Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ভাবনায় ইঁদুর গবেষণা

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ভাবনায় ইঁদুর গবেষণা
ড. মোঃ জাকির হোসেন
ইঁদুর একটি চতুর ও নীরব ধ্বংসকারী স্তন্যপায়ী প্রাণী। প্রাণী হিসেবে ইঁদুর আকারে সাধারণত ছোট হলেও ক্ষতি করার সক্ষমতা ব্যাপক। এদের অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি। এরা যে কোনো খাদ্য খেয়ে বাঁচতে পারে এবং যে কোনো পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে।
এক গবেষণা মতে, এশিয়ায় ইঁদুর বছরে যা ধান-চাল খেয়ে নষ্ট করে তা ১৮ কোটি মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। আর শুধু বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০-৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে। ইঁদুর বছরে ধান ও গমের প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত ক্ষতি করে থাকে যার মূল্য আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। তাছাড়া ইঁদুর মুরগির খামারে গর্ত করে, খাবার খেয়ে ডিম ও ছোট মুরগি খেয়ে প্রতি বছর খামারপ্রতি প্রায় ১৮ হাজার টাকা ক্ষতি করে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গুদামজাত শস্য ইঁদুর দ্বারা ক্ষতি হয়ে থাকে। ইঁদুর মাঠের দানাজাতীয়, শাকসবজি, মূলজাতীয়, ফলজাতীয় ফসলের ক্ষতি করে থাকে। আবার গুদামঘরে সংরক্ষিত ফসলেরও মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে (প্রায় শতকরা ২০ ভাগ)। ক্ষতির এই ব্যাপকতার কারনে এ অঞ্চলে ইঁদুর নিধনে প্রতি বছরে বিভিন্ন প্রতিপাদ্য হয়ে থাকে।
ইঁদুর দ্বারা ক্ষতি সংক্রান্ত সমস্যাটি যেহেতু বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের জন্য ব্যাপক, তাই এর সমাধানে এ অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোকেই  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন। আসলে গবেষণার কোন বিকল্প নেই। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের জেনেটিক্সের প্রফেসর সিনক্লেইয়ার এবং সেন্টার ফর বায়োলজি অব এজিং রিসার্চের সমন্বয়ক পল এফ গেন দেখেছেন, প্রাণিদেহে বার্ধক্য একটি পরিবর্তনযোগ্য প্রক্রিয়া। চাইলে বার্ধক্যকে বিপরীত দিকে পরিবর্তন করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের এক ল্যাবে ঘটেছে বিস্ময়কর এক ঘটনা। একটি বৃদ্ধ অন্ধ ইঁদুর তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে। শুধু তাই নয়, একইভাবে তারুণ্য ফিরে পেয়েছে ইঁদুরটি। ফিরে পেয়েছে হারানো স্বাস্থ্য। কিডনি, মস্তিকসহ তার সবকিছুই আগের চেয়ে বেশি সচল হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ, ইঁদুরের বয়স বাড়ানো-কমানো সম্ভব হয়েছে ল্যাবেই। সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ইঁদুরের প্রসঙ্গটি এসেছে আমেরিকান বিজ্ঞানী জন ক্যালহুনের একটি গবেষণার সূত্রে। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর গবেষণাপত্রে বলেছেন, ইঁদুরের বসবাস ও চলাফেরার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার তুলনায় সংখ্যা খুব বেশি বেড়ে গেলে পুরুষ ইঁদুর ভীষণ হিং¯্র হয়ে ওঠে এবং সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে পরস্পরকে কামড়ায়। এখন যদি মনে করি, এমন একটি পুরুষ হিং¯্র ইঁদুরের কামড়ের কারণে বা প্রজননের কারণে দাঁতবিহীন নতুন বাচ্চা জন্মাতে লাগল, তাহলে ইঁদুর দিয়েই ইঁদুর দমন করতে পারব। এরকম শত শত চিন্তার সমন্বয়ে শত শত প্রযুক্তি প্রতিদান হিসেবে আসবে।
বারবার কীটনাশক ব্যবহারে মাধ্যমে শুধু ইঁদুর নয়, মশা ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের প্রতিরোধের বিকাশ ঘটায়। যাহা তাদেরকে বিভিন্ন রোগের বাহক বা ভেক্টর হিসেবে আরো শক্তিশালী হওয়ার চাপ আরোপ করে। উপরন্তু রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ। এ সকল চাপ মোকাবিলায় নতুন নতুন শরীরবৃত্তীয় উপায়ের মাধ্যমে উচ্চ অভিযোজিত ভেক্টরে পরিণত হচ্ছে ইঁদুর, মশা ও অন্যান্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ। প্রয়োজনে বিবর্তন বা মহাদেশীয় স্থানান্তরের মাধ্যমে এক স্থান থেকে বহুগুণে শক্তিশালী হয়ে স্থানান্তরিত হয়ে (আফ্রিকান ডেঙ্গু মশার স্থানান্তর) নতুন ঠিকানায় আশ্রয় বা পোষক হয়ে ওঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে করোনা ভাইরাস, ডেঙ্গু, সার্সসহ নতুন নতুন বালাই এর আবির্ভাব ঘটছে। এই শতাব্দির ভয়াবহ করোনা মহামারি আমাদের নাজুক অবস্থা দেখিয়ে দিয়েছে। একমাত্র          কৃষি ব্যবস্থা টিকে থাকার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে ছিল। তাই কৃষি গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিষয়ে আরো মনোনিবেশ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট সব অক্লান্ত প্রচেষ্টায় শস্যের নিবিড়তা বেড়েই চলেছে। তারই নির্দেশনায় আজ এক ইঞ্চি জমিও আমরা খালি রাখছি না। তার পরেও অনাগত অনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে মোকাবিলা করতে ইঁদুরের মুখের খাবারকে ভোক্তার খাবারে রূপান্তর করতে পারলে আমাদের খাদ্য আমদানি বন্ধ করে, খাদ্য আমদানির হুমকিতে থাকা দেশগুলোতে অধিক কৃষিপণ্য রপ্তানি করার মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারব।

লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানক কর্মকর্তা, পরিকল্পনা শাখা, পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, মোবাইল : ০১৩০৬৭৬৯৯০০, ই-মেইলঃzakirbjri@gmail.com