Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষকের বাজার ও নিরাপদ সবজি

তৌহিদ মোঃ রাশেদ খান

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর।  বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ ভাগ কৃষি কাজের সাথে জড়িত এবং মোট শ্রম শক্তির শতকরা ৬০ ভাগ যোগান দেয়  কৃষি খাত। বাংলাদেশে প্রচুর শাকসবজি উৎপাদিত হয় এবং বিশ্বে শাকসবজি উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। কিন্তু এসব শাকসবজির উৎপাদনে নিরাপদতা নিশ্চিত না হওয়ায় তা দেশের সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। অন্যদিকে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কারণে বিপণন পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি নষ্ট হচ্ছে, যা প্রায় শতকরা ২৫-৩০ ভাগ। এ জন্য উৎপাদন পর্যায়ে কৃষকদেরকে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা বিষমুক্ত নিরাপদ শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনে আগ্রহী হন। শুধুমাত্র উৎপাদন বৃদ্ধি নয় তার সাথে প্রয়োজন কৃষিপণ্য বিপণন ব্যবস্থায় অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকদের বাজার ব্যবস্থায় সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সফল উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচুর শাকসবজি উৎপাদিত হচ্ছে এবং দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে।  কিন্তু সবজি উৎপাদনের ভরা মৌসুমে কৃষকগণ তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাচ্ছে না। অপরদিকে  বিভিন্ন কলাকৌশল ব্যবহারের ফলে নিরাপদ সবজি উৎপাদন হলেও পৃথক বাজার ব্যবস্থা না থাকার কারণে কৃষকগণ নিরাপদ সবজির সঠিক মূল্য হতে বঞ্চিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে ভোক্তাগণও নিরাপদ সবজি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ প্রেক্ষিতে নিরাপদ সবজির প্রাপ্যতা সহজলভ্য করা ও নিরাপদ সবজি উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট কৃষকগণের সঠিক মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক সেচ ভবন, মানিকমিয়া এভিনিউ, ঢাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে একটি কৃষকের বাজার (ফার্মারস মার্কেট) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উক্ত কৃষকের বাজারে সপ্তাহে দুই দিন শুক্র ও শনিবার ঢাকা জেলাসহ নিকটবর্তী জেলা যেমনঃ মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে উৎপাদিত নিরাপদ সবজি কৃষক কর্তৃক সরাসরি বাজারজাত করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ঢাকার মানিকমিয়া এভিনিউসহ সেচ ভবনে স্থাপিত কৃষকের বাজারটির সার্বিক বাজার ব্যবস্থাপনায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
ঢাকার সাভার, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সীগঞ্জ থেকে চাষিরা কোনো মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই মাঠ থেকে সবজি সরাসরি বাজারে এনে থাকেন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নিজস্ব রেফ্রিজারেটেড ট্রাকের মাধ্যমে কৃষকদের পরিবহণ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সবজির গুণগত মান নিশ্চিত করছে। এখানে সব ধরনের সবজি পাওয়া যায়। কৃষক তার ক্ষেত থেকে সরাসরি উৎপাদিত সবজি নিয়ে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। পরিবহণ সুবিধা প্রদান এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য না থাকায় এ বাজারের পণ্যের দামও ক্রেতাদের নাগালে রয়েছে।
এ কৃষকের বাজারে সম্পূর্ণরূপে কীটনাশকমুক্ত সবজি নিয়ে আসেন কৃষক। উৎপাদন পর্যায়ে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদ করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তদারকিতে যেসব কৃষক এ নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন তাদেরকেই এ বাজারে পণ্য বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর হতে এ জন্য কৃষকদের নির্ধারিত পরিচয়পত্র দেয়া হয়। তাদের বাইরে কেউ কৃষকের বাজারে এসে সবজি বিক্রি করতে পারেন না। এ বাজারের সফলতার ওপর ভিত্তি করে আগামীতে আরো ব্যাপকভাবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এরকম বাজারের আয়োজন করা হবে এবং সারা বছর যেন এ বাজার চালু থাকে, তার ব্যবস্থা করা হবে।
স্থানীয় বাজারের সবজির সঙ্গে এ কৃষকের বাজারের সবজিতে অনেক পার্থক্য। পরিপাটি করে সাজিয়ে বিষমুক্ত এসব সবজি কৃষকরা সরাসরি বিক্রি করেন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর হতে এসব কৃষিপণ্যের জন্য এ বাজারে মূল্য তালিকা টাঙানো থাকে। এ ছাড়া এ বাজারটিতে সত্যিকার অর্থেই কীটনাশক মুক্ত সবজি মিলে কি না, তা পরীক্ষা করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট  হতেও এ বাজারের পণ্যের নিরাপদতা পরীক্ষা করা হয়।
বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রথমার্ধে বাংলাদেশের শাকসবজিসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের পরিবহণ এবং বাজারজাতকরণে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল এবং কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারছিল না। এসব বিষয় বিবেচনা করে লকডাউনের মধ্যেও চালু ছিল কৃষকের বাজার। এছাড়াও লকডাউন পরিস্থিতিতে ভোক্তা সাধারণ যেন নিরাপদ সবজি হাতের নাগালেই পেতে পারেন সেজন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক চালু ছিল “ভ্রাম্যমাণ কৃষকের বাজার”। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের রিফার ভ্যানের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে  কৃষকেরা সরাসরি তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রয় করে।
ঢাকা মহানগরীর ভোক্তাগণের নিরাপদ সবজি প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে কৃষকের বাজার স্থাপন বিষয়টি ইতোমধ্যে বেশ সমাদৃত হয়েছে। উক্ত কৃষকের বাজারে প্রচুর ক্রেতার সমাগম হচ্ছে এবং ক্রমান্বয়ে নিরাপদ সবজির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষক বাজারের ব্যাপক প্রচার ও নিরাপদ সবজির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে দেশের প্রত্যেক জেলায় “কৃষকের বাজার” স্থাপনের লক্ষ্যে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কাজ করছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের তত্ত¡াবধানে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিরাপদ সবজি বিপণনে “কৃষকের বাজার” স্থাপিত হয়েছে। এ সকল কৃষকের বাজারে প্রান্তিক কৃষক সরাসরি বিক্রয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন এবং ভোক্তা সাধারণ সাশ্রয়ী মূল্যে এ ধরনের বাজার থেকে নিরাপদ সবজি ক্রয় করে তাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছেন।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক দেশের সকল জেলার গুরুত্বপূর্ণ শাকসবজি উৎপাদন এলাকায় এ রকম কার্যক্রম গ্রহণপূর্বক কৃষক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সংযোগ স্থাপন করা হলে একদিকে যেমন নিরাপদ শাকসবজি উৎপাদন হবে পরবর্তীতে ক্ষতি কমিয়ে কৃষকদের আর্থিকভাবে লাভবান করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব। এমতাবস্থায়, নিরাপদ শাকসবজি উৎপাদনকারীর স্বার্থরক্ষা ও মূল্য বঞ্চনা থেকে মুক্তি, কৃষক ও ভোক্তার কল্যাণ, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও অযাচিত প্রভাব রোধকল্পে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য প্রাপ্তিতে সহায়তা প্রদান এবং সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও দরিদ্রতা হ্রাস করা এবং ভোক্তা সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এ উদ্যোগ সফল হোক। য়

সহকারী পরিচালক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা, মোবাইল : ০১৭৭০৫৫১২৩৭, ই-মেইল : rkshahu@gmail.com