবে। তবে বৃষ্টি স্বাভাবিক মাত্রায় হলে সেচের প্রয়োজন হয় না।
রোগ বালাই
কন্দ পঁচা রোগ : বর্ষাকালে গাছে এই রোগের লক্ষন দেখা যায়। গাছের নিচের দিকের পাতার প্রান্তভাগে প্রথমে হলুদাভ দেখায় এবং পর্যায়ক্রমে তা পাতার কিনারা ও পত্র ফলকের দিকে বিস্তার লাভ করে। গাছের পাতা হলুদ হয়ে গাছ ঝিমিয়ে পড়ে। পঁচনের ফলে কন্দ নরম হয়ে অভ্যন্তরীন টিস্যু সম্পূর্ণরুপে নষ্ট হয়ে যায়। আক্রান্ত রাইজম থেকে একধরনের গন্ধ বের হয়।
দমন পদ্ধতি : বীজ আদার জন্য শুধু সুস্থ ও রোগজীবাণু মুক্ত গাছ নিবার্চন করতে হবে; বীজ আদা রিডোমিল গোল্ড/প্রোভেক্স ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বীজ কন্দ শোধন করে রোপণ করতে হবে; যদি কোন কারণে গাছ আক্রান্ত হয় তবে অন্য গাছকে মুক্ত রাখার নিশ্চিতকরণ করতে হবে।
পোকামাকড় : বাড়ন্ত গাছে পাতাখেকো পোকা অনেক সময় পাতার ব্যাপক ক্ষতি করে ফলে এবং গাছের সালোকসংশ্লেষন হ্রাস পায়। এতে ফলন কমে যায়।
দমন পদ্ধতি : এ পোকা দমনের জন্য ১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার বিকাল বেলায় ০.৫% হারে মার্শাল প্রতি লিটার হারে ডাস্টবার্ন বা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের ঔষধ স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ : সাধারনত জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসে বস্তা থেকে আদা উঠানো হয়। আদা পরিপক্বতা লাভ করলে গাছের পাতা ক্রমশ হলুদে হয়ে কা- শুকাতে শুরু করে। এ সময় তুলে মাটি ঝেড়ে ও শিকড় পরিস্কার করে সংরক্ষণ করা হয়।
ফলন : সাধারণত প্রতি বস্তায় জাত ভেদে ১-৩ কেজি পর্যন্ত আদার ফলন পাওয়া যায়।
বীজ আদা সংরক্ষণ : বীজ আদা ছায়াযুক্ত স্থানে মাটির নিচে গর্ত বা পিট তৈরি করে সংরক্ষণ করা হয়। গর্তের নীচে ১ ইঞ্চি পরিমাণে বালু দিয়ে তার উপর বীজ আদা রেখে মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে। এতে করে বীজ আদা শুকিয়ে ওজন কমার কোন সম্ভাবনা থাকে না।

লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া, মোবাইল : ০১৭১১-১১৯২৮৭, ই-মেইল : nirusre@yahoo.com

বিস্তারিত
নারীর কর্মসংস্থানে মাশরুম

নারীর কর্মসংস্থানে মাশরুম
ড. মোছা: আখতার জাহান কাঁকন
নারীর কর্মসংস্থান বিশেষ করে গ্রামীণ নারীর কর্মসংস্থানের বেশি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে মাশরুম চাষের মাধ্যমে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে ক্ষুদ্র শিল্পও গড়ে তুলেছেন অনেক নারী। গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি এমন অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে রাজধানীজুড়ে।  ই-কমার্স বা অনলাইন মাশরুমভিত্তিক পণ্য বিক্রি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন অনেক নারী। বাংলাদেশে জমির অপ্রতুলতা, ব্যাপক বেকারত্ব, নিদারুন পুষ্টিহীনতা, মাথাপিছু আয়ের স্বল্পতা, মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান, সর্বোপরি দারিদ্র বিমোচন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় মাশরুম একটি সম্ভাবনাময় ফসল।    
মাশরুম একটি পুষ্টিকর (উন্নত মানের আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ), সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন ফসল; মাশরুম চাষের জন্য উর্বর জমির প্রয়োজন হয়না এবং অল্প জায়গায় অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা যায়; মাশরুম চাষের জন্য বালাইনাশক এমনকি রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়না। ফলে, মাশরুম চাষ ভূমি ও বায়ুর উপরে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না, বরং মাশরুম চাষের পর পরিত্যক্ত স্পন প্যাকেট মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে; স্বল্প পুঁজিতে মাশরুম চাষ শুরু করা যায়। তাই হত দরিদ্র ভূমিহীন মানুষও মাশরুম চাষ করতে পারেন; মানুষের র্কমসংস্থান/ আত্মকর্মসংস্থান বিশেষ করে বেকার, প্রতিবন্ধী ও মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করা সম্ভব; বিশ্বব্যাপী মাশরুমের চাহিদা আছে এবং বাংলাদেশে যে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বিরাজ করে তাতে প্রকৃতিকে ব্যবহার করেই সারা বছর মাশরুম চাষ করা সম্ভব; উৎপাদন মাধ্যমের পর্যাপ্ততা রয়েছে যেমন- খড়, আখের ছোবড়া ও কাঠের গুড়া। এগুলো দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা যায়; মাশরুম চাষে অল্প দিনেই ফলন পাওয়া যায় এবং লাভসহ পুঁজি ঘরে আসে। তাই, দারিদ্র্য দূরীকরণে মাশরুম গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করে; মাশরুম ঘরে চাষ করা হয় বিধায় অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, ইত্যাদি প্রাকৃতিক দূর্যোগ মাশরুমের কোন ক্ষতি করতে পারে না। এমনিই মাশরুম চাষ করে সাফল্য নারী উদ্যোক্তারা।
মাশরুমে সুদিন ফিরল পাপিয়ার : সুদিনের আসায় মাদারীপুরের শিবচরের পাপিয়া নবাব স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকার সাভারের জামসিংয়ে পাড়ি জমান। স্বামী নবাব মিয়া ডিপ্লোমা দন্ত চিকিৎসক। সেখানে ছোটখাটো চেম্বারে রোগী দেখা শুরু করেন। কিন্তু সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। পরবর্তী সময়ে বাড়তি আয়ের আশায় স্বামী-স্ত্রী গরুর খামার করেন। ২০১০ সালে অ্যানথ্রাক্স রোগে সব গরু মরে যায়। খামার বন্ধ হয়ে যায়। দুঃসহ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন পার করতে থাকেন পাপিয়া দম্পতি। দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে প্রতিবেশী এক নারীর পরামর্শে পাপিয়া শুরু করেন মাশরুম চাষ। অবশ্য ২০০৮ সালে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন পাপিয়া। মাশরুম চাষে প্রশিক্ষণ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, মাশরুম চাষের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রতি কর্মদিবসে ‘মাশরুম অবহিতকরণ ও কার্যক্রম প্রদর্শন’ শীর্ষক অনানুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৫-২৫ জন পর্যন্ত প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। আবাসিক সুবিধার প্রয়োজন হলে স্থানীয় কৃষি অফিসের সুপারিশ সম্বলিত একখানা আবেদনপত্র অত্র ইনস্টিটিউটের উপ পরিচালক বরাবর দাখিল করতে হয়। প্রশিক্ষণ শেষে একজন মানুষ মাশরুম চাষ, স্পন উৎপাদন, মাশরুম বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিখতে পারবেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর প্রয়োজন পুঁজি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক করতে হবে দৈনিক কি পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করবেন, এবং নিজের স্পন নিজেই উৎপাদন করবেন কিনা। এরপর স্থান নির্বাচন, প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ, যন্ত্রপাতি ক্রয় ইত্যাদি। প্রাথমিকভাবে ৫,০০০-৫০,০০০/- মাশরুম চাষ শুরু করা সম্ভব বলে পাপিয়া জানান।
বর্তমানে সাভারের জামসিংয়ে ‘পাপিয়া মাশরুম খামার অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার’ নামের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান আছে পাপিয়ার। মেয়ে নিশি মনি একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিডিএস (দন্ত চিকিৎসক) করেছেন। ছেলে প্রিন্স মাহামুদ আইন বিষয়ে স্নাতক শেষ করেছেন। দুজনের পড়ালেখার প্রায় পুরো খরচই এসেছে মাশরুম চাষ থেকে। পাপিয়ার ‘শুরুতে পুঁজি ছিল ১০ হাজার টাকা। এখন তার খামারে সব সময় ছয়-সাত লাখ টাকার পণ্য মজুদ থাকে। প্রথমে ১০০ গ্রাম মাশরুম বিক্রির মাধ্যমে তার মাশরুম বিপণন কার্যক্রম শুরু হয়, ১২ টাকায় বিক্রি করেন ১০০ গ্রাম মাশরুম। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ফার্মের পরিধি বাড়াতে বিনিয়োগ করেছেন মাশরুমের আয়ের টাকা। তিনি এখন ছয়জন মহিলা শ্রমিককে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা মাইনে দেন। নিজেরও প্রতি মাসে আয় প্রায় ৮০ হাজার টাকা। ভাগ্য বদলে দিয়েছেন অনেক নারীর, কর্মসংস্থান হয়েছে নারীদের। করোনার মধ্যেও পাঁচ পরিবারকে গ্রাম থেকে এনে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন মাশরুম চাষ। তারা এখন স্বাবলম্বী। পাপিয়া তার বাড়িকে এখন পরিপূর্ণ খামার বানিয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কেজি মাশরুম বিক্রি করেন নিজের দোকানে খামারবাড়িসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায়। সারাদেশে মাশরুমের স্পন সরবরাহ করেন। প্রতিদিন তার খামারে এক হাজার বীজ তৈরি হয়। দেশের নানা প্রান্তে মাশরুমকে কেন্দ্র করে তার পরিচিতি হয়েছে।
মাশরুম চাষে আয় ও ব্যয়ের হিসাব সম্পর্কে তিনি বলেন, মাশরম চাষের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে এবং তার উপর ভিত্তি করে মাশরুম চাষে আয় ও ব্যয়ের হিসাব/খরচ নির্ভর করবে। যেমন- মাশরুমের প্রজাতি (ওয়েস্টার, বাটন, ঋষি, মিল্কি ইত্যাদি), মাশরুম চাষ পদ্ধতি (পাস্তুরাইজেশন/স্টেরিলাইজেশন), যন্ত্রপাতি ব্যবহার (অটোক্লেভ, ড্রাম, স্টেরিলাইজেশন কাম ইনোকুলেশন চেম্বার),
মাশরুম থেকে উৎপাদনের ধরণ (মাদার কালচার, স্পণ, তাজা মাশরুম) বাজারজাতের ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি।
তবে প্রাথমিকভাবে একজন মানুষ সরকারী/বেসরকারী পর্যায়ে স্পণ সংগ্রহ করে চাষ করতে পারেন। আবার নিজের স্পন (কাঠের গুড়া/খড়ে) তৈরি করতে পারেন। এছাড়া প্রথমে ওয়েস্টার মাশরুম দিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করা এবং পরবর্তীতে দক্ষতা অর্জন ও ফার্মের আয় দিয়ে ফার্মের পরিধি বাড়ানো উচিত। নি¤েœ মাশরুম চাষের প্রাক্কলন দেয়া হলো।
ক) প্রতিদিন ১ কেজি করে মাশরুম উৎপাদনের খরচ (স্পণ ক্রয় করে)
২০০টিঢ১৭-২০/-=৩৪০০-৪০০০/- (সরকারী ১৭/স্পণ ও বেসরকারী ১৮-২০/ স্পণ)
মাশরুম উৎপাদন ৩০ কেজি ঢ২০০-৩৫০/- ৬০০০-১০৫০০/- (সরকারী ২০০/ কেজি ও বেসরকারী ২৫০-৩৫০/ কেজি)
প্রথম মাসে লাভ = ২৬০০-৭১০০/-, ২য় মাসে উৎপাদন ৬০০-৭০০গ্রাম/ দিন, ৩য় মাসে উৎপাদন ৩০০- ৪০০ গ্রাম/ দিন,
খ) প্রতিদিন ১০০ মাদার কালচার ও ১০০ স্পণ উৎপাদনের খরচ (রানিং খরচ)
মাদার কালচার প্রতি পিস (লেবার ও জ্বালানি খরচসহ) ১৯.৫০/-ও স্পন প্রতি পিস (লেবার ও জ্বালানি খরচসহ) ১৭.৫০/-  
মোট খরচ ১৯.৫০টাকাঢ১০০টিঢ২৫দিন=৪৮৭৫০ টাকা বা ১৭.৫০টাকাঢ১০০টিঢ২৫দিন=৪৩৭৫০ টাকা
আয় (মাসে) ৯০টিঢ২৫দিনঢ২৫/-= ৫৬২৫০ টাকা বা  ৯০টিঢ২০দিনঢ২৫টাকা=৪৫০০০/-           
যদি স্পণ কেটে দিয়ে চাষ করে তবে আয় ১২ কেজিঢ৩০দিনঢ২৫০/-=৯০০০০/-
১০০ কাঠের গুড়ার স্পণ দিয়ে ৩০০ খড়ের স্পুণ তৈরি করে তবে আয় আরো বাড়বে।
[বিঃ দ্রঃ স্পন তৈরি সময় ৫-১০% কন্টামিনেশন হতে পারে]
গ) বীজ ও মাশরুম উৎপাদনের খরচ (ফিক্সড খরচ)
অটোক্লেভ ও ক্লিনবেঞ্চ = ৩ লাখ (মাদার কালচার উৎপাদনের জন্য)
৫০০ বর্গফুট পাকা ল্যাব = ৭.৫ ৩ লাখ (মাদার কালচার উৎপাদনের জন্য)
স্বল্প খরচে ইনকিউবেশন রুম ও কালচার হাউজ = ৪২০০০ (১০ঢ১২) (স্পণ রাখা ও চাষের জন্য)
ওয়ার্কশপ = ১০০০০
স্টেরিলাইজেশন কাম ইনোকুলেশন চেম্বার= ১২০০০-৩০০০০ (প্রতিদিন ১৫০ স্পুণ উৎপাদনের জন্য)
ড্রাম= ১৬০০-২০০০ (প্রতিদিন ১০০ স্পণ উৎপাদনের জন্য)
র‌্যাক (১০ঢ২.৫)=৩৫০০
নেক=২.৫/পিস
গত ২০২১ সালে রোকেয়া দিবসে জেলা পর্যায়ে মাশরুম চাষে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী ক্যাটাগরীতে জয়িতা পুরষ্কার পেয়েছেন।
অনুরূপভাবে খাগড়াছড়ি জেলার ঠাকুরছড়া নতুনবাজার এলাকার নিপু ত্রিপুরা মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী এবং সাভার জামসিং জয়পাড়া মাশরুম পল্লীর সদস্য গোলাপী বেগম। মাশরুম চাষ দরিদ্রতা বিমোচনে এক অন্যতম উপায় এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য মাশরুম পল্লী কার্যক্রম শুরু করে। এ কার্যক্রমের আওতায় সাভার জামসিং জয়পাড়া এলাকায় মাশরুম পল্লী গড়ে তোলা হয়। ২০০৬ সালে এ পল্লীর সদস্য হিসেবে গোলাপী বেগম ৫ দিনের মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে প্রাপ্ত ভাতা দিয়ে বীজ কিনে শুরু করেন মাশরুম চাষ। বর্তমানে তিনি মাশরুম চাষ করে মাসে আয় করেন ৭০০০-৮০০০ টাকা। আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরক্ষর গোলাপী বেগম নাম সই করতে শিখেছেন। তিনি মাশরুম চাষ থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বর্তমানে তিনি মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত স্টেরিলাইজেশন কাম ইনোকুলেশন চেম্বার ব্যবহার করে নিজের বীজ উৎপাদন করতে পারেন।
আসুন স্বল্প পুঁজিতে মাশরুম চাষ করি বেকারত্ব দূর করি।

লেখক : প্রকল্প পরিচালক, মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যেমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্প, ই-মেইল : kamon.smdp@gmail.com

বিস্তারিত
প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নোত্তর

কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর

আব্দুল মুন্নাফ, গ্রাম : দুর্গাপুর, পো: দুর্গাপুর, উপজেলা : আদিতমারী, জেলা : লালমনিরহাট
প্রশ্ন : নারিকেল পাতা পুড়ে যাচ্ছে। করণীয় কি?
উত্তর : এটা ব্লাইট রোগ। আক্রান্ত পাতা কেটে নষ্ট/ পুড়িয়ে ধ্বংস করা। পটাশ সার অবশ্যই ব্যবহার করা। আক্রান্ত গাছে মেনকোজেব+মেটালঅক্সিল গ্রুপের ঔষধ রিডোমিল গোল্ড ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
মো: দিদার, গ্রাম : গর্বভানধুর, পো : লালদিঘি, উপজেলা : পীরগঞ্জ, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : কলাগাছ লম্বালম্বিভাবে ফেটে যায়। করণীয় কি?
উত্তর : এটা পানামা রোগ। পাতা  বোটার নিচ থেকে ঝুলেপড়ে এবং ফেটে যায়।
উত্তর : এক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। চারা লাগানোর পূর্বে গর্তে ১% ফরমালিন ও ৫০ ভাগ পানি দ্বারা গর্ত ভিজিয়ে রেখে ১০-১২ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।
গ্রাম : আলিয়াবাদ, পো : আলিয়াবাদ, উপজেলা : দুর্গাপুর, জেলা : রাজশাহী
প্রশ্ন : আমের ফল ধারণের পরবর্তী পরিচর্যা কি?
উত্তর : ফল মটরদানার মতো অবস্থায় নির্দিষ্ট মাত্রার ১/২ ইউরিয়া ও ১/২ এমওপি সার সমান দুইভাগ করে একভাগ করে ব্যবহার করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও পটাশ সার মে মাসের ১ম সপ্তাহ/ জাত অনুসারে আম সংগ্রহের ১ মাস আগে প্রয়োগ করতে হবে।
বাবু আহমেদ, গ্রাম : সোনাতলা, পো : সোনাতলা, উপজেলা : সাঁথিয়া, জেলা : পাবনা
প্রশ্ন : পেঁয়াজের পাতার মাথা পুড়ে যাচ্ছে। করণীয় কি?
উত্তর : এটি পেঁয়াজের পার্পল ব্লচ রোগ।
আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। থিরাম (৩৭.৫%)+কার্বোক্সিন (৩৭.৫%) গ্রুপের প্রোভেক্স দ্বারা বীজ শোধন (২  গ্রাম/ ১ কেজি) করতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম  হারে রিডোমিল গ্লোল্ড স্প্রে করতে হবে ৭ দিন পর পর মোট ৩ বার।
মো: আজিজুর রহমান, গ্রাম : পৌরসভা, পো : পৌরসভা, উপজেলা : আটওয়ারী, জেলা : পঞ্চগড়
প্রশ্ন : আম গাছে মুকুল আসার পরবর্তী কার্যক্রম কি?
উত্তর : আম গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে হপার পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোরপিড গ্রুপের কীটনাশক (যেমন কনফিডর ৭০ মি ২ গ্রাম/লিটার) পানিতে স্প্রে করুন। গাছে সম্পূর্ণরূপে ফুল প্রস্ফুটিত হরার পর ১৫ দিন পর পর ৪ বার বেসিন পদ্ধতিতে সেচ দিতে হবে।
মো: মাসুদুর রহমান, গ্রাম : শিবপাশা, পো : রারপাশা, উপজেলা :  বরিশাল সদর, জেলা : বরিশাল
প্রশ্ন : ঢেঁড়সের সাদামাছি পোকার আক্রমণে কি করণীয়?
উত্তর : আশেপাশে বেগুন, তুলা, মেস্তা চাষ না করা। পোকার আক্রমণ বেশি হলে এসিফেট গ্রুপের এসাটাফ ০.৫ ১ গ্রাম/লিটার হারে স্প্রে করা।
সাহেব আলী, গ্রাম : বাঙ্গোরা, পো: বাঙ্গোরা, উপজেলা : সদর, মানিকগঞ্জ, জেলা : মানিকগঞ্জ
প্রশ্ন : ভুট্টার ক্ষেতে কাটুই পোকার আক্রমণে করণীয় কি?
উত্তর : আক্রান্ত জমিতে সেচ দিলে কাটুই পোকার কীড়া উপরের দিকে চলে আসে। পোকা খেকো পাখি বসার ব্যবস্থা করা। বিষটোপ ব্যবহার করা। কারটাপ ৬ কেজি/ হে: জমিতে প্রয়োগ করা। আক্রমণ বেশি হলে ক্লোরোপাইরিফস+সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের নাইট্রো ৫ মিলি/লিটার পানিতে স্প্রে করা।
আশরাফুজ্জামান, গ্রাম : মরশিদুকা, পো : মরশিদুকা, উপজেলা : মৌলভীবাজার সদর, জেলা : মৌলভীবাজার
প্রশ্ন : ব্রি ধান-৫৮ এর সার ব্যবস্থাপনা কি?
উত্তর : সার ব্যবস্থাপনা : প্রতি বিঘায় ইউরিয়া ৩০-৪০ কেজি, টিএসপি ৭-১৪ কেজি, এমওপি ৮-১৬ কেজি, জিপসাম ৪-১১ কেজি, জিংক ০.৭-১.৪ কেজি সার প্রয়োগ করতে হবে।
সর্বশেষ চাষের সময় সবটুকু টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিংক সালফেট সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া তিন কিস্তিতে যথাক্রমে রোপনের ১০-১৫ দিন পর ১ম কিস্তি ৩০-৪০ দিন পর ২য় কিস্তি ও ৫০-৬০ দিন পর ৩য় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে।
নাজমুল হক, উপজেলা : মাদারীপর, জেলা : মাদারীপুর
প্রশ্ন : তরমুজ গাছের ডাল ঢলে পড়ে। গাছ শুকিয়ে যায়, চারা অথবা বয়স্ক গাছে বেশি হয়।
উত্তর : রোগাক্রান্ত গাছ সংগ্রহ করে নষ্ট বা পুড়ে  ফেলতে হবে। জমি থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে। কীটনাশক ব্যবহার করতে চাইলে কপার হাইড্রোক্সাইড গ্রুপের ২ গ্রাম চ্যাম্পিয়ন ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
মোসা: ফাতিমা, উপজেলা : আমতলী, জেলা : বরগুনা
প্রশ্ন : করলা গাছের পাতাগুলো ছোট ছোট হয়ে যাচ্ছে। গাছ বড় হয় না, বিভিন্ন জায়গায় পাতা কুকড়ে যাচ্ছে। করণীয় কি?
উত্তর : রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত ডালপালা কেটে মাটিতে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ক্ষেতের আশেপাশের আগাছা ধ্বংস করতে হবে। রোগ বেশি দেখা দিলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের টিডো ০.৫ মিলি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

লেখক : তথ্য অফিসার (উদ্ভিদ সংরক্ষণ), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৪১০৪৮৫৩; ই-মেইল : iopp@ais.gov.bd

 

বিস্তারিত
বৈশাখ মাসের কৃষি (১৪ এপ্রিল- ১৪ মে)

 বৈশাখ মাসের কৃষি (১৪ এপ্রিল- ১৪ মে)
কৃষিবিদ ফেরদৌসি বেগম
এলো বৈশাখ। ১৪৩০ বঙ্গাব্দের নতুন মাস। বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। এসময়  বৈশাখী উৎসবের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার কারিগর কৃষক, পুরনো বছরের ব্যর্থতাগুলো ঝেড়ে নতুন প্রত্যাশায় পুনরুজ্জীবিত হয়ে ফসল উৎপাদনে কাজে। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। সেই সাথে আসুন জেনে নেই বৈশাখে কৃষির করণীয় দিকগুলো।
বোরো ধান
ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। নাবি বোরো ধানের থোড় আসার সময় পানির অভাব না হয় তাই আগে থেকেই সম্পূরক সেচের জন্য মাঠের এক কোণে মিনি পুকুর তৈরি করতে হবে। ধানের দানা শক্ত হলে জমি থেকে পানি বের করে দিতে হবে। এ মাসে বোরো ধানে মাজরা পোকা, বাদামি গাছফড়িং, সবুজ পাতাফড়িং, গান্ধিপোকা, লেদাপোকা, ছাতরাপোকা, পাতা মোড়ানো পোকার এবং এ সময় ধানক্ষেতে উফরা, বাদামি দাগ রোগ, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগের আক্রমণ হতে পারে। বালাই দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে। বালাই আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে। এ মাসে শিলাবৃষ্টি হতে পারে, বোরো ধানের ৮০% পাকলে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলতে হবে।
আউশ ধান
আউশ ধানের জমি তৈরি ও বীজ বপনের সময় এখন। বোনা আউশ উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি এবং রোপা আউশ বন্যামুক্ত আংশিক সেচনির্ভর মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নি¤œ জমি আবাদের জন্য নির্বাচন করতে হবে। জমি তৈরির শেষ চাষের সময় শতাংশপ্রতি ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি ও ৩০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বৃষ্টিনির্ভর বোনা আউশ এলাকায় ইউরিয়া দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করত হবে। প্রথম কিস্তি শেষ চাষের সময় এবং দ্বিতীয় কিস্তি ধান বপনের ৩০-৪০ দিন পর। জমিতে গন্ধক এবং দস্তার অভাব থাকলে শতাংশ প্রতি ১৩৫ গ্রাম জিপসাম ও ২০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে। আউশের উন্নত জাত হিসাবে বিআর২০, বিআর২১, বিআর২৪, ব্রি ধান৪২, ব্রি ধান৪৩ ও ব্রি ধান৮৩ এবং রোপা হিসেবে বিআর২৬, ব্রি ধান২৭, ব্রি ধান৪৮, ব্রি ধান৮২, ব্রি ধান৮৫, ব্রি ধান৯৮ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৭ । এ ছাড়াও খরাপ্রবণ বরেন্দ্র এলাকাসহ, পাহাড়ি এলাকার জমিতে বিনা ধান-১৯, বিনা ধান-২১ চাষ করতে পারেন।
পাট
বৈশাখ মাস তোষা পাটের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। ফাল্গুনী তোষা ও-৯৮৯৭, বিজেআরআই তোষা পাট-৫, বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১) ভালো জাত।
দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটিতে তোষা পাট ভালো হয়।
বীজ বপনের আগে প্রতি কেজি বীজ ৪ গ্রাম ভিটাভেক্স বা ১৫০ গ্রাম রসুন পিষে বীজের সাথে মিশিয়ে শুকিয়ে নিয়ে জমিতে সারিতে বা ছিটিয়ে বুনতে হবে। সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ২৫-৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বুনলে ৩৫-৪০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। ভালো ফলনের জন্য  শতাংশপ্রতি ৮০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। জমিতে সালফার ও জিংকের অভাব থাকলে জমিতে সার দেয়ার সময়  শতাংশপ্রতি ৪০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০  কেজি দস্তাসার দিতে হবে। শতাংশপ্রতি ২০ কেজি গোবর সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের পরিমাণ অনেক কম লাগে।  
ভুট্টা (খরিফ)
খরিফ ভুট্টার বয়স ২০-২৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে। জমিতে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং একই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।  
শাকসবজি
বসতবাড়ির বাগানে জমি তৈরি করে ডাঁটা, কলমিশাক, পুঁইশাক, করলা, ঢেঁড়স, বেগুন, পটোল চাষের উদ্যোগ নিতে হবে। মাদা তৈরি করে চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দুল, শসা, মিষ্টিকুমড়া, চাল কুমড়ার বীজ বুনে দিতে পারেন। আগের তৈরি করা চারা থাকলে ৩০/৩৫ দিনের সুস্থ সবল চারাও রোপণ করতে পারেন। লতানো সবজির জন্য  মাচা তৈরি করে নিতে হবে।
কুমড়াজাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরবেলা সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে পাপড়িগুলো ফেলে দিয়ে পরাগমু-টি স্ত্রী ফুলের গর্ভমু-ে ঘষে হাতপরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। কুমড়াজাতীয় ফসলে মাছি পোকা দমনে জমিতে খুঁটি বসিয়ে খুঁটির মাথায় বিষটোপ ফাঁদ দিলে বেশ উপকার হয়। এছাড়া সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করেও এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।
গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে চাইলে বারি হাইব্রিড টমেটো ৪, বারি হাইব্রিড টমেটো ৮, বারি হাইব্রিড টমেটো-১০ বারি হাইব্রিড টমেটো-১১ বা বিনা টমেটো ৩, বিনা টমেটো ৪-এর চাষ করতে পারেন। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করতে হলে পলিথিনের ছাওনির ব্যবস্থা করতে হবে সে সাথে এ ফসলটি সফলভাবে চাষের জন্য টমেটোটোন নামক হরমোন প্রয়োগ করতে হবে। স্প্রেয়ারের সাহায্যে প্রতি লিটার পানিতে ২০ মিলি টমেটোটোন মিশিয়ে ফুল আসার পর ফুলের গায়ে ৫-৭ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
গাছপালা
এ মাসে আমের মাছি পোকাসহ অন্যান্য পোকার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। মাছি পোকা দমনের জন্য সবজি খেতে যে রকম বিষটোপ ব্যবহার করা হয় সে ধরনের বিষটোপ বেশ কার্যকর। ডিপটরেক্স, ডারসবান, ডেনকাভেপন সামান্য পরিমাণ দিলে উপকার পাওয়া যায়। এ সময় কাঁঠালের নরম পচা রোগ দেখা দেয়। এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব থাকলে ফলে রোগ দেখা দেয়ার আগেই ফলিকুর ০.০৫% হারে বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ বা রিডোমিল এম জেড-৭৫ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। বাড়ির আঙিনায় সুস্থ সবল, উন্নত নারিকেল চারা এবং গ্রামের রাস্তার পাশে    পরিকল্পিতভাবে খেজুর ও তালের চারা এখন লাগাতে পারেন। যতœ, পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে ৩-৪ বছরেই গাছগুলো অনেক বড় হয়ে যাবে। বৃষ্টি হয়ে গেলে পুরনো বাঁশ ঝাড় পরিষ্কার করে মাটি ও কম্পোস্ট সার দিতে হবে এবং এখনই নতুন বাঁশ ঝাড় তৈরি করার কাজ হাতে নিতে হবে।
চারা বা কলম রোপণ কৌশল
যারা সামনের মৌসুমে গাছ লাগাতে চান তাদের এখনই জমি নির্বাচন, বাগানের নকশা এবং চারা বা কলম রোপণ কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন।
* চারা রোপণের জন্য নির্বাচিত স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
* নির্বাচিত স্থানে বড় মাপের একটি গর্ত খনন করতে হবে।
* গর্ত খনন করার সময় নিচের মাটি একদিকে এবং উপরের মাটি অন্যদিকে রাখতে হবে।
* সবল সতেজ রোগমুক্ত চারা নির্বাচন করতে হবে।
* সাবধানে পলিব্যাগ অপসারণ করতে হবে যাতে চারার গোড়ায় মাটির চাকা ভেঙে না যায়। চারার কোঁকড়ানো বা আঁকাবাঁকা শিকড় কেটে ফেলতে হবে। বীজতলায় যতটুকু অংশ মাটির নিচে ছিল রোপণের সময় ঠিক ততটুকু অংশ মাটির নিচে রাখতে হবে। সযতেœ চারাটিকে গর্তে বসিয়ে দিতে হবে।
* চারার চারপাশের ফাঁকা জায়গায় প্রথমে উপরো উর্বর মাটি এবং পরে নিচে মাটি দিয়ে পূরণ করতে হবে। চারপাশের মাটি ভালোভাবে চেপে ঠেসে দিতে হবে যাতে কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকে। চারা যাতে হেলে না পড়ে সে জন্য শক্ত খুঁটির সাথে চারা বেঁধে দিতে হবে। রোপণের পরপরই চারার গোড়ায় ও পাতায় পানি দিতে হবে। পরিশেষে খাঁচা দিয়ে চারাকে রক্ষা করতে হবে।
প্রিয় পাঠক, বৈশাখ নতুন আবাহনের  সৌরভের পাশাপাশি নিয়ে আসে কালবৈশাখীকে। কালবৈশাখীর থাবা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কৃষিতে আগাম বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সুবিবেচিত লাগসই কৌশল আর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সব বাধা ডিঙিয়ে আমরা কৃষিকে নিয়ে যেতে পারব সমৃদ্ধির ভুবনে। আপনাদের সবার জন্য নতুন বছরের শুভ কামনা। কৃষি সংশ্লিষ্ট তথ্য জানতে কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নম্বরে কল করুন। য়

লেখক : সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা, টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪, ই-মেইল : editor@ais.gov.bd

বিস্তারিত
বর্ষসূচি (বৈশাখ-চৈত্র ১৪২৯)

বর্ষসূচি (বৈশাখ-চৈত্র ১৪২৯)
মোছা. সাবিহা সুলতানা
বিষয়                                                 লেখক    মাস                 পৃষ্ঠা
নিবন্ধ
বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু     ড. মো: আবদুল মুঈদ    বৈশাখ-১৪২৯      ৩
মৌ চাষের প্রেক্ষাপট ও সম্ভাবনা    মো: খায়রুল আলম            বৈশাখ-১৪২৯         ৫               
আলু সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ পদ্ধতি     কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম     বৈশাখ-১৪২৯      ৭                
প্রতি ইঞ্চি জমির সুষ্ঠু ব্যবহারে উন্নত জাতের হলুদ চাষ     কৃষিবিদ অসিত কুমার সাহা     বৈশাখ-১৪২৯      ৯                
বৈরী আবহাওয়ায় আধুনিক তিল চাষে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা     পার্থ বিশ্বাস     বৈশাখ-১৪২৯      ১১               
গরুর দুধে ভাইরাস মোকাবিলা      ডা: সুচয়ন চৌধুরী     বৈশাখ-১৪২৯      ১৩              
পরমাণু প্রযুক্তিতে বিষমুক্ত শুঁটকি মাছ উৎপাদন     কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ     বৈশাখ-১৪২৯      ১৫               
সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ     মোঃ বেনজীর আলম     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ৩
পাট আঁশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমাদের করণীয়    ড. এটিএম মোরশেদ আলম     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ৫    
রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং সম্ভাবনা ও করণীয়    মো. জিয়াউল হক     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ৭
বৈচিত্র্যময় আমের দেশ বাংলাদেশ, স্বত্বাধিকার     ড. মোহাম্মদ রেজওয়ান মোল্লা,     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ৯
প্রতিষ্ঠায় দরকার সঠিক পদক্ষেপ     ইফতেখার আহমেদ    
পাহাড়ি কৃষিকে লাভজনক করার উপায়     ড. মো: জামাল উদ্দিন     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ১১
ছাদ বাগানে সবজি চাষ    কৃষিবিদ মোঃ শামীম সেখ     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ১৩
স্বাদুপানির ঝিনুকে মুক্তা চাষ : গবেষণায় অর্জিত সাফল্য     ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ১৫
সবুজ ঘাস সংরক্ষণে সাইলেজ     ডা: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ১৬
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফলের গুরুত্ব ও গ্রহণের নিয়ম     কৃষিবিদ মো. বেনজীর আলম     আষাঢ়-১৪২৯      ৯
বিভিন্ন ফলের পুষ্টিমান বছরব্যাপী ফল চাষে,
অর্থ পুষ্টি দুই-ই আসে     কৃষিবিদ ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার     আষাঢ়-১৪২৯      ১১
বারোমাস আম চাষ     কৃষিবিদ ড. মো. মেহেদী মাসুদ     আষাঢ়-১৪২৯      ১২
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিএআরআই উদ্ভাবিত     কৃষিবিদ ড. বাবুল চন্দ্র সরকার     আষাঢ়-১৪২৯      ১৪
ফলের ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি     
পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় কাঁঠাল     কৃষিবিদ ড. মো. জিল্লুর রহমান     আষাঢ়-১৪২৯      ১৬
ফল গাছের পরাগায়ন ও করণীয়     কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন     আষাঢ়-১৪২৯      ১৮
ফল গাছের অঙ্গ ছাঁটাই     কৃষিবিদ খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম     আষাঢ়-১৪২৯      ২০
লাভজনক উপায়ে মাছ চাষ     কৃষিবিদ মো. তোফাজউদ্দীন আহমেদ     আষাঢ়-১৪২৯      ২২
বাণিজ্যিকভাবে পনির উৎপাদন পদ্ধতি     কৃষিবিদ ডা. মনোজিৎ কুমার সরকার     আষাঢ়-১৪২৯      ২৪
কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ২০২০ পুরস্কার    মোঃ সায়েদুল ইসলাম     শ্রাবণ-১৪২৯     ১১
পুরস্কার প্রাপ্তদের পরিচিতি ও কৃষিক্ষেত্রে অবদান    ড. সুরজিত সাহা রায়    শ্রাবণ-১৪২৯     ১৩
তেলজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের গুরুত্ব    ড. জগৎ চাঁদ মালাকার     শ্রাবণ-১৪২৯     ১৫    
রিবন রেটিং পদ্ধতি : স্বল্প পানি এলাকায় পাট পচানোর জন্য লাগসই প্রযুক্তি     ড. এ. টি. এম. মোরশেদ আলম     শ্রাবণ-১৪২৯     ১৭    
মুগডালের বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ    ড. মোঃ ওমর আলী     শ্রাবণ-১৪২৯     ১৯    
ক্যাপসিকাম ও ঝাল মরিচের সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি     ড. মো. সদরুল আমিন     শ্রাবণ-১৪২৯     ২১
বঙ্গবন্ধুর মৎস্যজীবীদের উন্নয়ন দর্শন ও প্রতিভাস    কৃষিবিদ মোঃ লতিফুর রহমান সুজান     শ্রাবণ-১৪২৯     ২৩
অনলাইনে কোরবানির জন্য সঠিক গরু কেনার কৌশল     ডাঃ সুচয়ন চৌধুরী     শ্রাবণ-১৪২৯     ২৬
বাংলাদেশী কৃষি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি অর্জনে     ড. মো: আজিজ জিলানী চৌধুরী,
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল     ড. সুষ্মিতা দাস     শ্রাবণ-১৪২৯     ২৮
শোক থেকে শক্তিতে কৃষির জয়যাত্রা    মোঃ সায়েদুল ইসলাম     ভাদ্র-১৪২৯     ৩
বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনা ও অর্ধশতাব্দীর সমবায় আন্দোলন     ড. জাহাঙ্গীর আলম     ভাদ্র-১৪২৯     ৬
টিসু কালচার চারায় জি-৯ কলা চাষ     মৃত্যুঞ্জয় রায়     ভাদ্র-১৪২৯     ১০
মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিল : উপকূলের কৃষকদের     ড. এম জি নিয়োগী     ভাদ্র-১৪২৯     ১২
জন্য একটি আশীর্বাদ     
বাউ-মানকচু ১ উৎপাদন প্রযুক্তি ও পুষ্টিগুণ    ড. এম এ রহিম, ড. সুফিয়া বেগম
    মো. আবু জাফর আল মুনছুর    ভাদ্র-১৪২৯     ১৪
বিপন্ন প্রজাতির মহাশোল মাছ : প্রজনন ও চাষ ব্যবস্থাপনা    ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ     ভাদ্র-১৪২৯     ১৫
আবদ্ধ অবস্থায় দুধালো মহিষ পালন ব্যবস্থাপনা     কৃষিবিদ ডক্টর এস এম রাজিউর রহমান     ভাদ্র-১৪২৯     ১৭
পুষ্টিগুণ ও পরিবেশ সুরক্ষায় তালগাছ     কৃষিবিদ মোহাম্মদ সাইফুল আলম সরকার     ভাদ্র-১৪২৯     ২০
ইঁদুর নিধনে প্রকৃতি, ফসল ও মানুষের কল্যাণ     এ এফ এম হায়াতুল্লাহ     আশি^ন-১৪২৯     ৩
ইঁদুর : কৃষি ব্যবস্থা ও জাতীয় উন্নয়নে হুমকি     মোঃ বেনজীর আলম     আশি^ন-১৪২৯     ৬
জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২২    মো. ইউসুফ রানা মন্ডল     আশি^ন-১৪২৯     ৭
মিষ্টি ফসল চাষাবাদে ইঁদুরের মাধ্যমে ক্ষতি     ড. মো. আমজাদ হোসেন,
ও প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তি     ড. মো. আতাউর রহমান    আশি^ন-১৪২৯     ৯
ধান ফসল রক্ষায় ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা     মো: মোসাদ্দেক হোসেন,
    ড. শেখ শামিউল হক,
    ড. মো: মোফাজ্জল হোসেন    আশি^ন-১৪২৯     ১১
প্যাঁচা সংরক্ষণ : ইঁদুর দমনের একটি জৈবিক পদ্ধতি    ড. মোঃ শাহ আলম
    ড. এ টি এম হাসানুজ্জামান    আশি^ন-১৪২৯     ১৩
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ইঁদুর ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যকরী উপায়    ড. হাবিবুর রহমানহোসেন    আশি^ন-১৪২৯     ১৬
প্রাণিসম্পদ খাতে ইঁদুর দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি     কৃষিবিদ ডা. মনোজিৎ কুমার সরকার     আশি^ন-১৪২৯     ১৮
কৃষকের আর্থিক উন্নয়নে মজাপুকুরে সমন্বিত সবজি ও মাছ চাষ     ড. সত্যেন ম-ল
    এবিএম মোস্তাফিজুর
    বীর জাহাঙ্গীর সিরাজী     আশি^ন-১৪২৯     ২০
কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়। ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি,
সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন    মোঃ সায়েদুল ইসলাম     কার্তিক-১৪২৯     ১৫
বিশ^ খাদ্য দিবস : বিএডিসি ও খাদ্যে স্বনির্ভর বাংলাদেশ     এ এফ এম হায়াতুল্লাহ     কার্তিক-১৪২৯     ১৭
টেকসই উন্নয়ন অর্জনের পথে আমাদের সম্মিলিত অগ্রযাত্রা    ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার
    ড. সুস্মিতা দাস     কার্তিক-১৪২৯     ১৯    
বাংলাদেশের কৃষির অগ্রযাত্রায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর     মোঃ বেনজীর আলম    কার্তিক-১৪২৯      ২১
সাম্প্রতিক বিশ^ পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়     কৃষিবিদ ড. মো. হামিদুর রহমান     কার্তিক-১৪২৯      ২৩
নিরাপদ আমিষ ও পুষ্টি সরবরাহে মৎস্য খাত     খঃ মাহবুবুল হক     কার্তিক-১৪২৯     ২৫
উন্নত জীবন ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রাণিজ আমিষের গুরুত্ব     ডা: মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা
    ড. হোসেন মো: সেলিম     কার্তিক-১৪২৯      ২৭
নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধান : বাংলাদেশ কৃষি     ড. দেবাশীষ সরকার,
গবেষণা ইনস্টিটিউটের অবদান     ড. বাবুল চন্দ্র সরকার     কার্তিক-১৪২৯     ২৮
জিংকসমৃদ্ধ ধান শরীরে জিংকের অভাব পূরণে টেকসই সমাধান     ড. মো. শাহজাহান কবীর,
    ড. মো. আবদুল কাদের,
    কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন     কার্তিক-১৪২৯      ৩০
বাংলাদেশে ধান ও চালের পুষ্টি নিরাপত্তা ও নিরাপদতা     প্রফেসর ড. মো: আব্দুল আলীম     কার্তিক-১৪২৯      ৩২
খাদ্য নিরাপত্তা : প্রয়োজন সমন্বিত সংরক্ষণ     ড. আবদুল্লাহ ইকবাল     কার্তিক-১৪২৯      ৩৪
প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা    
ফল ও সবজির সংগ্রহোত্তর ক্ষতি কমানোর মাধ্যমে কৃষকের আয় বর্ধন    মো: মনজুরুল হান্নান
    ড. মো: আতিকুর রহমান     কার্তিক-১৪২৯     ৩৬
এফএও’র ঋড়ঁৎ ইবঃঃবৎং ক্ষুধামুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন বাস্তবায়ন    মোঃ এনায়েত উল্ল্যাহ রাফি     কার্তিক-১৪২৯      ৩৮
বিশ^ মৃত্তিকা দিবস-২০২২ এর গুরুত্ব     মো: কামারুজ্জামান     অগ্রহায়ণ-১৪২৯     ৯
লোনা মাটিতে ধান চাষ প্রযুক্তি     মৃত্যুঞ্জয় রায়     অগ্রহায়ণ-১৪২৯     ১১
ফসল উৎপাদন ও শস্যনিবিড়তা    কৃষিবিদ সিকদার আনোয়ার     অগ্রহায়ণ-১৪২৯    ১৩
শূন্য চাষে সার সুপারিশের ভিত্তিতে সরিষা উৎপাদনে     ড. মো: আজিজুল হক, ড. মো. আব্দুল মালেক,
আর্থিকভাবে লাভবান প্রযুক্তি ও সম্ভাবনা     কামরুন্নাহার, সোহেল রানা, বাবুল আকতার     অগ্রহায়ণ-১৪২৯     ১৫
বালাইনাশক ব্যবহারের গুরুত্ব এবং ব্যবহারের সচেতনতা     ড. মোঃ আলতাফ হোসেন    অগ্রহায়ণ-১৪২৯    ১৭
রপ্তানিযোগ্য আলু চাষে কৃষকদের করণীয়    ড. মুহ: রেজাউল ইসলাম     অগ্রহায়ণ-১৪২৯     ১৯    
সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী বারি সূর্যমুখী মাড়াইযন্ত্র উদ্ভাবন    ড. মোহাম্মদ এরশাদুল হক     অগ্রহায়ণ-১৪২৯     ২১    
পাট পাতার ব্যবহার ও ঔষধিগুণ    জাকারিয়া আহমেদ, সুুরঞ্জন সরকার     অগ্রহায়ণ-১৪২৯     ২২
বসতবাড়িতে সবজি বাগান ব্যবস্থাপনা     কৃষিবিদ মো: আনিছুর রহমান    অগ্রহায়ণ-১৪২৯      ২৪
মাছের খাদ্য তৈরির মেশিন (সাউ ফিড মিল-১) উদ্ভাবন    মোঃ মাসুদ রানা     অগ্রহায়ণ-১৪২৯     ২৬
ডেইরি খামার লাভজনক করতে সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচর্যা    ডা: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান     অগ্রহায়ণ-১৪২৯     ২৭
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কৃষিতে করণীয়     মোঃ বেনজীর আলম
    ড. এ কে এম শামীম আলম     পৌষ-১৪২৯     ৩
পেঁয়াজের অজৈবিক ডিজঅর্ডার দূরীকরণে উত্তম কৃষি চর্চার প্রয়োগ    ড. মো. আলাউদ্দিন খান,
    ড. রুম্মান আরা, ড. হরিদাস চন্দ্র মোহন্ত,
    মো. মুশফিকুর রহমান    পৌষ-১৪২৯     ৫
ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যে রপ্তানি বাড়াতে করণীয়    মোঃ সাইফুল কামাল আজাদ    পৌষ-১৪২৯     ৯
ব্রি উদ্ভাবিত সাশ্রয়ী বীজ বপনযন্ত্র    ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম,
    কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন    পৌষ-১৪২৯     ১১
মাছচাষিদের পাশে থেকে নিরলসভাবে সেবা প্রদান
করছে বাংলাদেশ মৎস্য হাসপাতাল     মো: মাসুদ রানা    পৌষ-১৪২৯     ১৩
খাদ্য বিষক্রিয়ায় হাইড্রোজ, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও বিকল্প    প্রফেসর ড. মারুফ আহমেদ
    মোছা: ইমা পারভীন
    মোঃ শাহজাহান কবির    পৌষ-১৪২৯     ১৫
গবাদিপশুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা    ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম    পৌষ-১৪২৯     ১৬
নিরাপদ শাকসবজি সংগ্রহ ও কীটনাশক সংক্রমণমুক্তকরণ    কৃষিবিদ তাপস কুমার ঘোষ
    মোছা: সাবিহা সুলতানা     পৌষ-১৪২৯     ১৮
প্রবীণদের  স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও ব্যবস্থাপনা    মোরসালীন জেবীন তুরিন     পৌষ-১৪২৯     ২০
আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি    ড. জাহাঙ্গীর আলম     মাঘ-১৪২৯      ৩
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন “দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন
অনাবাদি না থাকে” বাস্তবায়নের রূপরেখা    ড. শামীম আহমেদ     মাঘ-১৪২৯      ৫  
পুষ্টি নিরাপত্তায় শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও     ড. মো: গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী,
সংরক্ষণের গুরুত্ব     মো: হাফিজুল হক খান     মাঘ-১৪২৯      ৭
মৎস্য খাতে ভ্যালু চেইন : নিরাপদ খাদ্য ব্রান্ডিং     মোঃ কাওছারুল ইসলাম সিকদার     মাঘ-১৪২৯      ৯
শীতকালে গবাদিপশুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় করণীয়     ড. হোসেন মোঃ সেলিম    মাঘ-১৪২৯      ১১
মৌচাষে স্মল হাইভ বিটল প্রতিরোধে করণীয়     জুবায়ের আহমেদ     মাঘ-১৪২৯     ১২    
পুষ্টির চাহিদা পূরণে সবজির ভূমিকা     ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক    মাঘ-১৪২৯      ১৪
সোনালি আঁশের রূপালি কাঠি কৃষিবিদ     জান্নাতুল ফেরদৌস     মাঘ-১৪২৯      ১৬
বাসায় উপকারী শোভাবর্ধক সাকুলেন্টের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা    পার্থ বিশ^াস, তিথি মন্ডল     মাঘ-১৪২৯      ১৭
নিরাপদ সবজি চাষ ও পুষ্টি নিরাপত্তা     ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার
    ড. সুস্মিতা দাস     ফাল্গুন-১৪২৯     ৩
বাংলাদেশে নিবিড় সবজি উৎপাদনে সাফল্য     বাদল চন্দ্র বিশ্বাস     ফাল্গুন-১৪২৯     ৫
বাংলার পাটজাত পণ্য : বর্ষপণ্য ২০২৩     ড. মো: আব্দুল আউয়াল
    কৃষিবিদ ড. মো: আল-মামুন     ফাল্গুন-১৪২৯     ৭
ট্রেড ফেসিলিটেশন সহজীকরণে কোয়ারেন্টাইন
ল্যাবরেটরির (ওঝঙ-১৭০২৫:২০১৭) এক্রিডিটেশনের গুরুত্ব    ড. জগৎ চাঁদ মালাকার     ফাল্গুন-১৪২৯     ৯
কলা, সবজি ও ভার্মিকম্পোস্টের সমন্বিত খামারের     ড. মো: আজিজুল হক, কামরুন নাহার    ফাল্গুন-১৪২৯     ১১
মাধ্যমে কৃষকের আর্থিক লাভ     
চরাঞ্চলের বসতবাড়িতে নিবিড় সবজি চাষ    ড. মোঃ শামীম হোসেন মোল্লা,
    ড. মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌস,
    ড. মোঃ আল-আমিন হোসেন তালুকদার     ফাল্গুন-১৪২৯     ১৪    
আমের ফুল ও ফল উৎপাদনের সমস্যা ও সমাধান    ড. মো. সদরুল আমিন    ফাল্গুন-১৪২৯     ১৬
পশুর খাদ্য তালিকায় কাঁচাঘাস     ডা: সুচয়ন চৌধুরী     ফাল্গুন-১৪২৯     ১৭
নতুন জাতের মাছ সুবর্ণ রুই ব্যাপক সম্ভাবনার হাতছানি     মোঃ তোফাজউদ্দীন আহ্মেদ     ফাল্গুন-১৪২৯     ১৯
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তন ২০২৩     ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি     চৈত্র    ০৩    
পল্লী উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও স্মার্ট পল্লী    মৃত্যুঞ্জয় রায়    চৈত্র    ০৭
টেকসই কৃষির প্রসারের লক্ষ্যে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনে বীজ প্রযুক্তি    ড. মো. আবু হেনা ছরোয়ার জাহান     চৈত্র    ০৯
    ড. পরিমল চন্দ্র সরকার
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরিষার তেল    কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন    চৈত্র    ১১    
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় আগাছানাশকের সুষ্ঠু ব্যবহার    কৃষিবিদ মোহাম্মদ সাইফুল আলম সরকার    চৈত্র    ১২
মহিষের বিভিন্ন জাত    মোঃ ওমর ফারুক, মোঃ শাহেদ হোসেন, চৈত্র    ১৪
    মাহমুদা বিলকিস বিনতে আলম, আব্দুল্লøাহ ইবনে
জলাশয়ের শত্রুখ্যাত সাকার মাছ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহারের কলাকৌশল    মোঃ মাসুদ রানা    চৈত্র    ১৬
মাটিতে জৈব পদার্থ সরবরাহে ফসলভেদে সবুজসার     নাহিদ বিন রফিক    চৈত্র    ১৮
আগামীর কৃষি ভাবনা
এসডিজি ও ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে বিএসআরআইয়ের     কৃষিবিদ ড. মো. আমজাদ হোসেন,
অর্জন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা     কৃষিবিদ ড. তোফায়েল আহমেদ    বৈশাখ-১৪২৯          ১৭
মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহে, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী    কৃষিবিদ মো: ইউছুফ ভূঁঞা      জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯     ১৯
বাংলাদেশে কৃষি খাতের সম্ভাবনা     ড. রফিকুল আলম খান     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ২১
ফল উৎপাদনে বিপুল অগ্রগতি ও সম্ভাবনা     কৃষিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম     আষাঢ়-১৪২৯     ২৫
কৃষিপণ্য রপ্তানি : সম্ভাবনা, সমস্যা ও উত্তরণের উপায়     কৃষিবিদ কাজী আবুল কালাম     আষাঢ়-১৪২৯      ২৭
বাংলাদেশের কিছু বিলুপ্ত প্রায় ফলের চাষ     কৃষিবিদ ড. এম. এ. রহিম
    রেহানা সুলতানা
    মো. মনিরুজ্জামান     আষাঢ়-১৪২৯     ২৯
কর্মসংস্থান তৈরি ও পারিবারিক আয় বৃদ্ধিতে
কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ     কৃষিবিদ ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী    আষাঢ়-১৪২৯     ৩১
    মো. হাফিজুল হক খান     
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে কৃষি বিপ্লব ত্বরান্বিত করবে পদ্মা সেতু     ড. জাহাঙ্গীর আলম     শ্রাবণ-১৪২৯     ৩০
কৃষির সমৃদ্ধি বৃদ্ধি ও অব্যাহত রাখার জন্য করণীয়    শেখ মোঃ শহীদুজ্জামান     শ্রাবণ-১৪২৯     ৩২
খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির স্বার্থে মিলিং ব্যবস্থাপনার জনসচেতনতা     মোঃ কাওছারুল ইসলাম সিকদার     ভাদ্র-১৪২৯     ২২
তুলা চাষে অনন্য সুবিধা ও সম্ভাবনা     অসীম চন্দ্র শিকদার    ভাদ্র-১৪২৯     ২৪
বাংলাদেশে প্ল্যান্ট টিসু কালচার এর সম্ভাবনা     ড. মো. সাইফুল ইসলাম
    ড. শামীম আহমেদ    আশি^ন-১৪২৯     ২২
উদ্ভিজ আমিষ : প্রাণিজ মাংসের বিকল্প ব্যবহার     মোঃ আখতারুজ্জামান     অগ্রহায়ণ-১৪২৯     ২৯
অজৈব অভিঘাত ব্যবস্থাপনায় ন্যানোপার্টিকেলসের গুরুত্ব    ড. রিপন সিকদার     অগ্রহায়ণ-১৪২৯     ৩১
 কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি     কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন
    মো: শাহীদুল ইসলাম     অগ্রহায়ণ-১৪২৯     ৩৩
বাংলাদেশে ভোজ্যতেল উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা     মুহাম্মদ শফিকুল হক আকন্দ     পৌষ-১৪২৯     ২২
তেল ফসলের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বিনা উদ্ভাবিত তিলের     ড. মো. আব্দুল মালেক,
জাতসমূহের সম্ভাবনা     মো. সৈকত হোসেন ভূইয়া    মাঘ-১৪২৯     ১৯    
মানসম্পন্ন বীজের জন্য বীজের জেনেটিক বিশুদ্ধতা অপরিহার্য    ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মেদ     মাঘ-১৪২৯     ২১
কৃষিতে প্রোবায়টিক ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহারে সম্ভাবনা    ড. মুহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন     মাঘ-১৪২৯     ২৩
অর্থকরী ফসল তুলার শস্যবিন্যাস    অসীম চন্দ্র শিকদার     মাঘ-১৪২৯     ২৪
সবজি রপ্তানি বৃদ্ধিতে উত্তম কৃষি চর্চা     প্রফেসর আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ     ফাল্গুন-১৪২৯     ২২
বাংলাদেশে লিলিয়াম চাষ : বাণিজ্যিক সম্ভাবনা     ড. ফারজানা নাসরীন খান,     ফাল্গুন-১৪২৯     ২৪
    আফরোজ নাজনীন, কারিমাতুল আম্বিয়া
পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৃক্ষরোপণ    কৃষিবিদ মোঃ তারিক হাসান     চৈত্র    ১৯    
উচ্চমূল্যের ফসল চাষাবাদ
উচ্চমূল্য ফসল গ্রীষ্মকালীন জাত বারি পেঁয়াজ-৫ এর চাষাবাদ     কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ     বৈশাখ-১৪২৯      ১৯
বাংলাদেশে ঔষধিগুণসম্পন্ন ঋষি মাশরুম চাষের সম্ভাবনা    ড. মোছা: আখতার জাহান কাঁকন     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯     ২৩
বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের সম্ভাবনা ও সফলতা    ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ২৫
নাশপাতি ফলের জাত পরিচিতি, চাষাবাদ পদ্ধতি ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা     কৃষিবিদ ড. মো. শরফ উদ্দিন     আষাঢ়-১৪২৯      ৩৩
প্রাকৃতিক খাদ্যশস্যের ‘এক পাওয়ার হাউস’ চিয়া বীজ পুষ্টি ও শক্তির জোগানদাতা    মো: হাফিজুর রহমান    শ্রাবণ-১৪২৯     ৩৪    
কৃত্রিমভাবে দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে সারা বছর ড্রাগন ফল উৎপাদন প্রযুক্তি     ড. এম এ রহিম, মোঃ মনিরুজ্জামান     আশি^ন-১৪২৯     ২৪
সম্ভাবনাময় টিউলিপ ফুলের উৎপাদন প্রযুক্তি     ড. শামীম আহমেদ     অগ্রহায়ণ-১৪২৯      ৩৫
উচ্চফলনশীল বিনা সয়াবিন৭ ও সয়াবিন চাষাবাদ পদ্ধতি     ড. মো. আব্দুল মালেক     পৌষ-১৪২৯      ২৪
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার পানিকচু    মোঃ আবদুর রহমান     মাঘ-১৪২৯      ২৬
তরমুজের আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল    ড. একেএম কামরুজ্জামান     ফাল্গুন-১৪২৯      ২৬
বস্তায় আদার চাষ পদ্ধতি    ড. মোঃ আশিকুল ইসলাম    চৈত্র    ২১    
সফল কৃষকের গল্প
মিশ্র ফল বাগান স্থাপনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা     কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ মিস্ত্রি     বৈশাখ-১৪২৯      ২১    
সিংগাইর মিশ্র ফলবাগান স্থাপনে তরুণ উদ্যোক্তা     মো. আতিকুর রহমান,    আষাঢ়-১৪২৯      ৩৪
    কৃষিবিদ শান্তা ইসলাম     
আমে লাভবান গোমস্তাপুরের আম উদ্যোক্তা সেরাজুল ইসলাম    কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি
    মো: আমিনুল ইসলাম    শ্রাবণ-১৪২৯      ৩৬    
রকমেলন চাষে সফলতা পেয়েছেন রূপসার ক্ষিতিষ বৈরাগী    মোঃ আবদুর রহমান     ভাদ্র-১৪২৯      ২৬
ইঁদুর নিধনে মাগুরার সফল বীর কৃষক     মোঃ আব্দুল হান্নান মোল্যা
    কৃষিবিদ শারমিনা শামিম,
    মো: আবদুর রহমান     আশি^ন-১৪২৯      ২৫    
বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী ফল উৎপাদন     ড. মো. জামাল উদ্দিন     অগ্রহায়ণ-১৪২৯      ৩৭
পাটচাষিদের সফলতা     কৃষিবিদ ড. এ. টি. এম. মোরশেদ আলম     পৌষ-১৪২৯      ২৬
কৃষিতে নারী উদ্যোক্তা     ফারজানা হক দীপু     মাঘ-১৪২৯      ২৮
গ্রীষ্মকালীন টমেটোর নীরব বিপ্লব    ড. মো. জামাল উদ্দিন     ফাল্গুন-১৪২৯      ২৮
নারীর কর্মসংস্থানে মাশরুম    ড. মোছা: আখতার জাহান কাঁকন    চৈত্র    ২৩    
কবিতা
আঙিনা সাজাই ফলদ সম্ভারে    মোছলেহ উদ্দিন সিদ্দিকী     আষাঢ়-১৪২৯      ৩৬
নিয়মিত বিভাগ
তথ্য ও প্রযুক্তি পাতা    কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন     বৈশাখ-১৪২৯    ২৩
তথ্য ও প্রযুক্তি পাতা     কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ২৭
তথ্য ও প্রযুক্তি পাতা                    কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন     আষাঢ়-১৪২৯      ৩৭
তথ্য ও প্রযুক্তি পাতা     কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন     শ্রাবণ-১৪২৯      ৩৮
ভাদ্র মাসের তথ্য ও প্রযুক্তি পাতা    কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন    ভাদ্র-১৪২৯      ২৯
আশ্বিন মাসের কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি    কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন    আশি^ন-১৪২৯      ২৯
কার্তিক মাসের কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি    কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন    কার্তিক-১৪২৯      ৩৯
অগ্রহায়ণ মাসের তথ্য ও প্রযুক্তি পাতা     কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন     অগ্রহায়ণ-১৪২৯      ৩৯
পৌষ মাসের তথ্য ও প্রযুক্তি পাতা    কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন    পৌষ-১৪২৯      ২৯
মাঘ মাসের তথ্য ও প্রযুক্তি পাতা    কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন     মাঘ-১৪২৯      ৩০
ফাল্গুন মাসের তথ্য ও প্রযুক্তি পাতা    কৃষিবিদ মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন    ফাল্গুন-১৪২৯      ৩০
প্রশ্নোত্তর    কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর     বৈশাখ-১৪২৯      ২৪
প্রশ্নোত্তর    কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর     জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ২৮
প্রশ্নোত্তর     কৃষিবিদ মো. আবু জাফর আল মুনছুর     আষাঢ়-১৪২৯      ৩৮
প্রশ্নোত্তর    কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর     শ্রাবণ-১৪২৯      ৩৯
প্রশ্নোত্তর    কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর     ভাদ্র-১৪২৯      ৩০
প্রশ্নোত্তর    কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর     আশি^ন-১৪২৯      ৩০
প্রশ্নোত্তর    কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর    পৌষ-১৪২৯      ৩০
প্রশ্নোত্তর    কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর     ফাল্গুন-১৪২৯      ৩১
প্রশ্নোত্তর    কৃষিবিদ মোঃ আবু জাফর আল মুনছুর     চৈত্র-১৪২৯      ২৫
জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষি     কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম     বৈশাখ-১৪২৯     ২৬
আষাঢ় মাসের কৃষি     কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম      জ্যৈষ্ঠ-১৪২৯      ৩০
শ্রাবণ মাসের কৃষি (১৬ জুলাই-১৫ আগস্ট)     কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম     আষাঢ়-১৪২৯      ৩৯
ভাদ্র মাসের কৃষি (১৬ জুলাই-১৫ সেপ্টেম্বর)     কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম     শ্রাবণ-১৪২৯      ৪০
আশি^ন মাসের কৃষি (১৫ সেপ্টেম্বর-১৬ অক্টোবর)     কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম     ভাদ্র-১৪২৯      ৩১
কার্তিক মাসের কৃষি (১৭ অক্টোবর-১৫ নভেম্বর)    কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম     আশি^ন-১৪২৯      ৩১
অগ্রহায়ণ মাসের কৃষি (১৬ নভেম্বর-১৫ ডিসেম্বর)    কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম     কার্তিক-১৪২৯      ৪০
পৌষ মাসের কৃষি (১৬ ডিসেম্বর-১৪ জানুয়ারি)    কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম     অগ্রহায়ণ-১৪২৯      ৪০
মাঘ মাসের কৃষি (১৫ জানুয়ারি-১৩ ফেব্রুয়ারি)    কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম    পৌষ-১৪২৯      ৩১
ফাল্গুন মাসের কৃষি (১৫ ফেব্রুয়ারি-১৪ মার্চ)    কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম     মাঘ-১৪২৯    ৩১
চৈত্র মাসের কৃষি (১৫ মার্চ-১৩ এপ্রিল)    কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম     ফাল্গুন-১৪২৯    ৩২
বৈশাখ মাসের কৃষি (১৫ এপ্রিল-১৪ মে)    কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম     চৈত্র-১৪২৯    ২৬
বর্ষসূচি
বর্ষসূচি-১৪২৯ (বৈশাখ-চৈত্র)    মোছাঃ সাবিহা সুলতানা    চৈত্র-১৪২৯    ২৮

বিস্তারিত