Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

দৈনন্দিন পুষ্টিতে ফ্রেশকাট ফলের গুরুত্ব ও বিপণন

তৌহিদ মোঃ রাশেদ খান

ফল আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির  একটি অন্যতম উৎস। প্রতি বছর সঠিক সংরক্ষণের অভাবে আমাদের দেশে প্রচুর ফল নষ্ট হয়। ফল সংরক্ষণ করার অন্যতম প্রধান  উপায় হচ্ছে প্রক্রিয়াকরণ এবং প্যাকেজিং। প্রক্রিয়াকরণ এবং সঠিক প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে ফল সংরক্ষণ করে বছরব্যাপী ফলের পুষ্টিগুণ  গ্রহণ করা সম্ভব। এ ছাড়া প্রক্রিয়াকরণ এবং প্যাকেজিং পণ্যের গুণগত মান এবং মূল্য সংযোজন ঘটিয়ে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি করে। আর এভাবে  প্রক্রিয়াকরণ এবং প্যাকেজিং  করার সহজ নামই ফ্রেশকাট।
ফ্রেশকাট ফল কি : সতেজভাবে এবং স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমান বজায় রেখে তাজা ফলকে ব্যবহার উপযোগী টুকরা করে কোন প্যাকেট  বা মোড়কে  সুসজ্জিত অবস্থায় ভোক্তার নিকট  উপস্থাপনকেই বলা হয় ফ্রেশকাট।
ফ্রেশকাট ফলের প্রধান বৈশিষ্ট্য
ফলগুলো অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে; প্রয়োজন মতো খোসা ছাড়াতে হবে; সুবিধাজনক  আকারে কাটা ও বাছাই করতে হবে; নিশ্চিত  খাওয়ার উপযোগী হতে হবে; আধুনিক মোড়কীকরণকৃত হতে হবে।
বিভিন্ন ফলের পুষ্টি ও ঔষধিগুণ
ফলে রয়েছে  নানা রকম ভিটামিন ও মিনারেল। যা আমাদের পুষ্টি ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণ, মেধার বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, শারীরিক কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় কিছু ফল রাখা  দরকার। ফলের দেশ বাংলাদেশ। প্রতিটি দেশীয় ফলেরই রয়েছে অনেক পুষ্টিমান ও বহুমুখী ব্যবহার। পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল নিয়মিত  গ্রহণ না করে আমরা একদিকে যেমন শরীরের ক্ষতি করছি তেমনি ফল উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারছি না। অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে ফল উৎপাদন ও ভোগ ব্যবহারের চিত্র ছকে দেয়া হয়েছে।
ফ্রেশকাট ফলের প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধা :  ফ্রেশকাট  ফলের প্রয়োজনীয়তা হচ্ছে এটি কর্মব্যস্ত জীবনে কাটাকুটির ঝামেলা  ছাড়াই  সরাসরি  খাওয়ার উপযোগী,  সহজ সংরক্ষণ, অপচয় হ্রাস এবং পরিবেশবান্ধব। তাছাড়া এর   সুবিধাসমূহ  হলো এটি পরিমাণ মতো ক্রয় করা যায় ফলে অর্থ সাশ্রয় ও অপচয় কম হয়, গুণাগুণ অক্ষুণœ থাকে, রেডি টু ফুড, বাছাইকৃত ও                কাটাকুটির ঝামেলামুক্ত এবং সহজে বহনযোগ্য।
বর্তমানে বাংলাদেশে  ফ্রেশকাট ফল বিপণনের অবস্থা :  ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে স্বল্প পরিসরে ফ্রেশকাট ফল বিপণন শুরু হয়েছে। ৪-৫ বছর পূর্ব থেকে ঢাকায় অবস্থিত সুপার শপগুলো সীমিত আকারে ফ্রেশকাট ফল বিক্রি করলেও তেমনভাবে বাজার স¤প্রসারণ হয়নি। তবে প্রাচীনকাল থেকেই আমড়া, পেয়ারা, বড়ই, বাতাবি লেবু, কাঁচা আম, কালোজাম পথেঘাটে কেটে, সুস্বাদু উপায়ে মসলা যুক্ত করে বিক্রির প্রচলন আছে। কিন্তু এই খাবারের ফ্রেশনেস বা সতেজতা, স্বাস্থ্যগত দিক এবং সর্বোপরি পুষ্টিমান নিয়ে সচেতন মহলে মতভিন্নতা আছে। ফ্রেশকাট ফল বিপণন জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দীর্ঘদিন থেকে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তর জুলাই, ২০১৬ হতে  জুন, ২০১৯ পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদে একটি কর্মসূচি গ্রহণ  করে- যা ঢাকা, খুলনা, কুমিল্ল­া, রংপুর ও নরসিংদী জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। ফ্রেশকাট  ফল ও সবজি বিপণনে  কর্মসূচির  উল্লেখযোগ্য  কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
এলাকায় মার্কেটিং গ্রæপ গঠন করা। মার্কেট লিংকেজ স্থাপনের লক্ষ্যে সংশ্লি­ষ্ট কৃষক গ্রæপ সদস্য, সুপারশপ প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ইত্যাদিগণের সমন্বয়ে ফ্রেশকাট শাকসবজি ও ফলমূল প্রক্রিয়াকরণ ও প্যাকেটজাতকরণ কলাকৌশল ব্যবস্থাপনা, মূল্য সংযোজন কার্যক্রম, কৃষি ব্যবসা উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান। গ্রæপ ভুক্ত কৃষকদের সমন্বয়ে ফ্রেশকাট শাকসবজি ও ফলমূল প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং ও অন্যান্য সংশ্লি­ষ্ট সেবা প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম। ফ্রেশকাট শাকসবজি ও ফলমূলের ব্যবহার ও জনসচেনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস,            জনসমাগমপূর্ণ উল্লেখযোগ্য স্থানে স্টল স্থাপন করে খাদ্য প্রদর্শনীর আয়োজন।
কর্মসূচি এলাকার প্রতিটি গ্রæপ হতে স্থানীয় সদস্য, বাজারকারবারী ও ব্যবসায়ী সদস্যদের সমন্বয়ে মোটিভেশনাল ট্যুরের মাধ্যমে কৃষি পণ্যের বাজার স¤প্রসারণ ও উৎপাদিত পণ্য লাভজনক উপায়ে বিক্রয়ের কলাকৌশল সম্পর্কে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান অর্জনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
গঠিত গ্রæপ সদস্যগণকে ব্যবসায় সহায়তা প্রদানের জন্য বিশেষায়িত কুল ভ্যান, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রসেসিং যন্ত্রপাতি ও প্যাকেজিং  সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান।
ফ্রেশকাট ফল বিপণনের ভবিষ্যৎ :
বর্তমান কর্মব্যস্ত জীবনে ফ্রেশকাট ফল  একটি যুগোপযোগী ধারণা। প্রতিনিয়ত এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফ্রেশকাট ফল থাকার কারণেই আজ শহুরে জীবনে অভ্যস্ত ছোট পরিবারগুলো অপচয় রোধ ও সাশ্রয়ী অর্থে বড় বড় ফল যেমন-কাঁঠাল, তরমুজ, বাঙ্গি ইত্যাদি ফল প্রয়োজনমতো ক্রয় করতে পারছে। ফ্রেশকাট ফল ও জুসের স্বাস্থ্যসম্মত আকর্ষণীয় প্যাকেজিংয়ের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে ফ্রেশকাট ফলের বিপণন বৃদ্ধি ও জনপ্রিয় করার জন্য কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন, সেগুলো হচ্ছেÑ  ফ্রেশকাট পণ্য বিক্রি করার জন্য ব্যবহৃত প্যাকেজিং সামগ্রি সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী/ প্রক্রিয়াজাতকারীদের সরবরাহ করা। ফ্রেশকাট পণ্য বিক্রয়ে ব্যবহৃত প্যাকেজিংসামগ্রী তৈরির জন্য আলাদা শিল্প এলাকা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।   
ফ্রেশকাট প্রক্রিয়াজাতকারী/উদ্যোক্তাদের সাথে বিভিন্ন   সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে            অফিসসমূহের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফ্রেশকাট পণ্য  সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর  ক্যান্টিনে ফ্রেশকাট  ফলের  কর্নার  স্থাপন করা। য়
কর্মসূচি পরিচালক ফ্রেশকাট শাকসবজি ও ফলমূল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন কার্যক্রম সম্প্রসারণ কর্মসূচি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭৭০৫৫১২৩৭, ই-মেইল : rkshahu@gmail.com