Wellcome to National Portal
  • 2025-03-12-16-25-15c95fd3ae0d740427f19c779208b30b
  • 2025-03-12-16-16-b41688fcb8ac3df55c13eb5c82b62083
  • 2025-01-05-17-19-232bbb16275acb0da535d705c9b6f6d8
  • 2024-12-15-10-13-de23faa6fead7deef93b5973ae193323
  • 2023-12-28-06-44-fad1b3dffb04c90c1f14863ef06978d5
  • ICT Ebook
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কলা একটি উৎকৃষ্ট ফল

Jaistro 1424 Cover  flatF

কলা অতি জনপ্রিয় একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এ ফলে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ভিটামিন এ বি সি এবং ক্যালসিয়াম,  লৌহ ও পর্যাপ্ত খাদ্যশক্তি রয়েছে। অন্যান্য ফলের তুলনায় কলা দামে সস্তা এবং প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তাই ধনী গরিব নির্বিশেষে সব মানুষ সহজেই কলা খেতে পারে। উৎপাদন, স্বাদ ও সুগন্ধের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ায় কলাকে ফলের রানী বলা হয়।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশ, আসাম ও ইন্দো চীন কলার উৎপত্তি স্থান। কলা মিউজেসি (
Musaceae) পরিবারের একটি একবীজপত্রী উদ্ভিদ। কলার বৈজ্ঞানিক নাম Musa Spp দেশের প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে কমবেশি কলা গাছ দেখা যায়। তবে নরসিংদী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া, যশোর, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরিশাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, জেলায় সবচেয়ে বেশি কলা উৎপন্ন হয়।
কলা গাছ বেরি (
Berry) জাতীয় ফল উৎপাদন করে। এর প্রতিটি পুষ্পমঞ্জুরিতে উৎপাদিত ফল সমষ্টিকে ছড়া বা কাঁদি (bunch) বলা হয়। প্রতিটি ছড়া আবার ৫-১৫টি ফানায় (hand) বিভক্ত। কোথাও কোথাও ফানাকে কাঁদি বলে। প্রতিটি ফানায় সাধারণত ১২-১৬টি কলা (finger) থাকে। কলায় দুটি অংশ আছে। ফলের ওপরের সবুজ আবরণকে কলার খোসা বলা হয় এবং ভেতরের নরম সাদা অংশকে পাল্প বলে, যা পরবর্তীতে পাকার পর ভোজ্য অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একবার ফল দিয়ে কলা গাছ মারা যায়। কলা গাছের গোড়া থেকে একাধিক গুঁড়ি-চারা বের হয়, এগুলো দিয়ে কলার বংশবিস্তার করতে হয়। প্রতিটি দেশের কলার নিজস্ব জাত রয়েছে। পৃথিবীতে যে জাতটি সর্বাধিক পরিমাণে জন্মানো হয় তার নাম  গ্রোস মিচেল (gros michel)। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৪০-৫০টি জাতের কলার চাষ হয়। এগুলোর মধ্যে অমৃতসাগর, সবরি, কবরি, চাঁপা, সিঙ্গাপুরী বা কাবুলী, মেহেরসাগর, এঁটে বা বিচিকলা, কাঁচকলা বা আনাজি কলা, জয়েন্ট গভর্নর এসব উল্লেখযোগ্য।
কলা পুষ্টিগুণেসমৃদ্ধ ও সহজপাচ্য একটি উৎকৃষ্ট ফল। মানব দেহের ক্ষয়পূরণ, পুষ্টিসাধন এবং দেহকে সুস্থ-সবল ও নিরোগ রাখার জন্য যেসব পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন তার প্রায় সবগুলোই কলায় রয়েছে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আহার উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কলায় ৭.০ গ্রাম প্রোটিন, ২৫ গ্রাম শর্করা, ০.৮ গ্রাম চর্বি এবং ০.১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেভিন) ও ২৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ থাকে। তাছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কলা  থেকে ১৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৯০ মিলিগ্রাম লৌহ, ৮০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন (ভিটামিন ‘এ’) এবং ১০৯ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। পাকাকলা টাটকা ফল হিসেবে সরাসরি খাওয়া যায় বলে এর পুষ্টি উপাদান অবিকৃত অবস্থায় আমাদের শরীর গ্রহণ করে। তাই নিয়মিত পাকা কলা ও অন্যান্য ফল খেলে পুষ্টি সমস্যা দেখা দেয় না। কলায় যে লৌহ জাতীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তা রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। লৌহের ঘাটতি পূরণে কলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই লৌহের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত মহিলাদের জন্য কলা হতে পারে দুঃসময়ের বন্ধু। ভিটামিন এ এবং বি এর উৎকৃষ্ট উৎস কলা। এজন্য কলাকে বলা হয় মস্তিষ্কের খাবার। কলাতে কোনো ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল নেই। তাছাড়া এতে কোনো দ্রবণীয় চর্বি (Saturated Fat) নেই। বরং কলায় রয়েছে হৃদযন্ত্রের পেশির নিয়মিত স্পন্দন সৃষ্টিকারী পদার্থ পটাশিয়াম। এছাড়াও গবেষকদের মতে, পাকস্থলীর দেয়ালকে এসিডের হাত থেকে রক্ষা করতে কলার অনেক ভূমিকা রয়েছে।
সাম্প্রতিককালের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কলা উচ্চরক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। তাদের মতে, কলায় প্রচুর উচ্চ পটাশিয়াম আছে এবং চর্বির পরিমাণ কম থাকে। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা উচ্চরক্তচাপ কমানোর জন্য শুধু ওষুধের পরিবর্তে কলা জাতীয় ফল, কম চর্বিযুক্ত খাবার খেতে এবং কাঁচা লবণ কম খেতে উপদেশ দেন। এছাড়াও কলা মানসিক চাপ কমায় এবং একই সাথে মানসিক কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি করে। কলায় সোডিয়ামের পরিমাণ কম এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এটি স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমায়। জানা যায়, প্রতিদিনকার খাদ্যাভ্যাসে কলা রাখলে ৪০% স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়। কলায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় এটি মাথাব্যথার প্রাকৃতিক নিরাময় হিসেবে কাজ করে। তাই এখন থেকে যে কোনো সময় মাথাব্যথা শুরু হতে চাইলেই চট করে এটি কলা খেয়ে ফেলুন।
সম্প্রতি আর এক তথ্যে জানা যায়, কলা অন্ত্রের, মুখের ও ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে দেহকে রক্ষা করে। কলায় প্রচুর আঁশ রয়েছে। তাই পাকা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং সহজে হজম হয় বলে রোগীর পথ্য হিসেবে কলা অতুলনীয়। নরম ও মিহি হওয়ার জন্য পেটের সমস্যায় খুবই উপকারী খাবার কলা। খুব বেশি পেট খারাপ রোগেও কলাই একমাত্র ফল যা নির্বিঘেœ খাওয়া যায়। কলা অস্বস্তি কমিয়ে আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। অনেক দেশে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কলা ব্যবহার করা হয়। গর্ভবতী মহিলাদের জ্বর হলে ওষুধের বদলে খাওয়ানো হয় কলা। থাইল্যান্ডে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে কলা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। পেশি গঠনেও কলার কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্নভাবে কলা আমাদের রসনার স্বাদ মেটায়। দুধভাতে পাকা কলার জুড়ি মেলা ভার। সাধারণত বেশির ভাগ মানুষ সদ্য পাকা কলা খেতে পছন্দ করেন। কলা অতিরিক্ত পেকে গেলে এর চামড়ায় কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। আর এ দাগের কারণে বেশির ভাগ সময় অতিরিক্ত পাকা কলা কেউ খেতে চান না। কিন্তু কলা যখন অতিরিক্ত পেকে যায় এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত পাকা কলা খান, আর সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।
কলা একদিকে পুষ্টিগুণে ভরপুর, অপরদিকে এর প্রচুর ঔষধি গুণও রয়েছে। গলার ঘায়ে, শুল্ক কাশিতে ও কিডনি রোগের ক্ষেত্রে পাকা কলা উপকারী। কলা থোড়ের রস কলেরা রোগীয় তৃষ্ণা নিবারণে ও রক্ত বমি রোধের জন্য উপকারী। কলার কন্দমূল ও কা- দূষিত রক্ত বিশুদ্ধকরণে সাহায্য করে। কাঁচা কলা (সিদ্ধ) সিফিলিসের চুলকানি ও পোড়া ঘায়ে প্রলেপের জন্য উপকারী।
কলার বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। সাধারণত বিশ্বে উৎপাদিত কলার অর্ধেক পরিমাণ পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া হয় এবং বাকি অর্ধেক সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। তবে বাংলাদেশে কেবলমাত্র সবজি হিসেবে কাঁচা কলার ব্যবহার প্রচলিত আছে। এদেশে কলা ছাড়াও কলার থোড় এবং মোচা সবজি হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কাঁচা কলা ও কলার মোচা ভর্তা ও ভাজি এবং সবজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। এটি বেশ সুস্বাদু ও উপাদেয়। তাছাড়া কলার ভুয়া কা-, থোড় ও পাতা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
টাটকা ফল হিসেবে খাওয়া ছাড়াও পাকা কলা ময়দা বা চালের গুঁড়ার সাথে পিষে সুস্বাদু ও মুখরোচক কলার পিঠা  তৈরি হয়। কলা থেকে আবার কেক এবং বড়াও তেরি করা যায়। ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এরকম কয়েকটি দেশে কলা পাতলা করে কেটে রোদে শুকিয়ে চিপস তৈরি করা হয়। আজকাল কলা আর দুধ মিশিয়ে মজাদার আইসক্রিম তৈরি করে খাওয়ার রীতি সব দেশেই প্রচলিত।
কলা একদিকে যেমন, বহু গুণে গুণান্বিত একটি আদর্শ ফল; অপরদিকে এটি একটি লাভজনক ও অর্থকরী ফসল। স্বল্প পরিশ্রমে ও কম খরচে কলা চাষ করা যায়। খনা বলেন, রুয়ে কলা না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত। খানার বিখ্যাত এ বচনটি নির্দেশ করে কলার অর্থকরী দিকের কথা। এর ফলনও অন্যান্য ফল ও ফসল অপেক্ষা অনেক বেশি। তাই কলার চাষ করে সহজেই আর্থিক দিক থেকে লাভবান হওয়া যায়। সুতরাং, খাদ্য ও পুষ্টি, ফলের চাহিদা পূরণ, দেহকে সুস্থ-সবল ও নিরোগ রাখার জন্য এবং আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে বেশি করে কলার চাষ করা একান্ত প্রয়োজন।

 মো. আবদুর রহমান*
*উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি অফিস, কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা