আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের (আরএআরএস) আয়োজনে গত ৬ এপ্রিল বরিশালের রহমতপুরস্থ আরএআরএস ফার্মে ‘বারি পেঁয়ারা-২’ এর ওপর এক কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে আরএআরএস প্রধান ও মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল ওহাবের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওমর আলী শেখ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ‘উদ্যানতাত্ত্বিক ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ এবং চর এলাকায় উদ্যান ও মাঠ ফসলের প্রযুক্তি বিস্তার’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু তাহের মাসুদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, স্বাধীনতার পূর্বে গবেষণা ছিল না বিধায় উন্নয়নও ছিল না। স্বাধীনতার পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছায় কৃষিক্ষেত্রে গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হওয়ায় দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এতে তিনবেলা খাবার নিশ্চিত হলেও পুষ্টির ঘাটতি থেকে গেছে। এটি পূরণ করতে হলে পরিবার থেকেই ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আর এটি নিশ্চিত করতে হলে বসতভিটায় ব্যক্তি উদ্যোগে কিংবা বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়ারাসহ অন্যান্য ফলের বাগান স্থাপন করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ফল হিসেবে পেঁয়ারার গুনাগুণ সর্বজনস্বীকৃত। এটি দামে সস্তা এবং সহজলভ্য। এতে ভিটামিনের পাশাপাশি এন্টি ক্যান্সারাস উপাদান রয়েছে। পেঁয়ারাসহ অন্যান্য ফল স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। তিনি আরও বলেন, একমাত্র উদ্যানতাত্ত্বিক ফসলই অর্থ, পুষ্টি, বিনোদন এবং সুস্থ্যতা নিশ্চিত করতে পারে। প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল ওহাব বলেন, স্বরূপকাঠীর পেঁয়ারা এবং আটঘর-কুড়িয়ানার পেঁয়ারা বাজার দক্ষিণের ঐতিহ্য। এ অঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে কমপক্ষে একটি পেঁয়ারা গাছ পাওয়া যাবে। এ গাছগুলো বছরে একবার ফল দেয় এবং উৎপাদন কাঙ্খিত নয়। এছাড়া দামে সস্তা এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা কম। অন্যদিকে বারি পেঁয়ারা-২ বছরে দু’বার ফলন দেয়। এর ফল আকারে বড় এবং খেতে সুস্বাদু ও কচকচে। বাজারে প্রচলিত থাই পেঁয়ারার চেয়ে এর পুষ্টিগুন অনেক বেশি। কাজেই নতুন ফল বাগান স্থাপন কিংবা পুরানো গাছ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বারি পেঁয়ারা-২ কে অগ্রাধিকার দিতে উপস্থিত সকলকে তিনি আহবান জানান। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডিএই বরিশালের উপপরিচালক রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ, পিরোজপুরের উপপরিচালক মো. আবুল হোসেন তালুকদার, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম কিবরিয়া, নলছিটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান, বরিশাল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াছমিন, স্বরূপকাঠীর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুকলাল হালদার, কৃষক মাহবুব মোল্লা এবং কৃষাণি রেহানা বেগম। আলোচনা অনুষ্ঠানের আগে কৃষকসহ অতিথিবৃন্দ বারি পেঁয়ারা-২ এর বাগান পরিদর্শন করেন। এ সময় বিজ্ঞানীরা এর চাষাবাদ কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেন। অনুষ্ঠানে কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ ২ শতাধিক কৃষাণ-কৃষাণি উপস্থিত ছিলেন।