Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ইঁদুরের প্রজনন মৌসুম

ইঁদুরের প্রজনন মৌসুম
ড. সন্তোষ কুমার সরকার
যেকোনো প্রযুক্তি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হলে দমন প্রযুক্তি ও বালাইয়ের জীবনচক্র ও পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে  ১৩ প্রজাতির ক্ষতিকারক ইঁদুরের প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে । এদের মধ্যে চারটি প্রজাতি ফসল ও সম্পদের বেশি ক্ষতিকারক। এরা হচ্ছে: (ক) মাঠের বড় কালো ইঁদুর (খ) মাঠের কালো ইঁদুর  (গ) গেছু ইঁদুর ঘ) সলই বা বাতি ইঁদুর। এদের মধ্যে  মাঠের বড় কালো  ইঁদুরের সামদ্রিক অঞ্চলে ও নিচু ভূমি  হাওরবাওর এলাকায় এদের উপস্থিতি বেশি রয়েছে। মাঠের কালো ইঁদুর (ইষধপশ ঋরবষফ জধঃ) বাংলাদেশে কৃষি ফসল, গুদাম, গ্রাম ও শহর এলাকাসহ সর্বত্র একটি প্রধান ক্ষতিকারক বালাই। গেছো ইঁদুর ঘরের সিলিং এবং নারিকেলসহ অন্যান্য ফলের গাছে বাস করে। খাদ্যগুদামে ও সিলিংয়ে এদের বেশি দেখা যায়। এরা গর্তে থাকে না। গ্রামের আবাস ভূমির অব্যবহিত দূরে গাছের ঝাড়ে এবং উঁচু ভূমিতে পাওয়া যায়। এরা এক গাছ হতে অন্য গাছে সহজেই যেতে পারে। একত্রে অনেকগুলো ইঁদুর বাস করে। সলই ইঁদুর আকারে ছোট হলেও খাদ্যশস্যের ঘরের জিনিসপত্র এবং দানাদার শস্যের প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে। ইঁদুর দমনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ফসলের ক্ষতি কম রাখা। ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে গেলে ফসলের ও সম্পদের ক্ষতি বেশি হবে। মাঠ ফসলে সঠিকভাবে দমন প্রযুক্তি প্রয়োগের জন্য ইঁদুরের প্রজননের সময় জানা প্রয়োজন। প্রজনন শুরু হওয়ার আগে ইঁদুর দমন করা হলে ইঁদুরের সংখ্যা কম রাখা সম্ভব হবে। ইঁদুর দমন ব্যবস্থা ভাল কাজ করবে।
প্রজনন মৌসুম আরম্ভ ও বিরতি
প্রথম সফলভাবে যৌন মিলনের পর হতে প্রজননবিহীন পর্যন্ত সময়কালকে একটি পপুলেশনের প্রজনন মৌসুম বলে। একটি প্রজাতির গর্ভধারণকাল হলো পূর্ববর্তী ইঁদুরের আনুমানিক গর্ভধারণ তারিখ হতে ট্রাইমেস্টারের উন্নত হওয়া পর্যন্ত যাহা অর্থাৎ গর্ববতী ইঁদুরের ট্রাইমেস্টার উন্নত হওয়ার পেছন দিকের গর্ভধারণ তারিখ পর্যন্ত গণনা দ্বারা নির্ণয় করা হয়। প্রজনন মৌসুম শেষ হয় যখন সর্বশেষ লিটারের বাচ্চা স্তন্যপান মাকে ছেড়ে যায়। অসংখ্য গর্ত খনন ও বাচ্চাদের বর্ধনস্তরের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ দ্বারা ইহা নির্ণয় করা যাবে।
আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা তথ্য থেকে জানা গেছে যে, ইঁদুরের প্রজনন নির্ভর করে শস্যের নিবিড়তার উপর। যেখানে বছরে একটি ধান ফসল চাষ হয় সেখানে ইঁদুরের একটি প্রজনন হয়। আবার যেখানে বছরে তিনটি ফসল হয় সেখানে ইঁদুর তিনবার প্রজনন করে থাকে। বাংলাদেশে তিনবার ধান ফসলের চাষ হয়ে থাকে, তাই ইঁদুরের তিনবার প্রজনন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে এবিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন।
 দশমিনা বীজ বর্ধন খামারের মাঠের বড় কালো ইঁদুরের একটি প্রজনন মৌসুম পাওয়া গেছে অক্টোবর হতে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। মাঠের কালো ইঁদুর গ্রামের পপুলেশনের প্রজনন তৎপরতা মৌসুমভিত্তিক এবং শস্যের বিশেষ করে আমন ধানের পরিপক্বতার সময়ে সর্বোচ্চ তৎপড়তা সংঘটিত হয়। এজন্য থোর হওয়ার পূর্বে ইঁদুর দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। খাদ্যশস্যের গুদামে সারা বছর ধরে প্রজনন ঘটে থাকে কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে সর্বোচ্চ পরিমাণে দেখা যায়। বাংলাদেশ ও ভারতে এ চার প্রজাতি ইঁদুরের হ্রাস-বৃদ্ধি শস্যচক্রের সাথে জড়িত, কারণ দুইটি ধান শস্যের ক্ষেত্রে ইঁদুরের দুইবার সর্বোচ্চ প্রদর্শিত করে থাকে। বাংলাদেশে গম ফসলে একবার এবং দ্বিতীয় আমন ফসলে সর্বোচ্চ পর্যায় দেখা যায়। এজন্য বাংলাদেশে দুই বার ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করা হতো। বর্তমানে শুধু আমন মৌসুমে জনগণের ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বছরে একবার ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করা হয়। আমাদের দেশে সারা বছরই মাঠে ফসল থাকে,তাই সারা বছরই ইঁদুর বংশ বিস্তার করার সুযোগ পাচ্ছে। পরিববর্তীতে জলবায়ুর কারণে রয়েছে। খরা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, মাঠে ইঁদুর বেশি দিন বংশবিস্তারের সুযোগ রয়েছে। তাই আমন ফসলে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতিবৃষ্টি, বন্যা বা বর্ষার পানি বেশি হলে ইঁদুরের সংখ্যা কমে যায়।
কার্যকর বালাই দমন প্রযুক্তি প্রতিদিন বৈজ্ঞানিকদের পক্ষে উদ্ভাবন করা সম্ভব হয় না। দীর্ঘদিন ল্যাবরেটরি ও ফসলের মাঠে এবং বসতবাড়িতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুপারিশ প্রদান করে থাকেন। কার্যকর দমন পদ্ধতি ও সঠিক সময়, সঠিক স্থানে, সঠিকভাবে, সঠিক পরিমাণে প্রয়োগ না করলে কার্যকর হয় না। একই দমন পদ্ধতি সব স্থানে ও সকল বালাইয়ের ক্ষেত্রে সমানভাবে কার্যকর হয় না। ইঁদুরজাতীয় প্রাণির ক্ষেত্রে এ সমস্যা প্রকট। এজন্য কৃষকদের বলতে শোনা যায় ইঁদুর দমন বিষ খেয়ে ইঁদুর মরে না, খায় না এবং ফাঁদে পড়ে না।
রোডেন্ট নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমগুলো অধিক শ্রমনির্ভর, ব্যয়বহুল এবং সময়ের প্রয়োজন হয়। জড়িত ইঁদুরের প্রজাতি শনাক্ত করা প্রয়োজন। মাঠের কোন কোন এলাকায় ও ফসলে বেশি আক্রমণ হয়েছে তা নিরূপণ করতে হবে। মাঠশস্য ও গুদামজাত শস্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে দমন প্রযুক্তি ঠিক করা প্রয়োজন। কারণ সঠিক দমন প্রযুক্তি নির্বাচন ও সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করা হলে দমন খরচ কম হয় এবং ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। একা ইঁদুর না মেরে সকলে মিলে একই সময়ে বেশি জায়গায় ইঁঁদুর দমন প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে হবে।

লেখক : মুখ্য প্রশিক্ষক (অব.), ডিএই, মোবাই: ০১৭১৪২২২১৫৭, ই-মেইল :santoshsarker10@gmail.com