Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মৃত্তিকার স্বাস্থ্য রক্ষায় ভার্মিকম্পোস্ট প্রযুক্তি

মৃত্তিকার স্বাস্থ্য রক্ষায় ভার্মিকম্পোস্ট প্রযুক্তি
ড. মো: আজিজুল হক
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে একই জমিতে বার বার উচ্চফলনশীল শস্যের চাষাবাদ করা হচ্ছে। ফলে মৃত্তিকা থেকে অধিক পুষ্টি উপাদান আহরণের কারণে জৈব পদার্থসহ উদ্ভিদ খাদ্যোপাদানের ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। সুষম ও পরিমিত রাসায়নিক সার ব্যবহার না করার কারণে এই সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে। দিন দিন অধিক সংখ্যক পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি উদঘাটিত হচ্ছে। সমস্যা হতে পরিত্রান পেতে হলে জমিতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি পরিমাণমত জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।
ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার একটি জৈবসার যা কেঁচো ও  প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান অনুজীবের জৈবনিকক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে গোবর ও অন্যান্য পচনশীল জৈব পদার্থ পঁচিয়ে তৈরি করা হয়। কেঁচো পচনশীল জৈব পদার্থ খেয়ে যে বিষ্ঠা ত্যাগ করে তাকেই ভার্মিকম্পোষ্ট বা কেঁচো সার বলা হয়।
ফসল উৎপাদন ও জমির উর্বরতা বজায় রাখতে ভার্মিকম্পোস্টের গুরুত্ব অনেক কিন্তু পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে দেশে উদ্যোক্তা ও কৃষকগণ যথেষ্ট পরিমাণ ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করতে পারছে না। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা), মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ তিন প্রজাতির কেঁচো (ঊরংবহরধ ভবঃরফধ, চবৎরড়হুী বীপধাধঃঁং এবং ঊঁফৎরষঁং বঁমরহধব) ব্যবহার করে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির বিভিন্ন কলাকৌশল উদ্ভাবন করেছে এবং তা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি, কৃষক প্রশিক্ষণ প্রভৃতির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
ভার্মিকম্পোস্টের গুরুত্ব
ভার্মিকম্পোস্ট ফসল উৎপাদন ও জমির উর্বরতা রক্ষায় এবং আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মৃত্তিকার ভৌত গুণাবলিতে প্রভাব : ১) পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ২) মাটির গঠন উন্নত করে, ৩) বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করে, ৪) মৃত্তিকার রং পরিবর্তন করে, ৫) মাটি ঝুরঝুরে করে, ৬) ইনফিল্ট্রেশন বা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি করে, ৭) মাটির ক্ষয়রোধ করে।
মৃত্তিকার রাসায়নিক গুণাবলিতে প্রভাব : ১) মৃত্তিকার পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে, ২) মৃত্তিকার লবণাক্ততা হ্রাসে সহায়তা করে, ৩) উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপদানসমূহ মাটিতে সরবরাহ করে, ৪) মাটিতে জৈব পদার্থ ও হিউমাস সমৃদ্ধ করে। উচ্চ মাত্রায় হিউমিক এসিডের ধারক ও বাহক যা সমস্ত উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদানের আধার, ৫) মাটির বিষাক্ততা দূর করে এবং ৬) ভার্মিকম্পোস্টিং গ্রিন হাউজ গ্যাস নিসরণ কমায়।
মাটির জৈবিক গুণাবলিতে প্রভাব : ১) ভার্মিকম্পোস্টে সহজাতভাবে বিভিন্ন ধরণের উপকারী অনুজীব বিদ্যমান থাকে ফলে মৃত্তিকায় অনুজৈবিক বৈশিষ্টকে উন্নত করে, ২) মৃত্তিকাস্থ বিভিন্ন রোগ জীবাণুর বৃদ্ধিতে বাধা দিয়ে গাছকে রক্ষা করে। ৩) বহু রকম গ্রোথ হরমোন ও এনজাইমের ধারকবাহক যা মাটির খাদ্যোপাদান সহজলভ্যতায় এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং ৪) ভার্মিওয়াশ (কেঁচো ধুয়া নির্ঝাস) মৃত্তিকায় অনেক রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে এবং তরল জৈবসার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পরিবেশকে উন্নতকরণ ও আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা : ১) অনেক ফেলনা আবর্জনা-খড়-কুটা, পয়:নিষ্কাশিত দ্রব্য ব্যবহৃত হয় বিধায় পরিবেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ২) কৃষক খামারজাত গোবর ও অন্যান্য জৈব পদার্থ ব্যবহার করে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করতে পারে এবং রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করে উৎপাদন খরচ কমানোর মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করতে পারে, ৩) ব্যবসায়ীগণ ভার্মিকম্পোস্ট কারখানা তৈরি করে বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থ আয় করতে পারে। ৪) কর্মস্থান ও শ্রম চাহিদার সুযোগ তৈরি করে।
ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির পদ্ধতিসমূহ
সারা বিশ্বে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করা হয়। খরচ, জিনিসপত্রের সহজলভ্যতা, উদ্দেশ্য, উৎপাদনের পরিমাণ, বিরাজমান পরিবেশ প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে ভার্মিকম্পোস্টিং পদ্ধতি নির্বাচন করা হয়। ছোট আকারের একটি ভার্মিকম্পোস্ট খামার তৈরিতে আনুমানিক খরচ টেবিল-১ দ্রষ্টব্য।
ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির কার্যক্রমকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-
ঘর বা শেড নির্মাণ :  ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদনের মাত্রার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন আকারের ঘর বা শেড সহজলভ্য জিনিসপত্র যেমন-টিন, বাঁশ, কাঠ, কুঁড়ে ঘর পভৃতির সমন্বয়ে নির্মাণ করা যায় যাতে ভার্মিকম্পোস্ট বেড বা হাউজ ছায়াযুক্ত হয় এবং রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়।
ভার্মিকম্পোস্টিং বেড বা হাউজ তৈরি : নিম্নে ভার্মিকম্পোস্টিং হাউজ তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো।
 সিমেন্টের রিং : রিং-এর উচ্চতা ১ হতে ২ ফুট এবং ব্যাস ২.৫ হতে ৩ ফুট হতে পারে। সিমেন্ট রিং পাকা জায়গায় বসানো যেতে পারে অথবা নিচে ঢালাই স্লাব বা মোটা ফ্লোর মেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
 সিমেন্টের চারি :  উচ্চতা ১.৫ ফুট এবং ব্যাস বা চওড়া ২.৫ ফুট হতে পারে। তবে স্থান ভেদে সামান্য কম-বেশি হতে পারে। চারির নিচে মাটি থেকে সামান্য উঁচুতে দুই পাশে হাতের আঙুলের সমান ব্যাসার্ধের দুইটি ছিদ্র থাকা দরকার যাতে জমাকৃত রস বা পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা বজায় থাকে।
 ইটের স্থায়ী ট্যাংক/বক্স/আয়তকার চৌবাচ্চা : স্থায়ীভাবে ইটের ৫ ইঞ্চি গাথুনী দিয়ে ট্যাংক/বক্স/আয়তকার চৌবাচ্চায় সব ধরণের ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করা যায়। এতে ২.৫ ফুট উচ্চতা ও ২.৫ ফুট প্রস্থ এবং প্রয়োজন মাফিক লম্বা যেতে পারে। তবে ৪-৫ ফুট দীর্ঘ হলে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবস্থাপনা সুবিধা হয়। তা ছাড়াও অনুরূপ দৈর্ঘের অনেকগুলো চ্যাম্বার করা হলে বিভিন্ন রকম জৈব পদার্থ বা তাদের মিশ্রণ ব্যবহার করে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করা  যেতে পারে। অধান্তঃচ্যাম্বারে ছিদ্র রেখে তৈরি করলে পরিপক্ব ভার্মিকম্পোস্ট থেকে কেঁচো পৃথক করার সুবিধা পাওয়া যায় কারণ পরিপক্ব কম্পোস্টে খাবারের অভাবে কেঁচো আপনাআপনি অপেক্ষাকৃত নতুন চ্যাম্বারের জৈব পদার্থে গমন করবে। ইট সামান্য ফাঁক-ফাঁক করে গাথুনী দিলে বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায় যা ভার্মিকম্পোস্ট তৈরিতে সুবিধা হয়। বায়ু চলাচল ও অন্ধকার অবস্থায় কেঁচোর কার্যক্রম বৃদ্বি পায়। তাই ট্যাংক/বক্স/আয়তকার চৌবাচ্চা ছিদ্রযুক্ত চটের ছালা দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে।
     প¬াস্টিকের ট্যাংক/ ড্রাম/ট্রে :  উচ্চতায় ২-২.৫ ফুট এবং ব্যাসে ২ ফুট  আকারের প্লাস্টিকের ট্যাংক/ ড্রাম/ট্রে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা অবশ্যই ছায়াযুক্ত শীতল স্থানে স্থাপন করতে হবে। তাপে প্লাস্টিকের ট্যাংক গরম হয় বিধায় কখনও রোদে বা রোদের তাপ লাগে এমন জায়গায় রাখা যাবে না।  এ পদ্ধতির একটি সুবিধা হলো হালকা হওয়ায় সহজেই স্থানান্তর করা যায়।
     খাবার হিসেবে জৈব পদার্থ বা তাদের মিশ্রণ দিয়ে হাউজ ভরাট করা ও কেঁচো প্রয়োগ : অসংখ্য জৈব পদার্থ ও তাদের মিশ্রণ হাউজে ভরাট করে ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করা যায়। নি¤েœ বিভিন্ন জৈব পদার্থ দিয়ে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলো।
গোবরের তৈরি ভার্মিকম্পোস্ট : শুধুমাত্র গোবরের ভার্মিকম্পোষ্ট নিম্মরূপভাবে তৈরি করা যায়-
     উপরের যে কোন একটি হাউজ যেমন-সিমেন্ট রিং, চারি প্রভৃতির একটি নির্বাচন করতে হবে।
     ১৫-২০ দিনের গ্যাস মুক্ত গোবর দ্বারা ৮-১০ ইঞ্চি ভরাট করতে হবে।
     তারপর সংগ্রহকৃত কেঁচো উক্ত গোবরে ছেড়ে দিতে হবে। প্রতি ৪ বর্গফুটে ২০০-২৫০ টি কেঁচো তবে বেশি হলে ক্ষতি নাই।
 অন্ধকার প্রদান ও বায়ু চলাচলের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত ঢাকনা দ্বারা ঢাকতে হবে।
 সময়মতো উপরে বর্নিত নিয়মে পরিচর্যা করতে হবে।
৪৫-৬০ দিনের মধ্যে ভার্মিকম্পোস্ট সংগ্রহ শুরু করা যেতে পারে।
গোবর ও বিভিন্ন জৈব পর্দাথের মিশ্রণ ব্যবহার করে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি টেবিল-২ দ্রষ্টব্য।
গোবরের সাথে বিভিন্ন জৈব পর্দাথ বা তাদের মিশ্রণ মিশিয়ে ভার্মিকম্পোষ্ট তৈরি করা যায়- যেমন-(ক) গোবর (১/২ ভাগ) + কচুরিপানা (১/৪ ভাগ) + ধানের খড় (১/৪ ভাগ) বা সরিষার খড় বা রান্না ঘরের বর্জ্য (১/৪ভাগ) প্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
টেবিল ২ : গোবর ও অন্যান্য জৈব পদার্থ স্থাপনের ধাপসমূহ     
    উপরের টেবিলে প্রদর্শিত নিয়মে প্রথমে ২ ইঞ্চি গোবরের স্তর তারপর অন্য জৈব পদার্থের স্তর সমূহ পর্যায়ক্রমে গোবরের স্তরের সাথে স্থাপন করে মোট ৩ ফুট পর্যন্ত উঁচু করে অথবা হাউজের উচ্চতা অনুযায়ী ভরাট করতে হবে। তবে সবার উপরের স্তর অবশ্যই গোবর দিয়ে শেষ করতে হবে।
      ২১ দিন থেকে ২৮দিন পর্যন্ত মাদা ঢেকে রাখতে হবে এবং মাঝে মধ্যে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। এ সময় প্রচুর তাপ তৈরি হয়। এ জন্য এ ধাপে কেঁচো ছাড়া যাবে না।
      অতপর কম্পোষ্ট গাদা ওলট-পালট করে উপরে সমান করে পুনরায় ১-১.৫ ইঞ্চি পুরু গোবর দিয়ে প্রতি ৪ বর্গফুটে ১৫০-২০০ টি কেঁচো ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে ওলট-পালট না করেও সরাসরি গাদাতে কেঁচো প্রয়োগ করা যায়। যখন কোন রকম দূর্গন্ধ থাকে না এবং জৈব পদার্থ কালো-বাদামী বর্ণের ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে ভার্মিকম্পোস্ট সংগ্রহের উপযুক্ত হয়েছে। চালুনী দ্বারা কেঁচো ও কম্পোস্ট পৃথক করা যেতে পারে। অপচনকৃত দ্রব্য পুনরায় স্তুপ করে অবশিষ্টাংশটাও ভার্মিকম্পোস্টে পরিণত করতে হবে। এ ভাবে বিভিন্ন জৈব পদার্থ ও গোবরের মিশ্রনে কেঁচো প্রয়োগ করে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করা যায়।
ভার্মিকম্পোস্টে বিদমান পুষ্টি উপাদান :  ভার্মিকম্পোস্টে উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদান সব সময় এক হয় না। ভার্মিকম্পোস্ট তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের উপর নির্ভর করে উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়।  বিনায় তৈরিকৃত ভার্মিকম্পোস্টে গড়ে ১৫-১৮% জৈব কার্বন, ১.৪২-২.০ % নাট্রোজেন, ১.৪৫-১.৭৫% ফসফরাস, ১.৫২-৩.৫% পটাশিয়াম ও ০.৩৫-৪৫% সালফার এবং উল্লেখযোগ্য পরিমানে গৌণ পুষ্টি উপাদান থাকে।
ভার্মি কম্পোস্টিংকালীন আন্তঃপরিচর্চা
ভার্মিকম্পোস্টিং এর জন্য সহায়ক উপাদান সমূহ : ১) পর্যাপ্ত ছায়াযুক্ত শীতল স্থান বা পরিবেশ বজায় রাখা, ৩) ১৫-২০ দিন বয়সের গ্যাসমুক্ত গোবর বা অন্য আংশিক পঁচা জৈব পদার্থের ব্যবহার, ৪) পর্যাপ্ত আর্দ্রতা (৫০-৭০%) বজায় রাখা। ৫) পর্যাপ্ত অন্ধকার  ও বায়ুচলাচল অবস্থা বজায় রাখা।  এ জন্য চটের ছালা হাউজের বা রিং বা চারি বা চৌবাচ্চার উপরে বিছিয়ে দিতে হবে। ৬) গোবরের সাথে অপেক্ষাকৃত ধীর পচনশীল বা উচ্চমাত্রার কার্বন বিশিষ্ট জৈব পদার্থ ( খড় জাতীয় দ্রব্য) ব্যবহার করা হলে শতকরা ৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার ছিটিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে, ৭) উপযুক্ত নিষ্কাশন অবস্থা বজায় রাখা, ৮) দুর্গন্ধ মুক্ত রাখা। তীব্র দূর্গন্ধ তৈরি হলে জৈব পদার্থ ওলট-পালট করে দেওয়া যেতে পারে, ৯)  আদর্শ তাপমাত্রা (২০-৩০০ সে.) বজায় রাখা ১০)  আদর্শ অম্লমান ৭.৫-৮.০ বজায় রাখা।
ভার্মিকম্পোস্টিং-এর জন্য ক্ষতিকর উপাদানসমূহ
ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির সময়কালীন নি¤েœর ক্ষতিকর বিষয় সমূহ থেকে ভার্মিকম্পোস্টকে রক্ষা বা তৈরি প্রক্রিয়াকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে। যেমন : ১) উচ্চ তাপমাত্রা/সরাসরি সূর্যের আলো, ২) অতিরিক্ত পানি/বৃষ্টির পানি জমে থাকা, ৩) বায়ু চলাচলহীন অবস্থা, ৪) হাঁস-মুরগী, পাখী, ইঁদুর, চীকা, সজারু, বেজী প্রভৃতি, ৫) পিঁপড়া বিশেষ করে লাল পিঁপড়া, সাদা ও লাল মাকড়/মাকড়াসা, কেঁল্লা, উরচূঙ্গা, তেলাপোকা, সাপ, ব্যাঙ  প্রভৃতি, ৬) টক/এসিড তৈরি করে এমন দ্রব্য (যেমন-কাঁচা আনারসের ছোবরা, ফ্রেস কিচেন ওয়েস্ট) এবং ৭) অতিরিক্ত দূর্গন্ধযুক্ত গ্যাস তৈরি হলে।
ভার্মি কম্পোস্টের ব্যবহার ও উপকারিতা
     ভার্মিকম্পোস্ট ছাদবাগানে, উদ্যানতাত্বিক (যেমন-সবজি, ফুল-ফল, মসলা প্রভৃতি) এবং মাঠ ফসলে (যেমন-ধান, সরিষা, পাট, গম প্রভৃতি) ব্যবহার উপযোগী। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য।
      ফসলের চাহিদা ও মাটির গুনাগুনের উপর ভিত্তি করে ভার্মিকম্পোস্ট ও সারের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। ফসল ভেদে ১৫০০-২০০০ কেজি/হে.ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহারে ১৫-২০% রাসায়নিক সার সাশ্রয় করা যেতে পারে।
      জমি প্রস্তুতের শেষ চাষের সময়ে অন্যান্য সার প্রয়োগের সময়েই ভার্মিকম্পোস্ট প্রয়োগ করা যায়।
      তৈরি পদ্ধতি সহজ। কৃষক তার খামার জাত জৈব পদার্থ ও কেঁচো ব্যবহার করে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করতে পারবে।
     খামার জাত অবদ্রব্যের ব্যবহার নিশ্চিত করে পরিবেশকে স্বাস্থ্য সম্মত রাখে।
      এতে টেকসইভাবে মৃ্ত্িতকার স্বাস্থ্য ও উর্বরতা সুরক্ষিত করতে ভূমিকা রাখে।
      পরিবেশ বান্ধব, সাশ্রয়ী, কর্মসংস্থান বৃদ্ধিজনক এবং লাভজনক।
ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদনে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রযুক্তিটি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে বাংলাদেশের মাটির টেকসই স্বাস্থ্য রক্ষা হবে, রাসায়নিক সার সাশ্রয় হবে, মাটির উর্বরতা সংরক্ষিত হবে, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, জৈব পদার্থের পুনর্ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে, পরিবেশ উন্নত হবে, গ্রামীন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং সর্বোপরি  কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। তাই বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ভার্মিকম্পোষ্ট উৎপাদনে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রযুক্তিটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
“জৈব পদার্থ যার ভার্মি কম্পোস্ট তার”

লেখক : সিএসও এবং প্রধান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাকৃবি ক্যাম্পাস ময়মনসিংহ। মোবাইল: ০১৭১৬৬২৭৩০৩, ই-মেইল : azizul_bina@yahoo.com