তুষার কুমার সাহা (এআইসিও)
কৃতসা, রাজশাহী
গত ০৬ জুলাই/১৯ রাজশাহী বিএমডিএ’র উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হলো দু’দিন ব্যাপি ২য় বরেন্দ্র এগ্রো ইকো ইনোভেশন রিসার্চ প্লাটফর্ম কনফারেন্স।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় কৃষি মন্ত্রী কৃষিবিদ ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ কর্মশালার শুভ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, গতদিন গোদাগাড়ীর সরমঙ্গলা ড্যাম পরিদর্শন ও সেখানকার কৃষকদের সাথে কথা বলে যা প্রত্যক্ষ করলাম, তাতে মনে হয়, এখন আর ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র বলা যাবে না, চারিদিক সবুজায়ন, কৃষক মাঠে ধান রোপনে ব্যস্ত। তিনি বলেন, বর্তমানে কৃষকেরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, এটা যেমন ঠিক, ঠিক তেমনি বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার কিন্তু বসে নেই। জননেত্রী প্রধান মন্ত্রী এই দুরবস্থা নিয়ে ভাবছেন। আশা করছি দ্রুত একটা স্থায়ী সমাধান বের করতে পারবো। কৃষকেরা যাতে লাভবান হতে পারেন, ধানের নায়্য মূল্য পান তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন কৃষি খাতের উন্নতির জন্য ১৯টি নীতিমালা আছে, তারমধ্যে প্রধান হচ্ছে কৃষির আধুনিকায়ন, যান্ত্রিকীকরণ ও বানিজ্যিকরণ করা। পরিশেষে এ ধরনের কর্মশালার আয়োজনের জন্য তিনি খুবই মুগ্ধ। তিনি সরকারের সহযোগীতার পাশাপাশি সর্বস্তরের ব্যাক্তিবর্গের সহযোগীতা কামনা করেন।
রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সম্মানিত চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি ড. মো: আকরাম হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী-1 আসনের মাননীয় সাংসদ ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি, রাজশাহীর পুঠিয়ার সাংসদ ডা: মুনসুর রহমান ও সংরক্ষিত আসনের সাংসদ আবিদা আনজুম মিতা, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম এ সাত্তার মন্ডল, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মো: নূর-উর রহমান, ডিএই’র সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো: হামিদুর রহমান ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো: হামিদুল হক।
কর্মশালার শুরুতে সুধীজনদের স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সম্মানিত চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি ড. মো: আকরাম হোসেন চৌধুরী। তিনি কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ঠাঁঠাঁ মাটিতে প্রায় ৩০ বছর আগে একটি ফসল চারা সারা বছর বরেন্দ্রের মাটি পতিত থাকতো। বিএমডিএ’র সময় উপযোগী পদক্ষেপের জন্য আজ বরেন্দ্র অঞ্চল হয়েছে সবুজায়ন আর ফসল হচ্ছে ২-৩টি। কিন্তু ভু-বিজ্ঞানীদের মতে দিন দিন পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে আর যেটুকু পানি পাওয়া যাচ্ছে তা সঠিক টেকসই প্রযুক্তির অভাবে অপচয় হচ্ছে। পানির অপচয় রোধে কি ধরনের টেকনোলজি ব্যবহার করে পানির অপচয় রোধ ও বরেন্দ্র অঞ্চলকে কিভাবে কৃষি সমৃদ্ধ করা যায়, সে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এ কর্মশালা।
তিনি তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, পানির অপচয় রোধে টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানি সাশ্রয়ী ফসল উৎপাদন,স্যাটোলাইট ও আইসিটি ব্যবহার বৃদ্ধি করে কৃষি ফসলের নিবিড়তা ও শস্য পর্যায়ক্রমানুসারে স্বল্প মেয়াদী ফসল চাষ বৃদ্ধিকরণ, গ্রামীন বৈচিত্রকরণ, বৃক্ষরোপন, নিরাপদ ও পুষ্টিসম্মত খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, বরেন্দ্র এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা মাফিক প্রকল্প গ্রহন ও এসডিজি’র আলোকে বরেন্দ্রের মাটিতে সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্বল্প জমি থেকে অধিক উৎপাদনে টেকসই কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারে অধিক কার্যকর কর্মসূচি গ্রহন করতে ও মতামত জানাতে তিনি বিএমডিকে সার্বত্মক সহযোগীতার জন্য উপস্থিত বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ, কৃষি বিশেষজ্ঞ, কৃষি বিজ্ঞানী, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী, কৃষি প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন মিডিয়ার কলামিস্টদের অনুরোধ জানান।
দু’দিন ব্যাপি কর্মশালায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভুতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক প্রো ভাইস চ্যান্সেলর ড. চৌধুরী সারোয়ার জাহান, রাজশাহী বিএডিএ’র সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. আসাদুজ্জামন, উপ-সচিব ড. রাজ্জাকুল ইসলাম ও ড. জাহাঙ্গীর হোসাইন। এছাড়া কনফারেন্সে অন্যান্যেও মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন গম ভুট্টার মহাপরিচালক ড. মো: ইসরাইল, ধান গবেষণার মহাপরিচালক ড. শাজাহান কবির ও ব্রি’র মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
কর্মশালায় বিএমডিএ, কৃষি সংশ্লিষ্ট গবেষনা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি তথ্য সার্ভিস, এনজিও, বিভিন্ন সরকারী-আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক ও কৃষক প্রতিনিধিসহ প্রায় ৪০০ শতাধিক জন উপস্থিত ছিলেন।