Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

রপ্তানি বাড়াতে মানসম্পন্ন ফল উৎপাদন

প্রফেসর ড. মাহবুব রব্বানী
মানব দেহের পুষ্টি চাহিদার বিবেচনায় বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেলের অন্যতম উৎস হিসেবে সারা বিশ্বে ফল বিশেষভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। পুষ্টিমান, আকর্ষণীয়তা এবং বৈচিত্র্যতার গুণে বিশ্ব বাণিজ্যে ফল একটি আবশ্যিক পণ্য। সঙ্গত কারণে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে বিভিন্ন পালা-পার্বণ ও উৎসবের একটি অবিচ্ছিন্ন অনুসঙ্গ হচ্ছে ফল। দেশের চলমান অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ফল শিল্পের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে, বিশেষ করে টাটকা এবং প্রক্রিয়াজাতকৃত বেশকিছু প্রধান ও অপ্রধান ফল দেশীয় বাজারের চাহিদাপূরণের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে ভ‚মিকা রাখছে।
দেশের ফল রপ্তানির বর্তমান চালচিত্র : বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৪৫ লাখ টন ফল উৎপাদিত হয় তন্মধ্যে প্রায় ৫৩ শতাংশ আসে বাণিজ্যিক বাগান (ঙৎপযধৎফ) থেকে এবং বাকি ৪৭ শতাংশ ফলের জোগান আসে বসতবাড়ি ও তদসংলগ্ন জমি থেকে। দেশে ফলের বাণিজ্যিক বাগান বৃদ্ধি তথা মোট উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও নানাবিধ কারণে রপ্তানির পরিমাণে বছরভিত্তিক তারতম্য লক্ষ করা যাচ্ছে, যা নি¤েœ উল্লেখিত ২০১২-২০১৬ পর্যন্ত দেশের ফল রপ্তানির সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান থেকে অনুমেয়।
রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের ফলের অবস্থান পার্শ্ববর্তী এবং প্রতিযোগী দেশসমূহের তুলনায় অনেক সীমিত। ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে ফল রপ্তানির ক্ষেত্রে ক্রমহ্রাসমান ধারা বিদ্যমান। রপ্তানি হ্রাস-বৃদ্ধির নানাবিধ কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানসম্পন্ন ফল উৎপাদন এবং আমদানিকারক দেশের চাহিদা অনুযায়ী রপ্তানি প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণে ব্যর্থতা। বলাবাহুল্য মানসম্পন্ন ফল উৎপাদনের পাশাপাশি বর্তমান রপ্তানি পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারলে দেশের ফল রপ্তানি বৃদ্ধিসহ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বাংলাদেশের ফল হিসেবে ব্র্যান্ড-এর অপার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
রপ্তানি বাড়ানো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানসম্পন্ন ফল উৎপাদন : ফলের মান বুঝাতে কোন একক বৈশিষ্ট্য নয় বরং অনেকগুলো কাক্সিক্ষত গুণের সমন্বয়কে বুঝায়। রপ্তানি বাজারে ফলের বৈচিত্র্যতা এবং জাত অনুযায়ী পৃথক পৃথক মানদÐ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মানসম্পন্ন ফল উৎপাদন করা এবং বিদেশি ভোক্তা পর্যন্ত এসব ফলের মান বজায় রাখা কোন একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না, সে জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের (ঝঃধশবযড়ষফবৎ)  দায়িত্বশীল ভ‚মিকা। যেমন:Ñ
উৎপাদন পর্যায় : মানসম্পন্ন ফলের নিশ্চয়তা বিধানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হচ্ছে উৎপাদনকারীর। রপ্তানি কেন্দ্রিক একটি আদর্শ ফল উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে উপযুক্ত জাত নির্বাচন করা থেকে শুরু করে সুকৃষি চর্চা (এঅচ), সমন্বিত ফসল ব্যবস্থাপনা (ওঈগ), সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (ওচগ), প্যাকেজিং এবং অর্গানিক ফার্মিং বিষয়গুলো সম্পৃক্ত থাকে। উৎপাদনকারীকে অবশ্যই সুকৃষি চর্চার প্রমাণপত্র (ঈবৎঃরভরপধঃরড়হ) নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এবং রপ্তানির লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ফল হচ্ছে আম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (উঅঊ)  এর উদ্যোগে আম উৎপাদনে সুকৃষি চর্চা, ফ্রুট ব্যাগিং, ফেরোমন ফাঁদ, হট ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে রপ্তানি কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে। রপ্তানির তালিকায় অগ্রাধিকার অন্যান্য ফল কাঁঠাল, কলা, লেবু, নারিকেল, লিচু, আমড়া, তেঁতুলের ক্ষেত্রেও আমের মতো সুকৃষি চর্চা নিশ্চিত করার মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধির অপার সুযোগ রয়েছে।
ফলের যে সব জাত আন্তর্জাতিক বাজারে ভোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং উল্লেখযোগ্য চাহিদা রয়েছে সেগুলোকে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সকল স্তরে কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে রপ্তানি মান নিশ্চিত করতে হবে। সুস্বাদু হিমসাগর আমকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে (ঊট) রপ্তানির লক্ষ্যে মেহেরপুর জেলায় নির্দিষ্ট কিছু আম বাগানে উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। একই প্রক্রিয়া অন্যান্য ফলের বাণিজ্যিক জাতের ক্ষেত্রে প্রয়োগের চেষ্টা করা যায়। ফল বাগানে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার নির্ভরতা যথা সম্ভব সর্বনি¤œ পর্যায়ে রেখে জৈবসারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ফল বাগানে বালাইনাশক হিসেবে অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ না করে জরুরি প্রয়োজনে পরিমিত এবং নির্দিষ্ট মাত্রায় রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগের পাশাপাশি সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, বায়োকন্ট্রোল, বোটানিক্যাল কন্ট্রোল এসবের ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিশ্ব বাজারে ‘অর্গানিক ফ্রুট’ এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বিধায় এটিকে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
হারভেস্ট ও সাপ্লাই চেইন পর্যায় : রপ্তানি ইস্যুতে ফলের পরিপক্বতার বিষয়টি অতীব জরুরি। কারণ উপযুক্ত পরিপক্ব পর্যায়ে সংগৃহীত ফলের সংগ্রহোত্তর জীবনকাল (ঝযবষভ ষরভব) দীর্ঘ হয় এবং অধিক পরিপক্ব বা কৃত্রিমভাবে পাকানো ফলের সংগ্রহোত্তর জীবনকাল সংক্ষিপ্ত হয়। উপযুক্ত পরিপক্বতার পর্যায়ে সংগৃহিত ফলকে স্বাস্থ্যবান্ধব ট্রিটমেন্ট করে লাগসই গ্রেডিং, প্যাকেজিং, স্টোরেজ এবং ট্রান্সপোর্টেশন নিশ্চিত করতে হবে। গ্রেডিংয়ের সময় বিভিন্ন আকার, আকৃতি এবং ভালো মন্দের মিশ্রণ ঘটানো যাবে না। প্যাকেজের গায়ে যথাযথ তথ্যাবলীসহ লেবেলিং থাকতে হবে। ফলের ধরন অনুযায়ী প্যাকেজিং করতে হবে যেন নাড়াচাড়ার কারণে আঘাত না লাগে। মনে রাখতে হবে ভালো প্যাকেজিং ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করে, পণ্যের মান সম্পর্কে ভালো ধারণা দেয় এবং ক্রেতাকে পণ্য কিনতে উৎসাহিত করে। ফলের সংগ্রহোত্তর জীবনকাল বাড়ানোর লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু সংরক্ষণ (চৎবংবৎাধঃরাব) বস্তু পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, সোডিয়াম মেটাবাইসালফাইট, পটাশিয়াম মেটাবাইসালফাইট, সিলভার থায়োসালফেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তবে সেটির প্রয়োগমাত্রা হতে হবে যথাযথ এবং সঠিক পদ্ধতিতে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য বা রঞ্জক পদার্থ কোন অবস্থাতেই ব্যবহার করা যাবে না। সাপ্লাই চেইন এর সব পর্যায়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (ঈড়ড়ষ পযধরহ) সুবিধা থাকতে হবে।
রপ্তানিকারক ও আমদানিকারক পর্যায় : ফল একটি পচনশীল পণ্য। তাই দ্রæততার সাথে রপ্তানির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা উচিত। রপ্তানি প্রক্রিয়ায় বিশেষভাবে করণীয় কাজ হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং, লেবেলিং এবং সার্টিফিকেশন এসব। অবশ্যই ডিএই কর্তৃক ইস্যুকৃত ফাইটোসেনিটেশন সার্টিফিকেট সংযুক্ত করতে হবে কারণ ঊট সহ অনেক দেশই এ সার্টিফিকেট ছাড়া শিপমেন্ট গ্রহণ করে না। ফল রপ্তানিতে এয়ার শিপমেন্টই সর্বোত্তম। তবে বিমানে পর্যাপ্ত স্পেস, আলাদা বিমান ব্যবহার, যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ, আপলোডিং এবং শিপমেন্ট নিশ্চয়তার বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। আমদানিকারক দেশ আমদানি নীতিমালার আলোকে যাবতীয় পরিদর্শন বা টেস্টিং কাজ সম্পন্ন করে দ্রæততম সময়ে বাজার/ভোক্তার কাছে ফল পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। অনেক নামকরা আমদানিকারক রয়েছে যারা ফল উৎপাদনকারী দেশে অফিস স্থাপন করে যাবতীয় নিয়মাবলি সম্পন্ন করে রপ্তানি প্রক্রিয়াকে সহজতর করে নেয়, এতে পণ্যের শিপমেন্ট যেমন দ্রæত হয় তেমনি পণ্যের মানও ভালো থাকে। প্রতিষ্ঠিত এবং নির্ভরযোগ্য আমদানিকারকদের জন্য বাংলাদেশে এ ধরনের সুবিধা প্রদান করা যায়।
ভোক্তা পর্যায় : ভোক্তাই হচ্ছেন রপ্তানি বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। কারণ ভোক্তার সন্তুষ্টিই পণ্যের চাহিদা বাড়িয়ে দেয় যার ভিত্তিতে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। ভোক্তার সন্তুষ্টির অনুক‚লে কিছু মানদÐ রয়েছে যা সকল দেশ বা সব ধরনের ফলের ক্ষেত্রেই কমবেশি প্রযোজ্য। ফলের আকর্ষণীয় চেহারা, সুষম আকার, সংহতি, পরিপূর্ণ গঠন, সঠিক পরিপক্বতা, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রঙ, উজ্জ্বলতা, মিষ্টতা, সুঘ্রাণ, পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান, রোগজীবাণুমুক্ত অবস্থা এসব বিবেচনায় রাখতে হয়। ফল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যদি এসব গুণাবলি শতভাগ নিশ্চিত করা যায় এবং সাপ্লাই চেইন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে ভোক্তা পর্যায়েও ফলের মান ভালো রাখা সম্ভব।
রপ্তানির লক্ষ্যে নিরাপদ ফল উৎপাদন : সরাসরি খাওয়া খাদ্যের মধ্যে ফল অন্যতম বিধায় এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয় এবং একই কারণে শুধু রপ্তানি বাণিজ্যে নয় অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যেও নিরাপদ ফলের চাহিদা এবং বাজারমূল্য অনেক বেশি। যেহেতু ফল টাটকা খাওয়া হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে খোসাসহ খাওয়া হয় সেহেতু ফলের মধ্যে কোনো প্রকার ক্ষতিকর জীবাণু, রাসায়নিক উপাদান বা হেভিমেটালের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়। স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রক্রিয়ার (ঝঙচ) মাধ্যমে হারভেস্টিং, ক্লিনিং, গ্রেডিং, প্যাকেজিং সম্পন্ন করে ফলকে ক্ষতিকর জীবাণুমুক্ত রাখার মাধ্যমে রপ্তানি মান বাড়ানো সম্ভব। প্রতিষ্ঠিত রপ্তানিকারক দেশসমূহের সুকৃষি চর্চার স্টান্ডার্ড যেমনÑ ঊঁৎড়এঅচ, ঞযধরএঅচ এর আদলে ইধহমষধএঅচ চালু করে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা অর্জনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
ফল রপ্তানি বাড়াতে করণীয়
রপ্তানি পণ্য হিসেবে আরো বেশি ফলের অন্তর্ভুক্তি : বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ১৩০ ধরনের ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে অথচ রপ্তানি বাজারে অবস্থান রয়েছে মাত্র ১০-১৫ ধরনের ফলের। দেশের প্রধান এবং অপ্রধান ফলসমূহের পুষ্টিমূল্য, বহুমাত্রিক ব্যবহার এবং আকর্ষণীয় গুণাবলিসমূহ বিদেশি ক্রেতাদের কাছে প্রদর্শন এবং প্রচারণার মাধ্যমে আরো অনেক ধরনের ফলকে রপ্তানি বাজারে যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে।
রপ্তানি বাজার নিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি নেটওয়ার্ক বাড়ানো : বাংলাদেশের ফল রপ্তানি যেমনি বহুধা বিভক্ত তেমনি বহুমাত্রিকও বটে। ফলের রপ্তানি বাজারকে কোয়ালিটি ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় এনে শুধু অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান এবং চ্যানেলের মাধ্যমে রপ্তানি কাজ সম্পাদন করা প্রয়োজন। রপ্তানি বাজারের মান বজায় রেখে ফল উৎপাদন না করে যে কোন উপায়ে উৎপাদিত ফলকে রপ্তানির জন্য বিবেচনায় আনা সমীচীন নয়। বাংলাদেশ থেকে ফল রপ্তানি করা হয় এমন দেশের সংখ্যাও অপ্রতুল। মানসম্পন্ন ফল উৎপাদনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই, প্রচারণা, প্রণোদনা, ভর্তুকি, এমনকি বিশেষ অভিজাত ফল বিনিময়ের মাধ্যমেও রপ্তানি নেটওয়ার্ক বাড়ানো যায়। বর্তমানে ফল রপ্তানিকৃত দেশসমূহে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে সামষ্টিক চেষ্টা চালানো প্রয়োজন।
বাণিজ্যিক চাষের আওতায় জমির পরিমাণ বাড়ানো : বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির মাত্র ২% ফল চাষের আওতায় রয়েছে যা বাড়ানো প্রয়োজন। বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে আম, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানির লক্ষ্যে মানসম্পন্ন আম উৎপাদনে ডিএইর উদ্যোগে মেহেরপুর জেলায় ১৫টি আম বাগান নির্বাচন করে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আম উৎপাদন কার্যক্রম চালু আছে। রপ্তানির জন্য অগ্রাধিকার অন্যান্য ফল কলা, কাঁঠাল, লেবুজাতীয় ফল, নারকেল, আমড়া, পেয়ারা, লিচুর ক্ষেত্রেও অনুরূপ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। দেশে ১ কোটি ৯৪ লাখ বসতবাড়ির আওতাধীন প্রায় ৪.৫ লাখ হেক্টর জমি রয়েছে, যা বাণিজ্যিক ফল চাষ নেটওয়ার্কের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে কারণ নিরাপদ ফল হিসেবে বসতবাড়ির ফলের আলাদা কদর রয়েছে।    
রপ্তানি পণ্য হিসেবে প্রক্রিয়াজাতকৃত ফলের অন্তর্ভুক্তি : আন্তর্জাতিক বাজারে টাটকা ফলের পাশাপাশি কিছুটা প্রক্রিয়াজাতকৃত (গরহরসধষষু ঢ়ৎড়পবংংবফ) ফল এবং ফলের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পোস্ট হারভেস্ট প্রসেসিং ও প্রিজারভেশন ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে ফলের প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে বাংলাদেশের ফলের বাজার সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আনারস, কাঁঠাল, ড্রাগন ফল, লিচু, বরই, মিষ্টি তেঁতুল ফল কাজে লাগানো যায়।
গবেষণা ও প্রশিক্ষণ : ফলের রপ্তানিযোগ্য জাত সৃষ্টিকরা, বিজ্ঞানসম্মত উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন, সংগ্রহোত্তর জীবনকাল বৃদ্ধির প্রযুক্তি, সঠিক পরিপক্বতার সূচক (গধঃঁৎরঃু রহফবীরহম) নির্ধারণ এবং প্রসেসিং প্রটোকল তৈরির গবেষণাকে আধুনিকীকরণ করা প্রয়োজন। এতে বাংলাদেশী পণ্যের ওপর বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা অর্জিত হবে। তাছাড়া মানসম্পন্ন ফল উৎপাদন ও রপ্তানির বিভিন্ন স্তরে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের ওপর অংশীজনদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
রপ্তানি বাজার জরিপ ও কাজের সমন্বয় : জরুরি ভিত্তিতে একটি নিবিড় জরিপের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফল রপ্তানির সুযোগ ও সম্ভাবনাকে খুঁজে বের করার পদক্ষেপ নেয়া উচিত এবং একই সাথে রপ্তানির দুর্বল দিকগুলোকে চিহ্নিত করে তার দ্রæত সমাধানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও ফল উৎপাদন, সম্প্রসারণ, রপ্তানি ও উন্নয়নের সাথে সরাসরি জড়িত প্রতিষ্ঠানসমূহ ডিএই, এনবিআর, ইপিবি, হর্টেক্স ফাউন্ডেশন, ইন্ডাস্ট্রি ও এক্সপোর্টাসের মধ্যে কাজের সমন্বয় করতে হবে। বিদেশি ক্রেতাদের সাথে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট লিংকেজ স্থাপন করে রপ্তানি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। বাংলাদেশের ফল শিল্পের প্রতিযোগী দেশসমূহের ফল উৎপাদন এবং রপ্তানি ব্যবস্থার ওপর সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে নিজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়ন করা যায়।
 বাংলাদেশে ফল সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে ভেজাল মিশ্রণের অনির্ভরশীল তথ্য প্রকাশিত হয়, যার বিরূপ প্রভাবে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং বাজারব্যবস্থা ঠিক রাখার স্বার্থে এ ক্ষেত্রে ফল উৎপাদনকারী কৃষক, ফল ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের মাঝে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং অপপ্রচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। রপ্তানি পণ্যের মানের সাথে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত রয়েছে বিধায় কোয়ালিটি এবং সেফটির বিকল্প চিন্তার কোনো সুযোগ নেই। সর্বোপরি বাংলাদেশের ফল শিল্পে কোয়ালিটি ও সেফটি সূচকের দৃশ্যমান অগ্রগতির মাধ্যমেই ফলের ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি হবে এবং ফল রপ্তানি বাড়বে বলে দৃঢ় আশা করা যায়। য়

* উদ্যানতত্ত¡ বিভাগ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী, মোবাইল : ০১৭১০৪০১৫২৫