Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

প্রশ্নোত্তর (শ্রাবণ ১৪২৭)

কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন
কৃষি বিষয়ক
নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আপনার ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করুন।
মোঃ করিম মÐল, গ্রাম: বুন্দুলিতলা, উপজেলা: চৌগাছা, জেলা: যশোর
প্রশ্ন: কচি ডাবের বোঁটার কাছে আঁচড় কেটেছে দেখা যাচ্ছে এবং কাটা কাটা ভাবও মনে হচ্ছে। এখন এ সমস্যায় কী করব। জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: এ ধরনের সমস্যা নারকেল গাছে মাকড়ের আক্রমণ হলে হয়ে থাকে। এজন্য ফুট পাম্পের সাহায্যে অনুমোদিত           মাকড়নাশক যেমন-ভার্টিমেক ওমাইট প্রতিলিটার পানিতে ১.৫ মিলি. মিশিয়ে ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করলে আপনি উপকার পাবেন। এছাড়া বর্ষার আগে ও পরে নারকেল গাছের বয়স অনুযায়ী সুষম সার প্রয়োগ করলে আপনি কাক্সিক্ষত ফলন পাবেন।
মোছাঃ সুলতানা ইয়াছমীন, গ্রাম: দক্ষিণ পাতাকাটা, উপজেলা: বরগুনা সদর, জেলা: বরগুনা
প্রশ্ন: পানের বরে পাতায় প্রথমে ছোট ছোট পানিভেজা দাগ পড়ে। আস্তে আস্তে দাগগুলো বড় হয় এবং পানের বাজার দর কমে যায়। কী করব?
উত্তর: পানের পাতায় এ ধরনের সমস্যা হলে এ রোগকে পানের পাতায় দাগ পড়া রোগ বলে। কলেটোট্রিকাম নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হয়। যদি আক্রমণ বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে তবে কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন-অক্সিভিট ৪ গ্রাম প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২ থেকে ৩বার স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যাবে।
মো. ময়েজ উদ্দীন, গ্রাম: লক্ষীরপাড়, উপজেলা: বিশ্বম্ভপুর, জেলা: সুনামগঞ্জ
প্রশ্ন: শিমের গায়ে বাদামি-কালো রঙের কালো দাগ পড়ে এবং শিমগুলো পচে যাচ্ছে। কি করলে উপকার পাবো?
উত্তর: শিমের গায়ে বাদামি-কালো রঙের দাগ পড়ে শিম পচে যায় এ্যানথ্রাকনোজ রোগের জীবাণু আক্রমণ করলে। এ সমস্যার সমাধানে প্রপিকোনাজল গ্রæপের যেমন টিল্ট ১ মিলিলিটার ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করলে সুফল পাবেন। কিংবা কার্বেনডাজিম গ্রæপের যেমন টপসিন ২ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে শিম গাছে বিকেল বেলা স্প্রে করলে ভালো ফলাফল পাবেন। এছাড়া এ রোগ প্রতিরোধে রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা প্রয়োজন। আর শিম গাছ ও বাগানকে সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখলে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেক কমে যাবে। আর অনেক বেশি ফলনও পাওয়া যাবে।
মোছাঃ কবিতা বেগম, গ্রাম: মৌতলা, উপজেলা: কালিগঞ্জ, জেলা: সাতক্ষীরা
প্রশ্ন: নারিকেলের ছোট ফলগুলো ঝরে পড়ছে। ঝরা ফলগুলোর মুখ কালো। কী করবো?
উত্তর: নারিকেল গাছের ফল ঝরে পড়ে যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমওপি বা পটাশ সারের অভাবে। সে কারণে নারিকেল গাছের বয়স জেনে সুষম মাত্রার সার প্রয়োগ করতে হয়। সেক্ষেত্রে               ১-৪ বছর বয়সী গাছের জন্য গোবর ১০ কেজি, ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, এমওপি ৪০০ গ্রাম, জিপসাম ১০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ৪০ গ্রাম, বরিক এসিড ১০ গ্রাম গাছের গোড়া থেকে চারদিকে ৩ ফুট বাদ দিয়ে মাটি কুপিয়ে ৮-১২ ইঞ্চি মাটির গভীরে সারগুলো প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগ করতে হয় দুইকিস্তিতে। প্রথম কিস্তিতে অর্ধেক সার মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য জ্যৈষ্ঠ (মে) এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে বাকি অর্ধেক সার মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য আশ্বিন (সেপ্টেম্বর) মাসে। নারিকেল গাছের বয়স ৫-৭ বছর ও ৮-১০ বছর বয়স হলে ১-৪ বছর বয়সী নারিকেল গাছের সারের মাত্রাকে ২ ও ৩ গুণ করে             নিয়মমাফিক প্রয়োগ করলেই কাক্সিক্ষত ফলন পাবেন। নারিকেল গাছের ঝরা ফলগুলো কালো হয় মাকড় বা মাইটের কারণে। সেজন্য ভালো হয় এবামেকটিন গ্রæপের যেকোন ভালোমানের মাকড়নাশক আক্রান্ত নারিকেল গাছে সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করা।
মোঃ কমল পাটোয়ারী গ্রাম: খাটুরিয়া, উপজেলা: গোবিন্দগঞ্জ, জেলা: গাইবান্ধা
প্রশ্ন: কামরাঙা ফল পচে যায় এবং গাছের পাতাও ঝরে পড়ে। কি করণীয়?
উত্তর: কামরাঙা গাছের পাতা ও ফলে এ্যানথ্রাকনোজ রোগের আক্রমণে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এ রোগটি ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে। এ রোগ হলে পাতা, ফুল ও ফলে ছোট ছোট বাদামি দাগ পড়ে এবং দাগগুলো আস্তে আস্থে বড় হয়ে কালো রঙ ধারণ করে এবং আক্রান্ত স্থান পচে যায়। এ রোগ দমনে আক্রান্ত পাতা, ফুল ও ফল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আর রোগ দেখা দিলে কার্বেনডাজিম গ্রæপের ব্যাভিস্টিন বা নোইন ৫ ডবিøউপি প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন অন্তর ২ বা ৩ বার সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যাবে।
মোঃ রহিম বেপারী, গ্রাম: সুরগ্রাম, উপজেলা: গোপালগঞ্জ সদর, জেলা: গোপালগঞ্জ
প্রশ্ন: জলপাই ফলে দাদের মতো খসখসে দাগ পড়ে। বাজারে কম দাম পাই। সমস্যার সমাধান জানাবেন।
উত্তর: জলপাই গাছের গোড়ার মাটিতে বোরন নামক পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হলে জলপাই ফলের গায়ে দাদের মতো খসখসে দাগ পড়ে। আর এতে করে ফলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায় এবং বাজারে দামও কম পাওয়া যায়। এ সমস্যা প্রতিকারে বর্ষার শেষ দিকে গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম হারে বরিক এসিড বা ১০০ গ্রাম হারে বোরাক্স প্রয়োগ করতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনি উপকার পাবেন।
মৎস্য বিষয়ক
লোকমান মজুমদার, গ্রাম: লখাইডাঙ্গা, উপজেলা:          মণিরামপুর, জেলা: যশোর
প্রশ্ন: রুই মাছে সাদা দাগ রোগ হয়েছে। কি করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো?
উত্তর: এ রোগে মাছের পাখনা, কানকো ও দেহের উপর সাদা দাগ দেখা যায়। মাছের ক্ষুধামন্দা এবং দেহের স্বাভাবিক পিচ্ছিলতা লোপ পেয়ে খসখসে হয়ে যায়। ইকথায়োপথেরিয়াস প্রজাতি এ রোগের কারণ। এ রোগ প্রতিকারে ১ পিপিএম তুঁতে পানিতে গোসল দেয়া কিংবা শতকরা ২.৫ ভাগ লবণ পানিতে কয়েক মিনিটের জন্য রাখা যতক্ষণ পর্যন্ত মাছ লাফিয়ে না পড়ে। এছাড়া এ ধরনের রোগ যাতে না হয় সেজন্য শামুকজাতীয় প্রাণী পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলা। শতকরা ২.৫ ভাগ লবণ পানিতে            ৫-৭ মিনিট গোসল দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পোনা মজুদ করতে হয়। তাছাড়া রোদে শুকনা জাল পুকুরে ব্যবহার করাও দরকার। আরেকটি বিষয় অনুসরণীয় সেটি হলো মাছের স্বাভাবিক সংখ্যা বজায় রেখে অতিরিক্ত মাছ সরিয়ে নেয়া।
মোঃ মহব্বত আলী, গ্রাম: সাটুরিয়া, উপজেলা: ডোমার, জেলা: নীলফামারী
প্রশ্ন: চিংড়ি মাছের নরম ও স্পেঞ্জের মতো দেহের কারণ ও এ সমস্যার প্রতিকার বিষয়ে জানতে চাই।
উত্তর: পানিতে ক্যালসিয়াম কমে গেলে, এ্যামোনিয়া ও তাপমাত্রা বেড়ে গেলে, পুষ্টিকর খাদ্য কমে গেলে এবং পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গেলে এ সমস্যা দেখা দেয়। আর এ রোগে চিংড়ির খোলস নরম হয়ে যায়। উপর থেকে চাপ দিলে নিচে ডেবে যায়। খোলস ও মাংসের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি হয়। এ সমস্যার সমাধানে মজুদ ঘনত্ব কমিয়ে পুকুরে অন্তত ৫০% পানি বদল করা। পুকুরে ২ থেকে ৩ মাস অন্তর চুন প্রয়োগ এবং পুকুরে সার ও খাদ্য প্রয়োগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনি উপকার পাবেন।
প্রাণিসম্পদ বিষয়ক
মোঃ রহিম মিয়া, গ্রাম: জলিশা, উপজেলা: দুমকি, জেলা: পটুয়াখালী
প্রশ্ন: আমার বাছুরের বয়স ১৫ দিন। নাভী ফুলে গেছে। জ্বর আছে, নাভীতে পুঁজ হয়েছে। এমতাবস্থায় কী করণীয় ?
উত্তর: নাভীর ক্ষতস্থান টিংচার-আয়োডিন দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। নাভী পেকে গেলে একটু কেটে সম্পূর্ণ পুঁজ বের করে ফেলতে হবে। পরে জীবাণুনাশকযুক্ত পানি দ্বারা পরিষ্কার করে কাটা জায়গার মধ্যে টিংচার আয়োডিনযুক্ত গজ ঢুকাতে হবে। একদিন পরপর এইভাবে পরিষ্কার করে গজ ঢুকাতে হবে। এছাড়া পেনিসিলিন অথবা স্ট্রেপটোমাইসিন ইনজেকশন দিতে হবে।   
মোছাঃ শবনম বেগম, গ্রাম: সারানপুর, উপজেলা: গোদাগাড়ী, জেলা: রাজশাহী
প্রশ্ন: গরুর গা খসখসে এবং ঘা হচ্ছে। এ অবস্থায় কী করণীয়?
উত্তর: ইনজেকশন ভারমিক প্রতি ২৫ কেজি গুরুর দেহের ওজনের জন্য ১ সিসি ১ বার চামড়ার নিচে পুশ করতে হবে। যদি সমস্যাটি বেশি হয় তবে ৭ দিন পর বুস্টার ডোজ আবারও ১ বার দিতে হবে। এছাড়া ইনজেকশন অ্যাসটাভেট ১০০ কেজি গরুর দেহের ওজনের জন্য ৫ সিসি. করে দৈনিক ১ বার ৩ থেকে ৫ দিন মাংসে পুশ করতে হবে এবং ইনজেকশন অ্যামক্সিভেট ১ ভায়েল করে রোজ ১ বার ৩ দিন মাংসে পুশ করতে হবে। এসব ব্যবস্থা নিলে আপনার গরুর সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
(মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশ্ন কৃষি কল সেন্টার হতে প্রাপ্ত) য়
উপপ্রথান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫ মোবাইল: ০১৭১১১১৬০৩২, ইমেল :taufiquedae25@gmail.com