Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সবজির টেকসই উৎপাদন

পীরগঞ্জের কৃষক সাদেক মিয়া নদীর ধারে এক বিঘা জমি নিয়ে বেশ চিন্তিত। কারণ নদীর উপকূলবর্তী হওয়ায় বোরো ছাড়া আর কোনো ফসল হয় না। জমিটি রাস্তার ধারে হওয়ায় বন্যার সময় রাস্তারও ক্ষতি হয়। এমতাবস্থায় পরামর্শ অনুযায়ী তিনি রাস্তার ধারে সবজির চাষ শুরু করেন। সফল হন সাদেক মিয়া। বিক্রি করেন প্রায় ১০ হাজার টাকার সবজি। বর্ষাকালে আশপাশের সব জমি পানিতে নিমজ্জিত হলেও তার সবজির মাচা ভাসমান ভেলার মতো জেগে থাকে।


বাংলাদেশে প্রায় ৩,৭৯০ কিমি. জাতীয়, ৪,২০৬ কিমি. আঞ্চলিক, ১৩,১২১ কিমি. জেলা ও ৩,৩৩,৫৮৯ কিমি. স্থানীয় সড়ক এর পাশাপাশি প্রায় ২৮৩৫ কিমি. রেলপথ রয়েছে। রয়েছে অসংখ্য পুকুর এবং দক্ষিণাঞ্চলের ঘের। এগুলো প্রায় সবসময়ই পতিত থাকে। এগুলোকে সবজি চাষের আওতায় আনা গেলে একদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হবে কৃষক, অন্যদিকে পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হবে।


বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দেশে রীতিমতো সবজি বিপ্লব ঘটে গেছে গত এক যুগে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়; চীন ও ভারতের পরেই এর অবস্থান। গত ৪০ বছরে সবজির উৎপাদন বেড়েছে ৫ গুণ। ২০০৮-০৯ সালে যেখানে সবজি উৎপাদন ছিল ১০৬.২২ লক্ষ মে.টন, সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ (১ কোটি ৫৯ লাখ ৫৪ হাজার টন) সবজি উৎপাদিত হয়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত       শাকসবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বিশ্বজোড়া। বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ প্রায় ৫০ টি দেশে সবজি রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়,  ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আয় হয়েছে ৫ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, যদিও দেশে মোট আবাদির মাত্র ৯ ভাগ জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে এবং ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার এই সবজি উৎপাদন করছে।


কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই কমে যাচ্ছে কৃষি জমি (বার্ষিক ০.৭৩% বা ৬৮,৭৬০ হেক্টর হারে) (সূত্র-এসআরডিআই, ২০১৩)। ১৯৬০ সালে পরিবার প্রতি কৃষি জমির পরিমাণ ছিল  ১.৭০ হেক্টর, যা কমে ২০০৮ সালে ০.৪০ হেক্টরে উপনীত হয়েছে।


বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের যে অভিঘাত দৃশ্যমান তার সবচেয়ে স্পষ্ট দৃষ্টান্ত হলো বাংলাদেশ। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি প্রভৃতি চরম পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন বাংলাদেশ। এরূপ বাস্তবতায় এসডিজিতে ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে কৃষি সম্পর্কিত অন্যতম অভীষ্ট হলো অভীষ্ট-২: ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার। এখানে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ফসলের উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে। সময় বাকি মাত্র ১১ বছর। পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে পতিত জমিতে সবজি উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই।


সাদেক মিয়ার সফলতাকে সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যেই এটুআই প্রকল্পের পৃষ্ঠপোষকতায় গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলায় ‘অব্যবহৃত জায়গায় সবজি চাষ, মিলবে পুষ্টি বারোমাস’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ৫০ জন কৃষক নিয়ে অব্যবহৃত জায়গায় সবজি চাষের পাইলটিং চলছে। এর ফলাফলও বেশ আশাব্যঞ্জক। ধারণাটিকে যদি সারা দেশে সম্প্রসারণ করা যায় তবে কৃষির উৎপাদন সবজির উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। রাস্তা সংলগ্ন জমির মালিক, পুকুরের মালিক ও ঘেরের মালিককে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ঐসব জায়গায় সবজির চাষাবাদ শুরু করা গেলে তা এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বাড়বে কৃষকের আয়, মিটবে পুষ্টির চাহিদা। পুকুরপাড়, ঘের ও রাস্তা সংলগ্ন জমির এক ইঞ্চিও পতিত না রাখলে ২০২০ সালে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ সুখী, সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।

মো. রেজওয়ানুল ইসলাম
 
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, সংযুক্ত, ব্লু গোল্ড প্রোগ্রাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা, মোবাইল: ০১৭১৪৫৯৩৭৯৬,   ই-মেইল:
rezwandae@gmail.com