Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

শীতকালে গবাদিপশুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় করণীয়

শীতকালে গবাদিপশুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় করণীয়
ড. হোসেন মোঃ সেলিম
বাংলাদেশ ষড় ঋতুর দেশ যেখানে সাধারণত ২ মাস পর পর ঋতু বদল হয়। এ ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আবহাওয়া ও জলবায়ুরও পরিবর্তন সাধিত হয়। ফলে এ পরিবর্তনসমূহ গবাদিপশুর বাসস্থান, খাদ্য ও উৎপাদনে ব্যাপক তারতম্য পরিলক্ষিত হয় বিশেষ করে বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ শীত অনুভূত হচ্ছে তাতে গবাদিপশুর খাদ্য গ্রহণ ও উৎপাদনের উপর প্রভাব পড়ছে। তাই শীতকালে গবাদিপশুর সঠিক বাসস্থানের পাশাপাশি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় অধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
সাধারণত প্রতি বছর এসময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে দেশব্যাপি গবাদিপশু ও হাঁসমুরগির টিকা দান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তাই এসময় বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক টিকা দেয়া না থাকলে অতিসত্বর কৃষক ভাইয়েরা তাদের গবাদিপশুকে টিকা দিয়ে নিবেন। এছাড়া কৃমি গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে তাই গবাদিপশুকে নিয়মিত কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে।
বিগত কার্তিক মাসে চাষ করা মাসকলাই এ মাসে গবাদিপশুকে খাওয়ানোর উপযুক্ত সময়। গবাদিপশুর জন্য উন্নত জাতের ঘাস বিশেষ করে ভুট্টা, নেপিয়ার, পাকচং ইত্যাদি ঘাস চাষের ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। তাই নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস হতে উন্নত জাতের ঘাসের বীজ, কাটিং ও চারা সংগ্রহ করে নিতে হবে। শীতের মৌসুমে দেশের অনেক এলাকায় মাসকলাই ফসল উঠার সময়। তাই মাসকলাইয়ের গাছগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ এগেুলো বর্ষাকালে গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এসময় তিসির গাছ বা এর অন্য কোন অংশ গবাদিপশুকে খাওয়ানো উচিত নয় কেননা এতে সায়ানাইড এবং অন্যান্য টক্সিন থাকে, যা গবাদিপশুর জন্য ক্ষতিকারক। তাছাড়া এসময় রবিশস্য ক্ষেতের আগাছা তুলে তা ভালো করে ধুয়ে গবাদিপশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।
বর্তমানে দেশের অনেক এলাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে বিধায় গবাদিপশুর উপর স্ট্রেস বা প্রীড়ন পড়বে এবং গবাদিপশুর খাদ্য গ্রহণ কমে যাবে। তাই গবাদিপশুর সুষম খাদ্য এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে অল্প খাবারে পশুর দৈহিক চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান সঠিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। এজন্য গবাদিপশুর দানাজাতীয় খাদ্যে অধিক কার্বোহাইড্রেট বা অধিক চর্বি এবং তেলজাতীয় খাদ্য উপকরণ সরবরাহ করা প্রয়োজন। তাই দানাজাতীয় খাদ্য তৈরিতে ভুট্টা, গম ও অন্যান্য তেলজাতীয় দানাদার খাদ্য উপাদানসমূহ বেশি পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে। ফলে গবাদিপশু অধিক এনার্জি বা শক্তি পাবে এবং স্ট্রেস থেকে রক্ষা পাবে। এ ছাড়া এসময় গবাদিপশুর খাদ্যে স্বাভাবিকের তুলনায় ২-৫% অধিক মোলাসেস বা চিটাগুড় ব্যবহার করা যেতে পারে যা গবাদিপশুর খাদ্য গ্রহণ ক্ষমতা বাড়াবে এবং শক্তি জোগাবে।
অন্যদিকে হাঁসমুরগির দানাজাতীয় খাদ্যে বেশি পারিমাণে এনার্জি বা শক্তি বাড়ানোর জন্য ১-২% সয়াবিন তেল যোগ করা যেতে পারে ফলে হাঁস-মুরগি অধিক পারিমাণে শক্তি বা এনার্জি পাবে এবং শীতের স্ট্রেস থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়া গবাদিপশু ও পোল্ট্রির খাদ্যে ভিটামিন ও মিনারেলস  ০.২৫-০.৫% যোগ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে অর্থাৎ গবাদিপশুর উৎপাদন ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হবে।
এসময় তীব্র শীতের কারণে পানি অনেক ঠা-া থাকে তাই গবাদিপশুকে বিশুদ্ধ কুসুম গরম পানি বা ভাতের মাড় সরবরাহ করা যেতে পারে। কোনভাবেই গবাদিপশুকে ঠা-া পানি সরবরাহ করা যাবে না। এতে গবাদিপশু নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
যেহেতু এসময় প্রচুর ঠা-া পড়ে সেহেতু সরাসরি কাঁচাঘাস খাওয়ানোর চেয়ে পূর্বে সংরক্ষিত সাইলেজ এবং হে বা শুকনো খড়ের সাথে মিক্স করে খাওয়ানো যেতে পারে। সাইলেজ একটি উত্তম আঁশজাতীয় এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ গোখাদ্য যা গবাদিপশু খেতে খুব পছন্দ করে এবং সাইলেজ খাওয়ালে গবাদি পশুর দৈহিক বৃদ্ধি ও উৎপাদন দুটোই বৃদ্ধি পায়। তাই কৃষক ভাইয়েরা এসময় প্রাপ্ত অধিক পরিমাণ ভুট্টা পরিপক্ব হওয়ার পূর্বে অর্থাৎ গাছে ফুল আসার সাথে সাথে কেটে সাইলেজ তৈরি করে রাখতে পারে, যা বছরের অন্যান্য সময় বা খাদ্য সংকটকালে গবাদিপশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। তাই সাইলেজ তৈরির উত্তম সময় হচ্ছে এখন, যা গবাদিপশুর সারাবছরের আঁশজাতীয় খাদ্যের জোগান দিবে।
সবশেষে বলা যায়, পরিকল্পনামতো যদি গবাদিপশুর খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা যায় বছরের অন্যান্য সময়ও সমানহারে গবাদিপশুকে অধিক পুষ্টিসম্পন্ন আঁশজাতীয় খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে এবং গবাদিপশুর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

লেখক : উপপরিচালক (প্রাণিসম্পদ পরিসংখ্যান), পরিকল্পনা শাখা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৯৪৬৯৫২০১১। ই-মেইল : hmsalim@gmail.com