শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ মো. রাজু আহমেদ, চাষী পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও পেয়াজ বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প, মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি প্রকল্পের কার্যক্রম যথাযথ বাস্তবায়ন, মনিটরিং তথা কৃষকবান্ধব উপযোগিতা যাচাই ও কারিগরী দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। পরিদর্শনকালে প্রথমে তিনি সংশ্লিষ্ট উপজেলার কলিকাতা ভোগদিয়া গ্রামের কৃষক জনাব মো. আলমাছ শেখ কর্তৃক সংরক্ষিত বারি সরিষা-১৪ জাতের প্রায় ১০০ কেজি সরিষার বীজ প্রকল্প থেকে সরবরাহকৃত ড্রামে সংরক্ষণ অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে তিনি সংশ্লিষ্ট উপজেলার খড়িয়া গ্রামের কৃষক জনাব আব্দুল লতিফ দেওয়ান কর্তৃক সংরক্ষিত বারি মসুর-৬ জাতের প্রায় ১০০ কেজি মসুর ডালের বীজ প্রকল্প থেকে সরবরাহকৃত ড্রামে সংরক্ষণ অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তাছাড়া তিনি কলিকাতা ভোগাদিয়া গ্রামে কৃষক জনাব মো: জাহাঙ্গীর শেখ কর্তৃক মৌচাষ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ মহোদয় জনৈক কৃষকসহ উপস্থিত আরোও কৃষকগণদের সরিষা ও ডালের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষন বিষয়ক বিভিন্ন কারিগরী দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। আগামী ভাদ্র মাসের দিকে রোদ্র্জ্জল দিনে সরিষা ও মসুর বীজগুলো ভালভাবে রোদে শুকিয়ে বায়ুরোধক অবস্থায় সংরক্ষণ করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের তাগিদ ও পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এতে করে বীজের গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরোও বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সরিষার বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে বাংলার কৃষকেরা আধুনিক জ্ঞান আহরণে এখনো অনেক পিছিয়ে। যথাযথ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের অভাবে কৃষকেরা পরিকল্পিত উপায়ে সরিষার বীজ উৎপাদন ও বীজ সংরক্ষন করতে পারছে না। উপস্থিত কৃষকবৃন্দ পরিদর্শক দলকে স্বাগত জানান এবং তারা বলেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরা এভাবে মাঠ পর্যায়ে এসে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন কারিগরী নির্দেশনা প্রদানের ফলে তারা নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি সর্ম্পকে ধারণা পান এবং উজ্জীবিত হন, নির্দেশিত কারিগরী প্রযুক্তি ও জ্ঞানসমূহ ব্যক্তিগতভাবে পালন করবেন এবং এলাকার অন্যান্য কৃষকগণের মাঝে এসব তথ্যাদিগুলো পৌঁছে দিবেন। কৃষকরা আরোও বলেন, সামগ্রিক কৃষকের উন্নয়নই পারে দেশের উন্নয়ন আনতে। মৌ চাষী জনাব মো. জাহাঙ্গীর শেখ বলেন, বর্ষাকালীন অর্থ্যাৎ চলমান সময়গুলোতে মৌমাছিগুলোকে বাচিয়ে রাখার জন্য কৃত্রিমভাবে খাবার হিসেবে চিনি সরবরাহ করতে হয়। মৌমাছির প্রতিটি বক্সে সপ্তাহে প্রায় ৫০০ গ্রাম করে চিনির প্রয়োজন। এভাবে তার ৮ টি বাক্সের জন্যা সপ্তাহে প্রায় ৪ কেজি চিনির প্রয়োজন। অসময়ে মৌমাছিগুলোর লালন পালনে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যদি মৌচাষিদের সহযোগিতা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে মৌচাষের প্রতি আরোও বেশি আগ্রহ তৈরি হবে। এতে মৌচাষিরা উপকৃত হবেন সর্বোপরি মধু উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ সংশ্লিষ্ট চাষীদের উদ্দেশে বলেন, মানবদেহে কঠিনতম রোগ ক্যান্সারসহ রক্তের কোলেস্টরল কমিয়ে হৃদরোগের মতো ভয়ানক রোগের ঝুকি কমাতে সরিষা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। সরিষার শাক, ফুল, এবং পরিপক্ক সরিষার দানা হতে প্রাপ্ত তেল সবকিছুর জনকল্যাণে ব্যাপক কাজে লাগে। সরিষা বিনা চাষেও আবাদ করা যায়। তাছাড়া সরিষা উৎপাদনে নতুন মাত্রা হিসেবে যুক্ত হয়েছে মৌচাষ তথা মধু উৎপাদন। সরিষার ফুল হতে প্রাপ্ত মধু নিজস্ব মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন। তাছাড়া পরিদর্শনকালে সংশ্লিস্ট ব্লকের উপসহকারি কৃষি অফিসার জনাব মো. নজরুল ইসলাম, উপ সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা, অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মো. আবু সাইদ এবং কৃষিবিদ মো. রাবিবুল ইসলাম, অতিরিক্ত কৃষি অফিসার, লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ পরিদর্শনরত দলের সাথে উপস্থিত ছিলেন।