Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

আলুর তৈরি রকমারি খাবার

একই পণ্য থেকে ভিন্ন স্বাদ ও গন্ধ পেতে কার না ভালো লাগে! আগেকার দিনে পণ্যের বহু ব্যবহারের কৌশল জানা ছিল না। পুষ্টি এবং মুখরোচক খাবারের কথা ভেবে আজকাল বিলাসী গৃহিণীদের মধ্যে এ নিয়ে প্রতিযোগিতার অন্ত নেই। এর পেছনে মিডিয়া প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোর অবদান সবচেয়ে বেশি। এখন শহরের পাশাপাশি গ্রামেও তা ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে যে পণ্যগুলোর নাম উচ্চারিত হয়; এর মধ্যে আলু শীর্ষস্থানে। কেউ কেউ মনে করেন, আলুর পুষ্টিমান কম। আসলে এ ধারণা ভুল। কারণ পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, আলুতে ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি রয়েছে। অথচ চালে মোটেও নেই। এছাড়া ভিটামিন বি, শর্করা, আমিষ, জিংক, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং আয়রন তো আছেই। সে সাথে আছে মূল্যবান উপাদান ওমেগা-৩ এবং অ্যামিনো এসিড। অপরদিকে চর্বির পরিমাণ চালের তুলনায় অনেক কম এবং গমের পাঁচ ভাগে এক ভাগ। কিডনি রোগীর জন্য এর প্রোটিন বেশ উপকারী। আলু স্কার্ভি ও রিউমেটিক প্রতিরোধী। ডায়রিয়ার ক্ষয় পূরণে কাজ করে। পাশাপাশি শরীরের ওজন বাড়াতে সহায়তা করে। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক চাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। আলু একমাত্র সবজি, যা সব ধরনের মাছ ও মাংস রান্নার সাথে তরকারি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাই হাতে কাছে পাওয়া এ সবজির তৈরি খাবারগুলোর পরিচয় জেনে নেয়া দরকার।  


আলুর পাকোরা উপকরণ : আলু ১টি,  চালের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ,  বেসন ১ কাপ,  তেল  ৪ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ,  ধনেপাতার কুচি ২ চা চামচ, পানি আড়াই কাপ আর লবঙ্গ ও লবণ পরিমাণমতো।


প্রস্তুত প্রণালি : প্রথমেই খোসা ছাড়িয়ে আলু ছোট ফালি করে কেটে নিতে হয়। এরপর একটি পাত্রে চালের গুঁড়া এবং বেসন রেখে এর সাথে জিরা গুঁড়া ধনেপাতার কুচি, লবঙ্গ ও লবণ ভালোভাবে মিশাতে হবে। এবার ফ্রাইপ্যানে তেল দিয়ে চুলায় গরম করে তা মিশ্রিত উপকরণগুলোর সাথে মিশিয়ে অল্প পানি দিয়ে ঘনমিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এরপর কেটে রাখা আলুর একটি ফালি মিশ্রণে ডুবিয়ে ডুবোতেলে উল্টেপাল্টে ভাজতে হয়। ভাজার কাজ ততোক্ষণ পর্যন্ত করতে হবে যখন বাদামি রঙ ধারণ হবে। এভাবেই হয়ে যাবে আলু পাকোরা।


আলুর চিপস উপকরণ : আলু ৩০০ গ্রাম এবং তেল  ৩০০ মিলিলিটার।


প্রস্তুত প্রণালি : আলু পরিষ্কার করে ধুয়ে পাতলা করে কেটে কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। পরে চালুনিতে রেখে পানি ঝরিয়ে ডুবোতেলে বাদামি রঙ করে ভাজতে হবে। ভাজা শেষ হলে একটি পাত্রে রেখে পরিমাণমতো লবণ ছিটিয়ে পরিবেশন করা যাবে।


আলুর কাটলেট উপকরণ : আলু ৫০০ গ্রাম, ডিম ১টি, পাউরুটির স্লাইস ১টি, পাউরুটির গুঁড়া ১ কাপ, পেঁয়াজ বাটা ১ কাপ, ময়দা ১ টেবিল চামচ,  কাঁচামরিচ ১টি এবং ধনেপাতা, তেল ও লবণ পরিমাণমতো।


প্রস্তুত প্রণালি :  আলুগুলো সিদ্ধ করার পর খোসা ছাড়িয়ে  ভালোভাবে পিষে নিতে হয়। এবার একটি পাত্রে  ময়দা,  পেঁয়াজ, মরিচ কুচি, ধনেপাতা কুচি এবং লবণ দিয়ে আলু মাখিয়ে নিতে হবে। এরপর কাটলেটের পিস তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি ডিম বিট করে নিতে হবে। কাটলেটের পিস ডিমে ডুবিয়ে এবং পাউরুটির গুঁড়ায় মেখে ফ্রাইপ্যানে গরম তেলে ভাজতে হবে। এরপর পরিবেশন।


আলুর লুচি উপকরণ : আলু ৬ টি, গমের আটা ২ কাপ, গরম মশলা ২ চা চামচ, এবং লবঙ্গ গুঁড়া, তেল ও লবণ পরিমাণমতো।


প্রস্তুত প্রণালি :  আলু সিদ্ধ করে আটার সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হয়। এরপর লুচির মতো তৈরি করে সুজির মধ্যে গড়াগড়ি দিয়ে ডুবোতেলে ভাজতে হয়। এভাবেই হয়ে যাবে আলুর লুচি।
 

আলুর সিঙ্গাড়া উপকরণ : আলু ২৫০ গ্রাম, মাংসের কিমা ১৫০ গ্রাম, আদা ২টি (ছোট টুকরো), পাঁচফোড়ন ১ গ্রাম, পেঁয়াজ ৩০ গ্রাম, মরিচ ৩টি, ময়দা ৬০০ গ্রাম, লবণ ১০ গ্রাম, তেল ৫০ মিলিলিটার, পানি ৭০ মিলিলিটার, সেইসাথে কয়েকটি তেজপাতা।


প্রস্তুত প্রণালি : আলু ছোট করে চারকোনা আকারে কেটে নিতে হয়। এরপর পেঁয়াজ কুচি, আদা, মাংসের কিমা, লবণ ও তেজপাতা সিদ্ধ করে ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে পাঁচফোড়ন দিয়ে আলুসহ ভালোভাবে ভাজতে হবে। আলু পুরোপুরি সিদ্ধ না হলে পানি দিয়ে আরো কিছুক্ষণ ভেজে নিতে হবে। ময়দার সাথে লবণ ও তেল মেখে আধাঘণ্টা রাখতে হবে। পরে ময়দার কাই ছোট টুকরো করে লুচির আকারে বানিয়ে ছুরি দিয়ে দুই ভাগ করতে হয়। প্রতি ভাগ লুচিপানের খিলির মতো ভাঁজ করে ভেতরে আলু ও মাংসের তরকারি ভরে নিয়ে খোলামুখে পানি লাগিয়ে মুখ বন্ধ করতে হবে। এরপর ডুবোতেলে ভেজে নিলেই মুখরোচক সিঙ্গাড়ার স্বাদ নেয়া  যাবে।
আলুর পুরি উপকরণ : আলু ৩০০ গ্রাম, ময়দা ৩০০ গ্রাম, ঘি অথবা ডালডা কিংবা সয়াবিন তেল ১৫ মিলিলিটার, লবণ ৩ গ্রাম।


প্রস্তুত প্রণালি : প্রথমে আলু সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে ভালোভাবে চটকিয়ে নিতে হয়। এরপর ময়দা, লবণ ও সয়াবিন তেল একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এ মিশ্রণের কিছু অংশ নিয়ে বলের মতো করে প্রতিটি কেন্দ্রে চটকানো আলু ঢুকিয়ে দিতে হবে। পরে বলগুলোকে রুটির মতো বেলে চ্যাপ্টা গোলাকার পুরি তৈরি করে ডুবোতেলে ভাজতে হবে। এরপর অতিরিক্ত তেল ঝরিয়ে নিয়ে পরিবেশন করা যাবে।


আলুর চপ উপকরণ : আলু ৬০০ গ্রাম, টোস্টের গুঁড়া ৩০ গ্রাম, লবণ ৫ গ্রাম, আদা ৫ গ্রাম, রসুন ১০ গ্রাম, কাঁচামরিচ ২০ গ্রাম, গোলমরিচের গুঁড়া ৫ গ্রাম, মাংসের কিমা ১০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ৬০ গ্রাম, পুঁদিনাপাতা ২ গ্রাম, ফেটানো ডিম ১০০ গ্রাম, লবণ ৫ গ্রাম এবং পরিমাণমতো তেল।


প্রস্তুত প্রণালি : আলু সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে ভালোভাবে চটকে নিতে হবে। মাংসের কিমার সাথে এক কাপ পানি ও তেজপাতা দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। ফ্রাইপ্যানে সামান্য তেল দিয়ে পেঁয়াজ ও মরিচের কুচি ভেজে, এর সাথে সিদ্ধ কিমা দিয়ে দিতে হয়। এরপর আদা বাটা ও পুঁদিনাপাতা দিয়ে কিমাকে শুকনো করে ভাজতে হবে। পরে টোস্টের গুঁড়া, ডিম ও লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হয়। চটকানো সিদ্ধআলু চপের আকারে তৈরি করে, এর ভেতরে কিমা ঢুকিয়ে দিতে হবে। পরে ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে টোস্টের গুঁড়াতে গড়াগড়ি দিয়ে ডুবোতেলে এমনভাবে ভাজতে হবে যেন বাদামি রঙ ধারণ করে। এরপর চুলা থেকে উঠিয়ে হালকা গরম অবস্থায় খেলে বেশ লাগবে।
 

আলুর চটপটি উপকরণ : আলু ৬০০ গ্রাম, মটরশুঁটি ৬০০ গ্রাম, তেঁতুল ১০০ গ্রাম, ডিম ২টি, শসা ১০০ গ্রাম, খাবার সোডা ১ চা চামচ আর জিরা, শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ এবং ধনেপাতা পরিমাণমতো।


প্রস্তুত প্রণালি : মটরশুঁটি ধুয়ে ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। ভেজানো মটরশুঁটি ভালোকরে সোডার পানিতে সিদ্ধ করে নিতে হবে। আলু ও ডিম সিদ্ধ করে আলাদাভাবে ছোট করে কেটে নিতে হয়।  জিরা ও মরিচ ভেজে গুঁড়া করে নেয়ার পাশাপাশি পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা  কুুচি করার কাজ সেরে ফেরতে হবে। এছাড়া তেঁতুল ধুয়ে, পরে পানিতে ভিজিয়ে রস বের করে নিতে হবে। এবার উপকরণগুলো একসাথে মিশিয়ে চুলার আগুনে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পরেই  হয়ে যাবে চটপটি। এবার তেঁতুলের রস, কাঁচামরিচ, আলুসহ অন্য মসলা দিয়ে রুচিমতো নিজে খাওয়া এবং অপরকে পরিবেশন করা।


আলুর মোগলাইপরোটা উপকরণ : আলু ৫০০ গ্রাম, আটা ৫০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল ২৫০ মিলিলিটার, ডিম ৩টি আর পেঁয়াজ, লবণ, কাঁচামরিচ এবং ধনেপাতা পরিমাণমতো।


প্রস্তুত প্রণালি : আলু সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে, এরপর চটকিয়ে নিতে হয়। চটকানো আলুর সাথে আটা ও লবণ ভালোভাবে মিশাতে হবে। দরকার হলে পানি ব্যবহার করা প্রয়োজন। এবার ডিম, পেঁয়াজ কুচি ও ধনেপাতা দিয়ে মামলেট বানিয়ে তা ভেঙে ঝুরঝুরে করে, সেইসাথে চটকানো আলু ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। এ মিশ্রণ থেকে পরিমাণমতো নিয়ে রুটি তৈরি করে ফ্রাইপ্যানে গরম তেলে ভাজতে হবে। তাহলেই হয়ে যাবে আলুর মোগলাই পরোটা।
আলুর সবজিখিচুরি উপকরণ : আলু ৫০০ গ্রাম, চাল ১০০ গ্রাম, ডাল ১০০ গ্রাম, গাজর অথবা মিষ্টিকুমড়া ৫০০ গ্রাম, আদাবাটা ১ চা চামচ, ডিম ১টি, তেল ৩০ মিলিলিটার, লবণ ও হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো।


প্রস্তুত প্রণালি : আলু এবং গাজর ধুয়ে কুচি করে কেটে নিতে হয়। এর সাথে চাল ভালোভাবে ধুয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। চুলায় হাঁড়ি বসিয়ে গরম তেলে পেঁয়াজ কুচি ও মরিচের ফালি ভেজে নেয়ার কাজ সেরে ফেলতে হবে।  পেঁয়াজ ও মরিচ বাদামি রঙ ধারণ করলে আলু, চাল, ডাল এবং গাজর সবগুলো তেলের মধ্যে ঢেলে, সেইসাথে আদা, হলুদ, লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়তে হবে। এতে পরিমাণমতো গরম পানি দিতে হয়, যেন সবটুকু সিদ্ধ হয়ে যায়। সিদ্ধ হলে ডিম ভেঙে ফেটে দিতে হবে। কিছুক্ষণ রেখে দিলেই হয়ে যাবে আলুর সবজি খিচুরি।


এছাড়া আলুভাজি, আলুর দম, আলুর ঝোল, ভর্তা, চাটনি, লাবড়াও নিরামিষ সবার পরিচিত। এর পাশাপাশি আধুনিক রেসিপিও আছে; যেমনÑ আলুর পোস্ত, আলুর চাট, কাঠি কাবাব, দোপেঁয়াজো, টোস্ট, বার্গার, টিক্কি এবং দোলমা। আবার মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন- আলুর পায়েশ, আলুর দই, বুন্দিয়া, রসমালাই, জিলাপি, বরফি, হালুয়া, কালোজাম, পিঠা, মোরব্বা, জর্দাসহ আরো অনেক।


এক খাবার বার বার খেতে মন চায় না তবে স্বাদ পরিবর্তন করে খেলে ভালো লাগে। আর তা যদি হয় কম খরচের তাহলে তো কথাই নেই। তাই আসুন, আলুর তৈরি এসব রকমারি খাবার খেয়ে দেহে পুষ্টি বাড়াই। সে সাথে ভাতের  চাপ কমাই।

নাহিদ বিন রফিক*

*টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বরিশাল; মোবাইল নম্বর : ০১৭১৫৪৫২০২৬; ই-মেইল :tpnahid@gmail.com