Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বি পোলেন

পৃথিবীতে প্রায় ৪০,০০০ প্রজাতির গাছে মৌমাছি দ্বারা পরাগায়ন ঘটে। এই পরাগায়নের ফলে গাছের জীববৈচিত্র্য রক্ষা হয়। পরাগায়নে পরাগরেণুর একটি অন্যতম উপাদান, যা বাতাস বা অন্য কোন প্রাণী দ্বারা পুরুষ ফুল থেকে স্ত্রী ফুলে স্থানান্তরিত হয়। যে সকল গাছের পরাগায়ন বায়ু দ্বারা সম্পাদিত হয় সে পরাগরেণুগুলো সাধারণত খুবই ক্ষুদ্র, হালকা এবং শুষ্ক থাকে। কিন্তু যেসব গাছের পরাগায়ন পতঙ্গ দ্বারা সম্পাদিত হয় সেসব গাছের পরাগরেণু সাধারণত অমসৃণ ও আঠালো থাকে। এই অমসৃণ ও আঠালো পরাগরেণু পতঙ্গের দেহের বিভিন্ন অংশ দ্বারা স্ত্রী ফুলে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। কৃষিজ ফসলের শতকরা ৭০ ভাগ শুধুমাত্র মৌমাছি দ্বারা পরাগায়িত হয়।
মৌমাছির দেহ সাধারণত : অতি ক্ষুদ্র লোম দ্বারা আবৃত থাকে। মৌমাছি যখন ফুলে ফুলে বিচরণ করে তখন তাদের শরীরের ক্ষুদ্র লোম পরাগরেণু আটকিয়ে যায়। পরবর্তীতে মৌমাছি এই পরাগরেণুসমূহকে এন্টিনা দ্বারা তাদের একত্র করে বল তৈরি করে তাদের পেছনের জোড়ার পায়ে এক ধরনের বিশেষ থলেতে রাখে, যা ঢ়ড়ষষড়হ ংধপ নামে পরিচিত। এই পোলেন বল তৈরি করার সময় তারা পোলেনের সাথে এনজাইম এবং নেক্টার মিশ্রিত করে থাকে। ১টি ফ্লাইটের একটি মৌমাছি তাদের চড়ষষড়হ ঝধপ এ ১৬ থেকে ২৪ মিলিগ্রাম পোলেন বহন করে যাতে প্রায় ৩০ লক্ষ থেকে ৪০ লক্ষ পরাগরেণু থাকে। আর এই পোলেন বলের ওজন ১টি মৌমাছির শরীরে ওজনের প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ।
একটি মৌকলোনিতে পোলেন মৌমাছির (লার্ভা) বাচ্চাদের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পোলেন মূলত: প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল এবং অন্যান্য উপাদানের উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যা মৌমাছির জীবনচত্রæ সম্পন্ন করার জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। একটি মৌকলোনিতে বছরে ৩০-৫০ কিলোগ্রাম পোলেন এর প্রয়োজন হয়। মৌচাষিরা সাধারণত পোলেন ট্র্যাপ ব্যবহার করে ফ্রেশ পোলেন সংগ্রহ করে। তবে আমাদের দেশে এটির ব্যবহার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন এ বিষয়ে গবেষণা করছে এবং একটি মৌকলোনি থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫০০-৭০০ গ্রাম পোলেন উৎপাদন সম্ভব। বাংলাদেশের প্রতিটি মৌকলোনি থেকে পোলেন সংগ্রহ করলে বার্ষিক ২৫ থেকে ৩০ টন পোলেন উৎপাদন সম্ভব।
প্রাচীন গ্রিকে পোলেন বলকে মোম মনে করা হতো এবং প্রাচীন মিসরে একে জীবনদানকারী পাউডার মনে করা হতো, যা অৎরংঃড়ঃষব এর বই ঐরংঃড়ৎরধ ধহরসধষরঁস এ উল্লেখ করা হয়েছে। ঐরঢ়ঢ়ড়পৎধঃবং তার রোগীদের পোলেন খাওয়ার পরামর্শ দিতেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন যে পোলেন এর রোগ সারানোর ক্ষমতা রয়েছে। পোলেনের আরেক নাম হচ্ছে বি ব্রেড এবং প্রাচীনকালে একে ব্রি ব্রেডই বলা হতো। ঔড়যহ জধু তার বই ঐরংঃড়ৎরধ চষধহঃধৎঁস (১৬৮৬) এ প্রথম ঢ়ড়ষষবহ শব্দটি ব্যবহার করেন যার গ্রিক অর্থ ঋরহব চড়ফিবৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে  ঢ়ড়ষষবহ অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বি পোলেন মৌমাছির পা থেকে সংগ্রহ করা ছাড়াও মৌমাছির চাক হতে সংগ্রহ করা যায়। বি ব্রেড হিসেবে মৌচাকের মধ্যে যে পোলেন থাকে তা দ্রæত নষ্ট হয় না। কিন্তু মৌমাছির পা থেকে সংগ্রহকৃত পোলেন সঠিকভাবে প্রক্রিয়া না করলে তার গুণগতমান দ্রæত নষ্ট হয়। বিশেষ করে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়। যেহেতু পোলেন একটি পুষ্টিমান সম্পন্ন দ্রব্য সেহেতু মানুষ এটিকে খাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। গাছ ভেদে পোলেন এর রং, স্বাদ এবং গন্ধ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। পোলেনের রং সাধারণত সাদা থেকে কালো পর্যন্ত হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হলুদ, হলদে কমলা এবং হলদে বাদামি বর্ণের হয় থাকে। স্বাদ কখনো টক, টকমিষ্টি বা তেতো হয়ে থাকে। এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পোলেনকে যত শুকানো হবে এটি ততো বেশি দিন ভালো থাকবে। ফ্রেশ পোলেন শুকানোর প্রক্রিয়া বিলম্ব হলে একে অবশ্যই ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে। খধপঃড়নধপরষষঁং এবং  ইরভরফড়নধপঃবৎরঁস  জেনেরা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পোলেন এ লক্ষ্য করা যায় এবং এই ব্যাকটেরিয়া পোলেন ফার্মেন্টেশনে এ সহায়তা করে।
বি পোলেন বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। সাধারণত : এটি মধু বা রয়েলজেলির সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। বেশির ভাগ  ক্ষেত্রে পোলেন মধু ও পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। পোলেন পানিতে মেশালে ফুলে যায় এবং এটি সহজে হজম হয়। প্রথমবার পোলেন খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে পরীক্ষা করে নিতে হবে যে ঐ পোলেন এর প্রতি আপনার কোনো অ্যালার্জি আছে কি না। যদি অ্যালার্জি থাকে তাহলে অন্য ফুলের পোলেন খেতে হবে। যারা পোলেন সেবন করেন তার সাধারণত খাবার আধা ঘণ্টা আগে পোলেন সেবন করবেন এবং এর পরিমাণ ১ টেবিল চামচ যা প্রায় ১৫ গ্রাম এর মতো হয়ে থাকে। যারা নিরামিষভোগী তাদের খাবারে পুষ্টিমান ঠিক রাখতে অবশ্যই পোলেন সেবন করা উচিত। যেহেতু পোলেন এ ফ্লাভেনয়েড এবং ফাইটোস্টেরল থাকে যা এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিইনফ্লামেটারি হিসাবে কাজ করে সেহেতু এনেমিয়া, আর্টিওস্কেলেরোসিস, অষ্টিওপসিস এবং অ্যালার্জির চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ  নিয়ে পোলেন সেবন করা উচিত।  বি পোলেন মুরগি, পাখি এবং মৌমাছির ক্রান্তিকালীন খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়। সর্বোপরি এটি বলা যায় যে পোলেন মানবদেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার।
অন্যান্য উপাদান ২৯% এর মধ্যে রয়েছে : ফ্লাভেনয়েড : কমপক্ষে ৮ প্রকার। ক্যারেটিনয়েডস : কমপক্ষে ১১ রকমের। ভিটামিন যেমনÑ ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, পেনটোযিনিক এসিড, নিকোটনিক এসিড, থিয়ামিন, রিভোক্ল্যাবিন (ই২) এবং পাইরিডক্সিন (ই৬) ইত্যাদি বিদ্যমান। খনিজ পদার্থ : প্রধান উপাদান যেমনÑ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, সালফার, ফসফরাস। গৌন উপাদানগুলো হলোÑ অ্যালুমিনিয়াম, বোরন, ক্লোরিন, কপার, আয়োডিন, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক ইত্যাদি। ফ্রি এমিনো এসিড সব ধরনের, নিউক্লিক এসিড ও নিউক্লিওসাইডস উঘঅ,  জঘঅ এবং অন্যান্য। এনজাইম : একশত এর অধিক। গ্রোথ হরমোনস : অক্সিন, ব্রাসিনস, জিবেরিলন, কাইনিন এবং অন্যান্য গ্রোথ  ইনহিবিটরস)।
বি পেলেন এর উপকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবে পরিলক্ষিত হয়
* মানুষের বন্ধ্যাত্ব নিবারণে ব্যবহার করা হয়;
* যকৃতের রোগ নিরাময়ে খুবই কার্যকর;
* উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ু ও হরমোন সংক্রান্ত রোগে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখে;
* পরাগ অন্ত্রের ক্রিয়াকলাপের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনে;
* জৈবিক উদ্দীপক হিসেবেও কাজ করে;
* কোষ্ঠকাঠিন্যে পরাগ খুবই কার্যকরি;
* ক্ষুধা বৃদ্ধিকরণ হিসেবে কাজ করে;
* রক্তে হিমোগ্লোবিন ও লোহিতকণিকা বৃদ্ধি পায়।

 

ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন
প্রফেসর, কীটতত্ত¡ বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, মোবাইল : ০১৭৭৫৩৫৫৭৮৭, ই-মেইল :sakhawat_sau@yahoo.com