Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বঙ্গবন্ধু ও দৈহিক-মানসিক স্বাস্থ্য ভাবনা

ড. সত্যেন মন্ডল১  বীথিকা রায়২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন যেমন ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও রাজনৈতিক লক্ষ্য তেমনি অর্থনৈতিক মুক্তি সহ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গঠন ছিল বঙ্গবন্ধুর অন্যতম আশা-আকাঙ্খা। তাঁর এই আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন দেখা যায় স্বাধীনতাত্তোর সাড়ে তিন বছরের কর্মকাÐে, বিশেষ করে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে তাঁর সূদুরপ্রসারি পরিকল্পনা ও কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে। তাঁর কর্ম-পরিকল্পনার মধ্যে ছিল-র) কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করা রর) ভুমি রাজস্বের চাপে নিষ্পিষ্ট কৃষকদের ২৫ বিঘা জমি পর্র্যন্ত খাজনা মাফ করা এবং বকেয়া খাজনা মওকুব করা ররর) প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার তৎপরতা চালানো রা) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের বনজ-সম্পদ,      গো-সম্পদ, হাঁস-মুরগী চাষ, দুগ্ধ ও মৎস খামার তৈরি ইত্যাদি। অর্থাৎ উৎপাদন ও উন্নয়নের মাধ্যমে দৈহিক ও মানসিকভাবে উন্নত জাতি গঠন ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। তাই    মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে তাঁর প্রতি উৎসর্গকৃত আমাদের এই ক্ষুদ্র নিবেদন।
ঐতিহাসিকভাবে, মানুষ আদিম যুগ থেকে দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে খাদ্যের যোগাড় করে আসছে, শিকার বা সংগ্রহ এবং কৃষি। বর্তমানে, বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের সিংহভাগই খাদ্য কৃষি বা  কৃষিভিত্তিক শিল্প  হতে সরবরাহ হয়ে থাকে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে মানুষের খাদ্য সুরক্ষা অর্জনের প্রয়াসে গত ১৬ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার পালিত হলো বিশ্ব খাদ্য দিবস । এবার খাদ্য দিবস এর প্রতিপাদ্য ছিল ‘আমদের কর্মই আমাদের ভবিষৎ, পুষ্টিকর খাদ্যেই হবে আকাংখিত ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী’ যা বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার-এর অন্যতম একটি ওয়াদা ‘পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা’ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশ্ব খাদ্য দিবসের বার্ষিক উদযাপন  এর অন্যতম উদেশ্য হলো- সর্বত্র মানুষকে স্বাস্থ্যকর খাদ্য সরবরাহের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা, জনগনকে খাদ্যতালিকাগত পছন্দ-অপছন্দ, পুষ্টি ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করা।  আমাদের পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা বর্তমান সময়ের অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কৃষি জীববৈচিত্র। হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের কৃষকগণ এই জীববৈচিত্র্য ধরে রেখেছেন। মানুষের প্রয়োজনেই তারা বাছাই  করে নিয়েছেন ফসল, ফসলের জাত, গৃহপালিত প্রাণী ও প্রাণীর বিভিন্ন জাত। মাছ চাষের জন্য  প্রাকৃতিক মৎস্য ভান্ডার থেকে বেছে নিয়েছেন হরেক রকম মাছ। কৃষি জীব বৈচিত্রের আরেক অংশ হলো আমাদের কৃষি বনায়ন বা সামাজিক বনায়নের জন্য বাছাই করে নেওয়া উদ্ভিদ প্রজাতি। আমাদের আবাদি জমিতে চলছে বিভিন্ন মিশ্র ফসলের চাষ, আর এই আবাদি-অনাবাদি জমিতে অবস্থানরত জীব-অনুজীবও আমাদের কৃষি জীব বৈচিত্রের অংশ। এছাড়া আমাদের ফসলের পরাগায়নে সহায়তাকারী কীটপতঙ্গ, এমনকি ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গও এই জীব বৈচিত্র্যের সদস্য।
আধুনিক কৃষিতে জীব বৈচিত্র্যে আজ হুমকির মুখে, জীব বৈচিত্র্যে  ধরে রাখা অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। কারন আধুনিক কৃষির প্রভাব আজ পড়ছে কৃষির সকল পর্যায়ে। অল্প জায়গা থেকে অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার মুখে খাদ্য তুলে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ এর পাশাপাশি রয়েছে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চাপ। ফলে আমাদের আবাদ করতে হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল ফসল, মাছ ও ডিমের প্রয়োজনে গড়ে তুলতে হচ্ছে নতুন নতুন বিদেশী বা দেশি-বিদেশী সংকর জাতের মুরগি খামার। একইভাবে অধিক দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদনের আশায় লালন-পালন করতে হচ্ছে বিদেশী বা সংকর জাতের গরু।  প্রাণীজ আমিষের চাহিদা মেটাতে আরও গড়ে তুলতে হচ্ছে ছোট বড় মৎস খামার, যেখানে বিভিন্ন মাছের বাচ্চা উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারের চাহিদা মোতাবেক বড় বড় মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে। এই সকল কর্মকাÐ পরিচালনা করতে হয়েছে বা হচ্ছে আমাদের জনগণের খাদ্যাভাস এর কথা মাথায় রেখে। দেশের জনগনের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিধান করার লক্ষ্যে। তবে এইসব করতে গিয়ে আমাদের সর্বদাই মাথায় রাখতে হবে যেন আমরা আমাদের স্থানীয় ফসলের জাত, গৃহপালিত পশুর স্থানীয় জাত, প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন আবাসস্থল ইত্যাদি যেন হারিয়ে না ফেলি। এগুলো হারিয়ে গেলে হারিয়ে যাবে কৃষি জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে টেকসহ উন্নয়ন।
এবার ফেরা যাক স¦াস্থের কথায়, জীবনের কথায়। দীর্ঘজীবি হতে কে না চায়? তাহলে বেশি কিছু নয় কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলেন তাহলে আপনি হবেন স¦াস্থ্যবান ও দীর্ঘজীবি, দৈনিক-
প্রচুর পরিমানে ফলমূল খেতে হবে। প্রাপ্ত বয়স্ক পরিশ্রমি ব্যক্তির  ফল- ১৫০ গ্রাম ও শাকশব্জি ২৫০ গ্রাম খেতে হবে।
পর্যাপ্ত শারিরীক পরিশ্রম করতে হবে।
সিগারেট ও অ্যালকোহল সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে (৭-৮ ঘন্টা)।
স¦াস্থ্য ভাল রাখতে লাল মাংস এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য কম পরিমাণে এবং শাক-সবজি, ফল, মাছ এবং শস্যদানা বেশি পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস শুধু ওজনই নিয়ন্ত্রেণে রাখবে না পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। শারীরিক স¦াস্থের সাথে মানসিক স¦াস্থের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আবার স¦াস্থ্যের সাথে মানুষের স¥ৃতিশক্তির একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। অনিয়ন্ত্রিত জীবনজাপনের জন্য অনেকেরই অল্প বয়সেই স¥ৃতিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে। এক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরী। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে মস্তিস্কে অক্সিজেন সঞ্চালন বাড়ে ফলে স¥ৃতিশক্তি দৃঢ় হয়। অন্যদিকে রাতে টানা ৬-৮ ঘন্টা ভাল ঘুম না হলে মস্তিস্ক জটিল সমস্যার সমাধান বা চিন্তা করতে পারে না। মস্তিস্ক সজাগ রাখতে সুযোগমতো বন্ধুবান্ধব বা প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটান, সামাজিক কর্মকান্ড বা মানবসেবায় যোগদিন এবং প্রানখুলে হাসুন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি সামাজিক, পরপোকারী সদা হাস্যোজ্জ¦ল তাদের মনে রাখার ক্ষমতাও প্রবল। কারণ স্নেহ-মমতা, বন্ধুত্ব-ভালবাসা এক ধরনের মানসিক ব্যায়াম যা মানুষের মানসিক স¦াস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। শারীরিক ও মানসিক চাপ স¥ৃতিশক্তি হ্রাসের জন্য দায়ী। এজন্য মেডিটেশনের কোন বিকল্প নেই।
স¥ৃতিশক্তি বাড়াতে খাদ্য তালিকায়ও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। যেমন শিম, কুমড়ার বীজ, সয়াবিন, ব্রোকলি, মিষ্টিকুমড়া, পালংশাক, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদিতে রয়েছে স্যাচুরেটেন্ড ফ্যাট। রঙিন তাজা ফলমুল, শাকশব্জি ও সবুজ চায়ে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট। এসব পুষ্টি উপাদান মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে স¥ৃতিশক্তি তী² করে। শিশুদের ভিডিও গেম বা সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে খেলা করতে না দিয়ে বুদ্ধিভিত্তিক খেলনা দিন এবং অনুষ্ঠান দেখান। তাদের নতুন নতুন গল্পের বা উপন্যাসের বই পড়তে দিতে পারেন এবং আপনি নিজেও শিশুদের সামনে দীর্ঘক্ষন মোবাইল ব্রাউজিং থেকে বিরত থাকুন এবং নিজে বই পড়ুন (হার্ড কপি) তাহলে শিশুও বই পড়ায় আগ্রহ পাবে। কারণ শিশুরা সবসময় অনুকরন প্রিয়। এছাড়া নিজে নতুন নতুন কাজের ঝুঁকি নিন কারণ নতুনত্ব একঘেয়িমিতা দূর করে কর্মচাঞ্চল্য বাড়ায় ও মানসিক স¦াস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে।
মানসিক অস্থিরতা কিংবা বিষণœতা দুর করতে আমরা মেডিটেশনের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, টানা এক মাস মেডিটেশন অব্যাহত রাখলে মস্তিকে গঠনগত যে পরিবর্তন আসে তা মানসিক ব্যাধি প্রতিকারে কার্যকারী ভুমিকা রাখতে পারে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখে। ব্রিটিশ একদল গবেষক বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া দুই গ্রুপ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর গবেষণা চালান । এক গ্রæপ এক মাসব্যাপি মেডিটেশনের অভ্যাস করে অন্য গ্রæপ করে না। গবেষকগন লক্ষ্য করেন যে, মেডিটেশন করা গ্রুপের ছাত্র-ছাত্রীদের মস্তিস্কের ¯œায়ুতন্ত্র (হোয়াট মেটার) বেশি উদ্দীপ্ত হয় এবং বেশি সংকেত গ্রহণে সক্ষম হয় ফলে মস্তিস্কের যোগাযোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং তাদের আচার-আচারণের অনেক গুনগত পরিবর্তন হয়। (সূত্র: ডেইলি মেইল; ড. মজুমদার ২০১৮)।  মানসিক স¦াস্থ্য ভাল রাখার অন্য আরও একটি কথা বলা যাক,  মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা করে রাখার অভ্যাস ভাল নয়, যা হৃদযন্ত্রের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। গবেষনায় দেখা গিয়েছে ক্ষমা করার পরিবর্তে ক্ষোভ জমা করে রাখলে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং সেই সঙ্গে হৃদ্ররোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ে। ডক্টর সিমন্স বলেন “আপনি ভাবতেই পারবেন না মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা থাকলে তা কত দ্রæত এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের ক্ষতি সাধন করে। তাই নিজের ঘাঁড় থেকে এই আপদ নামিয়ে মানসিকভাবে সুস্থ থাকুন সবসসময়।”এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ক্যথি হেফনার ক্ষমাশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এর ফলে সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় হবে যা সুরক্ষিত রাখবে হৃদযন্ত্র এবং ভাল থাকবে মানসিক স¦াস্থ্য। পরিশেষে শীতের মৃদু-মন্দ বাতাসে ফাগুনের আগমনী বার্তায় সকলের শারীরিক ও মানসিক সুস¦াস্থ্য কামনায় ছন্দে ছন্দে বলি-
ফুলকপি ওলকপি ও আমলকি জলপাই ফল,
এসব খেলে দেহেতে বাড়ে শক্তি সাহস আর বল।
মা-শীতের দিনে নতুন ধানে পায়েস-মিঠাই করে,
সেসব খেয়ে পেটের সাথে মনটাও তাই ভরে।
রোগমুক্ত দেহ ও মন পেতে চান? তাহলে নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ, হাঁটা, দৌঁড়ানো, সাঁতার কাটা বা কায়িক পরিশ্রম কিংবা ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। এসব কর্মকাÐ শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ রাখবে এবং ডায়বেটিস কিংবা হৃদরোগ থেকে দূরে রাখবে। য়

১ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর, ২সহকারী শিক্ষক, কালীগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কালীগঞ্জ, গাজীপুর। *মোবাঃ-০১৭১২৪০৫১৪৯,ইমেইল- satyen1981@gmail.com