বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশিবাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি বিশেষ করে হর্টিকালচার একটি দ্রুতবর্ধনশীল খাত হিসেবে গড়ে উঠেছে। অন্যান্য ফসলের তূলনায় সবজি এবং ফলচাষলাভজনক হওয়াতে কৃষকরাও এই খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এত সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ আশানুরূপভাবে সবজি এবং ফল রপ্তানী করতে ব্যর্থ হচ্ছে। উৎপাদিত পন্যের গুণগতমান নিশ্চিত এবং এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলপক্ষের মধ্যে সমন্বয় এবংসহযোগিতা নিশ্চিতকরতে পারলে বাংলাদেশ অচিরেই বৈশ্বিক বাজারেসবজি ও ফলরপ্তানীতে একটিশক্তিশালী অবস্থান তৈরী করতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ১৫ জুন ২০১৬ সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিএফভিএপিইএ এর যৌথ উদ্যোগে Pest Free and Safe Fruits and Vegetables Production for Domestic Consumption and Export through Responsible Contract Farming and Market Promotion" শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা একথা বলেন।
খামারবাড়ী ফার্মগেটস্থ, কেআইবি থ্রিডি সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এন.ডি.সি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ’দশ বছর আগে আমরা নিরাপদ খাবারকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করতাম এখন তা পাল্টে গেছে। এখন নিরাপদ খাদ্য উত্পাদনের সাথে ট্রেসাবিলিটির বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত যা নিশ্চিত করতে দরকার কন্ট্রাক্ট ফার্মিং। নিরাপদপণ্য শুধুমাত্র রপ্তানীর জন্য উৎপাদন না করে দেশীয় ভোক্তাদের জন্য ও উত্পাদন করতে হবে। আর এজন্য সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ারমত যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদের সাথে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়গুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে।’
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোশারফ হোসাইন, অতিরিক্ত সচিব, সম্প্রসারণ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়; জনাব হামিদুর রহমান, মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর; জনাব সৌমেনসাহা, পরিচালক, উদ্ভিদ সংনিরোধক উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর; লরেন্টউমানস, ফার্স্ট সেক্রেটারী, ফুডসিকিউরিটি, এ্যামবেসি অফ দি কিংডম অফ দি নেদারল্যান্ডস্; জনাব নিয়াজ রহিম, চেয়ারম্যান, আগোরা ও প্রেসিডেন্ট, সুপারমার্কেট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন এবংজনাব এস. এম. জাহাঙ্গীর হোসাইন, প্রেসিডেন্ট বিএফভিএপিইএ।
কর্মশালার শুরুতেই কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর মাধ্যমে বালাইমুক্ত নিরাপদ শাকসবজি এবংফল উৎপাদনের সমস্যা ও সম্ভাবনা এবংসফল প্রকল্পের মাধ্যমে ডিএই এর সহযোগিতায় কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর মাধ্যমে উৎপাদিত আম বিদেশে রপ্তানী প্রক্রিয়ার শিক্ষনীয় বিষয় নিয়ে কী নোট পেপার উপস্থাপন করেন সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার সুপারমার্কেট এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন স্পেশালিস্ট মো: মজিবুল হক।
মুক্ত আলোচনার পর নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসারজন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে মোশারফ হোসেন বলেন, ’পন্যের মান নিশ্চিত করতে হলে সরকার/ব্যবসায়ী/ এনজিও সকল পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশকে ধ্য আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে কৃষিকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে এবংসকল পক্ষকে যারযার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।’
জনাব হামিদুর রহমান বলেন, ’আগে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবংগ্রহণের ব্যাপারে মানুষ এখনকার মত এত সচেতন ছিলনা। এখন উৎপাদক এবং ভোক্তা হিসেবে আমরা অনেক সচেতন। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা গ্রহণ করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের প্রবাহকে নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতারই একটি সাফল্য হচ্ছে সাতক্ষীরা থেকে ইউরোপের বাজারে আমরপ্তানী।’ সলিডারিডাড এবং নেদারল্যান্ডস রকারকে এই উদ্যোগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন’ সবজি ও ফলরপ্তানীর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা এবংটিমওয়ার্ক নিশ্চিত করতে পারলে আমরা সামনে অনেক দুর এগিয়ে যেতেপারব।’
জনাব সৌমেন সাহা বলেন,’ আম উৎপাদনকারী দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম হলেও রপ্তানীরদিক থেকে আমরা এখনো অনেকপিছিয়ে আছি। রপ্তানীর জন্য কন্ট্রাক্ট ফার্মিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এভাবে উৎপাদন ও উৎপাদন পরবর্তী সকলবিষয় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ’তিনি আগ্রহীর প্তানীকারকদের আগামী জুলাই মাসের মধ্যে বাগান সিলেক্ট করে ডিএইকে জানাতে অনুরোধ করে বলেন’ আপনারা বাগান নির্বাচন করে আমাদের জানালে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আপনাকে সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশনা দেব’।
লরেন্ট উমানস বলেন, ’টেকসই উন্নয়ন এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অনেক দুর এগিয়ে গেছে। রপ্তানীবাজার কে মাথায় রেখে কৃষকদের উৎপাদন করতে উৎসাহিত এবংরপ্তানীর জন্য ভ্যালুএ্যাডসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিলে বাংলাদেশের রপ্তানীবাজার আরো সম্প্রসারিত হবে এবং কৃষক আরো ভালো দাম পাবে। তিনি এ উদ্যোগেনারীদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্য উন্নয়ন সম্ভাবনাকে ব্যাহত করবে।’
জনাব নিয়াজ রহিম বলেন, ’আগোরার একটিঅন্যতম নীতি হচ্ছে দেশীয় ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ খাবার নিশ্চিতকরা। আর এই লক্ষ্যে আগোরা সলিডারিডাড এর সাথে যৌথভাবেকাজকরছে। নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সলিডারিডাড এর কাছ থেকে আগোরা অনেক কিছু শিখেছে। আশাকরি ভবিষ্যতেও আমরা একসাথে কাজ করে প্রতিযোগিতামুলক মুল্য দিয়েপণ্য ক্রয় করে কৃষকদের সাথে থাকতে পারব।’
জনাব এস. এম. জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ’বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্যের ডিমান্ড থাকলেও ক্রেতাদের দেয়া কম্লায়েন্স পূরণ করতে না পারার কারণে আগের মত আর সবজি ও ফলরপ্তানী করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিএফভিএপিইএ এর পক্ষ থেকে আমরা এখন চাষীদের সাথে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এ যাচ্ছি। বেশিরপ্তানীমানে কৃষকের বেশি লাভ উল্লেখকরে তিনি সলিডারিডাড কে ঢাকার আশেপাশে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য প্রকল্প হাতে নিতে অনুরোধকরেন।’
সভাপতি রবক্তব্যে সলিডারিডাডের কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসানবলেন, ’ইউরোপের বাজারে আমরপ্তানীরমাধ্যমে সলিডারিডাডনিরাপদ পন্যেরসাপ্লাই চেইনেরএকটিউদাহরণ তৈরীকরতে চেয়েছে। ডিএইসহসরকারীসংশ্লিষ্টবিভাগগুলোরকাছ থেকে আমরাআশাতীতসহায়তা পেয়েছি। আমরাপ্রমাণকরেছি যে আন্তরিকভাবেচাইলে সব কছিুইকরা সম্ভব।’ এই প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টসকলকেধন্যবাদ দিয়েতিনিবলেন’সবারসমন্বিতপ্রচেষ্টায়আমরাএতদুরআসতে পেরেছি।আশাকরিভবিষ্যতেওসকলেরসহযোগিতায়নিরাপদ ফল ও সবজি দেশীয়এবংবিশ্ববাজাররেতুলেধরে দেশেরসুনামেরপাশাপাশি কৃষকেরমুখেওহাসি ফোটাতেপারব’।