ডিএই মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান
সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ী ঢলে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলা বন্যা পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও কৃষি বিভাগ কর্তৃক চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলমান বিভিন্ন কার্যক্রম তদারকি করতে মাঠ সফর করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এর মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান। রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও লালমনিরহাট ৫ জেলার বন্যায় আক্রান্ত ২২ উপজেলায় মোট দন্ডায়মান ফসলি জমি ৩৬২,০৫১ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ ফসলি জমির পরিমাণ ১৩,৪৮৬ হেক্টর যা মোট ফসলি জমির শতকরা ৩.৭৩ ভাগ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ জেলা কুড়িগ্রাম এবং উপজেলা রৌমারী। এসব জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রোপা আমন বীজতলা। এছাড়া রোপা আমন, পাট, শাকসবজি, কলা ও আউশ ধানের জমিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মাঠ সফরকালে তিনি কাউনিয়া উপজেলায় ভাসমান বীজতলা, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রাঙ্গনে আপদকালীন বীজতলায় আমনের নাবী জাতের বীজ ছিটিয়ে শুভ উদ্বোধন করেন। তিনি কুড়িগ্রাম জেলা সফরকালে রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় খেয়াঘাট ও দাতভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দুই ভিন্ন চাষি সমাবেশে মতবিনিময় করেন। উপস্থিত কৃষকেরা কোন এাণ নয়, কারিগরী সহযোগিতাসহ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বীজ-সারের সহযোগিতা চেয়েছেন। এছাড়া তিনি রৌমারী উপজেলা পরিষদ হলরুমে জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা ও সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. রুহুল আমিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শাহ আলম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুড়িগ্রামের উপপরিচালক মো. মকবুল হোসেন, কৃষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার মো. আবু সায়েম, সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. জাকির হোসেন প্রমুখ। রৌমারী উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আজিজল হক জানান ব্রহ্মপুত্র ও জিঞ্জিরাম নদীর প্রবাহে সৃষ্ট বন্যায় দন্ডায়মান ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জনপ্রতিনিধিগণ সরকারের নিকট ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতার করার জন্য অনুরোধ জানান।
মহাপরিচালক বলেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিজস্ব উদ্যোগে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, হর্টিকালচার সেন্টার, জেলা অফিস প্রাঙ্গনে নাবী রোপা আমনের চারা তৈরি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ধান ও সবজির ভাসমান বীজতলা তৈরি, পর্যাপ্ত পরিমাণ আমনের নাবী জাতের উফশী বা স্থানীয় জাতের বীজ-চারার সহজলভ্যতা, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম রবি শস্য যেমন- শাক-সবজি, মাশকলাই, সরিষা, গম, ভুট্টা, আলু ইত্যাদি চাষে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর জেলার সম্মেলন কক্ষে পূর্বের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল ছুটি বাতিল করে সকল কর্মকর্তাদের কৃষকের পাশে সার্বক্ষণিক থেকে পরামর্শ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। বন্যা-বন্যা পরবর্তী করণীয় ভিডিও বার্তা ও প্রচারপত্র দ্রুত এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রচারের ব্যবস্থা করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি তথ্য সার্ভিসকে যৌথভাবে কাজ করে যাওয়ার অনুরোধ করেন। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীদের কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। বন্যা বা যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনভাবেই সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় তবে অভিযোজিত বিভিন্ন কলা-কৌশল রপ্ত করে এর ক্ষতির মাত্রাকে কমিয়ে আনা যেতে পারে বা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যেতে পারে।