Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন শিং মাছের নিবিড় চাষ

বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন শিং মাছের নিবিড় চাষ

ড. এ এইচ এম কোহিনুর
আমাদের দেশে শিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। এ মাছে ফ্যাট/তেলের পরিমাণ কম এবং সহজপাচ্য উচ্চমানের প্রচুর আমিষ থাকায় সবার মধ্যে বিশেষ করে রোগীদের মধ্যে এ মাছের প্রচুর চাহিদা ও কদর রয়েছে। তা ছাড়া শিংকে জিয়ল মাছ বলা হয়ে থাকে আর জিয়ল মাছের চাহিদা অন্য সব মাছের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই রুইজাতীয় মাছের চেয়ে এদের বাজারমূল্যও অনেক বেশি। সাধারণত মৎস্য চাষিরা আধা নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করে থাকে, সেক্ষেত্রে তারা তুলনামূলকভাবে বেশি   মুনাফা লাভ করে। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যে, শিং মাছ মিশ্র চাষের চেয়ে নিবিড় চাষ বেশি লাভজনক। ময়মনসিংহ অঞ্চলের অনেক চাষি বিএফআরআই এর কারিগরি সহযোগিতায় শিং মাছের নিবিড় চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন। এ প্রবন্ধে শিং মাছের নিবিড় চাষ পদ্ধতির প্রযুক্তি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি
শিং মাছের নিবিড় চাষের জন্য ২০-৬০ শতাংশ আয়তনের ছায়াযুক্ত পুকুর নির্বাচন করা যেতে পারে, যেখানে বছরে কমপক্ষে ৭-৮ মাস ১ থেকে ১.৫ মিটার পানি থাকে। শিং মাছ নিবিড় চাষের জন্য প্রথমত পুকুর ভালোমতো শুকাতে হবে। শুকানোর পর তলদেশের পচা কাদা অপসারণ করতে হবে এবং পাড় ভালোভাবে মেরামত করতে হবে। অতঃপর তলদেশ ৭ দিন রৌদ্রে শুকাতে হবে। পরে তলা থেকে ক্ষতিকারক        জীবাণু ধ্বংস করার জন্য প্রতি শতাংশে ১৫-২০ গ্রাম বিøচিং পাউডার ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। বিøচিং পাউডার প্রয়োগের ৩-৫ দিন পরে পুকুর বিশুদ্ধ পানি দিয়ে  ১.০ মিটার পরিমাণ পূর্ণ করতে হবে। পানি পূর্ণ করার পর শতাংশ প্রতি ০.৫-১.০ কেজি কলিচুন পানিতে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের ৩ দিন পরে পোনা মজুদের ব্যবস্থা নিতে হবে।        
পোনা আহরণ ও পোনা পরিবহণ
গুণগত মানসম্পন্ন সুস্থসবল পোনা সংগ্রহ এবং পরিবহণ শিং মাছ চাষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাধারণত শিং মাছের পোনা হ্যাচারি হতে সংগ্রহ করা হয়। শিং মাছের পোনা পরিবহণকালে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে সেক্ষেত্রে পোনা পরিবহণের সময় প্লাস্টিক ড্রাম ব্যবহার করাই উত্তম। দূরত্ব অনুযায়ী প্রতি ড্রামে ৭-৯ সেমি. আকারের          ২-৩ কেজি পোনা অথবা ১০০০-১৫০০টি পোনা পরিবহণ করা যায়। এরূপভাবে ৫-৬ ঘণ্টা সময় দূরত্বে নির্বিঘেœ পোনা পরিবহণ করা যেতে পারে।
পোনা মজুদ
শিং মাছের নিবিড় চাষ ব্যবস্থাপনায় প্রতি শতাংশে ৩৫০০-৪০০০টি সুস্থসবল ও গুণগত মানসম্পন্ন পোনা   প্রস্তুতকৃত পুকুরে মজুদ করা যেতে পারে। পুকুরে পোনা মজুদকালীন সময় খুব সতর্কতার সাথে করতে হবে। পোনা পুকুরে মজুদের সময় অবশ্যই পোনা ভর্তি পাত্রের পানির তাপমাত্রা ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা সমতায় এনে ভালোভাবে অভ্যস্থকরণ বা কন্ডিশনিং করতে হবে। সাধারণত কম তাপমাত্রায় সকালে বা সন্ধ্যায় পোনা মজুদ করাই উত্তম।
সম্পূরক খাদ্য
পোনা মজুদের পরের দিন থেকে প্রাণিজ প্রোটিন (৩২-৩৫%) সমৃদ্ধ সম্পূরক খাদ্য মাছের দেহ ওজনের শতকরা ১৫-৫% হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সম্পূরক খাদ্য দুই ভাগ করে সন্ধ্যায় ও সূর্য উদিত হওয়ার আগে প্রয়োগ করতে হয়।
পানির গুণাগুণ
শিং মাছ চাষের জন্য পানির গুণাগুণ উপযোগী মাত্রায় থাকা বাঞ্ছনীয়। এ জন্য নিয়মিতভাবে পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করা আবশ্যক। অধিক উৎপাদন পেতে হলে পানির গুণাগুণ উপযোগী মাত্রায় রাখার জন্য কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যেমন-নিয়মিতভাবে পুকুরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে; পানির গভীরতা ৪-৫ ফুটের মধ্যে অবশ্যই রাখতে হবে; পানির  ঢ়ঐ সবসময় ৭.০ -৮.০ এর মধ্যে রাখা আবশ্যক; পানির স্বচ্ছতা ৩০ সেমি. এর ওপরে থাকতে হবে; অ্যামোনিয়ার মাত্রা ০.১ এর নিচে রাখতে হবে।
মজুদোত্তর ব্যবস্থাপনা
প্রতি  ১৫ দিন পরপর শিং মাছের নমুনায়ন করে সম্পূরক খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে; পোনা মজুদের এক মাস পর হতে প্রতি ১৫ দিন অন্তর শতাংশ প্রতি ১০০ গ্রাম চুন ও পরবর্তী ১৫ দিন পর ৪০০ গ্রাম লবণ প্রয়োগ করতে হবে; সপ্তাহে কমপক্ষে ০৩ দিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে; পুকুরের আয়তন অনুসারে এক বা একাধিক স্থানে কচুরীপানার বেষ্টনী স্থাপন করতে হবে, পানির তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এ বেষ্টনীর নিচে মাছ আশ্রয় নিতে পারবে; ক্ষতিকর প্রাণির প্রবেশরোধে পুকুরে জাল দিয়ে বেষ্টনী দিতে হবে;  
মাছ আহরণ ও উৎপাদন
সাধারণত পোনা মজুদের সাত মাস পর মাছ আহরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময়ে মাছের গড় ওজন ৫৫-৬৫ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। পুকুর শুকিয়ে শিং মাছ আহরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ পদ্ধতিতে অনুসরণে পঞ্চাশ শতাংশ পুকুর হতে ৭ মাসে ৮০০০-৯০০০ কেজি শিং উৎপাদন করা যায়। এ পদ্ধতিতে ৭-৮ মাসে শিং মাছের নিবিড় চাষে ৫০ শতাংশ পুকুরে             ৩.৫-৪.০ লাখ টাকা ব্যয় করে এক ফসলে ০৮-০৯ লাখ  টাকা মুনাফা অর্জন করা সম্ভব (সারণি দ্রষ্টব্য)।
পরামর্শ
সফলভাবে শিং মাছের নিবিড় চাষ করার নিমিত্ত নি¤েœর বিষয়গুলো বিশেষভাবে অনুসরণ করতে হবে। বড় (৩-৪ গ্রাম) এবং একই আকারের শিং মাছের স্ত্রী পোনা মজুদ করতে হবে; নিয়মিত খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে কিন্তু সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না; নিয়মিত পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকতে হবে; জাল টেনে মাছের নমুনায়ন না করাই উত্তম; উন্নতমানের ৩২-৩৫% প্রোটিনসমৃদ্ধ সম্পূরক খাবার সরবরাহ করতে হবে; নিয়মিত পানির গুণাগুণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং পানির পিএইচ সবসময় ক্ষারীয় মাত্রায় রাখতে হবে; পুকুরের গভীরতা তুলনামূলক বেশি রাখতে হবে; সর্বদা পুকুরের পরিচর্যা বা যতœ নিতে হবে। য়

মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিএফআরআই, মোবাইল : ০১৭১১৩৮৫০০৫, ই-মেইল : kohinoor41@gmail.com