তরমুজ একটি উচ্চমূল্যের অর্থকরী ফসল। ইংরেজি নাম Water melon এবং বৈজ্ঞানিক নাম Citrullus vulgaris. প্রচলিত পদ্ধতির মতোই এবার মির্জাপুরের আনিস অসময়ে তরমুজ আবাদ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন। তিনি এ তরমুজের বীজ সংগ্রহ করেছেন জিলিয়ন সীড কোম্পানী “ জামালপুর সীড হাউজ” হতে। এটি হাইব্রিড তরমুজ, নাম কানিয়া। ফল উজ্জ্বল সবুজের সাথে গাঢ় সবুজের ডোরাকাটা দাগযুক্ত। ভিতরের শাস উজ্জ্বল হলুদ রঙের। গাছ অধিক শক্তিশালী। ফল ৩-৫ কেজি পর্যন্ত হয়, খেতে খুব মিষ্টি। বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিন পরই তরমুজ সংগ্রহ করা যায়। এটি ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ভিটামিন এ সমৃদ্ধ পুষ্টিকর ফল। পাকা ফল মুত্র নিবারক, দেহকে শীতল রাখে, অর্শ লাঘব করে। বীজের শাঁস খেলে লিভারের ফোলা ভাব কমে। আমাশয়, বির্যহীনতা ও প্র¯্রাবের জ্বালা পোড়া বন্ধ করে । ফল ও বীজ মাথা ঠান্ডা রাখে। তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সাইটুলিন ( অ্যামাইনো এসিড)। সাইটুলিন মানবদেহে আরজিনিন নামক আরেকটি গুরুত্বপূর্ন অ্যামাইনো অ্যাসিড উৎপাদনে বলিষ্ট ভূমিকা রাখে। আরজিনিন টাইপ -২ ডায়বেটিস রোগীর রক্তে নিষ্ক্রিয় ইনসুলিনকে সক্রিয় করে গ্লুকোজ বিপাকের হার বৃদ্ধি করে। তরমুজ উচ্চ রক্তচাপ প্রশমক ও রক্তের অতিরিক্ত জমাটবদ্ধতা প্রতিরোধক।
বর্তমানে চাষীদের মধ্যে যে সমস্ত তরমুজের আবাদ চলছে সেগুলো হলো পতেঙ্গা জায়েন্ট, টপ ইল্ড, গ্লোরি, ওয়ার্ল্ড কুইন, বিগটপ, চ্যাম্পিয়ন, অ্যাম্পায়ার, সুইট বেবি, ভিক্টর সুপার হাইব্রিড এবং ওশেন সুপার হাইব্রিড। বেলে দোঁ-আশ ও পলি দোঁ-আশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য বেশী উপযোগী। সাধারণতঃ পৌষ মাঘ মাসে চারা তৈরি করে নিয়ে ২ মিটার দূরত্বে ৬০ সেঃ মিঃ চওড়া এবং ৬০ সেঃ মিঃ গভীর মাপের মাদা তৈরি ক’রে মাদা প্রতি গোবর ১০ কেজি , খৈল ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৩৫০ গ্রাম এবং ছাই ৪ কেজি ব্যবহার করে মাদার মাটির সাথে উত্তম রুপে মিশিয়ে দিতে হয়। এরপর ৩-৪ টি বীজ সরাসরি মাদায় লাগাতে হয়। মাদা প্রতি ৩ টি সবল চারা রেখে বাকীগুলো তুলে ফেলতে হয়। চারা ২০-৩০ সেঃমি লম্বা হলে ২-৩ সপ্তাহ পরপর ২-৩ কিস্তিতে প্রতি মাদায় ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হয়। এ সময় ঘন ঘন মাঠ পরিদর্শন করতে হয়। কারণ এ সময়েই তরমুজের গাছে লেডিবার্ড বিটল এবং পাতায় মাছি পোকার আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। লেডিবার্ড বিটল হাতে ধরে মেরে ফেলতে হয়, প্রয়োজনে সঠিক কিটনাশক সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে হয়। মাঝে মাঝে মাদা নিড়িয়ে দিতে হবে। গাছ মাচায় তুলে দিতে হবে অথবা মাচা তৈরী করা সম্ভব না হলে জমিতে খড়, গমের ডাটা বিছিয়ে দিতে হবে।
পাবনা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল লতিফের সার্বক্ষনিক তত্ত্বাবধানে এবং পরামর্শে আনিস এ তরমুজের বীজ জমিতে বপন করেছিলেন এ বছরের এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখে । যথারীতি পরামর্শ মোতাবেক পরিচর্যার কাজ ঠিক মত করেছেন। তাকে ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব নাজিবুল ইসলাম ও সার্বক্ষনিক পরামর্শ সহায়তা দিয়েছেন। রমজান মাসে তরমুজ হারভেসট করার ফলে আনিস প্রতি কেজি তরমুজ ৫০/- টাকা দরে বিক্রী করেছিলেন। প্রথম কর্তনেই আনিস ১৫০টি তরমুজ জমি হতে তুলেছিলেন যা প্রায় ৯ মণ ওজন হয়েছিল, বাজারে বিক্রি করেছিলেন ১৮,০০০/- টাকা, দ্বিতীয় বার উত্তোলন করে বিক্রি করেছিলেন ১৪,০০০/- টাকা এবং শেষবার উত্তোলনে বিক্রি হয়েছিল প্রায় ১৬,০০০/- টাকা । বোনা হতে ২মাস ১০দিনের ব্যবধানে মাত্র ২ শতাংশ জমি হতে আনিস এ তরমুজ বাজারজাত করে প্রায় আটচল্লিশ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। শেষে তরমুজের গাছগুলো তিনি টুকরা করে কেটে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে ঐ জমিতেই জৈব সার করেছিলেন । এ আবাদে তার বীজ, সার, পরিচর্যা,শ্রমিক এবং মাচা তৈরী ইত্যাদি বাবদ খরচ হয়েছিল দশ হাজার টাকার মত। তাকে অনুসরন করে অন্য কৃষকরাও এ সমস্ত উচ্চমূল্যের ফল সবজি আবাদের চেষ্টা করছেন। তবে আনিসই প্রথম হাইব্রিড জাতের হলুদ শাস বিশিষ্ট তরমুজ আবাদ করে এলাকার চমক সৃষ্টি করেছেন। আনিস জানালেন এ তরমুজ বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়। মাদায় বীজ বপন করে গাছ মাচায় তুলে দিতে হয়। শুধুমাত্র মাছি পোকা এবং লেডিবার্ড বিটল ছাড়া অন্য পোকা এ তরমুজের গাছ আক্রমন করে না। বাজারে এ তরমুজের চাহিদা অত্যন্ত বেশী। অল্প আবাদ হওয়ায় বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারিনি । আনিস তাই এ বছরেই এক বিঘায় এ তরমুজের চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আনিস তার আধা বিঘা জমিতে আরেকটি নতুন জাতের ফল (তরমুজ জাতীয়, কিন্তু তরমুজ নয়) চাষ করেছেন। মাস খানেকের মধ্যেই হয়তো ফলটি বাজারে আসবে। এর নাম সাম্পান।পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং মালেশিয়ায় পাওয়া যায়। এ ফলেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন , খনিজ লবন এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। আনিসের আশা এ ফল বিক্রী করে তিনি এক লক্ষ টাকা আয় করবেন।