Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৪ জুন ২০১৬

বিএআরসিতে শুকনো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত


প্রকাশন তারিখ : 2016-06-12

কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে ০৯ জুন ২০১৬ তারিখে শুকনো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বোরো চাষ একটি সমস্যা।  পানির অভাবে এ সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে আর কোনো টিউবওয়েল দেওয়া হবে না। । এছাড়াও আর্সেনিকোসিস সমস্যা ও দেখা যাচ্ছে। এসব কারনে আমাদের ক্রপিং প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে হবে। প্রতি বছর আমাদের জমি কমে যাচ্ছে। আমাদের বীজ থেকে বীজ উৎপাদনের সময় কমিয়ে আনতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমাদের দেশে প্রচলিত কাদা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষে প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় তিন হাজার দুইশ লিটার পানি খরচ হয়।এ অবস্থায় আমাদের কৃষক যেন মার না খায় সেজন্য নতুন নতুন সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বিজ্ঞানীদের আহবান জানান। মন্ত্রী বলেন,  শুকনো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে একটি ভালো প্রযুক্তি। তবে সেটা আমাদের কৃষকের নিকট কতটুকু গ্রহনযোগ্য ও সাশ্রয়ী  হবে, সে বিষয়টিও ভাবতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন,  শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ প্রযুক্তিতে জমিতে পানি সেচের পরিমাণ কমানোর ফলে প্রচলিত কাদা পদ্ধতির চেয়ে ধানের ফলন বেশি হয়। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন সাধারণ কৃষক এবং কমবে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার। এ ছাড়াও সেচ কাজে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল, বিদ্যুতের খরচ ও চাহিদা। প্রচলিত পদ্ধতিতে বোরো ধানের জমিতে ১৫-৩০ বার সেচ দিতে হয়। নতুন এ প্রযুক্তিতে চার-আটবার সেচ দিয়েই ফসল ফলানো যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ম্যাজিক পাইপ পদ্ধতিটি ব্যাপকভাবে গ্রহণের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০ ভাগ সেচের পানি সাশ্রয় হয় বলে জানা গেছে। কিন্তু শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ করলে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ সেচের পানি সাশ্রয় হবে ও ধানের ফলন এডব্লিউডি পদ্ধতির সমান বা বেশি হবে। তিনি আর উল্লেখ করেন, এ পদ্ধতিতে ধানের জীবনকাল ১৫ দিন কমে যায়। এতে আমন ধান কাটার পর সরিষা, আলু বা অন্যান্য রবি শস্য চাষের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। ফলে কৃষক একটি বাড়তি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। এ পদ্ধতির জন্য ব্রিধান ২৯ সবচেয়ে ভালো। তবে বিনা ধান ৬, ব্রিধান ৪৭ ও ব্রিধান ২৮ জাতের চাষ করা যেতে পারে। ধানের বীজ প্রথমে ২৪-৩০ ঘণ্টা পানিতে ভিজানো হয় ও পরে ২৪-৩০ ঘণ্টা জাগ দিয়ে ধান বীজের মুখ ফাটা অবস্থা তৈরি করা হয়। আমন ধান কাটার পর জো অবস্থায় প্রয়োজন মতো চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করতে হবে। জমিতে রস না থাকলে সেচ দিয়ে পরে জো অবস্থা তৈরি করতে হবে। হাতে অথবা যন্ত্রের সাহায্যে ২৫ সে.মি. দূরে দূরে লাইন এবং লাইনে ১৫ সে.মি. দূরে দূরে ৩-৫ সে.মি. গভীর গর্তে ও প্রতিগর্তে ৪-৬টি বীজ বপন করা হয়। শুকনো পদ্ধতিতে আগাছার আক্রমণ রোধ করতে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ২ বা ৩টি বেশি নিড়ানি দরকার হয়। নিড়ানি খরচ বেশি হলেও পানি ও চারা রোপণের খরচ কম লাগে বলে অধিক মুনাফা পাওয়া যাবে। বিভিন্ন আগাছা নাশক যেমন- বাই স্পাইরিকেব সোডিয়াম, ট্রাইফ্লুরালিন, পেনক্সসুলাম ইত্যাদি ব্যবহার করে কম খরচে সফলতার সঙ্গে শুকনো পদ্ধতির ধানের জমিতে আগাছা দমন করা হয়। দীর্ঘ ৫ বছর গবেষণার পর এমন একটি কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ডিএই (এইসি)-ডানিডা এএসপিএসের অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমানের সঙ্গে এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণায় সহযোগিতা করেন, অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহমান সরকার, অধ্যাপক ড. এম নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম ও পিএইচডি শিক্ষার্থী মো. মেহেদী মাসুদ, মো. জয়েন উদ্দিন, মো. জুলফিকার আলী, মোজাহার হোসেন আহমেদ এবং মাস্টার্স শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান।
কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লহ্ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বোরো উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট জেলার উপপরিচালকগণ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্ট গবেষকগণ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের ধানবীজ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এর গবেষকগণ অংশগ্রহন করেন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আযাদ।