কৃষি মন্ত্রণালয় ও এফএও এর উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এ বছরও ১৬ অক্টোবর বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও যথাযথ গুরুত্বসহকারে পালিত হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৬। এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাদ্য এবং কৃষিও বদলাবে’ (Climate is changing. Food and agriculture must too). এ দিবস উপলক্ষে ঢাকা ছাড়াও দেশের জেলা উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে ঢাকায় সকাল ১০:০০ টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য র্যালি, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ফার্মগেটস্থ বিএআরসি চত্বরে ১৬-১৮ অক্টোবর তিনদিনব্যাপী খাদ্যমেলা এবং সকাল ১১:১০ মিনিটে বিএআরসি অডিটরিয়ামে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাদ্য এবং কৃষিও বদলাবে’ বিষয়ক প্রতিপাদ্যের ওপর সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৬ উপলক্ষে বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার, মাসিক কৃষিকথার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র, পোস্টার প্রকাশনা ও বিতরণ, মোবাইল ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে খাদ্যমেলা ও সেমিনারের উদ্বোধন করেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ এর সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি ও মাননীয় খাদ্য মন্ত্রী এ্যাডভোকেট মো.কামরুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মাননীয় সভাপতি মো. মকবুল হোসেন এমপি এবং এফএও বাংলাদেশ প্রতিনিধি মাইক রবসন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতি বছর শতকরা ১০-১৫ ভাগ খাদ্য ঘাটতি ছিলো। যা বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন এবং চাল রপ্তানিও করছি। আগে আমরা এক কোটি দশ লাখ মে. টন খাদ্য উৎপাদন করতাম। এখন তিন কোটি আশি লাখ মে. টন উৎপাদন করছি। অথচ আমাদের কৃষি জমি কমেছে। এসব সম্ভব হয়েছে কৃষি বিজ্ঞানীদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে। তিনি আরও বলেন, আমাদের খাদ্যের গুনগত পরিবর্তন হয়েছে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহনের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসছে। আমাদের গবেষণায় যে উদ্দীপনা আছে, তাতে করে আমরা কৃষি উৎপাদর আরো বাড়াতে পারবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের কৃষি আজ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আমাদের জমি কমছে, মানুষ বাড়ছে। আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন। পাশাপাশি সরকার গবেষণার ক্ষেত্রে প্রণোদনাও দিচ্ছে। বিজ্ঞানীগণ ব্রিডিং, মিউটেশন ও জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বন্যা, খরা, জলোচ্ছাস ও লবন সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। হাইব্রিডের বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশে হাইব্রিড ফসল চাষ হোক তাও এক সময় কেউ চায়নি। আমরা হাইব্রিডকে অনুমোদন দিয়েছি, যার সুফল জনগণ এখন পাচ্ছে। হাইব্রিড ফসল বর্তমানে খাদ্য চাহিদা পূরণে বড় অবদান রাখছে। এখন আমরা জিএমও ফসল উৎপাদনের দিকে যাবো। আমরা সম্ভাব্য সকল ক্ষতি পরিহার করেই জিএমও নিব। উৎপাদন ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সার, বীজ, কীটনাশক কৃষকের কাছে সহজলভ্য হয়েছে। সরকার যথাসময়ে এসব উপকরণ পৌঁছে দিচ্ছে বলেই আমাদের উৎপাদন বেড়েছে। আজকে ১৬ কোটি মানুষের দেশে আমরা চাল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছি এবং বছরে ২ লাখ মে. টন চাল রপ্তানির সক্ষমতা অর্জন করেছি। সরকার উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ন্যায্যমূল্যও নিশ্চিত করেছে। এবারে খাদ্য মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ৭লাখ মে. টন ধান ক্রয় করেছি। তিনি আর বলেন, আমাদের আবাদী জমির পরিমান দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগে একটি ফসল হলেও, এখন দুই থেকে তিনটি ফসল আবাদ হচ্ছে। ফলে হেক্টর প্রতি উৎপাদন বেড়েছে অনেক গুন। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার ফলে এ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কৃষকরা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে প্রকৃতিকে জয় করতে পেরেছে।
বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৬ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. এম. এ. সাত্তার মন্ডল, প্রাক্তন সদস্য, পরিকল্পনা কমিশন ও সাবেক উপাচার্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আযাদ। কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, বিজ্ঞানী, গণমাধ্যমকর্মী প্রমুখ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য বিশ্বব্যাপি খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দীর্ঘদিন কাজ করে চলেছে। ১৯৭৯ সালে এ সংস্থার ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির বিজ্ঞানী ড. পল রোমানি বিশ্বব্যাপি খাদ্য দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবের পর ১৯৮১ সাল থেকে প্রতি বছর খাদ্য ও কৃষি সংস্থার জন্মদিন ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) জন্ম ১৯৪৫ সালে।