দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে, তাকে থামিয়ে দিতে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। একাত্তরের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি বলেই বিভিন্ন নামে চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে জঙ্গি হামলা। পরাজিত শক্তি আজ দেশে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি নামে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও পরবর্তীতে শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রাকে বাধা দিতে যারা ব্যর্থ হয়েছে তারাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। রাজধানীর খামারবাড়িতে ১৮ আগষ্ট ২০১৬ তারিখে কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউট বাংলাদেশ মিলনায়তনে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নািসম এ মন্তব্য করেন । তিনি বলেন, দুঃখ লাগে যখন শুনি একজন ডাক্তারের সন্তান মহিলা জঙ্গি, একজন উচ্চবিত্ত ব্যক্তির সন্তান জঙ্গি। আমি আপনাদের প্রতি অনুরোধ করব, আপনার সন্তানের খবর রাখেন। তারা কখন কোথায় যায়, কি করে। সভায় পঁচাত্তরের খুনিদের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা, জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যার বিচার যাতে না হয় এর জন্য জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া সরকার একটি কালো আইন (ইনডেমনিটি) লালন করেছিল। খালেদা জিয়া সরকারের সময় আমরা এই আইন বাতিলের জন্য সংসদে দফায় দফায় উত্থাপন করেছি। কিন্তু এই আইন বাতিলের নামে আমাদের সাথে তারা তামাশা করেছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আইন করে তার বিচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। পৃথিবীর কোথাও হত্যার বিচার বন্ধ করতে আইন করা হয় না। যা বাংলাদেশে করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের বিচার শুরু করে। তিনি আর উল্লেখ করেন, ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গিরা যখন পুলিশ ও বিদেশিদের হত্যা করছে, শেখ হাসিনা যখন বিনিদ্র রাত জেগে থাকছেন, খালেদা জিয়া তখন হত্যাকান্ডকে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের অভ্যুত্থান বলে আখ্যা দিয়েছেন। খালেদা জিয়া যে জঙ্গির পক্ষে এটাই তার প্রমাণ। মন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সমপপ্ত করছেন তিনি। কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। তার ডাকে সাধারণ মানুষ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়েছেন। অথচ একটি দল এখনো ঐক্যের কথা বলে, যা হাস্যকর। কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মতিয়া আপার নেতৃত্বে কৃষি মন্ত্রণালয় এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি সরকারের সময় দেশে খাদ্যের ঘাটতি ছিল। আর মতিয়া আপা যখনই দায়িত্ব নিয়েছেন তখনই খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হচ্ছে। আর এই কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব একজন যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমানের হাতে দিয়ে এই মন্ত্রণালয়কে কলঙ্কিত করেছিল খালেদা জিয়া।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে মতিয়া চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর রাজকোষে কোনো অর্থ ছিল না। সোনা-দানা লুট করা হয়েছিল। সে সময়েও দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে, কৃষকের কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধু বিনামূল্যে সার, বীজ ও কীটনাশকের ব্যবস্থা করেছিলেন। বিএডিসির মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে কৃষির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৭৪ সালে খাদ্য সংকটের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আগের বছর খরার কারণে আউশ ধান মার খেয়েছিল। সে সময় টাকা দিয়েও খাদ্য পাওয়া যায়নি। মাঝপথ থেকে খাদ্য ফিরিয়ে নিয়ে যায় আমেরিকা। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশে খাদ্য ফলানোর জন্য কৃষিতে মনোযোগ দেন। যখন বাম্পার ফসল ফলেছে, ফসল কাটার উপক্রম হয় তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তিনি আরও বলেন, ৪১ বছর ধরে দেশ গড়ছি, আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। কিন্তু কিছুতেই জাতির পিতার ঋণ শোধ হবে না। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর বাংলাদেশ যাতে বিপথগামী না হয়, সেজন্য তার সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ পেয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছেন বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ রুখে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রী বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে এগিয়ে। বাংলাদেশ এখন সারা পৃথিবীর মানুষের আর্তমানবতার সেবায় হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের খাদ্যে উদ্বৃত্ত আছে বলেই এটা সম্ভব হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান।