Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল

বেঞ্চমার্ক ১৯৭১। চরম সংকটের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। জনসংখ্যা সাড়ে সাত কোটি। দেশে খাদ্য ঘাটতি চাহিদার প্রায় একতৃতীয়াংশ। প্রাণিজাত প্রোটিন দুধ মাংস ডিমের ঘাটতি আরো বেশি। আজ বাংলাদেশে জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি, আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ, তারপরও বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। একইভাবে দুধ ডিম উৎপাদনে সামান্য ঘাটতি থাকলেও মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করেছে। এই অভূতপূর্ব অর্জন সম্ভব হয়েছে কৃষি বিজ্ঞানীদের নব নব প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ দক্ষতা এবং কৃষকগণের প্রযুক্তি গ্রহণের এবং প্রয়োগের সক্ষমতার কারণে। ভিশন ২০২১  এ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ এ উন্নত দেশে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন মেধাবী ও স্বাস্থ্যবান জনগোষ্ঠী যার জন্য চাই পর্যাপ্ত দুধ মাংস ও ডিমের সরবরাহ।


দুধ উৎপাদন ২টি প্রধান নিয়ামকের উপর নির্ভরশীল। (১) উন্নত জাত (২) উন্নত যতœ। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ভালো জাতের বিকল্প নাই। আমাদের দেশি গাভী যেখানে দৈনিক গড়ে ২ লিটার দুধ দেয় উন্নত জাত তথা ফ্রিজিয়ান সংকর জাতের গাভী দৈনিক গড়ে ১০ লিটার দুধ দেয়। আবার দেশি বকনার বয়ঃসন্ধিকাল অর্থাৎ প্রজনন সক্ষমতা অর্জনের বয়স যেখানে ৩০ মাস সেখানে সংকর জাতের বকনার ১৮ মাস। সে হিসেবে গড়ে দেশি বকনা প্রথম বাছুর প্রসব করে প্রায় ৪০ মাস বয়সে, সংকর জাতের বকনা প্রথম বাছুর প্রসব করে ২৮ মাস বয়সে।


গাভীর জাত উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। উন্নত জাতের ষাঁড় বাছাই, সংগ্রহ, পালন, সিমেন সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকের দোরগোড়ায় প্রশিক্ষিত কর্মী দ্বারা গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করানোর মাধ্যমে গরুর জাত উন্নয়নে কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। আপনার গাভী গরম হলে দেশি বা স্থানীয় ষাঁড় দ্বারা পাল না দিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন সহকারী অথবা ইউনিয়ন কৃত্রিম প্রজনন প্রকর্মী (এআই টেকনিশিয়ান) সাহায্যে কৃত্রিম প্রজনন করিয়ে নিন। গাভীর একটু ভালো যতœ নিলে নয় মাস দশ দিন পর আপনি পেয়ে যাবেন উন্নত জাতের সংকর বাছুর। প্রতিটি বকনা বাছুর ২০ লিটার দুধ দেবার সক্ষমতা নিয়ে জন্ম নিবে। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে কীভাবে উন্নত জাত ও উৎপাদন বৃদ্ধি হয় নিচের টেবিলে দেখানো হলো।


উপরোক্ত সারণী থেকে প্রতীয়মান হয় যে ১ম প্রজন্মের ৫০% সংকর জাতের বকনা তার মায়ের চেয়ে ১০.৫গুন বেশি দুধ দেয়। ২য় প্রজন্মে ৭৫% সংকর জাতের বকনা পাওয়া গেলেও দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায় মাত্র ১.৪৫ গুন। অর্থাৎ ১ম প্রজন্মের জাত বৃদ্ধি ও দুধ বৃদ্ধির অনুপাত পরবর্তী প্রজন্ম থেকে অনেক বেশি। আমরা জানি জাত বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিচর্যা ব্যয় ও শ্রম বৃদ্ধি পায়। ২য় প্রজন্মে গাভীর পরিচর্যার শ্রম ও ব্যয় ১ম প্রজন্মের তুলনায় যে পরিমান বেশি সে তুলনায় দুধ উৎপাদন বেশি নয়। তাই আমাদের গ্রামীন পরিবেশে পারিবারিক এবং ছোট খামারে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশের ফ্রিজিয়ান সংকর জাতের গাভী পালন করা সবচেয়ে লাভজনক।
(উন্নত যত্ন সম্পর্কে আগামী সংখ্যায় প্রকাশ করা হবে)।

 

ডা. শাহ মোঃ বায়েজীদ রব্বানী বাহালুল

সহকারী পরিচালক, এনইটিপি প্রকল্প-২, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ঢাকা, মোবা : ০১৮১৬০২৪১১৫ ইমেইল : bahalulvet@gmail com.