বিচি কলা (Musa acuminata), Musaceae পরিবারভুক্ত একটি ফল উৎপত্তি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় (নিউগিনি, আগ ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন)। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৮০০০ বছর পূর্ব থেকে এটি মানুষ চাষ করে আসছে। বসতবাড়িতে চাষ করা হয় এমন গাছপালার মধ্যে এটি প্রথম দিকের উদাহরণ। কলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ফল, যা সারা বছর পাওয়া যায়। স্বল্পমেয়াদি হয় অঞ্চলের আবহাওয়া উপযোগী সহজে চাষ করা যায় বিধায় বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় কলার চাষ হয়। পাকা কলা অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন, সুস্বাদু ও সহজপ্রাপ্য বলে সবার কাছে সমাদৃত। কলা একটি ক্যালরি সমৃদ্ধ ফল। বাংলাদেশে অনেক জাতের কলার চাষ হয়। এর মধ্যে অমৃতসাগর, সবরি, চম্পা, কবরী, মেহেরসাগর, বারি কলা-১, বারি কলা-৩, বারি কলা-৪ জাতগুলো বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। এছাড়া বিভিন্ন জাতের আনাজি বা কাঁচাকলা ও বিচিকলা সীমিত আকারে উৎপাদিত হয়ে থাকে।
বিচিকলা ব্যতিক্রমধর্মী এক ধরনের কলা, সাধারণত কলা বীজবিহীন (parthenocarpic) ফল হলেও এতে প্রচুর বীজ থাকে। বিচি কলার গাছ বেশ উঁচু, লম্বা ও অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু হয়ে থাকে। ফলে ঝড়, তুফান কিংবা জলাবদ্ধতা তেমন ক্ষতি করতে পারে না। বিভিন্ন ধরনের কলা রোপণের পর থেকে ১০-১২ মাসে ফল আহরণ করা গেলেও, বিচি কলা পরিপক্ব হতে আঠার মাস সময় লাগে। বিশেষ কোনো যত্ন ছাড়াই বিচিকলা ভালোভাবে জন্মানো যায়। ফলের ওজন ১৫০-২০০ গ্রাম । পাকা ফল হলুদ রঙের এবং মিষ্টি, চামড়া তুলনামূলকভাবে পুরু, সুমিষ্ট এবং তাপমাত্রায় অধিক সময় সংরক্ষণ করা যায়। দেশের গ্রামাঞ্চলে সর্বসাধারণের কাছে বিচিকলা অত্যন্ত জনপ্রিয়।
উদ্ভিদতত্ত্ব : এটি চিরসবুজ ও বহুবর্ষজীবী এর ভুয়া/নকল কাণ্ড (Pseudostem) কন্দ (corm) থেকে উৎপন্ন শক্তভাবে জড়ানো Leaf sheath দ্বারা তৈরি। পুষ্পমঞ্জরি ভুয়া কাণ্ড (trunk) থেকে সমান্তরাল বা তেড়ছাভাবে (oblique) বের হয়ে আসে। ফুলগুলো সাদা থেকে হলুদাভ সাদা এবং মাটি থেকে ওপরের দিকে জন্মে (negatively geotropic)। একটি পুষ্পমঞ্জরিতে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল থাকে। স্ত্রী ফুল পুষ্পমঞ্জরির গোড়ার দিকে ও পুরুষ ফুল অগ্রভাবে থাকে। ফলকে বেরি বলা হয়। ফলের আকার এর ভেতরের বীজের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে। একটি ফলে ১৫ থেকে ৬২টি বীজ থাকতে পারে। একটি কাঁদিতে (bunch) ৬১ থেকে ১৬২ টি ফল থাকতে পারে। প্রতিটি বীজ তার ৪ গুণ আকারের শর্করাযুক্ত পাল্প তৈরি করে।
কলার পুষ্টিমান : পাকা বিচি কলায় প্রচুর পরিমাণে শর্করা বিদ্যমান, যা শক্তির অন্যতম উৎস। বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন এ, বি৬, সি এবং ডি এর একটি অসাধারণ উৎস। এটি পটাশিয়ামের একটি অনন্য উৎস, যেখানে একজন মানুষের দৈনিক প্রয়োজনের ২৩% পটাশিয়াম একটি কলা থেকে পাওয়া যায়। পটাশিয়াম পেশি নিয়ন্ত্রণ করে। কলার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়। শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় বি৬ এর ৪১% ই কলায় থাকে। কলায় প্রচুর লৌহ থাকে।
ঔষধিগুণ : বিচি কলার অনেক ঔষধি (medical benefits) গুণ আছে। কলায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস থাকে, যা শরীরে স্বাস্থ্যকর টিস্যু গঠনে কাজ করে। কলা গাছের সব অংশের ঔষধি ব্যবহার রয়েছে। ফুল ব্রংকাইটিস, আমাশয় এবং আলসার, রন্ধনকৃত ফুল ডায়বেটিস গাছের কষযুক্ত (astringent) রস হিস্টেরিয়া, কুষ্ঠ, জ্বর, রক্তক্ষরণ বন্ধ, স্থায়ী আমাশয় এবং ডায়রিয়া গাছের শিকড় পরিপাকজনিত সমস্যা এবং আমাশয়ে ব্যবহৃত হয়। কলার বীজের মিউসিলেজ (mucilage) ডায়রিয়া হলে ব্যবহৃত হয়। সম্পূর্ণ পাকা কলার খোসা ও পাল্পে ছত্রাক বিরোধী ও অ্যান্টিবায়োটিক গুণাবলি পাওয়া যায়। সবুজ কলার খোসা ও পাল্পের দ্বারা তৈরি ছত্রাকনাশক টমেটোর ছত্রাকজনিত রোগ দমনে ব্যবহৃত হয়। Naorepinephrine, dopamine এবং Serotonin পাকা কলার পাল্প ও খোসায় থাকে। প্রথম দুটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। Serotonin গ্যাস্ট্রিকজনিত নিঃসরণ (serotonin) রোধ করে এবং অন্ত্রীয় মসৃণ মাংসপেশীকে উদ্দীপিত করে। কলা অন্ত্রীয় সমস্যা বিশেষত আলসার নিরাময়ের জন্য কাজ করে। কলা গ্যাস্ট্রিকজনিত অম্লত্ব (acidity) প্রশমন করে। কলা কোষ্টকাঠিন্য (constipation) দূরীকরণে সাহায্য করে। কলার ভুয়া কাণ্ডের ভেতরের কোনো অংশ থেকে প্রস্তুত রস কিডনি ও মূত্রাশয়ের পাথর দূরীকরণে উপকারী। কলা মানুষের কৃমিজনিত সমস্যা দূরীকরণে ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, শুধুমাত্র ২টি কলা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে ৯০ মিনিটের কাজ করার শক্তি পাওয়া যায়। কলায় tryptophan নামক এক প্রকার প্রোটিন থাকে, যা শরীরে serotonin এ রূপান্তরিত হয় এবং অবসাদ মুক্ত রাখে। কলা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
স্থানীয় জাত বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়/অঞ্চলে এ কলা এঁটে কলা, বাইশ্যাকলা, আইট্টা কলা, বিচি কলা নামে পরিচিত। কিছু স্থানীয় জাত হলো- বতুর আইটা (Batur Aita) : ভুয়া কাণ্ডের উচ্চতা ৩৩৫-৪২৭ সেন্টিমিটার। মাঝারি আকারের এঁটে কলার অগ্রভাগ একটু ভোঁতা প্রকৃতির। প্রতি কাঁদিতে ৭-১৪টি ফানা এবং ৮০-১৫০ টি কলা থাকে। প্রতি ফানায় ১৬-১৮টি কলা হয়। কাঁদির ওজন ১৪-২৫ কেজি। কলার সংখ্যা ১০০-২০০। প্রতিটি কলা ১৩-১৮ সেমি. দীর্ঘ। কলা খেতে খুব মিষ্টি। গোমা (Goma) : ভুয়া কাণ্ড ২৭৪-৩৩৫ সেন্টিমিটার উঁচু। এটি কিছুটা গোলাকার এঁটে কলা। কলার দৈর্ঘ্য ৯-১১ সেন্টিমিটার। কাঁদিতে ৪-৬ টি বা ততোধিক ফানা এবং ৬০-৭৫টি কলা ধরে। ফানায় কলার সংখ্যা ১১-২৫। কাঁদির ওজন ৯-১৩ কেজি। কলায় বীজের সংখ্যা ৩৫-৬০টি। জপ-কদলি (Japkadali) : গাছ প্রায় ২৭৪-৩৩৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়। এটি দেখতে এঁটে কলার মতো। তবে কখনও কখনও আনাজি কলারূপেও ব্যবহৃত হয়। এ কলাটি প্রায় বীজশূন্য (২-৪টি বীজ) বলে এটি বেশ জনপ্রিয়। দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার। কাঁদিতে ৫-৮টি ফানা এবং ৬০-১৫০টি কলা হতে পারে। কাঁদির ওজন ১২-২৪ কেজি। নিয়াইল্লা (Nialya) : এটা এত উন্নতমানের বিচি কলা নয়। এটি কদাচিৎ দেখা যায়। কলা ১০-১৩ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এবং কিছুটা গোলাকার ভাবাপন্ন। বীজ ৬০-১০০টি। শাংগি আইটা (Shangi Aita) : গাছের উচ্চতা ৩০৫- ৪২৭ সেন্টিমিটার। এ বৃহদাকারের এঁটে কলাটি ময়মনসিংহের স্থান বিশেষে ভিম আইটা ও উত্তর শ্রীহট্টের খাসিয়ারা কর্তৃক কাইতশিং নামে অভিহিত হয়। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। বেশ মিষ্টি। দৈর্ঘ্যে ১৫-১৮ সেন্টিমিটার ও বেশ চওড়া হয়। কাঁদিতে ৭-১১ ফানা এবং কাঁদির ওজন ১৭-৩০ কেজি হয়। বীজের সংখ্যা ১৫০-২৩০ এর মতো।
বংশবিস্তার : অন্যান্য জাতের কলার মতো বিচিকলা গাছের রাইজম বা গোড়া থেকে উৎপন্ন অসি চারা বা সাকার বা তেউরের সাহায্যে বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। অসি তেউর (sword sculler) মূল কন্দ থেকে বের হয়। গোড়া থেকে উপরের দিকে সরু দেখতে অনেকটা তলোয়ারের মতো। অসি তেউড়ের পাতা সরু সুচালো গুড়ি বড় এবং চারা শক্তিশালী। বিচিকলা বীজ বা সাকার দ্বারা বংশবিস্তার করা যায়। নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য এখনও বীজ গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। পরিপক্ব বীজ বপনের ২-৩ সপ্তাহ পর অংকুরোদগম হয়। বীজ কয়েক মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত সতেজ (viable) অর্থাৎ সংরক্ষণ করা যায়। অনেক বন্য প্রজাতি (frugivorous বাদুর, পাখি, কাঠবিড়ালি, ইদুঁর, বানর এ ফল খায় এবং বীজকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে ছড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কলা থেকে উৎপন্ন গাছ (plantlets) বীজ থেকে উৎপন্ন গাছের তুলনায় বেশি বাঁচে।
রোপণ : বছরের যে কোনো সময়েই বিচি কলার চারা রোপণ করা যায়। তবে কলা রোপণের উত্তম সময়, আশ্বিন-কার্তিক (মধ্য সেপ্টেম্বর-মধ্য নভেম্বর), মাঘ-ফাল্গুন (মধ্য জানুয়ারি-মধ্য মার্চ) এবং চৈত্র-বৈশাখ (মধ্য মার্চ- মধ্য মে)। অতিমাত্রায় বর্ষা ও অতিরিক্ত শীতের সময় চারা না লাগানোই উত্তম। বিশেষ কোনো যত্ন ছাড়াই বিচি কলা ভালোভাবে জন্মানো যায়। তবে ভালো ফলন পেতে হলে বা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করতে হলে, জমি ভালোভাবে চাষ করে ২.০ মিটার দূরে ও ৬০x৬০x৬০ সেন্টিমিটার আকারের গর্ত খনন করতে হবে। প্রতি গর্তে সম্পূর্ণ গোবর/আবর্জনা পচাসার, টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট এবং বরিক এসিড সার গর্ত তৈরির সময় গর্তে দিয়ে ১৫-২০ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে ।
সার প্রয়োগ : গাছপ্রতি আর হেক্টরপ্রতি সার লাগবে ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম ও ১২৫০ কেজি, টিএসপি ৪ গ্রাম ও ১ হাজার কেজি, এমওপি ৬ গ্রাম ও ১৫ কেজি, জিপসাম ২ গ্রাম ও ৫ কেজি, দস্তা ৪. গ্রাম ও ১১ কেজি এবং বরিক এসিড ২ গ্রাম ও ৫ কেজি। পরিমাণ মতো গোবরের সাথে সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট এবং বরিক এসিড সার গর্ত তৈরির সময় গর্তে দিতে হয়। ইউরিয়া ও এমওপি চারা রোপণের ২ মাস পর থেকে ২ মাস পরপর ৩ বারে এবং ফুল আসার পর আরও একবার গাছের চারদিকে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। জমির আর্দ্রতা কম থাকলে সার দেয়ার পর হালকা পানি সেচ দিতে হবে।
পানি সেচ ও নিকাশ : শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন অন্তর অন্তর সেচ দিতে হবে। বর্ষার সময় বাগানে যাতে পানি জমতে না পারে, তার জন্য নালা করে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সাকার বা চারা ছাঁটাই : চারা রোপণের পর থেকে কলার কাদি বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গাছের গোড়ায় কোনো চারা রাখা উচিত নয়। কাদি সম্পূর্ণ বের হওয়ার পর গাছপ্রতি একটি করে চারা রেখে বাকি চারাগুলো কাঁচি বা হাঁসুয়া দিয়ে মাটির সমতলে কেটে ফেলতে হবে। সময়মতো আগাছা দমন, অপ্রয়োজনীয় পাতা পরিষ্কার, খুঁটি ও গোড়ায় মাটি দেয়া, মোচা অপসারণ, কাঁদি ঢেকে দেয়া ইত্যাদি পরিচর্যা করতে হবে।
কলা সংগ্রহ ও ফলন : রোপণের ১৮-২০ মাসের মধ্যেই সাধারণত সব জাতের বীচি কলা পরিপক্ব হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করলে কলার গাঁয়ের শিরাগুলো তিন-চতুর্থাংশ পুরো হলেই কাটতে হয়। তাছাড়াও কলার অগ্রভাগের পুষ্পাংশ শুকিয়ে গেলেই বুঝতে হবে কলা পুষ্ট হয়েছে। সাধারণত মোচা আসার পর ফল পুষ্ট হতে ৩-৪ মাস সময় লাগে। কলা কাটার পর কাঁদি শক্ত জায়গায় বা মাটিতে রাখলে কলার গায়ে কালো দাগ পড়ে এবং কলা পাকার সময় দাগওয়ালা অংশ তাড়াতাড়ি পচে যায়। উপযুক্ত পরিচর্যা করলে প্রতি কাঁদি কলার ওজন ১৭-২০ কেজি ও ১৪০-১৬০টি কলা এবং প্রতি হেক্টরে গড়ে ২৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।
বালাই ব্যবস্থাপনা : সচরাচর এ কলা রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধী।
কলার পাতা ও ফলের বিটল পোকার পূর্ণাঙ্গ বিটল কচি পাতা ও কচি কলার সবুজ অংশ চেঁচে খেয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ সৃষ্টি করে। কলা বড় হওয়ার সাথে সাথে দাগগুলো আকারে বড় হয় এবং কালচে বাদামি রঙ ধারণ করে। দাগযুক্ত কলা বসন্ত দাগের মত দেখায়।
প্রতিকার : ছিদ্রযুক্ত পলিথিন দিয়ে কলার কাঁদি ব্যাগিং করে এ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়। কলা বের হওয়ার আগেই কাঁদির চেয়ে বড় আকারে দুইমুখ খোলা বিশিষ্ট ছিদ্রযুক্ত পলিথিন ব্যাগের এক মুখ দিয়ে মোচাকে আবৃত করে কাঁদির সাথে আলতোভাবে বেঁধে দিতে হয়
পানামা রোগে প্রথমে আক্রান্ত গাছের নিচের পাতাগুলোর কিনারা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। তারপর আস্তে আস্তে এটি মধ্যশিরার দিকে অগ্রসর হয় এবং গাঢ় বাদামি রঙ ধারণ করে। পরে ওপরের পাতাগুলো হলুদ হতে শুরু করে। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত পত্রফলক পত্রবৃন্ত ভেঙে ঝুলে পড়ে। ফলে ভুয়াকাণ্ডটি শুধু স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক সময় ভুয়াকাণ্ডের গোড়া লম্বালম্বিভাবে ফেটে যায়। ভুয়াকাণ্ড এবং শিকড় আড়াআড়িভাবে কাটলে খাদ্য সঞ্চালন নালীর মধ্যে লালচে-কালো রঙ এর দাগ দেখা যায়। রোগমুক্ত চারা রোপণ; রোগাক্রান্ত গাছ শিকড় ও চারাসহ তুলে জমি থেকে সরিয়ে ফেলা; রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করা; আক্রান্ত জমিতে ৩-৪ বছর কলার চাষ করা যাবে না। জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করা।
কলা সংগ্রহ : সাধারণত : মোচা আসার পর ফল পুষ্ট হতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। কলার গায়ের শিরাগুলো তিন চতুর্থাংশ পুরু হলেই কলা সংগ্রহ করতে হবে। কলার অগ্রভাগের পুষ্পাংশ শুকিয়ে গেলেই বুঝা যায় কলা পুষ্ট হয়েছে। সংগ্রহের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যেন কলার ছড়া বা কাঁদি মাটিতে পড়ে না যায়। এতে আঘাতজনিত কারণে কলায় পচন ধরতে পারে। কাঁদি কাটার পর ছায়াযুক্ত স্থানে কলার পাতা বিছিয়ে উল্টাভাবে রাখতে হবে।
সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা : ফানা কলার কাদি থেকে আলাদা করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যাতে কাঁচি/ছুরির অগ্রভাগ দিয়ে কলার গায়ে কোনো আঘাত না লাগে। কাঁদি থেকে কলা আলাদা করার সময় কষ বের হয় এ কষ অপসারণ করার জন্য মাটিতে কলা পাতা বিছিয়ে তার ওপর কলার ফানাগুলো রাখতে হবে যাতে এক ফানার কষ অন্য ফানার কলায় না লাগে। কলার ফানার ধূলিবালু ও কষ পরিস্কার করার জন্য বড় পাত্রে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। ছায়াযুক্ত স্থানে বাতাসে/ফ্যানের বাতাসে কলার ফানা শুকিয়ে নিতে হবে। কলা পরিবহনের সময় প্লাস্টিক ক্রেটে কলার ফানাগুলো স্তরে স্তরে সাজাতে হবে। দুইটি স্তরের মাঝখানে খবরের কাগজ অথবা সাদা কাগজ ব্যবহার করলে কলার আঘাতজনিত ক্ষতি অনেকাংশে কমে যাবে। এতে কলার গুণগতমান ঠিক থাকবে ও বেশি মূল্যে বাজারজাত করা যাবে।
ড. বাবুল চন্দ্র সরকার * ড. মনোরঞ্জন ধর**
ড. মদন গোপাল সাহা***
* প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ** মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ফল বিভাগ, ***উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বারি,গাজীপুর