Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পিপুলকথা

এ দেশের বনে জঙ্গলে, ঝোপ ঝাড়ে, রাস্তার ধারে পান পাতার মতো পাতাবিশিষ্ট লতানো পিপুল গাছ মাঝে মধ্যে দেখা যায়। পিপুল ফলের স্বাদ ঝাল। পিপুল ফল খাওয়া যায়।
গাছটি এদেশে দুষ্প্রাপ্য নয় কিন্তু এর ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের ধারণা কম। ওষুধার্থে পিপুল গাছের পাতা কখনও ব্যবহৃত হয় না, এর মূল ও অপক্ব ফল ব্যবহার করা হয়। পিপুলের বীজ পপি বীজের মতো সূক্ষ্ম কণাবিশিষ্ট। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য তাঁর চিরঞ্জীব বনৌষধি বইয়ে বেদে পিপুলের নাম কন বা কণা বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, পিপুল খুব সূক্ষ্ম হয়ে দেহে প্রবেশ করতে পারে বলেই এর এরূপ নাম। দ্রব্যটি সূক্ষ্ম হয়ে দেহে প্রবেশ করে রসধাতু পান করে নেয় আবার সূক্ষ্ম হয়ে বেরিয়ে যায়। তার এই পান বা শোষণ করার ধর্ম থেকে নাম রাখা হয়েছে পিপ্পল, এ থেকে পিপ্পলি, পিপলি বা পিপুল। তামিল শব্দ পিপ্পলি থেকে পিপুল নামের উদ্ভব। বৈদিক যুগে পিপুল ছিল সর্বাধিক ব্যবহৃত ভেষজ গাছ। বেদশাস্ত্রে প্রথম পিপুলের উল্লেখ পাওয়া যায়। বেদে পিপুলকে উঁচু স্থানও দেয়া হয়েছে ও পিপুলের ভেষজ গুণ বর্ণিত হয়েছে। চরকসংহিতার যুগে পিপুল ছিল সর্বাধিক ব্যবহৃত ভেষজ উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম Long pepper পিপুলের ফল লম্বা ও ঝাল বলে হয়তো এর ইংরেজি নাম হয়েছে লং পিপার।


উৎপত্তি ও বিস্তার : পিপুলের জন্মভূমি প্রাচীন ভারতবর্ষের মগধদেশ বলে দাবি করেছেন শিবকালী ভট্টাচার্য। মগধ দেশ ছিল বর্তমান বিহার প্রদেশের দক্ষিণাংশ। কোশল বা উত্তর প্রদেশও ছিল মগধের অঙ্গভূমি। এজন্য পিপুলের আর একটি নাম মাগধী। খৃস্টপূর্ব ৫ম ও ৬ষ্ঠ শতকে ভারতবর্ষ থেকে পিপুল গ্রিসে প্রবেশ করে এবং হিপোক্রেটাস পিপুলকে মশলার চেয়ে ভেষজ হিসেবেই বেশি আলোচনা করেন। বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও আসাম, নেপাল, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, তিমুর প্রভৃতি দেশে পিপুল বেশি জন্মে।


উদ্ভিদতাত্ত্বিক বর্ণনা : পিপুলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Piper longum L.ও পরিবার Piperaceae. চার রকমের পিপুল দেখা যায়- ১. পিপলি- এর আর এক নাম মাগধী। মগধ প্রদেশে এক সময় এ পিপুল গাছ জন্মাত বলে এর এরূপ নাম। ভারতবর্ষের প্রায় সব স্থানে এই গাছ দেখা যায়। ছোট ও বড় পিপুল এ শ্রেণীর অন্তর্গত। ২. গজপিপুল- এটি আসলে প্রকৃত পিপুল নয়, চুইঝাল গাছের ফলকে বলে গজপিপুল। ৩. সিংহলী পিপুল- সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার প্রভৃতি দেশে এই পিপুল জন্মে। একে জাহাজী পিপুলও বলে। ৪. বনপিপুল- অযত্ন এই পিপুল বনে আপনা আপনি জন্মে। এর গাছ আকারে ছোট, ফলও ছোট, ঝাঁঝ কম, সরু। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে যেখানে সেখানে বনে জঙ্গলে এ পিপুল গাছ দেখা যায়। পিপুল পানের মতো একটি লতানো স্বভাবের গাছ। অবলম্বন না পেলে গাছ মাটিতেই পড়ে থাকে। অবলম্বন পেলে তা বেয়ে ওপরে ওঠে। লতায় গিঁট আছে। লতার আগা কোমল, পাতা পানপাতার মতো হৃৎপিণ্ডকার। পাতার রঙ গাঢ় সবুজ, নিচের পিঠ হালকা সবুজ। পত্রকক্ষ থেকে পুষ্পমঞ্জরি বের হয় ও ফল ধরে। পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পৃথক গাছে আলাদাভাবে ফোটে। ফুল লম্বা দণ্ডের মতো মঞ্জরিতে ফোটে। বর্ষাকালে ফুল হয়, শরৎকালে ফল ধরে। ফল ডিম্বাকার। পিপুল ফল দেখতে অনেকটা মরিচের মতো, তবে ফল অমসৃণ ও কুঁচকানো। ফল হালকা সবুজ, কমলা ও হলুদ রঙের হয়। পাকলে ফলের রঙ লাল হয়ে যায়। শিকড় ধূসর বাদামি ও লম্বালম্বিভাবে কুঁচকানো।


মাটি ও জলবায়ু : পিপুল সাধারণত সুনিষ্কাশিত লাল, দো-আঁশ ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটিতে ভালো জন্মে। উর্বর মাটিতে শুধু জৈব সার দিয়ে পিপুল চাষ করা যায়। বেলে দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য ভালো। যেসব অঞ্চলে উচ্চ আর্দ্রতা ও উষ্ণতা বিরাজ করে সেসব অঞ্চলে পিপুল ভালো হয়। পিপুলের জন্য ৩০-৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা, ৬০% আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও বার্ষিক ১৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত উত্তম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাধারণত ১০০ থেকে ১০০০ মিটার উচ্চতার মধ্যে পিপুল জন্মে থাকে। অধিক উচ্চতা ও উঁচু পাহাড়ে ফলন ভালো হয় না। গাছের ভালো বৃদ্ধির জন্য আংশিক ছায়া (২০-২৫%) উত্তম।


ব্যবহার : পিপুলের বাণিজ্যিক ব্যবহার এখনও প্রধানত মশলা হিসেবে। ভেষজের চেয়ে মশলা ফসল হিসেবেই বেশি চাষ করা হয়। আচার ও চাটনি তৈরিতে পিপুল চূর্ণ মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উত্তর আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় কোনো কোনো খাদ্য সামগ্রী রান্নায় পিপুল ব্যবহার করা হয়। ভারতের বাজারে মুদি দোকানে পিপুল চূর্ণ পাওয়া যায়। পাকিস্তানে নিহারি বা নেহারি রাঁধতে পিপুল চূর্ণ এক আবশ্যকীয় মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মশলা ছাড়া এর যথেষ্ট ভেষজ গুরুত্ব রয়েছে।


ভেষজ গুণ : চরকসংহিতার সূত্র স্থানে ৯টি বিশিষ্ট রোগে পিপুলকে প্রয়োগ করার ব্যবস্থা দেয়া হয়েছে। এ ৯টি রোগ হলো- কণ্ঠ রোগ, তৃষ্ণা রোগ, শিরো রোগ, হিক্কা, কাশি, শূলরোগ, শীত বা ঠাণ্ডা লাগা প্রশমন ও দীপনীয়। সে যুগে পিপুল এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে যেন কৃমিরোগ ও অন্ত্ররোগ চিকিৎসায় দেবতারাই তা গ্রহণ করতেন। দেহের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় পিপুল কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফুসফুসের ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, আন্ত্রিক ক্যান্সার, লিউকোমিয়া, মস্তিষ্কেও টিউমার, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের বিরুদ্ধে পিপুল কার্যকর। পিপুলের মধ্যে পিপারলংগুমিনাইন নামক রাসায়নিক যৌগ থাকায় তা এসব ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও আরও যেসব রাসায়নিক উপাদান পিপুলে রয়েছে সেগুলো হলো পিপারিন, পিপলারটাইন, পিপারনোলিন, লং এমাইড, পিপারলংগিন, পিপারসাইড, পেল্লিটোরিন, বিভিন্ন এসেনশিয়াল অয়েল ইত্যাদি। শিকড়ে রয়েছে পিপারিন, স্টেরয়েডস, গ্লুকোসাইডস, পিপেলারটিন ও পিপারলংগুমিনাইন নামক রাসায়নিক উপাদান। ওষুধার্থে পিপুলের শিকড় ও ফল ব্যবহৃত হয়। সাধারণ পিপুল ফলের গুঁড়া আধা থেকে ১ গ্রাম পরিমাণ এক মাত্রা হিসেবে রোজ সেবন করা হয়। নিচে পিপুলের উল্লেখযোগ্য ভেষজ গুণ ও ব্যবহার সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-


নিদ্রাহীনতা দূর করে : রাত গভীর হচ্ছে অথচ কিছুতেই ঘুম আসছে না। এ অবস্থাটা আসলে অসহ্য। একে বলে নিদ্রহীনতা। এ অবস্থা হলে পিপুলের শরণাপন্ন হতে হবে। পিপুলের ১-৩ গ্রাম শিকড় সামান্য চিনি সহকারে ছেঁচে বা বেঁটে সেই রস ছেঁকে দিনে দুবার সকাল বিকেলে খেতে হবে। বয়স্ক লোকদের এই রস সেবনে বিশেষ উপকার হয়। চিনির বদলে আখের গুড়ও ব্যবহার করা যায়। এতে হজমও ভালো হয়।  


কাশি সারে : খুসখুসে কাশি আর ঘুষঘুষে জ্বর। এটা যক্ষ্মা রোগের পূর্ব লক্ষণ। এরূপ অবস্থা হলে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে ও পরীক্ষা করাতে হবে। তবে তার আগে পিপুলচূর্ণ ২৫০ মিলিলিটার সামান্য গরম জলে গুলে সকাল-বিকেল অর্থাৎ দিনে দুইবার খেতে হবে। এভাবে ৪-৫ দিন খাওয়ার পর সেটা চলে যেতে পারে। যদি না যায়, তখন অবশ্যই যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা করাতে হবে।


জ্বর সারায় : যে জ্বরে রক্তের বল কমে যাচ্ছে, শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে, চামড়া শুষ্ক হয়ে পড়ছে, চোখ ফ্যাকাসে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলছে, অথচ জ্বর সারছে না। সেক্ষেত্রে ২৫০ মিলিগ্রাম পিপুল চূর্ণ ৫/১০ ফোঁটা ঘি মিশিয়ে রোজ খেলে কয়েক দিনের মধ্যে এই জীর্ণ জ্বর সেরে যাবে।


মেদ কমায় : যারা মোটা ও মেদস্বী তারা মেদ কমাতে চাইলে রোজ খাওয়ার ১০-১৫ মিনিট পর ১ কাপ হালকা গরম জলে ২৫০ মিলিগ্রাম পিপুল চূর্ণ গুলে তাতে আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে খাবেন। দিনে দুইবার খাওয়া যায়। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে মেদ কমবে। এ সময় কোনো চিনি বা মিষ্টি খাওয়া চলবে না ও একবেলা ভাত ও দুইবেলা রুটি খেতে হবে। এটা খাওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে কোনো শক্ত খাবার খাওয়া যাবে না, তবে তরল খাবার খাওয়া যেতে পারে।


হাঁপানির উপশম হয় : অল্প পরিশ্রমে যাদের শ্বাসকষ্ট হয়, হাঁপ ধরে তারা পিপুলচূর্ণ ২৫০ মিলিলিটার সামান্য ১ কাপ জলে গুলে খাবার গ্রহণের কিছু পরে খেতে পারেন। তা না হলে ২ গ্রাম পিপুল ফল একটু থেঁতো করে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ২-৩ ঘণ্টা পর পর তা ৩-৪ বারে খেতে পারেন। এতে শ্বাসের কষ্ট কমবে।


কৃমি কমায় : শিশু বৃদ্ধ যারই গুঁড়া বা ঝুড়ো কৃমি হোক তাদের উচিত রোজ সকাল-বিকেল ১ কাপ বাসি জলে ২৫০ মিলিগ্রাম পিপুল চূর্ণ গুলে খাওয়া। এতে কৃমির উপদ্রব কমবে।
মাথাব্যথা কমায় : মাথা ব্যথা হলে তা সারানোর সবচেয়ে সহজ ওষুধ হলো পিপুল ফল বেঁটে মলমের মতো করে কপালে লেপে দেয়া। এতে দ্রুত মাথাব্যথা কমে। এছাড়া পিপুল, গোলমরিচ ও আদা একসাথে জলের সাথে বেঁটে ছেঁকে সেই রস রোগীকে খাওয়ানো। এতেও মাথাব্যথার উপশম হয়।


দাঁত ব্যথা সারায় : দাঁতে যন্ত্রণা হলে ১-২ গ্রাম পিপুল চূর্ণ লবণ, হলুদের গুঁড়া ও সরিষার তেলে মিশিয়ে দাঁতের ব্যথা স্থানে লাগালে তা কমে যায়।


হৃদরোগে : সমপরিমাণ পিপুল মূল ও দারচিনি একসাথে বেঁটে মিহি গুঁড়া করতে হবে। তারপর তা ঘিয়ের সাথে মিশিয়ে রোজ দুইবার খেতে হবে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য ও হৃদরোগের উপশম হয়। সমপরিমাণ শুকনো পিপুল মূল ও লেবুর গাছের শিকড়ের বাকল একসাথে বেঁটে গুঁড়া বানাতে হবে। রাতে ১ কাপ জলে অর্জুনের ছাল ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে সেই অর্জুনের ক্বাথের সাথে এই চূর্ণ মিশিয়ে খালি পেটে খেতে হবে। এতে হৃৎপিণ্ডের ব্যথা থাকলে তাও সেরে যায়।


অর্শ নিরাময় করে : অর্শ হলে আধা চা-চামচ পিপুল চূর্ণ, ভাজা জিরার গুঁড়া সামান্য লবণ ১ গ্লাস ঘোলে মিশিয়ে খালি পেটে খেতে হবে। এতে অর্শ রোগ কমে যাবে। ঘোল পাওয়া না গেলে ছাগলের দুধে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এমনকি এই মিশ্রণ জ্বাল দিয়ে ঘন করে মলমের মতো অর্শের বুটিতে লাগিয়ে দেয়া যায়।


কীট দংশনের ব্যথা কমায় : পিপুলের শিকড় বেঁটে পোকামাকড়ের কামড়ানো স্থানে লেপে দিলে দ্রুত ব্যথা কমে যায়।


সতর্কতা : দুধের শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতিদের পিপুল খাওয়ানো চলবে না। মাত্রারিক্ত সেবনে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে, অন্ত্র ফুলে যেতে পারে ও দেহের তাপ বেড়ে যেতে পারে।
 

চাষাবাদ : সাধারণত এ দেশে কেউ পিপুল চাষ করে না। নাটোরে কোনো কোনো চাষি স্বল্প আকারে চাষ করেন।  শিকড় গজানো কাণ্ডের কাটিং দ্বারা সহজে পিপুলের চারা তৈরি ও চাষ করা যায়। বীজ থেকেও পিপুলের চারা হয়। লতা মাটির সাথে শুইয়ে দাবাকলম করে গিঁট থেকে শিকড় গজিয়ে নেয়া যায়। এক বছর বয়সী লতার আগার দিকের অংশ  যেখানে ৫-৭টি গিঁট থাকে তা কাটিং করার জন্য ভালো। পলিব্যাগ বা বেডে চারা তৈরি করা যায়। সাধারণত লতা থেকে পিপুলের চারা তৈরি করা হয়। মার্চ-এপ্রিল মাস চারা তৈরির উপযুক্ত সময়। নতুন শিকড় ও লতায় ছাতরা পোকার আক্রমণ যাতে না হয় বা কম হয় ও প্রথম বর্ষার পরপরই যাতে চারা লাগানো যায় সেজন্য এ সময় চারা তৈরি করা যেতে পারে। পিপুল চাষ করতে চাইলে জমি ভালো করে চাষ দিয়ে ২.৫ মিটার চওড়া করে বেড বানাতে হবে। দুই বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে। বেড জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বা হতে পারে। পিপুল চাষের জন্য ৩ মিটার লম্বা ও ২.৫ মিটার চওড়া আকারের বেড উত্তম। বেডের মাঝে ৬০ সেন্টিমিটার পর পর সারিতে ৬০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে কাটিং লাগাতে হবে। পাহাড়ের ঢালে ২ মিটার পর পর পিপুলের কাটিং লাগাতে হবে। কাটিং লাগানোর আগে রোপণ স্থানে গর্ত করে তার মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে ভরতে হবে। প্রতি গর্তের মাটির সাথে ১০০ গ্রাম জৈব সার মিশিয়ে দিতে হবে। হেক্টরে ১০-১৫ টন জৈব সার দিলে ভালো হয়। গর্ত ১৫ সেন্টিমিটার গভীর হলেই চলবে। গর্তের ঠিক মাঝখানে কাটিং লাগাতে হবে। প্রতি গর্তে দুটি কাটিং লাগাতে হবে।

তীব্র রোদে পিপুল গাছের ক্ষতি হয়। তাই পিপুল ক্ষেতের মধ্যে কিছু কলাগাছ লাগিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আন্তঃফসল হিসেবে কলা থেকে বাড়তি আয় হতে পারে। ইউক্যালিপটাস গাছ লাগিয়েও পিপুল ক্ষেতে ছায়ার ব্যবস্থা করা যায়। নারিকেল বা সুপারি বাগানের মধ্যে আন্তঃফসল হিসেবে পিপুল চাষ করা যায়। পিপুল গাছ এসব গাছ বেয়ে উঠতে পারে। মে মাসের শেষে কাটিং লাগানো সবচেয়ে ভালো যদি এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যায়। তা না হলে জুন-জুলাই কাটিং লাগানোর উত্তম সময়। লাগানোর সময় বৃষ্টি থাকলে সেচের দরকার নেই, না হলে রোপণের পরই সেচ দিতে হবে। বর্ষার পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেও কাটিং রোপণ করা যায়। আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাতের অবস্থা বুঝে পরবর্তীতে সেচ ব্যবস্থাপনা চালিয়ে যেতে হবে। দরকার হলে সপ্তাহে একবার সেচ দিতে হবে।  রোপণের পর ৩ মাস পর্যন্ত আগাছা পরিষ্কার করে চারার গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। খরার সময় বা গ্রীষ্মকালে গাছের গোড়ার মাটি খড় দিয়ে ঢেকে দিলে বা মালচিং করলে উপকার হয়। এ সময় সেচ দিতে পারলে অসময়েও ফুল-ফল ধরে। বর্ষাকালে পাতায় দাগ রোগ বেশি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডায়থেন এম ৪৫ বা নাটিভো ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।


ফসল সংগ্রহ ও ফলন : চারা রোপণের ৬ মাস পর থেকে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। ফুল আসার ২ মাস পর সেসব ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। যখন ফলগুলো পূর্ণতা পায় অথচ পাকে না ঠিক সে অবস্থায় পিপুলের ফল সংগ্রহ করা উচিত। এ অবস্থায় ফল না তুলে রেখে দিলে দ্রুত তা পেকে যায় ও ঝাঁঝ অনেক কমে যায়। এছাড়া পিপুলের ফল পেকে গেলে সেসব ফল শুকানোর পর সহজে ভাঙা বা গুঁড়া করা যায় না। সেজন্য পাকা পিপুল ফল তোলা হয় না। একবার লাগালে সেসব গাছ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। ফলের রঙ গাঢ় সবুজ হলে তা সংগ্রহ করা উচিত। প্রথম বছর প্রতি হেক্টরে গড় ফলন পাওয়া যায় ৭৫০ কেজি শুষ্ক ফল, দ্বিতীয় বছরে ১৫০০ কেজি ও তৃতীয় বছরে ১০০০ কেজি। তবে ব্যবস্থাপনার কারণে ফলনের কম-বেশি হতে পারে। তিন বছরের পর আর গাছ রাখা উচিত নয়। এরপর নতুন করে আবার কাটিং লাগাতে হবে।গাছের গোড়ায় মোটা কা- বা শিকড় কেটে তোলা হয়। একে বলে ‘পিপুলমূল’। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম জেলায় পিপুল শুধু মূলের জন্য চাষ করা হয়। সেখানে পিপুল গাছ লাগিয়ে ১৮ মাস বয়স হলে তা থেকে শিকড় সংগ্রহ শুরু করা হয়। গাছ ১০-৩০ বছর পর্যন্ত রেখে দেয়া হয়  এবং তা থেকে প্রতি বছর শিকড় সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত গাছের বয়স ১৮ মাস হলে সেসব গাছ থেকে মূল সংগ্রহ শুরু হয়। মূল ২.৫ থেকে ৫ সেন্টিমিটার টুকরো করে কাটা হয়। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৫০০ কেজি শুষ্ক মূল পাওয়া যায়।


ফল শুষ্ককরণ : ফল তোলার পর তা উল্টে পাল্টে রোদে ৪-৫ দিন শুকাতে হয়। ভালো করে না শুকানো পর্যন্ত তা ঘরে রাখা উচিত নয়। সাধারণত ১০ কেজি কাঁচা ফল শুকালে ১.৫ কেজি শুষ্ক ফল পাওয়া যায়। ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহারের জন্য শুষ্ক ফল বায়ুবদ্ধ পাত্রে মজুদ করে রাখা যায় বা বস্তা ভরে বাজারে বিক্রির জন্য পাঠানো যায়। পিপুল ফল শুকানো সহজ হলেও শুকানোর প্রক্রিয়াগত কারণে অনেক সময় ফল নষ্ট হয় ও অপচয়ের পরিমাণ বাড়ে। পিপুল ফল শুকানোর জন্য ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা উত্তম। এতে রাসায়নিক উপাদান সর্ব্বোচ্চ থাকে। পাতলা স্তরে বিছিয়ে পিপুল ফল শুকানো উত্তম।

 

মৃত্যুঞ্জয় রায়*

* প্রকল্প পরিচালক, আইএফএমসি প্রকল্প, খামারবাড়ি, ঢাকা


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon