বাংলাদেশের কৃষিখাতে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি), বাংলাদেশ। রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ২৬ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে এক অনুষ্ঠানে চতুর্থবারের মত এ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী জনাব আ হ ম মুস্তফা কামাল এফসিএ, এমপি।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি), বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়, কান্ট্রি হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিটপী দাশ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের (বিবিএফ) প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শরিফুল ইসলাম।
২০১৪ সালে প্রথমবারের মত স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি), দেশের কৃষির উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ কৃষি খাতের জাতীয় বীরদের সম্মাননা জানাতে ‘অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড : এক্সিলেন্স ইন এগ্রিকালচার’ নামের এই পুরস্কার চালু করে। শুরু থেকে এ পুরস্কার আয়োজনে ইমপ্লিমেন্টেশন পার্টনার হিসেবে কাজ করে আসছে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম।
এ বছরে সাতটি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়েছে অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড। ক্যাটাগরিগুলো হচ্ছে বছরের সেরা কৃষক (পুরুষ), বছরের সেরা কৃষক (নারী), ফারমার অব দ্য ইয়ার- সাবসিসট্যান্স টু মার্কেট, বেস্ট এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন ইন রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন বা কৃষি খাতের সেরা গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থা, বেস্ট এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন ইন সাপোর্ট অ্যান্ড এক্সিকিউশন বা কৃষি খাতে সহায়তা প্রদান ও বাস্তবায়নে সেরা সংস্থা, সেরা কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক এবং বেস্ট ইউজ অব টেকনোলজি ইন এগ্রিকালচার বা কৃষি খাতে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারকারী। এবারের পুরস্কারের জন্য মোট ২১৭টি মনোনয়ন পাওয়া গিয়েছিল। কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট খাত, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা এবং নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের বিশিষ্ট ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা দুটি জুরি সেশনে কঠোর বিচার-বিবেচনার ভিত্তিতে ক্যাটাগরিগুলোতে বিজয়ী ও অনারেবল মেনশন নির্বাচিত করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী জনাব আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ১৯৭১ এ স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ অনেকটা পথ অতিক্রম করেছে এবং সম্প্রতি নি -মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ দীর্ঘ যাত্রায় দেশের অর্থনীতি তে কৃষিখাতের ভূমিকা ছিলো অনবদ্য। যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতি শিল্পায়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তবুও এর মূলে কৃষিখাত সর্বদা বিরাজমান। দারিদ্র দূরীকরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তার মত প্রধান বিষয়গুলোতে কৃষিখাতের কার্যক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তথাপি সরকারের কর্মপরিকল্পনায় কৃষিখাত সর্বদাই অগ্রাধিকার লাভ করে আসছে।
প্রত্যেক ক্যাটাগরির সেরা বিজয়ী ও অনারেবল মেনশন হিসেবে নির্বাচিত সবাইকে দেশের কৃষি খাতে তাঁদের অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একটি করে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। তাঁদের হাতে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী জনাব আ হ ম মুস্তফা কামাল। বছরের সেরা কৃষক (পুরুষ) এবং একজন বছরের সেরা কৃষক (নারী) এই দুই শ্রেণির বিজয়ীদের হাতে পাঁচ লাখ টাকা করে তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি একজন অনারেবল মেনশন পেয়েছে পঞ্চাশ হাজার টাকা। শের আলী সর্দ্দার ও হারুন চৌধুরী যৌথভাবে পেয়েছেন বছরের সেরা পুরুষ কৃষক ক্যাটাগরির পুরস্কার। সেরা নারী কৃষকের পুরস্কার পেয়েছেন অনজু সরকার। সেরা কৃষক ক্যাটাগরিতে সম্মানিত নারী কৃষকের পুরস্কার পেয়েছেন মর্জিনা বেগম। ফারমার অব দ্য ইয়ার হয়েছেন নূরুল হক বাবুল ও তার গ্রুপ। কৃষি খাতের সেরা গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। এ ক্যাটাগরিতে সম্মানিত বিজয়ীর পুরস্কার পেয়েছে মেটাল অ্যাগ্রো লিমিটেড। কৃষি খাতে সহায়তা প্রদান ও বাস্তবায়নে সেরা সংস্থার ক্যাটাগরির পুরস্কার পেয়েছে এসিআই ক্রপ কেয়ার অ্যান্ড পাবলিক হেলথ। এ ক্যাটাগরিতে সম্মানিত পুরস্কার পেয়েছে নগর কৃষি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেরা কৃষি পণ্য রফতানিকারক ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়েছে বেস বাংলাদেশ। এ ক্যাটাগরিতে সম্মানিত পুরস্কার পেয়েছে ক্লাসিক্যাল হ্যান্ডমেড প্রোডাক্ট লিমিটেড। কৃষি খাতে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারকারীর পুরস্কার পেয়েছে সয়েলসেইফ বাই ক্রান্তি অ্যাসোসিয়েটস। এ ক্যাটাগরিতে সম্মানিত পুরস্কার পেয়েছে জিও পটেটো বাই এমপাওয়ার সোস্যাল এন্টারপ্রাইজ। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে কৃষিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রায় ২৫০ জন আমন্ত্রিত অতিথি যোগ দেন।