Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাংলাদেশে বছরব্যাপী ফল উৎপাদন কৌশল

ড. মোঃ মেহেদী মাসুদ

বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত এবং কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গড়া। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারী কাজ করে যাচ্ছে। দেশের ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও তার চাষ সম্প্রসারণের কাজ অব্যাহত রয়েছে। সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে ফলের উৎপাদন ও উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নিয়মিত ফল খেলে দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়, ক্লান্তি দূর হয়, সুস্বাস্থ্য  বজায় থাকে ও ভাতের উপর চাপ কমবে। বাংলাদেশে বছরে ৩.৮০ লক্ষ হেক্টর জমিতে ৪৭.০ লক্ষ মেট্রিক টন ফল উৎপাদন হয়। কিন্তু আমাদের বাৎসরিক চাহিদা রয়েছে ৬১.১৭ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ সালে  ফলের মোট উৎপাদন ছিল ৯৯,৭২,২৪৭ মেট্রিক টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে উৎপাদন হয়েছে ১,২১,৫১,৯৩৪ মেট্রিক টন, বৃদ্ধির হার ২১%। উল্লেখ্য আমাদের দেশে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন কিন্তু আমরা প্রতিদিন প্রায় গড়ে ৭০-৮০ গ্রাম ফল ভক্ষন করি। মোট চাহিদার শতকরা ৬৫ ভাগ ফল আমরা উৎপাদন করি, বাকী ৩৫ ভাগের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় আমরা ফল আমদানী করে থাকি। অথচ বাংলাদেশের আবহাওয়ায় প্রায় ৭০  প্রকারেরও বেশী জাতের ফল চাষের উপযোগী যা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই বিরল।
ফল বাংলাদেশের অতি জনপ্রিয় ও উপযোগী উদ্যানতাত্তি¡ক ফসল, রঙ, গন্ধ স্বাদ ও পুষ্টির বিবেচনায় আমাদের দেশী ফলসমূহ খুবই অর্থবহ ও বৈচিত্র্যময়। মানুষের জন্য অত্যাবশীয় বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের উৎস হলো দেশীয় ফল। ফল ভক্ষনে রোগ প্রতিরোধ ছাড়াও হজম, পরিপাক, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দুরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদন, এ্যান্থোসায়ানিন, লাইকোপেন ও এন্টি অক্সিডেন্ট উপস্থিত থাকায় মরণ ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে। তাছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফলের অবদান অনস্বীকার্য। দেশে যে সব ফল উৎপাদন হয় তার প্রায় ৬০% উৎপাদিত হয় জুন-জুলাই ও আগষ্ট মাসে। শীতকালে ফল প্রাপ্তির সুযোগ কম। শীতকালে যেসব ফল (কুল, কলা, পেঁপে, তেঁতুল) উৎপাদন সুবিধা আছে সে ফলের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে চাষ উপযোগী বিদেশী জাতের বিভিন্ন ফল আবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে সারা বছর ফল প্রাপ্তি সম্ভব।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ফলের অবস্থান ঃ
আয়তনে বিশ্বের অন্যতম ছোট দেশ বাংলাদেশ হলেও ফল উৎপাদনের সফলতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বাংলাদেশে এখন ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) মতে ১৮ বছর যাবত বাংলাদেশে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বেড়েছে। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে ২য়, আমে ৭ম এবং পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম স্থানে আছে বাংলাদেশ। আর মৌসুমী ফল উৎপাদনে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১০ম।  আয়তনে কম হলেও প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে ফল চাষের জমি বাড়ছে।
 গত ১০ বছরে দেশের আম ও পেয়ারার উৎপাদন দ্বিগুণ, পেঁপেতে আড়াই গুণ, লিচু উৎপাদনে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
 ৪-৫ বছরের মধ্যে নতুন ফল ড্রাগন, এভোকাডো এবং দেশী ফল বাতাবী লেবু, তরমুজ, লটকন, আমড়া ও আমলকীর মতো পুষ্টিকর ফলের উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়ছে। নতুন করে চাষ উপযোগী ড্রাগন ফলের ২৩টি আলাদা প্রজাতির, খেজুরের ১৬টি, নারিকেলের ২ প্রজাতি, কাঁঠালের ৩টি জাত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সম্প্রসারণের কাজগুলো চলমান। উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে সীমিত জমিতে  অধিক ফল উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
(ক) আম ঃ দেশের ফল থেকে আসা পুষ্টি চাহিদার বড় অংশের জোগান দেয় আম। আম প্রায় সবকটি জেলায় চাষ হচ্ছে। সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক থাইল্যান্ড থেকে বারোমাসি আমের জাত আমদানী করা হয়েছে। আ¤্রপালি আমের সম্প্রসারণের ফলে আম চাষ ব্যাপক হারে বেড়েছে।
আগাম জাত : চৈতী, গোলাপখাস, বৈশাখী, লক্ষনভোগ, সুরত বোম্বাই, গোবিন্দভোগ ও সকল প্রকার গুটি আম
মধ্যম জাত : গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলী, আ¤্রপালী, হাড়িভাঙ্গা, হিমসাগর, রাণীপছন্দ, কহিতুর, আনোয়ার আতা, বাউ-১৪, বারি-৮, রাংগুয়াই, ব্যানানা আম, নামডকমাই, মেহেদী ম্যাঙ্গো (কেনসিংটন প্রাইড), তাইওয়ান গ্রীন, থাই   কাঁচামিঠা, টিক্কা ফরাস, থাই রেড, ‘চ্যু’, ব্রæনাই কিং,   কোকোনাট ম্যাংঙ্গো. হুংচু, চুকানন, কিউজাই আম।
নাবি জাত : বান্দিগোড়, বারী আম-৪, শ্রাবন্তী, আশ্বিনা, ঝিনুক আশ্বিনা, যাদুভোগ, গৌড়মতি।
বারোমাসি জাত : অমৃত (কাঠিমন), বারি আম-১১, বরিশাল বারোমাসী ইত্যাদি।
(খ) কাঁঠাল : ফল কাঁঠালকে বলা হয় মাংসের বিকল্প। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশ থেকে সংগ্রহকৃত আঠা ও ভোতাবিহীন রঙ্গিন কোষ বিশিষ্ট মূল্যবান কাঁঠাল সংগ্রহ করে সম্প্রসারণ করা হয়েছে যা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
(গ) পেয়ারা : এক সময় শুধু দেশী পেয়ারার চাষ হতো। থ্যাইল্যান্ড থেকে উন্নতমানের বেশ কয়েকটি জাত সংগ্রহ করে এদেশে চাষ করা হচ্ছে যার ফলে সারা বছরব্যাপী পেয়ারা ফল প্রাপ্তির সম্ভব হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে পেয়ারার উৎপাদন ছিল ৩০২০৬৯ যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-১৯ সালে ৫,২১,৩৩৬ মেট্রিক টন, বৃদ্ধির হার ৭২%।
(ঘ) লিচু : লিচুর প্রাপ্তির সময়সীমা আরও ২মাস বাড়ানোর লক্ষ্যে দিনাজপুর অঞ্চল থেকে কাঁঠালী জাতের লিচুর কলম সংগ্রহ করে তা সম্প্রসারণের কাজ চলমান।
পাহাড়ী এলাকা আমাদের দেশের প্রায় এক দশমাংশ। পাহাড়ী এলাকায় অনেক অনাবাদি জমি রয়েছে। অত্র প্রকল্পের আওতায় ঐসব অঞ্চলে কাঁঠাল, আমের বিভিন্ন জাত, থাই পেয়ারা, লটকন, লেবু, কমলা, মাল্টা, রামবুটান, পার্সিমন ইত্যাদি ফলের বাগান স্থাপন করা হয়েছে। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের  লক্ষ্যে সহজে পঁচেনা এবং বেশি সময় ধরে বাজারজাত করা যায় এমন দেশি ও সম্ভাবনাময় বিদেশী ফলের সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মহোদয় সদয় নির্দেশনা দিয়েছেন। এ রকম ফল যেমন- কাজুবাদাম, নারিকেল, মাল্টা, বেল, কদবেল, সফেদা, ডালিম বারোমাসি আমড়া, দেশী কুল, তেঁতুল, প্যাসান ফল, জাম্বুরা, চালতা ইত্যাদি ফলের সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে মাতৃবাগান সৃজন এবং কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। য়

প্রকল্প পরিচালক, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প, ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা, মোবাইল : ০১৭১৬২৬০৬৯৫;  ইমেইল-: pdyrfp@gmail.com