Wellcome to National Portal
  • 2025-03-12-16-25-15c95fd3ae0d740427f19c779208b30b
  • 2025-03-12-16-16-b41688fcb8ac3df55c13eb5c82b62083
  • 2025-01-05-17-19-232bbb16275acb0da535d705c9b6f6d8
  • 2024-12-15-10-13-de23faa6fead7deef93b5973ae193323
  • 2023-12-28-06-44-fad1b3dffb04c90c1f14863ef06978d5
  • ICT Ebook
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মসলা পেঁয়াজের কথোপকথন

2020-02-24-13-06-89640a11716ddffd0e125f33356074f5

বাঙালীর ভোজন বিলাসিতার পৃথিবী জুড়ে খ্যাতি রয়েছে। এই ভোজন বিলাসিতার নানাবিধ মসলার সমন্বয়ে রন্ধনশৈলীর উপস্থাপনা যে কোন মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যে হারে মসলার ব্যবহার করে থাকি বিশ্বের অন্যান্য দেশে তা লক্ষণীয় নয়। আবার খাবারকে রুচিশীল ও মুখরোচক করতে মসলার বিকল্প হয় না। পেঁয়াজকে শুধু মসলা বললে ভুল হবে। কারণ পেঁয়াজ একাধারে মসলা এবং সবজিও বটে। ভাতের সঙ্গে খালি পেঁয়াজ, ছালাদ ও ঝাল মুড়িতে কাঁচা পেঁয়াজ এবং আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ডিম ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা এমনকি ডিম ভাজিতেও এর ব্যবহার সমাদৃত। তাছাড়া অধিক হারে পেঁয়াজ ব্যবহার করে মসলা হিসেবে বেটে পেস্ট বানিয়ে  ব্যবহার তরকারিকে  সু-স্বাদু ও রসালুতে পরিণত করে। পেঁয়াজ পাতায় বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। তাই পাতা সবজি হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া পেঁয়াজের ডাটা ও পাতা ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। পেঁয়াজ ব্যবহৃত খাবার দ্রুত হজমকারক ও রুচিবর্ধক।

বাংলাদেশে সাধারণত ৩টি পদ্ধতিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়-
১. জমিতে সরাসরি বীজ বপন করে,
২. কন্দ/বাল্ব সরাসরি রোপণ করে,
৩. বীজতলা থেকে তৈরি চারা সংগ্রহ করে অন্যত্র রোপণ করে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কৃষি আবহাওয়া আর বাংলাদেশের কৃষি আবহাওয়া এক নয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেমন ভারত, উজবেকিস্তান, মিসরসহ আরো কিছু দেশে ২-৩ ও খরিপ মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ হয়। কিন্তু আমাদের দেশে রবি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ২৩.৩০৫ লক্ষ মে.টন। সনাতনী পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করায় প্রতি বছর উৎপাদন থেকে সংরক্ষণ পর্যায়ে মোট উৎপাদনের প্রায় ৩০-৩৫% পেঁয়াজ বিভিন্ন উপায়ে নষ্ট হয়। সে হিসাবে ৭.০০-৮.১৫ লক্ষ মে.টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়। পেঁয়াজ সংগ্রহের/উঠানোর উপযুক্ত সময় হল লেট ফেব্রুয়ারি- মার্চ মাস। তাছাড়া এ বছর লেট ফেব্রুয়ারি- মার্চ মাসে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় নিচু ও মাঝারি নিচু, মাঝারি উঁচু জমির পেঁয়াজে অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে পানি জমে যায়। ফলে ভেজা পেঁয়াজ জমি হতে উত্তোলন করতে হয়। এতে পেঁয়াজে জলীয় অংশের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে সংরক্ষণকালীন সময়ে পেঁয়াজের একটি বড় অংশ দ্রুত পচে নষ্ট হয়ে যায়। এই দ্রুত পচে যাওয়ার পরিমাণ যদি ৫% হয় তাহলে আরো প্রায়  ১.১৬ লক্ষ মে.টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। তাহলে মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের পরিমাণ হয় ১৪.০০-১৪.৮৪ লক্ষ মে.টন। কিন্তু আমাদের দেশে পেঁয়াজের মোট চাহিদা রয়েছে ২৪-২৫ লক্ষ মে.টন। ফলে বর্তমান অর্থবছরে প্রায় ১০-১১ লক্ষ মে.টন পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র মতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০.৯১ লক্ষ মে.টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ২.৩০ লক্ষ মে.টন পেঁয়াজ ইতোমধ্যে আমদানি হয়েছে।
পেঁয়াজ পচে যাওয়ার ভয়ে চাষিরা ভরা মৌসুমেই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেছে। এ কারণে মৌসুম পরবর্তী সময়ে চাহিদার তুলনায় দেশিয় পেঁয়াজ কম পরিমাণে সংরক্ষিত ছিল। ফলে বর্তমানে দেশিয় পেঁয়াজ কৃষকের নিকট সংরক্ষিত নেই বললেই চলে। কিছু মুনফাভোগীদের নিকট  অল্প পরিমাণে পেঁয়াজ সংরক্ষিত আছে এবং তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেশি মুনাফার বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। একদিকে যেমন কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পায়নি এবং ভোক্তাও  ন্যায্যমূূল্যে এ মসলাটি ক্রয় করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এজন্য সরকারের উচিত এই পচনশীল দ্রবটি সারা বছর সংরক্ষণের জন্য প্রতিটি জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীন কোল্ডস্টোরেজ করে কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের সংরক্ষণ করা এবং অমৌসুমে ভোক্তার নিকট ন্যায্যমূল্যে বিতরণ করা এবং পেঁয়াজ চাষিদের তালিকা প্রণয়নপূর্বক প্রণোদনা প্রদান এবং চাহিদাভিত্তিক এ সকল ফসলের আবাদ নিশ্চিত করা।
সে হিসেবে শুধুমাত্র রবি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষাবাদ করে বাড়তি ১০-১১ লক্ষ মে.টন উৎপাদন করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) বর্ষা মৌসুমে পেঁয়াজ আবাদের জন্য ৩টি জাত অবমুক্ত করেছে। সেগুলো হলো বারি পেঁয়াজ ২, বারি পেঁয়াজ ৩, বারি পেঁয়াজ ৫। এই জাতগুলো ফেব্রুয়ারি মাসে বীজতলায় বপণ করে মার্চ মাসে মূল জমিতে রোপণ করে জুন-জুলাই মাসে সংগ্রহ করা যায়। আবার  জুলাইতে  বীজতলায় বপণ করে আগস্ট মাসে মূল জমিতে রোপণ করে নভেম্বর মাসে সংগ্রহ করা যায়। এ জন্য বর্ষামৌসুমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ করতে হবে। কিন্তু এ সময় বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় ও তাপমাত্রা বেশি থাকায় সময়োপযোগী জাত অবমুক্ত করতে হবে। তাহলে সংগ্রহোত্তর ও সংরক্ষণকালীন অপচয় বাদ দিয়ে অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো সম্ভবপর হবে।
বিগত ৫ (২০১৫-২০১৯) বছরে সর্বোচ্চ পেঁয়াজ আবাদকৃত ৫টি জেলার গড় বৃষ্টিপাতের তথ্য:
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত কন্দ পেঁয়াজ আবাদ হয়েছিল ২৭৭৩৫ হেক্টর কিন্তু বর্তমান অর্থবছরে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ২২৪৩৮ হে.। সে অর্থে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এবং রবি মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাতের কারণে কন্দ পেঁয়াজ আবাদ দেরিতে শুরু হয়েছে। বাজারে সাধারণত লেট নভেম্বর থেকে মুড়ি/কন্দ পেঁয়াজ উঠতে শুরু করে। কিন্তু এবার একটু বিলম্ব হওয়ার কারণে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ না থাকায় দাম বাড়ার একটি কারণ ।
আমাদের দেশে সাধারণত পেঁয়াজের স্থানীয় জাত যেমন তাহেরপুরী, ফরিদপুরী, ঝিটকা বীজ ব্যবহৃত হয়। এগুলো জাতের গড় ফলন ৭-১০ মে.টন/হে.। মেহেরপুর জেলায় ভারতের সুখ সাগর জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়। এর গড় ফলন ৩৫-৪০ মে.টন/হে.। কিন্তু এজাতের পেঁয়াজের সংরক্ষণ ক্ষমতা কম থাকায় জাতটি কৃষক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর মধ্যে লালতীর সীড লিমিটেডের কয়েকটি পেঁয়াজের জাত যেমন লালতীর কিং, লালতীর হাইব্রিড এবং লালতীর ২০ জাতটি রয়েছে। এগুলোর ফলন ১২-১৫ মে.টন/হে.। এদের সংরক্ষণ ক্ষমতা দেশি জাতের সংরক্ষণ ক্ষমতার চাইতে কম। এ কারণে এই উন্নত জাতগুলোও যথাযথভাবে সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ হচ্ছে না। তবে অনেকাংশেই এই জাতগুলো সম্প্রসারণ হচ্ছে।
গত ৫ বছরে পেঁয়াজের মোট আবাদকৃত জমি, উৎপাদন ও গড় ফলনের তথ্য:
ডিএই এর  তথ্য মতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পেঁয়াজের মূল্য কম হওয়ার কারণে ২০১৮-১৯ এ আবাদ কম হয়েছে। পেঁয়াজ উচ্চমূল্যের মসলাজাতীয় ফসল। সাধারণত স্থানভেদে ১ একর পেঁয়াজ আবাদ করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়।  সংগ্রহোত্তর মৌসুমে ১ একর পেঁয়াজ থেকে প্রায় ৮০-৮৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তবে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা গেলে অফ মৌসুমে আরো বেশি মুনাফা সংগ্রহ করা যায়। পেঁয়াজ সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত হলে চাষিরা পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত হবে। সে ক্ষেত্রে কৃষকরা সংরক্ষণের মাধ্যমে উচ্চমূল্য পাবে এবং আবাদের পরিমাণ বাড়াতে বেশি বেশি উৎসাহবোধ করবেন।
সংরক্ষণ পদ্ধতি
পেঁয়াজ ভালো করে শুকানোর পর গুদামজাত করতে হবে। গুদাম ঘর ঠাণ্ডা ও বায়ু চলাচলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাযুক্ত হতে হবে। মাঝে মাঝে গুদাম ঘর পরীক্ষা করে পচা ও রোগাক্রান্ত পেঁয়াজ বেছে সরিয়ে ফেলতে হবে। ঠাণ্ডা গুদাম ঘরে তাপমাত্রা হতে হবে ৩৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং ৬৪% আর্দ্রতাযুক্ত হতে হবে। কাঁচা পেঁয়াজ কাগজের ব্যাগে ছিদ্র করে রেখে ৩ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য আধুনিক উন্নত পদ্ধতি হলো ‘জিরো এনার্জি স্টোরেজ’ পদ্ধতি। মূলত বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ওই স্টোরেজ তৈরি করা হয়। দু’পাশের অংশে এক ধরনের ওষুধ দিয়ে শোধন করে নেওয়া হয়। তার পরেই সেখানে পেঁয়াজ রাখা হয়। সে ক্ষেত্রে পেঁয়াজ দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করা যাবে এবং পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
সুপারিশ
* আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও সংরক্ষণ করা।
* সংগ্রহোত্তর ও সংরক্ষণকালীন অপচয় ৫% এর নিচে
       নামিয়ে আনতে হবে।
* উৎপাদন/ভরা মৌসুমে কৃষককে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি
       নিশ্চিত করতে হবে।
* বর্ষামৌসুমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ সম্প্রসারণ   
       ও জনপ্রিয়করণ করতে হবে।
* উন্নত ও ভালো গুণাগুণ সম্পন্ন বীজ ব্যবহার করতে
       হবে।

কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর