Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ধানের বাদামি গাছফড়িং দমনে ব্যবস্থাপনা

ধানের বাদামি গাছফড়িং দমনে ব্যবস্থাপনা
কৃষিবিদ তুষার কান্তি সমদ্দার

ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। তাই এর সাথে দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঘন বসতিপূর্ণ এ দেশের জনসংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে, অপরদিকে, বাড়িঘর, কলকারখানা, হাট-বাজার, সড়ক-জনপথ স্থাপন এবং নদী ভাঙন ইত্যাদি কারণে আবাদি জমির পরিমাণ প্রতিনিয়ত কমছে। তদুপরি রয়েছে খরা, বন্যা, জোয়ার-ভাটা, লবণাক্ততা, শৈত্যপ্রবাহ ও শিলাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমিতে বেশি ধান উৎপাদন করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য। উফশী ধান নিবিড় ও উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদের কারণে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত পোকার প্রজাতি, পোকার সংখ্যা, উপদ্রুত এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ ইত্যাদির উপর ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করে। ক্ষতিকর পোকার আক্রমণের জন্য রোপা আমন মৌসুমে শতকরা প্রায় ১৮ ভাগ ধানের ফলন নষ্ট হয়। ধান ফসলের একটি মারাত্মক কাণ্ড শোষক পোকা হচ্ছে বাদামি গাছফড়িং। এই পোকার আক্রমণ ধান গাছের চারা অবস্থা থেকে শুরু করে ধান পাকার পূর্ব পর্যন্ত সকল পর্যায়ে হতে পারে। আউশ, আমন ও বোরো এই তিন মৌসুমেই এই পোকার আক্রমণ হতে পারে।
জীবন বৃত্তান্ত
মৌসুমের শুরুতে লম্বা পাখা বিশিষ্ট পূর্ণবয়স্ক বাদামি গাছফড়িং পাতার খোলে এবং পাতার মধ্য শিরায় ৮-১৬টি ডিম গুচ্ছাকারে পাড়ে। ডিমের রং হলুদ এবং দেখতে অনেকটা কলার কাঁদির মতো। ডিমগুলোর উপর পাতলা চওড়া একটা আবরণ থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ৭-৯ দিন সময় লাগে। সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো দেখতে পূর্ণবয়স্ক পোকার মতো তবে আকারে খুবই ছোট। বাচ্চাগুলো ৫ বার খোলস বদলানোর পর পূর্ণবয়স্ক পোকায় পরিণত হয়। এতে ১৩-১৫ দিন সময় লাগে। পূর্ণবয়স্ক বাদামি গাছফড়িং ৩-৫ মিলি মিটার লম্বা হয়ে থাকে। পূর্ণবয়স্ক পোকার গায়ের রং বাদামি। বাদামি গাছফড়িং ছোট পাখা ও লম্বা পাখা বিশিষ্ট এই দুই ধরনের হতে পারে। এর স্ত্রী পোকাগুলো সাধারণত গাছের গোড়ার দিকে বেশি থাকে। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে লম্বা পাখা বিশিষ্ট ফড়িং এর সংখ্যাও বাড়তে থাকে, যারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় উড়ে যেতে পারে। পূর্ণবয়স্ক বাদামি গাছফড়িং প্রায় ৩ সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে এবং এক জোড়া পোকা থেকে ২-৩ মাসের মধ্যে হাজার হাজার পোকা জন্ম নিতে পারে।
ক্ষতির অনুকূল পরিবেশ
বাদামি গাছফড়িং আলো-বাতাস পছন্দ করে না। এদের বংশ বৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকার জন্য আর্দ্র ও ছায়াযুক্ত স্থান খুবই পছন্দ। ঘন করে গাছ লাগালে, জমিতে অধিক নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করলে, জমিতে পর্যাপ্ত আগাছা থাকলে এবং সব সময় জমিতে পানি জমে থাকলে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়।
ক্ষতির লক্ষণ
বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক উভয় অবস্থায় বাদামি গাছফড়িং ধান গাছের গোড়ায় বসে গাছের রস চুষে খায় ফলে গাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এক সাথে অনেকগুলো পোকা রস চুষে খাওয়ার ফলে পাতা প্রথমে হলদে ও পরে শুকিয়ে মারা যায়। আক্রমণ বেশি হলে দূর থেকে বাজ পড়ার মতো (হপার বার্ন) মনে হয়। ধানের শীষ আসার সময় বা তার আগে হপার বার্ন হলে কোন ফলনই পাওয়া যায় না। তবে ধানের দানা শক্ত হওয়ার পর ধান গাছ আক্রান্ত হলে ক্ষতি কম হয়।
বাদামি গাছফড়িং-এর প্রাকৃতিক শত্রু
এমন অনেক বন্ধু পোকামাকড় আছে যারা ধানের জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই গাছফড়িং দমন করে থাকে। বাদামি গাছফড়িং-এর যেসব প্রাকৃতিক শত্রু আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাকড়সা, মিরিডবাগ, লেডিবার্ড বিটল, ক্যারাবিড বিটল, ড্যামসেল ফ্লাই এর বাচ্চা, মাইক্রোভেলিয়া, মেসোভেলিয়া  ইত্যাদি পরভোজী। ব্যাঙ বাদামি গাছফড়িংকে দমিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
দমন ব্যবস্থাপনা
জমিতে আলোক ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। চারা রোপণের দূরত্ব বাড়িয়ে দিতে হবে। থোড় আসার আগ পর্যন্ত আক্রান্ত জমিতে হাঁস ছেড়ে দিলে পোকা কিছুটা দমন করা যায়। লাইন ও লোগো পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণ করতে হবে। উর্বর জমিতে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। জমি আগাছামুক্ত রাখা প্রয়োজন। আক্রান্ত জমি থেকে ৫-৬ দিনের জন্য পানি বের করে দিয়ে স্যাঁতসে্যঁতে অবস্থা দূর করতে হবে। জমির অধিকাংশ গাছে যদি ৩-৪টি পেট মোটা ডিমওয়ালা পূর্ণবয়স্ক বাদামি গাছফড়িং বা ৮-১০টি নিম্ফ অথবা উভয়ই দেখতে পাওয়া যায় তাহলে যে কোন একটি অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। কীটনাশক  অবশ্যই গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।
পোকামাকড় দমনের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি কোন ক্ষেতে কার্যকরী হবে সেটি নিয়মিতভাবে ক্ষেত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে। শুধু একটি মাত্র পদ্ধতিই কোনো ক্ষেত্রে পোকা দমনের ব্যাপারে যথেষ্ট নাও হতে পারে। প্রয়োজনে একটির বেশি পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। সুতরাং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধানের পোকামাকড় দমন করা সম্ভব। য়
প্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা, ফোন : ৫৫০২৮৩৭২, ই-মেইল : cio@ais.gov.bd