বৈশাখ মাসের কৃষি
(১৪ এপ্রিল- ১৪ মে)
কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
বৈশাখ মাস কৃষি, প্রকৃতি এবং অর্থনীতির অংশ। প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখেই কৃষক তার ফসলকে খাদ্যে রূপান্তরিত করে। বৈশাখে নববর্ষের উৎসবের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার কারিগর কৃষক, পুরনো বছরের ব্যর্থতাগুলো ঝেড়ে নতুন প্রত্যাশায় পুনরুজ্জীবিত হয়ে ফসল উৎপাদনে কাজে ব্যস্ত থাকে। আসুন জেনে নেই বৈশাখে কৃষির করণীয় দিকগুলো।
বোরো ধান
ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। নাবি বোরো ধানের থোড় আসার সময় পানির অভাব না হয় তাই আগে থেকেই সম্পূরক সেচের জন্য মাঠের এক কোণে মিনি পুকুর তৈরি করতে হবে। ধানের দানা শক্ত হলে জমি থেকে পানি বের করে দিতে হবে। এ মাসে আক্রান্ত বালাই দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ মাসে শিলাবৃষ্টি হতে পারে, বোরো ধানের ৮০% পাকলে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলতে হবে।
আউশ ধান
আউশ ধানের জমি তৈরি ও বীজ বপনের সময় এখন। বোনা আউশ উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি এবং রোপা আউশ বন্যামুক্ত আংশিক সেচনির্ভর মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নিম্ন জমি আবাদের জন্য নির্বাচন করতে হবে। জমি তৈরির শেষ চাষের সময় শতাংশপ্রতি ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি ও ৩০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বৃষ্টিনির্ভর বোনা আউশ এলাকায় ইউরিয়া দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করত হবে। প্রথম কিস্তি শেষ চাষের সময় এবং দ্বিতীয় কিস্তি ধান বপনের ৩০-৪০ দিন পর। জমিতে গন্ধক এবং দস্তার অভাব থাকলে শতাংশ প্রতি ১৩৫ গ্রাম জিপসাম ও ২০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে। আউশের উন্নত জাত হিসাবে বিআর২০, বিআর২১, বিআর২৪, ব্রি ধান৪২, ব্রি ধান৪৩ ও ব্রি ধান৮৩, ব্রি ধান ১০৬ এবং রোপা হিসেবে বিআর২৬, ব্রি ধান২৭, ব্রি ধান৪৮, ব্রি ধান৮২, ব্রি ধান৮৫, ব্রি ধান৯৮ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৭ । এ ছাড়াও খরাপ্রবণ বরেন্দ্র এলাকাসহ, পাহাড়ি এলাকার জমিতে বিনা ধান-১৯, বিনা ধান-২১ চাষ করতে পারেন।
পাট
বৈশাখ মাস তোষা পাটের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। ফাল্গুনী তোষা ও-৯৮৯৭, বিজেআরআই তোষা পাট-৫, বিজেআরআই তোষা পাট-৬, বিজেআরআই তোষা পাট-৭, বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১), বিজেআরআই তোষা পাট-৯ (খরিফ-১) ভালো জাত।
ভুট্টা (খরিফ)
খরিফ ভুট্টার বয়স ২০-২৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে। জমিতে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং একই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।
শাকসবজি
বসতবাড়ির বাগানে জমি তৈরি করে ডাঁটা, কলমিশাক, পুঁইশাক, করলা, ঢেঁড়স, বেগুন, পটোল চাষের উদ্যোগ নিতে হবে। মাদা তৈরি করে চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দুল, শসা, মিষ্টিকুমড়া, চাল কুমড়ার বীজ বুনে দিতে পারেন। আগের তৈরি করা চারা থাকলে ৩০/৩৫ দিনের সুস্থ সবল চারাও রোপণ করতে পারেন। লতানো সবজির জন্য মাচা তৈরি করে নিতে হবে।
গাছপালা
এ মাসে আমের মাছি পোকাসহ অন্যান্য পোকার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। মাছি পোকা দমনের জন্য সবজি খেতে যে রকম বিষটোপ ব্যবহার করা হয় সে ধরনের বিষটোপ বেশ কার্যকর। ডিপটরেক্স, ডারসবান, ডেনকাভেপন সামান্য পরিমাণ দিলে উপকার পাওয়া যায়। এ সময় কাঁঠালের নরম পচা রোগ দেখা দেয়। এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব থাকলে ফলে রোগ দেখা দেয়ার আগেই ফলিকুর ০.০৫% হারে বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ বা রিডোমিল এম জেড-৭৫ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। বাড়ির আঙিনায় সুস্থ সবল, উন্নত নারিকেল চারা এবং গ্রামের রাস্তার পাশে পরিকল্পিতভাবে খেজুর ও তালের চারা এখন লাগাতে পারেন। যত্ন, পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে ৩-৪ বছরেই গাছগুলো অনেক বড় হয়ে যাবে।
প্রিয় পাঠক, বৈশাখ নতুন আবাহনের সৌরভের পাশাপাশি নিয়ে আসে কালবৈশাখীকে। কালবৈশাখীর থাবা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কৃষিতে আগাম বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সুবিবেচিত লাগসই কৌশল আর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সব বাধা ডিঙিয়ে আমরা কৃষিকে নিয়ে যেতে পারব সমৃদ্ধির ভুবনে। আপনাদের সবার জন্য নতুন বছরের শুভ কামনা। কৃষি সংশ্লিষ্ট তথ্য জানতে কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নম্বরে কল করুন।
লেখক : সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা, টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪,