Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের (অগজ) সঠিক ব্যবহার

 এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের (অগজ) সঠিক ব্যবহার
ডা: মনোজিৎ কুমার সরকার
রোগজীবাণুর এন্টিবায়োটিক ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলাকে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (অগজ) বলে। ফলে এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসায় রোগজীবাণুকে ধ্বংস করা যাবে না, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ, পশু পাখির মৃত্যু ঘটবে।
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য খাতে নতুন এক অশনি সংকেত হলো অগজ যদি মানুষ বা পশু পাখির সংক্রামকজনিত রোগ নিরাময়ের জন্য এন্টিবায়োটিক ওষুধ প্রদান করা হয় এবং যদি তা সঠিক পরিমাণে ও পর্যাপ্ত সময় ধরে গ্রহণ না করে, তখন ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস না হয়ে উল্টো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে।
ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে মানুষ ও পশু পাখিতে অগজ দেখা দিয়েছে। ফলে রোগ ভাল হচ্ছে না বা অত্যন্ত উচ্চ মাত্রায় এন্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে।
এন্টিবায়োটিক
ইহা একটি উপাদান যা ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং অন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসকে ধ্বংস বা তার বংশবৃদ্ধি রোধ করার জন্য ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ইহাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক আশীর্বাদ বলা হয়। এন্টিবায়োটিক সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারীর চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।
অগজ এর সাথে সম্পর্কিত ডঐঙ এর গাইডলাইন অনুযায়ী এন্টিবায়োটিককে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে।
অ্যাক্সোস গ্রুপ (অপপবংং এৎড়ঁঢ়)
এ জাতীয় এন্টিবায়োটিক প্রধানত ঘধৎৎড়ি ঝঢ়বপঃৎঁস, সস্তা, সহজলভ্য। বেশির ভাগ সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। যেমন : চবহরপরষষরহ. (পেনিসিলিন)
ওয়াচ গ্রুপ (ডধঃপয এৎড়ঁঢ়)
এ জাতীয় এন্টিবায়োটিক সুনির্দিষ্ট জাবাণুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। যেমন : ঈবভধষড়ংঢ়ড়ৎরহং, ঈধৎনধঢ়বহবসং.
রিজার্ভ গ্রুপ (জবংবৎাব এৎড়ঁঢ়)
এ জাতীয় এন্টিবায়োটিক মানব চিকিৎসায় শেষ অপশন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অগজ ঝুঁকি কমাতে খুব সীমিত ব্যবহার করা হয়। এ গ্রুপের এন্টিবায়োটিক আন্তর্জাতিক স্টুয়ার্ডশিপ প্রোগ্রাম দ্বারা সুরক্ষিত। এ গ্রুপের  ওষুধ প্রাণী চিকিৎসায় ব্যবহার করা নিষেধ। যেমন : ৪ঃয মবহবৎধঃরড়হ ঈবভধষড়ংঢ়ড়ৎরহ, চড়ষুসরীরহং.
অগজ এর কারণসমূহ
    প্রয়োজন ছাড়াই মানুষ, পশু পাখিতে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা।
    সঠিক পরিমাণে ও সময় মতো এন্টিবায়োটিক না দেয়া।
    চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই, ইচ্ছামতো এন্টিবায়োটিক সেবন করা।
    একসঙ্গে একাধিক এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা।
    দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং জীবনিরাপত্তা ব্যবস্থা না মেনে চলা।
    নিম্ন মানসম্পন্ন এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার।
    পশু-পাখি, মাছ, শাকসবজিতে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে তাদের মলমূত্রের মাধ্যমে প্রকৃতিতে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া অগজ হয়ে যাচ্ছে।
অগজ এর ক্ষতিকর প্রভাব
    মানুষ দবাদি পশু পাখির মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাবে, শারীরিক অক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
    সামগ্রিক উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা কমে যাবে।
 পশু পাখির রোগ নিরাময় করা কঠিন হবে এবং চিকিৎসা খরচ বৃদ্ধি পাবে।
দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা প্রয়োজন হবে। ফলে খরচ বেড়ে যাবে।
প্রতিকার
 গবাদিপশু, হাঁসমুরগী এবং পশু খাদ্যে নিষিদ্ধ এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না।
 বিধি মোতাবেক সকল বর্জ অপসারণ করা।
    এন্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা অর্থাৎ যৌক্তিকভাবে ব্যবহার করা।
    একইসাথে একাধিক এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না।
    প্রয়োজন না হলে ভাইরাসজনিত রোগে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা।
    নির্দিষ্ট জীবাণু সংক্রমণে নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা।
    সঠিক রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
    রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক ব্যবহার ও বিক্রি না করা।
অগজ সূচকগুলোর ওপর নজর দেয়া হলে তা মানুষের স্বাস্থ্য, পশুর স্বাস্থ্য, খাদ্যব্যবস্থা এবং পরিবেশের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী অগজ নীতিমালা প্রণয়নে সহায়ক হতে পারে। (তথ্যসূত্র : প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল- উখঝ)

লেখক : ভেটেরিনারি অফিসার, জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতাল, ঝিনাইদহ, মোবাইল : ০১৭১৫২৭১০২৬, ই-মেইল : drmonojit66@gmail.com