Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কুল চাষে নারায়ণ চন্দ্র হালদারের সাফল্য

বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া গ্রামের সফল চাষি নারায়ণ চন্দ্র হালদার। যিনি কুল নারায়ণ হিসেবে পরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চল যখন লবণাক্ততার গ্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত, সমদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হওয়ায় জোয়ার ভাটার প্রভাবে নিম্নাঞ্চল প্রায়শই ডুবে থাকে, সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি যখন বিপদগ্রস্ত সেসাথে কৃষিও হুমকির সম্মুখীন এমন অবস্থায় নারায়ণ বাবু নিজের প্রতিভায় বিকশিত হয়ে বাগেরহাটসহ আশপাশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। নিজের ফসলি জমি বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জলমগ্ন থাকায় যখন দিশেহারা অবস্থা ; তখন বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘মাটি ও মানুষ’-এ প্রচারিত একজন সফল কুল চাষির সাক্ষাৎকার দেখে তিনি দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হন। নিজের অনাবাদি জমিটুকুকে সদ্বব্যবহার করতে নানা পরিকল্পনা করতে থাকেন। এ সময় তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন উপজেলা কৃষি অফিস। সাফল্যের কাহিনী জানতে মুখোমুখি হয়েছিলাম নারায়ণ বাবুর সাথে-


প্রশ্ন : আপনার এ বাগান কত সালে তৈরি করেছেন?
উত্তর : ২০০৯ সালে মাত্র ১৮টি কুলের চারা রোপণ করে এ বাগান তৈরির কাজ শুরু করি।

প্রশ্ন : কি জাতের চারা কোথা থেকে সংগ্রহ করেছিলেন?
উত্তর : নারকেলি কুলের চারা সাতক্ষীরা নার্সারি থেকে সংগ্রহ করি।

প্রশ্ন : আপনার এ ডোবা নিম্নাঞ্চলে ফল বাগান করার প্রযুক্তি কোথায় পেলেন?
উত্তর : আমাদের সদর উপজেলা কৃষি অফিসার ও উপসহকারী কৃষি অফিসার আমাকে এ ফল বাগান তৈরিতে প্রযুক্তির সহায়তা করেছেন।

প্রশ্ন : কোন পদ্ধতিতে আপনি এ বাগান তৈরি করলেন?
উত্তর : আমার জমি নিচু হওয়ায় কৃষি অফিসের পরামর্শমতো সার্জন বা কান্দি বেড পদ্ধতিতে প্রথমে দুই পাশের মাটি উঁচু করে   বেড  তৈরি করি। গাছ লাগানোর এক মাস আগে ১ ফুট লম্বা, ১ ফুট চওড়া ও ১ ফুট গভীর করে ১৪ হাত দূরে দূরে গর্ত তৈরি করি। ওই গর্তের মাটির সাথে ১০ থেকে ১৫ কেজি গোবর সার ও আধা কেজি সরিষার খৈল মিশিয়ে রেখে দেই। তার ১৫ দিন পর ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম এমওপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম জিপসাম এবং অল্প পরিমাণে ডলো চুন ও বরিক এসিড মিশিয়ে রেখে দেই। এরপর গাছ লাগিয়ে খুঁটি দিয়ে বেঁধে দেই।

প্রশ্ন : বর্তমানে আপনার বাগানের জমির পরিমাণ কত?
উত্তর : আমি ৭৫ একর জমিতে মিশ্র ফল বাগান তৈরি করেছি এর মধ্যে ২০ একরে কুল চাষ করেছি। সার্জন পদ্ধতিতে ফল বাগান করায় বাগানের নালার জমিতে আমি কিছু চিংড়ি মাছও চাষ করে থাকি।

প্রশ্ন : আপনার বাগানে কি কি ফল গাছ রোপণ করেছেন?
উত্তর : আমাদের এলাকাটি লবণাক্ত হওয়ায় প্রথমে অন্যান্য দেশি ফলের চারা রোপণ করে ব্যর্থ হওয়ায় সফেদা ও কুল গাছ রোপণ করেছি।

প্রশ্ন : আপনার বাগানে কত প্রকারের কতটি গাছ রয়েছে?
উত্তর : আমার বাগানে আপেল কুল ও নারিকেলি কুলের ২ হাজার ৫০০টি গাছ  রয়েছে, এছাড়া ২শত ২৫০টি সফেদার গাছ রয়েছে।

প্রশ্ন : কুল গাছের কি কি পরিচর্যা করেন?
উত্তর : আমি কৃষি অফিসের পরামর্শমতো নিয়মিত ফল গাছের পরিচর্যা করে থাকি। বছরে ২ বার নির্দিষ্ট সময়ে জৈব ও রাসায়নিক সারের সমন্বয়ে পরিমাণমতো সার প্রয়োগ করি। কুল সংগ্রহের পর ডাল ছাঁটাই করি এবং পোকামাকড়  রোগবালাইয়ের জন্য ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

প্রশ্ন : আপনার ফল বাগানে অন্য কোন ফসল আবাদ করেন?
উত্তর : কুল সংগ্রহ করে ডাল ছাঁটায়ের পর কাটা অংশে বোর্দপেস্ট প্রয়োগ করি। পরে কুলের বেডে গ্রীষ্মকালীন সবজি হিসেবে করলা, লাউ, কুমড়া এসব  চাষ করি ও উৎপাািদত পণ্য বাজারজাত করি।

প্রশ্ন : আপনার উৎপাদিত কুল কোথায় বিক্রি করেন?
উত্তর : আমি মূলত ঢাকায় বিক্রি করে থাকি এ ছাড়া বাগেরহাটসহ খুলনা, পিরোজপুর ও বরিশালে বিক্রয় করে থাকি।

প্রশ্ন : কুল চাষ করে কেমন আয় হয়েছে?
উত্তর : গত বছর প্রায় ৪৫ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছি, এ বছর এখন পর্যন্ত ৩০ লাখ টাকার কুল বেচেছি এবং বাগানে যে কুল রয়েছে তা আরও প্রায় ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারব আশা করছি।
‘পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রতিশ্রুতি’ মহাজ্ঞানীদের বানীটি সত্যিকার অর্থে ফলেছে নারায়ণ চন্দ্র হালদার এর ক্ষেত্রে। তিনি পূন্যভূমি বাগেরহাটের কৃতী সন্তান। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অন্য চাষিদের উদ্দেশ্যে প্রকল্প পরিচালক বললেন, পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনার যে পদ্ধতি নারায়ণ বাবু দেখালেন তা আমাদের সকলকে অনুসরণ করতে হবে। উপপরিচালক বাগেরহাট বলেন, কৃষকদের সাহায্যের জন্য কৃষি বিভাগ রয়েছে। কৃষি কাজের যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের সেবা গ্রহণ করুন। পরিশ্রমী নারায়ণ বাবুর আর্দশ অনুসরণ করে অন্যান্য কৃষিজীবী ভাইবোনেরা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।     
 সাক্ষাৎকার গ্রহণ : ফেব্রুয়ারি-২০১৫।  
 

মো. রুহুল আমিন*

এম এম আবদুর রাজ্জাক**
*প্রকল্প পরিচালক, বাগেরহাট-পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন, **আরএফবিও, কৃতসা খুলনা