Wellcome to National Portal
  • 2025-03-12-16-25-15c95fd3ae0d740427f19c779208b30b
  • 2025-03-12-16-16-b41688fcb8ac3df55c13eb5c82b62083
  • 2025-01-05-17-19-232bbb16275acb0da535d705c9b6f6d8
  • 2024-12-15-10-13-de23faa6fead7deef93b5973ae193323
  • 2023-12-28-06-44-fad1b3dffb04c90c1f14863ef06978d5
  • ICT Ebook
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

অধিক উৎপাদনশীল সুবর্ণ রুই মাছ চাষ পদ্ধতি

2024-05-02-04-20-fd8aaf06500b7ef8395453841b85265e

অধিক উৎপাদনশীল সুবর্ণ রুই মাছ চাষ পদ্ধতি
মোঃ মাসুদ রানা
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ, এ দেশে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৭০০টি নদী রয়েছে। নদ নদী ছাড়াও বিল, প্লাবনভূমিসহ সব মিলিয়ে আমাদের রয়েছে প্রায় ৩৮,৬০,৪৬৬ হেক্টর মুক্ত জলাশয় এবং ৮,৪৩, ৭২৯ হেক্টর বদ্ধ জলাশয়। এসব জলাশয়ে রয়েছে প্রায় ২৬০ প্রজাতির ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের মাছ। আমরা মাছে ভাতে বাঙ্গালী, মাছ ছাড়া আমাদের অস্তিত্বের মিল পাওয়া যায় না তাই তো এ দেশে জন্মানো প্রতিটি মানুষের সাথেই মাছ সরাসরিভাবে জড়িত। বালাদেশ ও ভারতে বহুল পরিচিত মাছ গুলোর মধ্যে রুই মাছ অন্যতম যার স্থানীয় নাম রুহিত, রাউ, নলা, গরমা, উই ইত্যাদি। রুই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম খধনবড় ৎড়যরঃধ। বাজারে ভাল দাম থাকায় চাষী পর্যায়ে মাছটির চাহিদা ব্যাপক। রুই মাছ অনান্য কার্প জাতীয় মাছের তুলনায় কিছুটা কম বর্ধনশীল হওয়ায় উৎপাদন তুলনামূলক কম। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউট দীর্ঘদিন গবেষণা করে দ্রুত বর্ধনশীল  ৪র্থ প্রজন্মেও রুই (সুবর্ন রুই) মাছের জাত উদ্ভাবন করেছে যার সফলতা এসেছে স্বাধীনতার সুবর্ন জয়ন্তীতে তাই বিএফআরআই মাছটির নামকরণ করেছে সুবর্ন রুই। মাছটির গায়ের রং আকর্ষণীয় এবং পাখনার রং লালচে-গোলাপি যা যে কাউকে বিমোহিত করবে। মাছটির দৈহিক বৃদ্ধি সাধারণ রুই মাছ হতে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি ফলশ্রুতিতে চাষিরা অল্প সময়ে অধিক উৎপাদন পাবে যা তাদের কাক্সিক্ষত মুনাফা অর্জনে সহায়তা করবে। সুবর্ন রুই মাছটি অন্যান্য কার্প জাতীয় মাছের সাথে একত্রে চাষ করতে হয়, নিচে যেভাবে সুবর্ন রুই চাষ করলে সর্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়া যায় সে সর্ম্পকে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
পুকুর নির্বাচন : সুবর্ণ রুই ও অনান্য কার্পজাতীয় মাছ একত্রে চাষ করার জন্য এমন একটি পুকুর নির্বাচন করা প্রয়োজন যার আয়তন ১-৩ একরের মধ্যে হয়, যার গড় গভীরতা ৫-৮ ফিট ও পাড়ের ঢালুত্ব ১.৫ঃ১.০ হলে ভাল। যে পুকুরটি নির্বাচন করা হবে সেটি যেন বন্যামুক্ত হয় এবং পুকুরটিতে যেন কমপক্ষে দিনের দুই-তৃতীয়াংশ সময় রোদ পড়ে এবং পুকুরটিতে যাতায়াতের সুব্যবস্থা থাকে।
পুকুর প্রস্তুতি/মজুদ পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা :  কার্পজাতীয় মাছের চাষ করার জন্য শুরুতেই পুকুরটি শুকিয়ে নিতে পারলে ভালো হয়। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে পুকুরের সকল আগাছা দূর করতে হবে। যদি সম্ভব হয় পুকুরের সকল রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূর করার জন্য রোটেনন ব্যবহার করা যেতে পারে (২৫ গ্রাম/শতাংশ/৫ ফিট পানি)। পুকুরের পানির ঘোলাত্ব দূরীকরণ, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, পানির গুণগত মান  বজায় রাখা ও জীবাণু ধ্বংস করতে গড় গভীরতা ৫-৬ ফিট হলে শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন, ৫০০ গ্রাম লবণ ও ১০ গ্রাম পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট একত্রে গুলিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। চুন প্রয়োগের  ২-৩ দিন পর পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য শতাংশ প্রতি ৩৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৩৫০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের ২ দিন পর থেকে পুকুরে পানি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দেখতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হচ্ছে কিনা এ কাজটি করার জন্য সেকি ডিক্স ব্যবহার করা যেতে পারে সম্ভব না হলে হাতের তালুতে নিয়ে বা স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসে পুকুরের পানি নিয়ে দেখতে হবে যে পানিতে সুজি দানার মত কোন কিছু পরিলক্ষিত হয় কিনা, যদি হয় বুঝতে হবে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন হয়েছে  এবং এখন মাছ মজুদ করা যাবে।
মজুদ কালীন ব্যবস্থাপনা : সুবর্ন রুই একক চাষ ও মিশ্র চাষ দুটোই করা সম্ভব তবে জলাশয়ের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মিশ্্র চাষ করলে ভাল ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সুবর্ন রুই মাছের পোনার জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রদত্ত পোনা নিয়ে যারা নাসিং করেছে বা যারা বিএফআরআই হতে ব্রুড নিয়ে পোনা উৎপাদন করেছে তাদের নিকট থেকে পোনা সংগ্রহ করলে প্রজাতির বিশুদ্ধতা পাওয়া যাবে যা চাষির কাক্সিক্ষত উৎপাদন পেতে সহায়তা করবে। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে সকল পোনার গড় ওজন ২৫০ গ্রামের উর্ধ্বে হলে ভাল ফলাফল পাওয়া সম্ভব। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে সুবর্ন রুইয়ের সাথে কাতলা, মৃগেল, গ্রাস কার্প, সিলভার/বিগহেড কার্প, কালিবাউস একসাথে চাষ করা যায়। মিশ্র চাষের ক্ষেএে পুকুরের সর্বমোট যত পোনা মজুদ করা যাবে তার ৩৫-৪০ শতাংশ সুবর্ণ রুই ছাড়লে ভাল ফল পাওয়া যাবে। 
মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা : পোনা মজুদের পর থেকে চাষকালীন পুরো সময় নি¤েœাক্ত বিষয়গুলি যথাযথ অনুসরণ করতে হবে-
খাবার ব্যবস্থাপনা : রুইজাতীয় মাছের মিশ্্র চাষের ক্ষেত্রে ভাসমান ও ডুবন্ত উভয় প্রকার খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে তবে সর্বপ্রথম খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিতে হবে। রুইজাতীয় মাছ চাষে ২২-২৩% আমিষযুক্ত খাবার মজুদকৃত মোট মাছের দৈহিক ওজনের ৩-৪% হারে মজুদ পরবর্তী সময় থেকে প্রয়োগ করতে হবে। খামারি যদি ৭০% ভাসমান খাবার ও ৩০% ডুবন্ত খাবার খাওয়ান তাহলে ভাল ফল পাবেন। খেয়াল রাখতে হবে যে টার্গেট প্রজাতি সুবর্ণ রুই যেন পুকুরের মাঝের স্তরের খাবার খায়। যদি ডুবন্ত খাবার দেওয়া হয় তাহলে পুকুরের পানির ১ ফিট নিচে ট্রে স্থাপন করে তাতে ডুবন্ত খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে তাহলে একদিকে খাবার কম নষ্ট হবে অন্যদিকে মাছের সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করা যাবে। মাছের খাদ্য সাধারণত দিনের ২ সময়, সকাল ও বিকেল বেলা প্রয়োগ করতে হবে তবে আবহাওয়ার উপর খেয়াল রেখে খাবার প্রয়োগ করা উচিত। 
চুন ও সার প্রয়োগ : অনান্য কার্প জাতীয় মাছের মত সুবর্ন রুই মাছেও ক্ষত রোগের সম্ভাবনা আছে তাই পুকুরের পানির জীবাণু ধ্বংস ও পানির গুণগত মান অক্ষুণœ রাখার জন্য নিয়মিত (মাসে একবার চুন ৪৫০ গ্রাম, লবণ ৩০০ গ্রাম ও পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট ১০ গ্রাম/ শতাংশ/৫-৬ফিট পানি) চুন ও লবণ   প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পানির পি এইচ জেনে প্রয়োগ করতে হবে। যেহেতু সুবর্ন রুই মাছ অনান্য কার্প মাছের সাথে একত্রে চাষ করা হবে তাই প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রতি মাসে একবার শতাংশ প্রতি সরিষা খৈল ৩.৫ কেজি, ইউরিয়া ৩৫০ গ্রাম ও টিএসপি ৩৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে  পানির রং ও অনান্য প্যারামিটারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে যাতে অধিক পুষ্টির কারণে পানির রং পরিবর্তন বা ব্লুম তৈরি না হয়।
নিয়মিত নমুনায়ন : মাছ মজুদ করার পর থেকে ১৫ দিন পরপর অথবা মাসে অন্তত একবার জাল টেনে মাছের দৈহিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী খাবার সিডিউল তৈরি করতে হবে। মাছের নমুনায়ন না করলে মাছের খাদ্যের হিসাব করা সম্ভব নয় এবং মাছ কোন রোগে আক্রান্ত হলো কিনা তা জানা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে না। নিয়মিত জাল টানলে যেমন মাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা যায় তেমনি জাল টানার সময় মাছের চাঞ্চল্য বৃদ্ধি পায় যা মাছের দৈহিক বৃদ্ধিতে সহায়ক পাশাপাশি পুকুরে জাল টানলে মাটি ও পানির পুষ্টিমান মিলিত হয় ও মাছের শরীরে কোন পরজীবী লেগে থাকলে তা খুলে পরে।
ঔষধ প্রয়োগ : মাছের নমুনায়ন করার সময় কোন রোগ পরিলক্ষিত হলে সে অনুযায়ী ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে পাশাপাশি মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও দৈহিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৫ গ্রাম ভিটামিন সি ও ১ মিলি ভিটামিন বি- কমপ্লেক্স ব্যবহার করা যেতে পারে ১৫ দিন পর পর। মাছের লিভার ঠিক রাখার জন্য ও হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধির জন্য প্রতি কেজি খাবারের সাথে ২ গ্রাম গাট প্রোবায়োটিক, ৩ মিলি কালোজিরার তেল ও ২ মিলি রসুনের জুস ১৮-২০ দিন অন্তর অন্তর ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাছ আহরণ : কার্পজাতীয় মাছের সাথে সঠিক ঘনত্ব মেনে মজুদ করলে এবং মাছের পুষ্টি চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করতে পারলে সুবর্ন রুই এক বছর চাষ করলে ৩-৪ কেজি পর্যন্ত ওজন হতে পারে। কাতলা, কালিবাউস, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্পসহ অন্যান্য মাছের সাথে সুবর্ন রুই মাছের উৎপাদন যদি ৩০-৩৫ শতাংশ বেশি হয় তাহলে খামারির মোট উৎপাদন বাড়বে।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের সুবর্ন জয়ন্তীতে উদ্ভাবিত সুবর্ন রুই মাছ চাষ করলে আমাদের  দেশের মাছের মোট উৎপাদন বাড়বে যা শুধু চাষি বা খামারির অর্থনৈতিক উন্নতিতে সহায়তা করবে ন্ াবরং দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট ইকোনমিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ফিশিং অ্যান্ড পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ, ফিশারিজ, একোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, ঢাকা-১২০৭, মোবাইল : ০১৭৪৫৬২৬১৫৩, ই-মেইল : ranadof@gmail.com