Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২২nd August ২০১৬

হাইব্রিডের মতো জিএমও’রও সুফল পাবে জনগন- কৃষিমন্ত্রী


প্রকাশন তারিখ : 2016-08-21

জমি ক্রমাগত কমে যাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের জমি নেই, অন্যদিকে প্রচুর খাদ্যের চাহিদা রয়েছে। তা পূরণে প্রযুক্তি উন্নয়নের বিকল্প নেই। ক্ষতি পরিহার করে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম (জিএমও) প্রযুক্তিতে ফসল উৎপাদনই এ সমস্যার বড় সমাধান। ফলে জিএমও’র এই শুভ কাজ আপোষহীনভাবেই করতে হবে। জিএমও’রও সুফল জনগণ পাবে, যেমন সুফল পেয়েছে হাইব্রিডের ক্ষেত্রে। রাজধানীর খামারবাড়ির আ.কা.মু গিয়াস উদ্দিন মিল্কী অডিটরিয়ামের কনফারেন্স রুমে ২০ আগষ্ট ২০১৬ তারিখে বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল জার্নালিস্টস এন্ড এক্টিভিটিস ফেডারেশনের (বিএজেএএফ) আয়োজিত ‘এশিয়ার চাল উৎপাদন ও বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা’ বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, দেশে হাইব্রিড ফসল চাষ হোক তাও এক সময় কেউ চায়নি। আমরা হাইব্রিডকে অনুমোদন দিয়েছি, যার সুফল জনগণ এখন পাচ্ছে। হাইব্রিড ফসল বর্তমানে খাদ্য চাহিদা পূরণে বড় অবদান  রাখছে। সেই সময়ের আন্দোলনকারীরা এখন আবার জিএমও বন্ধে পাঁয়তারা করছে। তিনি আরও বলেন, জিএমও বাস্তবায়নে আমরা যা প্রয়োজন তা-ই করবো। দেশে জিএমও ফসল উৎপাদন হবেই। আমরা সম্ভাব্য সকল ক্ষতি পরিহার করেই জিএমও নিব। উৎপাদন ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করা হবে। শুধু চিৎকার করে জিএমও থামানো যাবে না। ফলে আন্দোলন করে লাভ নেই। মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ব্যাতিত অন্য কোনো দল বা সরকার কেউ কখনোই কৃষকের কথা ভাবেনি, এদেশের কৃষির কথা ভাবেনি। তারা আমদানির উপর জোর দিয়েছে কিন্তু উৎপাদনের উপর জোর দেয়নি কেউ। আওয়ামী লীগ সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। সবাই কৃষিতে ভর্তুকি দিতে নিষেধ করে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সবাই একদিকে, আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী কৃষির দিকে, কৃষকের দিকে। বরাবরই প্রধানমন্ত্রীর এক কথা ‘কৃষিতে আমরা ভর্তুকি দিবো'। কৃষি যন্ত্রপাতি শুধু আমদানি নয়, দেশের ভেতরে বানাতেও ভূর্তুকি দিচ্ছে সরকার। মন্ত্রী বলেন, সরকারকে সবসময় কৃষকের ফসলের দাম ও ভোক্তার কৃষি পণ্যের দামের মধ্যে সমন্বয় করতে হয়। এ জন্য কৃষকের উৎপাদন খরচ কমানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সেটি করতে কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি, যন্ত্রাংশ কৃষকের কাছে পৌঁছানো এবং গবেষণায় জোর দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করতে ভূর্তুকি চালু রাখা হয়েছে। প্রযুক্তি উদ্ভাবনে স্লিম বাট স্মার্ট এবং ইফিসিয়েন্ট প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সামনের দিনে কৃষি উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণে স্থানান্তর হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সে অনুসারে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ধান ছাড়াও ভবিষ্যতে ভুট্টার উৎপাদন এক কোটি টনে উন্নীত করা সম্ভব। এজন্য সব ধরনের প্রযুক্তি সাবধানতার সঙ্গেই বাস্তবায়ন করা হবে। কোনোভাবেই অ্যারিস্টক্র্যাটিক কনস্ট্রেইন্টকে বরদাশত করা হবে না। ভূমি আইন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, আমার জমি আমি বেঁচবো, না কৃষি চাষ করবো, নাকি ঘরবাড়ি বানাবো সেটা একান্তই আমার ব্যাপার। জোর করে জমি ব্যবহার আইন করা যাবে না। আমরা অবাস্তব কোনো সিদ্ধান্ত নিবো না, যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে দেশ সংঘাতের মধ্যে পড়ে যায়। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, সব হযবরল হয়ে যাবে। জোর করে আইন করলে তা বাস্তবায়ন করা যাবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আগামী ৩৪ বছরে আমাদের ধানের উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। তবে বর্তমান উৎপাদনকে ধরে রাখতে অবশ্যই জমি সংকট ও দাম নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সবুজ বিপ্লবের পাশাপাশি গ্রিন ইকোনমি এবং ব্লু ইকোনমিতে জোর দিতে হবে। তিনি আর বলেন, কৃষির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আরো ব্যাপকভাবে কৃষি গবেষণা বাড়াতে হবে। স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে ঘরে বসে থাকবে না সরকার।
এ ধরনের আয়োজন সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে জানিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এজন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের তথ্য সরবরাহ ও মতামতে আরো সহায়ক ভূমিকা নিতে হবে।
বিএজেএএফের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহানূর সাইদ শাহীনের সঞ্চালনায় সেমিনারের জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাবেক সিনিয়র টেকনিক্যাল কর্মকর্তা সুভাস দাশগুপ্ত তার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে বলেন, গবেষণায় সুভাস দাশগুপ্ত বলেন, ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের চাল উৎপাদন হবে চার কোটি ২৫ লাখ টন। আর ২০৫০ এ হবে চার কোটি ৫৫ লাখ টন। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ মাথাপিছু ৪৩৮ গ্রাম করে চাল খায়। ২০৫০ এ খাবে ৪০৫ গ্রাম করে। ফলে ওই সময়ে জনসংখ্যা ২০ কোটি হলেও চার কোটি ৫৫ লাখ টন চাল দিয়ে চাহিদা মেটানো যাবে।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে গত দশ বছরে ভুট্টা চাষে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে এবং সামনের দিনগুলোতে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় ভুট্টা একটি ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করবে। সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, কৃষি খাতে গবেষণায় বিনিয়োগ ও বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কৃষকের পণ্যের উৎপাদন খরচ কিভাবে কমানো যায় সে বিষয়গুলোতে আরো জোর দিতে হবে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. খান আহমেদ সাঈদ মুরশিদ বলেন, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চালের দাম কিভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। কৃষিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন কৃষির জন্য সবচেয়ে বড় বাধা। এজন্য ঘাতসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন ও কৃষকের কাছে দ্রুত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
বিএজেএএফ সভাপতি অমিয় ঘটক পুলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এর মহাপরিচালক ড. শমসের আলী, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর মহাপরিচালক ড. ভাগ্য রানী বণিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফ আলী, এসিআই লিমিটেডের নির্বাহি পরিচালক ড. ফা হ আনসারী, লাল তীর সীডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব আনাম প্রমুখ।