কৃষক পর্যায়ে ধান-চালের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত সরকার গৃহীত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে কৃষকদের নিকট থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ/প্রক্রিয়াকরণ, মিলারদের মাধ্যমে ক্রাশিং ও সংরক্ষণ এবং চাল রপ্তানি বিষয়ে ৩০ জুলাই ২০১৯ তারিখে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বিএআরসি সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠিত সভাতে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, এমপি সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী জনাব সাধন চন্দ্র মজুমদার, এমপি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মোঃ মফিজুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জনাব সরকার আবুল কালাম আজাদ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ নাসিরুজ্জামান। সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং অধীন সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ এফবিসিসিআই, রাইস এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন, অটো মেজর এন্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি, রাইস মিল মালিক প্রতিনিধি প্রমুখ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এখন শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশই নয় বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির এই ধারবাহিকতাকে টেকসই করার পাশাপাশি কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও সরকার সচেষ্ট রয়েছে। ধান আমাদের প্রধান ফসল। বাম্পার উৎপাদনে ধানের মূল্য কম হওয়ায় সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কৃষকদের যথাযথ মূল্য নিশ্চিতে সম্ভাব্য সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় চলছে। সরকারি খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা সীমিত। তদুপূরি এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। রাইস মিলার, চাতাল কল মালিকদের আরও অধিক পরিমাণ ধান চাল ক্রয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। তবে কৃষকদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে আমাদের আগামীতে আরও কাজ করে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ হ্রাসের জন্য বিভিন্ন কৃষি উপকরণে সরকারের প্রদত্ত ভর্তুকি ও উন্নয়ন সহায়তাকে আরও প্রসারিত করা হবে। সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অধিক গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে ধান রোপণ ও সংগ্রহকালীন সময়ে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কটকে দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মাননীয় মন্ত্রী আরও জানান, কৃষক পর্যায় থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের চলমান উদ্যোগকে আরও সম্প্রসারিত করা হবে। আগামীতে কৃষকের উৎপাদিত ধান কৃষকদের মাধ্যমে রাইস মিলারদের কাছে বিক্রি করে নির্ধারিত মূল্য কৃষকদের সরাসরি প্রদানের বিষয়ে সরকার সক্রিয় বিবেচনা করছে। তাছাড়া সরকারি গুদামের ধারণ ক্ষমতা সীমিত হওয়ায় মিলারদের গুদামে সাময়িক সময়ের জন্য ধান চাল সংরক্ষণ করা যেতে পারে বলেও মাননীয় মন্ত্রী মত প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের চালের মান অত্যন্ত উন্নত মানের উল্লেখ করে মাননীয় মন্ত্রী বলেন, বিদেশে এ চালের যথেষ্ট রপ্তানি সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের চাহিদা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আপৎকালীন মজুদ এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সীমিত পরিমান চাল রপ্তানি করার বিষয়ে মাননীয় মন্ত্রী মত ব্যক্ত করেন।
মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী জনাব সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন সরকারের উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে ধান উৎপাদনকারী কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে আরও প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মাননীয় মন্ত্রী উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালে হাওরের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমদানিকৃত চালের উদ্বৃত্ত অংশ এখনও ব্যবসায়িদের কাছে রয়ে গেছে। এর পাশাপাশি ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় সার্বিকভাবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক বেশি হয়ে পরেছে। এসব কারণেই কৃষক উৎপাদিত ধান চালের বিক্রয় মূল্য কমে গেছে। আগামীতে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে মাঠ থেকে ধান কাটার আগেই প্রকৃত উৎপাদনকারী কৃষকের তালিকা তৈরি করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন মাননীয় মন্ত্রী। সরকারের খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতাকে আরও বাড়ানো দরকার বলে তিনি জানান। বিদেশে রপ্তানির জন্য সরু চালের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে মাননীয় মন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মোঃ মফিজুল ইসলাম জানান ইতোমধ্যেই চার রপ্তানির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তবে দেশের আভ্যন্তরিন চাহিদাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে হবে। ভারপ্রাপ্ত সচিব, খাদ্য মন্ত্রণালয় জনাব সরকার আবুল কালাম আজাদ জানান, ধানের জন্য সাইলো (পেডি সাইলো) তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এতে করে অধিক আর্দ্রতাসম্পন্ন ধানও সংরক্ষণ করা যাবে।
উন্মুক্ত আলোচনা সভায় বেসরকারি মিল মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা, উৎপাদন ব্যয় কমাতে কৃষকদের আরও অধিক হারে ভর্তুকি, কৃষি ঋণ প্রদান, কৃষি উপকরণের মূল্য হ্রাস, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে গুরুত্ব আরোপ করেন। পাশাপাশি মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ, ক্রাশিং এর মূল্য বৃদ্ধি, চাল রপ্তানি উন্মুক্ত করণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনার জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করেন।
সম্মানিত কৃষি সচিব, কৃষকদের নিকট থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ/প্রক্রিয়াকরণ, মিলারদের মাধ্যমে ক্রাশিং ও সংরক্ষণ এবং চাল রপ্তানি বিষয়ে করণীয় বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মহোদয়কে আহ্বায়ক করে প্রস্তাবিত একটি কমিটির কাঠামো উপস্থাপন করেন। কমিটি সভায় আলোচিত বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে আগামীতে করণীয় বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত উপস্থাপন করবেন বলে কৃষিসচিব মহোদয় জানান।