Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পার্বত্য জেলায় ফসল চাষ

রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলাগুলো পাহাড়ি ফসল আবাদের মাধ্যমে সুফল আহরণে একেকটি ‘গোল্ডেন মাইন’। এখানকার বসবাসরত আদিবাসীদের আধুুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও পরিকল্পিতভাবে সব পাহাড়ি অঞ্চল চাষের আওতায় আনা গেলে বাংলাদেশের শস্য ভা-ারে বিপুল পরিমাণ সম্পদ যোগ হবে। ফলে অভ্যন্তরীণ পুষ্টিকর ফসলের চাহিদা পূরণ করে আগামী দিনের খাদ্য রপ্তানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এককালে দেশের উত্তরাঞ্চলের বরেন্দ্র ভূমি ‘আনটাচড গোল্ডেন মাইন’ হিসেবে দীর্ঘকাল পড়েছিল। বিগত এক যুগে সেচ সুবিধা, রাস্তাঘাট, পরিকল্পিত ফসল আবাদ, ক্রপিং প্যাটার্নের পরিবর্তন ও ক্রপিং ইনটেনসিটি অতি মাত্রায় বৃদ্ধির ফলে আগের তুলনায় বর্তমানে ফসল উৎপাদন ৮-১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার আর্থসামাজিক ও পরিবেশের উন্নয়নে ব্যাপক সুফলের প্রভাবে তথায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছে, পৃথিবীতে এটি একটি অনন্য মডেল হিসেবে শস্য ভাণ্ডারে দ্রুত রূপান্তরের অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত। একইভাবে পাহাড়ি জেলাগুলোর ‘আনটাচড গোল্ডেন মাইনের’ প্রকৃত সুফল আহরণের  প্রয়োজনীয়তা এ সময়ের অন্যতম দাবি, যা এ দেশে আরও একটা নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।

 

বিরাজিত পরিস্থিতি

কালের প্রভাবে এখানে যে নানা ধরনের মূল্যবান বেশি বয়স্ক বনজ সম্পদ ছিল তা আর দৃশ্যমান হয় না। কিছুটা এ সম্পদ নিধন হয়েছে অভাবী আদিবাসীদের দ্বারা। আর বড় আকারে বৃক্ষ নিধনে যাদের অবদান তারা মূলত বনরক্ষক, বড় মাপের আমলা কিংবা নেতৃস্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ যা কারও অজানা নেই। উল্লেখ্য রাবার, পামঅয়েল, চা, কফি, নারিকেল, কমলা ইত্যাদি বাগান সৃষ্টির নামে অনেক পাহাড়ি জমি বেদখল হয়েছে। অথচ সেসব বাগানের উপস্থিতি ও প্রাপ্ত সুফল দৃশ্যমান নয়। তবে সময়ের ব্যবধানে চাষাবাদে আশার আলো রূপে জুম চাষ, ফল, সবজি ও অন্যান্য ফসল আবাদে বেশ কিছু আধুনিকায়নের ছোঁয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব ধরনের প্রচলিত ফসল আবাদ ও উন্নয়নে  করণীয় দিকগুলোর কিছু অংশ নিম্নে প্রদত্ত হলো-

 

জুম চাষ : জুম চাষ প্রবণতা ইদানীং অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা হেড কোয়ার্টারসের নিকটস্থ ভালো যাতায়াত ব্যবস্থা আছে এমন এলাকায় জুম চাষ নেই বললেই চলে। দূর-দুরান্তে অনেকটা গহিন অরণ্যে যতটুকু জুম চাষ লক্ষ করা গেছে তথায়ও আধুনিকতার ছোঁয়া দৃশমান হয়। জুমে প্রচলিত জাতের (কবরোক, গ্যালং, চুড়ই, তুরকী, আমেই, কুপালী) ধানের পরিবর্তে নতুন আধুনিক জাত ব্রি ধান৩, ২০, ২১ ও ২৬সহ নেরিকা জাত স্থান পেতে চলেছে। জুমে খুব ভালো জাতের তিল চাষ দেখা গেল, উচ্চতায় প্রায় ৭-৮ ফুট। এছাড়াও মিষ্টিকুমড়া, মারফা (শসা), চিনাইল, বরবটি, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স, ভুট্টা, যব, চুকুর, মরিচ, বেগুন, সুজি, ধনিয়া, আদা, হলুদ ইত্যাদি মৌসুমি ফসলসহ মাঝে মাঝে এগুলোর  ফাঁকে লম্বা জাতের পেঁপে, বাংলা কলার চাষ বেশ দেখা যায়।

 

ফল চাষ : বিভিন্ন ধরনের ফল বাগান সৃষ্টির উদ্যোগ অহরহ দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফল চাষ পরিস্থিতি নিম্নে প্রদত্ত হলো-

 

আনারস : আনারস চাষ প্রবণতা বেড়েছে। আগে মূলত ওপর থেকে নিচের দিকে সারি করে অনাকাক্সিক্ষত পদ্ধতিতে আনারস লাগানো হতো। এখন তাতে পরিবর্তন এসেছে, প্রকৃত নিয়মে আড়াআড়িভাবে পাহাড়ের কন্টুরে আনারস লাগানো হচ্ছে এবং তাতে পরিচর্যা গ্রহণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে যা আগে দেখা যেত না। রাস্তাঘাট, পরিবহন, বাজার ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় বাগানির এ ফলের মোটামুটি ভালো মূল্য পাচ্ছে।

 

* লেখক বিগত ১০-১৩ অক্টোবর ২০১৫ চার দিনব্যাপী রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলার পরিস্থিতি সরেজমিন ঘুরে দেখার আলোকে প্রতিবেদনটি লেখেন।

 

কলা : পাহাড়ের অন্যতম ফসল কলা। আগে অনেকটা নিম্নমানের চাঁপাকলা কম যত্নে আবাদ করা হতো। এখন দৃশ্য অনেকটা পাল্টাচ্ছে। তদস্থলে বাংলাকলা আবাদ প্রাধান্য পাচ্ছে। তাতে চাষিরা ফলন এবং মূল্য উভয়ই বেশি পাচ্ছে। অনেকটা সমতলে কিছু সাগরকলা এবং তরকারি কলার আবাদ লক্ষ করা গেছে। নরসিংদীতে এক ধরনের উন্নত মানের বাংলা কলা যা ‘গ্যাঁড়া কলা’ নামে প্রচলিত এটি এবং সবরি কলা চাষের উদ্যোগ নেয়া যায়।

 

পেঁপে : পাহাড়ি এলাকায় লম্বা জাতের বহু বছরজীবী এক জাতের পেঁপে চাষ প্রচলন আছে। মূলত বসতবাড়ি ও জুমের ফাঁকে সীমিত আকারে এ ফলের চাষ চলছে। একবার লাগালে ৬-৭ বছর ফলদানে সক্ষম। মিষ্টি, বড় জাতের এ পেঁপের ব্যাপক হারে চারা তৈরি করে পাহাড় এলাকায় সম্প্রসারণ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সমতলেও এ জাতটি ছড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। হর্টিকালচার সেন্টারগুলোতে এ জাতের পেঁপের চারা তৈরি করে এর সুফল সর্বত্র ছড়ানো দরকার।

 

আম : আম্রপালি জাতের বাগান স্থাপনে পাহাড়ি এলাকায় এক বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে। এখানে পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হওয়া ও মাটিতে রসের অভাবের কারণে এ আমের মিষ্টতা বেশি, যা অন্য জেলাতেও যথেষ্ট সমাদৃত। বাগানি আমের ভালো দাম পাচ্ছে, আবাদে আরও উৎসাহিত হচ্ছে। এখানে সীমিত আকারে রাঙ্গুয়াই নামক আমের বারমিজ জাতটির সম্প্রসারণ হচ্ছে। তবে অতি আগাম (গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বৈশাখী) ও অতি নাবি (আশ্বিনা, বারি-৪, গৌড়মতি) জাতের আবাদ সম্প্রসারণ ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আম ও আয় প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার।

 

 লটকন : লটকন একটা হাইভ্যালু ফসল, এ ফল রপ্তানির সুবিধাও আছে। প্রথম ৩-৪ বছর ছায়া/আধা ছায়ায় চাষ করা যায়। এ ফল গাছের খুব একটা বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না। পার্বত্য জেলার অনেক বাগানের আধা ছায়া যুক্ত স্থানে এ ফল চাষের প্রচুর সুযোগ আছে বিধায় ১৫-২০ ফুট দূরত্বে এ ফল বাগান সৃষ্টির মাধ্যমে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।

 

কমলা, মাল্টা অন্যান্য লেবুজাতীয় ফল : পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর মাল্টা-কমলা, বাতাবি ও অন্যান্য লেবুজাতীয় ফলের আবাদ দেখা যায়। বিভিন্ন জাতের কমলা গাছের ঠিকমতো পরিচর্যা ও খাবারের অভাবে কাক্সিক্ষত ফলন দেখা গেল না। এ অবস্থার উন্নয়নে করণীয় দিকগুলো হলো-

 

নতুন গাছ লাগাতে হলে স্স্থু সবল স্টকে সুস্থ উন্নত জাতের সায়ন দিয়ে তৈরি কলম হতে হবে। কমলা গাছের লাগানো চারা লম্বায় বেশি বাড়ার প্রবনতা আছে বিধায় গাছ ৪-৫ ফুট লম্বা হলে আগা কেটে (এপিক্যাল ডমিনেন্সি রোধ) দিয়ে সুন্দর ক্যানোপি তৈরি করে নিতে হবে। পরিদর্শনকালে বারি মাল্টা-১, পাকিস্তানি মাল্টা ও কমলা এবং সাজেক জাতের কমলা চাষ বেশি লাভজনক বলে চাষিদের অভিমত। কাজেই নতুন বাগান সম্প্রসারণ-সৃষ্টিতে এ জনপ্রিয় জাত গুলোর আবাদ গুরুত্ব বেশি দিতে হবে।

নতুন সম্ভাবনাময়ী ফল চাষ : আম, বাতাবি, পেয়ারা, কাঁঠাল, বেল, কদবেল, জলপাই, জামরুল, সফেদা, শরিফা ইত্যাদি বিভিন্ন ফলের সীমিত সংখ্যক জাতের বাগান সৃষ্টির কাজ লক্ষ করা গেছে। এ ব্যবস্থায় নতুন উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়ী জাতগুলোর তেমন প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে না। আমের ক্ষেত্রে মূলত আম্রপালি ও রাঙ্গুয়াই জাত প্রাধান্য পাচ্ছে। তথায় গৌড়মতি, বান্দিগুড়ি, হাঁড়িভাঙ্গা, সূর্যপুরী, তোতাপুরি, লক্ষণভোগ, গোবিন্দভোগ, আশ্বিনা, নানডকমাই, বারি-৪, ব্যানানা ম্যাংগো ইত্যাদি নতুন প্রচলিত জাতগুলোর সীমিত সংখ্যক মাতৃগাছ লাগিয়ে এলাকায় কিছু নতুন জাত আবাদের প্রচলন করা প্রয়োজন। নাটোরের বনলতা জাতের কদবেল কলম, স্থানীয় ভালো জাতের বেলের কলম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফলের আধুনিক জাতের ফল সম্প্রসারণে শৌখিন বাগানিদের টার্গেট করে অগ্রসর হতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্প সহায়তায় আধুনিক জাতের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে মাতৃবাগান সৃষ্টির দায়িত্ব হর্টিকালচার সেন্টারগুলোকে অবশ্যই নিতে হবে এবং পরবর্তীতে সেগুলোর চাষ জনপ্রিয় করতে হবে।

 

বারোমাসী সজিনা চাষ : বারোমাসী সজিনা পার্বত্য জেলায় সম্প্রসারণের জন্য অতি উপযোগী। খরা সহিষ্ণু এ সবজি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে কিছু সংখ্যক বারোমাসী সজিনা পরিদর্শনকালে চোখে পড়েছে। সেগুলোর পারফরম্যান্স খুব ভালো। ডাল লাগানোর অথবা কাটিং তৈরির জন্য মার্চ/এপ্রিল মাস অতি উপযোগী। ডাল বা কাটিং ছাড়াও বারোমাসী সজিনার বীজ থেকে তৈরি চারা রোপণে সম্প্রসারণ প্রাধান্য দিতে হবে। খাদ্য, পুষ্টি ও বাড়তি আয়ের জন্য বারোমাসী সজিনা সম্প্রসারণ অতি গুরুত্ব বহন করে।

 

চিবিয়ে খাওয়া আখ : পরিদর্শনকালে প্রায় সব উপজেলাতেই নানা জাতের চুয়িং আখ চাষ লক্ষ করা গেছে। স্থানীয় বাজার ও রাস্তার ধারে এ আখ প্রচুর বাজারজাত হচ্ছে। স্থানীয় অধিবাসী, ছেলেমেয়ে পরম আনন্দে তা চিবুতে দেখা গেছে। এর বাজারদরও মোটামুটি ভালো। এ অর্থকরী ফসলটির ব্যাপক সম্প্রসারণ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। প্রচলিত জাতগুলো থেকে অতি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়ী জাতগুলো চিহ্নিত করে তা শোধন করে রোগবালাই মুক্ত কাটিং রোপণে চাষিদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র তাদের কয়েকটি চিবিয়ে খাওয়া জাতের আখ তথায় সম্প্রসাণের উদ্যোগ নিচ্ছে, এটা ডিএই এর সহায়তায় বেগবান করা জরুরি।

 

পাহাড়ের ক্ষয়রোধ : পাহাড়ে ঢালু অংশে আদা, হলুদ, কাসাবা, ওলকচু, মুখিকচু ইত্যাদি মূলজাতীয় ফসল আবাদ প্রবণতা দেখা গেছে। সমতল অংশে এ ধরনের ফসল আবাদ করা যাবে। এগুলো পাহাড়ের  ঢালে চাষ অব্যাহত রাখলে ভূমিক্ষয় হয়ে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে অন্য ফসল আবাদের সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে।

 

গাছের ট্রেনিং প্রুনিং : কাঁঠাল, আম, লিচু, লেবু জাতীয় গাছসহ সব ফল গাছের ট্রেনিং প্রুনিং এর মাধ্যমে কা- ও কাঠামো সুন্দর করে তৈরি করা প্রয়োজন। কাঁঠাল, জাম, আমড়া ইত্যাদি ধরনের গাছের কাণ্ডে হবে ১০x - ১৫x  ফুট। তাতে মূল্যবান কাঠ প্রাপ্তি ও লম্বা গাছের নিচে ছোট আকারের ফল গাছ (কমলা, মাল্টা) লাগানোর সুবিধা হবে। কোনো প্রকার গাছের গোড়া থেকে গজানো একাধিক কা- রাখা যাবে না। কাঁঠাল গাছের কা- ও বড় ডাল পালায় যে অংশে কাঁঠাল ধরে তা থেকে গজানো ডাল ও পরিত্যক্ত কাঁঠালের বোঁটার অংশ অবশ্যই অগাস্ট/সেপ্টেম্বর মাসে ছাঁটাই করে দিতে হবে। এ ব্যবস্থায় গাছে ফলন ডাবল হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আম, লিচু, কমলা, মাল্টা সব ধরনের ফল গাছ নিয়মিত ট্রেনিং প্রুনিং করা দরকার। ফল গাছের রোগাক্রান্ত, অফলন্ত ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা নিয়মিত ছাঁটাই করে আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাতে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হবে এবং গাছের ফল ধারণ ক্ষমতা বাড়বে।

 

মালচিং পদ্ধতি : গাছের গোড়া থেকে র্৩র্ -র্৪র্  দূরে খড়-কুটো, লতা-পাতা, আবর্জনা শুকিয়ে নিয়ে বর্ষার শেষ ভাগে খরা মৌসুমে মালচিং দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। তাতে গাছের গোড়া ঠাণ্ডা থাকবে, মাটিতে রস সংরক্ষিত হবে, পরবর্তীতে এগুলো পচে জৈবসার হিসেবেও কাজ করবে। তবে বর্ষাকালে মালচিং না দিলেও চলে। পার্বত্য জেলাগুলোতে এ পদ্ধতি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।

 

সেচ ব্যবস্থা : খরা মৌসুমে বাগানে মাঝে মাঝে সেচ দেয়া হলে গাছের স্বাস্থ্য ভালো হবে ও ফলন বাড়বে। তবে আম গাছে নভেম্বর হতে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সেচ দেয়া যাবে না। খরা মৌসুমে সেচ ব্যবস্থার পাশাপাশি বর্ষায় বাগানে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা রাখতে হবে। বাগানে মাঝে মাঝে কিছুসংখ্যক গর্ত তৈরি করে রাখলে তাতে পানি সংরক্ষণ করা যাবে। অধিকন্তু, এখানে বাগানের আগাছা ও পরিত্যক্ত সব ধরনের ডালপালা, লতাপাতা ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হলে পরবর্তীতে তা জৈবসার হিসেবে  ব্যবহার করা যাবে।

 

রেইন ওয়াটার হারভেস্ট : হিল এলাকায় যেখানে যতটুকু সুবিধা আছে তথায় রেইন ওয়াটার হারভেস্ট করার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং অন্যদের এ কাজে অনুপ্রাণিত করে এলাকা বিশেষে চরম পানি সংকট সমাধান করার উদ্যোগ নিতে হবে। সাজেকে কয়েকশ পরিবার কর্তৃক বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া নিজ চক্ষে প্রত্যক্ষ করি। সেগুলোর আলোকে আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বনে তা জনপ্রিয় করা অত্যাবশ্যক।

 

খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্রে রেইন ওয়াটার হারভেস্টের একটা মডেল আছে, সেটাও অনুসরণ করা যেতে পারে। পাহাড়ি এলাকায় বয়ে যাওয়া ছোট ছোট পানির নহরে বাঁধ দিয়ে বর্ষার পানি সংরক্ষণ করে শুকনা মৌসুমে তা সেচের কাজে ব্যবহার করে বাগান থেকে প্রচুর ফল আহরণ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। ইসরাইল, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া ও চীনে এ ধরনের পাহাড়ি পরিবেশে এভাবে বাঁধ দিয়ে পানি সংরক্ষণ করে তা সৌরশক্তি চালিত সেচ পদ্ধতিতে পাহাড়ের অনেক উঁচুতে সৃষ্ট বাগানে সফল ভাবে ফল উৎপাদন করছে।

 

বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা : রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির অনেকগুলো বাজার (মাইসছড়ি, মহলছড়ি, দিঘীনালা, বাঘাইহাট, মাতলং, রুইলুই, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, জালিয়াপাড়া) ঘুরে দেখে ক্রেতা বিক্রেতাদের  করুণ চিত্র ফুটে ওঠে। ছোট রাস্তার ধারে প্রচুর পাহাড়ি ফসল বেচা কেনা চলছে। হাটে বসা ও চলাফেরা করা অতি কষ্টকর। এসব গুরুত্বপূর্ণ হাটগুলোর সংস্কার করে রাস্তা ছেড়ে বর্ধিত পরিসরে বেচাকেনার সুযোগ সৃষ্টি করা অত্যাবশক। পরিবহনের তেমন কোনো সুযোগ নেই। আছে শুধু চাঁদের গাড়ি নামক এক ধরনের জিপ যার ধারণক্ষমতা ১০-১২ জন হলেও তাতে অমানবিকভাবে ৩০-৪০ জন যাত্রী ঠাঁসা অবস্থায় উঠানামা করে। একেবারে না হলেও অন্তত নসিমন-করিমন জাতীয় পরিবহন ব্যবস্থা তথায় চালু করার উদ্যোগ নেয়া হলে মাইলের পর মাইল ভারী দ্রব্যাদি নিয়ে সেখানকার মহিলাদের কষ্টের চলাচল অনেকটা লাঘব হত।

 

এম. এনামুল হক*

* প্রাক্তন মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মোবাইল : ০১৯১৭০৫৫২০৫