বিটি বেগুন এখন কৃষকের মাঠে। বর্তমানে সাড়ে ৫ হাজার কৃষকের ক্ষেতে এখন বিটি বেগুন উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বিটি বেগুন নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ সময় নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তারপর আমরা এটা অনুমোদন দিয়েছি। যেকোন উদ্ভাবনী বা প্রযুক্তি মানুষের উন্নয়নের জন্য। বিটি বেগুনের জাতের উদ্ভাবনও মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যেই। রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে ২৩ মার্চ ২০১৭ তারিখে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক আয়োজিত 'বিটি বেগুনের গবেষণা ও উন্নয়ন' শীর্ষক দিনব্যাপি এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি এ মন্তব্য করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, জেনেটিকালি মডিফাইড বিটি বেগুন প্রযুক্তি ব্যবহারে শুধুমাত্র বেগুন ডগা এবং ফল ছিদ্রকারী পোকা রোধ করা যায়। এটা ফসলের সব রোগের ঔষধ নয়। বিটি বেগুন ক্ষেতে সাদা মাছি এবং ব্যাকটেরিয়ার মত রোগ ও অন্যান্য শোষক পোকা দমনে প্রক্রিয়াগত ব্যবস্থাপনা নিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ জনসংখ্যার দেশ। শিল্পায়ন ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ফলে প্রতি বছর আবাদী জমি কমছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষিতে জীবপ্রযুক্তি প্রয়োগের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা যখন হাইব্রিডের ব্যবহার শুরু করি তখন অনেক সমালোনা হয়েছে। সে সময়ের সঠিক সিদ্বান্তের জন্যই দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। হাইব্রিড বীজ ব্যবহারের কারণেই দেশে দানাদার ফসল ও সবজির উৎপাদন বেড়েছে। আমাদের সরকার যেকোন ধরণের উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত, যদি তা জনগণের জন্য ক্ষতি বা নিরাপত্তায় হুমকি না হয়। আমরা কৃষকের লাভ দেখবো, কোন দেশ বা সংস্থার এজেন্ডা নয়।
কর্মশালায় বক্তাদের আলোচনায় জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) কর্তৃক উদ্ভাবিত নতুন ৩ জাতের বিটি বেগুন এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। এছাড়া আরও দুটি জাত নিয়ে গবেষণা চলছে। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ৯টি বিটি বেগুনের জাত উদ্ভাবন করে। এর মধ্যে ৪ জাতের বেগুন কৃষকের মাঠে চাষ হচ্ছে। ২০১৪ সালে প্রথমে ২০জন কৃষকের মাঠে বিটি বেগুন চাষাবাদ করা হয়েছিলো। এ বছর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ৫,৫০০ কৃষকের মাঠে সাফল্যজনকভাবে বিটি বেগুন চাষ করা হয় এবং বারি ৮০০ কেজি বিটি বেগুনের বীজ উৎপাদন করে। বিটি বেগুনের জাতসমূহ হাইব্রিড না হওয়ায় কৃষক নিজেরাই বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারছে। বিটি প্রযুক্তিতে বেগুনের প্রধান শত্রু ডগা এবং ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের ফলে কীটনাশক ব্যবহার কমে আসছে। ফলে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৃষি সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মোহাম্মদ নজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-এর মহাপরিচালক মো. মনজুরুল হান্নান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন। কারিগরী সেশনে সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ।
কর্মশালার বিষয়গত উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন Prof. Anthony M. Shelton, Director, Feed the Future South Asia Eggplant Improvement Project, Cornell University. উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন Mr. Matt Curtis, EG Director, USAID/Bangladesh.কর্মশালায় নার্সভুক্ত বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।