Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২১

বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২১

র‌্যাচেল অদিতি রেমা

একটি দেশের নাগরিকগণের ৫টি মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য অন্যতম। এই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বর্তমান সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশ্বিক কর্মসূচি। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অন্যতম একটি লক্ষ্য হল খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা কি খাই, কীভাবে খাই, খাবারটা কোথা থেকে আসে, খাবারের মান কেমন, নিজেদের আয় এবং রুচি অনুযায়ী আমাদের কি খেলে শরীর ভালো থাকবে- এগুলো আমাদের জীবনযাপনের অন্যতম চিন্তা। আমাদের সেই সব ভাবনার প্রায় সিংহভাগই থাকে নিজেদের বা নিজেদের প্রিয়জনদের জন্য সীমাবদ্ধ এবং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আমাদেরকে সমগ্র বিশ্বের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা জরুরি। আমরা যদি এখন শুধু নিজেদের কথা ভেবেই থেমে থাকি তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে জীবন-মরণ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। ভবিষ্যতের অনাগত শিশু বা বর্তমান শিশু প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, পৃথিবী নামক গ্রহটাই তাদের বসবাসের উপযোগী থাকবে কি না, সেই প্রশ্নগুলোই আমাদের বর্তমান খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

 

বিশ্ব জুড়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এখন জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বিশেষ ঘটনা যার বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, কৃষির ফলন এবং উৎপাদনশীলতার উপর। এ সব কারণের পাশাপাশি প্রধান প্রধান ফসলের পুষ্টি উপাদানে পরিবর্তন যেমন- প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিন এর পরিমাণ হ্রাসের জন্যও জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী বলে মনে করা হয়।

 

বিগত কয়েক দশকে পৃথিবীর আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলস্বরূপ চাষাবাদযোগ্য জমি সংরক্ষণ, সামাজিক বনায়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যেই প্রতি বছর ১৬ অক্টোবর ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস’ পালিত হয়ে থাকে। ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির তৎকালীন খাদ্য ও কৃৃষিমন্ত্রী ড. প্যাল রোমানি বিশ্বব্যাপী এই দিনটি উদ্যাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠার দিনটিতে (১৬ অক্টোবর, ১৯৪৫) দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নিবৃত্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে এই দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়ে থাকে।

 

২০২১ সালের বিশ্ব খাদ্য দিবসটিকে করোনাভাইরাস অতিমারির মাঝে উদ্যাপিত হতে যাওয়া দ্বিতীয় বিশ্ব খাদ্য দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস অতিমারী বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টির সাথে সাথে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এক বিধ্বংসী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, যার ফলস্বরূপ ১০ কোটি মানুষ ইতোমধ্যেই ক্ষুধার তাড়নায় ভুগছে। 

 

এই ধরিত্রীর উপর আমাদের স্বাস্থ্য, খাদ্য নির্বাচন ও খাদ্যগ্রহণ পদ্ধতির এক বিশাল প্রভাব রয়েছে। কৃষি এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনার উপরও এর প্রভাব অপরিসীম। কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বের খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যগ্রহণ পদ্ধতি পরিবর্তনে নতুন নতুন পদক্ষেপ উন্মোচন করার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে ফিরে আসার লক্ষ্যে, জাতিসংঘের মহাসচিব সেপ্টেম্বরে বিশ্বের প্রথম ‘খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্মেলন’ আহ্বান করেছেন। ২০৩০ সালের মাঝে এজেন্ডা-২০৩০ এর সফল বাস্তবায়নে কাউকে পেছনে না ফেলে আমাদের সবাইকে এই পরিবর্তনের অংশ হওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

 

‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ। ভালো উৎপাদনে  ভালো  পুষ্টি  আর ভালো পরিবেশেই উন্নত জীবন’- এই মূল প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী ১৬ই অক্টোবর ২০২১ বিশ্ব খাদ্য দিবস পালন করা হবে। বাংলাদেশে প্রতি বছর কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) যৌথ উদ্যোগে এই দিনটি নানা কর্মশালা ও কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্যাপন করা হয়ে থাকে। এই বছরও বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২১ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মশালার পাশাপাশি একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো, বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২১-র প্রতিপাদ্য ও তাৎপর্য সম্বলিত পোস্টার, বিলবোর্ড, ভিডিও প্রচার, ৫-১৯ বছর বয়সী শিশু এবং কিশোরদের মাঝে খাদ্য যাত্রা নিয়ে পোস্টার প্রতিযোগিতা, কৃষিকথা ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, পুষ্টি উপাদান অক্ষুণ্ন রেখে রন্ধন প্রণালী প্রদর্শনসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথাযথভাবে দিবসটি উদ্যাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও বিশ্ব খাদ্য দিবস উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইতালির রোমে জি-২০ গ্রিন গার্ডেনে বিশ্ব খাদ্য দিবস উদ্যাপন, কানাডার সিএন টাওয়ারে বিশেষ আলোকসজ্জা এবং আতশবাজি, আমেরিকায় ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের মাঝে কবিতা লিখন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। এছাড়াও বিশ্ব খাদ্য দিবস নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে ঘুরে আসতে পারেন প্রদত্ত লিংকে : http://www.fao.org/world-food-day/en.

 

লেখক : ইন্টার্ন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।  মোবাইল : ০১৭১৬৮১৬০৫৮, ই-মেইল : rechel.rema@fao.org