Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাউ-মানকচু ১ উৎপাদন প্রযুক্তি ও পুষ্টিগুণ

বাউ-মানকচু ১ উৎপাদন প্রযুক্তি ও পুষ্টিগুণ
ড. এম এ রহিম১ ড. সুফিয়া বেগম২ মো. আবু জাফর আল মুনছুর৩
বাউ-মানকচু ১ (অষড়পধংরধ রহফরপধ) একটি জনপ্রিয় অপ্রচলিত কন্দজাতীয় ফসল যা বাণিজ্যিকভাবে বৃষ্টি বহুল অঞ্চলে, বসতবাড়ির বাগানে, পতিত জমি, ফল বাগান, ধানক্ষেতের বা ফসলি জমির আইল এবং আন্তঃফসল (যেমন-কলা, নারিকেল বাগান, পেঁপের বাগান বা অন্যান্য দীর্ঘতম ফসল এবং পার্বত্য অঞ্চলে আনারস) হিসেবে চাষ করা যায়। মানকচু ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশে অপ্রচলিত কন্দ ফসল হিসেবে চাষ করা হয়। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী কচিপাতা, পাতার ডাটা এবং করম বা কন্দ সবজি হিসেবে এবং ওষুধ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে যা বিভিন্ন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি যেমন- দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, দুর্ভিক্ষ, খরা, লবনাক্ততা, দারিদ্র্য বিমোচন ও জমির  সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
বাউ-মানকচু ১, স্থানীয়ভাবে মানকচু এবং মগুরকচু নামে পরিচিত। এই প্রজাতিটি (অৎধপবধব) পরিবারের একবীজ পত্রি হার্বস জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশে মূলত দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে যেমন- যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল এবং পটুয়াখালীতে চাষাবাদ হলেও বাংলাদেশে সকল অঞ্চলে চাষ করা যেতে পারে। বাড়ির আশপাশে পতিত জমি ইত্যাদিতে চাষ করা যায় ফলে অন্যান্য ফসলের সাথে প্রতিযোগী নয়। আন্তঃফসল হিসেবে চাষ করা যায় এবং তেমন যত্ন নিতে হয় না বিধায় এর উৎপাদন খরচ খুবই কম এবং সারা বছরই কচি পাতা, ডাটা সবজি হিসেবে সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রায় আবাদ করা যায়। পাতা হলুদাভ সবুজ বর্ণের এবং হলুদাভ কমলা রঙের ফুল হয়। গুড়ীকন্দ বেলুন   আকৃতির এবং লম্বা হয়।
জমি নিবার্চন : বাংলাদেশে সর্বত্র চাষযোগ্য। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। খড়া হলে সেচ দেওয়া যেতে পারে। ইহা জলবদ্ধতা ও ঠা-া সহ্য করতে পারে না। বেলে দোঁ-আশ, দোঁ-আশ, সামান্য লবণাক্ত মাটিতে ভালো জন্মে। উঁচু, মাঝারি উঁচু এবং সমতল ভূমিতে চাষ করা যায়।
জাত : বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় জার্মপ্লাজম সেন্টার কর্তৃক বাউ-মান কচু ১ জাতটি ২০২১ সালে জানুয়ারি মাসে নিবন্ধিত হয়েছে। জাতটি উচ্চফলনশীল, পুষ্টি ও ঔষুধি গুণ সম্পন্ন।
চাষাবাদ পদ্ধতি : ৪-৫ টা চাষ দিয়ে এবং মই দিয়ে মাটি আগলা ও ঝুর ঝুর করতে হবে। মাটির গভীরতা (১৫-২০ সেমি.), ঢ়ঐ ৫.৫-৬.৫ উত্তম। উদ্ভিদ লম্বা/বেলুন আকৃতির করম ও প্রচুর চারা উৎপন্ন করে। করম কাটিং, ছোট চারা এবং উদ্ভিদের কা-ের উপরের অংশ বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বছরব্যাপী চাষাবাদ করা যায়। রোপণ দূরত্ব : ৭৫দ্ধ৬০ সেমি. ঠা-া অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে রোপণ না করলেও চলে।
সার প্রয়োগ : গোবর ১৫ টন/হেক্টর, ইউরিয়া ২০০ কেজি/হেক্টর, ট্রিপল সুপার ফসফেট ১২৫ কেজি/হেক্টর এবং মিউরেট অব পটাশ ১৮৫ কেজি/হেক্টর ব্যবহার করা যায়। জমি তৈরির সময় শেষ চাষের পর গোবর সারসহ মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
আন্তঃপরিচর্যা : ১ সপ্তাহ পর পর আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। দেড় থেকে দুই মাস পর চারা পাতলাকরণ করতে হবে। প্রয়োজনে পানি সেচ ও নিষ্কাশন করা যেতে পারে। খড়া মৌসুমে চারা লাগালে প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে পানি সেচ প্রয়োজন।
রোগবালাই : বাউ-মানকচু ১ এর তেমন কোন রোগবালাই হয় না। অতিরিক্ত ঠা-ায় চারা অবস্থায় উদ্ভিদটির বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং গাছ মারাও যায়।
ফসল সংগ্রহ : সারা বছরই কচিপাতা, ডাটা সবজি হিসেবে সংগ্রহ করা যায়। করম বা গুড়ি কন্দ জুলাই-আগস্ট মাসে সংগ্রহ করা যায়। ৪-৫ মাসের মধ্যেই গুড়ি কন্দ সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। উদ্ভিদের কা-ের অংশ (কন্দের উপরের অংশ) কেটে বীজ হিসেবে অন্য জায়গায় লাগানো যায়। গুড়ি কন্দ বাজার জাত করা যায়। এভাবেই সারা বছরই পাতা, ডাটা, কন্দ পাওয়া যেতে পারে। বাউ-মানকচু ১ এর মাংসল সাদা অংশ সু-স্বাদু তবে কাঁচা খাওয়া যায় না। সামন্য গলা চুলকায়। রান্না বা খাওয়ার জন্য গরম পানিতে ফুটিয়ে নিতে হয়। হেক্টরে ২৫-৩৫ টন ফলন হয়ে থাকে।
ফসল সংরক্ষণ : কন্দ কাটিং ও ছোট চারা বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কন্দ ভেজা থাকলে হালকা রৌদ্রে শুকিয়ে ঠা-া ও শুষ্ক স্থান এবং উঁচু মাচায় সংরক্ষণ করা ভালো।
ফসলের প্রয়োজনীয়তা : বাউ-মানকচু ১ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে এবং গ্রামীণ জনগণের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানকচু ১ বিশে^ বিশেষ করে এশিয়ান অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অপ্রচলিত ফসল এবং পুষ্টি ও ঔষধি গুণ বিশিষ্ট ফসল। এটি এন্টি-ফাঙ্গাল,  এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল,  এন্টি-রিওমাটিজম, ক্যান্সার প্রতিরোধী, এন্টি-ইনফ্লামেটরি ইত্যাদি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিগুণ: ভিটামিন এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম এবং এন্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারিসহ যেকোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলায় খাদ্য সুরক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশ রক্ষা ও জনগণকে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের জন্য  কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে বাউ-মানকচু ১ এর মতো অপ্রচলিত ফসল আবাদ করে আমাদের খাদ্য পুষ্টি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে।
 
লেখক : ১প্রফেসর উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ, মোবাইল : ০১৭৭২১৮৮৮৩০, ই-মেইল : সধৎধযরস১৯৫৬@নধঁ.বফঁ.নফ; ২সহকারী অধ্যাপক (অব.) একেইউ ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড কলেজ। মোবাইল : ০১৭১৬৬০৭৫৫৬, ই-মেইল: ংঁভরধথনবম@ুধযড়ড়.পড়স; ৩তথ্য অফিসার (পিপি),   কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৪১০৪৮৫৩, ই-মেইল : ধষসঁহংঁৎফধব@মসধরষ.পড়স