Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাসায় উপকারী শোভাবর্ধক সাকুলেন্টের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা

বাসায় উপকারী শোভাবর্ধক সাকুলেন্টের
উৎপাদন ব্যবস্থাপনা
পার্থ বিশ^াস১ তিথি মন্ডল২
বর্তমানে বাংলাদেশি সৌখিন বাগানীদের কাছে সাকুলেন্ট একটি বহুল প্রচলিত নাম। ছোট থেকে বৃদ্ধ যেকোন বয়সের বাগানী সাকুলেন্ট এর চিত্তাকর্ষকরূপে মুগ্ধ। শুধু রূপে নয়, সাকুলেন্ট বাসায় রাখার অন্যান্য উপকারিতাও আছে। যেমন- সাকুলেন্ট ঘরের বায়ুকে বিশুদ্ধ রাখে, রাতে অক্সিজেন নির্গত করে ঘুমে সহায়তা করে, স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং সার্বিকভাবে মনকে প্রফুল্ল রাখে। সাকুলেন্ট মূলত শীত প্রধান দেশের গাছ। শীত প্রধান দেশে খোলা পরিবেশে বা শেডের মধ্যে এরা খুব ভালোভাবে জন্মে এবং বেড়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের দেশের মিশ্র আবহাওয়া বা পরিবেশ সাকুলেন্ট উৎপাদনে কিছুটা প্রতিকূল। তবে সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনায় আমাদের দেশেও ভালোভাবে সাকুলেন্টের উৎপাদন করার পাশাপাশি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সাকুলেন্টের মাধ্যমে উপার্জন করাও সম্ভব। বর্তমানে ৪র্থ শিল্প বিল্পবের যুগে বিভিন্ন শ্রেণির পেশা বা উপার্জনের উৎস সৃষ্টি হচ্ছে। সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থাকে টেকসই এবং সর্বোচ্চ করাই বর্তমান সময়ের অন্যতম লক্ষ্য যা এসডিজি ও বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এ উল্লেখ আছে। আমরা যারা ভাড়া বাড়িতে থাকি তারা অনেকেই ইচ্ছা করলেই ছাদে গাছ রাখতে পারি না। সেক্ষেত্রে বাসার জানালা বা বারান্দায় লোহা বা প্লাস্টিকের র‌্যাকে (উলম্বভাবে) সাকুলেন্ট এর উৎপাদন কৌশল সম্পর্কে নি¤েœাক্ত ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা যেতে পারে।
সাকুলেন্টের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা (নতুন সাকুলেন্ট প্রেমিদের ক্ষেত্রে)
পরিবেশ : শীত প্রধান দেশের গাছ হওয়ায় এরা তুলনামূলক ঠা-া ও খোলামেলা পরিবেশ পছন্দ করে। অতিরিক্ত রোদ, গরম, পানি বা সার কোনটাই এদের পছন্দ নয়। অতিরিক্ত রোদ এর কারণে এদের পাতায় সানবার্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা সাকুলেন্টের গোড়া পচে যায়। তাই গরমকালে ২-২.৫ ঘণ্টা এবং শীতকালে ৪-৫ ঘণ্টা সকালের বা বিকালের রোদ এদের জন্য যথেষ্ট।
মিডিয়া : মিডিয়া অনেকভাবে তৈরি করা যায়। গোবর সার, পাতাপঁচা সার, নিমখৈল, হাড়ের গুঁড়া ও ধানের চিটা ব্যবহার করে মিডিয়া তৈরি করা হয়। কিন্তু এর অধিকাংশগুলোই ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা থাকে না যার ফলে বর্ষাকালে মিডিয়ায় ছত্রাক হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থকে। তাই নতুন সাকুলেন্টপ্রেমীরা এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। আবার কোকোপিটের পানিধারণ ক্ষমতা অধিক হওয়ায় মিডিয়াতে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা যাবে না কারণ সাকুলেন্ট কম পানি পছন্দ করে। মিডিয়া তৈরির সাথে সাথেই ব্যবহার না করে এক সপ্তাহ বা পনের দিন পর ব্যবহার করা ভালো। কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে অপেক্ষাকৃত ভালো মিডিয়া নির্দিষ্ট পরিমাণের নি¤েœাক্ত কয়েকটি উপাদানের সমন¦য়ে তৈরি করা যায় (সারণি-১)।
পট নির্বাচন : যত বড় পট তত পানিধারণ ক্ষমতা বেশি এবং সাকুলেন্ট মারা যাওয়ার আশঙ্কাও তত বেশি। তাছাড়া এদের শিকড় বেশি বড় হয় না এবং গভীরে যায় না। তাই এদের জন্য সবসময় ছোট পট নির্বাচন করা ভালো। সেক্ষেত্রে সাকুলেন্টের আকারের তুলনায় ১ বা ২ ইঞ্চি বড় পট নির্বাচন করতে হবে। যেমন- সাকুলেন্টের আকার যদি ২ ইঞ্চি হয় তবে এর জন্য পট হবে ৩ বা ৪ ইঞ্চি এবং পট মাটি বা প্লাস্টিক উভয় রকম হতে পারে। তবে মাটির পট নির্বাচন করা উত্তম।
পানি দেওয়া : সাকুলেন্ট এমন একটি প্রজাতির গাছ যারা কা- ও পাতায় প্রচুর পানি সঞ্চয় করে রাখতে পারে। আর এজন্যই প্রয়োজনের অধিক পানি এদের পছন্দ নয়। পানির অভাবে সাকুলেন্ট মারা গিয়েছে এমন ঘটনা খুব কম শোনা যায় কিন্তু বেশি পানি দেওয়ায় সাকুলেন্ট মারা যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। কাজেই এ গাছে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটু বেশি সচেতন হতে হবে। সপ্তাহে ১ দিন বা কিছু ক্ষেত্রে ২ দিন পানি দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ মিডিয়া ৯০-৯৫% শুকালে পানি দিতে হবে। যারা নতুন সাকুলেন্ট বাগানী তারা নিচের দিকের ২-১টা পাতা হালকা চাপ দিয়ে একটু নরম অনুভব করলে পানি দিতে পারেন। অথবা একটি টুথ্পিক মিডিয়ায় ঢুকিয়ে তুলে আনলে যদি দেখা যায় যে তার গায়ে বালু লেগে নেই তাহলে বুঝতে হবে পানি দেওয়ার সময় হয়েছে। সাকুলেন্টে এমন সময় পানি দিতে হবে যেন পানি দেওয়ার কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা পর গাছে রোদ এসে পড়ে অথবা গাছ থেকে রোদ সরে যাওয়ার কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা পর পানি দিতে হবে। তবে সাকুলেন্টে পানি দেওয়ার সবথেকে ভালো সময় সূর্যাস্তের পরে। গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে এবং পানি দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পাতার গোঁড়ায় পানি জমে না থাকে। কারণ দীর্ঘক্ষণ পাতার গোড়ায় পানি জমে থাকলে গাছ পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ও সার প্রয়োগ : সাকুলেন্টে অনেক সময় রুটমিলি হয়। রুটমিলি ছোট ছোট সাদা রং এর পোকা যারা শেকড় থেকে পুষ্টি শোষণ করে বেঁচে থাকে। গাছের বৃদ্ধি না হওয়া, নিস্তেজ হওয়া সাধারণত রুটমিলি হওয়ার লক্ষণ। রুটমিলি হলে সম্পূর্ণ মিডিয়া পরিবর্তন করে দেওয়া ভালো। অথবা ১ লিটার পানিতে ১-২ ফোঁটা (কোনভাবেই এর বেশি নয়) নাইট্রো অথবা ইমিটাফ মিশ্রিত করে মিডিয়ায় দিতে হবে। পাতায় থাকলেও স্প্রে করতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে পাতা যেন দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সাধারণ পানি দ্বারা স্প্রে করতে হবে। আর কীটনাশক অবশ্যই শেষ বিকেলে বা সূর্যাস্তের পর প্রয়োগ করতে হবে। মাসে ১-২ বার অর্থাৎ ১৫ দিন অন্তর এক লিটার পানিতে ১/২ চা-চামচ ছত্রাকনাশক ভালোভাবে মিশ্রিত করে মিডিয়াতে দেওয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত সার এদের পছন্দ নয়। শুধু ভার্মিকম্পোস্টে খুশি সে। তবে পটে (২ ইঞ্চি এর জন্য) ৪-৫টা দানা অসমোকট দিতে পারলে ভলো। এটি ঝষড়ি জবষবধংব ঋবৎঃরষরুবৎ তাই ১ বার দিলে ৬ মাস পর্যন্ত এর প্রভাব থাকবে। সাকুলেন্টে আর কোন রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করাই ভলো। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
চারা তৈরি : সাকুলেন্টের চারা মূলত পাতা থেকে করা হয় এবং পাশাপাশি কাটিং এর মাধ্যমেও করা যায়। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সাকুলেন্টের চারা সাধারণত অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের শুরুতে করতে হয়। গাছ থেকে সাবধানে পাতা তুলতে হবে যেন পাতার গোড়ায় ক্ষত না হয়। তারপর পাতাগুলো পরিষ্কার টিস্যু পেপারে ৪-৫ দিন খোলা আলো বাতাসে রেখে মিডিয়াতে বসাতে হবে। পাতা থেকে চারা তৈরির ক্ষেত্রে গোলাকার, চওড়া এবং কম উচ্চতা (১ বা ২ ইঞ্চি) বিশিষ্ট মাটির পট বা সিডলিং ট্রে নির্বাচন করলে ভালো হয়। মিডিয়াতে মাতৃপাতা দেওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর অল্প পরিমাণে পানি স্প্রে করতে হবে। এরপর মিডিয়া শুকালে (প্রায় ২-৩ দিন পর পর) অল্প পরিমাণে পানি স্প্রে করে দিতে হবে। এর ফলে দ্রুতই চারার উদ্ভব হবে। চারার বয়স প্রায় ১ মাস হলে পটটি এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন সকালের প্রায় এক ঘন্টা রোদ পায়। কাটিং থেকে চারা করার পদ্ধতিও প্রায় একই রকম।   মাতৃগাছ থেকে ডাল কেটে ৪-৫ দিন রেখে তারপর মিডিয়াতে বসাতে হবে। মিডিয়াতে বসানোর আরও ৪-৫ দিন পর থেকে মিডিয়া শুকালে পানি দিতে হবে এবং সহজেই শিকড় এসে ডাল চারায় রূপান্তরিত হবে। তবে কাটিং থেকে চারা করার ক্ষেত্রে প্রতি কাটিং এর জন্য একক পট (২-৩ ইঞ্চি) নির্বাচন করা ভালো। পাতার চারা পরবর্তী শীতে অর্থাৎ এক বছর পর রিপটিং করা ভালো।
আমাদের দেশে এর মূল্য : আমাদের দেশে সাইজ ও ভ্যারাইটি অনুযায়ী প্রতিটি সাকুলেন্টের মূল্য ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বা এর বেশিও হতে পারে। শখের বাগানীরা এর থেকে অতিরিক্ত চারা উৎপাদন করে অনলাইনে বা সরাসরি বিক্রি করে নিজের শখের গাছগুলো কেনার পাশাপাশি বাড়তি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
পরিশেষে বলা যায়, নতুন বাগানিরা এভাবে করলে আশা করি নিরাশ হবেন না। আশা করি বাংলাদেশও এক সময় সাকুলেন্ট চাষে সমৃদ্ধ হবে। তখন তাদের আর শীত প্রধান দেশের সাকুলেন্ট নয়, দেশি সাকুলেন্ট বলা যাবে।

লেখক: ১বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষি প্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ময়মনসিংহ; ফোন-০১৭২৭৬৫৬২১৬, ই-মেইল: ঢ়ধৎঃযর.নরংধিং@মসধরষ.পড়স ২মাস্টার্স (উদ্ভিদ বিজ্ঞান) এবং নারী উদ্যোক্তা, ফোন-০১৭৯৪৮৭৬৯১৬, ই-মেইল:parthi.biswas@gmail.com