’দানাজাতীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনে আজ আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। পাশাপাশি স্বল্পপরিমাণে হলেও বিদেশে রফতানি করছি। কৃষির বহুমুখীকরণেও আমাদের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কিন্তু পুষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এখন আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। উদ্যানফসল বিশেষত ফলমূল, শাক-সবজির যথার্থ উৎকর্ষ সাধনই হবে এ লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম প্রধান সহায়ক’। ০৫ মার্চ ২০১৭ তারিখে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বিএআরসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ উদ্যানবিজ্ঞান সমিতির জাতীয় কনভেনশন-২০১৭-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, এমপি এ কথা বলেন। ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আম উৎপাদনে আমরা বিশ্বে ৭ম ও পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম। বিদেশি ফলে অনেকের আগ্রহ রয়েছে তাতে আমাদের সমস্যা নেই। তবে আমাদের দেশীয় সুস্বাদু ফল বিষয়ে গবেষণা জোরদার করতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি যাতে সংশ্লিষ্ট শিল্পের এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রসার ঘটে সেজন্য পুষ্টি ও মানসম্পন্ন উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল উৎপাদনের দিকে আমাদের অধিক মনোযোগী হতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল ফল ও শাকসবজি উৎপাদনে বিগত এক যুগে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। সবজির আবাদি জমির হার বৃদ্ধিতে বিশ্বে প্রথম এবং গত এক দশকে সবজি আবাদি জমির পরিমাণ পাঁচ শতাংশ হারে বেড়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধির হারের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন তৃতীয়। তিনি বলেন, পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে মান বজায় রাখতে হবে। খারাপ মানের পণ্য রফতানি করে দেশের সম্মান ক্ষুন্ন হলে ছাড় দেয়া হবে না। এমনকি এর সঙ্গে জড়িত থাকলে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকেও ছাড় দেয়া হবে না। মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দেশে ফল সরবরাহের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। ছোটখাট সহজ পদ্ধতি ব্যবহার করে খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণ বিষয়ে তাগিদ দেন। খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনবলকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
কৃষিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য কৃষিবিদ ড. এম শহীদুল ইসলামকে মরণোত্তর স্বর্ণপদক দেয়া হয়। এ ছাড়া উদ্যানতাত্বিক ফসলের গবেষণা, সম্প্রসারণ, উন্নয়ন ও বাজারজাতকরণে বিশেষ অবদানের জন্য বিএআরসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও এমেরিটাস সায়েনটিষ্ট ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম এনামুল হক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যানতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রাণ-আরএফএল ও এসিআই লি. এবং নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার কৃষক সেলিনা জাহানকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ উদ্যানবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় Quality and safety Assurance for Commercial Horticulture বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাছান। কৃষিবিদ ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা, এফএও বাংলাদেশের প্রতিনিধি ড. সু লার্টজ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উদ্যানবিজ্ঞান সমিতির মহাসচিব ড. মদন গোপাল সাহা।