Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বালাইনাশকের ঝুঁকি (নাটিকা)

সখিনা : (স্বামীর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়া জিনিস পত্র আলাদাভাবে রাখছে, তেলও বিষের বোতল একত্রে তাকের ওপর রেখেছে আর বলছে), ছেলে স্কুলে গেছে, ভাত রান্না তো হলো না, কখন ফিরবে কি খাবে?
রব্বিল : (বই হাতে বন্ধুর সাথে প্রবেশ) মা ... মা ...ওমা, মাগো  ক্ষিধা  লাগিছে, ভাত দাও, ভাত খাব। সেই সকালে ভাত খাইছি,
সখিনা : ভাত রান্না তো হয়নি বাবা, টিনের কৌটায় মুড়ি আছে, মুড়ি নিয়া খা ।
রব্বিল : (ছেলে প্লেটে মুড়ি নিয়া খাচ্ছে) মা মুড়ি খেতে ভালো লাগছে না, গলায় আটকে যাচ্ছে ,খালি মুড়ি কি খাওয়া যায়?
সখিনা : বাবা রব্বিল দেখতো তাকের ওপর সরিষার তেল আছে, তেল নিয়া মুড়ি মাইখ্যা খা, আমি গোসল করে আসি।
রব্বিল : (বিষের বোতল নিয়া মুড়ির সাথে বিষ মিশাইয়া খাওয়া শুরু করতেই) মা .. ও মা, গলা জ্বলছে বুক জ্বলছে, পেট জ্বলছে, বমি হচ্ছে, মা গো মরে গেলাম বাঁচাও..বাঁচাও ...বাঁচাও (মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল)।
হাশেম : রব্বিল কে নিয়ে হুলস্থূল, পানি নিয়ে আয়, তেল নিয়ে আয়, কে কোথায়  আছ তাড়াতাড়ি  আস।
কাশেম : রব্বিল কে দেখে দ্রুত ডাক্তার ডাকতে গেল।
শরিফ : হাত ধরে দেখল, চোখ দেখল, টেলিস্কোপ ধরল। রব্বিল আর নাই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। (কান্নার রোল পড়ে গেল)।                                                              
২য় দৃশ্য
ল্যাকট : (স্প্রে মেশিন ও বিষের বোতল নিয়ে বিষণœ মনে ভাবছে) ছেলেটা মরে গেল আমি আর কি নিয়া বাঁচব? আমার সাথে কত কথা বলত, স্কুলে যেত, খেলা করত, তার কত বন্ধু ছিল,..আবার ওই দিকে ক্ষেতের ফসলে পোকা লেগে সব ফসল খেয়ে গেল কি যে, করি আমার তো পা উঠছে না।
মাখন মিয়া : চাচা আর দুঃখ কইরো না, সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছা, বাঁচা  মরার মালিক সেই। চিন্তা কইর না  চাচা  তোমার ক্ষেতে আমি বিষ দিয়া দেবোনে ।
ল্যাকট : মাখন! আমার জমিতে বিষ দিয়া দিবি! তাহলে আমি রক্ষা পাই। তোকে ২০০ টাকা দেবোনে আর বিড়ি দেবনে বিড়ি ,....বিড়ি।
মাখন মিয়া : তাহলে চল চল আমাকে বিষ মিশিয়ে মেশিন কাঁধে তুলে দাও।
ল্যাকট : শোন বউ আমারে দুজনের জন্যে মাঠে ভাত নিয়া আইস।
মাখন মিয়া : (মুখ দিয়া বিষের বোতল খুলবে, হাত দিয়া মিশাবে, পান খাবে, খালি গায়ে, খালি পায়ে, খালি পেটে, বাতাসের বিপরীতে বিষ স্প্রে করবে) আজ পোকার একদিন কি আমার একদিন, পোকার চৌদ্দগোষ্ঠী মাইরা ফেলাব  পোকার জ্বালায় জানডা ভাজা ভাজা হয়ে গেল (ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাড়ির দিকে উঁকি ঝুঁকি করছে)।
সখিনা : (ভাতের গামলা, জগ, গ্লাস নিয়ে স্ত্রীর প্রবেশ) ভাত লইয়া আইছি, খাইয়া নাও, ও রব্বিলের বাপ, বেলা তো কম হয়নি ।
মাখন মিয়া : (হাত পা না ধুয়ে তড়ি ঘড়ি করে মাখনও ল্যাকট খেতে শুরু করল, কয়েক বার মুখে দিয়েই) মুখ আটকে আসছে, গলা জ্বলছে, বুক জ্বলছে, পেট জ্বলছে,মাথা ঘুরছে, কিছু দেখতে পাচ্ছি না, কি খাওয়ালে চাচি (বমি বমি ভাব) জ্বলে গেল, পুড়ে গেল মরে গেলাম, বাঁচাও, বাঁচাও (অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে)।
ছাকেন : দূরের মাঠে কাজ করছিল, ছুটে এলো। (ছাকেন ও সখিনা, মাখনকে ধরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল)  তুই পরের ছেলেটা বিষ দিতে নিয়া মারে ফেলতে লাগিছ্।
শরিফ : (হাত ধরে দেখবে, চোখ দেখবে, হার্টবিট দেখবে, মুখ হা করাবে, পাইপ লাগাবে, বিষ বাহির করবে, ইনজেকশন দিবে) বলবে... এবারের মতো বেঁচে  গেলেন। (হাতে ডাইরি, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে এসএএও সাহেবের প্রবেশ)
ফয়েজ : কি হয়েছে ল্যাকট ভাই? এত শোরগোল কিসের?
ল্যাকট : আস্সালামু আলাইকুম, এসএএও সাব, আপনার কথা না শুনে বিষ দিতে গেছিলাম, যাইয়া আমার ভাইস্তা মাখন মিয়া প্রায় যায় যায়, আমার ছেলে রব্বিল আর নাই। (ক্রন্দন)
ফয়েজ : কাঁদে না ভাই, কাঁদেন না (চোখ মুছে দিবেন) ধৈর্য ধরুন, সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনার ভুলের জন্য বিপদে পড়েছেন, আমার ও খুব খারাপ লাগছে। তবে সতর্কতার সাথে বিষ ব্যবহার করলে নিজেদের কোনো ক্ষতি হতো না, পোকা ঠিকই দমন হতো।
ল্যাকট : সতর্কতা আবার কি? বাজার থেকে বিষ কিনে নিয়ে  আসি পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করেছি ।

(এসএএও কথা বলার সময় সব কৃষক মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে)                                                                                                                                    
ফয়েজ : না ভাই না না, সতর্কতা হলো, বিষ ব্যবহারের আগে-পরে ও বিষ ব্যবহারের সময় সাবধান থাকা।
আপনারা সবাই শুনেন বিষ দেয়া জমিতে লাল কাপড়ের  নিশান টাঙাতে হবে।
ল্যাকট ও মাখন : (কান ধরে বলবে) আর কোনো দিন এলোপাতাড়ি বিষ ব্যবহার করব না। কৃষি বিভাগের পরামর্শ না নিয়া বিষ ব্যবহার করব না। (ল্যাকট, মাখন ও ফয়েজ একত্রে মাথা ঝুকিয়ে সমাপ্ত করবে )।

মো. মাজেদুল ইসলাম মিন্টু*
*এসএএও, পাবনা সদর, পাবনা; ০১৭১৭-৪৬৬৯৯৮