Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

লেবুজাতীয় বা সাইট্রাস ফল ঝরা সমস্যার সমাধান

লেবুজাতীয়  বা সাইট্রাস ফল ঝরা সমস্যার সমাধান

ড.মো.সদরুল আমিন
লেবু-কমলা ফল ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ। ঈরঃৎঁং ংঢ়.  রোটেসি (জঁঃধপবধব) পরিবারভুক্ত। রোটেসি পরিবারে প্রায় ১৪টি  প্রজাতির সাইট্রাস ফল রয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ু এবং আবহাওয়া জাত ভেদে বছরব্যাপী লেবু জাতীয় ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। লেবু, কাগজী, জারা লেবু, এলাচি লেবু আদা লেবু, সাতকরা, তৈকর, বাতাবি লেবু  রপ্তানি ফসলের মধ্যে মোট রপ্তানিকৃত উদ্যান ফসলের  প্রায় ৩৫%। ২০২১-২২ বছরে প্রায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ৪ লক্ষ মেট্রিক টন লেবুজাতীয় ফল উৎপন্ন হয়
ফল ঝরা লেবুজাতীয় ফল উৎপাদনে বড় সমস্যা। এ সমস্যা গাছের বয়স, জাত ও বৃদ্ধির উপর নির্ভরশীল। লেবুজাতীয় গাছে ফল ধারণ থেকে শুরু করে পরিপক্বতার পূর্ব পর্যন্ত কিছু ফল ঝরে যায়। গ্রীষ্মের শুরুতে উচ্চতাপমাত্রার দরুণ কিছু ফল ঝরে পড়ে। গাছ থেকে সংগ্রহের আগে ফল ঝরে গেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাইট্রাস ফুল, ফল উৎপাদন ও ঝরা সমস্যার সমাধানে অন্তত ৪টি বিষয়ের বিজ্ঞানসম্মত কারিগরি কাজ সম্পাদন করতে হবে। যেমন- (১) মাটি ও জলবায়ু অনুসারে ফলের জাত নির্বাচন (২) সার প্রয়োগ ও ফসলের পুষ্টি ও বালাই নিয়ন্ত্রণ অণুপুষ্টি ও শারীরবৃত্ত্বীয় রোগের সমন্বিত সমাধান ও (৪) সাইট্রাস ফলের বিশেষ পরিচর্যা সম্পাদন।
মাটি ও জলবায়ু অনুসারে ফলের জাত নির্বাচন
মাটি ও জলবায়ু : একটু উচু সুনিষ্কাশিত দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভাল। সামান্য ঠা-া আবহাওয়ার ফসল। অনুকূল তাপমাত্রা ২০-৩০ সে:। বাতাসের তাপ ৩৫ সে পর্যন্ত সহ্য করতে পারে। আর্দ্র জলবায়ুতে বালাই উপদ্রব বেশি হয়। সাইট্রাস চাষের জন্য বার্ষিক ৬০০ মিমি. বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। এ ফল চাষের আদর্শ পিএইচ মাত্রা ৫.৫ - ৬.৫ ও লবণাক্ততা সংবেদনশীল। মাটির গভীরতা ১.৫ মিটার থাকা উত্তম।
সাইট্রাস ফল অঞ্চলভিত্তিক প্রায় ১৪ প্রজাতির ও শতাধিক জাত রয়েছে। তা থেকে উপযুক্ত বিশুদ্ধ জাতটি বেছে নিতে হবে। যেমন : আদা জামির (ঈরঃৎঁং রহফরপধ/ ধংংধসবহংরং), সাইট্রন (ঈরঃৎঁং সবফরপধ), গ্রেপ ফ্রুট (ঈরঃৎঁং ঢ়ধৎধফরংব), কিনো (ঈরঃৎঁং হড়নরষরং/ফবষরষরড়ংধ), লেবু (ঈরঃৎঁং ষরসড়হ)।
বর্তমানে দেশে বারি-২, বারি-৩, বিনা-২, চায়না লেবু-১, চায়না লেবু-২, বারি মাল্টা-১, বারি মাল্টা-২, কমলা (বারি ও ভারতীয়) জাতের বড় বড় বাগানে নানা সমস্যা নিয়ে বাণিজ্যিক চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে।
ফল ঝরার ম্যাক্রোপুষ্টি ও বালাই সংক্রান্ত কারণের মধ্য উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : খাদ্যোপাদানের অভাব বা পুষ্টি নিশ্চিতকরণের জন্য বর্ণিত সুষম হারে সার দিতে হবে। গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য হরমোন ব্যালেন্স মিরাকুলান, এনপিকে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, লিবরেল জিংক ও সলুবর বোরন সার দিতে হবে। ক্যাংকার, স্ক্যাব, গ্রিনিং, ডাইব্যাক ইত্যাদি রোগের সমন্বিত নিরাময় করতে হবে। সবুজ গান্ধি, মাছি ও পাতা ও ফলের রস শোষক পোকার আক্রমণে অধিকাংশ ফল ঝরে থাকে। এ জন্য জৈব আইপিএমসহ পাইটাফ, টাফগর, ডারসবান, সানমেক্টিনসহ অন্যান্য বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রা, সময়, পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রয়োগ করতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যা  : খরা মৌসুমে ডাবল রিং পদ্ধতিতে ৪-৭ দিন অন্তর সেচ দিতে হবে। বয়স্ক গাছ যাতে বাতাসে হেলে না যায় সে জন্য খুঁটি দিতে হবে। ক্যাংকার ঢধহঃযড়সড়হঁং ধীড়হড়ঢ়ড়ফরং  রোগের কারণে গাছের পাতা, ফল ও কচি কা-ে নেক্রসিস হয়। ক্যাংকারী স্ক্যাব (ঊষংরহড়ব ভধপিবঃঃর) রোগের কারণে বিন্দু বিন্দু অসমান উঁচু দাগ পড়ে। পাতা ও ফলের ত্বকে  লালচে দাগ হয়ে থাকে। এ রোগ দমনে বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে; লিফ মাইনার  দমন করতে হবে; ব্লিটক্স প্রয়োগ করতে হবে। রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে আক্রান্ত স্থান হতে যাতে বেশি স্থানে না ছড়াতে পারে সেজন্য কেটে ফেলা উচিত।
সাইট্রাস গাছে ক্লেরোসিস লক্ষণ দেখা দেয়। মধ্যপাতায় ক্লোরোসিস হয়। প্রথমে পাতার শিরা সবুজ থাকে কিন্তু অন্যান্য স্থান হলদে হয়ে যায়। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের একত্র অপুষ্টি লক্ষণ পাতা নৌকার মতো, কুঁকড়ানো, কুঁচকানো ও বিবর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু নাইট্রোজেনের অভাব হলে নিচের পাতা হলদে হয়। সালফারের ঘাটতি হলে উপরের পাতা  হলদে হয়। ক্লোরোসিয় হলে হেক্টরে ৫০০ কেজি ডলোচুন জমি তৈরির সময় দিতে হবে; জমিতে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট   বিঘা প্রতি ১-২ কেজি  দিতে  হবে।
গাছে দস্তার ঘাটতি হলে অসমতা  লক্ষণ দেখা দেয়। গাছের নতুন পাতার গোড়ার দিকে এবং মধ্যশির কিনারা দিয়ে সাদাটে হয়; পাতা প্রথমে সাদাটে সবুজ ময়লা রং ধারণ করে। ফসফরাসের অভাব হলে গাছে চারা বয়সে নীলাভ-সবুজ লক্ষণ দেখা দেয়।   
এ লক্ষণ দেখা দিলে জিঙ্ক সালফেট প্রতি হেক্টরে ৭-৮ কেজি ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে; চারা অবস্থায় শতকরা ০.৫ ভাগ জিঙ্ক সালফেট দ্রবণ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সাইট্রাস গাছের বিশেষ পরিচর্যা
পুরাতন বাগানে খাদ্যোপাদানের অভাব, গামোসিস বা গোড়া পচা রোগের আক্রমণের পরও ৫০ ভাগের অধিক ডালপালা সতেজ আছে এবং কা-ের অন্তত ৫০ ভাগ বাকল ভালো আছে সেই সব গাছকে পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদনশীল করা যায়। পরিচর্যাগুলো হলো :
চারা রোপণের ২-৩ বছর ফল উৎপাদন নিরুৎসাহিত করতে হবে। মৌসুমী ফুল আসার সময় বা ঠিক আগে সেচ ও ইউরিয়া ব্যবহার করা যাবে না বা বালাইনাশক দেওয়া যাবে না। গুটি বাঁধার পর হালকা সেচ, ইউরিয়া ও বালাইনাশক দেয়া যাবে। ফল গুটি হওয়ার পর সলুবর বোরন দিতে হবে। নিরাপদ ফলের জন্য আইপিএম জৈব পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। মরা শাখা প্রশাখা ও তাতে জন্মানো পরগাছা অপসারণ করতে হবে। খরার সময় গাছের গোড়া  কচুরিপানা দিয়ে মালচ দিতে হবে। ফল সংগ্রহের পর মরা শুকনা ডাল  ছাঁটাই করতে হবে।

লেখক : প্রফেসর (অব.), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, দিনাজপুর। মোবাইল : ০১৯৮৮৮০২২৫৩, ই-মেইল :sadrulamin47@gmail.com