Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

দেহের-রোগ-প্রতিরোধ-ক্ষমতা-বৃদ্ধিতে-ফলমূলের-পুষ্টি-গুণাগুণ

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ফলমূলের পুষ্টি গুণাগুণ
তাসনীমা মাহজাবীন
আমাদের দেশে সারাবছরই কোন না কোন ফল পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এসব ফল দেহকে সুস্থ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলমূল ভিটামিন, খনিজ উপাদান  আঁশ  এবং পানির  উৎকৃষ্ট উৎস। আমাদের  অনেকেরই  ধারণা পুষ্টিকর ফল বলতে দামি বা বিদেশী ফল খেতে হবে কিন্তু তা একেবারেই ভুল। আমাদের দেশে আম, জাম, কাঁঠাল, তাল, লিচু, তরমুজ, সফেদা, বাঙ্গি, জামরুল, পেয়ারা, আমড়া, ডেউয়া ইত্যাদি ফল দেখতে পাওয়া যায়। এসব ফলে রয়েছে নানাবিধ পুষ্টিগুণ। গবেষণায় দেখা যায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ফলমূলে বিদ্যমান বিভিন্ন খনিজ, ভিটামিন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
হলুদ, কমলা ও লাল রঙের ফল যেমন আম, জাম, ডেউয়া  কাঁঠাল, তাল, লিচু, তরমুজ ইত্যাদিতে  বিটা ক্যরোটিন, ভিটামন ই  ফোলেট, বিভিন্ন রকমের  এন্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ক্যারোটিনয়েড, লাইকোপেন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বিটাক্যারোটিন বা ভিটামিন এ  আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফলে বিদ্যমান  বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি রক্তনালীতে চর্বি জমা হতে বাধা দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। তরমুজে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা হার্টের স্বাস্থ্যকে ভাল রাখে এবং হৃদস্পন্দনকে স্থির রাখতে সাহায্য করে। পেয়ারা এবং আমলকী  ভিটামিন সি এর উল্লেখযোগ্য উৎস। আয়রন জাতীয় খাদ্য গ্রহণের সময় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল গ্রহণ করলে দেহে আয়রনের পরিশোষণ বৃদ্ধি পায়। 
১০০ গ্রাম পেয়ারাতে ২২৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, ১০০ গ্রাম আমলকীতে থাকে ৪৩৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। একজন মানুষের প্রতিদিন ভিটামিন সি’ প্রয়োজন প্রায় ৭৫ মিলিগ্রাম। একটি পেয়ারা বা ২/৩টি আমলকী একদিনের ভিটামিন সি চাহিদা পূরণে যথেষ্ট।  ফলমূলের আঁশ শরীরের বর্জ্য, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এবং কিছু ক্যান্সার উৎপন্নকারী উপাদানকেও অপসারণ করে। প্রতি ১০০ গ্রাম দেশীয় ফলের মধ্যে কালোজাম, পেয়ারা, বেল, আতাফল ইত্যাদিতে ১.৫ থেকে ৫ গ্রাম পর্যন্ত খাদ্য আঁশ পাওয়া যায়। কলা এবং ডাবে  প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে,  যা শরীরের কোষের ভেতরের পানি ও লবণের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে পাশাপাশি হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। পটাশিয়াম থাকার কারণে এই দুটি ফল গর্ভবতী  মায়েদের জন্য পুষ্টিকর ফল হিসাবে বিবেচিত। এ ছাড়াও বিভিন্ন ফলের পুষ্টি উপাদান সারণি দ্রষ্টব্য।
বিভিন্ন ফল যেমন-আম, জাম, তাল, লিচু, তরমুজ, সফেদায়  পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন- ভিটামিন বি৬, ফলিক এসিড বা বি৯, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন ইত্যাদি পাওয়া যায়  যা শরীরের বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে, শিশুদের কোষ বৃদ্ধি, বুদ্ধির বিকাশ ইত্যাদিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া শরীরের প্রতিটি কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পানির প্রয়োজন হয়।  প্রতিদিন বিভিন্ন বিপাকক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক  পানি হারায়।  ফলে  ৮০ শতাংশের বেশি পানি থাকায় প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ফল খেলে পানির প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে পূরণ হয়। 
শিশু এবং কিশোরীদের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে এবং মেধাবিকাশে প্রত্যেককে প্রতি বেলা খাবারের সাথে ফল খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে অন্তত দিনে তিন থেকে পাঁচ প্রকার রঙিন শাকসবজির মিশ্রণে প্রস্তুত খাবার খাওয়ালে তার খাদ্য বৈচিত্র্য যথার্থ হবে। জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা-২০২০ অনুযায়ী একজন মানুষের প্রতিদিন ৩০০ গ্রাম শাকসবজি ও ১০০ গ্রাম ফল খেতে হবে। এই ফলের মধ্যে একটি টক এবং একটি মিষ্টি উৎস থেকে আসলে ভালো হয়। ফল সাধারণত অন্যান্য খাবার খাওয়ার পরপর খাওয়া ভালো এতে ফলে বিদ্যমান কো-এনজাইম, ভিটানি ইত্যাদি খাবারের পুষ্টি উপাদান এর শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। আমাদের অনেকের ভুল ধারণা আছে যে ফলমূলে ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়, যেটা সম্পূর্ণ ভুল। ফরমালিন ফলে থাকা উদ্ভিজ্জ আমিষের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে না তাই ফলমূল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ফরমালিন কোন কাজ করে না। তাছাড়া ফলে প্রাকৃতিকভাবেই কিছু ফরমালিন থাকে যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মাত্রার অনেক নিচে তাই আমরা নিশ্চিন্তে ফল খেতে পারি। ফল বাজার থেকে কেনার পর বাড়িতে এনে প্রথমেই খুব ভালো করে প্রবাহমান পানিতে (ৎঁহহরহম ধিঃবৎ) ধুয়ে নিতে হবে। এতে ফলের  খোসার  সাথে  লেগে থাকা ময়লা বা অন্য  কীটনাশক অনেকাংশে দূর হয়ে যায়।বাড়ির আঙিনা, ছাদ এমনকি বারান্দার টবেও আমরা কিছু ফলের গাছ লাগাতে পারি এবং সব বয়সের মানুষকে দেশীয় মৌসুমি  ফল খেতে উৎসাহিত করতে পারি এতে আমাদের শরীর ও মন দ’টোই ভালো থাকবে। 

লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা , বাংলাদেশ  ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)