মাঠ ফসলসহ বিভিন্ন ফসলে মৌচাষ করলে মধু উৎপাদনের পাশাপাশি ফসলের উৎপাদন অনেকাংশে বেড়ে যাবে এবং পরিবেশবান্ধব খামার ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম আরো গতি পাবে। পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে মধু উৎপাদন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে খামারবাড়িস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সম্মেলন কক্ষে প্রথমবারের মতো মৌ-মেলা ২০১৬ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, মধু প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত বিশুদ্ধ বহুগুণে গুণান্বিত একটি উপাদান। বাংলাদেশে সাধারণত সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ ও বাজারজাত করে থাকেন। পাশাপাশি পেশাদার মৌচাষিগণ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৌসুমে মৌসুমে সরিষা, ধনিয়া, তিল, কালিজিরা, লিচু এসব ফসলের জমিতে বা বাগানে মৌবাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে ৬ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়, ২০ হাজার হেক্টর জমিতে কালিজিরা চাষ হয়, ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধনিয়া, ২০ হাজার হেক্টর জমিতে তিল এবং বিপুল পরিমাণ জমিতে লিচু উৎপাদিত হয়। যেখান থেকে মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে মৌমাছি দারুনভাবে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে এবং বিপুল পরিমাণ মধু আহরণে সহায়তা করে। বাংলাদেশে উৎপাদিত মধু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রফতানি হচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে মধু রফতানির পরিমাণ ছিল ৫৫০ মেট্রিক টন। তিনি আরও বলেন, যে পরিমাণ সরিষা ফুল ফোটে তা থেকে আমরা মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ মধু আনে পারছি। কৃষিমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গত বছর নভেম্বর মাস থেকে মৌচাষ সম্প্রসারণে সহায়কের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। উল্লেখ্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সংস্থা বিসিকের আওতায় মৌচাষ সংক্রান্ত মধু উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বিষয়ক একটি প্রকল্প চালু রয়েছে। এ প্রকল্পের পক্ষ থেকে মৌচাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গুণগত মানসম্পন্ন মৌ বাক্স সরবরাহ হয়ে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিসিকের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সাথে একযোগে কাজ করে যাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে একটি সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর করে যৌথ কর্মকা- শুরু করেছে। কর্মকান্ডের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে মৌচাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডাল, তেল, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ১২০ জন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ৫ দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণে উইন্ডরক ইন্টারন্যাশনাল এর সহায়তায় একজন আর্ন্তজাতিক বিশেষজ্ঞ মি. ডেভিড এনগলার স্টিফেন এর তত্ত্বাবধায়নে এ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে। একই প্রকল্পের আওতায় এ বছর আরো ১৮০ জন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চত্বরে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩:০০ টায় মেলা উদ্বোধন করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিল্প মন্ত্রী জনাব মো. আমির হোসেন আমু। মেলা চলবে ১ মার্চ ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত। মেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। মেলায় কৃষি সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠানসহ বিসিক এবং দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌখামারি এবং প্রাইভেট উদ্যোক্তগণ অংশগ্রহন করবেন। মেলায় ৩৪ টি স্টল থাকবে। মেলার প্রতিপাদ্য- ‘মিলবে পুষ্টি বাড়বে ফলন, আয় বাড়াবে মৌ পালন’ বিষয়ে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ অডিটরিয়ামে সেমিনারের আয়োজন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. মোশারফ হোসেন, কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, মৌ চাষী কল্যান সমিতির সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ এবাদুল্লাহ আফজাল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।